ইসলামি ব্যাংকের সংজ্ঞা দিন। ইসলামি ব্যাংকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা করুন।

ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থা কাঠামোগত দিক থেকে প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থার মত মনে হলেও আদর্শ ও মূলবোধের দিক
থেকে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। কেননা, প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থা সুদী লেন-দেন ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে
উৎসাহিত করে। পক্ষান্তরে ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থা ইসলামি শরীআর মৌলনীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে
পরিচালিত। ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হচেছ-একটি সুদমুক্ত শোষণহীন সমাজ গড়ে তোলা। যার মাধ্যমে
ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে যুলম ও নিপীড়নমুক্ত আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো গড়ে উঠে। ১৯৭৮ সালে
সেনেগালের রাজধানী ডাকারে অনুষ্ঠিত ওআইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে ইসলামি ব্যাংকের যে সংজ্ঞা অনুমোদিত ও
গৃহীত হয় তারই আলোকে সারা বিশ্বে ইসলামি ব্যাংক পরিচালিত হচেছ। ইসলামি ব্যাংক মানবজাতিকে একটি
পরিপূর্ণ ও আদর্শিক জীবন গঠনে অর্থনৈতিক লেন-দেনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (স)
মনোনীত বিধান জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। সে লক্ষ্যে অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক
ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা) বিধান তথা ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা কায়েম করতে হলে ইসলামি ব্যাংকের
প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা ইসলামি অর্থনীতির একটি দিক। ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার ব্যাপক
চাহিদা ও জনপ্রিয়তা সারা বিশ্বে থাকলে ও এর অবকাঠামোগত বিকাশ বেশী দিনের নয়। ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার
অনুপস্থিতিতে পুঁজিবাদী ও সমাজবাদী অর্থ ব্যবস্থার সীমাহীন স্বেচছাচারিতায় বর্তমান বিশ্বকে অন্তহীন সমস্যায়
জর্জরিত করে রেখেছে। দারিদ্র, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য, মুদ্রাস্ফীতি, শোষণ, নির্যাতন,
শ্রেণীগত সংঘাত প্রভৃতির কারণে বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। বিশ্ব মানবতাকে এহেন অবস্থা থেকে মুক্ত করতে ইসলামি
ব্যাংক ব্যবস্থা তথা ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা একমাত্র কার্যকর পন্থা। কেননা, মানব রচিত মতবাদ কখনোই সার্বিক
কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। আলোচ্য ইউনিটে ইসলামি ব্যাংকিং-এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইসলামি ব্যাংক
ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থা একটি ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাংক ব্যবস্থা। ইসলামি শরী’আ অনুযায়ী এ ব্যাংক ব্যবস্থা পরিচালিত।
ইসিলামের সুমহান নীতিমালা অনুযায়ী একটি সুদমুক্ত শোষণহীন সমাজ গড়ে তোলার পথে একটি বস্তুনিষ্ঠ প্রয়াস
হচ্ছে ইসলামি ব্যাংক। ন্যায় ও ইনসাফের মাধ্যমে যুলম ও নিপীড়নমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে ইসলামি
ব্যাংক ব্যবস্থা একটি অনন্য সাধারণ ব্যবস্থা। একটি কল্যাণময় অর্থে-সামাজিক অবকাঠামো বিনির্মাণে ইসলামি
ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
ইসলাম সম্মেলন সংস্থা (ঙ.ও.ঈ) ইসলামি ব্যাংকের একটি সুনির্দিষ্ট ও সহজবোধ্য সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
যা ১৯৭৮ সালে সেনেগালের রাজধানী ডাকারে ও.আই.সি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে অনুমোদিত ও গৃহীত হয়। তা
হল- অর্থাৎ ইসলামি ব্যাংক এমন একটি আর্থিক
প্রতিষ্ঠান, যার মৌলিক বিধান, নীতিমালা, বৈশিষ্ট্য ও কর্মপদ্ধতিতে ইসলামি শরীআর মূলনীতি অনুসরণের সুষ্পষ্ট
অঙ্গীকার থাকবে এবং যার সমুদয় কাজ-কর্ম, আদান-প্রদান হবে সুদের লেনদেন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অভ ইসলামি ব্যাংকস ইসলামি ব্যাংকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছে- ইসলামি ব্যাংক
কার্যত একটি নতুন ব্যাংকিং ধারণা যা আর্থিক ও অন্যান্য লেনদেন ইসলামি শরীআর নীতিমালা সুষ্ঠুভাবে মেনে
চলে। অধিকন্তু ব্যাংক যখন এ নীতিমালার আলোকে পরিচালিত হবে তখন বাস্তব জীবনে শরীআর নীতিমালা
প্রয়োগ নিশ্চিত হতে হবে। ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই এ ব্যাংক কাজ করবে এবং এর মৌলিক উদ্দেশ্য
জনগণের মাঝে ইসলামি চেতনার বিকাশ সাধনে ব্যাংক নিরন্তর কর্মরত থাকবে।
মালয়েশিয়ার ইসলামি ব্যাংকিং আইন কর্তৃক ১৯৮৩ সালে অনুমোদিত ইসলামি ব্যাংকের সংজ্ঞা হল- ইসলামি
ব্যাংক এমন একটি কোম্পানী যা ‘ইসলামি ব্যাংকিং’ ব্যবসায় করে এবং যার একটি বৈধ লাইসেন্স আছে। আর
ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবসায় হচ্ছে এমন এক ব্যবসা যার লক্ষ্য ও কর্মকান্ডের কোথাও এমন কোন উপাদান নেই যা
ইসলাম অনুমোদন করে না।
ইসলামি ব্যাংক শরীআ ভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকব্যবস্থা
ইসলামি ব্যাংক হচ্ছে- ইসলামি শরীআর ভিত্তিতে পরিচালিত সুদবিহীন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কেউ হয়তো
মনে করতে পারেন যে, কোন ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান থেকে সুদ প্রথাকে রহিত করা হলেই বুঝি তা ইসলামি ব্যাংক
বা ইসলামি প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়। আসলে তা নয়। কোন ব্যাংক বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে ইসলামিক হতে হলে
তার যাবতীয় কর্মকান্ডের সকল স্তরেই ইসলামি শরীআর নীতিমালাকে অনুসরণ করতে হবে। কেউ যদি কোন
প্রতিষ্ঠানকে ইসলামিক প্রতিষ্ঠান বলে দাবী করে কিংবা প্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ড-এ ইসলাম শব্দ ব্যবহার করে
অথবা প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছু কর্মকান্ডে ইসলামি শরীআর নীতিমালা অনুসরণ করে, আবার কিছু কিছু কর্মকান্ডে
ইসলামি শরীআর নীতিমালা উপেক্ষা করে চলে, তাহলে সেটিকে প্রকৃত ও সম্পূর্ণরূপে ইসলামি প্রতিষ্ঠান বলা যায়
না। অবশ্য কোন প্রতিষ্ঠান যদি তার কিছু কিছু কর্মকান্ডে ইসলামি শরীআকে অনুসরণ করে, তাহলে সেটিকে
আংকি ইসলামিক বলা যেতে পারে। একটি প্রতিষ্ঠান প্রকৃতপক্ষে এবং সম্পূর্ণরূপে ইসলামিক তখনই হবে, যখন
সেটি তার কর্মকান্ডের সকল স্তরে ইসলামি শরীআর নীতিমালা পরিপূর্ণভাবে মেনে চলে এবং মেনে চলতে বাধ্য
থাকে।
কেউ কেউ হয়তো মনে করে থাকেন যে, প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থাই তো লেনদেনের জন্য যথেষ্ট। কেননা, এ সকল
ব্যাংকের মাধ্যমেই মামুষ তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে পারে। সুতরাং ইসলামি ব্যাংকের আবার কি
প্রয়োজন আছে? এ প্রসংগে বলা যায় যে, ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। মানুষের রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক, ব্যক্তিগত, বাণিজ্যিক, পারস্পরিক সম্পর্ক, অধিকার প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রেই
মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) জীবন বিধান দিয়েছেন যা মানব জাতির জন্যে কল্যাণকর। অর্থনীতি ও
বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধান তথা ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা কায়েম করতে হলে ইসলামি ব্যাংকের
প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ইসলামি ব্যাংকিং হলো ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার একটি দিক। বর্তমান বিশ্বে অন্তহীন
সমস্যার উৎস হলো অর্থনীতি। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক সামাজিক বৈষম্য, মুদ্রাস্ফীতি, শোষণ, যুলম,
শ্রেণীগত সংঘাত এসবের ক্রমবর্ধমান চাপে বিশ্বমানবতা আজ বিপর্যস্ত। পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র কিংবা মানবরচিত
অন্য কোন অর্থ ব্যবস্থাই মানবতার এ বিপর্যয়কে রোধ করতে পারেনি। এক্ষেত্রে বিশ্ব মানবতার একমাত্র মুক্তির
পথ নিশ্চিত করতে পেরেছে আল্লাহ পাকের নির্দেশিত ও মহানবীর (সা) প্রবর্তিত ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা। ইসলামি
ব্যাংকিং ইসলামি অর্থ ব্যবস্থারই একটি অংশ।
ইসলামি ব্যাংকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই কিছু উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থাকে। ইসলামি ব্যাংকেরও কিছু উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আছে এবং সেগুলো
সম্পূর্ণভাবে ইসলামি শরীআর ভিত্তিতে হতে হবে। কেবলমাত্র মুনাফা অর্জন করা কিংবা সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের
প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া ইসলামি ব্যাংকের মুখ্য উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নয়।
ইসলামি ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নি¤œরূপক. অর্থনীতি ও ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধান পালন করা।
খ. ব্যবসায় বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে ন্যায় বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা।
গ. গরীব, অসহায়, বেকার ও স্বল্প আয়ের লোকদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা।
ঘ. ইসলামি পদ্ধতিতে উৎপাদনশীল ও কল্যাণকর খাতে অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা।
ঙ. সুদ বিহীন ও কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রবর্তন করা।
চ. লাভ-লোকসানের অংশীদারিত্বে পুঁজি গঠন ও বিনিয়োগ করা।
ছ. অর্থ ব্যবস্থায় ধনীকে আরো ধনী হবার এবং গরীবকে আরো গরীব হবার পথ সৃষ্টি না করা।
জ. শ্রমিকের মর্যাদা, অধিকার এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ঝ. ইসলামি ব্যাংককে বিশ্বের দরবারে ইসলামের একটি মডেল হিসেবে দাঁড় করানোর ব্যবস্থা করা।
ঞ. অর্থনীতিতে শোষণ ও যুলমের অবসান ঘটিয়ে আদল ও ইনসাফ কাযেম করা।
ট. মুসলিম বিশ্বে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করে মুসলিম উম্মার উন্নতি ও সংহতি জোরদারে
অবদান রাখা। এমনিভাবে প্রতিটি ইসলামি ব্যাংক ইসলামি শরীআর আলোকে তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারবে।
ক) ইসলামি ব্যাংকের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে১. সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা ২. শরীআ ভিত্তিক ব্যাংকব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা
৩. শোষণ মুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ৪. সকল উত্তরই সঠিক।
খ) ইসলামি ব্যাংকের সংজ্ঞা কত সালে নির্ধারিত হয়?
১. ১৯৮৬ সালে ২. ১৯৮১ সালে
৩. ১৯৬৩ সালে ৪. ১৯৭৮ সালে
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. ইসলামি ব্যাংকের ৩টি সংজ্ঞা দিন।
২. ইসলামি ব্যাংক শরীআ ভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থা-আলোচনা করুন।
৩. ইসলামি ব্যাংকের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরুন।
রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন
১. ইসলামি ব্যাংকের সংজ্ঞা দিন। ইসলামি ব্যাংকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]