অপরিমেয় তেলের রিজার্ভ

ঐতিহ্যগতভাবে ব্রিটিশ প্রভাবিত এলাকাটিতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা খুব বেশী। পারস্য উপসাগর এবং তার আশপাশের এলাকাটিতে অকমিউনিস্ট বিশ্বের সত্তর ভাগ (৭০%) তেলের মজুদ বর্তমান এবং এ অঞ্চলে পৃথিবীর মোট উৎপাদনের অর্ধেক উৎপাদন করে থাকে। এডেন থেকে ব্রিটেনের প্রত্যাহার এখানে ক্ষমতা শূন্যতা সৃষ্টি করবে যেই ক্ষমতা পূরণ করতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ইসরাঈল এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এগিয়ে আসবে ।
ব্রিটিশরা তাদের এ সৎ ধারণা ব্যক্ত করেছে তাদের প্রত্যাহার পরস্পর কোন্দলরত আরব শাসকদের কোন্দল মিটিয়ে তাদেরকে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা বন্ধনে উৎসাহিত করবে। কিন্তু তেল শিল্পের প্রসারমান বিকাশ প্রতিদ্বন্দ্বী রাজা, শেখ ও সুলতানদের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে । ইরান কর্তৃক ইসরাঈলের নিকট তেল বিক্রি মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতাকে আরো অবনতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ছয়দিনের আগ্রাসনে জর্ডান, সিরিয়া এবং মিসরকে চারদিক দিয়ে ইসরাঈল অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে। গত জুনে সম্পূর্ণ প্রতিরোধহীন অবস্থায় ইসরাঈলী সামরিক বাহিনীর অভিযান পূর্ব নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক সীমানায় আকস্মিকভাবে থেমে গিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী বিজয়ে আধিপত্যবাদী ইহুদীবাদের মহাপরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে তারা তাদের মিশন সম্পূর্ণ করেছে। এখন সময় থামার এবং সৈন্য বাহিনীকে ছড়িয়ে না দিয়ে অর্জনকে সংহত করার।
ইসরাঈলী নেতা মেনাচেম বেগিন বলেছেন-‘অণু পরিমাণ মাটিও আরবদের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হবে জাতির নিকট বিশ্বাসঘাতকতা।' মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ামক শক্তি হিসেবে ইসরাঈল সাম্রাজ্যের সাড়ম্বরপূর্ণ ধারণা এ প্রথমবারের মতো সারা বিশ্বের ইহুদীদের মধ্যে গণোদ্দীপনা সৃষ্টি করছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাঈল ভান ধরে যাচ্ছে, তার সাথে আলাপ-আলোচনার দরজা উন্মুক্ত আছে। ফলে

আরবদের স্বীকৃতি এবং শান্তি চুক্তির বিপরীতে অধিকৃত এলাকা ফিরিয়ে দেয়া যেতে পারে ।
জানা গেছে, জর্ডানের রাজা হোসেন একটি গোপন প্রস্তাব দিয়েছেন ইসরাঈলকে ঃ জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর ফিরিয়ে দেবার বিপরীতে হোসেন ঐ এলাকার অসামরিকীকরণে, সীমান্ত পুনঃচিহ্নিতকরণের আলোচনায় এবং পুরনো শহর জেরুজালেম পুনর্দখলের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগে সম্মত হয়েছেন । ইসরাঈল এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরাঈলী শ্রমমন্ত্রী ইগেল এলন সুস্পষ্টভাবে বলেছেন-
‘এ দেশের প্রাকৃতিক সীমানা হলো জর্ডান নদী । ইসরাঈল জর্ডান থেকে পশ্চিম তীরের যে এলাকা দখল করেছে সে অঞ্চল ধরে রাখতে পারলেই সেই সীমান্ত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।'
ইসরাঈলী সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেতাবধারী কর্মকর্তা জেনারেল আলুফ এজার ওয়াইজম্যান, তিনি আরো অনমনীয় : ‘আমরা যেখানে আছি সেখানে থাকবো এবং ইহুদীদের আনবো। ইহুদী জনতার রাষ্ট্রকে সংহত এবং ভবিষ্যৎ যুদ্ধের সম্ভাবনাকে রোধ করার সচরাচর পাওয়া যায় না এমন সুযোগ এখন আমাদের হাতে।'
'যদি চতুর্থ যুদ্ধ শুরু হয়', প্রতিরক্ষামন্ত্রী মঁশে দায়ান আত্মতৃপ্তির সাথে বলেন, ‘আমরা আগের চেয়েও আরো চূড়ান্তভাবে যুদ্ধ জয়ে সক্ষম এখন ।
এছাড়াও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন কায়রো, দামেস্কাস এবং আম্মানের মতো বড় বড় শহরগুলো ‘চতুর্থ যুদ্ধে’ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে । এ হুমকি গণহত্যার পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ইসরাঈল বিরক্তির সাথে অভিযোগ করে যে, ইসরাঈলের চেয়ে তিনগুণ বড় অধিকৃত এলাকার সাথে ১৩,৩০,০০০ হাজার আরবকে তাদের গ্রহণ করতে হয়েছে।
ইসরাঈলের স্বতঃস্ফূর্ত নতুন ঠিকানা-আলিয়া-এ ধারণা পাশ্চাত্য ইহুদীদের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের মধ্যে খুব কমই তাদের পূর্ব পুরুষের পবিত্র ভূমিতে যেতে চায়। ইসরাঈলের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদী এশিয়া এবং আফ্রিকার । ধর্ম, রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং বয়োজ্যেষ্ঠবাদের সংমিশ্রণে ইসরাঈলী রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালিত । ইহুদী পরিচয় এবং ইহুদী পূর্ব পুরুষের সূত্র ছাড়া ইসরাঈলী রাষ্ট্রে পূর্ণ নাগরিকত্ব পাওয়া যায় না। ইসরাঈলী কর্তৃপক্ষ আরব এবং অ-ইহুদীদের সমান নাগরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকারের পূর্ণ নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করে। জঙ্গি ইহুদীরা প্রকাশ্য বলে বেড়ায় আরব এবং ইহুদীরা এক সাথে বসবাস করতে পারবে না। তাদের দাবি আদর্শিক মতপার্থক্যের কারণেই এ ভেদাভেদ। যা হোক আরব দেশগুলো তেলের কারণে অবিশ্বাস্য রকম সম্পদশালী।
‘দীর্ঘমেয়াদীভাবে ক্ষমতা সংহতকরণের লক্ষ্যে আমাদের আবশ্যিকভাবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে অধিকৃত এলাকায় আমাদের অবস্থানকে স্বল্পকালীন সাময়িক ব্যাপার বলে গণ্য করা হতে পারে'-বলেছেন ইসরাঈলী ক্যাবিনেটের মন্ত্রণালয়বিহীন মন্ত্রী ইসরাঈল গ্যালিলি ।
আরব পরাজিতদের কিভাবে জয়ীদের প্রতি সহযোগিতায় বাধ্য করা হয় এ বিষয়ে আধিপত্যবাদী ইহুদীরা একটি বিশেষ অর্থবোধক পরিভাষা আবিষ্কার করেছে 'রূঢ় হস্তক্ষেপহীনতা'। নাবলুসের মেয়র যখন বললেন, ইহুদীদের মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন, ইসরাঈলী সামরিক কর্তারা তাকে জানালো তার পদত্যাগের পর কেউই তার পদে বহাল হবে না। যার ফলে নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়বে। মেয়র বিষয়টি পুনরায় চিন্তা করলেন। ইহুদী সামরিক নেতার আদেশ মেনে পদত্যাগে বিরত থাকলেন। এ ধরনের শত শত উদাহরণ দেয়া যেতে পারে ।

গণহত্যার ভয়ে আতঙ্কিত আরব জনতা

আজকের মধ্যপ্রাচ্য নির্মম, উলঙ্গ, বর্বর, পাশবিকভীতি দ্বারা প্রভাবিত । আরবদের প্রতি ইসরাঈলের গণহত্যামুখী আকাঙ্ক্ষা আরব জাতিগুলোকে গণমৃত্যুর ভীতিতে আতংকিত করে ফেলেছে। সারা পৃথিবী থেকে ইহুদীদের ইসরাঈলে এনে ইসরাঈল মধ্যপ্রাচ্যের জনবসতির ভারসাম্য নষ্ট করেছে। জনসংখ্যার বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সাথে আরব দেশগুলোর। জনগণের মাঝে সংঘাতের কারণে একদিন না একদিন হয় আরব না হয় ইহুদীদের বাধ্য হয়ে মরুতে যেতে হবে। প্রাণ ধারণের উপযোগী পরিবেশ পাবে না। একমাত্র মৃত্যুতেই পরিত্রাণ মেলবে। আরব ভূমি দখল করার জন্য ইসরাঈল আরব জনতাকে হত্যা করতে চায়। মৃত্যু ভয়ে আচ্ছন্ন আরবদের প্রতিক্রিয়া জোরালো । রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশের কাছে নিরাপত্তা খুঁজছে আরবরা । নিরাপত্তার বিনিময়ে করদরাজ্য হতে আপত্তি নেই তাদের। 'মুক্ত বিশ্বের জন্য এটা অপ্রতিরোধ্য বিপর্যয়' বলেছেন বেঞ্জামিন এইচ ফ্রিডম্যান।
এসব বিষয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর কিছু নেই, এ ধরনের যুক্তি আমরা উপস্থাপন করতে পারি । কিন্তু মার্কিন বিদেশী অনুদানের শত শত কোটি ডলার তেলআবিব থেকে প্যারিস, লন্ডন এবং নিউইয়র্ক পর্যন্ত বিস্তৃত আন্তর্জাতিক ইহুদী নেটওয়ার্কের উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। ইসরাঈলীরা ইতিমধ্যে মিসরীয় তেল
কূপ' হতে তেল উত্তোলন শুরু করেছে। মুনাফার এক অংশ যাচ্ছে রকফেলারের স্ট্যাণ্ডার্ড তেল কোম্পানীর হিসাবে। এটা তো শুধু পূর্বাভাস।
এখন প্রথমবারের মতো সোভিয়েট রাশিয়া সফলভাবে তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অনুপ্রবেশ করছে। ইরাক, ইরান এবং মিসরে তেল আবিষ্কার এবং উত্তোলনের জন্য রাশিয়ানরা চুক্তি করেছে। আলজিরিয়া, সিরিয়া এবং কুয়েতে সমবায়ের ভিত্তিতে কাজ করার জন্য রাশিয়ানরা প্রস্তাব দিয়েছে । ইরাকের সাথে চুক্তির ফলে পাশ্চাত্য কোম্পানীগুলো থেকে ছিনিয়ে নেয়া তেল মজুদের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। তাদের নিজস্ব তেল রিজার্ভের ওপর তাদের কর্তৃত্বকে শক্তিশালী করা এবং মুনাফার অংককে বাড়ানোর জন্য বেশির ভাগ আরব দেশ তেলের ফার্ম প্রতিষ্ঠা করছে। সোভিয়েতরা আরব তেল শিল্পে প্রযুক্তি সরবরাহ করছে এবং বিশ্বে তেল বাজারজাত করার লক্ষ্যে আরব শাসকদের সাথে চুক্তিতে এসেছে। ভূ-মধ্যসাগরে সোভিয়েট নৌবহর দাঁড়িয়ে আছে। আরব তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোকে তার আশ্রিতে পরিণত করার জন্য সোভিয়েট রাশিয়া উগ্র অভিযানে নেমেছে। অবশেষে মিসর রাশিয়ার দৃঢ় কব্জায় এসে পড়েছে। সিরিয়া এখন রাশিয়া প্রদত্ত নিরাপত্তা এবং সম্পূর্ণ রুশ অস্ত্রের ওপর নির্শরশীল । লাটাকিয়ায় সোভিয়েটদের স্থাপনা আছে ।
ইয়েমেন সোভিয়েট অস্ত্র পাচ্ছে, রাশিয়ান বিশেষজ্ঞরা তার সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ওখানে সোভিয়েট বাহিনী তার ঘাঁটি স্থাপন করেছে। ইরানকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের অনুদান প্রদান সত্ত্বেও অকৃতজ্ঞ শাহ (ইরানে শাহ্ সুইস ব্যাংকে মাঃ ডঃ ৩০০ মিলিয়ন সরিয়ে নিয়েছে) একটি প্রাকৃতিক গ্যাস লাইন নির্মাণে রাশিয়ানদের সহযোগিতা করছে। এ পাইপলাইনে ইরানী গ্যাস রাশিয়ায় সরবরাহ করা হবে যেখানে রাশিয়ার গ্যাস পৌঁছায় না ।
এখনও ইহুদীবাদ এবং কমিউনিজমের মধ্যে গোপন সম্পর্ক একটি বাস্তবতা। যখন ইসরাঈল আরবদেরকে ধাওয়া করে ক্রেমলিনের কাছে নিয়ে যাচ্ছে তখন শত বছরের আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ইসরাঈল সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং আরবদের মতো আমেরিকানরা এ আন্তর্জাতিক অপরাধের নিঃসহায় শিকার।
পরলোকগত জন হেনশু কলামিস্ট ড্রপিয়ারসনের প্রধান সহকারী ছিলেন। তিনি পরবর্তীকালে ড্রপিয়ারসনের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেন। সেই সময় ইসরাঈলপন্থী লবী ‘এন্টি ডিফেমেশন লীগ' জন হেনশুর সব খরচ বহন করতো। তাছাড়া এ লবীর সাথে পিয়ারসনের 'বিশেষ সম্পর্ক ছিল। নিবন্ধটি থেকে বুঝা যায় হেনশুর মধ্যপ্রাচ্য অন্তর্দৃষ্টি অসাধারণ।-তথ্য সূত্র ইন্টারনেট

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]