দুস্থ মানবতার সেবার জন্য কী কী গুণ থাকা উচিৎ সে সম্পর্কে বর্ণনা দিতে পারবেন।
ل َّیْسَ ٱلْب ِرَّ أ َن تُوَ ل ُّوا ْ وُ جُوھَكُمْ قِبَلَ ٱلْمَشْرِ قِ وَ ٱلْمَغْرِ بِ وَ ل َـٰكِنَّ ٱلْب ِѧرَّ مَ ѧنْ آمَ ѧنَ ب ِٱلل َّѧھِ
وَ ٱلْیَوْ مِ ٱلآخِ ر ِ وَ ٱلْمَلاۤ ئِكَةِ وَ ٱلْكِتَابِ وَ ٱلنَّب ِیّ ِینَ وَ آتَѧى ٱلْمَ ѧالَ عَل َѧىٰ حُبّ ِѧھِ ذَوِى ٱلْقُرْ بَѧىٰ
وَ ٱلْیَتَامَىٰ وَ ٱلْمَ سَاكِینَ وَ ٱبْنَ ٱلسَّب ِیلِ وَ ٱلسَّآئِلِینَ وَ فِى ٱلرِّ قَابِ (البقرة-١٧٧(
٠.١
فَلاَ ٱقتَحَمَ ٱلْع َقَبَة َ وَ مَآ أ َدْرَ اكَ مَا ٱلْع َقَبَة ُ فَكُّ رَ قَبَةٍ أ َوْ إ ِطْع َامٌ فِى یَوْ مٍ ذِى مَسْغَبَةٍ
یَتِیما ً ذَا مَقْرَ بَةٍ أ َوْ مِسْكِینا ً ذَا مَتْرَ بَةٍ (البلد- ١١١٦(
٠.٢
অনুবাদ ঃ
১. পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফিরানোর মধ্যে কোন পুণ্য নেই; কিন্তু পুণ্য আছে আল্লাহ, পরকাল, ফিরিশতাগণ, সমস্ত
কিতাব এবং নবীগণের উপর ঈমান আনলে এবং আল্লাহ-প্রেমে আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, পর্যটক,
সাহায্যপ্রার্থীগণকে ও দাসমুক্তির জন্য দান করলে। (সূরা আল বাকারা-১৭৭)
২. সে কঠিন ও দূর্ভেদ্য দূর্গে প্রবেশ পারেনি। তুমি কী জান, দুর্ভেদ্য দূর্গকী ? তা হচ্ছে দাসত্ব-শৃংখল মোচন অথবা
নিরন্ন মানুষের মধ্যে খাদ্যপ্রদান। ইয়াতীম আত্মীয়কে অথবা দারিদ্র্য নিস্পেষিত নিঃস্বকে। (সূরা আল-বালাদ :
১১-১৬)
শব্দার্থ ও প্রয়োজনীয় টীকা
تولوا انে তামরা ফিরাবে
البر পুণ্য, কল্যাণ, একবচন; বহুবচনে أبرار
امن ঈমান আনয়ন করল
القربي ذوى আত্মীয়-স্বজন
السبیل ابن পথিক/মুসাফির
السائلین সাহায্য প্রার্থীগণ
الرقاب فىদ াস মুক্তির জন্য দান
العقبة গিরিপথ, কষ্টসাধ্য পথ
াসমুক্তি দفك رقبة
مقربة ذا আত্মীয়-স্বজন
متربة ذا ধুলি ধুসরিত অর্থাৎ রাস্তা ব্যতীত যার অন্য কোন অবলম্বন নেই। এখানে অর্থ- দরিদ্র ও নিষ্পেষিত।
عقبة শব্দটি এক বচন, বহুবচনে عقبة ও عقاب অর্থ-দূর্গম ও বন্দুর গিরিপথ। এখানে عقبة দ্বারা কি বুঝানো
হয়েছে। এ ব্যাপারে মুফাসসিরগণ বিভিন্ন মতামত পোষণ করেন।
১। মুজাহিদ বলেন, এটা জাহান্নামের উপর স্থাপনকৃত একটি কঠিন পথ।
২। হযরত আতা (র) বলেন, عقبة দ্বারা জাহান্নামের গিরিপথ উদ্দেশ্য।
৩। ইমাম কালবী বলেন, والنار الجنة بین عقبة অর্থাৎ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যখানে একটি পথ।
৪। কেউ কেউ বলেন, ةѧعقب হলো দুর্গম বন্দুর পথ যা উপরের দিকে যাওয়ার জন্য পাহাড়ের মধ্য দিয়ে চলে গেছে।
এ পথটি অতি দুর্গম ও বন্দুর। এ পথে যাওয়ার জন্য প্রাণপণ কষ্ট ও শ্রম স্বীকার করতে হয়। এ পথের পথিককে
নিজের প্রবৃত্তি, কামনা-বাসনা ও শয়তানী লোভ-লালসার সাথে রীতিমত লড়াই করে চলতে হয়।
দুস্থ-মানবতার সেবা
ইসলাম মানব জাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত চিরন্তন ভারসাম্যমূলক, কল্যাণকর, পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। আল্লাহর বন্দেগীর
মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন, ইহলৌকিক কল্যাণ, সুখ, সমৃদ্ধি, পরকালীন মুক্তি ও শান্তিইসলামী জিন্দেগীর মূল লক্ষ্য।
মানবতার সেবা হচ্ছে মানুষের কল্যাণ, মানব প্রেম, ভালবাসা, সহমর্মিতা, সংবেদনশীলতা, পারস্পরিক কল্যাণ কামনা
করা। মানুষের সেবা-খিদমত তথা আল্লাহর অধিকার ও বান্দার অধিকার সংরক্ষণ ও সম্পাদনের জন্যই মানুষকে তিনি
সৃষ্টি করেছেন। আর এ ইবাদত দু’ভাগে বিভক্ত, হক্কুল্লাহ ও হককুল ইবাদত। আর এ ইবাদত আদায়ের ব্যাপারে
দুর্বলতা ও গাফলতি পরিলক্ষিত হলে পরিশোধন, পরিমার্জন, সংশোধন ও একাগ্র তাওবার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তা
মাফ করে দেন। কিন্তু বান্দার হক ও অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বান্দা মাফ করা ছাড়া আল্লাহ মাফ করেন না। আর দুস্থ
মানবতার সেবা হচ্ছে বান্দার হকের মধ্যে অন্যতম।
দুস্থ-মানবতার সেবা ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য
‘ইনসান’ শব্দটি উনস শব্দ হতে উদ্ভুত। তাই মানব প্রেম, ভালবাসা, মানব সেবা ও কল্যাণই হচ্ছে ইনসানের অন্যতম
বৈশিষ্ট্য। কবির কবিতায়
দরদে দিলকে ওয়াস্তেপয়দা কিয়া হায় ইনসানকো
ওয়ারনা তাঁয়াত কি লিয়ে কুছ কমনাথে কাররু রিযা
অর্থাৎ মানুষের প্রতি ভালবাসা, প্রেম, সহমর্মিতার জন্য মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। নতুবা শুধু আনুষ্ঠানিক উপাসনার
জন্য ফেরেশতাই যথেষ্ট ছিল।
দুস্থ মানবতার সেবা মৌলিক মানবীয় গুণ
যাদের মধ্যে দুস্থ মানবতার সেবা ও কল্যাণ কামনার চেতনা নেই, তারা মানবকুলের কলংক, তারা মানুষ হিসেবে
আখ্যায়িত হতে পারে না। পক্ষান্তরে দুস্থ-মানবতার সেবা, মানুষের প্রতি ভালবাসা, প্রেম, কল্যাণ কামনা, মৌলিক
মানবীয় গুণের অন্তর্ভুক্ত।
কবি কামিনী রায় কত সুন্দরভাবেই না বলেছেনপরের কারণে স্বার্থ দিয়ে বলি, এ জীবন মন সকলই দাও
তার মতো সুখ কোথায় কি আছে আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
আপনারে লয়ে বিব্রত রতে আসেনি কেউ অবনি পরে।
সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
দুস্থ-মানবতার সেবা মুসলিম জীবন দর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য
মানব-প্রেম, মানুষের প্রতি ভালবাসা-দরদ, অসহায় ও দুস্থ মানবতার সেবা ও কল্যাণই হচ্ছে প্রকৃত মনুষ্যত্ব বা
মানবতা। আর এ মানব কল্যাণ ও মানুষের সেবাই হচ্ছে ইসলামী জীবন দর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অথচ আজ আমরা
তা ভুলে গিয়েছি আর আমাদের কর্মগুলো বিজাতিরা আনুষ্ঠানিকতা দিচ্ছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে দুঃস্থ বা অসহায় বলতে শুধু পঙ্গু, দরিদ্র, নিরন্ন, মানুষকে বুঝায়নি। যারা মানব জীবনে মানুষের
মনগড়া আইনের অনুসরণ করে সমাজে বেকার, অসহায়, নিরন্ন, অধিকার বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি করে, তারাই
প্রকৃত দুস্থ মানব। নবী করীম (সা) বলেছেন, সবচেয়ে বড় অসহায় তারা যারা অন্ধভাবে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে।
যে দুনিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র নিপীড়িত সে দুস্থ, অসহায় বা দরিদ্র্য নয় বরং সেই প্রকৃত দুস্থও দারিদ্র্য এবং
অসহায় কিয়ামতের দিবসে যার আমলনামায় কোন নেকী থাকবে না।
নিকৃষ্ট দুঃস্থ ও সর্বহারা
নবী করীম (সা) বলেছেন, “যারা অপরের দুনিয়াকে সজ্জিত করার জন্য নিজের আখিরাতকে বরবাদ করেছে,
কিয়ামতের দিবসে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট, দুঃস্থ ও সর্বহারা তারাই।”
ইসলামী জীবন দর্শনে দুঃস্থমানবতার সেবার গুরুত্ব
মানব কল্যাণ, মানব সেবা, মানুষের প্রতি প্রেম-ভালবাসা সৃষ্টি প্রভৃতি কাজে ইসলাম মানুষকে উৎসাহিত করেছে।
মানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্য মুসলিম উম্মাহর আবির্ভাব। সৃষ্টির কল্যাণ, সেবা, তথা খিদমতে খালক এর প্রতি
অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে ইসলাম। আল্লাহ তাআলা বলেন“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত! তোমাদের আবির্ভাব ঘটেছে মানুষকে কল্যাণের নির্দেশ ও অকল্যাণ থেকে বিরত রাখার
জন্য।” (সূরা আলে-ইমরান : ১১০)
কল্যাণমূলক কাজ
ইসলামী জীবন দর্শনে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফিরিয়ে ইবাদত করার মধ্যেই শুধু কল্যাণমূলক কাজ সীমিত নয় বরং
দুঃস্থ মানবতার সেবা ও অন্যতম কল্যাণমূলক কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন“পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতেই শুধু নেক কাজ সীমিত নয় বরং নেক কাজ হচ্ছে আল্লাহর প্রতি
বিশ্বাস, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস, ফিরিশ্তাদের প্রতি বিশ্বাস, কিতাবের প্রতি বিশ্বাস, নবীদের প্রতি বিশ্বাস, আর
আল্লাহর মহব্বতে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির, ভিখারীদের জন্য ও দাসত্বের শৃংখল মুক্তির জন্য অর্থ
ব্যয় করা।” (সূরা আল-বাকারা : ১৭৭)
মানব সেবা
মানবতার সেবা ও মানব কল্যাণ একটি কঠিন কাজ। এ কাজের দায়িত্ব ও গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা
বলেন“সে কঠিন ও দুর্ভেদ্য দুর্গ অতিক্রম করতে পারেনি। তুমি কি জান, সে কঠিন দুর্ভেদ্য দূর্গটি কী ? তা হচ্ছে দাসত্ব-
শৃংখল মোচন, নিরন্ন মানুষের খাদ্য প্রদান, নিকটাত্মীয় ইয়াতীমদের পূনর্বাসন ও ধুলি-ধুসরিত মিসকীনদের খাদ্যের
সংস্থান করা।” (সূরা আল-বালাদ : ১১-১৬)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
“তারা আল্লাহর মহব্বতে মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীদেরকে খাদ্য প্রদান করে।” (সূরা আদ-দাহার : ৮)
জান্নাত প্রবেশের মাধ্যম
দুঃস্থ মানবতার সেবা জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম। নবী করীম (সা) বলেছেন, “মানুষের প্রতি সহমর্মিতা বর্জনকারী এবং
সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহর রহমত নাযিল হয়
যে ব্যক্তি দুঃস্থ মানবতার প্রতি সহমর্মিতা দেখাবে, তার উপর আল্লাহর রহমত নাযিল হবে। হাদীসে বর্ণিত আছে,
আবদুল্লাহ ইবনে আওফা (রা) বলেন, আমি রাসূল (সা)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “সে স¤প্রদায়ের উপর
আল্লাহর রহমত নাযিল হয় না যারা মানুষের প্রতি সহমর্মিতার সম্পর্ক ছিন্ন করে।” (বায়হাকী) অন্য এক হাদীসে
এসেছে, রাসূল (সা) বলেছেন, “যারা সৃষ্টির প্রতি দয়া ও করুণা করে না, রাহমানুর রাহীমও তাদের প্রতি করুণা করে
না। যমীনের অধিবাসীদের প্রতি রহম কর আসমানের অধিবাসী তোমাদের প্রতি রহম করবেন।” (আবু দাউদ ও
তিরমীযি)
রাস‚ল (সা)-এর বাণী
১. ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান কর ও রুগ্ন ব্যক্তির সেবা কর। (বুখারী)
২. আল্লাহ তাআলা ততদিন পর্যন্তবান্দাহকে সাহায্য করেন, যতদিন অব্যাহতভাবে বান্দা তার ভাইদের সাহায্যে
নিজেকে নিয়োজিত রাখে। (বুখারী)
৩. রুগ্ন ব্যক্তির সেবা করা এবং মানুষকে খাদ্য খাওয়ানো ইসলামের আদর্শ। (নাসায়ী)
জান্নাতের পোশাক প্রাপ্তি
নবী করীম (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন বস্ত্রহীন মুসলমানকে বস্ত্র পরিধান করালো, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে
সবুজ পোশাক পরিধান করাবেন।”
জান্নাতে ফল ভক্ষণ
যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য খাদ্য প্রদান করল, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে ফল ভক্ষণ
করাবেন। (আল-হাদীস)
জান্নাতের শরবত পান
যে মুসলমান কোন পিপাসার্ত মুসলমান ভাইকে পানি পান করাল, আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তাকে সিল মোহরকৃত এবং
সুরক্ষিত শরবত পান করাবেন। (আবু দাউদ)
সাদকা করার সাওয়াব লাভ
কোন মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোন ফল ও ফসল উৎপাদন করে এবং সে বৃক্ষ, উৎপাদিত ফলমূল, ও
উৎপাদিত ফসল দ্বারা কোন মানুষ, প্রাণী ও পাখি উপকৃত হয়, তবে তার একাজ দ্বারা সাদকাহ করার সাওয়াব লাভ
হবে। এমনকি চোরও যদি চুরি করে নেয় তবুও তা সাদকায় পরিণত হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
জান্নাতের সুসংবাদ লাভ
বনী ইসরাঈলের এক ভ্রষ্টা মহিলা নিজের পরিধেয় বস্ত্র ভিজিয়ে একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর দরুন
আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। (আল-হাদীস)
আযাব থেকে মুক্তি ও সাফল্যের পথ নির্দেশক
মানুষের সেবা শুধু পার্থিব জীবনের প্রয়োজন পূরণের মধ্যে সীমিত নয় বরং বিপর্যস্ত, অসহায়, দুঃস্থ-বিভ্রান্তমানবতার
সর্বাধিক বৃহত্তর সেবা ও খিদমত হচ্ছে অনন্তআখিরাতে কঠিন আযাব থেকে মুক্তির সন্ধান ও পরকালীন জীবনে
সাফল্যের পথ নির্দেশক। আল্লাহ তাআলা বলেন, “তার কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে
আল্লাহর পথে ডাকে এবং সৎকর্মশীল হিসেবে জীবন যাপন করে এবং এ ঘোষণা প্রদান করে, আমি একজন
মুসলমান।” (আল-কুরআন)
ইসলামে আধ্যাত্মিকতার উন্নত স্তরে উপনীত হওয়ার অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে- দুঃস্থ, সর্বহারা ও অসহায় মানুষের সেবা
করা, সমগ্র সৃষ্টির খেদমত ও কল্যাণে নিয়োজিত থাকা। যারা সৃষ্টিকে ভালবাসে না, তারা আল্লাহকে ভালবাসে না।
সৃষ্টির প্রেমই মানুষকে আল্লাহর প্রেমের স্তরে উপনীত করে।
আল্লাহকে সাহায্য করা
যে ব্যক্তি দুঃস্থ অসহায় মানুষকে সাহায্য করল, সে যেন আল্লাহকে সাহায্য করল। হাদীসে কুদসীতে আছে- কিয়ামতের
দিন আল্লাহ বান্দাকে লক্ষ্য করে বলবেন, আমি তোমার কাছে বস্ত্র, খাদ্য ও পানীয় চেয়েছিলাম। তুমি আমাকে তা
দাওনি। বান্দা বিস্মিত হয়ে আল্লাহকে প্রশ্ন করবে, হে প্রভু ! তুমি তো সব কিছুর মালিক, তুমি তো কারো মুখাপেক্ষী
নও, তুমি কীভাবে আমাদের নিকট চাইতে পার ? আল্লাহ বলবেন, আমার বান্দা তোমার কাছে চেয়েছে তখন যদি
তুমি বান্দাকে সাহায্য করতে তবে আমাকেই সাহায্য করা হতো। আর আজ আমার কাছে উত্তম প্রতিদান পেতে।
শেখ সাদী (র.)-এর বাণী
তরীকত বজুয খিদমাতে খালক নিস্তঅর্থাৎ মানবতার সেবা ও কল্যাণ ছাড়া রূহানিয়াতের মানযিল অতিক্রম করা ও
উন্নত স্তরে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়।
মানব জীবনে তাযকিয়ায়ে নাফস অর্থাৎ দেহ ও আত্মার পরিশুদ্ধি, দুঃস্থের পুনর্বাসন, মানব সেবা ও কল্যাণ ছাড়া
রূহানিয়াতের মানযিল অতিক্রম করা ও উন্নত স্তরে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে উদ্বৃত হয়েছে, “তুমি
তাদের নিকট থেকে সাদকা আদায় করে তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করো।” (সূরা আত-তাওবা : ১০৩)
পবিত্র কুরআন ও হাদীসে রাসূল থেকে স্পষ্টভাবে এ সত্য উপলব্ধি করা যায় যে, ইসলামই একমাত্র মানব কল্যাণ ও
মানবতার সেবায় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এবং পরিপূর্ণ জীবন বিধান। শুধু মানুষই নয় বরং সমগ্র সৃষ্টি কুলের সেবার নির্দেশনা
ইসলামী জীবন দর্শনের একমাত্র বৈশিষ্ট্য।
সারকথা
বস্তুত কুরআন, সুন্নাহ, দর্শন, তাসাওফ ও ফিকহ ইসলামী জ্ঞানের সকল ধারা ও উৎস থেকে এটি স্বত:সিদ্ধভাবে
প্রমাণিত হয় যে, দুঃস্থ মানবতার সেবা ও কল্যাণসাধন ছাড়া মানুষ প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। পারে না মুসলিম বলে
দাবি করতে ও আধ্যাত্মিকতার উন্নত স্তরে সমাসীন হতে। তাই আমাদের দুঃস্থ মানবতার কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে
নীরব দর্শকের ভূমিকা ত্যাগ করে অবশ্যই পূর্ণ তৎপরতার সাথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
সঠিক উত্তরে টিক দিন
১. البر শব্দের অর্থ
ক. নেক কাজ খ. উপকারী বস্তু
গ. মন্দ কাজ ঘ. জনকল্যাণমূলক কাজ।
২. العقبة অর্থ
ক. দুর্গ খ. কঠিন দুর্ভেদ্য দুর্গ
গ. উপত্যকা ঘ. কোন উত্তরই সঠিক নয়।
৩. যারা সৃষ্টির প্রতি দয়া করে না আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত করেন না -এটা কার বাণী?
ক. আল্লাহর বাণী খ. রাসূলের বাণী
গ. সাহাবীর বাণী ঘ. কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির বাণী।
৪. যে ব্যক্তি কোন মুসলমান ভাইয়ের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য খাদ্য দান করল সেক. জান্নাতের ফল ভক্ষণ করবে খ. জান্নাতের পোশাক লাভ করবে
গ. রাসূল (সা)-এর সুপারিশ লাভ করবে ঘ. সকল উত্তরই সঠিক।
৫. যে ব্যক্তির উৎপাদিত ফলমূল ও ফসল দ্বারা মানুষ ও পশু পাখি উপকৃত হলো সেক. সাদকা করার সাওয়াব পেল খ. জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করল
গ. জান্নাতের শরবত পান করল ঘ. দোযখের আযাব থেকে মুক্তি পেল।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. আল্লাহর বাণী العقبة শব্দটির বিশ্লেষণ করুন।
২. কিয়ামত দিবসে প্রকৃত দুস্থ মানব কে হবে ? আলোচনা করুন।
৩. ‘দুস্থ মানবতার সেবা একটি জনকল্যাণমূলক কাজ’ আলোচনা করুন।
৪. মানবতার সেবার মাধ্যমে কীভাবে দেহ ও আত্মার পরিশুদ্ধ হয়? আলোচনা করুন।
৫. ইসলামী জীবন দর্শনে দুস্থ-মানবতার সেবার গুরুত্ব আলোচনা করুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. দুস্থ মানবতার সেবা বলতে কী বুঝেন ? এর বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করুন।
২. দুস্থ মানবতার সেবা সংক্রান্তনবী করীম (সা)-এর গুরুত্বপূর্ণ বাণীসমূহের বিস্তারিত বিবরণ দিন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত