অভিশপ্ত ইহুদী জাতির বেঈমানীর ইতিহাস – এ. বি. এম. এ. খালেক মজুমদার


شم انها اخر الحمر
মুসলমাদের চিরশত্রু ইহুদী জাতি
মুসলমানদের চিরশত্রু এবং প্রধান শত্রু হলো বর্তমান বিশ্বে একমাত্র অভিশপ্ত ইহুদী জাতি। তারা মুসলিম জাতিকে দমিয়ে রাখার, পিছিয়ে দেবার এমন কি ধ্বংস করে দেবার জন্যে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছে না । যুগ যুগ শুধু নয়, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরেই তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে হীন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। নেপথ্যে এদেরকে শক্তি ও সহযোগিতা যুগিয়ে যাচ্ছে মুসলমানদের অপরাপর শত্রু খৃস্টান ও সমাজতন্ত্রবাদী বাম ও রামপন্থীরা। এই সেদিন ১৯৯৭ সনের জুন মাসের ২৮ তারিখে বিশ্ববাসী আবারও প্রত্যক্ষ করলো ইহুদী জাতির আর্ন্তর্জাতিক চক্রান্তে সৃস্ট ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাঈলের আরেকটি জঘন্য ও মানবতা বিরোধী কাজ। একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে অভিশপ্ত ইহুদীরা মুসলমাদের হৃদয়ে হাতুড়ীর আঘাত হানলো বিশ্ব মানবতার মুক্তি রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মহা গ্রন্থ আল কুরআনের সাথে চরম অবমাননা ও বে আদবী কারার ধৃষ্টতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ।
৩রা জুলাই একটি দৈনিকে মুসলিম রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের একটি আলোকচিত্র ছাপা হয়েছে। তার প্রসারিত ডান হাতে একটি পোস্টার ক্যাপশনে লেখা ছিলো “ফিলিস্তিনে প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত গত মঙ্গল বার তিউনিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদেরকে একটি পোস্টার দেখান। পোস্টারে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি চরম অবমাননা করা হয় ৷
‘তাতিয়ানা সিসকিন্ড' নামক এক জেরুজালেমবাসী ইহুদী রমনী 'হেবরন' এলাকায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর একটি বিদ্বেষপূর্ণ ও চরম অবমাননাকর পোস্টার এঁকে আরবদের ঘরবাড়ী ও দোকান পাটে সেঁটে দিয়ে সমস্ত ফিলিস্তিন সহ সারা আরব ভূখণ্ড তথা গোটা বিশ্বের মুসলমানদের মনে ঘৃণার আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এটা বিশ্ব মুসলিমের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার ইহুদী চক্রান্তের এখন সর্বশেষ পরীক্ষা । তাতিয়ানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ইসরাঈলী পুলিশ জানালেও এটা প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের প্রতিহিংসা থেকে তাকে বাঁচাবার আই-ওয়াশ মাত্ৰ ৷
অভিশপ্ত ইহুদী জাতীর বেঈমানীর ইতিহাস
১২

বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের মুসলমান ও বিবেকবান মানুষ ইহুদী কুচক্রি মহলের এ ঘৃণ্য ও জঘন্য কাজের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ইসলাম ও ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য তৎপরতা বন্ধের জন্য ইসরাঈলের উপর চাপ সৃষ্টি করতে ও. আই. সি. সহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেও সর্বসম্মতভাবে এ ব্যাপারে ইসরাঈলের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
২৮শে জুন, ১৯৯৭, রাতে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্মৃতি বিজরিত ইসরাঈল দখলকৃত ফিলিস্তিনের 'আল-খলিল' শহরে এ জঘন্য কাজটি সংঘটিত হয়েছে। লোকজন সকালে ঘুম থেকে উঠেই এ জঘন্য ধরনের হাজার হাজার পোস্টার দেখতে পায়। মুসলমানরা ইহুদীদের এ কুকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ।
শহরের দোকান পাটের দরজায় ও দেয়ালে লাগানো এক ধরনের পোস্টারে একটি শূকর ছানার ছবি রয়েছে। সেই ছবির গায়ে 'মুহাম্মাদ' শব্দটি লেখা রয়েছে। শূকরের মাথায় বাঁধা রয়েছে আরবদের মস্তক আবরণী রুমাল। অন্য পোস্টারটিতে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের উপর দাঁড়ানো আরেক শূকরের ছবি ।
গোটা বিশ্ব মুসলিমের বিক্ষোভের তোড়ে ইসরাঈলী সরকার জানিয়েছে, কোনো ইহুদী মহিলা এ কাজটি করেছে। কিন্তু শুধু একজন মহিলার পক্ষে এক রাতে হাজার হাজার পোস্টার লাগানো অসম্ভব তা বুঝতে একটুও কষ্ট হবার কথা নয় । আসলে এ নস্টামী ও বেঈমানীর মূল হোতা হচ্ছে ইহুদী জাতির এ সময়কার কুচক্রি প্রধান মন্ত্রী ‘নেতানিয়াহু’ ও তার বেঈমান সরকার ।
নেতানিয়াহুর সরকারের কিছু মন্ত্রী, ইহুদী সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ হীন ও জঘন্য কর্মকাণ্ডের মূল নীলনকশা প্রণয়ন করেছে। 'আল খলিল' শহরে বসবাসকারী ইহুদী গোষ্ঠী খুবই হিংস্র ও বন্য, এরা সবাই পরিকল্পিতভাবে মুসলমানদের আর এক শত্রু দেশ আমেরিকা হতে এখানে এসে বসতিস্থাপন করেছে। সবসময় তারা সজ্জিত থাকে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ।
মুসলমানদের চিরশত্রু এ ইহুদী সন্ত্রাসীদের হিংস্র আক্রমণে বিশ হাজার ফিলিস্তিন মুসলমানদের জীবনযাপন দুসাধ্য হয়ে উঠেছে এ ‘আল খলিল' শহরে । ফিলিস্তিনী মুসলমানদের মনে জ্বালা ও বিক্ষোভ দমনে ইহুদী তথা ইসরাঈলী সৈন্যরা গুলী ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে তাদের সমাগমে। এতে একজন মুসলমান নিহত হয়েছে। শত শত মুসলমান হয়েছে আহত ।
অভিশপ্ত ইহুদী জাতীর বেঈমানীর ইতিহাস

১৩
ইহুদী বাহিনীর কমাণ্ডার জেনারেল গাবি-অফিব বিক্ষোভের সময় মুসলমানরা বিষ্ফোরক দ্রব্য নিক্ষেপ করলে ‘মেরে ফেলা হবে' বলে গর্জন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও বিক্ষোভ দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে সতর্কবাণী দিয়েছে। তাদের গর্জনকে অথবা হত্যা করাকে মুসলমান থোড়াই
কেয়ার করে।


ইহুদী জাতির শত্রুতার মূল কারণ
অতীত দিনে অতিবাহিত সকল নবী-রাসূলের উপর এবং শেষ নবী ও শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ঈমান পোষণ করা ইসলামী আকীদার একটি মৌলিক শর্ত। আগের নবী ও রাসূলের পর পরবর্তী নবী ও রাসূল আগমন করলে এ পরবর্তী নবীর উপর ঈমান আনাও তার শরীয়াত অনুযায়ী আমল করা ফরয হয়ে যায়। অথচ আগের নবী ও রাসূল বরহক ছিলেন, সত্য ছিলেন, একথার উপর দৃঢ়ভাবে ঈমান পোষণ করতে হবে। কিন্তু আগের নবীর শরীয়াতের উপর আমল করা বাতিল হয়ে যায় ।
এ ধারায় এভাবেই দুনিয়ায় নবী-রাসূল আগমনের সিলসিলা জারী থাকে । কিন্তু অভিশপ্ত ইহুদী ও খৃস্টান জাতি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূল হিসেবে মানতে অস্বীকার করলো । তার শরীয়াত অনুযায়ী আমল করতে রাজী হলো না। অথচ তারা আসমানী কিতাব তাওরাত ও ইজিলের বাহক জাতি । এ দুই জাতিকেই 'আহলে কিতাব' বলে ঘোষণা করা হয়েছে পবিত্র কুরআনে। তাদের কিতাবে এ নবীর নাম ধরে তাঁর আগমনের আগাম সংবাদ দেয়া হয়েছে। তারা এটাকে বিশ্বাসও করতো ।
কিন্তু শেষ নবী আশরাফুল আম্বিয়া মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর আগমনের পর তাঁর সত্যতা সম্পর্কে দুই আহলি কিতাব দিবালোকের মতো নিসন্দেহ থাকার পরও তাঁকে অস্বীকার করে বসলো। তাঁর অনুসারীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করতে লাগলো। অথচ তারা এ নবীকে এভাবে পরিষ্কার জানতো, যেভাবে তারা তাদের সন্তান সন্ততিকে সঠিকভাবে জানতো। কুরআনে বলা হয়েছে “ইয়ারিফুনাহু কামা ইয়ারিফুনা আবনায়াহুম।” তারা মনে করেছিলো শেষ নবী তাদের গোত্রে আগমন করবে। তারা এ নবীকে নিয়ে আবার ইহুদী জাতিকে দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করবে, দুনিয়া জয় করবে।
এ নবী যেহেতু ইহুদী বংশে জন্মগ্রহণ করেননি। তাই তাদের অতীত স্বভাব-চরিত্র, একগুয়েমী ও জেদ অনুযায়ী বনী ইসরাঈলেরা অনেক নবীকে অমান্য ও হত্যা করার মতো এ নবীকেও অমান্য করা শুরু করলো। এমনকি এ নবীকেও হত্যা করার অনেক পরিকল্পনা করলো কিন্তু আল্লাহর রহমতে তারা তা পারেনি ।

১৬

কুরআনে পাকে বনী ইসরাঈল গোত্রীয় নবীদের সাথে ইহুদী জাতির বেঈমানীর ইতিহাসের বর্ণনা বার বার এসেছে। সাথে সাথে শেষ নবীর সাথেও তাদের চরম বেঈমানীর কথাও বলা হয়েছে।
মক্কা থেকে মদীনায় হিযরাত করে যাবার পর মদীনার ইহুদী বর্বর জাতি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লামকে গ্রহণ করতে পারেনি। সে সময় তারা বেশীর ভাগই মদীনায় বসবাস করতো। তারা রাসূলের বিরুদ্ধে নানা কুট-কৌশল রচনা করেছে। তাদের নারীরাই এ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের পুরো ভাগে ছিলো। ইয়াহুদী নারীরা বিশ্বজগতের সর্বশেষ নবী- মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা করার জন্য কতই না ষড়যন্ত্র করেছে।
মদীনায় এক ইহুদী কুটিল রমণী রাসূলকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে খাবারে বিষ মিশিয়ে দিয়ে তাঁকে হত্যা করতে পরিকল্পনা এঁটেছিলো। জাতিগত বিদ্বেষ, গোষ্ঠীগত আক্রোশ থেকেই এ অভিশপ্ত ইহুদী জাতি শেষ নবীকে হত্যা করার চেষ্টায় সব সময় মগ্ন ছিলো। তাদের সব ষড়যন্ত্রই বার বার ব্যর্থ হয়েছে
নস্যাত হয়েছে।
ইহুদীরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার গোটা নবুয়াতের জীবনের সকল কল্যাণকর কাজে বাধা দিয়েছে। যুদ্ধে পরাজিত করে তার আদর্শকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। যাদু মন্ত্র করে, বিষ প্রয়োগে তাঁকে মেরে ফেলতে চেয়েছে। মদীনার মুনাফিকদের সাথে চক্রান্তের জালে জড়িত হয়ে নবীর ক্ষতি সাধন করতে চেয়েছে। মুসলিম কাফিলার অগ্রযাত্রাকে চেয়েছে বাধাগ্রস্ত করতে। কিন্তু তারা কিছুতেই তাদের কোনো ষড়যন্ত্রে সফল হতে পারেনি। সর্বশেষ তারা রাসূলের নির্দেশে বেঈমানীর চরম পুরস্কার হিসেবে মদিনা থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। তাদের বংশ পরম্পরা আদি ইতিহাসের মতো ভিটাবাড়ী ছাড়া হয়ে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষুক ও অভিশপ্তের মতো ফিরেছে। আর মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত শত বছর ধরে চক্রান্তের জাল বিস্তার করে চলেছে।
যদিও খৃস্টানদের সাথে ইহুদীদের ধর্মীয় বিদ্বেষ ও টানপোড়েন ছিলো। তারপরও মুসলিম মিল্লাতকে খতম করার জন্য তারা উভয়ে এক সাথে কাজ করতে একমত হয়েছে। ইহুদীবাদের প্রধান ও প্রথম শত্রুই হলো প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর উম্মতগণ । মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করতে, বাধা দিতে, রাসূলের জীবনকে বাধাগ্রস্থ করতে এ দুই ভ্ৰষ্টজাতি ইহুদী ও খৃস্টানরা আদিকাল থেকেই তাদের অর্থ সামর্থের


১৭
বিপুল ভাণ্ডার অকপটে খরচ করছে ও করে আসছে। অভিশপ্ত সালমান রুশদীকে তারা ব্যবহার করেছে। তার পিছনে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করছে।
কে এই সালমান রুশদী
কুখ্যাত ও গণধিকৃত এ সালমান রুশদী ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন বৃটিশ নাগরিক। বর্তমানে লণ্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপন করছে। তার লেখা ইসলাম বিরোধী ইংরেজী লেখা উপন্যাস 'দি স্যাটানিক ভার্সেস' ১৯৮৯ ইংরেজী সনে প্রকাশিত হবার পর গোটা বিশ্বের মুসলমানরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। স্যাটানিক ভার্সের্সে এ কুখ্যাত সালমান রুশদী ইসলাম, মুসলমান, কুরআন ও রাসূলের বিরুদ্ধে জঘন্য অবমাননাকর লেখা লিখে বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয়ে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। একে ইন্দন যুগিয়েছে এ বেঈমান ইহুদী গোষ্ঠী 1
ইরানের ধর্মীয় নেতা মরহুম আয়াতুল্লাহ খোমেনী তখন এ অবমাননাকর বই লেখার দায়ে তাকে মুরতাদ ঘোষণা দিয়ে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন। মরহুম খোমেনী আজ আর দুনিয়ায় বেঁচে নেই। কিন্তু কুখ্যাত সালমান রুশদী সেই মৃত্যুদণ্ডের পরওয়ানা মাথায় নিয়ে আজও নির্বাসিত জীবনযাপন করছে লণ্ডনে অতিসঙ্গোপনে পাহারার বেষ্টনীতে। থাকতেও হবে তাকে আজীবন এভাবেই ।
গোটা বিশ্বের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানদের অপ্রতিরোধ্য বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশ সরকার এ বইটিকে বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। পাশ্চাত্যের আশ্রয়ে পালিয়ে থাকা সালমান রুশদী এখনো প্রকাশ্যে জনসম্মুখে বের হতে পারছে না ।
খুবই পরিতাপের বিষয়, যে বাংলাদেশে এ কুখ্যাত বই 'দি স্যাটানিক ভার্সেস' নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে সেই বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৮ সনে সেই বইটির অংশ ইংরেজী বিভাগের সিলেবাসে পরিণত হয়েছে ধর্ম-নিরপেক্ষ সরকার আওয়ামী লীগের আমলে ।
প্রবল মুসলিম জাতি বিদ্বেষী সালমান রুশদীর এ অংশটি ইংরেজী বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের ইংরেজী ‘১০৩ নং কোর্স ইনট্রোডাকশন টু প্রোজ' এ পড়ানো হতো । ৫০ নম্বরের এ হাফ ইউনিট কোর্সের জন্য আরো ৫জন বিশিষ্ট লেখকের লেখার সাথে কুখ্যাত সালমান রুশদীর এ অংশটি নতুন করে সিলেবাসভুক্ত করা হয়েছিলো কিন্তু এ দেশের জাগ্রত তৌহিদী জনতার প্রতিবাদ ও নিন্দার মুখে অবশেষে তা সিলেবাস থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।—তথ্য সূত্র-দৈনিক ইনকিলাব,তাং ২৪ আগষ্ট, ১৯৯৮ ইং

১৮

অভিশপ্ত ইহুদীনী তাতিয়ানার জন্যও এ একই শাস্তি প্রযোজ্য। ধর্ম অবমাননার জন্য খৃস্টান মতবাদেও একই শাস্তির বিধান আছে—যা ‘ব্লাস ফেমী আইন' হিসাবে খ্যাত। এ কারণেই গোটা মুসলিম বিশ্বে ইসলাম, নবী ও কুরআন বিদ্বেষী অভিশপ্তদের জন্য 'ব্লাস ফেমী' আইন পাশ করার জন্য সোচ্চার দাবী উঠেছে। আর এ দাবীও অবস্থার নিরিখে পাশ করতেই হবে মুসলিম বিশ্বের সকল সরকারকে । তা তারা স্বভাবগত ও চরিত্রগতভাবে যে মতেরই অধিকারী হোক না কেনো ?
আদীকাল থেকেই বেঈমানী
ইহুদী জাতির বেঈমানী ও বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস শুধু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকে শুরু নয়। বরং ইহুদী জাতির অভ্যুত্থানের পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত তাদের বেঈমানীর ধারাবাহিক ইতিহাস চলে আসছে। কুরআনের ভাষাই তাদের বেঈমানীর ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। ইহুদী জাতির উৎপত্তি মূলত আমাদের মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাল থেকে শুরু হয়। আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে পরীক্ষায় ফেললে তিনি এসব পরীক্ষায় পরিপূর্ণভাবেই উত্তীর্ণ হন। তাই আল্লাহ তখনই তাঁর সাথে তাঁর বংশে বিশ্বজাতি পরিচলনার নেতৃত্ব দান করার ওয়াদা করলেন ।
কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে :
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَهِمَ رَبُّهُ بِكَلِمَتِ فَاتَمهُنَّ ، قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ اِمَامًا ل
قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِي ، قَالَ لاَيَنَالُ عَهْدِي الظَّلِمِينَ ٥ - البقرة : ١٢٤
L
“ইবরাহীমকে তাঁর রব কিছু কিছু ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন। সেসব পরীক্ষায় তিনি সফল হলেন, তাকে আল্লাহ বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা বানাবো। ইবরাহীম নিবেদন করলেন –আর আমার বংশধরদের ব্যাপারেও কি এ ওয়াদা। উত্তরে আল্লাহ বললেন, আমার ওয়াদা যালিমদের জন্য নয়।”-সূরা আল বাকারা : ১২৪
আল্লাহর কালামের এ আয়াত থেকে বুঝা যায় হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিখুঁত আনুগত্য ও সফল ফরমাবরদারীর জন্যই আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিশ্বজাতির নেতা নির্বাচন করেছেন ।


১৯
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ছেলে ছিলো দু'জন। একজন হযরত ইসহাক ও অপরজন হযরত ইসমাঈল আলাইহিমাস্ সালাম। এ দু'জনই নবীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন ।
হযরত ইসহাকের ছেলে হলো হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম । তিনিও নবী ছিলেন। তাঁকে ইসরাঈল নামে ডাকা হতো। ইসরাঈল অর্থ হলো আবদুল্লাহ-আল্লাহর বান্দা। হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের বংশধররাই বনী ইসরাঈল নামে ইতিহাসে খ্যাত। এ ‘ইসরাঈলকেই' ইহুদী বলা হয় ৷ এ ইহুদীরা' প্রকৃতপক্ষে হযরত ইয়াকুবের বারটি বংশের একটি বংশের নাম ।
ইহুদীদের সম্পর্কে মাওলানা হামীদুদ্দীন ফারাহী লিখেছেন— ইয়াহুদা' ছিলো হযরত ইয়াকুবের বারটি ছেলের মধ্যে চতুর্থ ছেলে। এ চতুর্থ ছেলে হতেই বনী ইসরাঈলের বারটি বংশের উৎপত্তি ঘটে। 'ইয়াব' রাজত্বকালে বিজয়কৃত সকল এলাকা এ বারটি বংশের মধ্যে বণ্টিত হয়ে যায়। এ বন্টন ব্যবস্থার ফলে ‘এরশেলেম' নামক স্থান থেকে শুরু করে এর দক্ষিণের গোটা এলাকা বনী ইয়াহুদের অধীনে এসে যায়। হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম এ বংশেরই লোক ছিলেন। হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের কালে গোটা এলাকার রাজত্বই বনী ইসরাঈলের করতল গত হয়। হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের ছেলে হলেন হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম । তিনিই তার বাদশাহীর কালে “হায়কেলে সুলাইমানী' তৈরী করেছিলেন। তাঁর আমল থেকেই এ খান্দানের নামকাম, শান-শওকত আরো অনেক বেড়ে গেলো ।
হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের পরেই বনী ইসরাঈলদের মধ্যে মতভেদ শুরু হয়। এরপর বনী ইসরাঈলরা দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর এক অংশের নাম ‘ইয়াহুদা' ও অপর অংশ বনী ইসরাঈল' নামে পরিচিতি লাভ করে। এছাড়া ঐ বারটি বংশের নাম নিশানা কালক্রমে ধীরে ধীরে বিলিন ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় । এরপরে ইতিহাসের পাতায় ‘ইয়াহুদা' ও ‘বনী ইসরাঈলের নামই পাওয়া যায় ।
তারপরের ইতিহাসে দেখা যায় এরা যখন 'কিলদানীদের' হাতে বন্দী হয়ে পড়ে তখন বনী ইসরাঈল নামটি ইহুদী নামে যুক্তভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। বর্তমান বিশ্বে ‘ইসরাঈল' ও ইহুদী জাতি, এক জাতি হিসাবেই পরিচিত । তাদাব্বুরে কুরআন-মাওলানা আমীন আহসান ইসলাহী। -
।—পূঃ ১৮৩

20

বনী ইসরাঈলের সাথে আল্লাহর অঙ্গীকার
বনী ইসরাঈলরা প্রায় পাঁচ হাজার বছর গোটা মানবজাতির ধর্মীয় নেতা ও পথপ্রদর্শকের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকে। তারা তাদের পূর্ব পুরুষ ও মিল্লাতে মুসলিমার পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পথ অনুসরণ করে চলা, সততা, সরলতা ও পরিপূর্ণভাবে তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার ফলেই এ মর্যাদায় অভিষিক্ত হতে পেরেছিলো।
কুরআন পাকেও হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বড় বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ হিসাবে তাঁর নির্ভেজাল তাওহীদবাদের অনুসারী হবার কথা ঘোষণা করেছে। সকল প্রকার শিরক হতে তিনি ছিলেন মুক্ত। বলা হয়েছে :
قُلْ إِنَّنِي هَدْ نِي رَبِّي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ دِينًا قِيمًا مِّلَّةَ إِبْرَهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ، قُلْ إِنَّ صَلاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي
لِلّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ لَاشَرِيكَ لَهُ ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ .
“(হে মুহাম্মদ!) বলুন আমার রব নিসন্দেহে আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন সম্পূর্ণ ও সর্বতোভাবে সঠিক দ্বীন। যাতে একটুও বেঁকা তেড়া নেই । ইবরাহীমের পথ, যা তিনি একাগ্রমনে অবলম্বন করেছিলেন । তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। বলো, (হে রাসূল!) আমার নামায, আমার সকল নিয়ম-কানুন, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবকিছুই আল্লাহ তাআলার জন্য । যার কোনো শরীক নেই। আমাকে এ কথারই আদেশ দেয়া হয়েছে। আর ইবাদাতের জন্য মাথা নতকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম।”-সূরা আল আনআম : ১৬১-১৬৩
এরপর বনী ইসরাঈলরা একটি জাতি হিসাবে নেতৃত্বের এ মর্যাদা যখন পেলো, তাদেরকে জোর দিয়ে বিশেষ করে বলে দেয়া হলো ঃ
WNLOنَ إِلا الله من وَبِالْوَالِدَينِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتْمَى وَالْمَسْكِينَ
قف
وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيمُوا الصَّلوةَ وَأتُو الزكوة ط ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلا قَلِيلاً
منْكُمْ وَأَنْتُمْ مُعْرِضُونَ ٥ - البقرة ٨٣:
“আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করবে না । পিতা-মাতার সাথে, আত্মীয়- স্বজনের সাথে, ইয়াতীম-মিসকিনের সাথে ভালো ব্যবহার করবে । সাধারণ মানুষের সাথে ভালো আচরণ করবে। নামায কায়েম করবে। যাকাত


২১
আদায় করবে। মুষ্টিমেয় লোক ছাড়া তোমরা সকলেই এ প্রতিশ্রুতি ভংগ করেছ এবং এখন পর্যন্ত সেই অবস্থাতেই রয়েছ।”-সূরা বাকরা : ৮৩
خُنُوا مَا آتَيْنَكُمْ بِقُوَّةٍ وَاذْكُرُوا مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ - البقرة : ٦٣
“যে কিতাব তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে তা তোমরা মজবুত করে আঁকড়ে ধরবে । এতে যেসব হুকুম, আহকাম ও উপদেশবাণী লেখা আছে তা স্মরণ রাখবে। বস্তুত এরই সাহায্যে আশা করা যায় তোমরা তাকওয়ার নীতি মেনে চলতে পারবে।”-সূরা আল বাকারা : ৬৩
وَقَالَ اللهُ إنّي مَعَكُمْ ، لَئِنْ أَقَمْتُمُ الصَّلوةَ وَأتَيْتُمُ الزَّكَوةَ وَأمَنْتُم بِرُسُلِي
وَعَزَّرْتُمُوهُمْ وَأَقْرَضْتُمُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا - المائدة : ۱۲
“আল্লাহ বলেছেন, আমি তোমাদের সাথে আছি। যদি তোমরা নামায কায়েম রাখো । যাকাত আদায় করো এবং আমার নবীগণকে মান্য করো । তাদের সাহায্য এবং শক্তি বৃদ্ধি করো এবং তোমাদের আল্লাহকে উত্তম কর্জ দিতে থাকো।”-সূরা আল মায়েদা : ১২
বনী ইসরাঈলকে নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করার সময় আল্লাহ তাআলা তদের কাছ থেকে যে ওয়াদা নিয়েছিলেন তার উল্লেখ ‘বাইবেলেও’ আছে :
“হে ইস্রায়েল, শুন ; আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একই সদাপ্রভু ; আর তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবে। আর এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।”-দ্বিতীয় বিবরণ, ৬ : ৪-৭
“তোমরা আপনাদের জন্য অবস্ত প্রতিমা নির্ম্মাণ করিও না, এবং ক্ষোদিত প্রতিমা কিম্বা স্তম্ভ স্থাপন করিও না, তাহার কাছে প্রণিপাত করিবার নিমিত্তে তোমাদের দেশে কোন ক্ষোদিত প্রস্তর রাখিও না ; কেননা আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। তোমরা আমার বিশ্রামবার সমাদর করিও ; আমি সদাপ্রভু।”- লেবীয় পুস্তক, ২৬ : ১-২


তারা যেনো ভেবেছিলো হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর খোদাভীতি ও পরিপূর্ণ আনুগত্যশীলতার জন্য যেভাবে দ্বীনের বিশ্ব নেতৃত্বের মর্যাদায় আসীন হয়েছিলেন। তারাও তাদের খোদাভীতি ও আনুগত্যশীলতার জন্য বিশ্ব নেতৃত্বের আসন লাভ করেছিলো ।
বস্তুত হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম তাঁর মৃত্যুর সময় তাঁর ছেলেদেরকে যে ‘অসিয়াত' করেছিলেন তার বিবরণ 'গাজে বুর্গে কাসাসে ইয়াহুদ' গ্রন্থে এভাবে উল্লেখ আছে :
“ইসহাক যখন বুঝতে পারলেন তাঁর জীবনাবসান অত্যাসন্ন। তিনি তাঁর ছেলেদেরকে নিজের কাছে ডেকে এনে বললেন, হে আমার ছেলেরা ! আমি তোমাদেরকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, আল্লাহর সিফাত হলো সুউচ্চ, বিরাট বড়, চিরন্তন এবং পরাক্রমশালী। যে আল্লাহ আসমান জমিন ও এ দু'য়ের মধ্যে যাকিছু আছে তাঁর প্রত্যেকটি জিনিসেরই সৃষ্টিকর্তা। তোমরা শুধু তাঁকেই ভয় করে চলবে। ইবাদাত শুধু তাঁরই করবে।”
শেষ অংশ তো মনে হচ্ছে “ইয়্যাকা’নাবুদ ওয়া ইয়্যাকানাসতাঈন'-এর হুবহু তরজমা ।
এ গ্রন্থেরই দ্বিতীয় ভলিউমের ১৪১ পৃষ্ঠায় হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামেরও এ ধরনের একটি অসিয়াত তার ছেলেদের উদ্দেশ্যে উল্লেখ আছে।
জুয়ুস ইনসাইক্লোপেডিয়ায় ইহুদীদের এ অহংকারী অবস্থা ও মনোভাবের কথা এভাবে ব্যক্ত করেছে :
“বনি ইসরাঈলের উপর আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত প্রচার করার বিশেষ দায়িত্ব ও ফরজ কাজ অর্পিত হয়েছিলো। সূর্য পূজা, চাঁদ পূজা, তারকা পূজার বিরুদ্ধে তারা অবিরত জিহাদ করতে থাকবে।”-জিলদ ৬, পৃ-৫
হিষ্টোরিজ, হিষ্টি অব্ দি ওয়ার্ল্ডের লেখক আরো অগ্রসর হয়ে দাবী করেছেন, “দ্বীনে তাওহীদের বুনিয়াদই গড়ে উঠেছিলো বনী ইসরাঈলে ।”
বনী ইসরাঈলকে দাওয়াতে হকের পতাকাবাহীরূপেই সৃষ্টি করা হয়েছিলো । সত্যের সাক্ষ প্রদানকে তাদের বুনিয়াদী ফরয, অবশ্য কর্তব্য হিসাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
শুধু তা-ই নয় বরং বনী ইসরাঈলকে দাওয়াতে হকের পতাকাবাহীও বানানো হয়েছিলো। শাহাদাতে হক বা সত্যের সাক্ষ্য প্রদান করাকে তাদের বুনিয়াদী দায়িত্ব কর্তব্য হিসাবেও নির্দিষ্ট করা হয়েছিলো । আল্লাহ বলেছেন :


২৩
وَإِذْ اَخَذَ اللَّهُ مِيْثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَب لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ .
فَنَبَدُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً ، فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ
“এ আহলে কিতাবকে (বনী ইসরাঈল)! এ অঙ্গীকারের কথাও স্মরণ করিয়ে দাও, যে ওয়াদা আল্লাহ তাদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন যে, তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাবের শিক্ষাসমূহ মানুষের মধ্যে প্রচার করতে হবে। একে গোপন রাখতে পারবে না। কিন্তু তারা কিতাবকে পিছনের দিকে ফেলে রেখেছে এবং সামান্য মূল্যে তাকে বিক্রয় করেছে। এটা তারা যা করেছে তা কতই না খারাপ কাজ।”-সূরা আলে ইমরান : ১৮৭
এ বনী ইসরাঈল জাতিকে আল্লাহ এতো মর্যাদা ও গৌরব দান করার পেছনে এসব দায়িত্ব পালন করাই ছিলো মূল কারণ। এ কারণেই বনী ইসরাঈলের মধ্যে একের পর এক অসংখ্য নবীকে পাঠিয়েছেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এদের মধ্যে কিছু কিছু ভালো মানুষও ছিলেন তারা নবীদের দাওয়াতে সাড়া দিয়েছিলেন। তাদের সাথে ছিলেন। তাঁদেরকে সহযোগিতা যুগিয়েছেন। কিন্তু বনী ইসরাঈল গোষ্ঠীর অধিকাংশের আচার-আচরণ আল্লাহ, আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর রাসূলদের সাথে খুবই লজ্জাজনক ছিলো
বনী ইসরাঈলের মু'মিন-মুখলিস বান্দাহদের ব্যাপারে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় প্রসংশা করে বলা হয়েছে :
وَلَقَدْ أَتَيْنَا مُوسَى الْكِتب فَلَا تَكُنْ فِي مِرْيَةٍ مِّنْ لِقَائِهِ وَجَعَلْنَهُ هُدًى لَبَنِي
إِسْرَاءِ يْلَ وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يُهْدُونَ بأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا ، وَكَانُوا بِايْتِنَا
يوقنون O - السجدة : ٢٣-٢٤
“এর আগে আমি মূসাকে কিতাব দান করেছি। অতএব তা লাভ করা সম্পর্কে তোমাদের মনে কোনো সন্দেহের সৃষ্টি হওয়া উচিত নয়। এ কিতাবকে আমি বনী ইসরাঈলের জন্য হিদায়াত হিসাবে বানিয়েছি। যতদিন তারা ধৈর্যধারণ করেছে এবং আমার আয়াতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। ততদিন আমি তাদের মধ্যে এমন পথপ্রদর্শক ও নেতা পাঠিয়েছি যারা আমার নির্দেশে তাদের মধ্যে পথপ্রদর্শনের কাজ করেছে।”
-সূরা আস সাজদা : ২৩-২৪

28

আর এ মু'মিন, মুখলিস বান্দাহদের ব্যাপারে সূরা আরাফে বলা হয়েছে :
وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِينَ كَانُوا يُسْتَضْعَفُونَ مَشارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِي بُرَكْنَا فيهَا ، وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنَى عَلَى بَنِي إِسْرَاءِ يْلَا بِمَا صَبَرُوا - وَدَمَرْنَا
ط
مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرعون وقومه وَمَا كَانُوا يَعْرِشُونَ ٥ - الاعراف : ۱۳۷
“আর আমি এ ফিরাউন গোষ্ঠীর জায়গায় ঐসব লোকদেরকে এ জমিনের পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বলয়ের ওয়ারিশ বানিয়ে দিয়েছি, সমৃদ্ধশালী করেছি, যাদেরকে তারা দুর্বল করে রেখেছিলো । এভাবে বনী ইসরাঈলদের ব্যাপারে তোমার আল্লাহর কল্যাণময় ওয়াদা পূরণ হয়েছে কারণ তারা ধৈর্যের সাথে কাজ করেছিলো। আর ফেরাউন ও তার লোকজনের সে সবকিছুই আমরা বরবাদ করে দিলাম যা তারা বানাচ্ছিল এবং উঁচু করেছিলো।”-সূরা আল আরাফ : ১৩৭
তালুত ও তাঁর সঙ্গী, সাথীদের সত্যবাদিতা দৃঢ়তার কথাও এ ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে :
فَلَمَّا جَاوَزَهُ هُوَ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ ، قَالُوا لَاَطَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوْتَ وَجُنُودِهِ ، قَالَ الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُمْ مُلْقُوا اللَّهِ « كَمْ مِنْ فِئَةٍ قَليلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةٌ كَثِيرَةُ بِإِذْنِ اللهِ ، وَاللهُ مَعَ الصَّبِرِينَ وَلَمَّا بَرَزُوا لِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ قَالُوا رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَفِرِينَ . فَهَزَمُوهُمْ بِاِذْنِ الله قد - البقرة : ٢٤٩-٢٥١
“এরপর তালুত এবং তার সহযাত্রী মুসলমানগণ যখন নদী পার হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলো, তখন তারা তালুতকে বললো : আজ জালুত এবং তার সৈন্য বাহিনীর সাথে মুকাবিলা করার কোনো শক্তিই আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু যারা মনে করতো যে, তাদেরকে একদিন আল্লাহর সাথে নিশ্চয়ই সাক্ষাত করতে হবে, তারা বললো : অনেকবারই দেখা গেছে যে, এক ক্ষুদ্রতম দল আল্লাহর অনুমতিক্রমে একটি বৃহত্তর দলের উপর জয়ী হয়েছে। আল্লাহ নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের সাথী রয়েছেন। যখন তারা জালুত ও তার সৈন্য বাহিনীর সম্মুখীন হলো, তখন তারা দোয়া


২৫
করলো : হে আমাদের রব, আমাদেরকে ধৈর্যদান করো, আমাদের পদক্ষেপ সুদৃঢ় করো এবং এ কাফের দলের উপর আমাদেরকে বিজয় দান করো। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর অনুমতিক্রমেই তারা কাফেরদের পরাজিত করে দিলো।”-সূরা আল বাকারা : ২৪৯-২৫১
এতো হলো বনী ইসরাঈলের কিছু মু'মিন-মুখলিসিনের কথা। কিন্তু বনী ইসরাঈল তথা ইহুদী জাতির অধিকাংশই ছিলো বেঈমান। তারা আল্লাহর হুকুমের সাথে খুবই লজ্জাকর ব্যবহার করেছে। তাদের এ ন্যক্কার ও লজ্জাজনক অবস্থার কথা উল্লেখ করে আল্লাহ কুরআনে বলেছেন :
وَلَقَدْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَاءِ يْلَ وَاَرْسَلْنَا إِلَيْهِمْ رُسُلاً ، كُلَّمَا جَاءَ هُمْ رَسُولُ بِمَا لا تَهْوَى أَنْفُسُهُمْ : فَرِيقًا كَذَّبُوا وَفَرِيقًا يَقْتُلُونَ ، وَحَسَبُوا الا
تَكُونَ فِتْنَةٌ فَعَمُوا وَصَمُوا ثُمَّ تَابَ اللهُ عَلَيْهِم ثُمَّ عَمُوا وَصَمُوا كَثِيرٌ مِنْهم
“আমি বনী ইসরাঈল থেকে মযবুত ওয়াদা গ্রহণ করেছি। তাদের নিকট অনেক রাসূল পাঠিয়েছি। কিন্তু যখনই কোনো রাসূল তাদের কৃপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে কোনো কথা নিয়ে এসেছে তখন তারা কাউকে মিথ্যাবাদী বলেছে, কাউকে হত্যা করেছে, এবং নিজেরা ধারণা করে নিয়েছে যে, এখন আর কোনো ফেতনার সৃষ্টি হবে না। তাই তারা অন্ধ ও বধির হয়ে গিয়েছিলো। এরপরও আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও তাদের অধিকাংশ লোক আরো বেশী অন্ধ ও বধির হতে চললো।”-সূরা আল মায়েদা : ৬৯-৭১
এদের ইতিহাস সম্পর্কে কুরআন আরো বলেছে :
وَلَقَدْ أَتَيْنَا بَنِي إِسْرَاءِيلَ الْكِتَبَ وَالْحُكْمَ وَالنَّبُوَّةَ وَرَزَقْنهُم مِّنَ الطَّيِّبت
oglo riz
وَفَضَّلْنَهُم عَلَى الْعَلَمِينَ ، وَأَتينهُم بَيِّنت مِّنَ الْأَمْرِ، فَمَا اخْتَلَفُوا إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ لا بَغْيًا بَيْنَهُمْ ، إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِي بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيمَةِ فِيمَا
“এর আগে আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাব, হুকুম ও নবুয়াত দান করেছিলাম। তাদেরকে আমি জীবন ধারণের জন্য উত্তম জীবিকা দান করেছিলাম। গোটা দুনিয়ার মানুষের উপর তাদেরকে অধিক মর্যাদাশীল

26

করেছিলাম । দ্বীনের ব্যাপারে তাদেরকে সুস্পষ্ট হিদায়াত দান করেছিলাম ! এরপর তাদের মধ্যে যে মতবিরোধের সৃষ্টি হলো তা তাদের অজ্ঞতার কারণে নয় । বরং নির্ভুল জ্ঞান লাভের পরই মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। আর তা হয়েছে এ কারণে যে তারা একে অপরের উপর বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছিলো।”-সূরা আল জাসিয়া ঃ ১৬-১৭
সাধারণভাবে ও সংক্ষিপ্তভাবে ইহুদী জাতির ব্যাপারে কুরআনের এ বর্ণনার পর বিস্তারিতভাবে এ জাতির বেঈমানীর ইতিহাস ও ব্যাখ্যা জানার জন্য তাদের পাঁচ হাজার বছরের অপরাধ ও বিদ্রোহের ইতিহাসের উপর একবার মনোযোগ সহকারে দৃষ্টি দেয়াই যথেষ্ট ।

বনী ইসরাঈলে হযরত মূসার আগমন
হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের পর মিসরে রাখাল খান্দানের (HYKSOS) যখন পতন হলো, সেই সময় থেকেই বনী ইসরাঈল গোত্রে বিবর্তন ও অধঃপতনের যাত্রা শুরু হলো । এ সময়ের পর থেকে মিসরে যখনই কোনো জাতীয় সরকার বা প্রশাসন কায়েম হয়েছে, তখনই বনী ইসরাঈল গোষ্ঠীর লোকদেরকে বড় বড় পদ ও মর্যাদা থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। সমাজের ও রাষ্ট্রের যে কোনো ধরনের দায়িত্ব ও ক্ষমতা থেকে বনী ইসরাঈল বংশের লোকদেরকে বেছে বেছে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। শাসক গোষ্ঠী নানাভাবে তাদেরকে হয়রানী-পেরেশানীর সম্মুখীন করেছে। পদে পদে তাদেরকে নানা ধরনের মামলা মকদ্দমা ও বিপদাপদে জড়িয়ে দিয়েছে। যারা এতদিন শাসন ক্ষমতায় ও দেশ পরিচালনায় নেতৃত্বে ছিলো তারা হয়ে গেল অবহেলিত ও পদদলিত ।
এ প্রসঙ্গে বাইবেলের যাত্রাপুস্তকে বর্ণিত হয়েছে :
“পরে মিসরের উপরে এক নূতন রাজা উঠিলেন, তিনি যোষেফকে জানিতেন না । তিনি আপন প্রজাদিগকে কহিলেন, দেখ, আমাদের অপেক্ষা ইস্রায়েল-সন্তানদের জাতি বহুসংখ্যক ও বলবান ; আইস, আমরা তাহাদের সাহিত বিবেচনাপূর্ব্বক ব্যবহার করি, পাছে তাহারা বাড়িয়া উঠে, এবং যুদ্ধ উপস্থিত হইলে তাহারাও শত্রু পক্ষে যোগ দিয়া আমাদের সহিত যুদ্ধ করে, এবং এ দেশ হইতে প্রস্থান করে। অতএব তাহারা ভার বহন দ্বারা উহাদিগকে দুঃখ দিবার জন্য উহাদের উপরে কার্য্যশাসকদিগকে নিযুক্ত করিল। আর উহারা ফরৌণের নিমিত্ত ভাণ্ডারের নগর পিথোম ও রামিষেষ গাঁথিল। কিন্তু উহারা তাহাদের দ্বারা যত দুঃখ পাইল, ততই বৃদ্ধি পাইতে ও ব্যাপ্ত হইতে লাগিল ; তাই ইস্রায়েল-সন্তানদের বিষয়ে তারাহা অতিশয় উদ্বিগ্ন হইল। আর মিস্ত্রয়েরা নিদয়তাপূর্ব্বক ইস্রায়েল সন্তানদিগকে দাস্যকর্ম্ম করাইল ; তাহারা কর্দ্দম, ইষ্টক ও ক্ষেত্রের সমস্ত কাৰ্য্যে কঠিন দাস্যকর্ম্ম দ্বারা উহাদের প্রাণ তিক্ত করিতে লাগিল । তাহারা উতাদের দ্বারা যে যে দাস্যকর্ম্ম করাইত, সে সমস্ত নিৰ্দ্দয়তাপূর্ব্বক করাইত।”-যাত্রাপুস্তক ১ : ৮-১৪
শুধু তাই নয় বরং তারা বনি ইসরাঈল বংশে যাতে কোনো পুরুষ সংখ্যা বাড়তে না পারে তার জন্য কোনো ছেলে জন্মালে তাকে সাথে সাথে হত্যা করে

২৮

ফেলার ও কোনো কন্যা সন্তান জন্মালে তাকে জীবিত রাখার নির্দেশ জারী করলো । এ ব্যাপারে বাইবেলের বর্ণনা ঃ
পরে মিসরের রাজা শিফ্রা নামে ও পূয়া নামে দুই ইব্রীয়া ধাত্রীকে এই কথা কহিলেন, যে সময়ে তোমরা ইব্রীয় স্ত্রী-লোকদের ধাত্রীকার্য্য করিবে, 13 তাহাদিগকে প্রসব আধারে দেখিবে, যদি পুত্র সন্তান হয়, তাহাকে বধ করিবে ; আর যদি কন্যা হয়, তাহাকে জীবিত রাখিবে।”-যাত্রাপুস্তক ১ : ১৫-১৬
তালমুদ এ ঘটনার আরো বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়ে লিখছে :
“হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের মৃত্যুর একশত বছরেরও কিছু বেশী সময় অতিবাহিত হবার পর মিসরে এ সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী বিপ্লবের ঘটনা সূচিত হয়েছিলো। গজিয়ে উঠা জাতীয়তাবাদের পূজারী এ নতুন শক্তি ইসরাঈলী বিরোধী সরকার প্রথম প্রথম বনী ইসরাঈলকে তাদের মালিকানার অধিক ফসল উৎপাদনকারী জায়গা জমি, নিজস্ব ঘর-বাড়ী ও অন্যান্য ধন-সম্পদ হতে বেদখল দিতে লাগলো। এরপর বনী ইসরাঈলী ইহুদীদেরকে রাষ্ট্রের ও সরকারের সকল ছোট বড় পদ থেকে পদচ্যুত ও সরিয়ে দিতে লাগলো। এভাবে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত করার পরও কিন্তী জাতি ও তাদের পরিচালক সরকার নিশ্চিত ও স্বস্থির নিশ্বাস ফেলতে পারলো না। তারা ভাবলো এখনো বনী ইসরাঈল ও তাদের স্বগোত্রীয় মিসরীয়গণ যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই তারা আরো কঠোরভাবে ইসরাঈলীদেরকে নানাভাবে হয়রান পেরেশান করার পথ বেছে নিলো ৷ যত্রতত্র পদদলিত লাঞ্ছিত করতে শুরু করলো। কম মূল্যে কিংবা বিনামূল্যে তাদের দ্বারা কঠিন কঠিন পরিশ্রমের কাজ করাতে শুরু করলো।”-তালমুদ সিলেকসন্স : পাতা-১২৩-১২৪

জাতি হিসাবে বনী ইসরাঈলের আবির্ভাব
আগেই বলা হয়েছে যে, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের বংশ হতেই ইহুদী জাতির উৎপত্তি। হযরত ইয়াকুবের ১২ জন ছেলের ৪র্থ ছেলের নাম ছিলো ‘ইয়াহুদা'। এ ছেলের ঔরষ থেকেই বনী ইসরাঈলের বারটি বংশের উৎপত্তি ঘটে ।
কুরআন ও বাইবেলের বর্ণনানুযায়ী ভাইদের কারসাজী ও ষড়যন্ত্রের ফলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম পিতা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার পর আল্লাহ তাআলার সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যখন মিসরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বসলেন। তখন দেশ ব্যাপী দুর্ভিক্ষের ফলে ভিক্ষার সন্ধানে আসা ষড়যন্ত্রকারী ভাইদের সাথে ঘটনাক্রমে হযরত ইউসুফের দেখা হয়ে যায়। সব গোপন রহস্য উদ্ঘাটন হবার পর হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম পিতা হযরত ইয়াকুব সহ গোটা পরিবারকে মিসরে ডেকে নিয়ে এলেন। তখন সেই পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিলো সর্ব সাকুল্যে মাত্র ৬৭জন । এ জনসংখ্যার মধ্যে হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের পরিবারের বিবাহিত মেয়েরা গণ্য ছিলো না। এ বংশধারাই পরবর্তীতে ইহুদী জাতি হিসাবে জগতে খ্যাত হয়েছে।
হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের প্রায় পাঁচ শত বছর পর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম মিসরে আগমন করলেন। তিনি এ বনী ইসরাঈল গোত্রের নবী ছিলেন। মিসরের মূল অধিবাসি কিন্তী জাতির অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলকে সাথে নিয়ে যখন মিসর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তখন বনী ইসরাঈলের জনসংখ্যা ছিলো প্রায় এক লাখের মতো।
বাইবেলের বর্ণনানুযায়ী বনী ইসরাঈলরা হযরত মূসার নেতৃত্বে মিসর থেকে বেরিয়ে যাবার দ্বিতীয় বছরেই হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ‘সায়না' উপত্যকায় বনী ইসরাঈল জাতির আদম শুমারী করিয়েছিলেন। এ আদম শুমারীতে শুধু যুদ্ধ উপযোগী পুরুষদের সংখ্যাই ছিলো, ৬০৩,৫৫০ জন। এর অর্থ হলো নারী, পুরুষ, শিশু সহ সকলে মিলে মোট লোক সংখ্যা অন্ততঃ বিশ লাখের মতো গিয়ে দাঁড়াবে
সাতষট্টি সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবারের লোক সংখ্যা পাঁচশত বছরে এতবেশী হওয়া সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। এতে বুঝা যায় বনী ইসরাঈলীদের

৩০

ইসলামের দাওয়াত ও তাবলীগের ফলে জনসংখ্যা এত বেশী বৃদ্ধি পেয়েছিলো। এদের এ তাবলীগের ফলেই অনেক কিন্তী বংশীয় মিসরীয়রা ইসলাম গ্রহণ করে বনী ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিলো ।
মনে হচ্ছে বনী ইসরাঈলীদের ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ফলে মিসরবাসীদের শুধু ধর্মই পাল্টিয়ে যায়নি বরং গোটা কৃষ্টি কালচার এবং জীবন চলার পথও ধর্মীয় রঙ্গে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিলো। বাইবেল গ্রন্থে এসব নওমুসলিমদেরকেই ‘মিশ্রিত দল' বা 'অজানা' 'প্রতিবেশী' ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এসব নব দীক্ষিত লোকজনরাও বনী ইসরাঈলের সাথে হযরত মূসার ডাকে মিসর হতে বনী ইসরাঈল হিসাবে বেরিয়ে গিয়েছিলো ।
এভাবে একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বনী ইসরাঈলীরা মিসরীয় কিবতীদের গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ ছিলো। এদের উপর কিবতীদের অত্যাচার চলতো । এরপর আল্লাহর অশেষ রহমত হলো। বনী ইসরাঈল বংশে আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে পাঠালেন। তিনি যেনো এ জাতিকে আবার প্রথম থেকে সত্যের দাওয়াতের উপর কায়েম করেন। শৃংখল মুক্ত করেন। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম মূলত তাই করেছেন। তিনি আবির্ভূত হয়েই বনী ইসরাঈলকে দুর্বিসহ লাঞ্ছিত জীবন থেকে উদ্ধার করেন।
আল্লাহ তাআলার এত অবারিত রহমতের পরও বনী ইসরাঈলীরা বেঈমানী ও বদমাইশীর পথ বেছে নিলো। নবীর কথা অমান্য করে সীমালংঘন করলো । তাদের উপর আল্লাহ তাআলার অতীত দিনের অফুরন্ত দয়া ও মেহেরবানীর কথা ভুলে গেলো। আল্লাহর সেসব মেহেরবানীর কথা উল্লেখ করে কুরআন বলছে :
يُبَنِي إِسْرَاءِ يْلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَانّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَلَمِينَ ، وَاتَّقُوا يَوْمًا لأَتَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَيْئًا وَلا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلاَ هُمْ يُنصَرُونَ وَإِذْ نَجَّينكم من ال فرعون يسومُونَكُم
،
سوء
الْعَذَابِ يُذَبِّحُونَ أَبْنَاءَ كُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءَ كُمْ ط - البقرة : ٤٩٤٧
“হে বনী ইসরাঈল জাতি ! স্মরণ করো আমার ঐসব নেয়ামতসমূহ যা দ্বারা আমি তোমাদেরকে সৌভাগ্যবান বানিয়েছিলাম। আরো স্মরণ করো ঐ সময়ের কথা। যখন আমি তোমাদেরকে দুনিয়ার জাতিসমূহের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি এবং সেই দিনের ভয়ঙ্কর, যেদিন কেউ কারো কাজে

৩১
আসবে না, কারো সম্পর্কে কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না, কোনো কিছুর বিনিময়ে কাউকে ছেড়ে দেয়া হেব না এবং পাপীদের কোনো দিক থেকেই সাহায্য করা হবে না। স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন আমরা তোমাদিগকে ফেরাউনী দলের দাসত্ব থেকে মুক্তিদান করেছিলাম —তারা তোমাদেরকে কঠিন যাতনায় নিক্ষেপ করে রেখেছিল। তারা তোমাদের ছেলে সন্তানদেরকে হত্যা করে কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত রাখতো।”-সূরা আল বাকারা : ৪৭-৪৯
কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত মিসরীয়দের গোলামীর শৃংখলে আবদ্ধ থেকে এ জাতি বনী ইসরাঈলী ইহুদীরা মান সম্মান বোধ, মান মর্যাদার সকল গুণাগুণ এবং মানবীয় সকল মূল্যবোধ হারিয়ে বসেছিলো বলে মনে হয়। যেসব গুণাগুণ একটি জীবন্ত জাতির জীবন চলার পথের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয় তা তারা ভুলেই গিয়েছিলো । তাদের মধ্যে নিজেদের উন্নত জীবন বোধের কোনো আকর্ষণই ছিল না। এজন্য ত্যাগ তিতিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কোনো আবেগ অনুভূতি, কামনা বাসনার অণুপরমাণুও তাদের মধ্যে অবশিষ্ট ছিল না ।
মিসর থেকে বের হয়ে আসার পর সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করার সময় আল্লাহ তাআলা প্রখর রৌদ্রতাপ থেকে বাঁচার জন্য তাদের উপর রহমত স্বরূপ- ‘মেঘমালা' দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। আকাশ থেকে অদৃশ্যভাবে খাবার হিসাবে বিনা পরিশ্রমে তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা ‘মান্না ও সালওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কুরআনে আল্লাহ তাদের উপর এ রহমতের উল্লেখ করে বলেছেন :
وظَلَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْغَمَامَ وَأَنْزَلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ والسلوى ، كُلُوا مِنْ طَيِّبَتِ مَا
رَزَقْنكُمْ .
OV:
“আমি তোমাদের উপর মেঘমালা দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম । ‘মান্না ও সালওয়া’ দিয়ে রিযিক সরবরাহ করেছিলাম। যে পবিত্র জিনিস আমি তোমাদেরকে দান করেছি তা তোমরা খাও।”-সূরা বাকারা : ৫৭

ইহুদীরা একটি বেঈমান বিদ্ৰোহী জাতি
আল্লাহর এতসব রহমত ও দয়া এবং উত্তম রিযিক পাওয়া সত্ত্বেও বনী ইসরাঈল তথা ইহুদী জাতি মিসরে যেসব নগণ্য জিনিস খাবার হিসাবে পেতো তা আবার পাবার জন্য বার বার হযরত মূসা আলাইহিস সালামের নিকট দাবী
করতে লাগলো ।
বাইবেলের যাত্রাপুস্তকে বর্ণিত আছে :
“আর মিসর দেশ হইতে প্রস্থান করিবার পর দ্বিতীয় মাসের পঞ্চদশ দিনে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলী সীন প্রান্তরে উপস্থিত হইল, তাহা এলীমের ও সীনয়ের মধ্যবর্তী। তখন ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত মণ্ডলী মোশির ও হারোণের বিরুদ্ধে প্রান্তরে বচসা করিল ; আর ইস্রায়েল- সন্তানেরা তাঁহাদিগকে কহিল, হায়, হায়, আমরা মিসর দেশে সদাপ্রভুর হস্তে কেন মরি নাই ? তখন মাংসের হাঁড়ীর কাছে বসিতাম, তৃপ্তি পর্যন্ত রুটী ভোজন করিতাম ; তোমরা ত এই সমস্ত সমাজকে ক্ষুধায় মারিয়া ফেলিতে আমাদিগকে বাহির করিয়া এই প্রান্তরে আনিয়াছ ।”
-যাত্রাপুস্তক ১৬ : ১-৩
এ ঘটনা সম্ভবতঃ আকাশ হতে আল্লাহর রহমতের 'মান্না ও সালওয়া নাযিল হবার আগের ছিলো আল্লাহ তাআলা তার রহমতে তাদের জন্য এ দুর্গম জঙ্গলে মান্না ও সালওয়ার মতো নিয়ামাত পাঠাবার পরও তাদের বেঈমানী ও বিদ্রোহের আচরণ শেষ হয়নি ।
বাইবেলের গণনাপুস্তকের ১১ অধ্যায়ে আছে :
“আর তাহাদের মধ্যবর্তী মিশ্রিত লোকেরা লোভাক্রান্ত হইয়া উঠিল ; আর ইস্রায়েল-সন্তানগণও পুনর্ব্বার রোদন করিয়া কহিল, কে আমাদিগকে ভক্ষণার্থে মাংস দিবে ? আমরা মিসর দেশে বিনামূল্যে যে যে মাছ খাইতাম, তা এবং সশা, খরবুজ, পরু, ফরাণ্ডু ও লশুন মনে পড়িতেছে। এখন আমাদের প্রাণ শুষ্ক হইল ; কিছুই নাই ; আমাদের সম্মুখে এই মান্না ব্যতীত আর কিছুই নাই ।”গণনাপুস্তক ১১ঃ ৪-৭
বনী ইসরাঈলের এ বেঈমানী ও বিদ্রোহের কথা আল্লাহ পাক কুরআনে উল্লেখ করে বলেছেন :
وَإِذْ قُلْتُمْ يمُوسى لَن نَّصْبِرَ عَلَى طَعَامٍ واحد فَادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا


3
تُنْبِتُ الْأَرْضُ مِنْ بَعْلِهَا وَقِثَّانِهَا وَفُوْمِهَا وَعَدَسَهَا وَبَصَلِهَا ، قَالَ أَتَسْتَبْدِلُونَ
الَّذِي هُوَ أدْنى بِالَّذِي هُوَ خَيْرٌ، َاهْبِطُوا مِصْرًا فَإِنَّ لَكُمْ ما سَأَلْتُمْ .
“তোমরা সেই ঘটনা স্মরণ করো যখন তোমরা বলেছিলে, হে মূসা! আমরা প্রতিদিনই একই ধরনের খাবারে (মান্না ও সালওয়া) আর ধৈর্যধারণ করতে পারছি না। আপনার রবের নিকট দোয়া করুন। যেনো তিনি জমির উৎপাদিত ফসল শাক-শবজি, কাঁকড়ি, গম, মশুরী, রসূন, পেয়াজ, ডাল ইত্যাদি উৎপাদন করেন। তখন হযরত মূসা বললেন, তোমরা কি একটি উত্তম জিনিসের পরিবর্তে নিম্নমানের জিনিস গ্রহণ করতে চাচ্ছো ? যদি তাই হয় তাহলে মিসরের গিয়ে থাকো। তোমরা যা চাও ওখানে গিয়ে পাবে।”-সূরা আল বাকারা : ৬১
মরুভূমিতে তারা যখন পিপাসায় বড় কাতর হয়ে পড়লো, আবার হযরত মূসা ও হারুণের সাথে ঝগড়া শুরু করলো। তাওরাতের (বাইবেল) গণনাপুস্তকে বর্ণিত হয়েছে :
“আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ, অর্থাৎ সমস্ত মণ্ডলী প্রথম মাসে সীন প্রান্তরে উপস্থিত হইল, এবং লোকেরা কাদেশে বাস করিল ; আর সেই স্থানে মরিয়মের মৃত্যু হইল ও সেই স্থানে তাঁহার কবর হইল। সেই স্থানে মণ্ডলীর জন্য জল ছিল না ; তাহাতে লোকেরা মোশির ও হারোণের প্রতিকূলে একত্র হইল । আর তাহারা মোশির সহিত বিবাদ করিয়া কহিল, হায়, আমাদের ভ্রাতৃগণ যখন সদাপ্রভুর সম্মুখে মরিয়া গেল, তখন কেন আমাদের মৃত্যু হইল না ? আর তোমরা আমাদের ও আমাদের পশুদের মৃত্যুর জন্য সদাপ্রভুর সমাজকে কেন এই প্রান্তরে আনিলে ? এই কুস্থানে আনিবার জন্য আমাদিগকে মিসর হইতে কেন বাহির করিয়া লইয়া আসিলে ? এই স্থানে চাস কি ডুমুর কি দ্রাক্ষা কি দাড়িম্ব হয় না, এবং পান করিবার জলও নাই। তখন মোশি ও হারোণ সমাজের সাক্ষাৎ হইতে সমাগম-তাম্বুর দ্বারে গিয়া উবুড় হইয়া পড়িলেন ; আর সদাপ্রভুর প্রতাপ তাঁহাদের দৃষ্টিগোচর হইল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি যষ্টি লও, এবং তুমি ও তোমার ভ্রাতা হারোণ মণ্ডলীকে একত্র করিয়া তাহাদের সাক্ষাতে ঐ শৈলকে বল, তাহাতে সে নিজ জল প্রদান করিবে ; এইরূপে তুমি তাহাদের নিমিত্তে শৈল হইতে জল বাহির করিয়া মণ্ডলীকে ও তাহাদের পশুগণকে পান করাইবে। তখন মোশি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাঁহার সম্মুখ হইতে ঐ যষ্টি লইলেন। আর মোশি ও হারোণ সেই শৈলের

৩৪

সম্মুখে সমাজকে একত্র করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, হে বিদ্রোহিণ, শুন; আমরা তোমাদের নিমিত্তে কি এই শৈল হইতে জল বাহির করিব ?
—গণনাপুস্তক ২০ : ১-১০
ঠিক এ ঘটনাটি কুরআনেও উল্লেখ করা হয়েছে । কুরআন বলছে :
وَإِذِ اسْتَسْقَى مُوسَى لِقَوْمِهِ فَقُلْنَا اضْرِب بَعَصَاكَ الْحَجَرَ ، فَانْفَجَرَتْ مِنْهُ
L
اثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًا ، قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُناسٍ مَّشْرَبَهُمْ ط - البقرة : ٦٠
“মূসা তার জাতির জন্য আল্লাহর কাছে পানির জন্য যে দোয়া করেছিলো তা স্মরণ করো । আমি তখন বললাম, অমুক পাথরের উপর তোমার লাঠি দিয়ে আঘাত করো। (মূসা তাই করলো) এবং পাথর হতে বারটি ঝরণাধারা প্রবাহিত হলো। প্রতিটি গোত্র জেনে নিলো কোন্ ঝরণা হতে কে পানি গ্রহণ করবে।”-সূরা আল বাকারা : ৬০
কুরআন পাকে আছে :
ولَقَدْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَاءِ يْلَ ، وَبَعَثْنَا مِنْهُمُ اثْنَى عَشَرَ نَقِيبًا ، وَقَالَ
نِّي مَعَكُمْ ط -
الله

“আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাঈল থেকে মযবুত ওয়াদা গ্রহণ করেছিলেন। এবং তাদের মধ্যে বারজন নকীব (পর্যবেক্ষক) নিযুক্ত করেছিলেন 1 তাদেরকে তিনি বলেছিলেন : আমি তোমাদের সাথে আছি।”
-সূরা আল মায়েদা : ১২
এ বারজন নকীব ঠিক করার কারণ, তাদের বড় বড় বারটি খান্দান ছিলো। প্রতিটি খান্দানের জন্য একজন নকীব (পর্যবেক্ষক) ঠিক করে দিয়েছিলেন। এভাবে বারটি পানির ঝরণা ফেটে বের হওয়া তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার ছিলো বাড়তি পুরস্কার। এ বারটি পানির ঝরণা থেকে বারটি খান্দান পৃথক পৃথকভাবে পানি নেয়ার কারণে কোনো ঝগড়া ঝাটি হবার আশংকা থাকলো না। এ বারজন নকীব স্বগোত্র হতেই নিযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ প্রতিটি নকীব সংশ্লিষ্ট খান্দানের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখে তাদেরকে বেদ্বীনি ও অসততা থেকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন ।
ঐ সময়েই আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে চল্লিশ দিনের জন্য নিজের কাছে ডেকে নিলেন। উদ্দেশ্য, বনী ইসরাইলের হেদায়াত ও পথ প্রদর্শনের জন্য তাকে তাওরাত কিতাব দান করা । তাঁর এ অনুপস্থিতির


৩৫
সময় বনী ইসরাইলরা আশেপাশের লোকজনের দেখাদেখি এবং নিজেদের মেকী দ্বীনদারীর কারণে আবার মূর্তিপূজার মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে গেলো ।
বাইবেলে এ ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে :
“পৰ্ব্বত হইতে নামিতে মোশির বিলম্ব হইতেছে দেখিয়া লোকেরা হারোণের নিকটে একত্র হইয়া তাঁহাকে কহিল, উঠুন, আমাদের অগ্রগামী হইবার জন্য আমাদের নিমিত্ত দেবতা নির্মাণ করুন, কেননা যে মোশি মিসর দেশ হইতে আমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, সেই ব্যক্তির কি হইল, তাহা আমরা জানিনা। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি নামিয়া যাও, কেননা তোমার যে লোকদিগকে তুমি মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছ, তাহারা ভ্রষ্ট হইয়াছে। আমি তাহাদিগকে যে পথে চলিবার আজ্ঞা দিয়াছি, তাহারা শীঘ্রই সেই পথ হইতে ফিরিয়াছে ; তাহারা আপনাদের নিমিত্তে এক ছাঁচে ঢালা গোবৎস নির্ম্মাণ করিয়া তাহার কাছে প্রণিপাত করিয়াছে, এবং তাহার উদ্দেশে বলিদান করিয়াছে ও বলিয়াছে, হে ইস্রায়েল, এই তোমার দেবতা, যিনি মিসর দেশ হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। সদাপ্রভু মোশিকে আরও কহিলেন, আমি সেই লোকদিগকে দেখিলাম ; দেখ, তাহারা শক্তগ্রীব জাতি । এখন তুমি ক্ষান্ত হও, তাহাদের বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হউক, আমি তাহাদিগকে সংহার করি, আর তোমা হইতে এক বড় জাতি উৎপন্ন করি।”-যাত্রাপুস্তক ৩২ : ১, ৭-১০
বাইবেল এ গো-বাছুর পূজার মধ্যে হযরত হারুন আলাইহিস সালামকেও জড়িত করে দিয়েছে কিন্তু কুরআন এর প্রতিবাদ করেছে ও বলে দিয়েছে যে, বাছুর বানানোর কাজ ছিলো সামেরীর, আল্লাহর নবীর নয় ।
প্রকৃত ঘটনা একেবারই এর বিপরীত। প্রকৃত ঘটনা হলো বনী ইসরাঈলকে হিদায়াত ও পথ চলার নির্দেশ দিয়ে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তাদের থেকে পৃথক হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। হযরত মূসার প্রতিনিধিত্বকারী হযরত হারুন আলাইহিস সালাম স্বয়ং তাদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলেন। তাদেরকে এ সুস্পষ্ট ভ্রষ্ঠতা ও গুমরাহী হতে ফিরিয়ে রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। ব্যাপারটা কুরআন বর্ণনা করেছে এভাবে :
وَإِذْ وَعَدْنَا مُوسَى ارْبَعِينَ لَيْلَةً ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِنْ بَعْدِهِ وَأَنْتُمْ ظَلِمُونَ ثُمَّ
عَفَوْنَا عَنْكُمْ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ٥ - البقرة : ٥٢.٥١

৩৬

“স্মরণ করো আমি যখন মূসাকে চল্লিশ রাত দিনের ওয়াদা করে ডেকে এনেছিলাম । তার পর পরই তোমরা গোবৎসকে তোমাদের মাবুদ বানিয়ে বসেছিলে। এ সময়ে তোমরা বড় বেশী বাড়াবাড়ি করেছিলে । কিন্তু এতসবের পরও আমি তোমাদেরকে মাফ করে দিয়েছি। আশা ছিলো তোমরা কৃতজ্ঞ হবে।”-সূরা আল বাকারা : ৫১-৫২
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ يقوم اِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ أَنْفُسَكُمْ -
“স্মরণ করো যখন মূসা তার জাতির লোকদেরকে বললো –হে লোক সকল! তোমরা গো-বাছুরকে মাবুদ বানিয়ে নিজেদের উপর বড় জুলুম করেছো।”-সূরা আল বাকারা : ৫৪
وَاتَّخَذَ قَوْمُ مُوسَى مِنْ بَعْدِهِ مِنْ حَلِيهِم عِجلاً جَسَدًا لَّهُ خَوَارٌ، اَلَمْ يَرَوْا أَنَّهُ لا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيهِمْ سَبِيلاً . اتَّخَذُوهُ وَكَانُوا ظَلِمِينَ وَلَمَّا سُقِطَ فِي
م ، أَيْدِيهِم وَرَاَوْ أنْهم قَدْ َضلُّوا ، قَالُوا لَئِنْ لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَسِرِينَ وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَى إِلى قَوْمِهِ غَضَبَانَ آسِفًا لا قَالَ بِئْسَمَا
خَلَفْتُمونِى مِن بَعدِى أعجِلتُم أمر رَبِّكُمْ ج - الاعراف : ١٤٨-١٤٩
“মূসা চলে যাওয়ার পরে তার জাতির লোকেরা তাদের অলংকারাদি দিয়ে একটি গো বাছুরের মূর্তি বানালো। যার মধ্য থেকে গরুর আওয়াজের মতো ‘হাম্বা’ আওয়াজ বেরুচ্ছিলো তারা কি দেখেছিলো না যে, সে গো- বাছুরটি না তাদের সাথে কথা বলছে, আর না কারো কাছে পথ প্ৰদৰ্শন করছে। এরপরও তারা একে মাবুদ বানিয়ে নিলো। তারা ছিলো বড়ই জালিম। এরপর যখন তাদের ধোঁকাবাজীর তেলেসমাতি চুরমার হয়ে গেলো এবং তারা দেখলো প্রকৃতপক্ষে তারা গোমরাহ হয়ে গেছে তখন বলতে লাগলো । আমাদের রব যদি আমাদের উপর করুণা না করেন এবং আমাদেরকে মাফ করে না দেন তাহলে আমরা বরবাদ হয়ে যাবো। এ দিকে হযরত মূসা দারুণ রাগ ও মনোকষ্ট নিয়ে নিজ জাতির কাছে ফিরে এসেই বললেন । আমার পরে তোমরা খুবই খারাপ প্রতিনিধিত্ব করেছো । তোমরা তোমাদের রবের হুকুম আসা পর্যন্তও কি ধৈর্যধারণ করে অপেক্ষা করতে পারলে না ?”-সূরা আল আরাফ : ১৪৮-১৫০
এ জাতির বেঈমানী ও গুমরাহীর সীমা কতো বেড়ে গিয়েছিলো একটু চিন্তা করলে অনায়াসে তা বুঝা যায় । এসব ঘটনা ঘটার মাত্র কিছুদিন আগেই


৩৭
বনী ইসরাঈলরা মিসর থেকে বেরিয়ে এসেছে। তারা নিজ চোখে তাদের উপর ফেরাউনীদের অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেছে। আল্লাহ কিভাবে তাদের এ নিষ্ঠুর জুলুম নির্যাতন থেকে মুক্তি দিয়েছেন তা-ও তাদের চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে। ফিরাউন ও তার বাহিনী তাদের চোখের সামনেই নীল নদে ডুবে মরেছে। তাদের জন্য সমুদ্রের পেট চিরে একটি শুকনো রাস্তা তৈরী হয়ে যাবার অলৌকিক ঘটনা বনী ঈসরাঈলীরা নিজ চোখে দেখেছে। এতসবের পরও এ জালিম জাতি তাদের বিদ্রোহী আচরণ ছেড়ে দেয়নি । নিজের মূর্খতা হতে ফিরে আসেনি। সূরা আল আরাফে আছে ফিরাউন বাহিনীর হাত থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া,সমদ্র পার হয়ে আসার পর থেকেই এ লোকেরা প্রকাশ্যভাবে মূর্তি পূজার মানসিকতা প্রকাশ করতে শুরু করলো । কুরআনের বর্ণনা ঃ
بِبَنِي إِسْرَاءِ يْلَ الْبَحْرَ فَأَتَوْا عَلَى قَوْمٍ يَعْكُفُونَ عَلَى أَصْنَامٍ لَّهُمْ ،
وَجَوَرْنَا
قَالُوا يَمُوسَى اجْعَلْ لَّنَا إِلَها كَمَا لَهُمْ الهَةٌ ، قَالَ إِنَّكُمْ قَوْم تَجْهَلُونَ إِنَّ
مُتَبَّرٌ مَّا هُم فِيهِ وَبِطِلٌّ مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ ) الاعراف : ۱۳۸-۱۳۹
“বনী ইসরাঈলদেরকে আমি সমুদ্র পার করে দিয়েছি। তারপর তারা চলতে শুরু করলো। পথিমধ্যে এমন এক জাতির কাছ দিয়ে তারা যাচ্ছিলো যারা নিজেদের বানানো মূর্তির প্রতি আসক্ত ছিলো। (এ সময় বনী ইসরাঈলীরা) বলতে লাগলো, হে মূসা! আমাদের জন্যও এমন মাবুদ বানিয়ে দাও যেমন মাবুদ এ লোকদের আছে। মূসা বললেন, তোমরা খুবই মূর্খতাপূর্ণ কথাবার্তা বলছো। এরা যে পদ্ধতি অনুসরণ করছে তারাতো তাদেরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর যে আমল তারা করছে তা তো সরাসরি বাতিল।”-সূরা আল আরাফ : ১৩৮-১৩৯
তাদের এ মানসিকতাকে কুরআন—“এদের হৃদয়ে গো-বাছুর স্থান করে নিয়েছে” এ ভাষায় প্রকাশ করেছে। আর এ কারণেই আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমানের পরীক্ষার জন্য তাদেরকে গাভী যবেহ করার হুকুম দেয়া হয়েছিলো । এ হুকুম পালনে তারা যে ধরনের ছলচাতুরী ও তাল বাহানার আশ্রয় নিয়েছে তা থেকেও বুঝা যায় গো-বাছুর পূজার রোগ কি পরিমাণ তাদের মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করেছিলো। মিসরবাসীর গোলামী করার কারণে বনী ইসরাঈলদের মন- মানসিকতা কি পরিমাণ হীন জঘন্য হয়ে গিয়েছিলো তা একথা হতেও অনুমান করা যায়। মিসর হতে বেরিয়ে আসার সত্তর বছর পর হযরত মূসার প্রথম খলিফা হযরত ‘ইউশা বিন নূন' তার শেষ ভাষণে বনী ইসরাঈলের জন সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন :

৩৮

“অতএব এখন তোমরা সদাপ্রভুকে ভয় কর, সরলতায় ও সত্যে তাঁহার সেবা কর, আর তোমাদের পিতৃপুরুষেরা [ফরাৎ] নদীর ওপারে ও মিসরে যে দেবগণের সেবা করিত, তাহাদিগকে দূর করিয়া দেও ; এবং সদাপ্রভুর সেবা কর। যদি সদাপ্রভুর সেবা করা তোমাদের মন্দ বোধ হয়, তবে যাহার সেবা করিবে, তাহাকে অদ্য মনোনীত কর
নদীর ওপারস্থ তোমাদের পিতৃ-পুরুষদের সেবিত দেবগণ হয় হউক, কিম্বা যাহাদের দেশে তোমরা বাস করিতেছ সেই ইমোরীয়দের দেবগণ হয় হউক ; কিন্তু আমি ও আমার পরিজন আমরা সদাপ্রভুর সেবা করিব।”
—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪ : ১৪-১৫ গো-বাছুর পূজার রোগ তাদের মধ্যে কেমন শিকড় গেড়ে বসেছিলো তা কুরআনের ভাষায়ই শুনুন :
b
وَإِذْ قَالَ مُوسى لِقَوْمِةِ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَذْبَحُوا بَقَرَةً ، قَالُوا أَتَتَّخِذْنَا هزُوًا ، قَالَ اَعُوذُ بِاللَّهِ اَنْ اَكُونَ مِنَ الْجهلِينَ ، قَالُو ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّنْ لَّنَا مَاهِيَ ، قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةً لأَفَارِضُ وَلَا بِكْرُ، عَوَانٌ بَيْنَ ذَلِكَ ، فَافْعَلُوا مَا تُؤْمَرُونَ ، قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّنْ لَّنَا مَا لَوْنُهَا ، قَالَ إِنَّهُ
يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ صَفْرَاءُ لا فَاقِعُ لَوْنُهَا تَسُرُّ النَّظَرِينَ قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّنْ لَّنَا مَا هِيَ لا إِنَّ الْبَقَرَ تَشْبَهَ عَلَيْنَا ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ لَمُهْتَدُونَ ، قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةُ لأَذَلُولُ تُثِيرُ الْأَرْضِ وَلَا تَسْقِي الْحَرْثَ : مُسَلَّمَةٌ لأَشيَةَ
D
فِيهَا ، قَالُوا النَ َجيْتَ بِالْحَقِّ ، فَذَبَحُوهَا وَمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ .
ط
“তারপর তোমরা ঐ ঘটনা স্মরণ করো যখন মূসা নিজ জাতিকে বলেছিলেন, আল্লাহ তোমাদেরকে গাভী যবেহ করার হুকুম দিয়েছেন । তারা উত্তরে বলতে লাগলো, তুমি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছো ? মূসা বললেন, আমি মূর্খদের মতো কথাবার্তা বলা হতে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। তারা বললো, আচ্ছা তাহলে তুমি তোমার রবের কছে দরখাস্ত করো, তিনি যেনো আমাদেরকে এ গাভীর কিছু বিশদ বর্ণনা দেন। মূসা বললেন, আল্লাহ ইরশাদ করছেন, সে গাভীটি এমন হওয়া উচিত যা বৃদ্ধ হবে না, না হবে বাচ্চা। বরং হবে মধ্যম বয়সের। অতএব যে হুকুম দেয়া


৩৯
হয়েছে তা পালন করো। আবার তারা বলতে লাগলো, আপনি আপনার রবের নিকট আরো একটি বিষয় জিজ্ঞেস করে নিন, এ গাভিটির রং কেমন হবে। মূসা বললেন, আল্লাহ বলেছেন গাভীটি হতে হবে পীত বর্ণের। যার রং এমন চিত্তাকর্ষক হবে যে, যারা দেখবে তারা খুশী হয়ে যাবে। আবার তারা বললো, তোমার রবের কাছে ভালোভাবে জিজ্ঞেস করে আমাদেরকে বলো কি ধরনের গাভী তিনি চান ? গাভী নির্বাচনে আমরা বড় সন্দেহে পড়ে গেছি। আল্লাহ চাইলে আমরা তা নির্ণয় করে নিতে পারবো । মূসা জবাব দিলো, আল্লাহ বলেছেন সেটা এমন গাভী যার থেকে কোনো খেদমত নেয়া হয় নাই । না জমি চাষাবাদে না পানি সেচের কাজে। অত্যন্ত সুস্থ-সবল-সুন্দর ও ত্রুটি মুক্ত। তারপর তারা বলে উঠলোঃ হ্যাঁ, এখন তুমি সঠিক বর্ণনা দিয়েছো। তারপর তারা সেটাকে যবাই করলো । অথচ তারা যবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না ।'
-সূরা আল বাকারা : ৬৭-৭১
এভাবে যেমন একটি স্বর্ণ কেশরী গাভীকে, যে ধরনের গাভীকে সেই সময় পূজা করার জন্য বেছে নেয়া হতো। আঙ্গুল নির্দেশ করে বলে দেয়া হচ্ছে, এ গাভীকে যবাই করে দাও। যাতে গাভী পূজার মন-মানসিকতা চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। এ ছোট্ট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেসব অবান্তর প্রশ্নের অবতারণা করা হয়েছে তা বনী ইসরাঈল জাতির সামগ্রিক মানসিকতার পরিচয় বহন করে। ঠিক এ ধরনের একটি ঘটনার প্রতি কুরআন মাজিদের এ আয়াতগুলোতে ইশারা করা হয়েছে :
وَإِذْ قُلْتُم يَمُوسى لَنْ نُّؤْمِنَ لَكَ حَتَّى نَرَى اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْكُمُ الصَّعِقَةُ
وَأَنتُم تَنْظُرُونَ . ثُمَّ بَعَثْنكُم مِّنْ بَعْدِ مَوْتِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَه
“স্মরণ করো তোমরা যখন মূসাকে বলেছিলে, আমরা তোমার কথার উপর কখনো বিশ্বাস করবো না যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আল্লাহকে তোমার সাথে প্রকাশ্যভাবে কথা বলতে না দেখবো। ঠিক এ সময়ে, কথা শেষ হতে না হতে একটি ভীষণ শব্দ হলো। যাতে তোমাদের জীবন হীন হয়ে পড়লো। কিন্তু এরপর আবার আমি তোমাদেরকে জীবন দান করলাম । যাতে তোমরা আমার এ ইহসানের প্রতি কৃতজ্ঞ হও।”
-সূরা আল বাকারা : ৫৫-৫৬

ইহুদী জাতির অপরাধের ইতিহাস
আল্লাহ যখনই বনী ইসরাঈল জাতির সংশোধন ও পরিমার্জনার জন্য কোনো নবী পাঠিয়েছেন, যালিম জাতি সেই নবীর কথা শুনেনি, তার নির্দেশ মেনে চলেনি, বরং উল্টো তাঁকে অমান্য করেছে। তার সাথে বিদ্রোহ করেছে। বিদ্রোহের নতুন নতুন রূপ আবিষ্কার করেছে। এদের কিছু ঘটনা উপরে বর্ণিত হয়েছে। এদের অপরাধের ধারাবাহিক একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিচে বর্ণিত হচ্ছে :
হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈল জাতিকে ফিরাউনের গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্ত করার জন্য আল্লাহর নির্দেশে মিসরে এসে পৌঁছলেন। বনী ইসরাঈলরা তার কাছে প্রথম অভিযোগ করলো, হে মূসা, আপনার আগমনের পূর্বেও আমাদেরকে উত্যক্ত ও কষ্ট দেয়া হয়েছে ৷ আর এখন আপনার আগমনের পরেও আমাদেরকে উত্যক্ত ও কষ্ট দেয়া হচ্ছে।
আল্লাহ এদেরকে ফিরাউনি অত্যাচার ও গোলামীর জিঞ্জির থেকে বাঁচালেন। তাদেরকে সাগর ফেড়ে রাস্তা বানিয়ে দিয়ে নিরাপদে সাগরের ঐ পাড়ে পৌঁছে দিলেন। ফিরাউন বাহিনীকে সাগরে ডুবিয়ে মারলেন। এসব কিছু তারা নিজ চোখের সামনে ঘটতে দেখেছে। এতসবের পরও এ জাতি হযরত মূসা আলাইহিস সালামের নিকট অন্যান্য মূর্তিপূজারী জাতির মতো তাদের জন্যও মূর্তি বানিয়ে দেবার দাবী করে বসলো ।
হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে তাঁর রব, শরীয়াত, কিতাব ও হিদায়াত দান করার জন্য তাঁর কাছে ডেকে নিলেন। এসব ছিলো বনী ইসরাঈলকে দান করা আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বড় নিয়ামাত। ঠিক এ সময়েই এ যালিম ও মূর্খ জাতি আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ করে গো-বাছুরকে পূজা করার কাজে লিপ্ত হয়ে গেলো ।
হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ফিরে আসার পর এ বনী ইসরাঈলরা মূর্তিপূজা হতে তো বিরত হলো। কিন্তু এরপরও তাদের হৃদয় হতে শিরকের প্রভাব দূর হয়নি। তাই তারা গাভী যবাইর হুকুম শুনার পর অনাবিল মনে তা মেনে নিতে পারেনি। বরং গাভীর ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের অবান্তর প্রশ্ন করে তারা মূর্তিপূজার প্রতি তাদের দুর্বলতার প্রমাণ দিলো ।
‘সায়না' উপদ্বীপে ইহুদী জাতি অসীম দুর্বলতা ও অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। সহায় সম্বলহীন অবস্থায় তাদেরকে 'মান্না ও সালওয়ার' মতো সুস্বাদু


৪১
খাদ্য দান করা হয়েছে। কিন্তু তারা এ নিয়ামাত প্রত্যাখ্যান করে পিঁয়াজ, রসূন, ডাল, আদার মতো তুচ্ছ জিনিস পাবার জন্য দাবী জানাতে লাগলো । এতসব ঘটনার পরও তাদেরকে ভৎর্সনা করা হয়নি। বরং দাবী অনুযায়ী সাথে সাথে তাদেরকে তা দেয়া হয়েছে। এরপর বনী ইসরাঈলের অতীত গৌরবের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে :
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ يَقَوْمِ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَعَلَ فِيكُمْ أَنْبِيَاء
وَجَعَلَكُمْ مُلُوكًا، وأتكُم مَّا لَمْ يُؤْتِ أَحَدًا مِّنَ الْعَلَمِينَ ٥ المائدة : ٢٠
ق
“স্মরণ করো! যখন মূসা তার জাতিকে বলেছিলো, হে আমার জাতি ! তোমরা আল্লাহর সেইসব নিয়ামাতের কথা মনে করো, যা তিনি তোমাদেরকে দান করেছিলেন। তিনি তোমাদের মধ্যে বহু নবী পাঠিয়েছেন । তোমাদেরকে শাসকে পরিণত করেছেন । তোমাদেরকে এমন সব জিনিস দিয়েছেন, দুনিয়ায় যা আর কাউকে দেয়া হয়নি।”
-সূরা আল মায়েদা : ২০
এখানে বনী ইসরাঈলের অতীত গৌরবের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের বহু আগে এক সময়ে তারা এ গৌরবের অধিকারী ছিলো। একদিকে তাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছিলেন হযরত ইবরাহীম, হযরত ইসহাক, হযরত ইয়াকুব ও হযরত ইউসুফের মতো মহাননবী ও রাসূলগণ। অন্যদিকে তারা হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের সময়ে ও তারপরে মিসরে দীর্ঘসময় শাসন ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। দীর্ঘকাল পর্যন্ত তারাই ছিলো সেই সময়ের সভ্য জগতের সবচেয়ে প্রতাপশালী শাসক । মিসর ও তার চারিদিকের দেশে তাদেরই প্রতাপ ছিলো বিপুলভাবে। মুদ্রাও চালু ছিলো সর্বত্র তাদেরই ।
ঐতিহাসিকগণ বনী ইসরাঈলের উত্থান ইতিহাসের সূচনা করেন হযরত মূসার কাল থেকে। কিন্তু কুরআন এখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করছে যে, বনী ইসরাঈলের উত্থানের আসল সময় ছিলো হযরত মূসার পূর্বেও। হযরত মূসা নিজেই তার জাতির সামনে তাদের এ গৌরবোজ্জল ইতিহাস তুলে ধরেছিলেন।
তারপর আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাঈল জাতিকে একটি দেশ দান করতে চাইলেন । হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে নির্দেশ দিলেন তাদেরকে নিয়ে ঐ ভূখণ্ড আক্রমণ করার জন্য । আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন। ঘটনাটি কুরআনের ভাষায় শুনুন :

82

يُقَوْم ادْخُلُوا الْأَرْضِ الْمُقَدَّسَةَ الَّتِي كَتَبَ اللهُ لَكُمْ وَلَا تَرْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِكُمْ
فَتَنْقَلِبُوا خَسِرِينَ ٥ - المائدة : ۲۱
“হে আমার জাতির লোকেরা! সেই পবিত্র ভূখণ্ডে প্রবেশ করো, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন । তোমরা পেছনে হটো না । পিছনে হটলে তোমরা বিফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”-সূরা আল মায়েদা : ২১
এখানে ফিলিস্তিনের কথা বলা হয়েছে। এ দেশটি ছিলো হযরত ইবরাহীম, হযরত ইসহাক ও হযরত ইয়াকুবের আবাস ভূমি। বনী ইসরাঈলরা মিসর থেকে বের হয়ে এলে আল্লাহ তাদের জন্য এদেশটি নির্দিষ্ট করে দেন। সামনে অগ্রসর হয়ে এ দেশটি জয় করার নির্দেশ দান করেন। হযরত মূসা তাঁর জাতিকে নিয়ে মিসর থেকে বের হয়ে আসার প্রায় দু'বছর পর যখন তাদের সাথে ‘ফারানে’‘মরু অঞ্চলে’ তাবু খাটিয়ে অবস্থান করছিলেন তখনই এ ভাষণটি দেন। এ মরু অঞ্চলটি আরবের উত্তরে ও ফিলিস্তিনের দক্ষিণ সীমান্তে ‘সায়না’ উপদ্বীপে অবস্থিত ।
এরপর এ ক্ষেত্রে বনী ইসরাঈলের দুর্বলতা, কাপুরুষতা ও বেঈমানী তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ালো। শুধু কাপুরুষতাই নয় বরং তাদের নবীর কথা মানতেও তারা অস্বীকৃতি জানালো । এ ঘটনাটি কুরআনের ভাষায় ঃ
قَالُوا يَمُوسى إِنَّ فِيهَا قَوْمًا جَبَّارِينَ ، وَإِنَّا لَنْ نَّدْخُلَهَا حَتَّى يَخْرُجُوا مِنْهَا
ق
فَإِنْ يُخْرُجُوا مِنْهَا فَانَّا دُخلُونَ ٥ - المائدة : ۲۲
“তারা বললো, হে মূসা ! ওখানে তো একটা খুব শক্তিশালী দুর্ধর্ষ জাতি বাস করে । তারা সেখান থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত বেরিয়ে না আসবে, আমরা কখনো ওখানে প্রবেশ করবো না। হ্যাঁ! তারা বের হয়ে যাবার পর আমরা ওখানে প্রবেশ করতে রাজী ।”-সূরা আল মায়েদা : ২২
قَالَ رَجُلْنِ مِنَ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمَا ادْخُلُوا عَلَيْهِمُ الْبَابَ : فَاذَا
دَخَلْتُمُوهُ فَإِنَّكُمْ غَلِبُونَ : وَعَلَى اللهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنتُمْ مُؤْمِنِينَ ٥
“ঐ ভীরু বেঈমান লোকদের মধ্যে দু'জন এমন লোকও ছিলেন, যাদের প্রতি আল্লাহ তাঁর নিয়ামাত বর্ষণ করেছিলেন । তারা বললেন, এ শক্তিশালী লোকদের মোকাবিলা করে ঐ শহরের দরজার মধ্যে ঢুকে পড়ো । ভেতরে


৪৩
প্রবেশ করলে তোমরাই জয়ী হবে। তোমরা যদি মু'মিন হয়ে থাকো তাহলে আল্লাহর উপর নির্ভর করো।”-সূরা আল মায়েদা : ২৩
একথা শুনার পর ভীরু কাপুরুষ বেঈমান বনী ইসরাঈলের মনের সব গোপন কালিমা জেগে উঠলো। তারা আবার সেই একই কথা বলতে লাগলো । তারা বললো কুরআনের ভাষায় :
قَالُوا يَمُوسَى إِنَّا لَنْ نَّدْخُلَهَا أَبَدًا مَّا دَامُوا فِيهَا فَاذْهَبْ أَنْتَ وَرَبُّكَ فَقَاتِلاً إِنَّا
هُهُنَّا قَاعِدُونَ ٥ - المائدة : ٢٤
“তরা বললো, হে মূসা ! যতক্ষণ তারা সেই জায়গায় অবস্থান করবে ততক্ষণ কোনো অবস্থাতেই আমরা সেখানে প্রবেশ করবো না । কাজেই তুমি ও তোমার রব, তোমরা দু'জনই সেখানে যাও এবং লড়াই করো আমরা বসে রইলাম এখানেই।”-সূরা আল মায়েদা : ২৪
বনী ইসরাঈলদের এ অবাক কাণ্ড দেখে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মতো তেজস্বী দৃঢ়চেতা নবীও চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন :
قَالَ رَبِّ إِنِّي لَا أَمْلِكُ إِلا نَفْسِي وَأَخِي فَافْرُقْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ الْقَوْمِ الْفَسِقِينَ .
“মূসা বললো, হে আমার রব! আমি ও আমার ভাই (হারুন) ছাড়া আর কারো উপর আমার কোনো ইখতিয়ার নেই । তাই এ নাফরমান লোকদের থেকে আমাদেরকে পৃথক করে দাও।”-সূরা আল মায়েদা : ২৫
হযরত মূসা আলাইহিস সালামের এ ডাকে সাড়া দিয়ে আল্লাহ তাআলা চল্লিশ বছর পর্যন্ত দেশটিকে বনী ইসরাঈলের জন্য হারাম করে দিলেন। এ গোটা সময় তারা জঙ্গলে জঙ্গলে পথহারা উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরতে লাগলো । একথার প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলছেন :
قَالَ فَإِنَّهَا مُحَرَّمَةٌ عَلَيْهِم أربعينَ سَنَةً ، يَتِيهُونَ فِي الْأَرْضِ ، فَلَا تَأْسَ عَلَى
all pail
“আল্লাহ বললেন, ঠিক আছে। তাহলে এ দেশটি চল্লিশ বছর পর্যন্ত তাদের জন্য হারাম করে দেয়া হলো। এরা পৃথিবীতে নিরুদ্দেশ ঘুরে ফিরে হাড়িয়ে মরবে। অতএব এ নাফরমানদের প্রতি কখনো সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ করো না।”-সূরা আল মায়েদা : ২৬

88

হযরত মূসা ও নাফরমান ইয়াহুদীদের এ দীর্ঘ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ বাইবেলের ‘গণনাপুস্তকে পাওয়া যাবে। এ ঘটনার সার সংক্ষেপ হলো :
"হযরত মূসা ফিলিস্তিনের অবস্থা জানার জন্য 'ফারান' থেকে বনী ইসরাঈলের ১২জন সরদারকে ফিলিস্তিন সফরে পাঠান। তারা ৪০ দিন সফর করার পর সেখান থেকে ফিরে আসেন। জাতির এক সাধারণ সমাবেশে তারা জানান। ফিলিস্তিন তো খাদ্য সম্ভার ও অন্যান্য ভোগ্য সামগ্রীর প্রাচুর্যে ভরা এক সুখী, সমৃদ্ধশালী দেশ। এতে কোনো সন্দেহ নেই । কিন্তু সেখানকার অধিবাসীরা অত্যন্ত শক্তিশালী ।...তাদের উপর আক্রমণ করার ক্ষমতা নেই আমাদের ।.............সেখানে আমরা যতো লোক দেখেছি তারা সবাই বেশ দীর্ঘ দেহী। সেখানে আমরা ‘বনী ইনাফকেও' দেখেছি। তারা মহা পরাক্রমশালী ও দুর্ধর্ষ জাতি। বংশানুক্রমেই তারা পরাক্রমশালী। আর আমরা তো নিজেদের দৃষ্টিতে ফড়িংয়ের মতো। তাদের দৃষ্টিতেও তাই।
এ বর্ণনা শুনে সকলেই এক সাথে বলে উঠলো ।
হায়! আমরা যদি মিসরেই মরে যেতাম, হায়! যদি এ মরুর বুকেই আমাদের মৃত্যু হতো। আল্লাহ আমাদেরকে কেনো ঐ দেশে নিয়ে তরবারির আঘাতে হত্যা করাতে চান। এরপর আমাদের পরিবার পরিজন তো লুটের মালে পরিণত হবে। মিসরে ফিরে যাওয়াই কি আমাদের জন্য কল্যাণজনক হবে না ?............... তারপর তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলো । এসো আমরা আমাদের কাউকে নিজেদের নেতা বানিয়ে নেই ও তার নেতৃত্বে মিসরে ফিরে যাই। তাদের একথা শুনে ফিলিস্তিনে পাঠানো বারো জন সরদারের দু'জন ইউশা ও কালেব উঠে দাঁড়ালেন। এ দুর্বলতা ও কাপুরুষতা প্রকাশের জন্য তাদের ভর্ৎসনা করলেন । কালেব বললেন, “চলো আমরা হঠাৎ আক্রমণ করে সে দেশটি দখল করে নিই। সে দেশটি চালাবার যোগ্যতা আমাদের আছে।”
.........এরপর তারা দু'জন এক স্বরে বলে উঠলেন, “যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি রাজি থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই তিনি আমাদেরকে সে দেশে পাঠাবেন।...... তবে তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো না। সে দেশের লোকদের ভয়ে ভীত হয়ো না । আমাদের সাথে আল্লাহ আছেন । কাজেই ওদেরকে ভয় পেয়ো না । কিন্তু এ বেঈমান জাতি এর জবাবে বললো—ওদেরকে পাথর মেরে হত্যা করো। অবশেষে আল্লাহর ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠলো। তিনি ফায়সালা করলেন, তখন ইউশা ও কালেব ছাড়া বনী ইসরাঈলের বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে আর কেউ সে ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারবে না । অতপর বনী ইসরাঈলরা চল্লিশ বছর পর্যন্ত গৃহহীন অবস্থায় উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে বেড়াতে থাকবে। এরপর এদের


80
বিশ বছরের বেশী বয়সের সব লোক মরে যাবে এবং নবীন বংশধরেরা যৌবনে প্রবেশ করবে তখনই এদেরকে ফিলিস্তিন জয় করার সুযোগ দেয়া হবে। আল্লাহর এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বনী ইসরাঈলের ফারান মরুভূমি থেকে পূর্ব জর্দানে পৌছতে ৩৮ বছর লেগে যায়। যেসব লোক যুবক বয়সে মিসর থেকে বের হয়েছিলো তারা সকলেই এ সময়ে মারা যায়। পূর্ব জর্দান জয় করার পর হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ইনতেকাল হয় । এরপর হযরত ইউশা ইবনে নূনের খিলাফাত কালে বনী ইসরাঈলরা ফিলিস্তিন জয় করতে সমর্থ হয়।
এখানে বর্ণনার ধারার প্রতি দৃষ্টি দিলে বুঝা যায়, কথাচ্ছলে একথা বর্ণনা করে বনী ইসরাঈলকে আসলে একথা বুঝানো হচ্ছে, মূসার সময় অবাধ্যতা, বিদ্রোহ, সত্য থেকে দূরে থাকা কাপুরুষতার কাজ করে তোমরা যে শাস্তি পেয়েছিলে এখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক নীতি অবলম্বন করলে তার চেয়ে অনেক বেশী শাস্তি ভোগ করতে হবে।”
বনী ইসরাঈলের ব্যাপারে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের যে তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে তার অভিব্যক্তি কুরআন মজিদে হযরত মূসার ভাষায় এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে :
وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ يُقَوْمٍ لِمَ تُؤْتُونَنِي وَقَدْ تَعْلَمُونَ أَنَّى رَسُولُ اللهِ
إِلَيْكُمْ
0 : all b
-
“এবং সেই সময়ের কথা স্মরণ করো। যখন মূসা তার নিজের জাতিকে বলেছিলেন। হে আমার জাতির লোকজন ! তোমরা কেনো আমাকে দুঃখ কষ্ট দিচ্ছো। অথচ তোমরা ভালো করেই জানো, আমি আল্লাহর তরফ থেকে তোমাদের নিকট রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি।”-সূরা সফ : ৫
অভিশপ্ত জাতি বনী ইসরাঈলের এ ঘৃণ্য আচরণ শুধু হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সাথে সীমাবদ্ধ ছিলো না বরং সকল নবী রাসূলের সাথেই তারা এ আচরণ করেছে। তাদের অতীত ইতিহাস স্মরণ করিয়ে কুরআন বলছে :
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مريمَ يُبَنِي إِسْرَاء يُلَ إِنِّي رَسُولُ اللهِ إِلَيْكُمْ مُصَدِّقًا لِمَا بَينَ يَدَيَّ مِنَ التَّورةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولِ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ ، فَلَمَّا
جَاءَهُمْ بِالْبَيِّنت قَالُوا هذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ ٥ - الصف : ٦

৪৬

“আর স্মরণ করো ঈসা ইবনে মারইয়ামের কথা যা তিনি বলেছিলেন : হে বনী ইসরাঈল ! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর পাঠানো রাসূল। আমি সেই তাওরাতের সত্যতা প্রমাণকারী যা আমার পূর্বে নাযিল হয়েছে এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন। যার নাম আহমাদ। কিন্তু যখন তিনি তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসলেন । তখন তারা বললো এটাতো স্পষ্ট প্রতারণা।”-সূরা আস সফ : ৬
এটা বনী ইসরাঈল জাতির দ্বিতীয়বারের নাফরমানীর কথা। তারা একটি নাফরমানী করেছিলো তাদের উন্নতি ও উত্থান যুগের শুরুতে। আর এটি হলো তাদের দ্বিতীয় নাফরমানী ও বেঈমানী যা তারা এ যুগেরই শেষ দিকে সর্বশেষ করেছিলো। এরপর চিরদিনের জন্য তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হলো । মুসলমানদেরকে আল্লাহর রাসূলের সাথে বনী ইসরাঈলের মতো আচরণ করার পরিণাম পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়াই হলো এ দু'টি ঘটনা বর্ণনা করার উদ্দেশ্য ।
به
كُلَّمَا جَاءَ هُمْ رَسُولُ بِمَا لاَتَهْوَى أَنْفُسُهُمْ * فَرِيقًا كَذَّبُوا وَفَرِيقًا يَقْتُلُونَ ٥
“যখনই কোনো নবী তাদের কাছে এসেছে তাদের ইচ্ছার বিরূদ্ধে কোনো কিছু নিয়ে। তখন তারা কাউকে মিথ্যাবাদী বলে প্রত্যাখ্যান করেছে । আর কাউকে হত্যা করে দিয়েছে।”-সূরা আল মায়েদা : ৭০
বনী ইসরাঈলরা তাদের এ অপরাধের ইতিহাস নিজেদের ইতিহাসে নিজেরাই বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছে। নমুনা হিসাবে বাইবেলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ মাওলানা মওদূদী মরহুমের ভাষায় শুনুন ঃ
এক : হযরত সুলাইমানের পর ইসরাঈলী সাম্রাজ্য দু'টি রাষ্ট্রে (জেরুযালেমের ইহুদিয়া রাষ্ট্র এবং সামারিয়ার ইসরাঈল রাষ্ট্র) বিভক্ত হয়ে যায়। তাদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ চলতে থাকে। অবশেষে ইহুদিয়া রাষ্ট্র নিজের ভাইদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দামেস্কের আরামী রাষ্ট্রের সাহায্য প্রার্থনা করে। এতে আল্লাহর হুকুমে হানানী নবী ইহুদিয়া রাষ্ট্রের শাসক ‘আস’-কে কঠোরভাবে সতর্ক করে দেন। কিন্তু ‘আসা' এ সতর্কবাণী গ্রহণ করার পরিবর্তে আল্লাহর নবীকে কারারুদ্ধ করে।-২ বংশাবলী, ১৭ অধ্যায়, ৭-১০ শ্লোক ৷
দুই : হযরত ইলিয়াস (ইলিয়াহ - ELLIAH) আলাইহিস সালাম যখন বা'ল দেবতার পূজার জন্য ইহুদিদের তিরস্কার করেন এবং নতুন করে আবার তাওহীদের দাওয়াত দিতে থাকেন তখন সামারিয়ার ইসরাঈলী রাজা


89
‘আকিআব’ নিজের মুশরিক স্ত্রীর প্ররোচনায় তাঁর প্রাণনাশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় মেতে ওঠেন। ফলে তাঁকে সিনাই উপদ্বীপের পর্বতাঞ্চলে আশ্রয় নিতে হয়। এ সময় হযরত ইলিয়াস যে দোয়া করেন তার শব্দাবলী ছিল নিম্নরূপ :
“বনী ইসরাঈল তোমার সাথে কৃত অংগীকার ভংগ করেছে
তোমার নবীদের হত্যা করেছে তলোয়ারের সাহায্যে এবং একমাত্র আমিই বেঁচে আছি। তাই তারা আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করছে।-১ রাজাবলী, ১৭ অধ্যায়, ১-১০ শ্লোক ।
তিন : সত্য ভাষণের অপরাধে হযরত ‘মিকাইয়াহ' নামে আর একজন নবীকেও এই ইসরাঈলী শাসক আখিআব কারারুদ্ধ করে। সে হুকুম দেয়, এই ব্যক্তিকে বিপদের খাদ্য খাওয়াও এবং বিপদের পানি পান করাও।-১ রাজাবলী, ২২ অধ্যায়, ২৬-২৭ শ্লোক ।
চার : আবার যখন ইহুদিয়া রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে মূর্তিপূজা ও ব্যভিচার চলতে থাকে এবং হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন তখন ইহুদি রাজা ইউআস-এর নির্দেশে তাকে মূল হাইকেলে সুলাইমানীতে 'মাকদিস' (পবিত্র স্থান) ও 'যবেহ ক্ষেত্র'-এর মাঝখানে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা হয়।-২ বংশাবলী, ২৪ অধ্যায়, ২১ শ্লোক ।
পাঁচ ঃ অতপর আশুরিয়াদের হাতে যখন সামারিয়াদের ইসরাঈলী রাষ্ট্রের পতন হয় এবং জেরুসালেমের ইহুদি রাষ্ট্র মহাধ্বংসের সম্মুখীন হয় তখন ‘ইয়ারমিয়াহ’ নবী নিজের জাতির পতনে আর্তনাদ করে ওঠেন। তিনি পথে- ঘাটে, অলিতে-গলিতে নিজের জাতিকে সম্বোধন করে বলতে থাকেন, “সতর্ক হও, নিজেদেরকে সংশোধন করো, অন্যথায় তোমাদের পরিণাম সামারিয়া জাতির চেয়েও ভয়াবহ হবে।” কিন্তু জাতির পক্ষ থেকে এ সাবধান বাণীর বিরূপ জবাব আসে। চারদিক থেকে তাঁর ওপর প্রবল বৃষ্টিধারার মতো অভিশাপ ও গালি-গালাজ বর্ষিত হতে থাকে। তাঁকে মারধর করা হয়। কারারুদ্ধ করা হয। ক্ষুধা ও পিপাসায় শুকিয়ে মেরে ফেলার জন্য রশি দিয়ে বেঁধে তাকে কর্দমাক্ত কূয়ার মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার এবং বিদেশী শত্রুর সাথে আতাত করার অভিযোগ আনা হয়।—যিরমিয়, ১৫ অধ্যায়, ১০ শ্লোক ; ১৮ অধ্যায়, ২০-২৩ শ্লোক ; ২০ অধ্যায়, ১-১৮ শ্লোক ; ৩৬-৪০ অধ্যায় ৷
ছয় : ‘আমুস' নামক আর একজন নবী সম্পর্কে বলা হয়েছে : যখন তিনি সামারিয়ার ইসরাঈলী রাষ্ট্রের ভ্রষ্টতা ও ব্যভিচারের সমালোচনা করেন এবং এ

৪৮

অসৎকাজের পরিণাম সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে দেন তখন তাঁকে চরমপত্র দিয়ে বলে দেয়া হয়, এদেশ থেকে বের হয়ে যাও এবং বাইরে গিয়ে নিজের নবুওয়াত প্রচার করো। আমুস, ৭ অধ্যায়, ১০-১৩ শ্লোক ।
সাত ঃ হযরত ইয়াহইয়া (John the Baptist) আলাইহিস সালাম যখন ইহুদি শাসক হিরোডিয়াসের দরবারে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত ব্যভিচার ও নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান তখন প্রথমে তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। তারপর বাদশাহ নিজের প্রেমিকার নির্দেশানুসারে জাতির এই সবচেয়ে সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিটির শিরচ্ছেদ করে । কর্তিত মস্তক একটি থালায় করে নিয়ে বাদশাহ তার প্রেমিকাকে উপহার দেয়। মার্ক, ৬ অধ্যায়, ১৭-২৯ শ্লোক ।
আট : সবশেষে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের বিরুদ্ধে বনী ইসরাঈলের আলেম সমাজ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের ক্রোধ উদ্দীপিত হয়। কারণ তিনি তাদের পাপ কাজ ও লোক দেখানো সৎকাজের সমালোচনা করতেন। তাদেরকে ঈমান ও সৎকাজের দিকে আহ্বান জানাতেন। এসব অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তৈরি করা হয় । রোমান আদালত তাঁকে প্রাণদণ্ড দানের সিদ্ধান্ত করে। রোমান শাসক পীলাতীস যখন ইহুদিদের বললো, আজ ঈদের দিন, আমি তোমাদের স্বার্থে ঈসা ও বারাব্বা (Barabbas) ডাকাতের মধ্য থেকে একজনকে মুক্তি দিতে চাই। আমি কাকে মুক্তি দেবো ? ইহুদিরা সমস্বরে বললো, আপনি বারাব্বাকে মুক্তি দিন এবং ঈসাকে ফাঁসি দিন। মথি,
২৭ অধ্যায়, ২০-২৬ শ্লোক ।
এই হচ্ছে ইহুদি জাতির অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের একটি কলংকজনক অধ্যায়। কুরআনের উল্লেখিত আয়াতগুলোতে সংক্ষেপে এদিকেই ইংগিত করা হয়েছে। বলা বাহুল্য যে জাতি নিজের ফাসেক ও দুশ্চরিত্র সম্পন্ন লোকদেরকে নেতৃত্বের আসনে বসাতে এবং সৎ ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী লোকদেরকে কারাগারে স্থান দিতে চায় আল্লাহ তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ না করলে আর কাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করবেন ?
-তাফহীমুল কুরআন ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৮৪-৮৬।
ফিলিস্তিনে বনী ইসরাঈল
হযরত মূসা আলাইহিস সালামের পর বনী ইসরাঈলরা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করলো। তারা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ওখানকার মূর্তিপূজারী ও মুশরিকদের হত্যা করে ঐ দেশ দখল করার পরিবর্তে ওখানকার আন্তকোন্দলও অনৈক্য


৪৯
গোত্রীয় জাতীয়তার শিকারে পরিণত হয়ে গেলো। তারা না যুক্তভাবে কোনো রাষ্ট্র কায়েম করতে পেরেছে। আর না তাদের কোনো গোত্র নিজস্বভাবে এমন শক্তিশালী ছিলো, যারা আশেপাশের এলাকাকে শিরক হতে মুক্ত করে পূত- পবিত্র করতে পারে। ফলে তারা নিজেরাও শিরকে লিপ্ত হয়ে গেলো ।
বাইবেলের বিচারকর্তৃগণের বিবরণে আছে ঃ
“ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিতে লাগিল ; এবং বাল দেবগণের সেবা করিতে লাগিল। আর যিনি তাহাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, যিনি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছিলেন, সেই সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়া অন্য দেবগণের, অর্থাৎ আপনাদের চতুদিকস্থিত লোকদের দেবগণের অনুগামী হইয়া তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিতে লাগিল, এইরূপে সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করিল তাহারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়া বাল দেবের ও অষ্টারোৎ দেবীদের সেবা করিত।”-বিচারকর্তৃকগণের বিবরণ ২ ঃ ১১-১৩
I
অপরদিকে তাদের শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত জোট কায়েম করে তাদেরকে দেশের অনেক অঞ্চল থেকে এমন কি সর্বশেষ খোদাওয়ান্দের কালের সিন্ধুকেও (তাবুকে সাকিনা) ছিনিয়ে নিয়ে গেলো ।
এ সময় ধনী ইসরাঈলদের মাথায় সম্মিলিতভাবে একটি সালতানাত কায়েম করার খেয়াল হলো । তাদের আবেদনের ভিত্তিতে হযরত সামুয়েল নবী আলাইহিস সালাম খৃস্টপূর্ব ১০২০ সনে 'তালুত'কে তাদের বাদশাহ নিয়োগ করলো। তালুত খৃস্টপূর্ব ১০২০ সন থেকে ১০০৪ সন পর্যন্ত, হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম খৃস্টপূর্ব ১০০৪ সন থেকে ৯৬৫ সন পর্যন্ত এবং হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম খৃস্টপূর্ব ৯৬৫ সন থেকে ৯২৬ সন পর্যন্ত। এসব শাসকগণ হযরত মূসা আলাইহিস সালামের অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করেন। দুনিয়া ইসলামী শাসনের অধীনে আসে।
হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের পর বনী ইসরাঈলরা আবার দুনিয়া পূজারী হয়ে গেলো। এ সময় তারা দু'ভাগে ভাগ হয়ে যায়। দক্ষিণ ফিলিস্তিনে কিছু অংশ ও পূর্ব উর্দুর্ন নিয়ে একটি ইসরাঈলী রাষ্ট্র কায়েম হলো । যার রাজধানী ছিলো সামেরিয়া। আর 'দক্ষিণ ফিলিস্তিনের' অপর অংশ এবং ‘উদ্দুম' এলাকা নিয়ে গঠিত হলো সালতানাতে ইহুদীয়া । যার রাজধানী ছিলো 'ইয়ারদশালম' এ দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম দিন থেকেই পরস্পর পরম শত্রুতা ও দ্বন্দ্ব কলহ শুরু হয়ে গেলো।
8-

to

ইসরাঈল রাষ্ট্রের পতন
ইসরাঈলী সালতানাতের শাসক ও এর অধিবাসীরা প্রতিবেশী জাতিগুলোর দেখাদেখি শিরক ও চারিত্রিক অধঃপতনের দিকে ধাবিত হলো। তাদেরকে এ অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য হযরত ‘ইলিয়াস', হযরত 'আল- ইউসা’ ‘আমুস’ আলাইহিস সালাম যথেষ্ট চেষ্টা চালালেন। কিন্তু এ জাতি এসব গর্হিত কাজ থেকে ফিরে এলো না। তাই এদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হলো। খৃস্টপূর্ব ৭২১ সালে আশওয়ারের কঠোর শাসক ‘সরগুন’ তাদের রাজধানী সামেরিয়াকে জয় করে ইসরাঈলী রাষ্ট্রের অবসান ঘটায়। হাজার হাজার ইসরাঈলী ইহুদী তরবারীর আঘাতে মারা গেলো। সাতাইশ হাজারেরও বেশী প্রভাবশালী ইসরাঈলী ইহুদীকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে 'আশুরী রাষ্ট্রের পূর্ব জেলাগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দিলো ।
ইহুদীয়া রাষ্ট্রের পতন
দ্বিতীয় রাষ্ট্র ইহুদীয়াও হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের পর শিক সহ নৈতিক অধঃপতনের শিকার হলো । এখানেও হযরত ইয়াসইয়াহ ও হযরত ইয়ারমিয়াহ, তাদের বুঝালেন, তাদের খারাপ খারাপ কাজ হতে বিরত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা-সাধনা চালালেন। কিন্তু তাদের হীন কার্যক্রমের ধারা শেষ হলো না । অবশেষে খৃস্টপূর্ব ৫৯৮ সালে বাবুলের বাদশাহ বুখতে নসর খোদার গজব হিসাবে আবির্ভূত হলো। ইয়ারদেশালম সহ গোটা সালতানাতে ইহুদীয়াকে জয় করে নিলো । তাদের শাসকও এ সময় গ্রেফতার হলো। এ অবস্থায় ইহুদীয়ারা বিদ্রোহ করে উঠলে খৃস্টপূর্ব ৫৮০ সালে বুখতে নসর আরো কঠিন আক্রমণ চালিয়ে ইহুদীয়াদের সকল ছোট বড় শহর ধ্বংস করে দিলো। ইয়ারদেশালম ও হায়কেলে সুলাইমানীকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করলো। ইহুদীয়াদের বহুসংখ্যক লোককে তাদের এ এলাকা থেকে বের করে নিয়ে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলো। যাতে তারা আর শক্তি সঞ্চয় করতে না পারে। একথারই সমর্থনে কুরআন বলছে :
وَقَطَّعْنَهُمْ فِي الْأَرْضِ أُمَما ج - الاعراف : ١٦٨
“আমি তাদেরকে পৃথিবীতে খণ্ড বিখণ্ড করে বহু সংখ্যক জাতিতে বিভক্ত করে দিয়েছি।”-সূরা আল আরাফ : ১৬৮
ইহুদীয়াদের আবার ফিলিস্তিনে আগমন
ইসরাঈলী সালতানাত আর কোনো দিনই এ নৈতিক ও আকীদাগত বিশ্বাসের অধঃপতন পদস্খলন থেকে উঠে আসতে পারেনি। কিন্তু ইয়াহুদীয়া


৫১
সালতানাতের অধিবাসিগণের মধ্যে একটা দল সত্যের উপর প্রতিষ্ঠত ছিলো। আর অন্যদেরও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার দাওয়াত দিতো। এসব লোকেরা নিজেরা সংশোধিত জীবন যাপনের চেষ্টা চালানো জারি রেখেছে। মানুষদেরকেও তারা তাওবা করার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
অবশেষে বাবুল সালতানাতের পতন ঘটলো । খৃস্টপূর্বে ৫৩৯ সালে ইরানের সেনাপতি 'সাইরাস' বাবুল জয় করে নিলো। এর পরের বছরই ইহুদীদেরকে আবার ফিলিস্তিনে ফিরে যেতে ও সেখানে দ্বিতীয়বারের মতো বসবাস করার আম নির্দেশ দিয়ে দিলো ।........
সাইরাস ইহুদীয়াদেরকে আবার হায়কেলে সুলাইমানী তৈরী করার নির্দেশও দিয়ে দিলো । সাইরাসের পরে 'দারাইউস প্রথম' খৃস্টপূর্ব ৪২২ সালে ইহুদীয়ার শেষ বাদশাহ পুতিকে ইহুদীরা গভর্ণর বানালেন । খৃস্টপূর্ব ৪৫৮ সালে হযরত ওযায়ের (আযরা) ইহুদীয়ায় পৌছলেন। শাহে ইরান তাকে এক শাহী ফরমানের মাধ্যমে দীনের দাওয়াতের পুনর্গঠনের কাজ ও প্রচারের ব্যাপারে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়ে দিলেন। এ ফরমান থেকে সুযোগ গ্রহণ করে হযরত ওযায়ের সব ভালো ভালো লোকদেরকে সমবেত করলেন। তাওরাতকে বিভিন্ন জায়গা হতে একত্রিত করলেন আবার নতুন করে। ইহুদীদেরকে দ্বীনি শিক্ষা দেবার ব্যবস্থা করলেন। তাদের নৈতিক ও আকীদাগত খারাপ দিকগুলো সংসধোন করে নিলেন ।
ইউনানের উত্থান
ইসকান্দার আযমের বিজয়াভিযান এবং আবার ইউনানী শাসনের উত্থানের দ্বারা ইহুদী সালতানাতের গায়ে বিরাট ধাক্কা লাগলো। এমনকি খৃস্টপূর্ব ১৯৮ সনে শামের ইউনানী সালুকী হুকুমাত ফিলিস্তিনকে দখল করে ফেললো । ধর্মীয়ভাবে এ ইউনান বিজয়ীরা মুশরিক এবং সকল প্রকার নৈতিক অধঃপতনের পতাকাবাহী ছিলো। তারা ইহুদী ধর্ম শিক্ষা ও ইহুদী সাংস্কৃতিকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করতো । ইহুদীদের একটি অংশ স্বয়ং তাদের নীতিতে বিলীন হয়ে গিয়ে তাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে লাগলো। খৃস্টপূর্বে ১৭৫ সালে ৪র্থ 'ইটোকাস' ক্ষমতায় আরোহণ করে শক্তি খাটিয়ে ইহুদী ধর্মকে নিঃশেষ করে দেবার চেষ্টা করলো। তিনি হায়কেলে সুলায়মানীতে মূর্তি রেখে দিয়ে ইহুদীদেরকে তার সামনে সাজ্দা করার জন্য বাধ্য করলো। ইটোকাস তাদের কুরবানীর গাহতে কুরবানী দেয়া বন্ধ করে দিয়ে মূর্তিদের জন্য কুরবানী দিতে ইহুদীদেরকে হুকুম দিলো। যাদের ঘরে তাওরাতের কোনো সংস্করণ পাওয়া যাবে অথবা যারা 'সাবতের' দিনের উপর আমল করবে অথবা বাচ্চাদের খাতনা করাবে তাদের

৫২

জন্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি বিধান করলো। কিন্তু এ কড়াকড়ি ও বাড়াবাড়ী মূল বনী ইসরাঈলীদের মন-মানসিকতাকে পরিবর্তন করতে পারেনি। বরং তাদের মধ্যে হযরত ওযায়ের আলাইহিস সালামের সৃষ্টি দীনি রূহের প্রভাবে একটি বিরাট দ্বীনি আন্দোলন গড়ে উঠে। এ আন্দোলনই ইতিহাসের পাতায় “মাক্কাবী বিদ্রোহ” নামে খ্যাত আছে।
মাক্কাবী আন্দোলন
হযরত ওযায়ের আলাইহিস সালামের প্রচারিত দ্বীনদারীর স্ত্রীটের বিরাট ফলাফলের কারণে ইহুদীদের অধিকাংশ লোকই এ মাক্কাবী আন্দোলনে যোগ দিলো। অল্প দিনের মধ্যেই তারা ইউনানীদেরকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ কায়েম করলো। এ স্বাধীন দেশটি খৃস্টপূর্ব ৬৭ সাল পর্যন্ত অবশিষ্ট ছিলো। ধীরে ধীরে এ রাষ্ট্রটি ইহুদী ও ইসরাঈলী রিয়াসাতের অন্তর্গত এ ধরনের অঞ্চলগুলোও তাদের অধীনে নিয়ে নিলো। বরং তারা এমন কিছু কিছু এলাকাও জয় করে নিলো যা হযরত দাউদ ও হযরত সুলাইমান আলাই- হিস সালামের কালেও জয় করা হয়নি ।

রোমীয়দের গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ
মাক্কাবী আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে উঠা নৈতিক ও দ্বীনি স্প্রীটও আস্তে আস্তে নিঃশেষ হয়ে যেতে থাকে। আবার বনী ইসরাঈলীদের ঘাড়ে দুনিয়ার পূজা ও প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতা সওয়ার হতে থাকে। এর ফলে ইহুদীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হলো। তারা নিজেরাই অগ্রগামী হয়ে রোমক বিজয়ী পোম্পিকে ফিলিস্তিনে আসার আহবান জানালো। তাদের আহবানে পোম্পি খৃষ্টপূর্ব ৬৩ সালে এ দেশের দিকে মনোযোগ দিলো। বায়তুল মোকাদ্দাস দখল করে ইহুদী বসতি ধ্বংস করে দিলো।
রোমীয় শাসকরা এ দেশকে সরাসরি শাসন না করে কারো দ্বারা পরোক্ষভাবে শাসন করার নীতি অবলম্বন করলো। আর এ নীতি অনুযায়ী তারা ফিলিস্তিনকে একটি করদ রাজ্যে পরিণত করে তা হিরোদ আযম নামে একজন বিচক্ষণ ইহুদী এজেন্টকে শাসক নিয়োগ করলো। তার শাসন কালে এ ইহুদী রিয়াসাত গোটা ফিলিস্তিন ও পূর্ব উর্দুন পর্যন্ত কায়েম ছিলো। তার সময় ইহুদী জাতির চরিত্র অবনতির শেষ সীমায় পৌছে যায় ৷
'হিরোদের' পরে এ সালতানাত তার তিন ছেলে 'আরখালাউস' ‘হিরোদান্টিপাস' এবং ফালপের মধ্যে বণ্টিত হয়। আরখালাউস খুব তাড়াতাড়ি তার রাজ্য হতে পদচ্যুত হয়। তার রাজ্য রোমকরা তাদের এ গভর্নর দ্বারা পরিচালনা করলো। হিরোদ ‘গালিল' ও পূর্ব উর্দুনেরও মালিক ছিলো। সে একজন নর্তকীর হুকুমে হযরত ইয়াহইয়ার মাথা কেটে তাকে নযরানা দিলো ।
তার তৃতীয় ছেলে ফালপ পিতা ও ভাইয়ের চেয়েও অধিক রোমক কৃষ্টি কালচারের প্রতি আকর্ষিত ছিলো। তার শাসনামলে কোনো নৈতিক ও ধর্মীয় কল্যাণের আশাই করা যেতো না। হিরোদে আযমের পুতিকে রোমকরা এসব এলাকার শাসন ক্ষমতা দান করে দিলো । শাসন ক্ষমতা লাভের বিনিময়ও সে রোমকদেরকে আদায় করে দিয়েছিলো। এ ব্যক্তি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারীদের উপর চরম সীমার অত্যাচার চালিয়েছিলো। হযরত ঈসার ইসলামী আন্দোলন প্রতিহত করার কোনো চেষ্টা সে বাকী রাখেনি।
রোমকদের হাতে ইহুদী নির্যাতন
এর কিছুদিন পরই রোমক আর ইহুদীদের মধ্যে কঠিন দ্বন্দ্ব সংগ্রাম লেগে গেলো। ৬৪ খৃস্টাব্দ হতে ৬৬ খৃস্টাব্দের মধ্যে ইহুদীরা রোমকদের বিরুদ্ধে

Q8

প্রকাশ্য বিদ্রোহ করে বসলো । তাদেরকে দমন করার জন্য রোমক বাদশাহ 'টিটাস' সামরিক কার্যক্রম শুরু করে ইয়ারদশালম জয় করে ফেললো। এ সময় সে ব্যাপকহারে হত্যার হুকুম দিয়ে দিলো। এ হত্যাকাণ্ডে ১ লাখ ৩৩ হাজার ইয়াহুদী নিহত হয়। ৬৭ হাজার লোককে বন্দী হয়ে গোলামী জীবন বরণ করতে হয় ৷ হাজার হাজার লোককে গ্রেফতার করে বাধ্যাতামূলক শ্রম শিবিরে পাঠিয়ে দেয়। হাজার হাজার লোককে গ্রেফতার করে বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে দেয়। হুকুম দিয়ে দেয় তাদেরকে যেনো ইম্পিথিয়েটারে বন্য জানোয়ারের সাথে রাখা হয়। সব সুন্দরী মেয়েদেরকে বিজয়ীরা তাদের জন্য রেখে দেয়। ইয়ারদশালম শহর হায়কেলে সোলায়মানিকে ধ্বংস করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় । এভাবে ফিলিস্তিনে ইয়াহুদীদের প্রভাব প্রতিপত্তি মিসমার করে দিলো। এরপর দুই হাজার বছর পর্যন্ত তারা আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। কায়সারে হেডরিয়ারের সময় এ শহরকে আবার আবাদ করা হলো। এ সময় এর নাম ছিলো ‘ইলিয়া’। এ শহরে অনেকদিন পর্যন্ত ইহুদীদের প্রবেশ অধিকার ছিলো না ।
এরপর এ আধুনিক যুগে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে প্রবেশ ও রাষ্ট্র কায়েমের যে সুযোগ পেলো তা পরিপূর্ণভাবে বৃটিশ আমেরিকা ও রাশিয়ার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে সম্ভব হয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে আবার ইসরাঈলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইসলামের শত্রুদের সুদূর প্রসারী এক ষড়যন্ত্র ও
চক্রান্তের ফসল ৷
হযরত মূসা আলাইহিস সালামের পরে ইহুদীদের ইতিহাসে এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনার দিকে ইংগিত দিয়েই কুরআন বলছে ঃ
وَقَضَيْنَا إِلَى بَنِي إِسْرَاءِ يْلَ فِي الْكِتُبِ لَتُفْسِدُنَّ فِي الْأَرْضِ مَرَّتَيْنِ وَلَتَعْلُنَّ عُلُوًّا كَبِيرًا فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ أُولَهُمَا بَعَثْنَا عَلَيْكُمْ عِبَادًا لَّنَا أُولِي بَأْسٍ شَدِيدٍ فَجَاسُوا خِللَ الدِّيَارِ ، وَكَانَ وَعْدًا مَفْعُولاً ثُمَّ رَدَدْنَا لَكُمُ الْكَرَّةَ
عَلَيْهِمْ وَامدَدْنَكُم بأموال وبنين وجَعَلْنَكُمْ أكثرَ نَفِيرًا إِنْ أَحْسَنْتُمْ أَحْسَنتُمْ لانْفُسِكُمْ قد وَإِنْ أَسَأْتُمْ فَلَهَا ، فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ الآخِرَةِ لِيَسُوءًا وُجُوهَكُمْ
وَلِيَدْخُلُوا الْمَسْجِدِ كَمَا دَخَلُوهُ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَلِيُتَبَرُوا مَا عَلَوْا تَثْبِيرًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُرْحَمَكُمْ ، وَإِنْ عُدتُم عُدْنَا ، وَجَعَلْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَفِرِينَ حَصِيرًا


৫৫
“অতপর আমি আমার কিতাবে বনী ইসরাঈলকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে, তোমরা দুই দুইবার এ দুনিয়ার বুকে বড় মহা বিপর্যয়ের সৃষ্টি করবে। বড় বেশী বিদ্রোহী কাজ করবে। অবশেষে যখন প্রথম বিদ্রোহের সময় উপস্থিত হলো তখন হে বনী ইসরাঈলীরা! আমি তোমাদের মুকাবিলায় আমার এমন বান্দাদেরকে সংগঠিত করে পাঠিয়েছি যারা খুবই শক্তিশালী ছিলো। তারা তোমাদের দেশে প্রবেশ করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো। এটা ছিলো একটা ওয়াদা যা অবশ্যই পূর্ণ হতো। এরপর আমি তোমাদেরকে তাদের উপর বিজয় লাভ করার সুযোগ করে দিয়েছি । এবং তোমাদেরকে ধন-সম্পদ সন্তান সন্ততি দিয়ে সাহায্য করেছি। তোমাদের সংখ্যা আগের চেয়েও বেশী বাড়িয়ে দিয়েছি । দেখো তোমরা যদি ভালো কাজ করে থাকো তাহলে তা ছিলো তোমাদের জন্যই কল্যাণকর। আর যদি খারাপ কাজ করে থাকো তা হলে তা তোমাদের জন্যই অনিষ্টকর প্রমাণিত হয়েছে। তারপর যখন দ্বিতীয়বারের ওয়াদার সময় এলো তখন অন্য দুশমনদেরকে তোমাদের উপর বিজয়ী করলাম । তারা যেনো তোমাদের স্বরূপই বিগড়িয়ে দেয়। এবং বায়তুল মোকাদ্দাসের মসজিদে এমনভাবে ঢুকে পড়ে যেভাবে প্রথমবার দুশমনরা ঢুকে পড়েছিলো। যে জিনিসের উপর তাদের হাত পড়বে তা ধ্বংস করে ছাড়বে। হতে পারে তোমাদের রব এখন তোমাদের উপর রহম করবেন। কিন্তু যদি তোমরা তোমাদের আগের আচার-আচরণ আবার শুরু করো তাহলে আমিও তোমাদের প্রতি আমার শাস্তির বিধান আবার শুরু করবো। আর কাফেরদের জন্য আমি জাহান্নামকে কয়েদখানা বানিয়ে রেখেছি।”-সূরা বনী ইসরাঈল : ৪-৮
এখানে প্রথম বিপদ বলতে সেই ভয়াবহ ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে যা আসুরিয়া ও ব্যবলনীয় কাওম এবং বনী ইসরাঈলীদের উপর আপতিত হয়েছিলো ।
দ্বিতীয় বিপদ বলতে রোমক জাতিকে বুঝানো হয়েছে। রোমকরা বায়তুল মোকাদ্দাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিলো। বনী ইসরাঈলদেরকে মেরে মেরে বের করে দিয়েছিলো ফিলিস্তিন থেকে। যারপর থেকে আজ দু'হাজার বছর পর্যন্ত তারা সমগ্র দুনিয়ায় বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত হয়ে ছিটিয়ে আছে।
মোটকথা কুরআনের এ দু'টি আগাম বাণী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দুই- বারের মহাবিপর্যয়ে ইহুদী জাতিকে যে প্রলয়ের ভিতর অতিবাহিত হতে হয়েছে তা উল্লেখ করে তাদেরকে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। যদি আবারও এমন

৫৬

জঘন্য আচরণ করো তাহলে আমিও এমন টিটান পিটাইব যা দ্বারা বাপ দাদার নাম ভুলে যাবে। বস্তুত এ অভিশপ্ত জাতির উপর প্রথম পিটাই জার্মানীতে হয়েছে। আবার দ্বিতীয় পিটাই হয়েছে রাশিয়ায়। আর এ আয়াত অনুযায়ী এদের নতুন ফাসাদ সৃষ্টির অপরাধের শাস্তি হিসাবে আল্লাহর তরফ থেকে বড় মার অবশ্যই এদের উপর আপতিত হবে ।
তারা শেষ সুযোগও হারিয়ে বসেছে
হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে নবী করে পাঠাবার মূল উদ্দেশ্য ছিলো ইহুদী জাতিকে সংশোধন করা ও হিদায়াত দেয়া। কিন্তু তারা জাতিগত স্বভাব অনুযায়ী তাদের বিদ্রোহী কর্মকাণ্ড ছেড়ে দেয়নি। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের সাথে তারা অমানবিক আচরণ করেছে।
সর্বশেষ সুযোগ তারা পেয়েছিলো রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের সময়। এ সময়ে যদি তারা খাঁটি মন নিয়ে সত্যিকারভাবে অতীত দিনের দোষ-ত্রুটি মার্জনা চেয়ে নিতো। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করতো। তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা লাভের সৌভাগ্য তাদের হতো। যদি তারা তা না করে তাহলে মানুষ এবং আল্লাহ উভয়ের সামনে তাদের চেহারা কালিমা লিপ্ত হবে ।
কিন্তু সত্য পথে না চলে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ঈমান না এনে বিদ্রোহের পথ অবলম্বন করে তারা শেষ সুযোগও হারিয়ে ফেলেছে।
কুরআন তাদের এ জঘন্য অপরাধের দীর্ঘ ইতহাসের উপর পর্যালোচনা করে তাদের শেষ এবং সর্বচেয়ে বড় অপরাধের স্বরূপ এ ভাষায় উদ্ঘাটন করেছে :
وَلَمَّا جَاءَ هُم كِتَبُ مَنْ عِنْدِ اللهِ مُصَدِّقَ لِمَا مَعَهُمْ وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ
،
جَاءَهُمْ
ن
يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا ، فَلَمَّا جَاءَ هُم مَّا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ ، فَلَعْنَةُ الله عَلَى الْكَفِرِينَ ) البقرة : ٨٩
“এবং এখন যে কিতাবটি আল্লাহর কাছ থেকে তাদের কাছে এসেছে তার সাথে তারা কি ব্যবহার করেছে ? অথচ তারা তাদের কাছে যে কিতাব আগে থেকেই বিদ্যমান ছিলো তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এ কিতাব আসার আগে তারা নিজেরা কাফেরদের মুকাবিলায় বিজয় ও সাহায্য লাভের জন্য দোয়া করতো। কিন্তু যখন সেই জিনিস এসে গেলো,


৫৭
যা তারা চিনেও নিয়েছিলো। তখন তারা তা মানতে অস্বীকার করে বসলো । এসব অবিশ্বাসীদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত ।”
-সূরা আল বাকারা : ৮৯
بِئْسَمَا اشْتَرَوا بِهِ أَنْفُسَهُمْ أَنْ يَكْفُرُوا بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ بَغْيًا أَنْ يُنَزِّلَ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ عَلَى مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ، فَبَاهُ وَ بِغَضَبٍ عَلَى غَضَبٍ ، وَلِلْكَفِرِينَ
.
9. : Ball oily life
-
“তারা যে জিনিসের সাহায্যে মনের সান্ত্বনা লাভ করে তা কতই না খারাপ । আর তাহলো, আল্লাহ যে বিধান নযিল করেছেন, তা তারা শুধু এ জিদের বশবর্তী হয়েই মেনে নিতে অস্বীকার করছে যে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্য হতে নিজ মনোনীত একজনকে তার অনুগ্রহ (অহী ও নবুওয়াত) দান করেছেন তাই তারা আল্লাহর দ্বিগুণ গযবের উপযুক্ত হয়েছে। বস্তুত এসব কাফেরদের জন্য কঠিন ও অপমানকর শাস্তি নির্দিষ্ট রয়েছে।”
-সূরা আল বাকারা : ৯০
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا بِمَا أَنْزَلَ اللهُ قَالُوا نُؤْمِنُ بِمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا وَيَكْفُرُونَ بِمَا
1.3.3.
قراء ة ت وَهُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِمَا مَعَهُمْ ، قُلْ فَلِمَ تَقْتُلُونَ أَنْبِيَاءَ اللَّهِ مِنْ قَبْلُ
:
“তাদেরকে যখন বলা হলো, আল্লাহ যাকিছু নাযিল করেছেন তার উপর ঈমান আনো। তারা তখন বললো, আমরা তো শুধু সে জিনিসের প্রতিই ঈমান এনে থাকি যা আমাদের (ইসরাঈল বংশের) প্রতি নাযিল হয়েছে। এর সীমার বাহিরে যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে তা মানতে তারা অস্বীকার করছে। অথচ যা মানতে তারা অস্বীকার করছে তা সত্য। তাদের নিকট পূর্ব হতে যে (আর্দশের) শিক্ষা বর্তমান ছিলো তা তার সত্যতা স্বীকার করে ও সমর্থনে করে । যাই হোক তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তোমাদের উপর অবতীর্ণ আদর্শের প্রতি যদি তোমরা বিশ্বাসীই হয়ে থাকো তবে ইতিপূর্বে (বনী ইসরাঈল বংশে আগত) আল্লাহর সেই নবীদের কেনো হত্যা করেছিলে।”-সূরা আল বাকারা : ৯১
আল্লাহর সাথে ওয়াদা করে তার বিরোধিতা
ইহুদী জাতি থেকে অনেক আগেই ওয়াদা নেয়া হয়েছিলো। তারা আল্লাহর সব রাসূলের উপর বিশেষ করে শেষ নবীর প্রতি ঈমান আনবে। তারা তার

৫৮

সাথে মিলে সত্যকে প্রতিষ্ঠা ও বিজয়ী করার জন্য জিহাদ করবে। বস্তুতঃ হযরত মূসা আলাইহিস সালাম নিজের জাতির জন্য আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন । তখন আল্লাহর দরবার হতে ইরশাদ হলো :
قَالَ عَذَابِي أُصِيبُ بِهِ مَنْ أَشَاءُ ، وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ فَسَأَكْتُبُهَا
L
لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَوةَ وَالَّذِينَ هُم بِايْتِنَا يُؤْمِنُونَ الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ
الرَّسُولَ النَّبِيُّ الْأُمِّيُّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوبًا عِنْدَ هُمْ فِي التَّوْرَةِ وَالْإِنْجِيلِ ن
ز
“আল্লাহ বলেন, সাজা তো আমি যাকে চাই তাকে দেই। কিন্তু আমার রহমত প্রতিটি জিনিসের উপর ছেয়ে আছে। আর তা আমি ঐসব লোকের জন্য লিখে রাখবো যারা নাফরমানী হতে বেঁচে থাকবে। যাকাত আদায় করবে। আমার আয়াতের উপর ঈমান আনবে। যারা এ উম্মি নবীর আনুগত্য করবে। যার উল্লেখ তাদের নিকট রক্ষিত কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত দেখতে পাবে!”-সূরা আল আরাফ : ১৫৬-১৫৭
مُحَمَّدٌ رَّسُولُ اللهِ ، وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُم تَرهُم ركَعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلاً مِّنَ اللهِ وَرِضْوَانًا ، سيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مَنْ
أَثَرِ السُّجُودِ َذلِكَ مَثَلُهُمْ فِى التَّورةِ ، وَمَثْلُهُم فِى الْإِنْجِيلِ -
ط
C
“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। যেসব লোক তার সাথে রয়েছে তারা কাফেরদের উপর বজ্র কঠোর। পরস্পরে খুবই রহমদিল । তুমি তাদেরকে কখনো দেখবে রুকূ' করছে, কখনো সাজদা করছে। তারা আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ তালাশ করছে। সাজ্দা করার চিহ্ন তাদের চেহারায় প্রস্ফুটিত । এসব তাদের বৈশিষ্ট্য যা তাওরাতে আছে এবং ইঞ্জিলেও আছে।”
তাওরাতের দ্বিতীয় বিবরণ ১৮ : ১৮ এ আছে ঃ
46
-সূরা আল ফাতাহ : ২৯
আমি উহাদের জন্য উহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করিব, ও তাঁহার মুখে আমার বাক্য দিব ; আর আমি তাঁহাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিব, তাহা তিনি উহাদিগকে বলিবেন ।
শুধু এখানেই শেষ নয়। বরং তাদের নবী-রাসূলগণ বারবার তাদেরকে একথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কথা উপরে


৫৯
উল্লেখ হয়েছে। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামও বনী ইসরাঈলকে শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর আগমনের শুভসংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ বলছেন :
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يُبَنِي إِسْرَاءِ يْلَ إِنِّي رَسُولُ اللهِ إلَيْكُمْ مُصَدِّقًا
بَينَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَّاتِي مِنْ بَعدِى اسْمُهُ أَحْمَدُ ط
لَّمَا
“এবং সেই সময়ের কথা স্মরণ করো যখন ঈসা ইবনে মারিয়াম বলেছিলেন, হে বনী ইসরাঈল আমাকে আল্লাহর রাসূল বানিয়ে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন এবং আমি আমার আগে পাঠানো ‘তাওরাতে' বিশ্বাসী । আর আমার পরে একজন রাসূল আসবেন। যার নাম হবে আহমাদ। আমি তার আগমনের শুভ সংবাদ দিচ্ছি।”-সূরা আস সাফ : ৬
তাই যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাব ঘটলো তখন ইহুদীরা তাঁকে বিলক্ষণ চিনতে পারলো। কিন্তু এরপরও তারা কুফরী হতে বিরত থাকেনি ।
কুরআন এ ব্যাপারটি স্পষ্ট করে বলেছে :
وَالَّذِينَ أتَيْنَهُمُ الْكِتب يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبَنَاءَ هُم ، وَإِنَّ فَرِيقًا مِّنْهُم
لَيَكتُمُونَ الْحَقِّ وَهُم يَعْلَمُونَ ٥ - البقرة : ١٤٦
“যাদেরকে আমি কিতাব দান করেছি তারা (ইহুদী জাতি) এমনভাবে একে চিনে-জানে যেভাবে তারা তাদের সন্তানকে চিনে-জানে । কিন্তু তাদের একটি দল জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করে রেখেছে।
-সূরা আল বাকারা : ১৪৬
শুধু তা-ই নয়। বরং তারা (ইহুদীরা) সত্য ও সত্যপন্থীদের মুকাবিলায় কুফর ও কুফরপন্থীদের বন্ধুত্ব ও সত্যতা অবলম্বন করেছে। কুরআনের ভাষায় :
تَرَى كَثِيرًا مِنْهُم يَتَولُونَ الَّذِينَ كَفَرُوا ، لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنْفُسُهُمْ أَنْ
سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَلِدُونَ ٥ - المائدة : ٨٠
“আজ তুমি তাদের মধ্যে অনেক লোক দেখছো যারা ঈমানদারদের মুকাবিলায় কাফেরদের সাহায্য সহযোগিতা ও তাদের সাথে বন্ধুত্ব করছে। নিশ্চয় অত্যন্ত খারাপ পরিণামই সামনে রয়েছে যার ব্যবস্থা তাদের প্রবৃত্তিসমূহ তাদের জন্য করেছে। আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারা চিরস্থায়ী আযাবে নিমজ্জিত।”-সূরা আল মায়েদা : ৮০

৬০

তাদের অহমিকা ও পথভ্রষ্টতা এতদূর সীমা অতিক্রম করে গেছে যে, তারা আল্লাহকে ছেড়ে দিয়ে তাদের মনগড়া ধ্যান-ধারণা ও তাগুতের (শয়তান) বন্দেগী অবলম্বন করলো। তারা আল্লাহ দ্রোহীদের ব্যাপারে বলতে লাগলো । কুরআনের ভাষায় :
لِلَّذِينَ كَفَرُوا هَؤُلَاءِ اهْدَى مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا سَبِيلاً - النساء : ٥١
“ঈমানদারদের চেয়ে তো এ কাফেররাই অধিক সঠিক পথে আছে।”
-সূরা আন নিসা : ৫১
সত্যের সাথে দুশমনির ও সত্যপন্থীদের সাথে হিংসা বিদ্বেষে এ লোকেরা কাফিরদের চেয়েও বেশ বেড়ে গেছে। কুরআন বলছে :
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةٌ لِلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا :
“তোমরা ঈমানদারদের শত্রুতার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী কঠোর পাবে ইয়াহুদী মুশরিকদেরকে।”-সূরা আল মায়েদা : ৮২
قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِجِبْرِيلَ فَإِنَّهُ نَزَّلَهُ عَلَى قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللَّهِ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَهُدًى وَبُشْرَى لِلْمُؤْمِنِينَ ٥ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِلهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَرُسُلِهِ
وَجِبْرِيلَ وَمِيْكُل فَإِنَّ اللَّهَ عَدُوٌّ لِلْكَفِرِينَ - البقرة : ۹۸۹۷ -
“তাদেরকে বলো যারা জিবরাঈলের সাথে শত্রুতা পোষণ করে তাদের জানা থাকা উচিত যে জিবরাঈল আল্লাহর হুকুমেই এ কুরআন তোমার হৃদয়ে ঢেলে দিয়েছে। যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সত্যতা স্বীকার ও সমর্থন করে এবং ঈমানদারদের জন্য সঠিক পথের সন্ধান ও সাফল্যের সুসংবাদ নিয়ে এসেছে। যারা আল্লাহ তাআলার ফেরেশতা এবং জিবরাঈল ও মিকাঈলের শত্রু, আল্লাহ সেই কাফেরদের শত্রু।”
-সূরা আল বাকারা : ৯৭-৯৮
يأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِنُوا الَّذِينَ اتَّخَنُوا دِينَكُمْ هُزُوا وَلَعِبًا مِّنَ الَّذِينَ أوتُوا الْكِتَبَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ ، وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنتُم مُّؤْمِنِينَ )
وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلوةِ اتَّخَذُوهَا هُزُوًا وَلَعِبا ، ذلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لا يَعْقِلُونَO


৬১
قُلْ يَاهْلَ الْكِتَبِ هَلْ تَنْقِمُونَ مِنَّا إِلَّا أَنْ اُمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ
مِنْ قَبْلُ : وَأَنَّ أَكْثَرَكُمْ فَسَقُونَ ٥ - المائدة : ٥٩٥٧
“হে ঈমানদার লোকেরা ! তোমাদের সামনে আহলি কিতাবের যারা তোমাদের দ্বীনকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও বিনোদনের সামান বানিয়ে নিয়েছে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে নিজেদের বন্ধু প্রিয়জন বানিও না। যদি তোমরা মু'মিন হয়ে থাকো। তোমরা যখন নামাযের আহবান জানাও তখন তারা তা নিয়ে বিদ্রূপ করে। তা নিয়ে খেলা করে। কারণ তাদের বুদ্ধি-জ্ঞান কিছু নেই । তাদেরকে বলো, হে আহলি কিতাব! যে কথার জন্য তোমরা আমাদের উপর বিগড়ে আছো ; তাতো এছাড়া আর কিছুই নয় যে, আমরা আল্লাহর উপর, দ্বীনের ঐ তালীমের উপর ঈমান এনেছি যা আমাদের উপর নাযিল হয়েছে । আমাদের আগেও নাযিল হয়েছিলো । আর তোমরা অধিকাংশ লোক ফাসেক।”-সূরা আল মায়েদা ঃ ৫৭-৫৯
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالاً ، وَدُّوا مَا عَنتُمْ ، قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاء مِنْ أَفْوَاهِهِمْ ، وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ط قَدْ بَيْنَا لَكُمُ الْايْتِ إِنْ كُنتُمْ تَعْقِلُونَ ، فَانْتُمْ أَوْلَاءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وتُؤْمِنُونَ بِالْكِتب كلِهِ ، وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوا آمَنَّا ، وَإِذَا خَلَوْا عَضُوا عَلَيْكُمُ
ق
الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ ، قُلْ مُوتُوا بِغَيْظِكُمْ ، إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِه
L
“হে ঈমানদারগণ ! তোমরা মু'মিন ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোনো ত্রুটি করে না। তোমরা কষ্টে থাকো, তাতেই তাদের আনন্দ, শত্রুতা প্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যাকিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে তা আরো অনেক বেশী জঘন্য। আমরা তোমাদেরকে সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার হেদায়াত দান করেছি, যদি তোমরা বুদ্ধিমান হও। তোমরা তো তাদের ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি কোনো ভালোবাসাই পোষণ করে না, অথচ তোমরা সমস্ত আসমানী কিতাবকে মান। তারা যখন তোমাদের সাথে মিশে তখন বলে আমরাও তোমাদের রাসূল এবং তোমাদের কিতাব মেনে নিয়েছি। পক্ষান্তরে তারা যখন তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে যায় ৷ তোমাদের উপর তাদের ক্রোধ এত বেড়ে যায় যে, তারা নিজেদের আঙ্গুল

৬২

কামড়াতে থাকে। (হে রাসূল! আপনি) বলুন তোমরা তোমাদের আক্রোশে জ্বলেপুড়ে মরতে থাকো। আল্লাহ মনের কথা সবচেয়ে ভালো জানেন।”-সূরা আলে ইমরান : ১১৮-১১৯
এভাবেও ইহুদী জাতি তাদের নিজেদের সংশোধন, হিদায়াত এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি হাসিলের শেষ সুযোগ হারিয়ে বসলো । এটাই তাদের সেই অপরাধ, যার কারণে অবশেষে তারা চিরদিনের জন্য অবমাননা ও লাঞ্ছনার শিকারে পরিণত হয়েছে এবং 'দুনিয়ার জীবনের লাঞ্ছনা আর কিয়ামাতের দিন কঠিন আযাবের দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। এটাই তাদের জাতীয় বিধিলিপি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইহুদীদের অধঃপতনের ইতিহাসের এক একটা দিক, এবং ইহুদীদের গোটা কার্যক্রম একটি পরিপূর্ণ চিত্র কুরআন মাজিদে বিদ্যমান আছে। এটা ছিলো তাদের শত শত বছরের অধঃপতনের স্বাভাবিক পরিণতি। এ ইতিহাসের উপর একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই একথা সহজেই বুঝে আসে। কেনো এদের অস্তিত্ব ধ্বংস ও বাতিলের সামর্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে ? কি কারণে এরা দুনিয়ায় সর্বত্র অপবিত্র, অপরাধী, দোষ-ত্রুটিপূর্ণ, দুর্বল চরিত্রহীন, বিভ্রান্তি ও মানবীয় বঞ্চনার বুনিয়াদী কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর দুনিয়ার যেখানেই কোনো সুনাম নেক কাজ, কল্যাণ, ভালো অথবা আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগী নজরে পড়বে তা হবে ইয়াহুদী জাতির প্রকৃত পরিচয় ও চেহারার বিপরীত ।
I
ইহুদী জাতির উপর অভিশাপের এ একটা বিস্ময়কর শিক্ষণীয় দিক। এ লোকেরা আজ প্রতিটি মিথ্যা, দুষ্কৃতি, অনিষ্ট ও ধ্বংসের পতাকাবাহী ও প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে গোচরিভূত হচ্ছে। যার দরুন বিশ্বমানবতা আজ মুখ থুবড়ে পড়ছে। আল্লাহর সাথে দুশমনির পর বিশ্বমানবতার সাথে দুশমনি করা ইহুদী জাতির সবচেয়ে বড় জাতীয় অপরাধ ।
এ বিষয়টি শেষ করার আগে আমি কুরআনে আমাদের সামনে পেশ করা ইহুদী জাতির জাতীয় ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের একটা সামষ্টিক আলোচনা পাঠকের সামনে তুলে ধরবো। ইনশাআল্লাহ ।
আল্লাহ সম্পর্কে তাদের বিভ্রান্তি,
ইহুদীদের অধঃপতনের মূল কারণ হলো আল্লাহর ধারণায় তাদের বিভ্রান্তি ।
কুরআন বলছে :


৬৩
وقَالَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصْرِى نَحْنُ ابْنَةُ اللهِ واحباؤُهُ ، قُلْ فَلِمَ يُعَذِّبُكُم بِذُنُوبِكُمْ ،
بَلْ أَنْتُمْ بَشَرٌ مِّمَّنْ خَلَقَ - - المائدة : ۱۸
ط
L
“ইহুদী ও খৃস্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান এবং তার খুব প্রিয়জন । তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন। যদি তা-ই হয় তাহলে তিনি তোমাদেরকে পাপের কারণে কেনো শাস্তি দান করেন ? বরং (সত্য কথা হলো) মূলতঃ তোমরাও অন্যান্য সৃষ্ট মানুষের মতো সাধারণ মানুষ।”
কুরআনে আরো বলছে :
-সূরা আল মায়েদা : ১৮
وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْزُ نِ ابْنُ اللهِ وَقَالَتِ النَّصْرَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللَّهِ ، ذَلِكَ
ط
ج
قَوْلُهُمْ بأَفْوَاهِهِمْ ، يُضَاهِنُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَبْلُ ، قَتَلَهُمُ اللهُ ، أَنَّى
يُؤْفَكُونَ ٥ - التوبة : ٣٠
“ইহুদীরা বলে, ওযায়ের আল্লাহর পুত্র। আর খৃস্টানরা বলে মসিহ আল্লাহর পুত্র। এসব কথা ভীত্তিহীন, যা তাদের মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে। এসব কথা তাদের পূর্ববর্তী কাফেরদের মতো আল্লাহর মার এদের উপর। এরা কোথা হতে এসব ধোঁকা খাচ্ছে।”-সূরা আত তাওবা : ৩০
আল্লাহ আরো বলছেন :
L
وَقَالَتِ الْيَهُودُ يَدُ اللهِ مَغْلُولَةٌ غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا ، بَلْ يَدَهُ
ید
مَبْسُوطَتُنِ ا يُنْفِقُ كَيْفَ يَشَاءُ ط - المائدة : ٦٤
لا
“আর ইহুদীরা বলে, আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক। এসব বাজে কথা বলার জন্য তাদের উপর অভিসম্পাত। বরং আল্লাহর হাত উন্মুক্ত । তিনি যেভাবে চান খরচ করেন।”
-সূরা আল মায়েদা : ৬৪
তাদের ব্যাপারে কুরআন আরো বলছে :
وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا ، وَإِذَا خَلاَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ قَالُوا اتُحَدِّثُونَهُمْ بِمَا فَتَحَ اللهُ عَلَيْكُمْ لِيُحَاجُوكُم بِهِ عِنْدَ رَبِّكُمْ ، أَفَلَا تَعْقِلُونَ
اَوَلَا يَعْلَمُونَ أنَّ اللهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُونَ وَمَا يُعْلِنُونَ - البقرة : ٧٦-٧٧

৬৪

“যখন তারা মুসলমানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে আমরা মুসলমান হয়েছি। আর যখন পরস্পরের সাথে নিভৃতে একান্তে মত বিনিময় করে তখন বলে, পালনকর্তা তোমাদের জন্য যা প্রকাশ করেছেন তাকি তাদের কাছে (মুসলমান) বলে দিচ্ছো। তাহলে যে তারা এগুলোকে আল্লাহর সামনে তোমাদের বিরুদ্ধে দলিল হিসাবে পেশ করবে। তারা কি এতটুকুও জানে না যে, আল্লাহ সে সব বিষয় জানেন যা তারা গোপন করে ও যা প্রকাশ করে ।”-সূরা আল বাকারা : ৭৬-৭৭
আখিরাত সম্পর্কে তাদের ভুল ধারণা
তাদের জীবনের সবচেয়ে ভুল ও গোমরাহীর মূল কারণ হলো পরকাল সম্পর্কে তাদের এ ভুল ধারণার বিভ্রান্তি । কুরআনের ভাষায়-
وقَالُوا لَنْ يُدْخُلَ الْجَنَّةَ إِلا مَنْ كَانَ هُودًا أَوْ نَصْرُى ، تِلْكَ أَمَا نِيُّهُمْ ، قُلْ
هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنتُم صدقين - البقرة : ۱۱۱
b
“তারা বলে, কোনো ব্যক্তিই জান্নাতে যেতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সে ইহুদী কিংবা (খৃস্টানদের মতে) খৃস্টান না হবে। এটা তাদের মনের বাসনা মাত্র। বলে দিন, তোমাদের দাবীতে তোমরা সত্যবাদী হলে তার প্রমাণ পেশ করো।”-সূরা আল বাকারা : ১১১
তাদের সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে বলছেন :
وَقَالُوا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ إِلا أَيَّامًا مَعْدُودَةً ، قُلْ اتَّخَذْتُمْ عِنْدَ اللهِ عَهْدًا فَلَنْ
يُخْلِفَ اللهُ عَهْدَهُ أَمْ تَقُولُونَ عَلَى اللهِ مَا لا تَعْلَمُونَ - البقرة : ۸۰
“তারা বলে, দোযখের আগুন কোনো অবস্থাতেই আমাদেরকে হাতে গণা কয়েকদিন ছাড়া স্পর্শ করতে পারবে না। তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, তোমরা আল্লাহর কাছ থেকে এমন কোনো ওয়াদা পেয়ে গেছো নাকি যা তিনি ভঙ্গ করতে পারবেন না ?”-সূরা আল বাকারা : ৮০
قُلْ إِنْ كَانَتْ لَكُمُ الدَّارُ الْآخِرَةُ عِنْدَ اللهِ خَالِصَةً مِّنْ دُونِ النَّاسِ فَتَمَنَّوا
الْمَوْتَ إِنْ كُنتُم صدقين - البقرة : ٩٤


৬৫
“তাদেরকে বলুন, সত্যিই আল্লাহর কাছে পরকালের ঘর (জান্নাত) সকল মানুষকে বাদ দিয়ে যদি তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে থাকে, (তাহলে এমন ভালো জিনিস পাবার জন্য) তোমাদের তো উচিত মৃত্যু কামনা করা । যদি তোমাদের ধারণায় তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।”
-সূরা আল বাকারা : ৯৪
وَيَجْعَلُوْنَ الله مَا يَكْرَهُونَ وَتَصفُ الْسِنَتُهُمُ الْكَذِبَ اَنَّ لَهُمُ الحُسنى
لاَجَرَمَ أَنْ لَهُمُ النَّارَ وَانَّهُمْ مُفْرَطُونَ ٥ - النحل : ٦٢
“তাদের মুখ আরো মিথ্যা কথা বলে যে, তাদের জন্য আখিরাতে কেবল মঙ্গলই নিহিত (তাদের কথা ঠিক নয়) তাদের জন্য তো একটিই জিনিস সেখানে আছে। তাহলো জাহান্নামের আগুন। এদেরকে অবশ্যই সবার আগে এখানে পৌঁছানো হবে।”-সূরা আন নাহল : ৬২
আল্লাহ বলছেন :
ذلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لَنْ تَمَسُّنَا النَّارُ إِلا أَيَّامًا مَّعْدُودَت من وَغَرَّهُمْ فِي دِينِهِم مَّا
كانوا يفترون - ال عمران : ٢٤
“তাদের জীবন পদ্ধতি এরূপ হবার কারণ এই যে, তারা বলে যে, জাহান্নামের আগুন আমাদেরকে স্পর্শও করতে পারবে না । আর যদি জাহান্নামের শাস্তি মিলেও তা হবে হাতে গণা কয়েকদিন। তাদের মনগড়া বিশ্বাস তাদেরকে তাদের দ্বীনের ব্যাপারে বড় ভুল ধারণায় নিমজ্জিত রেখেছে।”-সূরা আলে ইমরান : ২৪
তাদের নৈতিক ও দীনি বিভ্রান্তির ধরন
আল্লাহর সম্পর্কে ধারণা এবং আখিরাত সম্পর্কে বিভ্রান্তিই তাদের অধঃপতনের মূল কারণ। এরপরে আর কোনো জিনিস তাদের চোখ খুলতে পারেনি। তারা তাদের নিজেদের ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেনি । দুনিয়ার পূজায় তারা নিজেরা নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলেছে।
এ সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে বলছেন ঃ
وَقَطَّعْنَهُمْ فِي الْأَرْضِ أَمَمًا ، مِنْهُمُ الصَّالِحُونَ وَمِنْهُمْ دُونَ ذَلِكَ ، وَيَلَوْنَهُمْ بِالْحَسَنتِ وَالسَّيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَه فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِمْ خَلْفٌ ورِثُوا

৬৬

الكتب يَأْخُنُونَ عَرَضَ هَذَا الأدنى وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ لَنَا ، وَإِنْ يَأْتِهِمْ عَرَضُ
مثْلُهُ يَأخُذُوهُ - اَلَم يُؤْخَذْ عَلَيْهِمْ مِيثَاقَ الْكِتَبِ أنْ لايَقُولُوا عَلَى اللهِ إِلا
الْحَقَّ وَدَرَسُوا مَا فِيهِ ، وَالدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ ، أَفَلَا تَعْقِلُونَ
L
“আর আমি তাদেরকে দুনিয়ায় খণ্ড খণ্ড করে অসংখ্য জাতির মধ্যে বিভক্ত করে দিয়েছি। তাদের মধ্যে কিছু লোক ভালো ছিলো। আর কিছু লোক ছিলো অন্যরকম। আর আমরা তাদেরকে ভালো মন্দ অবস্থায় ফেলে পরীক্ষা করতে থাকি । এ আশায় হয়তো তারা ফিরে আসবে। কিন্তু তাদের পরে এমন সব অযোগ্য লোক তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়, যারা আল্লাহর কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়ে এ নিকৃষ্ট দুনিয়ার স্বার্থাবলী লাভে লিপ্ত থাকে আর বলে “আশা করা যায় যে, আমাদেরকে মাফ করে দেয়া হবে।” সেই বৈষয়িক স্বার্থই আবার যদি তাদের সামনে এসে পড়ে, তাহলে অমনি টপ করে তারা হস্তগত করে। তাদের নিকট হতে কিতাবের প্রতিশ্রুতি কি আগে গ্রহণ করা হয়নি যে, আল্লাহর নামে তারা কেবল সে কথাই বলবে, যা সত্য ? আর কিতাবে যা কিছু লিখা হয়েছে তা তারা নিজেরা পড়েছে । পরকালের বাসস্থান তো খোদাভীরু লোকদের জন্যই হবে উত্তম । এতটুকুন কথাও কি তোমরা বুঝতে পারো না।”-সূরা আল আরাফ : ১৬৮-১৬৯
তাদের দুনিয়া প্রীতি সম্পর্কে আল্লাহ আরো বলেন :
*..
وَلَتَجِدَنَّهُمْ أَحْرَصَ النَّاسِ عَلَى حَيوةٍ ، وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا ، يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ
يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ وَمَا هُوَ بِمُزَحْزِجِهِ مِنَ الْعَذَابِ أَنْ يُعَمَّرَ ، وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِمَا
ط ، ط
-
“তোমরা তাদেরকে বেঁচে থাকার জন্য লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী লোভী দেখতে পাবে। এমন কি এ ব্যাপারে তারা মুশরিকদের অপেক্ষাও অধিক অগ্রসর। তাদের প্রত্যেক ব্যক্তিই কোনো না কোনো ভাবে হাজার বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে চায় কিন্তু এত দীর্ঘ জীবনও তাদেরকে আযাব হতে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না, তারা যেসব কাজকর্ম করছে তা সবই আল্লাহ দেখছেন।”-সূরা আল বাকারা : ৯৬


নবী-রাসূলদের সাথে তাদের ব্যবহার
৬৭
নবী-রাসূলদের সাথেও তারা কত গর্হিত আচরণ করেছে তা কুরআনের ভাষায় শুনুন ঃ
وَلَمَّا جَاءَ هُمْ رَسُولُ مَنْ عِنْدِ اللهِ مُصَدِّقُ لَمَا مَعَهُمْ نَبَذَ فَرِيقٌ مِّنَ الَّذِينَ
أوتُوا الكتب كتب الله وَرَاءَ ظُهُورِهِم كَأَنَّهُمْ لا يَعْلَمُونَ )
“যখনই তাদের নিকট আল্লাহর তরফ থেকে কোনো রাসূল আগমন করেন, তাদের নিকট থেকেই বিদ্যমান (আল্লাহর) কিতাবের সত্যতা স্বীকার ও সমর্থন করে তখনই এ ইহুদীদের (আহলি কিতাব) একটি দল আল্লাহর কিতাবকে এমনভাবে পেছনে ফেলে রেখেছে যেনো তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানে না।”-সূরা আল বাকারা : ১০১
তাদের এ হঠকারিতার ব্যাপারে কুরআন আরো বলছে :
أَمْ تَقُولُونَ إِنَّ إِبْرهِمَ وَإِسْمَعِيلَ وَإِسْحَقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطَ كَانُوا هُودًا أَوْ نَصْرى ، قُلْ أَنْتُمْ أَعْلَمُ أَمَ اللَّهُ ، وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ كَتَمَ شَهَادَةً عِنْدَهُ مِنَ
الله « وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ٥ - البقرة : ١٤٠
“অথবা তোমরা আরো কি বলতে চাও যে, ইবরাহীম, ইসহাক, ইসমাঈল, ইয়াকুব ও ইয়াকুবের বংশধর সকলেই ইহুদী ছিলেন। কিংবা খৃস্টান। হে রাসূল আপনি বলে দিন, এ ব্যাপারে তোমরা বেশী জানো, না আল্লাহ বেশী জানেন ? যার নিকট আল্লাহর তরফ হতে কোনো সাক্ষ্য বর্তমান রয়েছে সে যদি তা গোপন করে তবে তার চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে ? জেনে রাখো তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ মোটেই গাফিল নন।”-সূরা আল বাকারা : ১৪০
নবীদের ব্যাপারে এ ঝগড়া সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে :
ياهل الكتب لِمَ تُحَاجُونَ فِي إِبْرهِيمَ وَمَا أُنزِلَتِ التَّوْرَةُ وَالْإِنْجِيلُ إِلا مِنْ

৬৮

“হে আহলে কিতাব ! তোমরা ইবরাহীম সম্পর্কে আমার সাথে কেনো ঝগড়া করো ? তাওরাত ইঞ্জিল তো ইবরাহীমের পরে নাযিল হয়েছে। তোমরা কি এতটুকু কথাও বুঝ না ?”-সূরা আলে ইমরান : ৬৫
কুরআনে এ সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে :
كُلَّمَا جَاءَهُمْ رَسُولُ بِمَا لا تَهْوَى أَنْفُسَهُمْ لا فَرِيقًا كَذَّبُوا وَفَرِيقًا يَقْتُلُونَ
“যখনই তাদের নিকট কোনো রাসূল তাদের নফসের খাহেশের বিপরীত কোনো জিনিস নিয়ে এসেছে তখন তাদের কাউকে তারা মিথ্যাবাদী বলছে, আবার কাউকে হত্যা করছে।”-সূরা আল মায়েদা : ৭০
তাদের ওলামা ও নেতৃবৃন্দ
ইহুদী আলেম সমাজ ও নেতৃবৃন্দের চরিত্র এত হীন ও জঘন্য পর্যায় নেয়ে গিয়েছিলো যে, কুরআন সে সবের বর্ণনা দিয়ে বলছে :
يأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ كَثِيرًا مِّنَ الْاَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَاكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ
بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ ـ - التبوية : ٣٤
“হে ঈমানদারগণ, এ ইহুদীদের (আহলি কিতাব) অধিকাংশ আলেম আর দরবেশদের অবস্থা হলো তারা মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায় এবং তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে।”-সূরা আত তাওবা : ৩৪
এ ইহুদী আলেমদের মুনাফেকী আচরণের কারণে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে এ ভাষায় র্ভৎসনা করেছিলেন :
“তিনি কহিলেন, হা ব্যবস্থাবেত্তারা, ধিক্ তোমাদিগকেও, কেননা তোমরা মনুষ্যদের উপরে দুর্ব্বহ বোঝা চাপাইয়া দিয়া থাক; কিন্তু আপনারা একটী অঙ্গুলি দিয়া সেই সকল বোঝা স্পর্শ কর না।”-১১ ঃ ৪৬
এদের এ ধরনের মুনাফেকী আচরণের কথা উল্লেখ করে কুরআনও এদের বলছে :
J
أَتَامُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِ وَتَنْسَوْنَ اَنْفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتُبَ ، أَفَلَا تَعْقِلُونَ
“তোমরা তো অন্যদেরকে ভালো কাজ করার জন্য হুকুম দিচ্ছো । কিন্তু নিজেদের বেলায় তা করা ভুলে যাচ্ছো। অথচ তোমরা আল্লাহর কিতাব পড়েছো। তোমরা কি একটুও বুদ্ধি-সুদ্ধি খরচ করে কাজ করছো না।”-সূরা আল বাকারা : ৪৪


৬৯
। তারা কিতাবকে বিকৃত ভঙ্গিতে পড়তো যাতে মানুষ বুঝে তারা কিতাব পড়ছে। অথচ তারা কিতাব পড়ছে না। তাদের এ আচরণ সম্পর্কে কুরআন স্বয়ং বলছে :
وَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًا يَلُونَ الْسِنَتَهُم بِالْكِتبِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ الْكِتُبِ وَمَا هُوَ مِنَ
C
الْكِتُبِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى الله الكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ٥ - ال عمران : ۷۸
“তাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করার সময় জিহবাকে এমনভাবে উলট-পালট করে যাতে, তোমরা যেনো মনে করো তারা কিতাবের মূল ভাষণ পাঠ করছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে তা কিতাবের ভাষা নয়। তারা বলে, আমরা এতে যা কিছু পড়ি তা সবই আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত । অথচ প্রকৃতপক্ষে তা আল্লাহর তরফ হতে প্রাপ্ত নয় । তারা জেনে শুনে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা কথা আরোপ করছে।
-সূরা আলে ইমরান : ৭৮
আল্লাহ তাদের এ ধোঁকাবাজীর মুখোশ উন্মোচন করে বলছেন :
فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الكتب بِأَيْدِيهِمْ ، ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ
لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً ـ - البقرة : ٧٩
“অতএব ধ্বংস সেইসব লোকের জন্য অনিবার্য যারা নিজ হাতে শরীয়াতের বিধান রচনা করে তারপর লোকদেরকে বলে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। যাতে এর বিনিময়ে তারা সামান্য অর্থ গ্রহণ করতে পারে।”-সূরা আল বাকারা : ৭৯
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ আরো বলছেন ঃ
قُلْ مَنْ أَنْزَلَ الْكِتَبَ الَّذي جَاءَ بِهِ مُوسَى نُورًا وَهُدًى لِلنَّاسِ تَجْعَلُوْنَهُ
قَرَاطِيْسَ تُبْدُونَهَا وَتُخْفُونَ كَثِيرًا ج - الانعام : ۹۲
“তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, ঐ গ্রন্থ কে নাযিল করেছে যা মূসা নিয়ে এসেছিলো ? যা নূর বিশেষ এবং মানবজাতির জন্য হেদায়াত। তোমরা এ কিতাবকে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত পাতায় রেখে লোকদের জন্য প্রকাশ করছো । এবং বেশীর ভাগই গোপন করছো।।”-সূরা আল আনআম : ৯১


أَفَتَطْمَعُوْنَ أَنْ يُؤْمِنُوا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِّنْهُم يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللهِ ثُمَّ
يحرفونه مِن بَعْدِ مَا عَقَلُوه وهم يَعْلَمُونَ ٥ - البقرة : ٧٥
“হে মুসলমানেরা তোমরা কি আশা পোষণ করছো যে, লোকেরা তোমাদের দাওয়াতে ঈমান গ্রহণ করবে ? অথচ তাদের এক গোষ্ঠী আলেম, আল্লাহর কালাম শুনছে। আর খুব বুঝে শুনে জ্ঞাতসারে এর মধ্যে পরিবর্তন আনছে।”-সূরা আল বাকারা : ৭৫
فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِيثَاقَهُمْ لَعَنْهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَسِيَةٌ ، يُحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ عَنْ
مواضعه لا وَنَسُوا حَظًّا مِّمَّا ذَكَرُوا به ج - المائدة : ۱۳
“এখন তাদের অবস্থা হলো এমন যে, তারা শব্দ উলট-পালট করে বক্তব্যকে কোথা হতে কোথায় নিয়ে মূল কথার নাড়া-চাড়া করে ফেলে । যে শিক্ষা তাদেরকে দেয়া হয়েছিলো তার অধিকাংশই তারা ভুলে গিয়েছে।”-সূরা আল মায়েদা : ১৩
وَمِنَ الَّذِينَ هَادُوا سَمَّعُونَ لِلْكَذِبِ سَمْعُونَ لِقَوْمٍ أُخَرِينَ لا لَمْ يَأْتُوكَ ،
،
يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ مِنْ بَعْدِ مَوَاضِعِهِ ، يَقُولُونَ إِنْ أُوتِيْتُمْ هذَا فَخُذُوهُ وَإِن لَّمْ
تُؤْتَوْهُ فَاحْذَرُوا ط - المائدة : ٤١
“যারা ইহুদী হয়ে গেছে আর যাদের অবস্থা এই যে, তারা মিথ্যার জন্য উৎকর্ণ হয় এবং অন্য এমন লোকের জন্য যারা তোমার নিকট কখনো আসেনি। কথা খুঁজে বেড়ায়। আল্লাহর কিতাবের শব্দাবলীকে এসবের নির্দিষ্ট স্থান থাকা সত্ত্বেও এদেরকে আসল অর্থ হতে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং মানুষদেরকে বলছে যে, যদি তোমাদেরকে এ হুকুম দেয়া হয় তাহলে মানবে। আর তা না হলে মানবে না।”-সূরা আল মায়েদা : ৪১
أَلَمْ تَرَاَ إلَى الَّذِينَ أوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِ يُدْعَوْنَ إِلى كِتَبِ اللهِ لِيَحْكُم
بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَتَوَلَّى فَرِيقٌ مِّنْهُمْ وَهُمْ مُعْرِضُونَ ٥ - ال عمران : ۲۳
“তুমি কি দেখনি যাদেরকে কিতাবের কিছু জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের অবস্থা কি ? তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের দিকে আহবান জানানো হয় তাদের মধ্যে ফায়সালা করার জন্য, তখন তাদের একটি অংশ ইতস্ততঃ করে আর ফায়সালার দিকে আসা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।”


৭১
وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَبَ إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَ هُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ،
“যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিল, কারণ প্রকৃত জ্ঞান পাওয়ার পর তারা পরস্পরের উপর প্রাধান্য বিস্তারের জন্যই এরূপ করেছে।”-সূরা আলে ইমরান : ১৯
وَدَّت طَائِفَةٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِيبِ لَوْ يُوضَلُّونَكُمْ
يأهْلَ الْكِتب لِم
تَلْبِسُونَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَانْتُمْ تَعْلَمُونَ o وَقَالَتْ طَائِفَةٌ مِّنْ
اَهْلِ الْكِتُبِ اَمِنُوا بِالَّذِي أَنْزِلَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَجْهَ النَّهَارِ وَاكْفُرُوا أُخِرَةَ
لَعَلَّهُم يَرْجِعُونَ وَلَا تُؤْمِنُوا إِلَّا لِمَنْ تَبِعَ دِينَكُمْ ط - ال عمران : ٦٩، ٧١-٧٣
L
“হে ঈমানদারেরা ! আহলে কিতাবদের এক অংশ চায় যে কোনোভাবে তোমাদেরকে সত্য পথ থেকে হটিয়ে দিতে।----হে আহলে কিতাব ! কেনো তোমরা সত্যবাদীদের উপর মিথ্যাবাদীর রং ছড়িয়ে তাদেরকে বিতর্কিত করে তুলছো ? জেনে বুঝে কেনো সত্যকে গোপন করছো ? আহলে কিতাবদের মধ্য হতে একটি দল বলছে এ নবীকে মান্যকারীদের উপর যে হুকুম নাযিল হয়েছে তার উপর সকালে ঈমান আনো সন্ধ্যায় একে অস্বীকার করো। সম্ভবত এ পদ্ধতিতে এই লোকেরা তাদের ঈমান থেকে সরে পড়বে। লোকেরা পরস্পর আরো বলে নিজের ধর্মীয় লোকদের ছাড়া আর কারো কথা মানবো না।”-সূরা আলে ইমরান : ৬৯,৭১-৭৩
তাদের সাধারণ লোকদের অবস্থা
ইহুদী জাতির কিছু লোক ছিলো অজ্ঞ মূর্খ। তারাও বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার পোষণ করতো। তাদের সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে :
وَمِنْهُم أميونَ لا يَعْلَمُونَ الْكِتَبَ إِلا أَمَانِي وَإِنْ هُمُ الأيَظُنُّونَ )
“তাদের মধ্যে দ্বিতীয় এক শ্রেণীর লোক আছে যাদের কিতাবের জ্ঞান নেই । তারা নিজেদের ভিত্তিহীন আশা-আকাঙ্খা পোষণ করে বসে আছে। শুধু নিজেদের আন্দাজ অনুমানের উপর চলছে।”-সূরা আল বাকারা : ৭৮
তারা অজ্ঞতা মূর্খতার চরম সীমায় গিয়ে পৌছেছে। তাদের আচরণ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে
اِتَّخَذُوا أَحْبَارَهُم وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّنْ دُونِ اللّهِ.

१३

“তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের আলেম ও দরবেশ লোকদেরকে তাদের রব বানিয়ে নিয়েছে।”-সূরা আত তাওবা : ৩১
তাদের আচরণের বাড়াবাড়ি সম্পর্কে কুরআনে আরো বলা হয়েছে :
وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُوا الشَّيْطينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَنَ ، وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَنُ وَلَكِنَّ
الشَّيطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السّحْرَة وَمَا أُنْزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ
هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِمَنِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرُ،
L
فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ ، وَمَا هُمْ بِصَارِينَ بِهِ مِنْ اَحَدٍ إِلا بِإِذْنِ اللهِ ، وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ ، وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَهُ مَالَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنْفُسَهُمْ لَوْ كَانُوا
L
:
“তারা ঐসব জিনিসকে মানতে শুরু করলো, শয়তান যা সোলায়মানের রাজত্বের নাম নিয়ে পেশ করেছিলো। প্রকৃতপক্ষে সোলায়মান কখনো কুফরী অবলম্বন করেননি। কুফরী তো অবলম্বন করেছে সেই শয়তানগণ যারা লোকদেরকে যাদু শিক্ষাদান করছিলো। বেবিলনের হারুত, মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা কিছু নাযিল করা হয়েছিলো তারা তার প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলো। অথচ তারা (ফেরেশতারা) যখনই কাউকেও এ জিনিসের শিক্ষা দিতো, প্রথমেই স্পষ্ট ভাষায় হুশিয়ার করে দিতো দেখো, আমরা শুধু একটি পরীক্ষা মাত্র। তোমরা কুফরীর পথে নিমজ্জিত হয়ো না। এরপরও তারা এ ফেরেশতাদের নিকট হতে সেই জিনিসই শিখছিলো যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো যায় । অথচ একথা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া এ উপায়ে তারা কারো কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারতো না। কিন্তু এরপরও তারা এমন জিনিস শিখতো যা তাদের পক্ষে কল্যাণজনক ছিলো না বরং ছিলো ক্ষতিকর। তারা ভাল করেই জানতো এ জিনিসের খরিদ্দার হলে তাদের জন্য পরকালের কোনোই কল্যাণ নেই । তারা যে জিনিসের বিনিময়ে নিজেদের জীবন বিক্রয় করেছে, তা কতই না নিকৃষ্ট জিনিস। হায়! একথা যদি তারা জানতে, বুঝতে পারতো।”-সূরা আল বাকারা : ১০২


৭৩
এ আয়াতে বনী ইসরাঈল তথা ইহুদীদের যে অবস্থার কথা বলা হয়েছে তা হলো মাওলানা আবুল আ'লা মওদূদী রাহমাতুল্লাহ আলাইহির মতে- “বনী ইসরাঈল যে সময়ে বার্বেলে দাস ও বন্দী জীবনযাপন করছিলো সে সময়ে তাদের পরীক্ষার জন্য আল্লাহ তাআলা দু' ফেরেশতাকে প্রেরণ করেছিলেন। লূত আলাইহিস সালামের জাতির কাছে যেরূপ ফেরেশতাগণ সুদর্শন বালকরূপ ধারণ করে গিয়েছিলেন। এ ইসরাঈলীগণের কাছেও এভাবে ফেরেশতারা সম্ভবত পীর-ফকিরের রূপ ধারণ করে গিয়েছিলেন। সেখানে তারা হয়তো একদিন যাদুর বাজারে নিজেদের দোকান ফেঁদে বসেছিলেন ও অন্য দিকে তারা লোকদের কাছে যুক্তিজ্ঞান সহ সত্য পৌঁছে দিয়ে সতর্ক করার দায়িত্ব পূর্ণভাবে পালনের জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে সাবধান করে দিতেন যে, দেখো আমরা তোমাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। তোমরা তোমাদের পরকাল নষ্ট করো না । কিন্তু তারপরও লোকে তাদের পেশ করা সিফলী আমলিয়াত – যাদুর হীন কর্মকাণ্ড ও তাবিজ-তুমার মন্ত্রতন্ত্রের জন্য উন্মাদের মতো ছুটে আসতো ।'
দ্বীনের সাথে তাদের গাদ্দারীর কথা কুরআনে আরো বলা হয়েছে :
وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَى خَائِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلا قَلِيلاً مِّنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَح ط
“কিতাবের যে জ্ঞান তাদেরকে দেয়া হয়েছিলো তার অধিকাংশই তারা ভুলে গিয়েছিলো। প্রায় প্রত্যেক দিনই তাদের কোনো না কোনো খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতার সন্ধান পাওয়া যেতো। তাদের খুব কম লোকই এ দোষ হতে মুক্ত ছিলো।”-সূরা আল মায়েদা : ১৩
তাদের সম্পর্কে এ সূরায়ই আরো বলা হয়েছে :
وَتَرَى كَثِيرًا مِنْهُم يُسَارِعُونَ فِي الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاكْلِهِمِ السُّحْتَ ، لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ لَوْلا يَنْههُمُ الرَّبَّنِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ عَنْ قَوْلِهِمُ الْإِثْمَ وَأَكْلِهِم
السحتَ ، لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَصْنَعُونَ 0 - المائدة : ٦٢-٦٣
“তোমরা দেখতে পাও, এদের অনেক লোকই গুনাহ ও যুল্ম এবং খুব বেশী বাড়াবাড়ির কাজে চেষ্টা সাধনা করে বেড়ায়। হারাম মাল খায় । মোটকথা এরা যাকিছু করে তা খুবই গর্হিত। এদের আলেম, পীর পুরোহিতগণ তাদেরকে গুনাহর কথা বলা এবং হারাম মাল খাওয়া হতে কেনো বিরত রাখেন না ?”-সূরা আল মায়েদা : ৬২-৬৩

98

ইহুদীদের সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে :
لِلْكَذِبِ أَكْلُونَ لِلسُّحْتِ ط - المائدة : ٤٢ سَمَعُونَ
“এসব লোক মিথ্যা শ্রবণকারী ও হারাম মাল ভক্ষণকারী।”
-সূরা আল মায়েদা : ৪২
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا عَلَيْهِم طَيِّعِت أحلَّت لَهُم وَبِصَدِهِم عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ كَثِيرًا وَأَخْذِهِمُ الرِّبوا وَقَدْ نُهُوا عَنْهُ وَاكْلِهِمْ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ ط
“মোটকথা এ ইহুদী নীতি অবলম্বনকারী লোকদের এ যুল্মমূলক কাজের কারণে এবং এ কারণে যে, এরা আল্লাহর পথ হতে লোকদেরকে বিরত রাখে এবং সুদ গ্রহণ করে, যা হতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিলো ও লোকদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে। আমরা এমন অনেক পাক-পবিত্র জিনিসই তাদের প্রতি হারাম করে দিয়েছি।”
-সূরা আন নিসা : ১৬০-১৬১
ياَيُّهَا الرَّسُولُ لَا يَحْزُنُكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ مِنَ الَّذِينَ قَالُوا آمَنَّا بِأَفْوَاهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِنْ قُلُوبَهُمْ ، وَمِنَ الَّذِينَ هَادُوا ءِ سَمْعُونَ لِلْكَذِبِ سَمْعُونَ لِقَوْمٍ أُخَرِينَ * لَمْ يَأْتُوكَ - يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ مِنْ بَعْدِ مَوَاضِعِهِ ، يَقُولُونَ إِنْ
أُوتِيتُمْ هذَا فَخُذُوهُ وَإِن لَّمْ تُؤْتَوْهُ فَاحْذَرُوا - - المائدة : ٤١
“হে নবী সেসব লোক যারা কুফরীর পথে খুব দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে তারা যেনো তোমার দুঃখের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। তারা সেইসব লোক যারা মুখে মুখে বলে আমরা ঈমান এনেছি অথচ তাদের মন ঈমান আনেনি। অথচ তারা ঐসব লোক যারা ইহুদী হয়ে গেছে। যারা মিথ্যার জন্য- উৎকর্ণ হয়। এবং অন্য এমন লোকের জন্য, যারা তোমার কাছে কখনো আসেনি, তাদের জন্য কথা খোঁজ করে বেড়ায় । আল্লাহর কিতাবের শব্দসমূহকে এর আসল জায়গা নির্ধারিত হবার পরও প্রকৃত অর্থ হতে সরিয়ে দেয়। লোকদের বলে তোমাদের এই আদেশ দেয়া হলে তা মানবে, তা না হলে মানবে না।”-সূরা আল মায়েদা : ৪১
ইহুদী জাতির করুণ পরিণতি
আল্লাহর সাথে করা অনেক অঙ্গীকার ইহুদী জাতি ভঙ্গ করেছে। পরিণামে আল্লাহ তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিয়েছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া


*
৭৫
সাল্লামের আগমনের আগে ইহুদী জাতির লোকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে তার আগমন অপেক্ষায় ছিলো । কারণ তাদের নবী রাসূলগণ এ শেষ নবীর আগমন সম্পর্কে আগামবাণী দিয়েছিলেন। তারা তাড়াতাড়ি এ নবীর আগমনের জন্য দোয়াও করতো। তাহলে কাফেরদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। তাদের উত্থান শুরু হবে। মদীনাবাসী তাদের এসব কথার সাক্ষী। তারা জানতো তাদের প্রতিবেশী ইহুদীরা আগত নবীর আগমনের আশায় বেঁচে ছিলো। তারা বলতো — এখন তোমাদের যার যা খুশী আমাদের উপর যুলম করতে থাকো। যখন ঐ নবী আগমন করবেন তখন আমরা যালিমদেরকে দেখে নিবো । মদীনাবাসীরা এসব কথা শুনেছে। তাই যখন তারা শেষ নবীর কথা শুনলো পরস্পর বলতে লাগলো
দেখো এ ইহুদীরা যেনো আমাদের আগে বাজিমাত করতে না পারে । চলো আমরাই আগে গিয়ে এ নবীর উপর ঈমান আনি। কিন্তু তাদের কাছে এটা বড় আশ্চর্যজনক ঘটনা হিসাবে দেখা দিলো যখন এ ইহুদীরা যারা শেষ নবীর আগমনে অধিকর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো। তারাই তাঁর আগমনের পর তাঁর বিরোধিতায় সকলের চেয়ে অগ্রগামী ছিলো।
কুরআনে বলা হয়েছে, শেষ নবীকে তারা চিনেও গেছে—এ কথার অনেক প্রমাণ আছে । সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সাক্ষ হলো উম্মুল মু'মিনীন হযরত সাফিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহার। তিনি একজন ইহুদী আলেমের কন্যা ছিলেন। তাঁর চাচাও একজন ইয়াহুদী আলেম ছিলেন। হযরত সাফিয়া বলেছেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় আগমনের পর আমার বাবা ও চাচা উভয়েই তাঁর সাথে দেখা করলেন । অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাঁর সাথে কথা বললেন । এরপর বাড়ী ফিরে এলে আমি আমার নিজ কানে তাদের উভয়ের কথাবার্তা
শুনলাম ।
চাচা বললেন, তাহলে ইনিই কি সেই নবী যার আগমনের কথা আমাদের আসমানী কিতাবে দেয়া হয়েছে। আমার বাবা উত্তরে বললেন, আল্লাহর কসম ইনিই সেই নবী। চাচা বললেন, এতে আপনার পূর্ণ বিশ্বাস আছে ? আমার পিতা বললেন, হাঁ, অবশ্যই আছে। চাচা বললেন, তাহলে এখন আপনার ইচ্ছা কি ? উত্তরে আমার পিতা বললেন, যতদিন এ দেহে জীবন থাকবে ততদিন এ নবীর বিরোধিতা করে যাবো। এ নবীর দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছাতে দেবো না।—ইবনে হিশাম ২য় খণ্ড
তাদের এসব বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও ওয়াদা সম্পর্কে কুরআনে পাকে আল্লাহ পাক বলেছেন ঃ

৭৬

فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ لَعَنْهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَسيَةٌ : - المائدة : ۱۳
C
“অতপর তাদের নিজেদেরই ওয়াদা ভংগ করাই ছিলো তাদের বড় অপরাধ । এ অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন আমি তাদেরকে আমার রহমত থেকে দূরে নিক্ষেপ করেছি। তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি।”
-সূরা আল মায়েদা : ১৩
ط
فَنَبَنُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً - - ال عمران : ۱۸۷
“কিন্তু তারা কিতাবের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। খুব সামান্য মূল্যে একে বিক্রি করে দিয়েছে।”-সূরা আলে ইমরান : ১৮৭
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَبِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ، فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذلِكَ مِنْكُمْ
الأخرى فِي الْحَيَوةِ الدُّنْيَا ، وَيَومَ الْقِيمَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِ الْعَذَابِ ط
“তোমরা কি কিতাবের এক অংশের উপর ঈমান আনছো । অপর অংশের সাথে কুফরী করছো। তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের শাস্তি এছাড়া আর কি হতে পারে যে, দুনিয়ায় তারা লাঞ্ছিত এবং অপমানিত হবে। আর পরকালে দগ্ধিভূত আযাবে ফিরিয়ে দেয়া হবে।”-সূরা আল বাকারা : ৮৫
وَلَقَدْ أَتَيْنَا مُوسَى الكتب وقَفَّيْنَا مِنْ بَعْدِهِ بِالرُّسُلِ : وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَريم
ز
الْبَيِّنْتِ وَأَيَّدنهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ افَكُلَّمَا جَاءَكُمْ رَسُولُ بِمَا لا تَهْوَى أَنْفُسُكُمُ
Ja
اسْتَكْبَرْتُمْ : فَفَرِيقًا كَذَّبْتُمْ وَفَرِيقًا تَقْتُلُونَ ٥ - البقرة : ۸۷
ج
ز
“আমি মূসাকে কিতাব দান করেছি। অতপর একের পর এক রাসূল পাঠিয়েছি। সর্বশেষ ঈসাকে স্পষ্ট দলিল সহকারে পাঠিয়েছি এবং পবিত্র ‘রূহ’ দিয়ে তাকে সাহায্য করেছি। এরপর এটা তোমাদের কি আচরণ যে, যখনই কোনো নবী তোমাদের প্রবৃত্তির ইচ্ছার বাইরে কোনো জিনিস নিয়ে এসেছে তখনই তোমরা তাঁর মুকাবিলায় বিদ্রোহ করে বসেছো। কাউকে মিথ্যাবাদী বলেছো কাউকে হত্যা করেছো।”-সূরা আল বাকারা : ৮৭
وَقَالُوا قُلُوبُنَا غُلْفٌ ، بَل لَّعَنَهُمُ اللهُ بِكُفْرِهِم - البقرة : ٨٨
“তারা বলে আমাদের মন সুরক্ষিত আছে। প্রকৃত কথা হলো কুফরীর কারণে তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হয়েছে।”

૧૧

ولَمَّا جَاءَهُمْ كِتَبُ مَنْ عِنْدِ اللهِ مُصَدِّقُ لِمَا مَعَهُمْ * وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا ، فَلَمَّا جَاءَ هُمْ مَّا عَرَفُوا كَفَرُوا
به ن فَلَعْنَةُ
“এবং এখন একটি কিতাব আল্লাহর কাছ থেকে তাদের কাছে এসেছে। এ কিতাবের সাথে তারা কি ব্যবহার করলো ? অথচ তাদের কাছে আগ থেকে বিদ্যমান কিতাব এ কিতাবের সত্যতা প্রমাণ করে। অথচ তার আগমনের আগে তারা কাফেরদের মুকাবিলায় বিজয় ও সাহায্যের জন্য দোয়া চাইতো। কিন্তু যখনই ঐ জিনিস এসে গেলো যা তারা বিলক্ষণ চিনে গেছে । তখন তারা একে মেনে নিতে অস্বীকার করলো । তাই এসব কাফেরদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হয়েছে।”
-সূরা আল বাকারা : ৮৯
بِئْسَمَا اشْتَرُوا بِهِ أَنْفُسَهُمْ أَنْ يَكْفُرُوا بِمَا أَنْزَلَ اللهُ بَغْيًا أَنْ يُنَزَلَ اللهُ مِنْ
فَضْلِهِ عَلَى مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ، فَبَاءُ وَ بِغَضَبٍ عَلَى غَضَبٍ ، وَلِلْكَفِرِينَ
:
-
5.25
“তারা যে জিনিসের সাহায্যে মনের সান্ত্বনা লাভ করে তা কতই না নিকৃষ্ট। আর তাহলো, আল্লাহ যে বিধান নাযিল করেছেন, তারা শুধু এ জিদের বশবর্তী হয়ে তা মেনে নিতেই অস্বীকার করছে যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের মধ্যে নিজেদের মনোনিত একজনকে তার অনুগ্রহ (ওহী ও নবুয়াত) দান করেছেন। অতএব তারা গজবের পর গজবের উপযুক্ত হয়ে গেলো। তাই এ ধরনের কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার কঠিন অপমানকর শাস্তি নির্দিষ্ট রয়েছে।”-সূরা আল বাকারা : ৯০
এসবের কারণ হলো—ইহুদীদের মনের কামনা বাসনা ছিলো ভবিষ্যতে যে নবী আগমন করবেন তিনি তাদের বনী ইসরাঈল বংশে জন্মগ্রহণ করবেন। কিন্তু তাদের কামনা বাসনার উল্টো সেই নবী যখন অন্য আর এক বংশে জন্মগ্রহণ করলেন, যে বংশকে তারা তাদের নিজেদের তুলনায় হীন ও ছোট মনে করতো । তখন তারা তাকে মানতে অস্বীকার করলো। তাদের মনোভাবটা এমন ছিলো যে, আল্লাহ তাদের কাছে জিজ্ঞেস ও পরামর্শ করে তাদের মতামত অনুযায়ী নবী পাঠালে তবেই তা ঠিক হতো। তারাও তা মেনে নিতে পারতো ।


فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِّيْثَاقَهُمْ وَكُفْرِهِمْ بِأَيْتِ اللَّهِ وَقَتْلِهِمُ الْأَنْبِيَاء بِغَيْرِ حَقٍّ وَقَوْلِهِمْ قُلُوبُنَا غُلفُ ، بَلْ طَبَعَ اللهُ عَلَيْهَا بِكُفْرِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُونَ إِلا قَلِيلاً وَبِكُفْرِهِمْ
ط
وَقَوْلِهِمْ عَلَى مَرْيَمَ بُهْتَانًا عَظِيمًا ، وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيحَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ اللَّهِ ، وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلكِنْ شُبِّهَ لَهُمْ ، وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ ، مَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلم إلا اتِّبَاعَ الظَّنِّ ، وَمَا قَتَلُوهُ يقينًا بَلْ رَفَعَهُ اللهُ إِلَيْهِ ، وَكَانَ اللهُ عَزِيزًا حَكِيمًا 0 النساء : ١٥٨١٥٥
“অবশেষে তাদের ওয়াদা ভঙ্গের কারণে, আর এ কারণে যে, তারা আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা বলেছে নবী-রাসূলগণকে অকারণে হত্যা করেছে এবং এতদূর পর্যন্ত বলেছে যে, আমাদের মন আবরণের মধ্যে সুরক্ষিত। প্রকৃত ঘটনা তাদের কুফরী নীতির কারণে আল্লাহ তাদের মনের উপর মোহর মেরে দিয়েছেন। তাই তাদের খুব কম লোকই ঈমান আনে । এরপর তারা নিজেদের কুফরীকাজে এতবেশী বেড়ে গেলো যে তারা মারইয়ামের উপর কঠিন অপবাদ আরোপ করলো এবং নিজেরা বললো, “আমরা মসিহ ঈসা ইবনে মারইয়াম আল্লাহর রাসূলকে কতল করে দিয়েছি!” অথচ প্রকৃতপক্ষে ইহুদীরা না তাঁকে কতল করতে পেরেছে আর না শূলে চড়াতে পেরেছে। বরং গোটা ব্যাপারটাই তাদের নিকট গোলক- ধাঁধায় পরিণত করে দেয়া হয়েছে। যারা এ ব্যাপারে মতভেদ করেছে তারাও সন্দেহে লিপ্ত আছে। এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো জ্ঞান নেই । শুধু আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতেই কথা বলছে। তারা মসিহকে কতল করেছে, নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারছে না। বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের নিকট উঠিয়ে নিয়ে গেছেন । আল্লাহ খুবই শক্তিশালী ও বড় কৌশলী।”
-সূরা আন নিসা : ১৫৫-১৫৮
ইহুদী জাতি প্রকৃতপক্ষে দুনিয়ার সকল বাতিল পূজারী জাহিলদের মতো তাদের বাপ-দাদা হতে প্রাপ্ত রেওয়াজ-রসম, ধারণা, জাতীয়তা ইত্যাদি নিয়ে গৌরববোধ করতো । তারা বলতো আমাদের বাপ দাদা হতে পাওয়া আকীদা- বিশ্বাস এত মজবুত যে, এসব হতে আমাদেরকে সরানো সম্ভব নয় । আল্লাহর তরফ থেকে আগত নবী-রাসূলগণ যখনই তাদেরকে তাদের ভুল বুঝাবার চেষ্টা করেছেন তখনই তারা একই জবাব দিয়েছে। তারা বলেছে, তোমরা যতো দলিল প্রমাণই নিয়ে এসো না কেন, যত আয়াতই পেশ করো না কেন আমরা


৭৯
তোমাদের কোনো কথায় কান দেবো না। যাকিছু আমরা মানতাম ও করে আসছিলাম তা-ই আমরা মানবো ও করতে থাকবো। অর্থাৎ আমরা আমাদের আকীদায় ও খেয়াল খুশিতে এত মজবুত যে, তোমরা যা-ই বলো এতে আমাদের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না। সকল যুগের হঠধর্মী ও হঠকারী লোকরাই এ ধরনের জাহেলী ধারণা অন্ধ জাতীয়তার শিকারে পরিণত হতো । তারা একে তাদের আকীদার মযবুতী নাম দিয়ে তাদের গুণ-বৈশিষ্ট্য হিসাবে গণ্য করতো । অথচ মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় দোষ আর কিছু হতে পারে না। নিজেদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আকীদা ও চিন্তাধারার উপর দৃঢ় থাকার সিদ্ধান্তের চেয়ে আর কোনো দোষ বড় হতে পারে না। তা চাই যত বড় ও শক্তিশালী দলিল দিয়ে প্রমাণ করা হোক না কেন ।
হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের ব্যাপারে ইহুদী জাতির ভিতরে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ সংশয় ছিলো না। যেদিন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন, ঐদিনই আল্লাহ তাআলা গোটা ইহুদী জাতিকে এ ঘটনার সাক্ষী বানিয়ে রেখেছিলেন। আল্লাহ বলেছিলেন, এ একটা স্বাভাবিক নিয়মের বিপরিত নিয়মের ব্যক্তিত্বের সন্তান। যার জন্ম মোজেযা বা অলৌকিক ঘটনার ফল । এটা কোনো নৈতিক অপরাধের ফসল নয়।
বনী ইসরাঈলের সর্বশ্রেষ্ঠ শরীফ ও বিখ্যাত ধর্মীয় পরিবারের একজন অবিবাহিতা কুমারী কন্যা কোলে বাচ্চা নিয়ে যখন ঘরে ফিরে আসলো । জাতির ছোট বড় হাজার হাজার মানুষ মনে প্রশ্ন নিয়ে তার ঘরে এসে ভীড় জমালো । তখন ঐ কুমারী মাতা তাদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চুপচাপ সদ্যপ্রসূত কোলের বাচ্চার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বললেন। এ নবজাত সন্তান তোমাদের প্রশ্নের জবাব দিবে। গোটা সমাবেশ স্তম্ভিত হয়ে গেলো। তারা বললো—কোলের শিশুর কাছে আমরা জিজ্ঞেস করবো কি ?
কোলের শিশু আর কাউকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অকস্মাৎ মুখ ফুটে অত্যন্ত স্পষ্ট বলিষ্ঠ ও সাবলীল মিষ্টি ভাষায় আগত জনসমাবেশকে উদ্দেশ করে বলে উঠলো, “ইন্নি আবদুল্লাহ। আতানিয়াল কিতাবা ওয়া যায়ালানী নাবীয়্যা”—“আমি আল্লাহর বান্দা। আল্লাহ আমাকে কিতাব দান করেছেন। তিনি আমাকে বানিয়েছেন নবী । ”
এভাবে আল্লাহ তাআলা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের ব্যাপারে সন্দেহ সংশয়ের মূল শিকড় চিরদিনের জন্য কেটে দিলেন। এ কারণেই হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের যৌবন বয়সে পৌঁছা পর্যন্ত কখনো কেউ হজরত

bo

মারইয়ামের ব্যাপারে ব্যাভিচারের অভিযোগ আনেনি। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকেও কেউ কখনো অবৈধ জন্মের অপবাদ দেয়নি।
কিন্তু হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের বয়স ত্রিশ বছরে পৌঁছলে তিনি যখন নবুয়াতের কাজের সূচনা করলেন, তিনি যখন ইহুদী জাতিকে তাদের খারাপ কাজে বাধা দিতে শুরু করলেন। ইহুদী ওলামা ফোকাহাদের রিয়া অহমিকা-অহংকার সংশোধন করার জন্য বললেন। যখন তাদের সাধারণ ও বিশেষ বিশেষ লোকজনকে তাদের ডুবে থাকা চারিত্রিক অধঃপতনের খবর দিলেন । যখন এ বিপজ্জনক পথে নিজের জাতিকে আহবান জানাতে লাগলেন, যে পথে আল্লাহর দ্বীনকে বাস্তবে কায়েম করার জন্য হরেক রকমের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিলো। হতে হয়েছিলো প্রতি দিক ও বিভাগে শয়তানী শক্তির সাথে লড়াই করার সম্মুখীন। ঠিক তখনি এ নির্বাক অপরাধীর সত্যতার আওয়াজকে দাবীয়ে দেবার জন্য সকল প্রকার ষড়যন্ত্রের অস্ত্র ব্যবহার ও ষড়যন্ত্র করার জন্য ইহুদী জাতি মাঠে অবতীর্ণ হয়েছিলো। এ সময় তারা এমন সব কথা বলতে শুরু করলো যা ত্রিশ বছর পর্যন্ত বলেনি। তারা আগে কখনো বলেনি, বিবি মারইয়াম, আল্লাহ মাফ করুক, ব্যভিচারীণী ছিলেন । অথবা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ব্যভিচারীর সন্তান। অথচ এ আলেমরা পূর্ণ আস্থার সাথে জানতেন, এই মা-ছেলে এসব কালিমা থেকে সর্বোতভাবে ছিলেন পবিত্র ।
তাই ইহুদী জাতির মনে বিদ্যমান এ অপবাদ কোনো সন্দেহ সংশয় সৃষ্টির ফল নয় । বরং তা ছিলো একটি খাস অপবাদ। জেনে বুঝে সুচিন্তিতভাবে তারা সত্যের বিরোধিতা করার জন্য এ কৌশল গড়ে নিয়েছিলো। এজন্যই আল্লাহ তাদের এ কর্মকাণ্ডকে যুল্ম ও মিথ্যা না বলে কুফরী কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ এ অভিযোগের আসল উদ্দেশ্য ছিলো আল্লাহর দ্বীনের পথ রুদ্ধ করা- -একজন নিষ্পাপ নারীর উপর অভিযোগ উত্থাপন করা মূলতঃ
উদ্দেশ্য ছিলো না ।
তাদের ইচ্ছাকৃত অপরাধের দুঃসাহস এতদূর বেড়ে গিয়েছিলো যে, রাসূলকে তারা রাসূল জানতো। এরপর তাকে হত্যা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতো। এরপর আবার গৌরবের সাথে আস্ফালন করতো—আমরা আল্লাহর রাসূলকে হত্যা করেছি। হযরত ঈসা মসিহ আলাইহিস সালামের নবুয়াতের ব্যাপারে ইহুদী জাতির মধ্যে আসলেই কোনো সন্দেহ ছিলো না। তাঁর নবুয়াতের ব্যাপারে তারা যে স্পষ্ট দলিল পেয়েছে ও দেখেছে, তাতে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম যে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, এ ঘটনা একবারেই


৮১
সন্দেহমুক্ত হয়ে গিয়েছিলো। তাই ইহুদীরা যা তাঁর সাথে করেছে, ভুল বুঝাবুঝির কারণে করেনি। বরং তারা ভালভাবেই জানতো যে, তারা এ অপরাধ ঐ ব্যক্তির সাথে করছে যিনি আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে নবী হয়ে
এসেছেন।
কোনো জাতি কোনো ব্যক্তিকে নবী হিসাবে জেনে মেনে আবার তাকে হত্যা করে ফেলা তো দৃশ্যত খুবই আশ্চর্য ব্যাপার। কিন্তু যে জাতি অবনতি ও ধ্বংসের শেষ সীমায় পৌঁছে যায় তাদের কাজ ও আচার আচরণের কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে না। তারা এমন কোনো লোককে সহ্য করতে পারে না যারা তাদের অপরাধের চিত্র তুলে ধরে। তাদেরকে অবৈধ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে। এ ধরনের লোক নবী হলেও সবসময় ভ্রষ্ট জাতির লোকেরা এদেরকে জেলে পুরে ও হত্যার শাস্তি দেয় ।
তালমুদে বর্ণিত হয়েছে। বাদশা বুখতে নসর বায়তুল মোকাদ্দাস জয় করার পর হায়কেলে সুলাইমানীর মধ্যে প্রবেশ করে চারিদিক দেখতে লাগলেন । সেখানে ভ্রমণের সময় তিনি কোরবানী গাহের একেবারেই সামনে একটি জায়গায় দেয়ালের মধ্যে একটি তীরের নিশান দেখতে পেলেন। তিনি ইহুদীদেরকে এটা কিসের নিশান জিজ্ঞেস করলে তারা বললো – “এখানে জাকারিয়া নবীকে আমরা হত্যা করেছি। খারাপ কাজের ব্যাপারে আমাদেরকে জাকারিয়া ভর্ৎসনা করতো। অবশেষে আমরা অতীষ্ট হয়ে তাকে মেরে ফেলেছি।'
ইহুদী জাতির বেঈমানী ও বিশ্বাসঘাতকতার এসব রেকর্ড দেখার পর এটা কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার নয় যে, তারা তাদের ধারণায় হযরত ঈসা মসিহকে শূলে চড়াবার পর বুকে হাত রেখে বলেছিলো – 'আমরা আল্লাহর রাসূলকে হত্যা করেছি।'
প্রকৃতপক্ষে তারা হযরত ঈসা মসিহকে হত্যা করতে পারেনি। এখানে আল্লাহর কুরআন বলছে, হযরত মসিহকে শূলে চড়াবার আগেই উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। ইহুদী ও খৃস্টান উভয় জাতিই বিশ্বাস করছে যে, হযরত ঈসা মসিহ শূলে নিজের জীবন দিয়েছেন। কিন্তু এ বিশ্বাস তাদের ভুল ধারণার উপর ভিত্তি করে স্থাপিত হয়েছে। কুরআন ও বাইবেলের তুলনামূলক আলোচনা করলে একথা বুঝা যায়, “পিলাতুসের” আদালতে তো হযরত ঈসাকেই পেশ করা হয়েছিলো। কিন্তু যখন তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনানো হলো এবং ইহুদীরা মসিহর মতো একজন মহাসম্মানী ও পবিত্র লোকের তুলনায় একজন ডাকুর জীবনকে বেশী মূল্যবান মনে করলো। তারা সত্যের সাথে শত্রুতা ও বাতিলকে

82

ভালবাসার উপর তাদের সীল-মোহর লাগিয়ে দিলো তখন কোনো সময়ে সম্ভবত আল্লাহ তাআলা হযরত মসিহকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন। পরে ইহুদীরা যে ব্যক্তিকে শূলে চড়িয়েছিলো তিনি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ছিলেন না । বরং অন্য কেউ ছিলেন । যাকে কোনো অজানা কারণে ইহুদীরা ঈসা ইবনে মারইয়াম মনে করে নিয়েছিলো। এরপরও তাদের অপরাধ ওর চেয়ে কম ছিলো না। কারণ যাকে তারা কাঁটার তাজ পরিয়েছিলো। যার মুখে থু থু মেরেছে। যাকে লাঞ্ছনার সাথে শূলে চড়িয়েছে। তাকে তারা ঈসা ইবনে মারইয়ামই মনে করেছিলো। এখন আমাদের পক্ষে একথা জানার কোনো উপায় উপকরণ নেই যে, ব্যাপারটি কিভাবে সংশয়যুক্ত হয়ে গেলো । তাই শুধু আন্দাজ অনুমান ও ধারণার উপর ভিত্তি করে বলা যায় না যে, সন্দেহ সংশয় কেমন ছিলো যার ভিত্তিতে ইহুদীরা বুঝেছিলো তারা ঈসা ইবনে মারইয়ামকে শূলে দিয়েছিলো অথচ ঈসা ইবনে মারইয়াম তাদের হাত থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন ।
‘মতভেদকারী’ অর্থ হলো খৃস্টান। ঈসা আলাইহিস সালামের শূলে চড়ার ব্যাপারে তাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ কোনো একক মত নেই। বরং বিশটি মত আছে। মতের এত আধিক্যই প্রমাণ করে, প্রকৃত ব্যাপারটি তাদের নিকট সন্দেহযুক্ত। এদের মধ্যে কেউ বলে শূলে যাকে চড়ানো হয়েছে তিনি মসিহ ছিলেন না। বরং মসিহ রূপে অন্য কেউ ছিলো। যাকে ইহুদী ও রোমক সৈনিকরা লাঞ্ছনার সাথে শূলে দিয়েছিলো। আর মসিহ আলাইহিস সালাম
ওখানেই কোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে তাদের মূর্খতা ও আহম্মকী দেখে হাসছিলেন । কেউ বলে, শূলে মসিহকেই চড়ানো হয়েছিলো। কিন্তু তার মৃত্যু শূলে হয়নি। শূল থেকে নামাবার পরও তার দেহে জীবন ছিলো। আবার কেউ বলে তাঁর মৃত্যু শূলেই হয়েছিলো কিন্তু তারপর জীবিত হয়ে উঠেছিলেন। এরপর কম বেশ প্রায় দশবার তার বিভিন্ন সাথীর সাথে তিনি দেখা করেছেন ও কথাবার্তা বলেছেন। কেউ বলে, মসিহর দৈহিক মৃত্যু শূলেই হয়েছিলো । তাকে দাফনও করা হয়েছিলো কিন্তু আল্লাহ প্রদত্ত রূহ যা তার মধ্যে বাকী ছিলো তা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আবার কেউ বলে, মৃত্যুর পরে মসিহ স্বশরীরে জীবিত হয়ে উঠেন এবং স্বশরীরেই তাকে উঠিয়ে নেয়া হয়। একথা স্পষ্ট যে, যদি তাদের কাছে প্রকৃত ঘটনা জানা থাকতো তাহলে এতো মতামত গজিয়ে উঠতো না ।
হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের শূলে মৃত্যুর ব্যাপারে ওটাই সবচেয়ে প্রকৃত ও সত্য কথা যা আল্লাহ পাক বলেছেন । এতে মজবুত ও বিস্তৃতভাবে যে কথা বলা হয়েছে তাহলো, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করার


৮৩
ব্যাপারে ইহুদীরা সফল হতে পারেনি। আর আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। এখন কিভাবে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন, এ নিয়েই শুধু প্রশ্ন। এ বিষয় কুরআনে কোনো বিশদ আলোচনা নেই। কুরআন একথাও বলছেনা আল্লাহ তাকে স্বশরীরে রূহ সহ জমিন থেকে উঠিয়ে আসমানে কোথাও নিয়ে গেছেন। একথাও স্পষ্ট বলছে না যে, তিনি জমিনেই প্রাকৃতিক মৃত্যুবরণ করেছেন । শুধু রূহ আকাশে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। এ কারণে কুরআনের বুনিয়াদের উপর এসবের কোনো একটা দিক সম্পর্কে অকাট্যভাবে ‘হাঁ’ও বলা যায় না আবার 'না'ও বলা যায় না। কিন্তু কুরআনের বর্ণনা ভঙ্গি হতে স্পষ্টভাবে অনুভূত হয় যে, আকাশে উঠিয়ে নিবার ধরন ও প্রকৃতি যা-ই হোক সর্বাবস্থায় আল্লাহ পাক মসিহ আলাইহিস সালামের ব্যাপারে এ ধরনের কোনো একটা ঘটনা অবশ্যই ঘটিয়েছেন, যে ঘটনা অস্বাভাবিক ধরনেরই হবে। এ অস্বাভাবিকভাবে প্রকাশ তিনটি জিনিস দিয়ে হয় ।
এক ঃ খৃস্টানদের মধ্যে আগ থেকেই ঈসা মসিহ আলাইহিস সালামের দেহ রূহ সহ উঠিয়ে নিয়ে যাবার আকীদা বিদ্যমান ছিলো। অনেকেই ঈসা আলাইহিস সালামকে 'ইলাহ' মানতো তার অন্যান্য কারণের মধ্যে এটাও একটা কারণ ছিলো । কিন্তু এরপরও কুরআন সুস্পষ্টভাবে যে শুধু এর প্রতিবাদ করে তা নয় বরং অবিকল ওই উঠিয়ে নেয়া 'রফয়ে' (Ascension) শব্দ ব্যবহার করেছে যা খৃস্টানরা এ ঘটনা বুঝাবার জন্য ব্যবহার করে থাকে । কুরআনের মতো কিতাবে মবিনের শান এটা হতে পারে না যে, কুরআন কোন্ ধারণা বা মতের প্রতিবাদ করতে চায় এদিকে আবার তার জন্য এমন শব্দ ব্যবহার করবে যা ওই মত বা ধারণাকে আরো শক্তিশালী করবে।
দুই : হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে ‘উঠিয়ে নিয়ে’ যাবার ব্যাপারটি যদি প্রত্যেক মৃত ব্যক্তিকে উঠিয়ে নিয়ে যাবার মতো হতো অথবা এর অর্থ যদি কেবল সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রেই উন্নতি বিধান হতো—যেমন হযরত ইদ্রিস আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছে, “রাফানাহু মাকানান আলীয়্যা—তাকে উচ্চস্থানে তুলে নিয়েছি।” তাহলে কথাটি বলার ধরন কখনই এরূপ হতো না । বরং বলা যেতে পারতো, নিশ্চয় তারা হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লামকে হত্যা করেনি। বরং তাঁকে জীবন্ত উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তারপর তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন । ইহুদীগণ তাঁকে লাঞ্ছিত করতে চেয়েছিলো। কিন্তু আল্লাহ তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন ।
তিন ঃ এ ‘উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া' যদি সাধারণ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। যেমন আমরা প্রচলিত ভাষায় প্রত্যেক মৃত্যু ব্যক্তিকে বলে থাকি, ‘আল্লাহ

৮৪

অমুককে উঠিয়ে নিয়েছেন, তাহলে এরপর ‘আল্লাহ বড় শক্তিশালী ও বড় কৌশলী' একথা বলা একেবারেই বেমানান হয়ে যায়। একথা তো শুধু এমন কোনো ঘটনার পরই বলা মাননসই ও সমীচীন হয় যে, ঘটনার মধ্যে আল্লাহ তাআলার যবরদস্ত কুদরাতের অস্বাভাবিক বিকাশ ঘটে ।
এর উত্তরে কুরআন থেকে কোনো দলিল প্রমাণ পেশ করতে বেশী হলে শুধু সূরায়ে আলে ইমরানে ৬ রুকূ'র ৫৫ আয়াতে আল্লাহর ব্যবহৃত ‘মুতাওয়াফফিকা' শব্দটি পেশ করা যেতে পারে ৷
কিন্তু এ শব্দটি স্বাভাবিক মৃত্যুর ব্যাপারে ব্যবহৃত হয় না। এর দ্বারা ‘রূহকবজ দেহ ও প্রাণ, উভয়ই কবজ করা বুঝায়। কাজেই উপরে বর্ণিত কারণগুলোর বেকার ঘোষণা করার জন্য এটা যথেষ্ট নয়। কেউ কেউ হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে প্রমাণ করার জন্য বাড়াবাড়ি ও জেদ ধরতে গিয়ে প্রশ্ন করে, “তাওয়াফ্ফা' শব্দটি স্বশরীরে উঠিয়ে নিয়ে যাবার অর্থে ব্যবহৃত হবার আর কোনো দৃষ্টান্ত আছে কি ? কিন্তু ভেবে দেখার ব্যাপার হলো স্বশরীরে উঠিয়ে নেবার ঘটনাটি গোটা মানব জাতির ইতিহাসে যখন একবার মাত্র ঘটেছে, তখন এর আরো দৃষ্টান্ত খোঁজা একেবারেই অর্থহীন। লক্ষ করার ব্যাপার হলো মূল অভিধানের দৃষ্টিতে ওই অর্থে মুতাওয়াফফিকা শব্দ ব্যবহার করার সুযোগ আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে বলতে হবে কুরআন পাক স্বশরীরে ‘উঠিয়ে নেবার' আকীদার বিরোধিতা না করে এ শব্দ ব্যবহার করে যেসব কারণে এ আকীদার সাহায্য হয় তার মধ্যে একটি কারণ যোগ করেছে। নতুবা মৃত্যুর জন্য ব্যবহৃত প্রচলিত শব্দ ব্যবহার না করে ‘ওফাতের' মতো দ্ব্যর্থবোধক শব্দ এখানে ব্যবহার কিছুতেই করা হতো না, যেখানে ‘স্বশরীরে উঠিয়ে নিয়ে যাবার আকীদা আগ থেকেই বিদ্যমান রয়েছে । যার কারণে হযরত ঈসার ‘ইলাহ' হবার ভ্রান্ত আকীদা জন্মেছিলো ।
এদিকে হযরত ঈসা বিন মারইয়াম আলাইহিস সালামের আবার দুনিয়ায় আগমন ও দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করা সম্পর্কে বহুসংখ্যক হাদীস স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে । সেসব হাদীস তাঁর ‘স্বশরীরে উঠিয়ে নেবার, এ আকীদাকে আরো বেশী শক্তিশালী ও মজবুত করে তোলো। এসব হাদীস থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের দ্বিতীয় আগমনের ব্যাপারটি অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় ।
এখন হযরত ঈসা বিন মারইয়াম আলাইহিস সালামের মৃত্যুর পর এ দুনিয়ায় আবার ফিরে আসা বেশী যুক্তিসংগত, না আল্লাহর জগতে কোথাও জীবিত থেকে ওখান হতে দ্বিতীয়বার দুনিয়ায় ফিরে আসা বেশী যুক্তিসঙ্গত তা প্রত্যেকেই চিন্তা করে দেখতে পারেন।


৮৫
ইহুদী জাতি এভাবে কেবল নিজেরা আল্লাহর পথ থেকে বিরত থেকে ক্ষান্ত হয়নি বরং অন্যান্যদেরকেও আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। দুনিয়ার মানুষকে পথভ্রষ্ট ও গুমরাহ করার জন্য আজ পর্যন্ত যত আন্দোলন ও সংগ্রামই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তার প্রত্যেকটির পেছনেই এ অভিশপ্ত ইহুদী জাতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ কাজ করে আসছে। তারা মাথা খাটিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে অর্থ লগ্নি করে, সুচিন্তিতভাবে পরিকল্পনা তৈরী করে ইসলাম ও মুসলিম দুশমনির পুঁজি জুগিয়ে যাচ্ছে ।
অপরদিকে সত্য পথের দিকে আহবান জানাবার তথা ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাত প্রতিষ্ঠার যত আন্দোলন গড়ে উঠেছে তার প্রত্যেকটির সামনেই ইয়াহুদী জাতি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এ হতভাগ্য ও অভিশপ্ত ইহুদী জাতি আল্লাহর কিতাব ও নবীগণের উত্তরাধিকার ছিলো। এ জাতির প্রত্যক্ষ মদদেই দুনিয়ায় ইসলামকে নিঃশেষ করে ফেলার ও বিপর্যয় সৃষ্টি করার জন্য কমিউনিষ্ট বা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো। তাদের নেতৃত্বেই এ আন্দোলন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিলো। দুনিয়ার ইতিহাসে সর্বপ্রথম আল্লাহকে অস্বীকার করা, আল্লাহর সাথে প্রকাশ্য শত্রুতা করা, আল্লাহর উপর ঈমান ভিত্তিক আদর্শ ইসলামকে ধ্বংস করার প্রকাশ্য সংকল্প নিয়ে যে আদর্শ ও রাষ্ট্র কায়েম হয়েছে তার উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা হলো হযরত মূসা আলাইহিস সালামেরই উম্মতের একজন। কমিউনিজমের পরে আধুনিক বিশ্বের গোমরহীর সর্বশ্রেষ্ঠ স্তম্ভ ফ্ৰয়েডিয় দর্শন। আর এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা ইহুদী বনী ইসরাঈল জাতিরই এক ব্যক্তি।-তাফহীমুল কুরআন
ইহুদীদের দূরভিসন্ধি বানচাল করে তাদের কবল থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে রক্ষা করা প্রসঙ্গে তফসীরে মাআরেফুল কুরআনে আছে :
আল্লাহ তাআলা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে হিফাজত করা প্রসঙ্গে পাঁচটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ওয়াদা ছিলো তাঁকে হত্যা করার কোনো সুযোগ ইহুদীদেরকে না দেয়া। বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে তুলে নিবেন ।
সূরা নিসায় এ সংক্রান্ত এক আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে—আল্লাহর ওয়াদা বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের হত্যা সংক্রান্ত ইহুদীদের মিথ্যা দাবী খণ্ডন করা হয়েছে। এখানে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে যে, “ওয়ামা কাতালুহু' ওয়ামা সালাবুহু ওয়ালাকিন শুব্বিহা লাহুম” —ওরা হযরত ঈসাকে হত্যাও করতে পারেনি। শূলেও চড়াতে পারেনি। মূলত তারা সন্দেহে পতিত হয়েছিলো।

৮৬

এখন প্রশ্ন হলো, সন্দেহ সৃষ্টি হলো কিভাবে ? কুরআনে বলা হয়েছে “ওয়ালাকিন শুব্বিহালাহুম”-তাদেরকে এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে ফেলে দেয়া হয়েছিলো। এ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমাম যাহ্হাক রাহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন ইহুদীরা যখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করতে বদ্ধপরিকর হলো। তখন তাঁর ভক্তবৃন্দ একস্থানে সমবেত হলেন। হযরত ঈসাও তখন সেখানে উপস্থিত হলেন। শয়তান ইবলিস রক্ত পিপাসু ইহুদী ঘাতকদেরকে হযরত ঈসার অবস্থানের ঠিকানা জানিয়ে দিলো। চার হাজার ইহুদী দুরাচার একযোগে সেই অবস্থানের জায়গা অবরোধ করলো। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তখন ভক্তবৃন্দকে বললেন, তোমাদের কেউ এ ঘর হতে বের হয়ে নিহত হওয়া এবং পরকালে বেহেশতে আমার সাথী হতে প্রস্তুত আছো কি ? জনৈক ভক্ত আত্মোৎসর্গের জন্য উঠে দাঁড়ালেন। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম নিজের জামা ও পাগড়ী তাঁকে পরিধান করালেন। অতপর তাঁকে ঈসা আলাইহিস সালামের সাদৃশ্য করে দেয়া হলো। যখন তিনি গৃহ থেকে বের হলেন। তখন ইহুদীরা তাকে ঈসা আলাইহিস সালাম মনে করে বন্দী করে নিয়ে শূলে চড়িয়ে হত্যা করলো। অপরদিকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা আসমানে তুলে নিলেন।-তাফসীরে কুরতবী
অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, ইহুদীরা ‘তায়তালানুস' নামক জনৈক নরাধমকে সর্বপ্রথম হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করার জন্য পাঠিয়েছিলো। কিন্তু ইতিপূর্বে আল্লাহ তাআলা তাকে আসমানে তুলে নেয়ায় সে তাঁর নাগাল পেলো না। বরং ইতিমধ্যে তাঁর নিজের চেহারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের মতো হয়ে গেলো। ব্যর্থ মনোরথ হয়ে সে যখন গৃহ থেকে বেরিয়ে এলো তখন অন্যান্য ইহুদীরা তাকেই ঈসা আলাইহিস সালাম মনে করে পাকড়াও করলো । শূলে চড়িয়ে তাকে হত্যা করলো ।-তাফসীর মাযহারী
এ দুটি বর্ণনার মধ্যে যে কোনোটিই সঠিক হতে পারে। কুরআনে করীম এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলেনি। অতপর প্রকৃত ঘটনা কেবল আল্লাহই জানেন । অবশ্য এ বিষয়ে বিভিন্ন রেওয়ায়েতের সমন্বয় বুঝা যায় । প্রকৃত ঘটনা ইহুদী খৃস্টানদের অজ্ঞাত ছিলো। তারা চরম বিভ্রান্তির আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়ে শুধু অনুমান করে বিভিন্ন উক্তি ও দাবী করছিলো। ফলে উপস্থিত লোকদের মধ্যেই চরম মতভেদ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিলো। তাই কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : "যারা ঈসা সম্পর্কে নানা মতভেদ করে নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে তারা সন্দেহে পতিত হয়েছে। তাদের কাছে এ সম্পর্কে কোনো সত্য নির্ভর জ্ঞান নেই। তারা শুধু অনুমান করে কথা বলে। তারা যে হযরত ঈসাকে হত্যা করেনি একথা সুনিশ্চিত । বরং আল্লাহ তাআলা তাকে নিরাপদে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন।”


৮৭
কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, সম্বিত ফিরে পাবার পর কিছু লোক বললো, আমরা তো নিজেদের লোককেই হত্যা করে ফেলেছি। কারণ নিহত ব্যক্তির মুখমণ্ডল হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের মতো হলেও তার অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গ ছিল অন্য রকম। তাছাড়া এ ব্যক্তি যদি ঈসা আলাইহিস সালাম হয় তবে আমাদের প্রেরিত লোকটি গেলো কোথায় ? আর এ ব্যক্তি আমাদের লোক হলে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামই বা গেলো কোথায়
আল্লাহ পরাক্রমশালী ও বড় কৌশলী। ইহুদীরা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করার যতো ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তই করুক না কেনো। সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তাআলা যখন তার হিফাজতের নিশ্চয়তা দিয়েছেন তখন তার অসীম কুদরাত ও অপার হিকমাতের সামনে ওদের চক্রান্তের কি মূল্য ? আল্লাহ তাআলা বড় প্রাজ্ঞ । তার প্রতিটি কাজের নিগূঢ় রহস্য বিদ্যমান রয়েছে। জড় পূজারী বস্তুবাদীরা যদি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে স্বশরীরে আসমানে উঠিয়ে নিবার সত্যটুকু উপলব্ধি করতে না পারে তবে তা তাদের দুর্বলতার কারণ ।
এদের ব্যাপারেই আল্লাহ পাক বলেছেন :
قُلْ هَلْ أُنَبِّئُكُم بِشَرِ مَنْ ذلِكَ مَثْوبَةً عِنْدَ اللهِ ، مَن لَّعَنَهُ اللهُ وَغَضِبَ عَلَيْهِ وَجَعَلَ مِنْهُمُ القردَةَ وَالْخَنَازِيرَ وَعَبَدَ الطَّاغُوتَ ، أُولَئِكَ شَرٌّ مَّكَانًا وَأَضَلُّ عَنْ
:
“বলো আমি কি ওই লোকদেরকে চিহ্নিত করবো যাদের পরিণতি আল্লাহর কাছে এ ফাসিকদের পরিণতির চেয়ে নিকৃষ্ট। তারা, যাদের উপর আল্লাহ লা'নত করেছেন। যাদের উপর আল্লাহর গজব ভেঙ্গে পড়েছে। যাদের মধ্য হতে বানর আর শূকর বানানো হয়েছে। যারা তাগুতের বন্দেগী করেছে তাদের অবস্থা আরো বেশী খারাপ । তারা সত্যের রাজপথ থেকে বহুদূরে সরে পড়েছে।”-সূরা আল মায়েদা : ৬০
এখানে স্বয়ং ইহুদী জাতির দিকে সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাদের ইতিহাস বলছে বারবার আল্লাহর গজব ও লা'নতের শিকার হয়েছে তারা। শনিবারে মাছ না ধরার আইন ভঙ্গ করার কারণে তাদের কাওমের বহু লোকের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। এমন কি তারা অধঃপতনের এমন নীচ পর্যায়ে নেমে গেছে যে, তাদেরকে তাগুতের দাসত্ব পর্যন্ত করতে হয়েছে। মোটকথা তোমাদের নির্লজ্জতার ও অপরাধমূলক কাজকর্মের কি কোনো শেষ আছে ?

৮৮

তোমরা নিজেরা ফাসেকী, শরীয়াত বিরোধী কার্যকলাপ ও চরম নৈতিক অধঃপতনের মধ্যে নিমজ্জিত আছো। আর যদি অন্য কোনো দল আল্লাহর উপর ঈমান এনে স্পষ্ট দ্বীনদারীর পথ অবলম্বন করে তাহলে তোমরা তার বিরোধিতায় উঠে পড়ে লেগে যাও ৷
এ ইহুদীদের ব্যাপারে কুরআনে আরো বলা হয়েছে :
وَستَلهُمْ عَنِ الْقَرْيَةِ الَّتِي كَانَتْ حَاضِرَةَ الْبَحْرِ إِذْ يَعِدُونَ فِي السَّبْتِ إِذْ
C
تَأْتِيهِمْ حِيتَانُهم يوم سَبْتِهِم سُرَّعًا ويوم لا يَسْبِتُونَ * لَا تَأْتِيهِمْ ، كَذلِكَ : نَبلُوهُم بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ ٥ - الاعراف : ١٦٣
“তাদের কাছ থেকে ওই বস্তিবাসীদের অবস্থাও কিছু জিজ্ঞেস করো, যারা সমুদ্র তীরে বাস করতো। তাদের ঐ ঘটনা স্মরণ করিয়ে দাও যে, ওখানকার লোকেরা সাতের দিনে (শনিবার) আল্লাহর হুকুমের বিরোধিতা করছিলো। সাতের দিনেই সমুদ্রের মাছ লাফিয়ে লাফিয়ে পাড়ে তাদের সামনে এসে পড়তো। সাতের দিন ছাড়া অন্য কোনোদিন আসতো না । এটা হতো এজন্য যে, আমি এদের নাফরমানীর জন্য এদেরকে পরীক্ষায় ফেলেছিলাম।”-সূরা আল আরাফ : ১৬৩
বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশের মতে বস্তিবাসীদের ওই স্থানটি ছিলো 'আয়লা’ ‘আয়লাত' বা ‘আয়লুত'। ইসরাঈলের ইহুদী রাষ্ট্র বর্তমানে এখানে এ নামে একটি বন্দর নির্মাণ করেছে। জর্দানের বিখ্যাত নদী বন্দর ‘আকাবা’ এর কাছেই রয়েছে। লোহিত সাগরের যে শাখাটি সিনাই উপদ্বীপের পূর্ব উপকূল ও আরবের পশ্চিম উপকূলের মাঝখানে একটি লম্বা উপসাগরের মতো দেখায় তার ঠিক শেষ মাথায় স্থানটি অবস্থিত। বনী ইসরাঈলের উত্থান যুগে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শাসন কেন্দ্র ছিলো। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম এ শহরেই তাঁর লোহিত সাগরের সামরিক বাণিজ্যিক নৌবহরের কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন ।
এখানে যে কথাটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, ইহুদীদের পবিত্র গ্রন্থসমূহে তার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে তাদের ইতিহাসও খামুশ । কিন্তু কুরআন মজীদে যেভাবে এ ঘটনাটিকে এখানে ও সূরা আল বাকারায় বর্ণনা করা হয়েছে তা থেকে পরিষ্কার বুঝা যায়, কুরআন নাযিলের সময় বনী ইসরাঈলীরা সাধারণভাবে এ ঘটনাটি সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত ছিলো । এটি একটি প্রমাণিত সত্য যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধিতার প্রশ্নে যেখানে মদীনার ইহুদীরা কোনো একটি সুযোগও হাতছাড়া


৮৯
হতে দিতো না । সেখানে কুরআনের এ বর্ণনার বিরুদ্ধে তখন আদৌ কোনো আপত্তিই তোলেনি ।
‘সাবৃত্ত' অর্থ শনিবার। বনী ইসরাঈলদের জন্য এ সাতের দিনকে পবিত্র দিন গণ্য করা হয়েছিলো। মহান আল্লাহ এ দিনটিকে নিজের ও বনী ইসরাঈলীদের সন্তান সন্ততিদের মধ্যে সম্পাদিত একটি স্থায়ী অঙ্গীকার গণ্য করে জোর দিয়েছিলেন যে, এদিন কোনো জাগতিক কাজ করা যাবে না । ঘরে আগুন পর্যন্ত জ্বালানো যাবে না। গৃহপালিত পশু এমন কি চাকর-বাকর, দাস- দাসীদের সেবাও গ্রহণ করা যাবে না। যে ব্যক্তি এসব নিয়ম লংঘন করবে তাকে হত্যা করা হবে। কিন্তু কিছুদিন পরই ইহুদীরা এ আইন লংঘন করতে থাকে। ইয়ারমিয়াহ নবীর' যুগে লোকেরা খাস জেরুসালেমের প্রধান দরজাগুলো দিয়ে এ দিনে আসবাবপত্র নিয়ে চলাফেরা করতো। তাই ইয়ারমিয়াহ নবী ইহুদীদেরকে সতর্ক করে দিলেন। তিনি বললেন, তোমরা যদি এভাবে প্রকাশ্যে শরীয়াতের বরখেলাপ কাজ করো তাহলে জেরুসালেম আগুনে জ্বলে যাবে। এ নবীর কাল ছিলো খৃস্টপূর্ব ৬২৮ ও ৫৮৬ সালের মাঝামাঝি সময়। হযরত যিহিষ্কেল নবীও ইহুদীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছিলেন । শনিবারের হুকুম অমান্য করাকে ইহুদীদের একটি জঘন্য জাতীয় অপরাধ হিসাবে যিহিষ্কেল নবীর গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত যিহিষ্কেল নবীর আমল ছিলো খৃস্টপূর্ব ৫৯৫ হতে ৫৩৬ সাল। এ ঘটনা থেকে বলা যেতে পরে যে, কুরআনেও যে “ইয়াওমুস সাবৃতের’ ব্যাপারে যে ঘটনাটির কথা বলা হয়েছে সম্ভবতঃ এটাও ওই একই কালের ঘটনা।
কোনো ব্যক্তি বা দলের মধ্যে পথভ্রষ্টতা ও নাফরমানী বাড়তে থাকলে তাকে আরো বেশী করে ভ্রান্ত পথে চলা ও নাফরমানী করার সুযোগ দিয়ে আল্লাহ তাআলা মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। মানুষকে পরীক্ষা করার এটাও আল্লাহর একটা পদ্ধতি। এতে মানুষের মধ্যে যেসব কাজ করার ঝোঁকপ্রবণতা থাকে তা যেনো পরিপূর্ণভাবে বেরিয়ে যায়। যেসব অপরাধে মানুষ নিজেকে কলুষিত করতে চায় তা করার সুযোগ না পাবার জন্য যেনো তা হতে বিরত থেকে না যায়। ইহুদী জাতিকেও আল্লাহ তাআলা সকল প্রকার অপরাধ করার সুযোগ দিয়ে তাদের কালিমা লিপ্ত জীবনের সকল মুখোশ উন্মোচন করে দেন । আল্লাহ তাআলা ইহুদীদের ব্যাপারে আরো বলেছেন :
وَإِذْ قَالَتْ أُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْمَا لان اللهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا
L
شَدِيدًا ، قَالُوا مَعْذِرَةٌ إِلى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَه فَلَمَّا نَسُوا مَا ذَكَرُوا بِه

৯০

انْجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَونَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا بِعَذَابٍ بَئِيسِ بِمَا كَانُوا
190-196: 15 O
“তাদের একথাও স্মরণ করিয়ে দাও, যখন এক শ্রেণী অপর শ্রেণীকে বলছিলো, তোমরা এমন লোকদেরকে কেনো নসিহত করছো যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করবেন অথবা কঠিন শাস্তি দেবেন। তখন তারা বললো, আমরা এসব করছি তোমার রবের দরবারে নিজেদের ওজর পেশ করার জন্য এবং করছি এ আশায় যে, সম্ভবত তারা নাফরমানী হতে বিরত থাকবে। পরিশেষে তারা যখনই এ হিদায়াতকে ভুলে গেলো যা তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিলো, তখন আমি ওই লোকদেরকে বাঁচিয়ে দিলাম, যারা খারাপ কাজ হতে ফিরিয়ে রাখতো। বাকী সব লোক যারা দোষী তাদের নাফরমানীর জন্য আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিলাম ।”
-সূরা আল আরাফ : ১৬৪-১৬৫
এখানে ইহুদী জাতির দুষ্কৃতকারী অসৎ লোকদের শাস্তি ও অশুভ পরিণাম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের উপর পৃথিবীতে আরোপিত দু'রকম শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। প্রথমত, কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাদের উপর এমন কোনো ব্যক্তিকে চাপিয়ে দেবেন, যে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে। অপমান ও লাঞ্ছনায় ডুবিয়ে রাখবে। প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত ইহুদীরা সবসময়ই সব জায়াগায় ঘৃণিত, পরাজিত ও পরাধীন হয়ে রয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে ইহুদীরা ইসরাঈলে একটি রাষ্ট্র গঠন করে একটি নিজস্ব ভূখণ্ড বানিয়ে নিয়েছে। এতে তাদের আজন্ম ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অভাব একটি দেশ পেয়ে গেছে বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আজও ইহুদীদের না আছে কোনো ক্ষমতা, আর না আছে কোনো রাষ্ট্র। ইসরাঈলী রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলো আমেরিকা, রাশিয়া, গ্রেট বৃটেন সহ মুসলমানদের অন্যান্য শত্রুদের ইসলাম বৈরিতার ফলমাত্র। ইসরাঈল রাষ্ট্র তাদের রাজনৈতিক ও আধিপত্য বিস্তারের একটি ঘাঁটি মাত্র। ইসরাঈলী রাষ্ট্রের এরচেয়ে বেশী কোনো গুরুত্ব নেই । ইহুদীরা এখনো তাদেরই অধীন ও আজ্ঞাবহ দাস। এসব শক্তি চিরদিন এত শক্তিশালী থাকবে না। তাদের মদদ যোগান শেষ হলেই ইসরাইলী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিশ্বের পাতা থেকে মুছে যেতে বাধ্য। এটা তাদের বিধিলিপি । আল্লাহর তরফ থেকে তাদের কপালের লিখন ।
অভিশপ্ত ইহুদী জাতির দ্বিতীয় শাস্তি হলো, তাদেরকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। তাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। কোনো


৯১
সময়েই কোনো একটি দেশে, কোনো নির্দিষ্ট স্থানে সমবেত হয়ে বসবাস করার সুযোগ তাদের কোনোদিন হয়নি। কোনো এক স্থানে সমবেতভাবে জীবন যাপন ও সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করা একটি জাতির জন্য আল্লাহ তাআলার বড়ো নিয়ামাত । আর কোনো জাতির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে দেয়া একটি আযাব ও গযব। এ নিয়ামাত মুসলমানদের প্রতি সবসময়ই ছিলো। থাকবেও কিয়ামত পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ । মুসলমানরা যেখানেই গেছে সেখানেই আল্লাহর রহমতে তাদের একটা পূর্ণ জনবসতি গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। তাদের সমবেত শক্তি সৃষ্টি হয়েছে ।
সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাল থেকে যদি ধরা হয় তাহলেও মুসলমানদের ইতিহাসে এ বৈশিষ্ট্য নিখুঁতভাবে দেখতে পাওয়া যাবে। হিজরাতের মাধ্যমে মদীনা থেকে এ ধারা শুরু হয় । প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে মুসলিমবসতি ধীরে ধীরে মজবুত রাষ্ট্রীয় শক্তিতে পরিণত হয়। পাকিস্তান, আফগানিস্তান ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ আজকের সুপরিচিতি বসনিয়া হার্জেগোভিনা, চেচনিয়া সহ অসংখ্য মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা এক সংঘবদ্ধ জনবসতি হিসাবে গড়ে উঠে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এভাবে আরো হতে থাকবে। কিন্তু ইহুদী জাতি এ মধুর স্বাদ আস্বাদন থেকে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত। যতো ধনী ও সম্পদশালীই তারা হোক না কেনো, সবসময়ই তারা বিভিন্ন দেশে বিক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে। কখনো কোনো দেশে তারা শাসন ক্ষমতা হাতে পায়নি। পরগাছা পরজীবী হয়েই তাদেরকে থাকতে হয়েছে ৷
ফিলিস্তিনের একটি অংশে কয়েক বছর থেকে তাদের সমবেত হওয়া ও কৃত্রিম ক্ষমতা পাওয়া এবং একটি রাষ্ট্র গঠন করা স্থায়ী কোনো জিনিস নয় । শেষ দিকে ফিলিস্তিনে তাদের সমবেত হওয়াটি ছিলো অপরিহার্য। কারণ শেষ নবীর আগাম বাণী অনুযায়ী কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ে তাই হবে। শেষ যামানায় হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম সর্বকালের অভিশপ্ত ইহুদী জাতির সাথে লড়াই করবেন। তাদেরকে পরাজিত ও নিঃশেষ করে দেবেন। ইহুদীদেরকে আল্লাহ তাআলা প্রাকৃতিকভাবে এক জায়াগায় সমবেত করাবেন । তারা পায়ে হেঁটে হেঁটে বধ্যভূমিতে গিয়ে হাজির হবে ।
হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের আগমন ঘটবে সিরিয়ার দামেশকে। ইহুদীদের সাথে ঈসা আলাইহিস সালামের যুদ্ধও সংঘটিত হবে সেখানে । হযরত ঈসার জন্য এ লড়াই সহজ সাধ্য করার জন্যই তাদেরকে ফিলিস্তিনের এ অংশে তাদের বধ্যভূমিতে এনে সমবেত করেছেন। কাজেই তাদের এ এক

৯২

জায়গায় একত্রিত হওয়াটাও বর্ণিত ও উল্লেখিত আযাবের বিপরিত কিছু নয় । সুখের তো কিছু নয়ই। আল্লাহ তার পরিকল্পনা অনুযায়ীই কাজ করে যাচ্ছেন । সসীম জ্ঞানের মানুষ অসীমের কি বুঝবে ?
দৃশ্যতঃ এখন ইসরাঈলী রাষ্ট্র ও এর বর্তমান ক্ষমতা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন উঠে । বিশ্ব রাজনীতির উপরে যাদের ধারণা আছে তারা এতে ধোঁকা খাবে না। যে এলাকাটি এখন ইহুদী রাষ্ট্র – ‘ইসরাঈল' নামক এ স্থানটি- প্রকৃতপক্ষে রাশিয়া, আমেরিকা ও গ্রেট বৃটেনের একটা যৌথ সামরিক ছাউনির বেশী কিছু নয়। তাদের সাহয্যে বেঁচে আছে ইসরাঈলী রাষ্ট্রের জীবন। এ অবস্থা স্থায়ী থাকবে না। রাশিয়া শেষ। বাকীগুলোও ধ্বংস হবে আল্লাহর পরিকল্পনা অনুযায়ী। কুরআন কিয়ামাত পর্যন্ত তাদের যে লাঞ্ছনা গঞ্জনা ও শাস্তির কথা বলছে তা আজও অব্যাহত গতিতে চলছে। তাদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত নিকৃষ্ট আযাবের স্বাদ আস্বাদন করাবেন আল্লাহ তাআলা । এ স্বাদ প্রথম আস্বাদন করেছে তারা হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের হাতে। তারপর বুতে নসরের হাতে । অতপর শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর হাতে । ফারুকে আযম হযরত ওমর বেঈমান ও অভিশপ্ত জাতি ইহুদীদেরকে এক এক করে সব জায়গা থেকে চরম লাঞ্ছনা ও অবমাননার সাথে বহিষ্কার করেছেন।
অভিশপ্ত ইহুদী জাতির কর্মফলের কারণে তাদের লাঞ্ছনার আরো ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে কুরআন আবার বলছে :
فَلَمَّا عَتَوْا عَن مَّا نُهُوا عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ ٥
“তারপর যখন তারা পরিপূর্ণ বিদ্রোহের সাথে সেই কাজই করতে লাগলো যে কাজ করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিলো। তখন আমি বললাম, তোমরা চরম লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।”-সূরা আরাফ : ১৬৬
বনী ইসরাঈলদের জন্য শনিবার ছিলো পবিত্র দিন। এটাকেই সাত বলা হয়। এদিন ছিলো তাদের সাপ্তাহিক উপাসনার জন্য নির্দিষ্ট দিন। এদিন মাছ শিকার করা সহ সব ছিলো নিষিদ্ধ। ইহুদীরা সাগর উপকূলের অধিবাসী ছিলো। তাই মাছ শিকার ছিলো তদের সখের কাজ। তারা নিষেধ অমান্য করেই শনিবারে বিভিন্ন কৌশলে মাছ শিকার করে। আল্লাহর সাথে নাফরমানী করার জন্য আযাব হিসাবে আল্লাহর হুকুমে তাদের ‘চেহারা বিকৃতি' ঘটে। তিনদিন পর তাদের সবাই মৃত্যুমুখে পতিত হয় ।
তাফসীরে কুরতুবীতে এ ঘটনাটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে। ইহুদীরা প্রথম বিভিন্ন কলা-কৌশলের মাধ্যমে শনিবারে মাছ না ধরার হুকুম লংঘন করে।


৯৩
পরে প্রকাশ্যভাবেই এ আইন অমান্য করে মাছ ধরা শুরু করে। এতে তারা দুই দলে ভাগ হয়ে যায়। একদল ছিলো নেক ও বিজ্ঞ। তারা এ অপকর্মে বাধা দিলো। দ্বিতীয় দল তা মানলো না। অবশেষে প্রথম দল দ্বিতীয় দলের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলো। এমন কি বাসস্থানও পৃথক করে নিলো। একদিন প্রথম দল দ্বিতীয় দলের আবাস স্থলে খুব নিরবতা লক্ষ্য করলো। ব্যাপারটি বুঝার জন্য ওখানে গিয়ে দেখলো দ্বিতীয় দলের সকলে বিকৃত হয়ে গেছে। হযরত কাতাদাহ বলেন, তাদের যুবকরা বানরে ও বৃদ্ধরা শূকরে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো। রূপান্তরিত বানররা নিজ নিজ আত্মীয় স্বজনকে চিনতো। তাদের কাছে এসে অঝোরে চোখের পানি ফেলতো ।
ইহুদী জাতির বানর হয়ে যাবার ব্যাপারে মতভেদ আছে। কেউ বলেন, তাদের শারীরিক গঠনই বদলিয়ে গিয়ে তারা বানর হয়ে গিয়েছিলো। আবার কেউ বলেন, তাদের স্বভাব-প্রকৃতি বানরের মতো হয়ে গিয়েছিলো । কিন্তু কুরআনের শব্দ ও বর্ণনা ভঙ্গি হতে বুঝা যাচ্ছে তাদের শারীরিক পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছিলো। তাদের দুঃখ সুখবোধ ও জ্ঞান আগের মতোই ছিলো। শুধু পরিবর্তন ঘটেছিলো শরীরে।-তাফহীমুল কুরআন
لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَاءِ يْلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُدَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ -
ذلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ - كَانُوا لاَيَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُّنْكَرٍ فَعَلُوهُ ، لَبِئْسَ مَا
L
“বনী ইসরাঈলদের যেসব লোক কুফরীর পথ অবলম্বন করেছিলো তাদের উপর দাউদ ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের ভাষায় অভিসম্পাত করা হয়েছে। কেনোনা তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিলো এবং বেশী বাড়াবাড়ী শুরু করে দিয়েছিলো। তারা একে অপরকে খারাপ কাজ হতে বিরত থাকার কথা বলা ছেড়ে দিয়েছিলো । তাদের অবলম্বিত কর্মপন্থা ছিলো খুবই খারাপ । ”
-সূরা আল মায়েদা : ৭৮-৭৯
প্রত্যেক জাতির বিকৃতি শুরু হয় প্রথম গুটি কয়েক ব্যক্তি থেকে । জাতির সামগ্রিক বিবেক সজাগ থাকলে বিপথগামী গুটি কয়েক মানুষকে তারা দমিয়ে রাখে। জাতি বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা পায়। জাতি যদি ওই বিপথগামী গুটি কয়েক ব্যক্তির প্রতি উদাসিন থাকে, তাদেরকে বিপথে চলার ব্যাপারে নিষেধ না করে ও বাধা না দেয় । স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য ছেড়ে দেয় তাহলে এ বিপথগামী লোকের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। একদিন এ বিকৃতি

৯৪

সমগ্র জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিকৃতির পথ রোধ করা অবশেষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় ৷
বনী ইসরাঈল জাতির বিকৃতি ও দুষ্কৃতি এভাবেই বিস্তৃতি লাভ করেছে। নবী-রাসূলদের কথা তারা শুনেনি, মানেনি। জাতির জাগ্রত বিবেকরাও তাদেরকে বাধা দিয়ে রুখতে পারেনি। তাই হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ইহুদী বনী ইসরাঈলদের উপর অভিসম্পাত ও লা'নত বর্ষণ করেছেন। কুরআনে এখানে একথারই উল্লেখ করা হয়েছে।
তাফসীরে মাআরেফুল কুরআনে বাড়াবাড়ি ও ত্রুটিজনিত পথ ভ্রষ্টতায় লিপ্ত বনী ইসরাঈলের খারাপ পরিণতি সম্পর্কে বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হয়েছে। প্রথমত : হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম ইহুদী গোষ্ঠীর উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করেন। ফলে বনী ইসরাঈলীদের আকার-আকৃতি বিকৃত হয়ে শূকরে পরিণত হয়ে যায়। এরপর দ্বিতীয়বার হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ইহুদী গোষ্ঠীর উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করেন । এ অভিসম্পাতে তারা বিকৃত হয়ে বানরে রূপান্তরিত হয়। তবে বনী ইসরাঈলীদের উপর অভিসম্পাত বর্ষণের পালা শুরু হয়েছে তারও আগে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম থেকে। শেষ হয়েছে শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখে। তবে তাওহীদ বাদী মুসলিম জাতির উপর তাদের যে নির্যাতন এবং মুসলিম জাতি সত্তার বিরুদ্ধে ইহুদীদের যে হীন চক্রান্ত, বিদ্বেষ ও ষড়যন্ত্র তা ভাষায় লিখা যায় না। মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে ফিলিস্তিনে তাদের নির্যাতনে নারী পুরুষ, আবালবৃদ্ধবণিতা ও অবোধ শিশুর চোখের পানি ও মনের আহাজারীতে তাদের উপর আল্লাহর লা'নত ও অভিসম্পাত বর্ষিত হবেই ।
اهْبِطُوا مِصْرًا فَإِنَّ لَكُمْ ما سَأَلْتُمْ ، وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ ، وَبَاءو
ق
بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ ، ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِايْتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّنَ
.
بِغَيرِ الْحَقِّ ، ذلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ ٥ - البقرة : ٦١
“অবশেষে অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছলো যে, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অপমান-অধঃপতন ও দুরবস্থা তাদেরকে পেয়ে বসলো এবং আল্লাহর গজব তাদেরকে ঘিরে ফেললো । আল্লাহর সাথে তাদের কুফরী করার, নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার ফলেই এসব ঘটেছে। এসব ছিলো তাদের


নাফরমানী ও শরীয়াতের সীমা অতিক্রম করে যাবার ফল।"
৯৫
-সূরা আল বাকারা : ৬১
প্রখ্যাত মুফাসসির ইমাম যাহ্হাকের ভাষায় ইহুদীরা এ লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অবহেলার শৃংখলে আবদ্ধ থাকবে। সূরা আলে ইমরানের ১১২ আয়াতেও একথা বলা হয়েছে। তারা যেখানেই যাবে সেখানেই তাদের জন্য লাঞ্ছনা অবমাননা পুঞ্জিভূত হয়ে থাকবে। দুনিয়ার কোথাও যদি যৎসামান্য শান্তি ও নিরাপত্তা তাদের ভাগ্যে ঘটেও থাকে তবে তা নিজের কোমরের বলে নয়, অন্যদের সাপোর্ট ও সহযোগিতার বলেই হয়েছে। কোথাও কোনো মুসলিম রাষ্ট্র আল্লাহর নামে তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছে। কোথাও কোনো অমুসলিম রাষ্ট্র নিজেদের স্বার্থে ও মুসলিম দুশমনির কারণে ইহুদীদেরকে আশ্রয় দিয়েছে। সাহায্য করেছে। এভাবে জগতে তারা কখনো শক্তিশালী হবার সুযোগও পেয়ে গেছে। কিন্তু সবই নিজের বলে নয়। অন্যের খুঁটির জোরে।
ফিলিস্তিনে ইসরাঈল রাষ্ট্র কায়েমের ফলে মুসলমানদের মনে যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে তার নিরসনও এর দ্বারা হয়ে যায়। আগেও একবার এ সম্পর্কে উল্লেখ হয়েছে। কুরআন থেকে বুঝা যায়, ইহুদীদের নিজস্ব কোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। অথচ বাস্তবে ইহুদীদের রাষ্ট্র ফিলিস্তিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রকৃত রহস্য যারা জানেন তারা একথাও অবশ্যই জানেন যে, এ রাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষে ইহুদীদের রাষ্ট্র নয় বরং এ ‘ইসরাঈল' রাষ্ট্র আমেরিকা ও বৃটেনের একটি ঘাঁটি মাত্র। ইহুদীদের রাষ্ট্র ইসরাঈল নিজস্ব শক্তি ও সম্পদের উপর ভর করে এক মাসও টিকে থাকতে পারবে না। খৃস্টান শক্তি ইসলামী বিশ্বকে দুর্বল করে রাখার জন্য তাদেরই মাঝখানে ইসরাঈল নাম দিয়ে একটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করেছে। এ রাষ্ট্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও উইরোপীয় খৃস্টানদের ব্যবহার করার অনুগত ও আজ্ঞাবহ একটি ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র ছাড়া আর কিছু নয়। পাশ্চাত্য শক্তিগুলোর বিশেষ করে আমেরিকার সাথে নানা রকমের প্রকাশ্য ও গোপন চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে তাদের পক্ষপুটে আশ্রিত হয়ে তাদের দয়ার উপর নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে এই অভিশপ্ত ইহুদী জাতি । তাও অত্যন্ত লাঞ্ছনা ও অবমাননার ভিতর দিয়ে। সুতরাং বর্তমান ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাঈল প্রতিষ্ঠার কারণে কুরআনের মর্ম সম্পর্কে সামান্যতম সন্দেহেরও অবকাশ থাকতে পারে না ।
ঠিক এ একই মর্ম প্রকাশিত হয়েছে কুরআনের নিম্নলিখিত বর্ণনায় । কুরআন আবারও বলছে :

৯৬

ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِلَّةُ أيْنَ مَا تُقِفُوا إِلا بِحَبْلٍ مِّنَ اللهِ وَحَبْلٍ مِّنَ النَّاسِ
وَبَاءُ وَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللهِ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الْمَسْكَنَةُ ، ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ
بِأَيْتِ اللهِ وَيَقْتُلُونَ الأَنْبِيَاء بِغَيْرِ حَق ، ذلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ ٥
b
“আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কিংবা মানুষের প্রতিশ্রুতি ছাড়া এরা যেখানেই অবস্থান করেছে সেখানেই তাদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ওরা উপার্জন করেছে আল্লাহর গযব। ওদের উপর চাপানো হয়েছে গলগ্রহতা । আর তা এজন্য যে, ওরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অনবরত অস্বীকার করেছে। নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। তার কারণ ওরা নাফরমানী করেছে এবং সীমালংঘন করেছে।”-সূরা আলে ইমরান : ১১২
কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে :
J
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيمَةِ مَنْ يَسُومُهُم سوء الْعَذَابِ ط
إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ الْعِقَابِ ، وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ o وَقَطَّعْنَهُمْ فِي الْأَرْضِ أَمَما 0
O
“আর সে সময়ের কথা স্মরণ করো । যখন তোমাদের পালনকর্তা সংবাদ দিয়েছেন যে, অবশ্যই কিয়ামাতের দিন পর্যন্ত ইহুদীদের উপর এমন লোক পাঠাতে থাকবেন যারা তাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দান করতে থাকবে । নিসন্দেহে তোমার পালনকর্তা শীঘ্রই শাস্তিদানকারী এবং তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আমি তাদেরকে জমিনে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে বহু জাতিতে পরিণত করে রেখেছি।”-সূরা আল আরাফ : ১৬৭-১৬৮

হিটলারের হাতে ইহুদী নিধন
জার্মানী ঐতিহাসিকদের তথ্য অনুযায়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপের ইহুদীদের নির্মূল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং এড্লফ হিটলার। এটাওতো আল্লাহর তরফ থেকে ইহুদী জাতির উপর একটি গযব ।
ক্রিষ্টিয়ান গারলাত তার এ গবেষণালব্ধ তথ্যটি জনসমক্ষে প্রকাশ করেন ৷ ১৯৪২ সালের ২০শে জানুয়ারী সোমবারে। এ দিনেই নাৎসীরা ওয়ানসি সম্মেলনে তাদের চূড়ান্ত সমাধান স্থির করেছিলো। গবেষকের এ তথ্যের প্রতি ইতিমধ্যেই সতীর্থ ঐতিহাসিকরা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
ঐতিহাসিকরা জানান, এ চূড়ান্ত সমাধানের সিদ্ধান্তটি ১৯৪৩ সালের ওই সম্মেলনে কয়েক মিনিটের মধ্যে স্থির হয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে নির্মূল হয়ে যায় ৬০ লাখ ইয়াহুদী ।
এ পরিকল্পনায় ছিলো পোল্যাণ্ডে একটি ধ্বংস ক্যাম্প স্থাপন, যাতে ইহুদী জিপসি ও অন্যান্য গ্রুপ, যাদের নির্মূলে হিটলার বদ্ধপরিকর ছিলেন তাদের হত্যা করা ।
হিটলার অবশ্য ঐ সম্মেলনে অংশ নেননি। আর এর ফলেই গবেষকরা বিভ্রান্ত হন যে, হিটলারই কি চূড়ান্ত সমাধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন । নাকি তার নাজী লেফটেন্যান্টরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেন ? রুশ কাগজপত্র থেকে পাওয়া এ নতুন তথ্য প্রকাশ করে ঐতিহাসিক গারলাচ বলেন, ওই সম্মেলনের এক মাস আগে ১৯৪১ সালের ১২ই ডিসেম্বর বার্লিনে নাজী কর্মকর্তা ও গুলেটার্সদের (জেলা প্রধান) সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে হিটলার ওই বিতর্কিত নির্দেশটি প্রদান করেন ।
এদিকে এ জঘন্য সম্মেলনটি যেখানে হয়েছিলো সেই ওয়ানসি ভিলার গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান নরবাট ক্যাম্পি বলেছেন, গারলাচের গবেষণা সত্যই খুবই ভালো । খুবই বুদ্ধিদীপ্ত এটি। একেবারে নতুন করে প্রাপ্ত তথ্য। তবে এর কোনো কোনো অংশের সাথে পুরো প্রভাবিত হয়নি। ক্যাম্প সি. এন. এন.কে জানান গারলাচ তার তথ্যের ব্যাপারে সমর্থন পেয়েছেন নাজী প্রপাগাণ্ডা মন্ত্রী জোসেফ গোয়েবেলসের ডায়েরী ও এস. এস. প্রধান হেনরিচ হিটলারের এপয়েন্টমেন্ট ডায়েরী থেকে । আর ওইসব ডায়েরীতেই গোপন বৈঠকের ইঙ্গিত পেয়েছেন বলে দাবী করেছেন গারলাচ ।
9-

১৮

ওয়ানসি ভিলা মেমোরিয়াল এণ্ড ষ্টাডি সেন্টারে স্বতন্ত্রভাবে করা গবেষণায় প্রাপ্ত গারলিচের (৩৪) এ তথ্যগুলো প্রকাশিত হয়েছে জার্মান ঐতিহাসিক সাময়িকীতে সে সঙ্গে ওয়ানসি ভিলা সেন্টারে ২শ' শ্রোতার সামনে এ নতুন তথ্যগুলো পরিবেশিত হয়েছে। এ শ্রোতাদের মধ্যে ছিলেন, ঐতিহাসিক, ছাত্র ও অন্যরা ।
অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, হিটলারই অবশ্য এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। হিটলারের মেইন ক্যাম্প গ্রন্থ বর্ণিত বর্ণের শ্রেষ্ঠত্ব তত্ত্বের উদাহরণও তারা দেন । তবে অনেক ঐতিহাসিক এ বিষয় পর্যাপ্ত প্রমাণ ও তথ্য না থাকায় এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশের জন্য হিটলারকে দায়ী করতে একমত নন ।
উল্লেখ্য, নাৎসীদের ধ্বংস ক্যাম্প ছিলো গ্যাস চেম্বার। নির্যাতন ক্যাম্পগুলোর অতিরিক্ত হিসাবে এ ক্যাম্প কাজ করেছে। সেখানে কিছু কিছু বন্দীকে কারখানায় দাস শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো হয়েছে ।
আর অন্যদের গ্যাস চেম্বারে হত্যার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে । বি এন এস/এন এন আই ।—তথ্য সূত্র দৈনিক সংগ্রাম ২৯ জানুয়ারী ১৯৯৮
ইন্টারনেটে ইহুদী চক্রান্ত
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের পূর্ব থেকে আজ পর্যন্ত ইহুদীরা ইসলামের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে জন্ম দিয়েছিলো Orientalist বা প্রাচ্যবিদদের। যাদের লক্ষ্যই ছিলো ইসলামের তাত্ত্বিক বিষয়াদী বিকৃতি। বিংশ শতাব্দীর গোড়াতে তারা ব্যবহার করেছে ইন্টারনেটকে হীন চক্রান্তকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে EXCT নামক ইন্টারনেট তথ্যব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। এ তথ্য ব্যাংকের ৯০ শতাংশ তথ্যই বিকৃত। ৯২১১৯টি বিশাল বিশাল ফাইল দ্বারা সমৃদ্ধ করছে তাদের তথ্য ব্যাংককে। ৩০ হাজার ফাইল দ্বারা সমৃদ্ধ Ultra Fistac নামক ইন্টারনেট তথ্যব্যাংক তাদের অন্যতম আরেকটি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও আরও অসংখ্য ছোট ছোট তথ্য ব্যাংক রয়েছে। সবচেয়ে ছোট তথ্য ব্যাংকের রয়েছে ২৫৫ টি ফাইল । এ সকল সংস্থা থেকে প্রকাশ করা হয় বড় বড় ভলিউম বই । যেমন Encyclopaedia of Religion, Encyclopaedia of Islam ইত্যাদী। এ সকল বইসমূহকে আমরা আমাদের অজান্তেই রেফারেন্স বুক হিসাবে ব্যবহার করছি। বর্তমান বিশ্ব ইসলাম সম্পর্কিত সবচেয়ে বেশী তথ্য সংগ্রহ করে যে সংস্থা থেকে সেটি হলো ‘ইয়াহু’। এ সংস্থার মূল হলো ইয়াহুদীবাদ । ইসকান্দারিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ইউসুফ যায়দান বলেন, “ইসলামকে


৯৯
ইচ্ছানুযায়ী রং দেয়ার ক্ষেত্রে ইহুদীরা স্বেচ্ছাচার।” এ সংস্থার ইন্টারনেটের প্রথম ফাইলটির শিরোনাম হলো ‘আহমদীয়া না ইসলাম ?' এ ফাইলে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের প্রবক্তা আহমদ খানকে ইসলাম ধর্মের একজন সংস্কারক বা মুজাদ্দিদ হিসাবে প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। এ সংস্থার আরেকটি অন্যতম কাজ হলো MTA টিভি চ্যানেল চালু ।
ইয়াহু সংস্থার মৌলিক ৪টি কাজ হলো—এক. ইসলামকে একটি সন্ত্রাসবাদী ধর্ম হিসাবে উপস্থাপন করা। দুই. যুক্তরাষ্ট্রে আহমদী জামাতের কার্যক্রম পরিচালনা। তিন. প্রাচ্যে আহমদী জামাতকে ইসলামী জামাত হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা। চার. এমটিএ টিভি চ্যানেল চালু ও পরিচালনা । এ টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ব্যক্তিত্বদেরকে মুসলিম বুদ্ধিজীবি হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। এ ছাড়াও CNN, BBC, -সহ ইহুদী প্রভাবিত টিভি চ্যানেলগুলোতে ইসলাম সম্পর্কিত যে কোনো সাক্ষাতকার নিতে গেলে তারা হাজির করে সালমান রুশদীসহ কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদেরকে ।
আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ সকল সংস্থার তথ্যের ব্যাপারে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। কারণ অনুসন্ধিৎসু ছাত্র মাত্রই এ সকল তথ্যের বাস্তবতা ও সত্যতায় সন্ধিহান। ছোট পরিসরে হলেও এ সকল ষড়যন্ত্রের মুকাবিলায় আমেরিকার মুসলমানরা এবং সৌদি আরবের 'আল আসাঙ্কু' ও “ইকরা” সংস্থা ভূমিকা রাখছে। মিশরের সবোর্চ্চ ইসলামী পরিষদ ইন্টারনেট তথ্যব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সন্দেহের দোলায় আচ্ছাদিত ইসলামের তাত্ত্বিক বিষয়াদিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন কল্পে বিভিন্ন ভাষায় কুরআনের তাফসীর প্রকাশ করা দরকার । ইহুদীবাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সংস্থাসমূহের বিকৃত তথ্যসমূহের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তাদের স্বরূপ বর্তমান বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করা । OIC-সহ ইসলামী আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের মাধ্যমে ইসলামী টিভি চ্যানেল চালু সঠিক তথ্য সমৃদ্ধ ইন্টারনেট তথ্যব্যাংক প্রতিষ্ঠাসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা দরকার।-তথ্য সূত্র সাপ্তাহিক সোনার বাংলা জুন ১৯৯৮
অপ্রতিরোধ্য ইহুদীবাদ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অঘোষিত ইহুদী রাষ্ট্র !
ইহুদীবাদী চক্রান্তের শিকার বিশ্বের একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে যৌন সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত হতে হয়েছে। মার্কিন রাজনীতি ও প্রশাসনে ইহুদী লবীর প্রভাব সুবিদিত এবং সেটা অনেকটা


অপ্রতিহত। বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও রাষ্ট্রের সকল সংস্থা ব্যাবস্থাপনায় সিক্রেট কিংবা ওপেন সকল ক্ষেত্রেই ইহুদীবাদ সুপার গভর্নমেন্টের নিপুণ নিয়ন্ত্রণ অপ্রতিরোধ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী দু'টি রাজনৈতিক দল রিপাবলিক্যান ও ডেমোক্রাট উভয়ের নেপথ্যে চালিকাশক্তিই ইহুদীবাদের হাতে। তবে তুলনামূলকভাবে ডেমোক্রাট পার্টির পলিসি নির্ধারণ, ফাণ্ড রেইজিং এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোতে সরাসরি ইহুদীদের নিয়ন্ত্রণ বেশী । ফলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বর্ণবাদী আগ্রাসনের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কার্যত জিম্মি । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী। কিন্তু মার্কিন বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী খৃষ্টীয় ধর্ম বিশ্বাসে আস্থাশীল হয়েও ইহুদীবাদী রাজনৈতিক কালচারের কাছে আত্ম- সমর্পিত। হিটলারের নাৎসীবাদ ইউরো-আমেরিকায় নিন্দিত ও ঘৃণিত। হিটলারের হাতে ইহুদীদের হত্যাকাণ্ড লুন্ঠনের ঘটনার জন্য এখনও নাৎসী ও তাদের সহযোগীদের বিচার হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ইহুদীদের লুণ্ঠিত সম্পদ, যা কিনা সুইচ ব্যাংকে গচ্ছিত ছিল। সম্প্রতি সুইচ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার ১০০ কোটি ডলার ইহুদীদের কাছে ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে। জাতি সংঘ বিশ্ব আদালত, বিশ্ব ব্যাংক, আই এম এফ সহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থায় ইহুদীবাদী লবীর প্রভাব সুস্পষ্ট। হিটলারের ফ্যাসিবাদ ও বর্ণবাদকে ইউরো-মার্কিন বলয় যেভাবে ঘৃণা ও নিন্দার সাথে মূল্যায়ন করে, বসনিয়া, হার্জেগোভিনা, ফিলিস্তিন, কাশ্মীরে গণহত্যা, নির্যাতনকে সেভাবে নিন্দিত করায় তাদের কুণ্ঠা রয়েছে। ইউরো-মার্কিন বলয়ের মানবাধিকারও গণতান্ত্রিক সামাজিক সাম্যের তথাকথিত সার্বজনীন ধারণায় মুসলমানদের কোনো জায়গা নেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা নির্মাণের অধিকার পশ্চিমের গণতন্ত্র সহ্য করতে নারাজ। আলজেরিয়া, তুরস্ক, সুদান, তিউনিসিয়া, ইরান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানের মতো মুসলিম প্রধান দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা নির্মাণের অধিকারকে পাশ্চাত্য ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের ধর্মীয় জাতিগত বা সাম্প্রদায়িক পরিচয় বহন না করলেও 'মুসলিম' বা ইসলামী পরিচয়বাহী সংগঠনগুলোকে পশ্চিমা সংবাদ ও ইলেকট্রনিক মাধ্যম মৌলবাদী বা ইসলামী সন্ত্রাস হিসাবে চিহ্নিত করে আসছে। খৃস্টীয় চার্চের মহিলা কর্মীরা শালীন পোশাক পরিধান করে সকল সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদিতে অংশ নিতে পারলেও ইউরোপের কোথাও মুসলিম নারী শিক্ষার্থীরা স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢেকে বা হেজাব পরিধান করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে না। ইউরোপীয়ান রাষ্ট্র প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা ও বুদ্ধিবৃত্তিক গোষ্ঠী ও সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী আচরণ করে মুসলমানদের


১০১
বিরুদ্ধে ক্রুসেডীয় হিংস্রতা বহাল রাখছে। ইউরোপ আমেরিকায় মুসলমানরা যেখানে সংখ্যালঘু, সেখানেও তারা যেভাবে জাতীয় স্বাতন্ত্র ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে প্রত্যয়ী, সংবেদনশীল, সংখ্যারিষ্ঠ আরব-এশীয়-আফ্রিকান মুসলিম দেশে তা দেখা যায় না। এ কারণেই মাঝে মাঝে মনে হয় যে, একুশ শতকে বিশ্বের ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্বে অমুসলিম বিশ্বের কনভার্টেট মুসলমানরাই সামনে চলে আসবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ লাখ ইহুদী। আর মুসলমানের সংখ্যা ৬০ লাখ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান লোক সংখ্যা ২৭ কোটি ৫ লাখ। নির্যাতিত কৃষ্ণ মানুষের একটি নৈতিক সমর্থন রয়েছে মুসলমানদের প্রতি। এই সাথে মার্কিন সমাজের সত্যিকার ঈসায়ী জনগোষ্ঠী ও মুসলমানদের প্রতি এতোটা হিংস্র নয়। সব মিলিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানরা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হলে হক্কুল ইবাদের সার্বজনীন কর্মধারায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারলে মার্কিন সমাজ ব্যবস্থায় মুসলমানদের একটা ইতিবাচক প্রতিপত্তি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। যদিও মার্কিন সমাজ ধর্ম, বর্ণ ও সাংস্কৃতিক বিভাজনের সংকীর্ণতাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রশ্রয় দেয় না। কিন্তু ইহুদীবাদী বিভাজন এবং মিডিয়ার ওপর তাদের সীমাহীন নিয়ন্ত্রণ মুসলমান ও কৃষ্ণকায় জনগোষ্ঠীকে বিদ্বিষ্ট প্রচারণার শিকার করেছে। কৃষ্ণকায় জনগোষ্ঠীকে অপরাধী, খুনি এবং মুসলমানদের 'মৌলবাদী' 'সন্ত্রাসী' প্রমাণ করার ক্ষেত্রে ইহুদীবাদী মিডিয়া আশাতীত সফল। মার্কিন জনগণের ওপর প্রচার মাধ্যমের ব্যাপক প্রভাব সর্বজনবিদিত। এ সেনসিটিভ মাধ্যমের উপর মুসলমানদের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নেই । আরব মুসলমানদের পেট্রোডলারের উপার্জন এ পর্যন্ত বিবিসি. সি. এন. এন. রয়টার এ. এফ. পি.-র মতো কোনো সংবাদ সংস্থা বা মিডিয়া সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এ ব্যর্থতার খেসারত মুসলমানদের অব্যাহতভাবে দিতে হচ্ছে পশ্চিমের মিডিয়ার ভিকটিম হয়ে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, মুসলমানরা উম্মাহর এ অভাবটি পূরণ করার জন্য এখনও কোনো পরিকল্পনাও নেয়নি। বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারলে বিশ্বে কর্তৃত্ব করা দূরুহ। ইহুদীরা এ সত্য যতোটা উপলব্ধি করছে মুসলমানরা ততোটা করেনি । আর করেনি বলেই পশ্চিমা মিডিয়ায় মুসলমানরা 'শক্তি বিনাশী'-'মৌলবাদী সন্ত্রাসী' । এ অপবাদের জবাবটা পর্যন্ত দেবার সাধ্য মুসলমানদের নেই ।
মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম নেতা লুই ফোরকানের [ফারাহ খান] নেতৃত্বে যে 'মিলিয়াজ ম্যান মার্চ' হয়েছিলো, তাতে অংশগ্রহণকারী সবাই মুসলমান ছিলেন না। নির্যাতিত কালো মানুষের কাফেলাও তাতে শামিল হয়েছিলো । কালোরা ইসলামের সহজাত সহায়ক ও ভ্রাতৃ শক্তি। বেলালী কাফেলার উত্তরসূরীদের

১০২

কাছে মুসলমানদের সঠিকভাবে দাওয়াত পৌঁছে দিতে পারছে না বলেই কালো পাহাড়ের ঘুম ভাঙ্গেনি। আহমদ দীদাত কিংবা লুইফোরকানরা ইসলামের দাওয়াতী কাজের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বিশ্ব প্রাকৃতিকভাবেই ইসলাম অভিমুখী । ইসলামের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারে মুসলমানদের ব্যর্থতাই অন্যান্য জনগোষ্ঠীকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। বৈষয়িক শ্রেষ্ঠত্বকে মুসলমানরা তাদের আধ্যাত্মিক সারল্য মানবাতাবাদী উদার সংবেদনশীল আচরণের শেষ্ঠত্বে, মহত্বে অতিক্রম করতেও পারেনি। বিচ্ছিন্নভাবে এ ক্ষেত্রে কারও সাফল্য থাকলেও সামগ্রিকভাবে উম্মাহর সাফল্য নগণ্য ; মানবিক উৎকর্ষতায় মুসলমানদের পরাভবতাই ইসলামের সৌকর্যকে আড়াল করে রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধ উত্তরাঞ্চলে একক বিশ্ব শক্তি হিসাবে আভির্ভূত হয়েছে। ফলে বিশ্ব শক্তিমঞ্চে ভারসাম্য ক্ষুন্ন হয়েছে অতি স্বাভাবিকভাবেই। রাশিয়ার জার নিকোলাসের বিরুদ্ধে বলশেভিক বিপ্লবে মুসলিম নেতা আনোয়ার পাশা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন। জার দ্বিতীয় নিকোলাসের অত্যাচারী ইসলাম বৈরী ভূমিকার অবসান কামনা করেছিলেন মধ্য এশিয়ার মুসলমানরা। আর এ কারণেই বলশেভিকদের সাথে মুসলমানদের সহায়তা ছিল কৌশলগত। তবে বলশেভিক বিপ্লবের পর লেনিন আনোয়ার পাশার সথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেই শুধু ক্ষান্ত হননি মুসলিম স্বাধীন সত্তা নির্মূলে বলশেভিকরা তাদের ক্ষমতার ৭০ বছর নিষ্ঠুর প্রতিহিংসায় ব্যবহার করেছেন । ৭০ বছর পর সোভিয়েত কম্যুনিষ্ট শাসকরা যখন আফগানিস্তান দখলে রেড আর্মি দিয়ে অগ্রসর হয়, তখন আফগান মুসলমাদের সাথে গোটা মুসলিম বিশ্বের প্রতিরোধ আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য। তাদের সামনে ছিলো শত্রুর শত্রু আমার মিত্র'-এ দর্শন। ‘ওয়ারশ’ সামরিক জোটের অধীন পূর্ব ইউরোপের ক্ষেপনাস্ত্র স্থাপনগুলো পাশ্চাত্যের মুক্ত জীবনে সার্বক্ষণিক বিভীষিকার সৃষ্টি করেছিলো। আফগানিস্তানের স্বাধীনতা রক্ষার চেয়েও মার্কিন সমর কুশলীদের কাছে সোভিয়েত রেড আর্মির উষ্ণ পানি অতিক্রম করার দুঃস্বপ্ন প্রতিরোধ করার টার্গেট নির্ধারিত ছিলো। আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাভূত হয়ে বিদায় গ্রহণের মধ্য দিয়ে কম্যুনিষ্ট পরাশক্তি, তথা সমাজতন্ত্রের বিলোপ রঙ্গমঞ্চে এক পরাশক্তি হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে। বলশেভিকরা মুসলমানদের যেভাবে প্রতারিত করেছিলো, একইভাবে মার্কিন পরাশক্তি মুসলমানদের প্রতারিত করে। কম্যুনিষ্ট দানবের পতনের মূল কারিগর জানবাজ মুসলমানরা হলেও তার বেনিফিসিয়ারী হচ্ছে গোটা পাশ্চাত্য। একক পরাশক্তির রাজত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বিশ্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে, তাতে কম্যুনিষ্ট পরাশক্তির বিরুদ্ধে


১০৩
মুসলমানদের বীরোচিত সংগ্রামের কোনো স্বীকৃতি নেই। বরং আফগান মুজাহিদ ও তাদের সহায়তাকারীদের মার্কিন এষ্টাবলিশমেন্ট ‘মৌলবাদী সন্ত্রাসী' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইহুদীদের প্ররোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 'ইসলামী মৌলবাদকে' এক নম্বর শত্রু বানিয়েছে। আফগানিস্তানে 'সন্ত্রাসী' নিধনের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আরব সাগরে অবস্থিত রণতরী থেকে ক্রুজ মিসাইল হামলা চালিয়ে আফগান মুজাহিদদের রক্ত ঝরিয়েছে। মাত্র এক যুগ আগের কম্যুনিষ্ট দানবের সাথে মার্কিনী দানবের পার্থক্যটা কোথায়। পাক আফগান সীমান্তে বেলুচিস্তানের কাছে পাকিস্তান যেখানে পারমাণবিক বোমার বিষ্ফোরণ ঘটিয়েছে, তার কাছেই মার্কিন ক্রুজ মিসাইল নিক্ষিপ্ত হয়েছে। পাকিস্তানী বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ঐ ক্রুজ মিসাইল বিষ্ফোরিত হলে পারমাণবিক বিষ্ফোরণ টানেলের বর্জ্য মাটির সাথে মিশে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করতো। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রুজ মিসাইল হামলা চালিয়ে, পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর তাদের হামলার সম্ভাবনাকে প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকার অর্থহচ্ছে ইসরাঈলের নিরাপত্তা বিপন্ন। ইসরাঈলের এ সমীকরণকে মার্কিন প্রতিরক্ষা পররাষ্ট্র বিভাগ গুরুত্ব দিচ্ছে। পাকিস্তানের ভূট্টো পরিবারের শেষ উত্তরাধিকারী বেনজীর ভূট্টো বলেছেন, নওয়াজ শরীফ ক্ষমতায় থাকলে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের আশংকা রয়েছে। সুতরাং এ বিপদ এড়াতে পাকিস্তানে একটি জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। দ্বিতীয়ত : বেনজির ভুট্টো বলেছেন, পাক সেনাবাহিনীর কট্টর ইসলামী অংশ সেখানে একটি সামরিক অভ্যূত্থান ঘটিয়ে বসতে পারে। বেনজীর ভূট্টো তালেবানদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নওয়াজ শরীফের ইসলামী আইন প্রবর্তনকে তিনি পাকিস্তানকে তালেবান রাষ্ট্র বানানোর সাথে তুলনা করেছেন। পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর হামলাসহ পাকিস্তানের ক্ষমতার দৃশ্যপটে বাইরের ইন্দনে পরিবর্তন আনয়নের লক্ষে বেনজীর ‘ওয়াচডগ' হিসেবে কাজ করছেন। এ মহিলা যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির সাথে ইসলামাবাদে কোনো সাহায্যকারী ছাড়াই একান্ত আলাপচারিতার সময় ভারতীয় পাঞ্জাবের স্বাধীনতাকামী শীর্ষ ব্যক্তির তালিকা হস্তান্তর করেছিলেন বলে জানা গেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরান, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য একই অপশক্তির টোপের মুখে। ইহুদীবাদী অপশক্তির ঘনিষ্ঠতা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করবে। পাকিস্তানের ওপর হামলা চালানো এবং পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করার অজুহাত বের করাই এখন ইহুদীবাদ নিয়ন্ত্রিত মার্কিন ভূমণ্ডলীয় রাজনীতির লক্ষ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের পারিবারিক জীবনে ইহুদীবাদী কালো থাবা বিস্তৃত। মিঃ ক্লিনটনের ১৯জন

১০৪

রক্ষিতার মধ্যে ১৪ জনই ইহুদী । মনিকার মা-ও অভিজাত ইহুদী দেহপসারিনী । মেয়েকে শিকার ধরার কাজে তিনি ব্যবহার করেছেন। আর এ পুরো ব্যাপারটিই ইহুদীবাদী বাঁদরামী ও নীতিভ্রষ্ট দুরাচারের সাথে সম্পৃক্ত। মনিকার ব্যবহৃত বস্ত্রের সংরক্ষণ ও তার রাসায়নিক পরীক্ষা কিংবা পেন্টাগনের জনৈকা মহিলা কর্মকর্তার মনিকার কথোপকথনের টেপ নিরপেক্ষ কৌসুলীর কাছে হস্তান্তর-বিশ্লেষণ করলে পুরো বিষয়টিকেই মনে হবে পরিকল্পিত। ইহুদীবাদী চক্র মিঃ ক্লিনটনের যৌন শিকারগ্রস্তকে কাজে লাগিয়েছে। সমকামীদের পক্ষে কিংবা গর্ভপাতের পক্ষে অবস্থান গ্রহণকারী একজন নীতিভ্রষ্ট প্রেসিডেন্টের পক্ষে ভাল কোনো নৈতিকতা উপহার দেয়া সম্ভব নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সেকস্ স্ক্যাণ্ডালে কাবু করে আগ্রাসী প্রতিরক্ষানীতি গ্রহণে মিঃ ক্লিনটনকে বাধ্য করা তাকে হাতের মুঠোয় রাখার এ কৌশলে ইহুদীবাদী চক্র জয়ী হয়েছে। মিঃ ক্লিনটনকে ছুটিতে থাকাকালেই হোয়াইট হাউসে ফিরে এসে সুদান- আফগানিস্তানের হামলার নির্দেশ দিতে হয়েছিলো। এ কারণে তিনি পার পেয়ে
যাবেন।
হোয়াইট হাউস প্রশাসন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টসী কত ভয়াবহভাবে ইহুদীদের দ্বারা বন্দী, তার একটা খতিয়ান দেয়া যেতে পারে। মার্কিন সরকার ব্যবস্থায় ইহুদীদের প্রভাব কেন এত অপ্রতিহত, এ পরিসংখ্যান দেখে তা কিছুটা আঁচ করা যাবে ; ইহুদীরা তাদের ধন-দৌলত মেধা-মনন, প্রযুক্তি, শঠতা সবকিছু নিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অঘোষিত ইহুদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।


ক্লিনটন ক্যাবিনেট ও হোয়াইট হাউসে ইয়াহুদী ষ্টাফ : খতিয়ান
পদবী :
১০৫
নাম
মেডেলিন অলব্রাইট
রবার্ট রুবিন
উইলিয়াম কোহেন
ডান গ্লিকম্যান
জর্জ টেনেট
স্যামুয়েল বার্জার
ইভেলিন লিভার ষ্ট্যাট ট্যুয়ার্ট আইজেন ষ্ট্যাট চারলেন বারসেফঙ্কী সুসান থমাসেন
জোয়েল ক্লেইন
গেনে স্পারলিং
ইরা ম্যানজাইনার
পিটার টারনফ
এলাইস রিভলিন
জেনেট ইয়েলেন
নরহাম ইমানুয়েল
ডুয়াগ সুসনিক
জিম ষ্টেইনবার্গ
জে ফুটলিক
রবার্ট ন্যাশ
জেন শেরব্রুন
মার্ক পেজ
সেক্রেটারী অব ষ্টেট
সেক্রেটারী অব ট্রেজারী
সেক্রেটারী অব ডিফেন্স
সেক্রেটারী অব এগ্রিকালচার সি. আই. এ. প্রধান
ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রধান ডেপুটি চীফ অব ষ্টাফ আণ্ডার সেক্রেটারী ষ্টেট ইউ. এস. বাণিজ্য প্রতিনিধি ফার্স্ট লেডির সহকারী
সহঃ এটর্নী জেনারেল
ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিল
ন্যাশনাল হেল্থ কেয়ার
ডেপুটি সেক্রেটারী ষ্টেট
ইকোনমিক এডভাইজার
চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিল
পলিসি এডভাইজার কাউন্সিল টু প্রেসিডেন্ট
ডেপুটি টু, ন্যাশনাল' সিকিউরিটি চীপ
স্পেশাল লিয়াজো, ইয়াহুদী
সম্প্রদায়
পারসোন্যাল চীপ
প্রেসিডেন্টের আইনজীবি
এশিয়া এক্সপার্ট এন.ই.সি.


১০৬
স্যানডি ক্লিস্টফ
রবার্ট বুরষ্টিন
জেফ এলার
টম এপস্টিইন
সুডিথ ফেদ্রার
রিচার্ড ফিয়েন বার্গ
হারশেল সোবার
স্টীভ কেসলার রোন কেলিন
মেডেলিন কুনিন
ডেভিট কুসনেট মারগারেট হ্যামবার্গ
ম্যানি গ্রুনওয়াও
কারেন এডলার স্যায়য়েল লিউইস
স্টানলী রোজ
ড্যান স্ক্যাফার
হেলথ কেয়ার চীফ
কম্যুনিকেশন এইড
স্পেশাল এসিষ্টাণ্ড টু ক্লিনটন
হেল্থ কেয়ার এডভাইজার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এসিষ্ট্যান্ট সেক্রেটারী ভেটারানস
ফুড এণ্ড ড্রাগ এডমিনিষ্ট্রেশন হোয়াইট হাউস কাউন্সিল
এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী শিক্ষা কম্যুনিকেশন এইড
ডেপুটিঃ এইড্স প্রোগ্রাম ডি. আই. আর. : প্রেস কনফারেন্স
লিয়ঁজো টু জুইশ লিভারস ডিআইআর : স্টেটডিপ পলিসি
ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল
ডাইরেক্টর পীস কোর
এলি সেগাল
ডেপুটি চীফ অব স্টাফ
বিশেষ দ্রষ্টব্য ঃ অন্য কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর জন্য এ পদ নেই।
তথ্যসূত্র ঃ সোনার বাংলা সেপ্টেম্বর ১৯৯৯

ইসরাঈলের মহাপরিকল্পনা : মিসর থেকে ইরাক পর্যন্ত
প্রায় চৌত্রিশ বছর আগে আমেরিকার একজন প্রথম শ্রেণীর লেখক আমেরিকার মার্কারী ম্যাগাজিনের মাধ্যমে ওয়াশিংটন এবং মধ্যপ্রাচ্যের উপর আধিপত্যবাদী ইহুদীবাদের প্রভাবের হুমকি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। ১৯৬৭-এর আরব-ইসরাঈলী যুদ্ধে অধিকৃত এলাকার উপর ইসরাঈলের দাবি আরোপের কিছুদিন পর জন হেনশু এ নিবন্ধটি লেখেন। ১৯৬৮’র বসন্তে নিবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে।
ক্ষুদ্রাকৃতি প্রাণী থেকে বিশাল দানবে রূপান্তরকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ক্ষুদ্র ইসরাঈলের । জুদাইক-ইহুবীবাদী সম্প্রসারণপন্থীদের তাত্ত্বিক মহাপরিকল্পনা এই যে, ইউফ্রেতিসের তট থেকে নীল নদের তীর পর্যন্ত তেল সমৃদ্ধ সমস্ত এলাকা দখল করে নিতে হবে। ইহুদীবাদের লক্ষ্যসমূহ পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে হিব্রু বিশেষজ্ঞ লেভনক ওসমান কিছুদিন আগে বলেছেন, “মানব জাতির শ্রেষ্ঠ নৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ আমাদের শাশ্বত গ্রন্থে (তোরাহ) অসমান, বক্র সীমান্ত দ্বারা আবদ্ধ একটি দীর্ঘ, সংকীর্ণ স্থানরূপে ইসরাঈলকে চিহ্নিত করা হয়নি। ইসরাঈলকে দেখানো হয়েছে প্রশস্ত প্রাকৃতিক সীমানার রাষ্ট্র হিসেবে।”
ঈশ্বর ধর্মপিতা আব্রাহামকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এভাবে-'মিসরের নদী থেকে মহানদী ইউফ্রেতিস পর্যন্ত আমি তাদের জায়গা দিয়েছি, যেখানে তারা তাদের বীজ বপন করেছে (জেনেসিস ১৫ : ১৮) তাই এ ভবিষ্যৎ বাণী বাস্তবায়নের জন্য ইসরাঈলী রাষ্ট্রকে টিকে থাকতে হবে শুধুমাত্র বর্তমানের সীমানায় নয় ঐতিহাসিক আরো বিস্তৃত সীমানায়।
বর্তমান ইসরাঈল প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মঁশে দায়ান ১৯৫২ সালের দিকে ঘোষণা দিয়েছিলেন-
‘আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ইসরাঈলী সাম্রাজ্য সৃষ্টি। এ লক্ষ্যে আমাদের কাজ হলো অগ্রসরমান নতুন যুদ্ধের জন্য ইসরাঈলী সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত করা।'
ব্রিটিশ ঐতিহাসিক আর্নল্ড জে, টয়েনবি ভার্সেলেই কনফারেন্সে ব্রিটিশ ডেলিগেশনের নিকটতম প্রাচ্য বিষয়ক পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করেছেন । গত বছর জুনে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে ইহুদীবাদের লক্ষ্য সম্পর্কে এ
ভাষায় বলেছেন-

১০৮

আমরা জুদার জীবন্ত প্রতিনিধি ইহুদী। সেই ১২টি গোত্রের একটি আমরা, যারা খ্রীস্টপূর্ব তেরো শতকে ফিলিস্তিনের অধিকাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছিল । খ্রীস্টপূর্ব ৫৮৭-তে নেবুচানযর কর্তৃক নির্বাসনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সাত শতক ধরে জুদিয়াতে আমাদের বিজিত এলাকায় বসবাস করেছি। ৫০ বছরের কম সময়ের মধ্যে আমরা আবার ফিরে এসেছি এবং পুনরায় জুদিয়া দখল করেছি। ১৩৫ খ্রীস্টাব্দে রোমানদের হাতে বিতাড়িত হবার আগ পর্যন্ত পরবর্তী ৭৭৩ বছর জুদিয়ার কর্তৃত্ব আমাদের হাতে ছিল। ইসরাঈলের উপর আমাদের দাবি আমরা কখনই পরিহার করিনি । আমাদের সবসময় আশা ছিল, বিশ্বাস ছিল এবং আমরা ঘোষণা করেছি যে, এ ভূমি আমরা আবার পাবোই । এটা আমাদের জমি আমরা জোরের সাথেই দাবি জানাই । আবার ১৮৮৩ বছর পর ১৯১৮-তে আমরা ওখানে স্থাপনে সমর্থ হই। তারপর বিগত ৫০ বছর কঠোর পরিশ্রম, যোগ্যতা এবং সামরিক শৌর্যের মাধ্যমে আমরা আমাদের জাতীয় রাষ্ট্র ইসরাঈল গড়ে তুলেছি। আরব যারা আমাদের জায়গা থেকে আমাদের তাড়িয়ে দিতে চায় তিনবার তাদের আমরা প্রচণ্ড মারের সাথে পরাজিত করেছি।
1
অন্যান্য জনগণ এবং আমাদের পূর্বসূরিদের মতো আমরা আমাদের নিজস্ব রাষ্ট্র চাই আবার। রোমান সাম্রাজ্য কর্তৃক চার খ্রীস্টাব্দে খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহণ করার পর থেকে আমরা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ পাশ্চাত্য খ্রীস্টান প্রতিবেশীদের হাতে দণ্ডিত, নির্যাতিত হয়ে আসছি। সেই জন্য আমাদের নিজস্ব রাষ্ট্র প্রয়োজন ।
এ নির্যাতন রূপান্তরিত হয়েছে অভূতপূর্ব গণহত্যার অপরাধে। এ অপরাধ আমাদের জীবদ্দশায় সম্পাদিত হয় পাশ্চাত্যের জার্মান নামক এক ইউরোপীয় জনগোষ্ঠী দ্বারা । আমরা আরবদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে ঐ গণহত্যার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে দেবো না আমাদের নিজ ভূমিতে।
ছয় দিনের যুদ্ধে গণহত্যা
ক্ষমাপ্রার্থী টয়েনবি এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন যে, ইহুদীরা এখন নিজেরাই গণহত্যায় লিপ্ত। গত গ্রীষ্মের ছয়দিনের যুদ্ধে ইসরাঈল প্রতিরক্ষামন্ত্রী মশে দায়ান ইসরাঈলের সিনাই অভিযানের কমাণ্ডার ইয়াসাহু গাভিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ নির্দেশ ছিল দুর্ভাগা মিসরীয় সৈন্যদের সিনাই মরুভূমিতে নিয়ে যাবার, যেখানে তৃষ্ণা, ক্ষুধা এবং তাপে তারা মৃত্যুমুখে পতিত হবে। দিনের বেলা শুষ্ক সিনাই-এর তাপমাত্রা (১০০) একশত ডিগ্রীর উপরে উঠে। প্রায় দু সপ্তাহ ধরে হাজার হাজার দল বিচ্ছিন্ন মিসরীয় সৈন্য মরুপথের ঘূর্ণাবর্তে ঘুরে-ফিরে অবশেষে তাদের চলার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।


১০৯
এ সময় সিনাই মরুভূমির ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া গোয়েন্দা বিমানগুলোর নেয়া ছবি থেকে জানা যায় প্রায় ৫০ হাজার দল ভ্রষ্ট মিসরীয় সৈন্য মৃত অথবা মৃত্যুপথ যাত্রী হয়ে পড়ে আছে সিনাই মরুতে । দল বিচ্ছিন্নদের দেখামাত্র পানি ছিটানোর লক্ষ্যে পাটাতনের সাহায্যে পাঁচ গ্যালনের জেরী ক্যান দিয়ে ৬০ হাজার গ্যালন পানি উঠানো হয়েছে মার্কিন বিমান বহরে। কিন্তু জাতিসংঘের দূত আর্থার গোল্ডবার্গ এবং হোয়াইট হাউসের বিদেশ নীতি পরামর্শদাতা ওয়াল্ট রস্টের থেকে ফোন পেয়ে রবার্ট ম্যাকনামারা অনুকম্পার বারি বর্ষণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
যুদ্ধবন্দীদের সাথে আচরণ প্রসঙ্গে জেনেভা কনভেনশনের প্রকাশ্য লংঘন গণহত্যার শামিল । একটি গোটা জাতিকে ধ্বংসের অভিপ্রায় সংঘটিত হয়েছিলো এ গণহত্যা ।
সিরিয়া এবং জর্ডানের যুদ্ধ এলাকা থেকে ফিরে আসা সংবাদপত্র রিপোর্টাররা রিপোর্ট করেছেন যে, ইসরাঈলী সৈন্যদের প্রতি একজন অচেনা বন্দুকধারী গুলী ছুড়ে নারী ও শিশুসহ পুরো গ্রামকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নাপাম বোমা ফেলা হয়েছে ঘন ঘন ৷
এ পরিকল্পিত নির্মূলকরণ প্রক্রিয়া ইহুদীবাদের একটি আদর্শিক নীতি। গণহত্যার প্রথম সারির প্রবক্তা হলো উগ্র জাতীয়তাবাদী মঁশে দায়ান। যে মঁশে দায়ানকে ইহুদীরা শাস্ত্রে উল্লিখিত শুভ্র অশ্বারোহিত মেশিয়া হিসেবে প্রচার করেছে। ইউফ্রেতিস থেকে নীল নদ পর্যন্ত সম্প্রসারণবাদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি জেনারেল ইজাক রবিন। অহঙ্কারী, গর্বিত, ইসরাঈলী জেনারেল স্ট্যাফের প্রধান জেনারেল ইজাক রবিন গত জুনে ছয় দিনের আকস্মিক আক্রমণের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করেছিলেন। ভূখণ্ড দখলের এবং শোষণের উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনার ব্যাপ্তি কয়েক বছর ধরে কমপক্ষে কয়েকজন মার্কিন কৌশলবিদের নজরে আসে। এ লেখক স্মরণ করছে যে, কয়েক যুগ আগে সামরিক বাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল যিনি ওয়ার কলেজের ছাত্র ছিলেন ; গোপনে বলেছিলেন, তার কোনো কোনো শিক্ষক মনে করেন ইহুদীদের সম্প্রসারণবাদী নীতি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে উস্কে দেবে (ঘটনাক্রমে সেই সময়ের লেফটেন্যান্ট কর্নেল এখন ভিয়েতনামে কমাণ্ডিং জেনারেলদের অন্যতম)।
প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা এবং রক্তপাতের মাধ্যমে ইহুদীরা ষড়যন্ত্র করেছে জর্ডান এবং সিরিয়ার সম্পূর্ণ অংশ, ইরাকের অর্ধেক, সৌদি আরবের উল্লেখযোগ্য অংশ এবং নীল উপত্যকার তুলাসমৃদ্ধ অঞ্চল দখল করে নেবে। এরপর তেল

১১০

স্থাপনাসহ এটা খুব সহজ হবে ইয়েমেন, এডেন, মাস্কাট, কাতার এবং ওমানকে দখল করে নেয়া । ইতিমধ্যে ইসরাঈল তার আণবিক শক্তি নির্মাণে অনেকটুকু এগিয়ে গেছে। ইহুদীদের পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় এক যুগের মধ্যে ইসরাঈলী সাম্রাজ্য মধ্যপ্রাচ্যের প্রভুতে পরিণত হবে। এছাড়া আণবিক শক্তি হিসেবে ইসরাঈলের অবস্থান থাকবে আমেরিকা এবং রাশিয়ার পাশাপাশি । আরব শেখদের পরিবর্তে ইসরাঈলী সামরিক দখলদারদের ডেভিড রকফেলারের স্টাণ্ডার্ড অয়েল কোম্পানী তার রয়ালটি প্রদান করবে।
অপরিমেয় তেলের রিজার্ভ
ঐতিহ্যগতভাবে ব্রিটিশ প্রভাবিত এলাকাটিতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা খুব বেশী। পারস্য উপসাগর এবং তার আশপাশের এলাকাটিতে অকমিউনিস্ট বিশ্বের সত্তর ভাগ (৭০%) তেলের মজুদ বর্তমান এবং এ অঞ্চলে পৃথিবীর মোট উৎপাদনের অর্ধেক উৎপাদন করে থাকে। এডেন থেকে ব্রিটেনের প্রত্যাহার এখানে ক্ষমতা শূন্যতা সৃষ্টি করবে যেই ক্ষমতা পূরণ করতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ইসরাঈল এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এগিয়ে আসবে ।
ব্রিটিশরা তাদের এ সৎ ধারণা ব্যক্ত করেছে তাদের প্রত্যাহার পরস্পর কোন্দলরত আরব শাসকদের কোন্দল মিটিয়ে তাদেরকে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা বন্ধনে উৎসাহিত করবে। কিন্তু তেল শিল্পের প্রসারমান বিকাশ প্রতিদ্বন্দ্বী রাজা, শেখ ও সুলতানদের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে । ইরান কর্তৃক ইসরাঈলের নিকট তেল বিক্রি মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতাকে আরো অবনতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ছয়দিনের আগ্রাসনে জর্ডান, সিরিয়া এবং মিসরকে চারদিক দিয়ে ইসরাঈল অক্টোপাসের মতো ঘিরে ফেলেছে। গত জুনে সম্পূর্ণ প্রতিরোধহীন অবস্থায় ইসরাঈলী সামরিক বাহিনীর অভিযান পূর্ব নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক সীমানায় আকস্মিকভাবে থেমে গিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী বিজয়ে আধিপত্যবাদী ইহুদীবাদের মহাপরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে তারা তাদের মিশন সম্পূর্ণ করেছে। এখন সময় থামার এবং সৈন্য বাহিনীকে ছড়িয়ে না দিয়ে অর্জনকে সংহত করার।
ইসরাঈলী নেতা মেনাচেম বেগিন বলেছেন-‘অণু পরিমাণ মাটিও আরবদের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হবে জাতির নিকট বিশ্বাসঘাতকতা।' মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ামক শক্তি হিসেবে ইসরাঈল সাম্রাজ্যের সাড়ম্বরপূর্ণ ধারণা এ প্রথমবারের মতো সারা বিশ্বের ইহুদীদের মধ্যে গণোদ্দীপনা সৃষ্টি করছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাঈল ভান ধরে যাচ্ছে, তার সাথে আলাপ-আলোচনার দরজা উন্মুক্ত আছে। ফলে


১১১
আরবদের স্বীকৃতি এবং শান্তি চুক্তির বিপরীতে অধিকৃত এলাকা ফিরিয়ে দেয়া
যেতে পারে ।
জানা গেছে, জর্ডানের রাজা হোসেন একটি গোপন প্রস্তাব দিয়েছেন ইসরাঈলকে ঃ জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর ফিরিয়ে দেবার বিপরীতে হোসেন ঐ এলাকার অসামরিকীকরণে, সীমান্ত পুনঃচিহ্নিতকরণের আলোচনায় এবং পুরনো শহর জেরুজালেম পুনর্দখলের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগে সম্মত হয়েছেন । ইসরাঈল এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরাঈলী শ্রমমন্ত্রী ইগেল এলন সুস্পষ্টভাবে বলেছেন-
‘এ দেশের প্রাকৃতিক সীমানা হলো জর্ডান নদী । ইসরাঈল জর্ডান থেকে পশ্চিম তীরের যে এলাকা দখল করেছে সে অঞ্চল ধরে রাখতে পারলেই সেই সীমান্ত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।'
ইসরাঈলী সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেতাবধারী কর্মকর্তা জেনারেল আলুফ এজার ওয়াইজম্যান, তিনি আরো অনমনীয় : ‘আমরা যেখানে আছি সেখানে থাকবো এবং ইহুদীদের আনবো। ইহুদী জনতার রাষ্ট্রকে সংহত এবং ভবিষ্যৎ যুদ্ধের সম্ভাবনাকে রোধ করার সচরাচর পাওয়া যায় না এমন সুযোগ এখন আমাদের হাতে।'
'যদি চতুর্থ যুদ্ধ শুরু হয়', প্রতিরক্ষামন্ত্রী মঁশে দায়ান আত্মতৃপ্তির সাথে বলেন, ‘আমরা আগের চেয়েও আরো চূড়ান্তভাবে যুদ্ধ জয়ে সক্ষম এখন ।
এছাড়াও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন কায়রো, দামেস্কাস এবং আম্মানের মতো বড় বড় শহরগুলো ‘চতুর্থ যুদ্ধে’ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে । এ হুমকি গণহত্যার পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ইসরাঈল বিরক্তির সাথে অভিযোগ করে যে, ইসরাঈলের চেয়ে তিনগুণ বড় অধিকৃত এলাকার সাথে ১৩,৩০,০০০ হাজার আরবকে তাদের গ্রহণ করতে হয়েছে।
ইসরাঈলের স্বতঃস্ফূর্ত নতুন ঠিকানা-আলিয়া-এ ধারণা পাশ্চাত্য ইহুদীদের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের মধ্যে খুব কমই তাদের পূর্ব পুরুষের পবিত্র ভূমিতে যেতে চায়। ইসরাঈলের সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদী এশিয়া এবং আফ্রিকার । ধর্ম, রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং বয়োজ্যেষ্ঠবাদের সংমিশ্রণে ইসরাঈলী রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালিত । ইহুদী পরিচয় এবং ইহুদী পূর্ব পুরুষের সূত্র ছাড়া ইসরাঈলী রাষ্ট্রে পূর্ণ নাগরিকত্ব পাওয়া যায় না। ইসরাঈলী কর্তৃপক্ষ আরব এবং অ-ইহুদীদের সমান নাগরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকারের পূর্ণ নাগরিকত্ব দিতে

১১২

অস্বীকার করে। জঙ্গি ইহুদীরা প্রকাশ্য বলে বেড়ায় আরব এবং ইহুদীরা এক সাথে বসবাস করতে পারবে না। তাদের দাবি আদর্শিক মতপার্থক্যের কারণেই এ ভেদাভেদ। যা হোক আরব দেশগুলো তেলের কারণে অবিশ্বাস্য রকম সম্পদশালী।
‘দীর্ঘমেয়াদীভাবে ক্ষমতা সংহতকরণের লক্ষ্যে আমাদের আবশ্যিকভাবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে অধিকৃত এলাকায় আমাদের অবস্থানকে স্বল্পকালীন সাময়িক ব্যাপার বলে গণ্য করা হতে পারে'-বলেছেন ইসরাঈলী ক্যাবিনেটের মন্ত্রণালয়বিহীন মন্ত্রী ইসরাঈল গ্যালিলি ।
আরব পরাজিতদের কিভাবে জয়ীদের প্রতি সহযোগিতায় বাধ্য করা হয় এ বিষয়ে আধিপত্যবাদী ইহুদীরা একটি বিশেষ অর্থবোধক পরিভাষা আবিষ্কার করেছে 'রূঢ় হস্তক্ষেপহীনতা'। নাবলুসের মেয়র যখন বললেন, ইহুদীদের মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন, ইসরাঈলী সামরিক কর্তারা তাকে জানালো তার পদত্যাগের পর কেউই তার পদে বহাল হবে না। যার ফলে নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়বে। মেয়র বিষয়টি পুনরায় চিন্তা করলেন। ইহুদী সামরিক নেতার আদেশ মেনে পদত্যাগে বিরত থাকলেন। এ ধরনের শত শত উদাহরণ দেয়া যেতে পারে ।
গণহত্যার ভয়ে আতঙ্কিত আরব জনতা
আজকের মধ্যপ্রাচ্য নির্মম, উলঙ্গ, বর্বর, পাশবিকভীতি দ্বারা প্রভাবিত । আরবদের প্রতি ইসরাঈলের গণহত্যামুখী আকাঙ্ক্ষা আরব জাতিগুলোকে গণমৃত্যুর ভীতিতে আতংকিত করে ফেলেছে। সারা পৃথিবী থেকে ইহুদীদের ইসরাঈলে এনে ইসরাঈল মধ্যপ্রাচ্যের জনবসতির ভারসাম্য নষ্ট করেছে। জনসংখ্যার বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সাথে আরব দেশগুলোর। জনগণের মাঝে সংঘাতের কারণে একদিন না একদিন হয় আরব না হয় ইহুদীদের বাধ্য হয়ে মরুতে যেতে হবে। প্রাণ ধারণের উপযোগী পরিবেশ পাবে না। একমাত্র মৃত্যুতেই পরিত্রাণ মেলবে। আরব ভূমি দখল করার জন্য ইসরাঈল আরব জনতাকে হত্যা করতে চায়। মৃত্যু ভয়ে আচ্ছন্ন আরবদের প্রতিক্রিয়া জোরালো । রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশের কাছে নিরাপত্তা খুঁজছে আরবরা । নিরাপত্তার বিনিময়ে করদরাজ্য হতে আপত্তি নেই তাদের। 'মুক্ত বিশ্বের জন্য এটা অপ্রতিরোধ্য বিপর্যয়' বলেছেন বেঞ্জামিন এইচ ফ্রিডম্যান।
এসব বিষয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর কিছু নেই, এ ধরনের যুক্তি আমরা উপস্থাপন করতে পারি । কিন্তু মার্কিন বিদেশী অনুদানের শত শত কোটি ডলার তেলআবিব থেকে প্যারিস, লন্ডন এবং নিউইয়র্ক পর্যন্ত বিস্তৃত আন্তর্জাতিক ইহুদী নেটওয়ার্কের উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে। ইসরাঈলীরা ইতিমধ্যে মিসরীয় তেল


১১৩
কূপ' হতে তেল উত্তোলন শুরু করেছে। মুনাফার এক অংশ যাচ্ছে রকফেলারের স্ট্যাণ্ডার্ড তেল কোম্পানীর হিসাবে। এটা তো শুধু পূর্বাভাস।
এখন প্রথমবারের মতো সোভিয়েট রাশিয়া সফলভাবে তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অনুপ্রবেশ করছে। ইরাক, ইরান এবং মিসরে তেল আবিষ্কার এবং উত্তোলনের জন্য রাশিয়ানরা চুক্তি করেছে। আলজিরিয়া, সিরিয়া এবং কুয়েতে সমবায়ের ভিত্তিতে কাজ করার জন্য রাশিয়ানরা প্রস্তাব দিয়েছে । ইরাকের সাথে চুক্তির ফলে পাশ্চাত্য কোম্পানীগুলো থেকে ছিনিয়ে নেয়া তেল মজুদের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। তাদের নিজস্ব তেল রিজার্ভের ওপর তাদের কর্তৃত্বকে শক্তিশালী করা এবং মুনাফার অংককে বাড়ানোর জন্য বেশির ভাগ আরব দেশ তেলের ফার্ম প্রতিষ্ঠা করছে। সোভিয়েতরা আরব তেল শিল্পে প্রযুক্তি সরবরাহ করছে এবং বিশ্বে তেল বাজারজাত করার লক্ষ্যে আরব শাসকদের সাথে চুক্তিতে এসেছে। ভূ-মধ্যসাগরে সোভিয়েট নৌবহর দাঁড়িয়ে আছে। আরব তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোকে তার আশ্রিতে পরিণত করার জন্য সোভিয়েট রাশিয়া উগ্র অভিযানে নেমেছে। অবশেষে মিসর রাশিয়ার দৃঢ় কব্জায় এসে পড়েছে। সিরিয়া এখন রাশিয়া প্রদত্ত নিরাপত্তা এবং সম্পূর্ণ রুশ অস্ত্রের ওপর নির্শরশীল । লাটাকিয়ায় সোভিয়েটদের স্থাপনা আছে ।
ইয়েমেন সোভিয়েট অস্ত্র পাচ্ছে, রাশিয়ান বিশেষজ্ঞরা তার সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ওখানে সোভিয়েট বাহিনী তার ঘাঁটি স্থাপন করেছে। ইরানকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের অনুদান প্রদান সত্ত্বেও অকৃতজ্ঞ শাহ (ইরানে শাহ্ সুইস ব্যাংকে মাঃ ডঃ ৩০০ মিলিয়ন সরিয়ে নিয়েছে) একটি প্রাকৃতিক গ্যাস লাইন নির্মাণে রাশিয়ানদের সহযোগিতা করছে। এ পাইপলাইনে ইরানী গ্যাস রাশিয়ায় সরবরাহ করা হবে যেখানে রাশিয়ার গ্যাস পৌঁছায় না ।
এখনও ইহুদীবাদ এবং কমিউনিজমের মধ্যে গোপন সম্পর্ক একটি বাস্তবতা। যখন ইসরাঈল আরবদেরকে ধাওয়া করে ক্রেমলিনের কাছে নিয়ে যাচ্ছে তখন শত বছরের আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ইসরাঈল সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং আরবদের মতো আমেরিকানরা এ আন্তর্জাতিক অপরাধের নিঃসহায় শিকার।
পরলোকগত জন হেনশু কলামিস্ট ড্রপিয়ারসনের প্রধান সহকারী ছিলেন। তিনি পরবর্তীকালে ড্রপিয়ারসনের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেন। সেই সময় ইসরাঈলপন্থী লবী ‘এন্টি ডিফেমেশন লীগ' জন হেনশুর সব খরচ বহন করতো। তাছাড়া এ লবীর সাথে পিয়ারসনের 'বিশেষ সম্পর্ক ছিল। নিবন্ধটি থেকে বুঝা যায় হেনশুর মধ্যপ্রাচ্য অন্তর্দৃষ্টি অসাধারণ।-তথ্য সূত্র ইন্টারনেট
৮-

ইহুদী বসতি রক্ষার অজুহাতে এখনও ফিলিস্তিনী এলাকায়

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]