জীবন সমস্যার সমাধানে আল-হাদীসের গুরুত্ব কতটুকু ? বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।

মানব জীবনে হাদীসের গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদাতের জন্য। আর সে ইবাদাত হতে হবে রাসূলের পদাংক অনুসরণে
ও তাঁর প্রদর্শিত পন্থায়। কেননা রাসূল (স) প্রেরিত হয়েছেন অনুসরণের জন্য। তাঁর অনুসরণ অপরিহার্য। অপরদিকে
কুরআনুল কারীমে ইবাদতের বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে সংক্ষিপ্ত আকারে। হাদীসে এসেছে তার ব্যাখ্যা, রাসূলের
বাণী, কর্ম ও অনুমোদনের মাধ্যমে। যেমন সালাত, যাকাত ইত্যাদি। এ ছাড়াও পারিবারিক, সামাজিক, ব্যবহারিক ও
চারিত্রিক ইত্যাদি বিষয়াদিও বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে হাদীসে। তাই মানব জীবনে রয়েছে হাদীসের অপরিসীম
গুরুত্ব।
এখানে মানব জীবনে হাদীসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কতিপয় দিক নিচে আলোকপাত করা হলোহাদীসের বিধানগত গুরুত্ব
হাদীসের বিধানগত গুরুত্ব হচ্ছে, তা শরী’আতের বিধি-বিধান নির্ধারণ ও নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রবর্তন করে। ‘মিফতাহুস
সুন্নাহ’ গ্রন্থে ‘আল্লামা খাওলী’ হাদীসের বিধানগত মূল্য নিরূপণ করতে গিয়ে মহান আল্লাহর বাণী উল্লেখ করেন-
أ َطِ یعُوا ْ ٱلل َّھَ وَ أ َطِ یعُوا ْ ٱلرَّ سُولَ
“তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের।” (সূরা আন-নিসা : ৫৯)
وَ مَآ آتَاكُمُ ٱلرَّ سُولُ فَخُذ ُوهُ وَ مَا نَھَ اكُمْ عَنْھُ فَٱنتَھُوا ْ
“রাসূল তোমাদের যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদের নিষেধ করে তা বর্জন কর।” (সূরা আলহাশর : ৭)
এ সকল আয়াত দ্বারা শরী‘আতের বিধান নির্ধারণে হাদীসের স্বকীয়তা ও গুরুত্বঅনুমিত হয়।
কুরআনের ব্যাখ্যা - বিশ্লেষণে হাদীসের গুরুত্ব
কুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রধান মাধ্যম হাদীস। হাদীসই কুরআনের উত্তম ব্যাখ্যা। নি¤েœবর্ণিত কুরআনের বাণী
হাদীসের এ গুরুত্বই তুলে ধরেছে-
وَ أ َنْزَ لْنَا إ ِل َیْكَ ٱلذ ِّكْرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّ لَ إ ِل َیْھِمْ
“আমি তোমার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি। মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যা তাদের প্রতি নাযিল করা
হয়েছিল।” (সূরা আন-নাহল : ৪৪)
কুরআন ব্যাখ্যা ও বয়ান করার তাৎপর্য প্রসংগে হাফিয ইবনে আব্দুল বার বলেন, নবী কারীম (স) দু’ভাবে কুরআন
ব্যাখ্যা করেছেন।
এক. মৌখিক ব্যাখ্যা ঃ ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণে বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা
দুই. ব্যবহরিক ব্যাখ্যা। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের আহকাম, যাকাত সংক্রান্তবিস্তারিত মাসআলা, হাজ্জের নিয়ম বর্ণনা
ইত্যাদি।
মহানবী (স) কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল আয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন, তার বাস্তব উদাহরণ হাদীস গ্রন্থসমূহের তাফসীর অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে।
হাদীসই যেহেতুকুরআনের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা তাই হাদীসের সাহায্য ছাড়া কুরআনের যথাযথ ব্যাখ্যা ও অর্থ করা, এর
সঠিক উদ্দেশ্য ও ভাবধারা নিরূপণ করা সুকঠিন। মহানবী (স) নিছক মানবীয় বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা কুরআনের মনগড়া
ব্যাখ্যা করা থেকে কঠোরভাবে বারণ করে বলেন-
من قال فى القران برائھ فلیتبؤءا مقعده من النار
“যে ব্যক্তি মনগড়াভাবে কুরআনের ব্যাখ্যা দেয় তার ঠিকানা দোযখ।” (তিরমিযী)
ইমাম আহমদের (র) উক্তিটি এক্ষেত্রে খুবই চমৎকার وتبینھ الكتاب تفسر السنة ان
“সুন্নাহ কুরআনের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে এবং তার অর্থ প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করে।”
ইমাম আওযাঈ ও মাকহুল এর মন্তব্যটিও প্রণিধানযোগ্য-
القران احوج الى السنة من السنة الى القران
“আল-কুরআনের ব্যাখ্যার জন্য হাদীস অধিক প্রয়োজনীয়; কিন্তু হাদীসের ব্যাখ্যার জন্য কুরআনের প্রয়োজন ততটা
নয়।”
এ ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণ এক বাক্যে যে মূলনীতি পেশ করেছেন তা হচ্ছে-
فأصول جمیع المسائل ذكرت فى القران، اما تفاریعھا فبینھا رسول اللھ (ص)
“সমস্তবিষয়েরই মূল বিধান কুরআনে উল্লিখিত হয়েছে, কিন্তু তার শাখা-প্রশাখা, খুঁটিনাটি ও ব্যবহারিক নিয়মনীতি সবই
রাসূলুল্লাহ (স) বর্ণনা করেছেন, তথা তাঁর হাদীস হতে জানা যায়।”
এক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফার (র) উক্তি খুবই চমৎকার - القران منا احد فھم ما السنة لولا “সুন্নাত না হলে
আমরা কেউ কুরআন বুঝতাম না।”
অনুসরণীয় আদর্শ
ইসলামী শরী’আর নিরিখে মহানবীর (স) আদেশ-নিষেধ, তাঁর যাবতীয় কর্মকান্ড, কথাবার্তা-তথা গোটা জীবনই
উম্মাতের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ। যেমন কুরআন বলছে-
لقَدْ كَانَ ل َكُمْ فِى رَ سُولِ ٱلل َّھِ أ ُسْوَ ةٌ حَسَنَة ٌ
“নিশ্চয় রাসূলের জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।” (সূরা আল-আহযাব : ২১)
রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্যও তাই। যেমন- মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَ مَآ أ َرْ سَلْنَا مِن رَّ سُولٍ أِلا َّ لِیُطَاعَ ب ِإ ِذ ْنِ ٱلل َّھِ
“রাসূলকে এ উদ্দেশ্যেই প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তার আনুগত্য করা হবে। (সূরাআন-নিসা : ৬৪)
ق ُلْ إ ِن كُنتُمْ تُحِ بُّونَ ٱلل َّھَ فَٱتَّب ِعُونِى
“বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমার অনুসরণ কর।” (সূরা আলে-ইমরান : ৩১)
ْ واُدَتْھَتُ وهُیعِ طُت ن ِإَ و“তার আনুগত্য করলে হিদায়াত পাবে।” (সূরা আন-নূর : ৫৪)
সুতরাং রাসূলের (স) আনুগত্যের জন্য তাঁর সামগ্রিক জীবন তথা হাদীসের প্রামাণ্য রেকর্ড অনুসরণ করা ঈমানদার
হওয়ার জন্য একান্তই অপরিহার্য।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস
মানব জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞান লাভের ২টি সূত্র আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন।
প্রথমত ঃ মানবীয় পঞ্চ ইন্দ্রীয় ও বুদ্ধি প্রজ্ঞা, চিন্তা-গবেষণা। আর এর দ্বারা বস্তুজগতের সংগৃহীত তথ্যভিত্তিক জ্ঞান
নিছক ধারণাও অনুমাণ প্রসূত। আধুনিক দার্শনিক চিন্তাধারা ও মতাদর্শ তাই চরমভাবে দুর্দশাগ্রস্ত।
দ্বিতীয়ত ঃ বস্তুজগতের উর্ধ্বে যে নির্ভরযোগ্য জ্ঞানের উৎস তা হচ্ছে ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞান। আর হাদীস এক প্রকার
ওহী। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস হিসেবে হাদীসের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা তুলে ধরে শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ (র) লিখেন, “ইলমে
হাদীস সকল প্রকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের তুলনায় অধিক উন্নত, উত্তম এবং দ্বীন ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের ভিত্তি। হাদীসে
সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও তাঁর সাহাবীদের কথা, কাজ ও সমর্থন বিধৃত। বস্তুত ইহা অন্ধকারে আলোক স্তম্ভ, যেমন সর্বদিক
উজ্জ্বলকারী পূর্ণ শশী। যে এর অনুসারী হবে, একে আয়ত্ত করবে, সে সুপথ প্রাপ্ত হবে, সে লাভ করবে বিপুলায়তন
কল্যাণের ফল্গুধারা।”
পবিত্র কুরআন এ কারণে একে হিকমাত বলেছে- والحكمة الكتاب علیك اللھ وانزل “আল্লাহ তোমার
প্রতি কিতাব ও হিকমাত নাযিল করেছেন।” মূলত মহানবীর (স) এই ‘হিকমাত’ হচ্ছে হাদীস, যা জ্ঞান-বিজ্ঞানের
আধার।
ঐতিহাসিক দলীল
হাদীস ইসলামের প্রামাণ্য উৎস। হাদীস পর্যালোচনা, সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ দ্বারা ইতিহাস চেতনার উন্মেষ ঘটে। হাদীস
বর্ণনাকারী অগণিত ব্যক্তির জীবন, কর্মতৎপরতা ও চরিত্র উদঘাটন করতে গিয়ে বিপুলায়তন নব্য তথ্যের ভিত্তিতে
ইসলামের ইতিহাস গড়ে উঠেছে। হাদীসের মাধ্যমে সমকালীন আরবসহ সমগ্র বিশ্ব পরিস্থিতি ও জীবনযাত্রার তথ্য
মিলে। এছাড়াও পৃথিবীর আদি ইতিহাসের অনেক নির্ভুল-সঠিক তথ্যও এর মাধ্যমে পাওয়া যায়।
পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা
হাদীস কেবল মহানবীর (স) জীবন ও উপদেশের সংকলনই নয়; বরং এটা তাঁর সকল কর্মতৎপরতার পূর্ণাঙ্গ দলীল।
ধর্ম, যুদ্ধ, যুদ্ধের নিয়ম-কানুন, রীতিনীতি, শান্তি, বৈদেশিক নীতি, প্রশাসনিক বিধিব্যবস্থা, সরকার পরিচালনার নীতি,
-সবই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং হাদীসের গুরুত্ব যে কতখানি তা এ থেকে সহজেই বোঝা যায়।
মানব জীবনে হাদীসের প্রয়োজনীয়তা
ব্যক্তি জীবনে হাদীস
রাসূলুল্লাহ (স)-এর জীবনাদর্শ মানুষের ব্যক্তি জীবনের সমস্যা সমাধানের সুস্পষ্ট সমাধান পেশ করে। মানুষের বিশ্বাস,
চিন্তা ও লক্ষ্য নির্ধারণের উপর নির্ভর করে তার জীবনের শান্তি, উন্নতি আর মুক্তি। হাদীস মানুষের সে সব বিষয়ের
পুঙ্খানুপুঙ্খ সমাধান বলে দেয়। শিরক, বিদআত, অবিশ্বাস, কপটতা, প্রবৃত্তির অনুসরণ পরিহার করে একনিষ্ঠভাবে
আল্লাহর ইবাদতের প্রতি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা রয়েছে হাদীসে। সর্বপ্রকার অন্যায়, অনাচার, পাপাচার, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার
করে পূত-পবিত্র নিষ্কলুষ জীবনাচারের প্রতি পবিত্র হাদীস ব্যক্তিকে আহবান জানায়। অপরদিকে ব্যক্তিজীবনে মানবের
দেহ-মন ও আত্মার সমন্বয় সাধন না হলে মানবের ব্যক্তি জীবন সমস্যা সংকুল ও বিপর্যস্তহয়ে উঠে। তাছাড়া মানুষের
মন ও আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার বিধান পাওয়া যায় হাদীসের মধ্যে। মহানবী বলেন-
ان اللھ لا ینظر الى صوركم وامو الكم ولكن ینظر الى قلو بكم واعما لكم
“আল্লাহ তোমাদের চেহারা-আকৃতি ও সম্পদ দেখেন না, তিনি দেখেন তোমাদের অন্তরসমূহ ও তোমাদের আমলসমূহ।”
পারিবারিক জীবনে
সামাজিক জীবনের প্রাথমিক সংঘ হচ্ছে পরিবার। পরিবার ব্যবস্থা ছাড়া সভ্যতা মূল্যহীন। পরিবার গঠন, পরিচালনা,
বিয়ে, তালাক, সন্তানের ভরণ-পোষণ, লালন-পালন, শিক্ষাদান ইত্যাদি পরিবারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট বিধান
হাদীসে দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণ, ব্যভিচার, লীভ-টুগেদার, গোপন অভিসার, সমকামিতা, পতিতাবৃত্তি, বহুগামিতা,
অমতাচার ইত্যাদির ন্যায় সামাজিক অভিশাপ থেকে পারিবারিক ব্যবস্থা সুদৃঢ় দূর্গের মত মানুষকে মুক্ত রাখে। আর এসব
কিছুর পরিপূর্ণ রূপরেখা হাদীসে এসেছে।
সামাজিক জীবনে
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে রয়েছে অগণিত সমস্যা। পবিত্র কুরআনে সামাজিক বন্ধনের মূলনীতি বলে দেওয়া
হয়েছে। আর হাদীসে এসেছে সমাজ জীবনের যাবতীয় বিষয়াবলী। প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলো হাদীসের মাধ্যমে আমরা
পেয়ে থাকি। সমাজের বন্ধন, গঠন, উন্নয়ন, উৎকর্ষতা ও শৃঙ্খলা বিধান কিভাবে করতে হয় এবং সমাজের ভাঙ্গন
রোধ, অন্যায় অত্যাচার, অসামাজিক কার্যাবলীর ক্ষতিকর প্রভাব ও এ থেকে বেঁচে থাকার উপায় সবই হাদীসে এসেছে।
সমাজের বিভিন্ন মানুষের অধিকার, দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে বলে দেওয়া হয়েছে। পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী, নাগরিক সকলের সাথে কীরূপ আচরণ করতে হবে, তার সব কিছু হাদীসে এসেছে।
রাজনৈতিক জীবনে
দুনিয়ায় অশান্তির মূল কারণ মানুষের মনগড়া আইন ও দুর্নীতিবাজ লোকের শাসন। এজন্য আল্লাহর আইন ও
সৎলোকের শাসন ছাড়া মানুষের মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। স্বয়ং রাসূল (স) আল্লাহর আইন ও সৎ
মানুষের শাসন কায়েমের বাস্তব উদাহরণ পেশ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই আমরা রাজনীতির সকল খুঁটিনাটি
বিষয় হাদীসের মাধ্যমে পাই।
অর্থনৈতিক জীবনে
বস্তুবাদী সভ্যতা অর্থনীতিকে মূল সমস্যা মনে করে। কিন্তু ইসলাম এটাকে বড় বা প্রধান সমস্যা মনে করে না তবে
অন্যতম সমস্যা বলে থাকে। রাসূল (স) বাস্তবধর্মী এক সুষম অর্থনীতি পেশ করেছেন, যা সর্বজনীন ও কালজয়ী। তিনি
যাকাত, উশর, খারাজ, ফাই, গনীমত, সাদাক, জিযিয়া, ব্যবসায়-বাণিজ্য নীতি, কৃষিব্যবস্থা এবং অন্যান্য কর ব্যবস্থার
মাধ্যমে একটি আদর্শ ও শোষণহীন অর্থব্যবস্থা উপহার দিয়েছেন। আমরা হাদীসের মাধ্যমে এর বিস্তারিত বিবরণ পেয়ে
থাকি।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবন
মানুষের শিক্ষা-সাংস্কৃতিক জীবনেও হাদীসের রয়েছে সুষ্ঠু ও পরিশীলিত-মার্জিত মূল্যবোধ ভিত্তিক প্রগতিশীল
চিন্তাধারা। শিক্ষাকে সকল নারী-পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাওহীদ ভিত্তিক পরিচ্ছন্ন পূত:পবিত্র সংস্কৃতি
চর্চার প্রতি উৎসাহিত করেছে ইসলাম। আর এ সব কিছুর বিধান আমরা হাদীসে পাই।
রাষ্ট্রীয় জীবনে
সমাজের বৃহত্তর অঙ্গন হচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় জীবনের সমস্যাসমূহের সমাধানের সুস্পষ্ট ও পরিপূর্ণ অবকাঠামো হাদীসের
মাধ্যমে আমরা পাই। রাসূল (স) ছিলেন আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপকার ও মডেল। রাজনীতি হচ্ছে রাজার নীতি, রাজ্য
শাসন নীতি, নীতির রাজা ও উত্তম নীতি। মহানবীর (স) রাজনীতি তাই ছিল সর্বোত্তম নীতি। শাসক, প্রজা, কর্মচারী,
কর্মকর্তা, শাসনকর্তা, প্রত্যেকের কি কি দায়-দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকার তা হাদীসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি।
রাসূল (স) ও খুলাফায়ে রাশিদীন হাতে-কলমে বাস্তবে ও তা রূপায়িত করে দেখিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক জীবনে
মানব সমাজের বৃহত্তম অঙ্গন হচ্ছে আন্তর্জাতিকতা। মানুষ এ নিখিল বিশ্ব পরিবারের একজন সদস্য। তাই পৃথিবীতে
মানুষের কিছু দায়-দায়িত্ব আছে। পৃথিবীতে রয়েছে বিভিন্ন জাতি, দেশ, ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতির লোক। তাদের সাথে কি
আচরণ করতে হবে তার বিবরণ আমরা রাসূলের (স) হাদীসে পাই। অন্য জাতির সাথে সন্ধি, সম্পর্ক, যুদ্ধ, চুক্তি,
কুটনীতি সবকিছুর রূপরেখা হাদীসে পেয়ে থাকি।
ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জীবনে
মানুষ কেবল দেহ সর্বস্ব জীব নয়। মানুষের রয়েছে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জীবন। আধ্যাত্মিক জীবনের সমস্যাসমূহের
নির্ভুল ও সঠিক সমাধান আমরা হাদীসে রাসূলের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। কিভাবে আত্মাকে পরিশুদ্ধ ও উন্নত করতে হবে
তার নির্ভেজাল উদাহরণ ও বাস্তবতা হাদীসের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। এক্ষেত্রে কারও মনগড়া ব্যাখ্যা বা পদ্ধতি-নিয়মের
কাছে মুখাপেক্ষী করা হয়নি।
সারকথা
হাদীস ইসলামী জীবনব্যবস্থার দ্বিতীয় উৎস। মানব জীবন কীভাবে পরিচালনা করতে হবে তার সব কিছুর মূলনীতি
আল-কুরআনে আছে। আর হাদীসে তা বাস্তবায়নের পদ্ধতি বলে দেওয়া হয়েছে। মানুষের ইবাদত-বন্দেগীর নিয়মনীতি, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক জীবনের সকল দিক ও বিভাগের সব কিছুর দিকনির্দেশনা, আইন-কানুন
হাদীসের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। তাছাড়া কুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস হিসেবে এবং জীবনব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা উপস্থাপনের হাদীসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সীমাহীন। আমরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে হাদীসের
শিক্ষা ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে কল্যাণময় জীবন ও সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক উত্তর-প্রশ্ন
সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দিন
১. রাসূল (স)-এর অনুসরণ করা কী ?
ক. অপরিহার্য খ. মুস্তাহাব
গ. সুন্নাত ঘ. মোবাহ
২. হাদীস ইসলামী শরী‘আতেরক. প্রধান উৎস খ. দ্বিতীয় উৎস
গ. তৃতীয় উৎস ঘ. উৎস নয়
৩. ইসলামী শরী‘আতের আলোকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস কয়টি ?
ক. ৫ টি খ. ৪ টি
গ. ২ টি ঘ. ৬ টি
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর ঃ ১. ক, ২. খ, ৩. গ
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. মানব জীবনে হাদীসের গুরুত্ব বর্ণনা করুন।
২. জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস হিসেবে হাদীসের ভূমিকা আলোচনা করুন।
৩. সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে হাদীসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন।
৪. সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে হাদীসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন।
৫. ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জীবনে হাদীসের প্রয়োজনীয়তা লিখুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. জীবন সমস্যার সমাধানে আল-হাদীসের গুরুত্ব কতটুকু ? বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]