জাতি হিসাবে বনী ইসরাঈলের আবির্ভাব

আগেই বলা হয়েছে যে, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের বংশ হতেই ইহুদী জাতির উৎপত্তি। হযরত ইয়াকুবের ১২ জন ছেলের ৪র্থ ছেলের নাম ছিলো ‘ইয়াহুদা'। এ ছেলের ঔরষ থেকেই বনী ইসরাঈলের বারটি বংশের উৎপত্তি ঘটে ।
কুরআন ও বাইবেলের বর্ণনানুযায়ী ভাইদের কারসাজী ও ষড়যন্ত্রের ফলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম পিতা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার পর আল্লাহ তাআলার সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যখন মিসরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বসলেন। তখন দেশ ব্যাপী দুর্ভিক্ষের ফলে ভিক্ষার সন্ধানে আসা ষড়যন্ত্রকারী ভাইদের সাথে ঘটনাক্রমে হযরত ইউসুফের দেখা হয়ে যায়। সব গোপন রহস্য উদ্ঘাটন হবার পর হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম পিতা হযরত ইয়াকুব সহ গোটা পরিবারকে মিসরে ডেকে নিয়ে এলেন। তখন সেই পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিলো সর্ব সাকুল্যে মাত্র ৬৭জন । এ জনসংখ্যার মধ্যে হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের পরিবারের বিবাহিত মেয়েরা গণ্য ছিলো না। এ বংশধারাই পরবর্তীতে ইহুদী জাতি হিসাবে জগতে খ্যাত হয়েছে।
হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের প্রায় পাঁচ শত বছর পর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম মিসরে আগমন করলেন। তিনি এ বনী ইসরাঈল গোত্রের নবী ছিলেন। মিসরের মূল অধিবাসি কিন্তী জাতির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলকে সাথে নিয়ে যখন মিসর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তখন বনী ইসরাঈলের জনসংখ্যা ছিলো প্রায় এক লাখের মতো।
বাইবেলের বর্ণনানুযায়ী বনী ইসরাঈলরা হযরত মূসার নেতৃত্বে মিসর থেকে বেরিয়ে যাবার দ্বিতীয় বছরেই হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ‘সায়না' উপত্যকায় বনী ইসরাঈল জাতির আদম শুমারী করিয়েছিলেন। এ আদম শুমারীতে শুধু যুদ্ধ উপযোগী পুরুষদের সংখ্যাই ছিলো, ৬০৩,৫৫০ জন। এর অর্থ হলো নারী, পুরুষ, শিশু সহ সকলে মিলে মোট লোক সংখ্যা অন্ততঃ বিশ লাখের মতো গিয়ে দাঁড়াবে সাতষট্টি সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবারের লোক সংখ্যা পাঁচশত বছরে এতবেশী হওয়া সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। এতে বুঝা যায় বনী ইসরাঈলীদের ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগের ফলে জনসংখ্যা এত বেশী বৃদ্ধি পেয়েছিলো। এদের এ তাবলীগের ফলেই অনেক কিন্তী বংশীয় মিসরীয়রা ইসলাম গ্রহণ করে বনী ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিলো ।
মনে হচ্ছে বনী ইসরাঈলীদের ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ফলে মিসরবাসীদের শুধু ধর্মই পাল্টিয়ে যায়নি বরং গোটা কৃষ্টি কালচার এবং জীবন চলার পথও ধর্মীয় রঙ্গে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিলো। বাইবেল গ্রন্থে এসব নওমুসলিমদেরকেই ‘মিশ্রিত দল' বা 'অজানা' 'প্রতিবেশী' ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এসব নব দীক্ষিত লোকজনরাও বনী ইসরাঈলের সাথে হযরত মূসার ডাকে মিসর হতে বনী ইসরাঈল হিসাবে বেরিয়ে গিয়েছিলো ।
এভাবে একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বনী ইসরাঈলীরা মিসরীয় কিবতীদের গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ ছিলো। এদের উপর কিবতীদের অত্যাচার চলতো । এরপর আল্লাহর অশেষ রহমত হলো। বনী ইসরাঈল বংশে আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে পাঠালেন। তিনি যেনো এ জাতিকে আবার প্রথম থেকে সত্যের দাওয়াতের উপর কায়েম করেন। শৃংখল মুক্ত করেন। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম মূলত তাই করেছেন। তিনি আবির্ভূত হয়েই বনী ইসরাঈলকে দুর্বিসহ লাঞ্ছিত জীবন থেকে উদ্ধার করেন।
আল্লাহ তাআলার এত অবারিত রহমতের পরও বনী ইসরাঈলীরা বেঈমানী ও বদমাইশীর পথ বেছে নিলো। নবীর কথা অমান্য করে সীমালংঘন করলো । তাদের উপর আল্লাহ তাআলার অতীত দিনের অফুরন্ত দয়া ও মেহেরবানীর কথা ভুলে গেলো। আল্লাহর সেসব মেহেরবানীর কথা উল্লেখ করে কুরআন বলছে : يُبَنِي إِسْرَاءِ يْلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَانّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَلَمِينَ ، وَاتَّقُوا يَوْمًا لأَتَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَيْئًا وَلا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلاَ هُمْ يُنصَرُونَ وَإِذْ نَجَّينكم من ال فرعون يسومُونَكُم ، سوء الْعَذَابِ يُذَبِّحُونَ أَبْنَاءَ كُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءَ كُمْ ط - البقرة : ٤٩٤٧
“হে বনী ইসরাঈল জাতি ! স্মরণ করো আমার ঐসব নেয়ামতসমূহ যা দ্বারা আমি তোমাদেরকে সৌভাগ্যবান বানিয়েছিলাম। আরো স্মরণ করো ঐ সময়ের কথা। যখন আমি তোমাদেরকে দুনিয়ার জাতিসমূহের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি এবং সেই দিনের ভয়ঙ্কর, যেদিন কেউ কারো কাজে
আসবে না, কারো সম্পর্কে কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না, কোনো কিছুর বিনিময়ে কাউকে ছেড়ে দেয়া হেব না এবং পাপীদের কোনো দিক থেকেই সাহায্য করা হবে না। স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন আমরা তোমাদিগকে ফেরাউনী দলের দাসত্ব থেকে মুক্তিদান করেছিলাম —তারা তোমাদেরকে কঠিন যাতনায় নিক্ষেপ করে রেখেছিল। তারা তোমাদের ছেলে সন্তানদেরকে হত্যা করে কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত রাখতো।”-সূরা আল বাকারা : ৪৭-৪৯
কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত মিসরীয়দের গোলামীর শৃংখলে আবদ্ধ থেকে এ জাতি বনী ইসরাঈলী ইহুদীরা মান সম্মান বোধ, মান মর্যাদার সকল গুণাগুণ এবং মানবীয় সকল মূল্যবোধ হারিয়ে বসেছিলো বলে মনে হয়। যেসব গুণাগুণ একটি জীবন্ত জাতির জীবন চলার পথের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয় তা তারা ভুলেই গিয়েছিলো । তাদের মধ্যে নিজেদের উন্নত জীবন বোধের কোনো আকর্ষণই ছিল না। এজন্য ত্যাগ তিতিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কোনো আবেগ অনুভূতি, কামনা বাসনার অণুপরমাণুও তাদের মধ্যে অবশিষ্ট ছিল না ।
মিসর থেকে বের হয়ে আসার পর সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করার সময় আল্লাহ তাআলা প্রখর রৌদ্রতাপ থেকে বাঁচার জন্য তাদের উপর রহমত স্বরূপ- ‘মেঘমালা' দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। আকাশ থেকে অদৃশ্যভাবে খাবার হিসাবে বিনা পরিশ্রমে তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা ‘মান্না ও সালওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কুরআনে আল্লাহ তাদের উপর এ রহমতের উল্লেখ করে বলেছেন :
وظَلَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْغَمَامَ وَأَنْزَلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ والسلوى ، كُلُوا مِنْ طَيِّبَتِ مَا رَزَقْنكُمْ .
“আমি তোমাদের উপর মেঘমালা দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম । ‘মান্না ও সালওয়া’ দিয়ে রিযিক সরবরাহ করেছিলাম। যে পবিত্র জিনিস আমি তোমাদেরকে দান করেছি তা তোমরা খাও।”-সূরা বাকারা : ৫৭
ইহুদীরা একটি বেঈমান বিদ্ৰোহী জাতি আল্লাহর এতসব রহমত ও দয়া এবং উত্তম রিযিক পাওয়া সত্ত্বেও বনী ইসরাঈল তথা ইহুদী জাতি মিসরে যেসব নগণ্য জিনিস খাবার হিসাবে পেতো তা আবার পাবার জন্য বার বার হযরত মূসা আলাইহিস সালামের নিকট দাবী করতে লাগলো ।
বাইবেলের যাত্রাপুস্তকে বর্ণিত আছে :
“আর মিসর দেশ হইতে প্রস্থান করিবার পর দ্বিতীয় মাসের পঞ্চদশ দিনে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলী সীন প্রান্তরে উপস্থিত হইল, তাহা এলীমের ও সীনয়ের মধ্যবর্তী। তখন ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত মণ্ডলী মোশির ও হারোণের বিরুদ্ধে প্রান্তরে বচসা করিল ; আর ইস্রায়েল- সন্তানেরা তাঁহাদিগকে কহিল, হায়, হায়, আমরা মিসর দেশে সদাপ্রভুর হস্তে কেন মরি নাই ? তখন মাংসের হাঁড়ীর কাছে বসিতাম, তৃপ্তি পর্যন্ত রুটী ভোজন করিতাম ; তোমরা ত এই সমস্ত সমাজকে ক্ষুধায় মারিয়া ফেলিতে আমাদিগকে বাহির করিয়া এই প্রান্তরে আনিয়াছ ।” -যাত্রাপুস্তক ১৬ : ১-৩
এ ঘটনা সম্ভবতঃ আকাশ হতে আল্লাহর রহমতের 'মান্না ও সালওয়া নাযিল হবার আগের ছিলো আল্লাহ তাআলা তার রহমতে তাদের জন্য এ দুর্গম জঙ্গলে মান্না ও সালওয়ার মতো নিয়ামাত পাঠাবার পরও তাদের বেঈমানী ও বিদ্রোহের আচরণ শেষ হয়নি । বাইবেলের গণনাপুস্তকের ১১ অধ্যায়ে আছে :
“আর তাহাদের মধ্যবর্তী মিশ্রিত লোকেরা লোভাক্রান্ত হইয়া উঠিল ; আর ইস্রায়েল-সন্তানগণও পুনর্ব্বার রোদন করিয়া কহিল, কে আমাদিগকে ভক্ষণার্থে মাংস দিবে ? আমরা মিসর দেশে বিনামূল্যে যে যে মাছ খাইতাম, তা এবং সশা, খরবুজ, পরু, ফরাণ্ডু ও লশুন মনে পড়িতেছে। এখন আমাদের প্রাণ শুষ্ক হইল ; কিছুই নাই ; আমাদের সম্মুখে এই মান্না ব্যতীত আর কিছুই নাই ।”গণনাপুস্তক ১১ঃ ৪-৭
বনী ইসরাঈলের এ বেঈমানী ও বিদ্রোহের কথা আল্লাহ পাক কুরআনে উল্লেখ করে বলেছেন :
وَإِذْ قُلْتُمْ يمُوسى لَن نَّصْبِرَ عَلَى طَعَامٍ واحد فَادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا تُنْبِتُ الْأَرْضُ مِنْ بَعْلِهَا وَقِثَّانِهَا وَفُوْمِهَا وَعَدَسَهَا وَبَصَلِهَا ، قَالَ أَتَسْتَبْدِلُونَ الَّذِي هُوَ أدْنى بِالَّذِي هُوَ خَيْرٌ، َاهْبِطُوا مِصْرًا فَإِنَّ لَكُمْ ما سَأَلْتُمْ .
“তোমরা সেই ঘটনা স্মরণ করো যখন তোমরা বলেছিলে, হে মূসা! আমরা প্রতিদিনই একই ধরনের খাবারে (মান্না ও সালওয়া) আর ধৈর্যধারণ করতে পারছি না। আপনার রবের নিকট দোয়া করুন। যেনো তিনি জমির উৎপাদিত ফসল শাক-শবজি, কাঁকড়ি, গম, মশুরী, রসূন, পেয়াজ, ডাল ইত্যাদি উৎপাদন করেন। তখন হযরত মূসা বললেন, তোমরা কি একটি উত্তম জিনিসের পরিবর্তে নিম্নমানের জিনিস গ্রহণ করতে চাচ্ছো ? যদি তাই হয় তাহলে মিসরের গিয়ে থাকো। তোমরা যা চাও ওখানে গিয়ে পাবে।”-সূরা আল বাকারা : ৬১
মরুভূমিতে তারা যখন পিপাসায় বড় কাতর হয়ে পড়লো, আবার হযরত মূসা ও হারুণের সাথে ঝগড়া শুরু করলো। তাওরাতের (বাইবেল) গণনাপুস্তকে বর্ণিত হয়েছে :
“আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ, অর্থাৎ সমস্ত মণ্ডলী প্রথম মাসে সীন প্রান্তরে উপস্থিত হইল, এবং লোকেরা কাদেশে বাস করিল ; আর সেই স্থানে মরিয়মের মৃত্যু হইল ও সেই স্থানে তাঁহার কবর হইল। সেই স্থানে মণ্ডলীর জন্য জল ছিল না ; তাহাতে লোকেরা মোশির ও হারোণের প্রতিকূলে একত্র হইল । আর তাহারা মোশির সহিত বিবাদ করিয়া কহিল, হায়, আমাদের ভ্রাতৃগণ যখন সদাপ্রভুর সম্মুখে মরিয়া গেল, তখন কেন আমাদের মৃত্যু হইল না ? আর তোমরা আমাদের ও আমাদের পশুদের মৃত্যুর জন্য সদাপ্রভুর সমাজকে কেন এই প্রান্তরে আনিলে ? এই কুস্থানে আনিবার জন্য আমাদিগকে মিসর হইতে কেন বাহির করিয়া লইয়া আসিলে ? এই স্থানে চাস কি ডুমুর কি দ্রাক্ষা কি দাড়িম্ব হয় না, এবং পান করিবার জলও নাই। তখন মোশি ও হারোণ সমাজের সাক্ষাৎ হইতে সমাগম-তাম্বুর দ্বারে গিয়া উবুড় হইয়া পড়িলেন ; আর সদাপ্রভুর প্রতাপ তাঁহাদের দৃষ্টিগোচর হইল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি যষ্টি লও, এবং তুমি ও তোমার ভ্রাতা হারোণ মণ্ডলীকে একত্র করিয়া তাহাদের সাক্ষাতে ঐ শৈলকে বল, তাহাতে সে নিজ জল প্রদান করিবে ; এইরূপে তুমি তাহাদের নিমিত্তে শৈল হইতে জল বাহির করিয়া মণ্ডলীকে ও তাহাদের পশুগণকে পান করাইবে। তখন মোশি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাঁহার সম্মুখ হইতে ঐ যষ্টি লইলেন। আর মোশি ও হারোণ সেই শৈলের সম্মুখে সমাজকে একত্র করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, হে বিদ্রোহিণ, শুন; আমরা তোমাদের নিমিত্তে কি এই শৈল হইতে জল বাহির করিব ? —গণনাপুস্তক ২০ : ১-১০
ঠিক এ ঘটনাটি কুরআনেও উল্লেখ করা হয়েছে । কুরআন বলছে : وَإِذِ اسْتَسْقَى مُوسَى لِقَوْمِهِ فَقُلْنَا اضْرِب بَعَصَاكَ الْحَجَرَ ، فَانْفَجَرَتْ مِنْهُ اثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًا ، قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُناسٍ مَّشْرَبَهُمْ ط - البقرة : ٦٠
“মূসা তার জাতির জন্য আল্লাহর কাছে পানির জন্য যে দোয়া করেছিলো তা স্মরণ করো । আমি তখন বললাম, অমুক পাথরের উপর তোমার লাঠি দিয়ে আঘাত করো। (মূসা তাই করলো) এবং পাথর হতে বারটি ঝরণাধারা প্রবাহিত হলো। প্রতিটি গোত্র জেনে নিলো কোন্ ঝরণা হতে কে পানি গ্রহণ করবে।”-সূরা আল বাকারা : ৬০
কুরআন পাকে আছে : ولَقَدْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَاءِ يْلَ ، وَبَعَثْنَا مِنْهُمُ اثْنَى عَشَرَ نَقِيبًا ، وَقَالَ نِّي مَعَكُمْ ط - الله
“আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাঈল থেকে মযবুত ওয়াদা গ্রহণ করেছিলেন। এবং তাদের মধ্যে বারজন নকীব (পর্যবেক্ষক) নিযুক্ত করেছিলেন 1 তাদেরকে তিনি বলেছিলেন : আমি তোমাদের সাথে আছি।” -সূরা আল মায়েদা : ১২
এ বারজন নকীব ঠিক করার কারণ, তাদের বড় বড় বারটি খান্দান ছিলো। প্রতিটি খান্দানের জন্য একজন নকীব (পর্যবেক্ষক) ঠিক করে দিয়েছিলেন। এভাবে বারটি পানির ঝরণা ফেটে বের হওয়া তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার ছিলো বাড়তি পুরস্কার। এ বারটি পানির ঝরণা থেকে বারটি খান্দান পৃথক পৃথকভাবে পানি নেয়ার কারণে কোনো ঝগড়া ঝাটি হবার আশংকা থাকলো না। এ বারজন নকীব স্বগোত্র হতেই নিযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ প্রতিটি নকীব সংশ্লিষ্ট খান্দানের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখে তাদেরকে বেদ্বীনি ও অসততা থেকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন ।
ঐ সময়েই আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে চল্লিশ দিনের জন্য নিজের কাছে ডেকে নিলেন। উদ্দেশ্য, বনী ইসরাইলের হেদায়াত ও পথ প্রদর্শনের জন্য তাকে তাওরাত কিতাব দান করা । তাঁর এ অনুপস্থিতির সময় বনী ইসরাইলরা আশেপাশের লোকজনের দেখাদেখি এবং নিজেদের মেকী দ্বীনদারীর কারণে আবার মূর্তিপূজার মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে গেলো ।
বাইবেলে এ ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে : “পৰ্ব্বত হইতে নামিতে মোশির বিলম্ব হইতেছে দেখিয়া লোকেরা হারোণের নিকটে একত্র হইয়া তাঁহাকে কহিল, উঠুন, আমাদের অগ্রগামী হইবার জন্য আমাদের নিমিত্ত দেবতা নির্মাণ করুন, কেননা যে মোশি মিসর দেশ হইতে আমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, সেই ব্যক্তির কি হইল, তাহা আমরা জানিনা। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি নামিয়া যাও, কেননা তোমার যে লোকদিগকে তুমি মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছ, তাহারা ভ্রষ্ট হইয়াছে। আমি তাহাদিগকে যে পথে চলিবার আজ্ঞা দিয়াছি, তাহারা শীঘ্রই সেই পথ হইতে ফিরিয়াছে ; তাহারা আপনাদের নিমিত্তে এক ছাঁচে ঢালা গোবৎস নির্ম্মাণ করিয়া তাহার কাছে প্রণিপাত করিয়াছে, এবং তাহার উদ্দেশে বলিদান করিয়াছে ও বলিয়াছে, হে ইস্রায়েল, এই তোমার দেবতা, যিনি মিসর দেশ হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। সদাপ্রভু মোশিকে আরও কহিলেন, আমি সেই লোকদিগকে দেখিলাম ; দেখ, তাহারা শক্তগ্রীব জাতি । এখন তুমি ক্ষান্ত হও, তাহাদের বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হউক, আমি তাহাদিগকে সংহার করি, আর তোমা হইতে এক বড় জাতি উৎপন্ন করি।”-যাত্রাপুস্তক ৩২ : ১, ৭-১০
বাইবেল এ গো-বাছুর পূজার মধ্যে হযরত হারুন আলাইহিস সালামকেও জড়িত করে দিয়েছে কিন্তু কুরআন এর প্রতিবাদ করেছে ও বলে দিয়েছে যে, বাছুর বানানোর কাজ ছিলো সামেরীর, আল্লাহর নবীর নয় ।
প্রকৃত ঘটনা একেবারই এর বিপরীত। প্রকৃত ঘটনা হলো বনী ইসরাঈলকে হিদায়াত ও পথ চলার নির্দেশ দিয়ে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তাদের থেকে পৃথক হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। হযরত মূসার প্রতিনিধিত্বকারী হযরত হারুন আলাইহিস সালাম স্বয়ং তাদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলেন। তাদেরকে এ সুস্পষ্ট ভ্রষ্ঠতা ও গুমরাহী হতে ফিরিয়ে রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। ব্যাপারটা কুরআন বর্ণনা করেছে এভাবে :
وَإِذْ وَعَدْنَا مُوسَى ارْبَعِينَ لَيْلَةً ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِنْ بَعْدِهِ وَأَنْتُمْ ظَلِمُونَ ثُمَّ عَفَوْنَا عَنْكُمْ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ٥ - البقرة : ٥٢.٥١
“স্মরণ করো আমি যখন মূসাকে চল্লিশ রাত দিনের ওয়াদা করে ডেকে এনেছিলাম । তার পর পরই তোমরা গোবৎসকে তোমাদের মাবুদ বানিয়ে বসেছিলে। এ সময়ে তোমরা বড় বেশী বাড়াবাড়ি করেছিলে । কিন্তু এতসবের পরও আমি তোমাদেরকে মাফ করে দিয়েছি। আশা ছিলো তোমরা কৃতজ্ঞ হবে।”-সূরা আল বাকারা : ৫১-৫২
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ يقوم اِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ أَنْفُسَكُمْ -
“স্মরণ করো যখন মূসা তার জাতির লোকদেরকে বললো –হে লোক সকল! তোমরা গো-বাছুরকে মাবুদ বানিয়ে নিজেদের উপর বড় জুলুম করেছো।”-সূরা আল বাকারা : ৫৪
وَاتَّخَذَ قَوْمُ مُوسَى مِنْ بَعْدِهِ مِنْ حَلِيهِم عِجلاً جَسَدًا لَّهُ خَوَارٌ، اَلَمْ يَرَوْا أَنَّهُ لا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيهِمْ سَبِيلاً . اتَّخَذُوهُ وَكَانُوا ظَلِمِينَ وَلَمَّا سُقِطَ فِي م ، أَيْدِيهِم وَرَاَوْ أنْهم قَدْ َضلُّوا ، قَالُوا لَئِنْ لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَسِرِينَ وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَى إِلى قَوْمِهِ غَضَبَانَ آسِفًا لا قَالَ بِئْسَمَا خَلَفْتُمونِى مِن بَعدِى أعجِلتُم أمر رَبِّكُمْ ج - الاعراف : ١٤٨-١٤٩
“মূসা চলে যাওয়ার পরে তার জাতির লোকেরা তাদের অলংকারাদি দিয়ে একটি গো বাছুরের মূর্তি বানালো। যার মধ্য থেকে গরুর আওয়াজের মতো ‘হাম্বা’ আওয়াজ বেরুচ্ছিলো তারা কি দেখেছিলো না যে, সে গো- বাছুরটি না তাদের সাথে কথা বলছে, আর না কারো কাছে পথ প্ৰদৰ্শন করছে। এরপরও তারা একে মাবুদ বানিয়ে নিলো। তারা ছিলো বড়ই জালিম। এরপর যখন তাদের ধোঁকাবাজীর তেলেসমাতি চুরমার হয়ে গেলো এবং তারা দেখলো প্রকৃতপক্ষে তারা গোমরাহ হয়ে গেছে তখন বলতে লাগলো । আমাদের রব যদি আমাদের উপর করুণা না করেন এবং আমাদেরকে মাফ করে না দেন তাহলে আমরা বরবাদ হয়ে যাবো। এ দিকে হযরত মূসা দারুণ রাগ ও মনোকষ্ট নিয়ে নিজ জাতির কাছে ফিরে এসেই বললেন । আমার পরে তোমরা খুবই খারাপ প্রতিনিধিত্ব করেছো । তোমরা তোমাদের রবের হুকুম আসা পর্যন্তও কি ধৈর্যধারণ করে অপেক্ষা করতে পারলে না ?”-সূরা আল আরাফ : ১৪৮-১৫০
এ জাতির বেঈমানী ও গুমরাহীর সীমা কতো বেড়ে গিয়েছিলো একটু চিন্তা করলে অনায়াসে তা বুঝা যায় । এসব ঘটনা ঘটার মাত্র কিছুদিন আগেই বনী ইসরাঈলরা মিসর থেকে বেরিয়ে এসেছে। তারা নিজ চোখে তাদের উপর ফেরাউনীদের অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেছে। আল্লাহ কিভাবে তাদের এ নিষ্ঠুর জুলুম নির্যাতন থেকে মুক্তি দিয়েছেন তা-ও তাদের চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে। ফিরাউন ও তার বাহিনী তাদের চোখের সামনেই নীল নদে ডুবে মরেছে। তাদের জন্য সমুদ্রের পেট চিরে একটি শুকনো রাস্তা তৈরী হয়ে যাবার অলৌকিক ঘটনা বনী ঈসরাঈলীরা নিজ চোখে দেখেছে। এতসবের পরও এ জালিম জাতি তাদের বিদ্রোহী আচরণ ছেড়ে দেয়নি । নিজের মূর্খতা হতে ফিরে আসেনি। সূরা আল আরাফে আছে ফিরাউন বাহিনীর হাত থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া,সমদ্র পার হয়ে আসার পর থেকেই এ লোকেরা প্রকাশ্যভাবে মূর্তি পূজার মানসিকতা প্রকাশ করতে শুরু করলো । কুরআনের বর্ণনা ঃ
بِبَنِي إِسْرَاءِ يْلَ الْبَحْرَ فَأَتَوْا عَلَى قَوْمٍ يَعْكُفُونَ عَلَى أَصْنَامٍ لَّهُمْ ، وَجَوَرْنَا قَالُوا يَمُوسَى اجْعَلْ لَّنَا إِلَها كَمَا لَهُمْ الهَةٌ ، قَالَ إِنَّكُمْ قَوْم تَجْهَلُونَ إِنَّ مُتَبَّرٌ مَّا هُم فِيهِ وَبِطِلٌّ مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ ) الاعراف : ۱۳۸-۱۳۹
“বনী ইসরাঈলদেরকে আমি সমুদ্র পার করে দিয়েছি। তারপর তারা চলতে শুরু করলো। পথিমধ্যে এমন এক জাতির কাছ দিয়ে তারা যাচ্ছিলো যারা নিজেদের বানানো মূর্তির প্রতি আসক্ত ছিলো। (এ সময় বনী ইসরাঈলীরা) বলতে লাগলো, হে মূসা! আমাদের জন্যও এমন মাবুদ বানিয়ে দাও যেমন মাবুদ এ লোকদের আছে। মূসা বললেন, তোমরা খুবই মূর্খতাপূর্ণ কথাবার্তা বলছো। এরা যে পদ্ধতি অনুসরণ করছে তারাতো তাদেরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর যে আমল তারা করছে তা তো সরাসরি বাতিল।”-সূরা আল আরাফ : ১৩৮-১৩৯
তাদের এ মানসিকতাকে কুরআন—“এদের হৃদয়ে গো-বাছুর স্থান করে নিয়েছে” এ ভাষায় প্রকাশ করেছে। আর এ কারণেই আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমানের পরীক্ষার জন্য তাদেরকে গাভী যবেহ করার হুকুম দেয়া হয়েছিলো । এ হুকুম পালনে তারা যে ধরনের ছলচাতুরী ও তাল বাহানার আশ্রয় নিয়েছে তা থেকেও বুঝা যায় গো-বাছুর পূজার রোগ কি পরিমাণ তাদের মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করেছিলো। মিসরবাসীর গোলামী করার কারণে বনী ইসরাঈলদের মন- মানসিকতা কি পরিমাণ হীন জঘন্য হয়ে গিয়েছিলো তা একথা হতেও অনুমান করা যায়। মিসর হতে বেরিয়ে আসার সত্তর বছর পর হযরত মূসার প্রথম খলিফা হযরত ‘ইউশা বিন নূন' তার শেষ ভাষণে বনী ইসরাঈলের জন সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন : “অতএব এখন তোমরা সদাপ্রভুকে ভয় কর, সরলতায় ও সত্যে তাঁহার সেবা কর, আর তোমাদের পিতৃপুরুষেরা [ফরাৎ] নদীর ওপারে ও মিসরে যে দেবগণের সেবা করিত, তাহাদিগকে দূর করিয়া দেও ; এবং সদাপ্রভুর সেবা কর। যদি সদাপ্রভুর সেবা করা তোমাদের মন্দ বোধ হয়, তবে যাহার সেবা করিবে, তাহাকে অদ্য মনোনীত কর নদীর ওপারস্থ তোমাদের পিতৃ-পুরুষদের সেবিত দেবগণ হয় হউক, কিম্বা যাহাদের দেশে তোমরা বাস করিতেছ সেই ইমোরীয়দের দেবগণ হয় হউক ; কিন্তু আমি ও আমার পরিজন আমরা সদাপ্রভুর সেবা করিব।”
—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪ : ১৪-১৫ গো-বাছুর পূজার রোগ তাদের মধ্যে কেমন শিকড় গেড়ে বসেছিলো তা কুরআনের ভাষায়ই শুনুন : وَإِذْ قَالَ مُوسى لِقَوْمِةِ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَذْبَحُوا بَقَرَةً ، قَالُوا أَتَتَّخِذْنَا هزُوًا ، قَالَ اَعُوذُ بِاللَّهِ اَنْ اَكُونَ مِنَ الْجهلِينَ ، قَالُو ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّنْ لَّنَا مَاهِيَ ، قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةً لأَفَارِضُ وَلَا بِكْرُ، عَوَانٌ بَيْنَ ذَلِكَ ، فَافْعَلُوا مَا تُؤْمَرُونَ ، قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّنْ لَّنَا مَا لَوْنُهَا ، قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ صَفْرَاءُ لا فَاقِعُ لَوْنُهَا تَسُرُّ النَّظَرِينَ قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّنْ لَّنَا مَا هِيَ لا إِنَّ الْبَقَرَ تَشْبَهَ عَلَيْنَا ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ لَمُهْتَدُونَ ، قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةُ لأَذَلُولُ تُثِيرُ الْأَرْضِ وَلَا تَسْقِي الْحَرْثَ : مُسَلَّمَةٌ لأَشيَةَ فِيهَا ، قَالُوا النَ َجيْتَ بِالْحَقِّ ، فَذَبَحُوهَا وَمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ . ط
“তারপর তোমরা ঐ ঘটনা স্মরণ করো যখন মূসা নিজ জাতিকে বলেছিলেন, আল্লাহ তোমাদেরকে গাভী যবেহ করার হুকুম দিয়েছেন । তারা উত্তরে বলতে লাগলো, তুমি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছো ? মূসা বললেন, আমি মূর্খদের মতো কথাবার্তা বলা হতে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। তারা বললো, আচ্ছা তাহলে তুমি তোমার রবের কছে দরখাস্ত করো, তিনি যেনো আমাদেরকে এ গাভীর কিছু বিশদ বর্ণনা দেন। মূসা বললেন, আল্লাহ ইরশাদ করছেন, সে গাভীটি এমন হওয়া উচিত যা বৃদ্ধ হবে না, না হবে বাচ্চা। বরং হবে মধ্যম বয়সের। অতএব যে হুকুম দেয়া হয়েছে তা পালন করো। আবার তারা বলতে লাগলো, আপনি আপনার রবের নিকট আরো একটি বিষয় জিজ্ঞেস করে নিন, এ গাভিটির রং কেমন হবে। মূসা বললেন, আল্লাহ বলেছেন গাভীটি হতে হবে পীত বর্ণের। যার রং এমন চিত্তাকর্ষক হবে যে, যারা দেখবে তারা খুশী হয়ে যাবে। আবার তারা বললো, তোমার রবের কাছে ভালোভাবে জিজ্ঞেস করে আমাদেরকে বলো কি ধরনের গাভী তিনি চান ? গাভী নির্বাচনে আমরা বড় সন্দেহে পড়ে গেছি। আল্লাহ চাইলে আমরা তা নির্ণয় করে নিতে পারবো । মূসা জবাব দিলো, আল্লাহ বলেছেন সেটা এমন গাভী যার থেকে কোনো খেদমত নেয়া হয় নাই । না জমি চাষাবাদে না পানি সেচের কাজে। অত্যন্ত সুস্থ-সবল-সুন্দর ও ত্রুটি মুক্ত। তারপর তারা বলে উঠলোঃ হ্যাঁ, এখন তুমি সঠিক বর্ণনা দিয়েছো। তারপর তারা সেটাকে যবাই করলো । অথচ তারা যবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না ।' -সূরা আল বাকারা : ৬৭-৭১
এভাবে যেমন একটি স্বর্ণ কেশরী গাভীকে, যে ধরনের গাভীকে সেই সময় পূজা করার জন্য বেছে নেয়া হতো। আঙ্গুল নির্দেশ করে বলে দেয়া হচ্ছে, এ গাভীকে যবাই করে দাও। যাতে গাভী পূজার মন-মানসিকতা চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। এ ছোট্ট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেসব অবান্তর প্রশ্নের অবতারণা করা হয়েছে তা বনী ইসরাঈল জাতির সামগ্রিক মানসিকতার পরিচয় বহন করে। ঠিক এ ধরনের একটি ঘটনার প্রতি কুরআন মাজিদের এ আয়াতগুলোতে ইশারা করা হয়েছে :
وَإِذْ قُلْتُم يَمُوسى لَنْ نُّؤْمِنَ لَكَ حَتَّى نَرَى اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْكُمُ الصَّعِقَةُ وَأَنتُم تَنْظُرُونَ . ثُمَّ بَعَثْنكُم مِّنْ بَعْدِ مَوْتِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَه
“স্মরণ করো তোমরা যখন মূসাকে বলেছিলে, আমরা তোমার কথার উপর কখনো বিশ্বাস করবো না যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আল্লাহকে তোমার সাথে প্রকাশ্যভাবে কথা বলতে না দেখবো। ঠিক এ সময়ে, কথা শেষ হতে না হতে একটি ভীষণ শব্দ হলো। যাতে তোমাদের জীবন হীন হয়ে পড়লো। কিন্তু এরপর আবার আমি তোমাদেরকে জীবন দান করলাম । যাতে তোমরা আমার এ ইহসানের প্রতি কৃতজ্ঞ হও।” -সূরা আল বাকারা : ৫৫-৫৬

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]