মানবাধিকার বলতে কী বুঝেন? ইসলামের দৃষ্টিতে মানবাধিকারের মৌলনীতিমালা স¤পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

 মানবাধিকার সংক্রান্তইসলামী মৌলনীতি স¤পর্কে বর্ণনা দিতে পারবেন।
من ق َتَلَ نَفْسѧا ً ب ِغَیْѧرِ نَفْѧسٍ أ َوْ فَسَѧادٍ فِѧى ٱلأ َرْ ضِ فَكَأ َنَّمَѧا قَتَѧلَ ٱلنَّѧاسَ جَمِ یعѧا ً
وَ مَنْ أ َحْیَاھَا فَكَأ َنَّمَا أ َحْیَا النَّاسَ جَمِ یعا ً (المائدة-٣٢(
٠.١
وَ لاَ تَقْتُل ُوۤ ا ْ أ َوْ لاَدَكُمْ مِّ نْ إمْلاَقٍ نَّحْѧنُ نَѧرْ زُ ق ُكُمْ وَ إ ِیَّѧاھُمْ وَ لاَ تَقْرَ بُѧوا ْ ٱلْفَѧوَ احِ شَ
مَا ظَھَرَ مِ نْھَا وَ مَا بَطَنَ وَ لاَ تَقْتُل ُوا ْ ٱلѧنَّفْسَ ٱل َّتِѧى حَѧرَّ مَ ٱلل َّѧھُ إ ِلا َّ ب ِѧٱلْحَقّ ِ ذٰ لِكُѧمْ
وَ صَّاكُمْ ب ِھِ ل َع َل َّكُمْ تَعْقِل ُونَ (الانعام-١٥١(
٠.٢
٣ .وَ إِذَا ٱلْمَوْ ءُودَةُ سُئِل َتْ ب ِأ َىِّ ذَنبٍ ق ُتِل َتْ (التكویر-٨-٩(
অনুবাদ
১. মানুষ হত্যা অথবা ধ্বংসাত্মক কার্যে লিপ্ত হওয়া ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সকল
মানুষকেই হত্যা করল, আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। (সূলা আলমায়িদা : ৩২)
২. তোমরা দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না। আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযক দিয়ে
থাকি। প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে হোক অশ্লীল কাজের নিকটেও যাবে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন
যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা করবে না। তোমাদেরকে তিনি এ নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা
অনুধাবন কর। (সূরা আল-আন‘আম : ১৫১)।
৩. যখন জীবন্তসমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল? (সূরা আত- তাকবীর :
৮-৯)
শব্দার্থ ও টীকা
قتل منে য ব্যক্তি হত্যা করে,
نفساে কান ব্যক্তিকে
نفس بغیرে কান প্রাণের বিনিময় ব্যতীত
فكأنما তবে সে যেন
احیاھا منে য ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে রক্ষা করে
لاتقتلواে তামরা হত্যা করবে না
املاقদ ারিদ্র্যের ভয়ে
تقربوا لا নিকটে যেওনা
الفواحش অশ্লীল আচরণ, বহুবচন; একবচনে الفاحش
لاقѧام نѧم مѧاولادك واѧتقتل لاদ -ারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা তৎকালীন আরব সমাজে প্রতিষ্ঠিত প্রথা ছিল। তারা
কন্যাদেরকে জীবন্তসমাহিত করতো। আল্লাহ তাআলা এ জঘন্যতর অপরাধ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
অত্র আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদের সন্তান হত্যার কারণটির দিকে ইঙ্গিত করেছেন আর সেটি হল ক্ষুধা-দারিদ্র্যের
ভয়। আল্লাহ তাআলা দারিদ্র্যের ভীতি নিরসনের লক্ষে বলেন, রিযকদাতা তোমরা নও, রিযকের চাবিকাঠি আমার
হাতে, আমিই জীবিকা দান করে থাকি।
বর্তমান যুগে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জন্ম নিরোধ, জন্মনিয়ন্ত্রণ ও গর্ভপাত করণের যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যে
উদ্দেশ্যে মানুষ তা গ্রহণ করছে বর্বরতার যুগেও সে একই কারণ এবং উদ্দেশ্য বিদ্যমান ছিল। জাহেলী যুগ ও বর্তমান
বৈজ্ঞানিক যুগের মধ্যে আদৌ কোন পার্থক্য নেই; পার্থক্য শুধু পদ্ধতিগত।
বর্তমান আধুনিক ব্যবস্থার অনুকূলে আযল (زلѧع (এর যে সব হাদীস বর্ণনা করা হয়ে থাকে, যা ইসলামের প্রাথমিক
যুগের সন্তান হত্যা নিষিদ্ধের বিধান জারি হওয়ার পূর্বেকার ছিল অথবা তা নিরূপায় অবস্থার ক্ষেত্রে বর্ণিত। তবে
নিরূপায় অবস্থায় হারাম বস্তু আহার করার যেরূপ অবকাশ রয়েছে। এমনি কোন স্বাস্থ্যগত কারণ উপস্থিত হলে জীবন
বাঁচানোর উদ্দেশ্যে আযল বা জন্মনিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার অবকাশ রয়েছে। কিন্তু ইসলামী শরীআতে সাধারণভাবে গর্ভপাত
ও জন্মনিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। এরূপ ব্যবস্থা শুধুমানবাধিকার লংঘনই নয় বরং পৃথিবীর মুসলিম
জনসংখ্যা হ্রাস করার এবং মুসলিম চরিত্র হরণ করারই একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মাত্র।
মানবাধিকার কাকে বলে ?
মৌলিক অধিকার এবং মৌলিক মানবাধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার। শব্দগুলো প্রকৃত পক্ষে মানবাধিকার অর্থেই
ব্যবহৃত হয়। অধিকার অর্থ হচ্ছে, মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবন যাপনের জন্য যে
সামাজিক সুযোগ সুবিধা ভোগের দাবি রাখে যা ছাড়া সে মানুষ হিসেবে জীবন ধারণ, জীবনের প্রয়োজন মেটাতে পারে
না এবং তার প্রতিভার বিকাশ ও উন্মেষ ঘটানো সম্ভব নয় সে সকল প্রয়োজন পূরণের লিখিত ব্যবস্থার নামই হচ্ছে
অধিকার।
মানুষ পৃথিবীতে সন্তান হিসেবে, পিতা হিসেবে, বন্ধু হিসেবে, সরকার হিসেবে, নাগরিক হিসেবে, সেনাপতি হিসেবে,
ক্রেতা-বিক্রেতা হিসেবে, ছাত্র-শিক্ষক হিসেবে, মালিক-শ্রমিক হিসেবে যে সকল সুযোগ-সুবিধা অপরিহার্যভাবে
পাওয়ার দাবি রাখে সেগুলোই হচ্ছে মানুষের অধিকার। মানুষ তার জীবন, সম্পদ, খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাসস্থানের
নিশ্চয়তা লাভের ব্যবস্থার নামই মানুষের অধিকার। মানুষের মতামত প্রকাশ, ধর্মীয় নৈতিক জীবনধারা গড়ে তোলার
সংগঠন ও সংস্থা গঠনের অধিকার তার জন্মগত অধিকার। মানুষের মৌলিক অধিকারের নামই হচ্ছে মূলতঃ
মানবাধিকার।
বস্তুত মৌলিক অধিকারের ধারণা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লাস্কি, হার্বাট স্পেনসার, রামজু, মূয়র ও প্রখ্যাত গ্রীক আইনবিদ
ফ্রিডম্যানসহ বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের কাছে বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়া সত্তে¡ও একমাত্র ইসলাম ছাড়া কোন রাষ্ট্র
দর্শন, কোন ধর্মই সকল পর্যায়ে মানুষের অধিকার প্রদান করেনি বরং ধর্ম ও রাষ্ট্র দর্শন উভয়টাই বিভিন্ন শ্রেণীর
মানুষের মৌলিক অধিকার তথা মানব অধিকারকে সংকোচিত ও নিয়ন্ত্রিত করেছে।
এরিষ্টোটল তার রাষ্ট্র দর্শনে মানুষকে ক্রীতদাস ও অভিজাতরূপে বিভক্ত করে ক্রীতদাসদের নাগরিক অধিকার হতে
বিরত রাখার দর্শন উপহার দিয়েছেন।
গ্রীক দার্শনিকগণ ক্রীতদাসদেরকে শুধু বাকশক্তি সম্পন্ন প্রাণীর মর্যাদা দিয়েছে। পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের ভিত্তিতে পরিচালিত
রাষ্ট্রসমূহের সংবিধানে মৌলিক মানবাধিকারের ধারা সংযোজনের পর আবার বিশেষ ধারায় জনগণের অধিকার হরণ
করেছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের প্রণীত কোন বিধানই মানুষের সামগ্রিক মৌলিক অধিকার প্রদান ও মানব অধিকার সংরক্ষণে সুষ্ঠু কোন পদ্ধতি উপহার দিতে পারেনি।
ইসলাম ও মানবাধিকার
বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে কালজয়ী চিরন্তন আদর্শ হিসেবে একমাত্র ইসলামই সকল যুগে মানব সমাজে মানুষের মৌলিক
অধিকার তথা মানবাধিকার প্রদানের সুনিশ্চিত ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে।
অসীম জ্ঞানময়, নিরংকুশ ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ প্রদত্ত পরিপূর্ণ জীবন বিধানই মানবাধিকারের নিশ্চয়তার গ্যারান্টি,
সকল প্রাণী মানুষের অধিকার সংরক্ষণের নিখুঁত ও নির্ভুল জীবন দর্শন হল ইসলাম। আজকের বিশ্বে মানবাধিকার
ভোগের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা একমাত্র ইসলামী জীবন বিধান বাস্তবায়নের মধ্যে নিহিত রয়েছে।
ইসলামই প্রকৃত পক্ষে আদম (আ) থেকে রাসূল করীম (সা)-এর আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্তএবং রাসূলের আবির্ভাব থেকে
কিয়ামত পর্যন্তসকল মানুষের সামাজিক অধিকারসমূহের সুস্পষ্ট বিধান ও মুলনীতি প্রদান করেছে।
ইসলাম শুধু কুরআন অবতীর্ণের পরই শুরু হয়নি। হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল পর্যন্ত
সকল নবী ও রাসূলের দ্বীন-ইসলাম, এক ও অভিন্ন। অবশ্য শরীয়ত বিভিন্ন নবী ও রাসূলের যুগে আলাদা ছিল।
ইসলাম তাওহীদ ও রিসালাতে বিশ্বাসী ও আখিরাতের জবাবদিহিতা ভিত্তিক কালজয়ী চিরন্তন জীবনদর্শন। ইসলাম তথা
আল কুরআন ভিত্তিক জীবনব্যবস্থা মানব জাতিকে যেসব অধিকার দান করেছে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এখানে তুলে ধরা হলো।
জীবন ও প্রাণের নিরাপত্তা
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা লাভ অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ কারণে কোনরূপ কারণ ব্যতীত
এবং আইনের চূড়ান্তবিচারের রায় ছাড়া কোন মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করাকে সমস্তমানুষকে হত্যার সমতুল্য
অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ ঘোষণা করেন, “নর হত্যার অপরাধ প্রমাণিত অথবা সামাজিক জীবনে
ধ্বংসাত্মক কার্যে লিপ্ত হওয়ার অপরাধ প্রমাণিত হওয়া ব্যতিরেকে যারা একজন মানুষকে হত্যা করল, তারা যেন গোটা
বিশ্বের সমগ্র জনগোষ্ঠিকে হত্যা করল।” (সূরা আল-মায়িদা : ৩২) আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, “দারিদ্র্যের
আশংকায় তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমি তোমাদের ও তাদের রিযিকের সংস্থান করি।” (সূরা
আল-আনয়াম : ১৫১)
“আর যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোন অপরাধে তোমাকে হত্যা করা হয়েছে ?” (সূরা আততাকভীর : ৮-৯)
অক্ষম ও দুর্বলদের নিরাপত্তা
আল-কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় যে, নারী-শিশু, বৃদ্ধ, আহত এবং রুগ্নদের উপর সকল অবস্থাতেই হাত
উঠানো নিষেধ, চাই সে নিজের জাতির হোক অথবা শত্রæ পক্ষের। তবে এদের মধ্যে যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ
করে তাদের কথা স্বতন্ত্র।
মহিলাদের মান সম্ভ্রমের হিফাযত
কুরআন থেকে আরো একটি মুলনীতি জানা যায় এবং হাদীসেও তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ আছে যে, সর্বাবস্থায় নারীদের
সতীত্ব, পবিত্রতা ও মানসম্ভ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া অত্যাবশ্যক, চাই সে নারী মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম। নিজ
স¤প্রদায়ের হোক অথবা ভিন্ন স¤প্রদায়ের, মিত্র রাষ্ট্রের হোক অথবা শত্রæ রাষ্ট্রের।
অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও কর্ম সংস্থানের অধিকার
ইসলাম জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ তথা প্রাণীকুলের খাদ্যের নিরাপত্তার অধিকার প্রদান করেছে। দুঃস্থ, পঙ্গু,
ইয়াতীম, মিসকিন ও সকল শ্রেণীর মানুষের জীবিকার নিশ্চয়তা প্রদান ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার অপরিহার্য কর্তব্য। রাসূল
(সা) বলেন, যাদের অভিভাবক নেই, তাদের অভিভাবক আমি।
সুবিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অধিকার
ইসলাম শত্রæ-মিত্র, মুসলিম-অমুসলিম সকল নাগরিকের সুবিচার ও আইনের দৃষ্টিতে মানবাধিকার প্রাপ্তির ঘোষণা
দিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, “কোন বিশেষ দলের শত্রæতা তোমাদের যেনো এতোটা উত্তেজিত না করে (যার ফলে)
তোমরা সুবিচার ত্যাগ করে ফেলবে। ন্যায় বিচার কর ।” (সূরা আল-মায়িদা : ৮)
সৎকাজে সহযোগিতা অসৎ কাজে অসহযোগিতা ঃ
সৎকাজে এবং অধিকার পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে প্রত্যেকের সাথে সহযোগিতা করতে হবে আর খারাপ কাজ ও যুলমের
ক্ষেত্রে কারোরই সহযোগিতা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, “ন্যায় ও খোদাভীতিমূলক কাজে পরস্পর সহযোগিতা কর
এবং গুণাহের কাজে পরস্পর সহযোগিতা করো না।” (সূরা আল-মায়িদা : ২)
সমতার অধিকার
ইসলামের দৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান। যদি কারো প্রাধান্য থেকে থাকে তবে তা নির্ধারিত হবে চরিত্র ও নৈতিকতার
মাপকাঠিতে। এ ব্যাপারে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, “হে মানুষ ! আমি তোমাদের একজন পুরুষ এবং একজন নারী
থেকে সৃষ্টি করেছি-- তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বাধিক খোদাভীরু সেই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানিত।” (সূরা
আল-হুজুরাত : ১৬)
কোন ব্যক্তিকে পাপ কাজ করার নির্দেশ দেয়া যাবে না এবং কোন ব্যক্তিকে যদি পাপ কাজের নির্দেশ দেয়া হয় তাহলে
এই নির্দেশ পালন করা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয় এবং বৈধও নয়। এ ব্যাপারে নবী করীম (সা)-এর স্পষ্ট বাণী
রয়েছে।
যালিমের আনুগত্য করতে অস্বীকার করার অধিকার
কোন যালিমের আনুগত্য দাবি করার অধিকার নেই। পবিত্র কুরআনে এসেছে, “হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে নেতৃত্বের
পদে নিয়োগ করে বলেছিলেন, আমি তোমাকে মানুষের নেতা নিয়োগ করেছি তবে যালিমদের ক্ষেত্রে আমার এ ধরনের
ওয়াদা নেই।”
রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের অধিকার ইসলাম নির্দিষ্ট করেছে এভাবে যে, সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি জাতীয়
সরকারের অংশীদার। সবার পরামর্শক্রমে সরকার গঠন করতে হবে। কুরআনে এসেছে, “আল্লাহ তাআলা তাদের
পৃথিবীর বুকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করবেন।” (সূরা আন-নূর : ৫৫)
আরো বলা হয়েছে, “তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের ভিত্তিতে নিজেদের কাজ সম্পাদন করে।” (সূরা আশ-শূ’রা : ৩৮)
ব্যক্তি স্বাধীনতার সংরক্ষণ
সুবিচার ব্যতিরেকে কারো ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা যাবে না। হযরত উমর (রা) সুস্পষ্টভাষায় বলেছেন, “ইসলামের
নীতি অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না।”
ব্যক্তি মালিকানা সংরক্ষণ
ইসলাম ব্যক্তি মালিকানার স্বীকৃতি দেয়। কুরআন আমাদের সামনে ব্যক্তি মালিকানার চিত্র তুলে ধরেছে। মহান আল্লাহ
বলেন, “তোমরা বাতিল পন্থায় একে অপরের সম্পদ আত্মসাৎ করো না।” (সূরা আল-বাকারা : ১৮৮)
মানসম্মানের হিফাযাত
মান সম্মান ও ইজ্জত আবরূর হিফাজত করার মৌলিক অধিকার প্রতিটি মানুষের রয়েছে। সূরা হুজুরাতের ১১-১২ নং
আয়াতে এ অধিকারের বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে।
গোপনীয়তা রক্ষা করার অধিকার
ইসলামের মৌলিক মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি লোক ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষা করার অধিকার
রাখে। এ ব্যাপারে সূরা আন-নূরে পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে। নিজের ঘর ছাড়া অন্যদের ঘরে অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ
করো না। (সূরা আন-নূর : ২৭)
শিক্ষার অধিকার
ইসলামে সকল স্তরের মানবের উপর জ্ঞানার্জন ও শিক্ষা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “যারা জানে
আর যার জানেনা, তারা কি সমান হতে পারে”? রাসূল (সা) বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন
ফরয।”
যুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার
ইসলাম-প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের মধ্যে একটি হলো যে- কোন ব্যক্তি যুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অধিকার
রাখে। মহান আল্লাহ বলেন, “মানুষ মন্দ কথা বলুক তা আল্লাহ পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি যুলুম করা হয়ে
থাকলে ভিন্নকথা।” (সূরা আন-নিসা : ১৮৮)
মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা
ইসলাম মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। কুরআন তা অন্য পরিভাষায় বর্ণনা করেছে। কুরআনের বাণী হচ্ছে,
“সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় ও অসত্যের প্রতিরোধ করা কেবল মানুষের অধিকারই নয় বরং সকলকে তা পালন
করতে হবে।”
অমুসলিমদের অধিকার
ইসলাম অমুসলিম নাগরিকের ধর্মীয় অধিকারের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে মানবাধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। আলকুরআনে জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরিত করার পদ্ধতিকে পরিহার করার কথা বলা হয়েছে। প্রত্যেক ধর্মের উপাস্যদের
নিন্দাবাদ ও গাল মন্দকে কুরআন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ বলেন, “এক আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য
দেবদেবীর উপাসনা যারা করে তাদের উপাস্যদের তোমরা গালি দিয়ো না।” (সূরা আল-আনআম : ১০৮) মহানবী
(সা) বলেছেন, “অমুসলিমদের জীবন আমাদের জীবনের মত ও তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মত।”
এছাড়াও ইসলাম মানবাধিকারের যে সকল বর্ণনা দিয়েছে তাহলো-
 সভা সংগঠন করার অধিকার
 আকীদা-বিশ্বাসের স্বাধীনতা রক্ষার অধিকার
 মানসিক নির্যাতন থেকে নিজকে সংরক্ষণ করার স্বাধীনতা
 একের অপরাধের জন্য অন্যকে দায়ী করা যাবে না
 সন্দেহের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া যাবে না ইত্যাদি।
সারকথা
ইসলাম মানুষের অধিকার তথা মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছে। এ দর্শন সম্পূর্ণ পরিস্কার এবং পরিপূর্ণ-যা মানুষকে তার
জীবনের সূচনাতেই বলে দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বর্তমান সময়ে দুনিয়াতে মানবাধিকারের যে ঘোষণা
(উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃং) প্রতিধ্বনি হচ্ছে তার না আছে কোন প্রকারের স্বীকৃতি আর না আছে কার্যকর
হওয়ার শক্তি। কিন্তু মুসলমানদের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আল্লাহ এবং তার রাসূল (সা) মানুষের মৌলিক
অধিকারসমূহের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যে রাষ্ট্রই ইসলামী রাষ্ট্র হতে চায় তাকে এ অধিকারগুলো মানুষের নিকট
পৌঁছে দিতে হবে। মুসলমান অমুসলমান সকলকে এ অধিকার দিতে হবে। এ অধিকার দিতে হবে শত্রæ এবং মিত্রকে।
নৈর্ব্যক্তিক উত্তর প্রশ্ন
১. আল-ফাওয়াহেশ শব্দের অর্থ হলক. ষড়যন্ত্র; খ. অপরাধ;
গ. হত্যা; ঘ. অশ্লীলতাসমূহ।
২. আযল শব্দের অর্থ-
ক. জন্মনিয়ন্ত্রণ; খ. সন্তান হত্যা;
গ. জন্মনিরোধ প্রক্রিয়া; ঘ. গর্ভপাত।
৩. মানুষের মৌলিক অধিকারের ধারণা দেনক. সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টোটল; খ. মহাতœা গান্ধী ও নেহেরু;
গ. গেঁটে ও দান্তেএবং মাওসেতুং; ঘ. বিজ্ঞানী লাস্কি, হার্বার্ট ¯েপনসার ও
ফ্রিডম্যান প্রমুখ।
৪. সৎকাজে সহযোগিতা এবং অসৎকাজে অসহযোগিতা-এটি কার নীতি?
ক. জাতিসংঘের; খ. ইসলামের;
গ. সার্কের; ঘ. আরব লীগের।
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোর অনুবাদ করুন।
২. ‘‘দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা সন্তান হত্যা করো না’’ এ বাক্যটির ব্যাখ্যা করুন।
৩. মানবাধিকার বলতে কী বুঝায়? লিখুন।
৪. ইসলামের দৃষ্টিতে মানবাধিকারের ধারণা দিন।
রচনামূলক উত্তর প্রশ্ন
১. মানবাধিকার বলতে কী বুঝেন? ইসলামের দৃষ্টিতে মানবাধিকারের মৌলনীতিমালা স¤পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]