সহীহাইন
পূর্বের পাঠে আমরা জানতে পেরেছি, হাদীস শাস্ত্রের বহু গ্রন্থ সংকলিত হয়েছে। এবার আমরা জানব কোন কোন গ্রন্থকে
সহীহাইন বলে? সহীহ বুখারী ও মুসলিমকে একত্রে সহীহাইন বলা হয়। আমরা জানি, হাদীস শাস্ত্রে এ দু’টি গ্রন্থের
মর্যাদা অপরিসীম। গ্রহণযোগ্যতার শিখরে রয়েছে এ দু’টো গ্রন্থের অবস্থান।
হাদীস শাস্ত্রে সহীহাইনের মর্যাদা
সহীহাইনের পরস্পরের মাঝে স্থান নির্ণয়ে মতভেদ থাকলেও হাদীস শাস্ত্রে রয়েছে তাদের নিরংকুশ গ্রহণযোগ্যতা ও
মর্যাদা। তবে যে হাদীসটি বুখারী ও মুসলিম উভয়েই রেওয়াত করেছেন তার স্থান ও গ্রহণযোগ্যতা নিঃসন্দেহে সবার
ঊর্ধ্বে। এরপর পর্যায়ক্রমে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একক হাদীসের স্থান।
ইমাম বুখারী
যে সকল মুসলিম মনীষীর অক্লান্তসাধনা ও নিরলস প্রচেষ্টায় ইসলামের প্রতিটি বাণী ও জ্ঞান-বিজ্ঞান বিশ্ববাসীর নিকট
নির্ভুলভাবে পৌঁছেছে, তাঁদের মধ্যে হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর খ্যাতনামা হাদীস বিজ্ঞানী ইমাম বুখারীর নাম চির উজ্জ্বল
ধ্রæব জ্যোতির মত দেদীপ্যমান। তিনি ছিলেন হাদীসের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হাফিজ-ই-হাদীস। বিপুল ধন-ঐশ্বর্যের অধিকারী
এ ইমাম অকাতরে তা বিলিয়ে দেন হাদীস চর্চার কাজে। তাঁর অভাবনীয় সাধনার ফলশ্রæতিতে ‘সহীহ্ বুখারী’র মত
বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সংকলিত হয়। তাঁর পদাংক অনুসরণ করে অনেক ইমামই বিশুদ্ধ হাদীস সংগ্রহের অভিযানে নেমে
পড়েন। তাঁর হাদীস সংগ্রহ, সংকলন ও চর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য মুসলিম জাহান তাঁকে ‘ইমামুল মুহাদ্দিসীন ও
আমীরুল মুমিনীন ফিল-হাদীস’ উপাধিতে বিভূষিত করেন। তাঁর সম্বন্ধে আল্লামা ইবনে তাইমিয়া যথার্থই বলেছেন:
“আকাশের নীচে এবং মাটির উপরে ইমাম বুখারীর চেয়ে বড় কোন মুহাদ্দিস জন্মগ্রহণ করেননি।”
পরিচিতি
ইমাম বুখারীর (র) পূর্ণনাম আবূ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ঈসমাইল ইবনে ইবরাহীম ইবনুল মুগীরা ইবনে বারদিযবা
আল-বুখারী। তিনি উজবেকিস্তানের ইসলামী সভ্যতা সংস্কৃতির লীলাভূমি বুখারা নগরে ১৯৪ হিজরীর ১৩ ই শাওয়াল
জুমার দিন জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তিনি পিতৃহারা হন এবং মায়ের ¯েœহ-মমতায় লালিত-পালিত হয়ে বড় হয়ে
উঠেন।
শিক্ষা জীবন
ইমাম বুখারী (র) স্থানীয় মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা কৃতিত্বের সাথে সমাপন করেন। তিনি ছয় বছর বয়সে কুরআন মুখস্থ
করেন। মক্তব জীবনেই তাঁর মনে হাদীস শিক্ষা লাভের বাসনা ও চেতনা জাগ্রত হয়। আট বছর বয়সে হাদীস বর্ণনার
ব্যাপারে তাঁর বিস্ময়কর প্রতিভার স্ফূরণ ঘটে।
হাদীস অধ্যয়নে ইমাম বুখারী
ইমাম বুখারী (র) ষোল বছর বয়সে আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক ও ইমাম ওয়াকির সংকলিত হাদীস গ্রন্থ সম্পূর্ণ মুখস্থ করে
নেন। মা ও ভাইয়ের সাথে হাজ্জ উপলক্ষে মক্কা ও মদীনায় গমন করেন। এর পূর্বে তিনি বুখারার সকল প্রসিদ্ধ
মুহাদ্দিসের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করেন।
হাজ্জ শেষে মা ও ভাই দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু ইমাম বুখারী (র) তথায় অবস্থান করে মক্কা ও মদীনার প্রসিদ্ধ ইমাম
ও মুহাদ্দিসগণের কাছ থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য থেকে যান। এ সময় তিনি একাধারে হাদীস শিক্ষা ও লিখন কাজ
করতে থাকেন।
হাদীস শিক্ষা ও সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ইমাম বুখারী (র) ব্যাপক পরিকল্পনা করেন এবং বহু দেশ ও শহর পরিভ্রমণ করেন।
এক একটি শহরে উপস্থিত হয়ে সম্ভাব্য সকল হাদীস তিনি আয়ত্ত করেন। তারপর অন্য শহরের দিকে ছুটতেন। এভাবে
বিশাল ইসলামী সাম্রাজ্যের উল্লেখযোগ্য এমন কোন শহর ছিল না, যেখানে তিনি উপস্থিত হয়ে হাদীস সংগ্রহ করেন নি।
বালখ, বাগদাদ, মক্কা, মদীনা, বসরা, কুফা, আসকালান, হিমস, দামেশক, প্রভৃতি শহরে তিনি হাদীস সংগ্রহের জন্য
গমন করেন।
ইমাম বুখারী (র) এক হাজারের বেশি সংখ্যক মুহাদ্দিস থেকে হাদীস শিক্ষা লাভ করেছেন। তিনি নিজেই লিখেছেন,
“আমি এক হাজার আশিজন শায়খের নিকট হতে হাদীস গ্রহণ করেছি ও লিখেছি।” এই বিপুল সংখ্যক উস্তাদের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন- ইবরাহীম আবূ আসিম, ইমাম আহমদ, আলী ইবনুল মাদিনী, ইসহাক ইবনে রাহওয়াই,
হুমাইদী, উবায়দুল্লাহ ইবনে মূসা, মুহাম্মদ ইবনে সালাম প্রমুখ।
ইমাম বুখারী (র) থেকে সহীহ বুখারী গ্রন্থটি শ্রবণকারীদের সংখ্যা নব্বই হাজারের বেশী বলে উল্লেখ করা হয়। তাঁর
বিপুল সংখ্যক ছাত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিযী, আবু হাতিম আর-রাযী, ইমাম নাসায়ী,
ইমাম দারিমী (র) প্রমুখ।
ইমাম বুখারী (র) বিষ্ময়কর স্মরণ শক্তি ও প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি বাল্যকালেই সত্তর হাজার হাদীস সম্পূর্ণ
মুখস্থকরে নিয়েছিলিন। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, তিনি একবার মাত্র কিতাব দেখে বা শুনে তা হুবহু মুখস্থ বলতে
পারতেন। দশ বছরের সময় উস্তাদ ইমাম দাখেলীর শিক্ষালয়ে ইমাম বুখারীর ছাত্রাবস্থার একটি ঘটনা এখানে
উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার্থীরা খাতা-কলম নিয়ে হাদীস নোট করতেন। কিন্তু তিনি তা করতেন না। একবার তিরস্কার ছলে
তাঁকে বলা হল, তুমি খালি হাতে কী জন্য এখানে আস? তিনি বললেন, তোমাদের মত আমার লেখার দরকার নেই।
আমার সকল হাদীসই মুখস্থ আছে। এই বলে তিনি সমস্তহাদীস মুখস্থ শুনিয়ে দিলেন। আর তারা তাদের লিখিত
ভুলত্রæটি তাঁর থেকে সংশোধন করে নিলেন।
ইমাম বুখারী (র) বিপুল প্রাচুর্যের অধিকারী ছিলেন। কিন্তু তাঁর অর্থ-কড়ি ও ধন-সম্পদ শিক্ষার্থী ও দরিদ্রদের মধ্যে
ব্যয়িত হয়েছে। তিনি অত্যন্তঅনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। তিনি অতিশয় ভদ্র ও পূত: পবিত্র স্বভাবের ব্যক্তি
ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী (র) যথার্থই বলেছেন“ইমাম বুখারী এ উম্মতের ভূষণ, তাঁর মত লোক আমি কোথাও দেখিনি।”
আত্মসম্মানবোধে তিনি ছিলেন অত্যন্তসজাগ ও চেতনা দৃপ্ত। ক্ষমতাসীনদের থেকে সব সময় দূরে অবস্থান করতেন।
এজন্য তিনি জীবনে বহু বিপদ-আপদ ও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন।
হাদীসে তাঁর অবদান
ইমাম বুখারীর অমরকীর্তি তাঁর ‘সহীহুল বুখারী’ গ্রন্থ। ছয় লক্ষ হাদীস তিনি মুখস্থ জানতেন। তন্মধ্যে তিন লক্ষ সনদসহ
তাঁর কণ্ঠস্থ ছিল। এ বিপুলায়তন হাদীস থেকে যাচাই-বাছাই করে অত্যন্তকঠোর নীতিমালার ভিত্তিতে তাঁর ‘জামিউস
সহীহ’ সংকলন করেন। প্রতিটি হাদীস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করার পূর্বে তিনি অযূ ও গোসল করতেন। এরপর দু’রাকআত
নফল সালাত আদায় করতেন। তারপর ইস্তিখারা করে হাদীস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তা’ লিখতেন। এভাবে তাঁর
প্রন্থখানিতে ৭২৭৫টি হাদীস সংকলন করেন। তাঁর এই অসামান্য অবদান মুসলিম জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
তাছাড়াও তাঁর অমূল্য অবদানের মধ্যে রয়েছে হাদীস শাস্ত্রে বহু মূল্যবান রচনা১. আত্ তারিখুল কাবীর ২. আত্-তারিখুস সগীর
৩. আত্ তারিখুল আওসাত ৪. আদাবুল মুফরাদ
৫. খালকু আফআল আল-ইবাদ ৬. কিতাবুল যু’আফা
৭. জামিউল কাবীর ৮. মুসনাদুল কাবীর
৯. কিতাবুল আশরিবা ১০. কিতাবুল হিবা
১১. কিতাবুস সাহাবা ১২. কিতাবুল ইলাল
১৩. কিতাবুল মাবসুত ইত্যাদি
তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করে মণীষীগণ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন। অনেকে ইমাম বুখারীকে দুনিয়াতে আল্লাহর
নিদর্শন বলে মন্তব্য করেছেন। আল্লাহর কিতাবের পরই বিশুদ্ধতার দিক দিয়ে বুখারী শরীফের স্থান।
ওফাত : এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ ২৫৬ হিজরী সনের ৩০ রজব ৬২ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত