সুদ ও মুনাফার পার্থক্য
আধুনিক বিশ্বে এমনকি আমাদের সমাজেও কেউ কেউ সুদ ও মুনাফাকে একই জিনিস মনে করে থাকে যা
আইয়্যামে জাহেলিয়াতে করা হত। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘‘তারা বলে ব্যবসাতো সুদেরই মত। অথচ
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন, আর সুদকে করেছেন হারাম।’’ বর্তমানে কেউ কেউ সুদকে মুনাফা বলেও
প্রচার করছে এবং কাগজপত্রে ‘সুদ’-এর স্থলে ‘মুনাফা’/ ‘লাভ’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে হারামকে নিজেদের
মনগড়াভাবে হালাল বানানোর চেষ্টা চালাচেছ। তাদের বক্তব্য হচেছ, ‘সুদের অর্থ যেমন অতিরিক্ত, বেশী, বৃদ্ধি,
তদরূপ ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত মুনাফাও তো অতিরিক্ত, বেশী বা বৃদ্ধি। কাজেই সুদ ও মুনাফা একই জিনিস।’’
অথচ সুদ ও মুনাফা কখনো এক জিনিস নয়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এক মনে হলেও এ দু’য়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য
রয়েছে। নি¤েœসুদ ও মুনাফার মধ্যে কয়েকটি মৌলিক পার্থক্য উল্লেখ করা হলঃ
পার্থক্যের বিষয় সুদ মুনাফা
১. সংজ্ঞা অর্থ বা দ্রব্য ঋণ দানের বিপরীতে
সময়ের ভিত্তিতে পুর্ব নির্ধারিত হারে ঋণ
হিসেবে প্রদত্ত মূল অর্থ বা দ্রব্যের
অতিরিক্ত যে অর্থ বা দ্রব্য গ্রহণ করা
করা নির্দিষ্ট হয় তাকে সুদ বলা হয়।
উৎপাদন কিংবা ক্রয় বিক্রয়ের ফলে অথবা
অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মূলধন
বিনিয়োগের ফলশ্রæতিতে মূলধনের
অতিরিক্ত উপার্জিত অর্থ বা স¤পদকে
মুনাফা বলা হয়।
২. নির্ধারক উপাদান সুদের নির্ধারক উপাদান হলো তিনটি;
সময়, সুদের হার ও মূলধনের পরিমান।
নির্দিষ্ট সুদের হারে ধার দেয়া কোন
মূলধনের সুদ ঋণের সময় বৃদ্ধির সাথে
সাথে আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়।
অপরপক্ষে মুনাফা হওয়া না হওয়া কিংবা
কম বেশী হওয়া নির্ভর করে অনুকূল
ব্যবসায়িক লেনদেন, ব্যয়, সাশ্রয় ও
অনুকূল বাজার চাহিদার উপর।
৩. ভিত্তি সুদের ভিত্তি হলো ঋণ। ঋণ থেকেই
সুদের উৎপত্তি। অন্যকথায়, সুদমুক্ত
ঋণ সম্ভব কিন্তু ঋণ ব্যতিরেকে সুদের
উদ্ভব সম্ভব নয়।
মুনাফার ভিত্তি হলো প্রত্যক্ষভাবে দ্রব্য
উৎপাদন ও বিক্রয় কিংবা লাভ-লোকসানে
অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অর্থ ও স¤পদ
বিনিয়োগ করা।
৪.ঝুঁকি (তহবিল
মালিকের দৃষ্টিকোণ
থেকে)
সুদের বেলায় ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি
প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ মালিক পুঁজি
খোয়াবার ঝুঁকি বহন করে না।
মুনাফার বেলায় ক্ষতি হবার ঝুঁকি
প্রযোজ্য। অন্য কথায় মালিক স¤পূর্ণ বা
আংশিক পুঁজি খোয়াবার ঝুঁকি বহন করে।
৫.ঝুঁকি (তহবিল
ব্যবহারকারীর দৃষ্টিকোণ্
থেকে)
একটি ফার্মের মূলধন কাঠামোতে
সুদযুক্ত ঋণের পরিমান যত বৃদ্ধি পায়
ফার্মটি তত বেশী ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত
হয়। নতুন বিনিয়োগকারীগণ ঋণ
ভারাক্রান্ত ফার্মে বিনিয়োগ করতে
নিরূৎসাহিত হয়।
৪.লাভ লোকসানে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে
যে কোন পরিমাণ বিনিয়োগ ফার্মের আর্থিক
ঝুঁকি বৃদ্ধি করে না। যত বেশীই ঝুঁকি
(তহবিল মালিকের দৃষ্টিকোণ থেকে)
৬. সুবিধা প্রাপক ঋণদাতা নিজেই কেবল সুদের সুবিধা
লাভ করে থাকেন। অর্থাৎ সুদের সব
টাকাগুলো চলে যায় ঋণদাতার
অন্যদিকে ইসলামি বিনিয়োগ ব্যবস্থায়
মুনাফা বাবদ প্রাপ্য অর্থ পুজির
যোগানদাতা ও পুঁজির ব্যবহারকারী
পকেটে। উদ্যোক্তার মাঝে চুক্তি অনুপাতে বন্টন
করা হয়।
৭. নিশ্চয়তা সুদের হার ও সময় পূর্ব নির্ধারিত বিধায়
এক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার কোন উপাদান
নেই। ঋণদাতা নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণের
বিপরীতে নির্দিষ্ট সময় শেষে সুদ পাবেন
তা আগে থেকেই জানতে পারেন।
সময় যেহেতু মুনাফা নির্ধারণের কোন
নিয়ামক উপাদান নয় এবং মুনাফার হার
যেহেতু পূর্ব নির্ধারিত হয় না সেহেতু
একজন বিনিয়োগকারী নির্দিষ্ট পরিমাণ
বিনিয়োগে আদৌ মুনাফা পাবেন কি না
অথবা কি হারে বা কি পরিমাণ পাবেন তার
কোন নিশ্চয়তা লাভ করা সম্ভব হয় না।
৮. ফলাফলের
গণনাসংখ্যা
একটিমাত্র ঋণচুক্তির অধীনে ঋণদাতা
দীর্ঘকালব্যাপী একই পরিমাণ সুদ
বারবার পেতে থাকে।
পক্ষান্তরে ক্রয়-বিক্রয়ের ফলে অর্জিত
মুনাফা একবারই পাওয়া যায় এবং
বিনিয়োগ চুক্তির অধীনে মুনাফা অর্জন
সাপেক্ষেই পাওয়া যায় বিধায় একই ফল
বারবার পাওয়ার প্রশ্ন আসে না।
৯. নির্ণয় পণালী সুদ নির্ণয়ের ফর্মূলা নিরূপঃ
সুদ = ঢ়(ঃ+ৎ)ঃ যেখানে,
ঢ়= আসল
ৎ = সুদের হার
ঃ = সময়
মুনাফা নির্ণয়ের ফর্মূলা নিরূপঃ মুনাফা=
বিক্রয় (পরিবর্তনশীল ব্যয় + স্থির ব্যয়)
১০.দাম স্তরের উপর
প্রভাব
সুদ একটি স্থির ব্যয় হিসেবে বিবেচিত
হয় বলে অনিবার্যভাবে দাম স্তরের বৃদ্ধি
ঘটায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে মূল্যস্ফীতির
প্রসার ঘটায়।
অপরপক্ষে মুনাফা ব্যয় হিসেবে বিবেচিত
হয় না বলে অনিবার্যভাবে দামের বৃদ্ধি
ঘটায় না, ফলে মূল্যস্ফীতির প্রসারে
সরাসরি কোন প্রভাব রাখে না।
১১. ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গী সুদ ইসলামে চুড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ।
কোনভাবেই সুদ বৈধ হওয়ায় কোন
সুযোগ নেই।
অন্যদিকে মুনাফা ইসলামে অনুমোদিত।
ইসলাম অবশ্যই স্বাভাবিক মুনাফা অর্জনে
উৎসাহিত করে এবং মুনাখোরী নিষিদ্ধ
করে।
১২. মূলধন সংরক্ষণ সুদী ব্যবস্থায় মূলধন সর্বাবস্থায়
সুরক্ষিত। অর্থাৎ ঋণগ্রহীতার ব্যবসায়
উদ্যোগ ব্যর্থ হলেও ঋণদাতার
মূলধনের উপর তার বিন্দুমাত্র আঁচড়
লাগে না।
ব্যবসায় কিংবা লাভ-লোকসানে
অংশীদারিত্বের বিনিয়োগের বেলায়
লোকসান হলে বিনিয়োগকৃত মূলধন
আনুপাতিক হারে হ্রাস পায়।
১. সুদ হচ্ছেক. সুদ ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট হারে মূলধনের অতিরিক্ত অর্থগ্রহণ
খ. বিনিয়োগকৃত মূলধনের অতিরিক্ত অর্থ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গ্রহণ
গ. ঋণের বিপরীতে যে কোন অর্থ গ্রহণ
ঘ. সব ক’টি উত্তরই সঠিক।
২. সুদের ভিত্তি কী?
ক. ঋণ খ. স¤পদ
গ. অশীদারিত্ব ব্যবস্থা ঘ. মুনাফা
৩. অংশীদারিত্ব ব্যবস্থায় ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে কী?
ক. থাকে না খ. অল্প থাকে
গ. ঝুঁকি থাকে ঘ. সকল উত্তরই ভুল।
৪. ইসলামি দর্শনে সুদের বিধান কী?
ক. চ‚ড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ খ. শুধু বিনিয়োগের উপর বৈধ।
গ. অল্প সুদ বৈধ ঘ. ঋণের উপর অতিরিক্ত রিবা আল-ফাদল বৈধ।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. সুদ ও মুনাফার মধ্যে পার্থক্য কী? বিস্তারিত আলোচনা করুন।
সুদের কুফল
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত