সালাতের গুরুত্ব, সালাতের ফরয হওয়ার বিষয় এবং সালাতের ওয়াক্ত স¤পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন।

সালাত আদায়ের নির্দেশ
عن بریدة رضى اللھ تعالى عنھا قال قال رسول اللھ صلى اللھ علیھ و سلم: ان العھد
الذى بیننا و بینھم الصلوة فمѧن تركھѧا فقѧد كفѧر. (مسѧند احمѧد. ترمѧذى . نسѧائى. ابѧن
ماجھ)
হযরত বুরায়দা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন : নিশ্চয় আমাদের ও ইসলাম গ্রহণকারী
সাধারণ লোকদের পরস্পরের মধ্যে সালাতের চুক্তি ও প্রতিশ্রæতি রয়েছে। কাজেই যে লোক সালাত ত্যাগ করবে, সে
যেন কুফরির পথ গ্রহণ করল। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজহ)
ব্যাখ্যা
এ হাদীস অনুযায়ী বোঝা যায় কাফির ও মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্যের ভিত্তি ও মানদন্ড হচ্ছে সালাত তরক করা। যে
লোক সালাত পড়ে না, সে মুসলিম রূপে গণ্য নয়। যে সালাত পড়ে- ত্যাগ করে না সে মুসলমান। এ কারণে নবী
করীম (স.) ইসলাম গ্রহণকারী লোকদের নিকট থেকে সালাত পড়ার ও ত্যাগ না করার প্রতিশ্রæতি গ্রহণ করতেন। এ
পর্যায়ের লোকদের সাথে যে চুক্তি গৃহীত হত তার ভিত্তি ছিল সালাত। কেননা সালাত পড়াই ঈমান ও মুসলমান হওয়ার
বাস্তব প্রমাণ। সূতরাং সালাত কায়েম করা ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলে করীম (স.) বলেছেন ঃ কুফর ও শিরক-এর মাঝে সালাত ত্যাগ
করাই ব্যবধান মাত্র। (মুসলিম)
ইমাম নববী লিখেছেন, যে কাজ না করলে কুফরি হয়ে যায় তা দেখানোই এ ধরনের হাদীসমূহের উদ্দেশ্য। দৃষ্টান্তস্বরূপ
বলা যায়, আল্লাহ তাআলা ইবলীসকে বলেছিলেন আদমকে সিজদা করার জন্য। কিন্তু ইবলীস এ আদেশ অমান্য করে।
এ ঘটনার উল্লেখ করে কুরআন মাজীদে বর্ণিত হয়েছে- . َنْ ریِ فِ اَ لك ْ اَ نِ مَ انَ ك
“সে কাফির হয়ে গেল।”
সালাত পড়ার জন্যও আল্লাহ তাআলা বারবার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন- .الصلوة اقیموا
“সালাত কায়েম কর।”
এ নির্দেশ পালন না করলে এবং অমান্য করলে কাফির হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক এবং যুক্তিসঙ্গত। এটা শুধু সালাত ত্যাগ
করা বা না পড়া সম্পর্কে প্রযোজ্য। কিন্তু যদি কেউ ইবলীসের ন্যায় অহংকার বশতই সালাত প্রত্যাখ্যান করে কিংবা
সালাতকে ফরয হিসেবে মেনে না নেয়, তা হলে তার কাফির হয়ে যাওয়া অকাট্য ও অবধারিত। এরূপ ব্যক্তি মুসলিম
মিল্লাত থেকে বহি®কৃত হওয়ার যোগ্য। অবশ্য নিছক গাফিলতির কারণে যদি কেউ সালাত না পড়ে ; কিন্তু তা ফরয
হওয়ার প্রতি তার পূর্ণ বিশ্বাস অক্ষণœ থাকে এবং ফরয মনে করে, তা হলে এ ব্যক্তি কাফির গণ্য হবে কিনা সে বিষয়ে
মতভেদ রয়েছে। ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী ও অন্যান্য অধিকাংশ ফিকাহবিদের মতে সে লোক কাফির নয়, সে
ফাসিক। তাকে তাওবা করে রীতিমত সালাত পড়ার জন্য প্রস্তুত করা আবশ্যক। যদি সে তাওবা না করে তাহলে ঃ
قتلناه حدا كالزانى المحصن.
আমরা তাকে মৃত্যুদন্ড দেব-বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করলে যেমন দন্ড দেওয়া হয় ঠিক সেরূপ।
কিন্তু ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ মনীষী ভিন্ন মত প্রকাশ করে বলেছেন; তাকে মৃত্যুদন্ড নয়,
সাধারণ শাস্তিদানই বিধেয়।
হযরত আবূদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমার প্রিয় বন্ধু ও সুহৃদ নবী করীম (সা) আমাকে এ বলে
উপদেশ দিয়েছেন ঃ
১. আল্লাহর সাথে এক বিন্দু পরিমাণও শিরক করবে না- তোমাকে ছিন্নভিন্ন ও টুকরো টুকরো করা কিংবা আগুনে ভস্ম
করে দেয়া হোক না কেন।
২. সাবধান, কখনো ইচ্ছা বা সংকল্প করে কোন ফরয সালাত ত্যাগ করবে না। কেননা যে লোক ইচ্ছা পূর্বক সালাত
ত্যাগ করে তার উপর থেকে আল্লাহ তাআলার সে দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়, যা অনুগত ও ঈমানদার বান্দার জন্য আল্লাহ
তাআলা গ্রহণ করেছেন।
৩. আর কখনো মদ্য পান করবে না। কেননা তা সর্ব প্রকার অন্যায়, পাপ ও বিপর্যয়ের চাবি কাঠি। (ইবনে মাজাহ)
হাদীসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি স্পষ্ট পথ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রথম বলা হয়েছে ঃ আল্লাহর সাথে কাউকে
এবং কোন জিনিসকেই শরীক করবে না। এমনকি শিরক না করার জন্য যদি নিহত থেকে, ছিন্নভিন্ন ও টুকরো টুকরো
থেকে কিংবা অগ্নিকুÐলিতে নিক্ষিপ্ত থেকে হয়, তবুও তা করা যাবে না। অন্তত কোন ঈমানদার ব্যক্তিই তা করতে
পারে না। ঈমান রক্ষার জন্য প্রাণ দিতে হলেও ঈমানদার লোকদের অকুণ্ঠিত চিত্তে ও নির্ভীক হৃদয়ে সে জন্য প্রস্তুত
হওয়াই ঈমানের ঐকান্তিক দাবী।
প্রসঙ্গত মনে রাখা আবশ্যক, অনুরূপ অবস্থার মধ্যে পড়ে যদি কেউ কেবল মুখে কুফরি কিংবা শিরকী কথার উচ্চারণ
করে, তবে আল্লাহর নিকট সে নিশ্চয়ই কাফির বা মুশরিক হয়ে যাবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন-
مَ ѧن كَفَѧرَ ب ِٱلل َّѧھِ مِѧن بَعْѧدِ إیمَانِѧھِ إ ِلا َّ مَ ѧنْ أ ُكْѧرِ ه َ وَ قَلْبُѧھُ مُطْمَ ѧئِنٌّ ب ِٱلإِ یمَ ѧانِ وَ ل َѧـٰكِن مَّѧن شَѧرَ حَ
ب ِالْكُفْرِ صَدْرا ً فَع َل َیْھِمْ غَضَبٌ مِّنَ ٱلل َّھِ وَ ل َھُمْ عَذَابٌ عَظِیمٌ . (النحل-١٠٦ (
কেউ তার ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত
হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্য আছে মহাশান্তি; তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয় কিন্তু তার
চিত্ত ঈমানে অবিচলিত। (সূরা আল-নাহল : ১০৬)
এ আয়াতে প্রধানত দুটি কথা বলা হয়েছে। প্রথমতঃ ঈমানের পর যারা কুফরি কবুল করবে ও তাদের উপরই এবং
তাদের জন্যই বড় আযাব নির্দিষ্ট। আর দ্বিতীয় হল, যাদেরকে কুফরি বা শিরক করতে বাধ্য করা হবে, তাদের হৃদয়
মন যদি আল্লাহর প্রতি ঈমানে পূর্ণ উন্মুক্ত, নিশ্চিত ও আশ্বস্তথাকে, তা হলে তারা আল্লাহর গযব ও আযাব থেকে
নিষ্কৃতি পাবে।
আল্লামা ইবনে কাসীর এ প্রসঙ্গে বলেন- যে লোক কেবল মুখের ভাষায় আল্লাহর সাথে কুফরি বা শিরক করবে ও কেবল
মৌখিক কথায় কাফির মুশরিকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করবে- এ কারণে যে, তা করার জন্য তার উপর জোর
জবরদস্তিকরা হয়েছে, মারধর করা হয়েছে এবং নানাভাবে অত্যাচার- নিপীড়নে জর্জরিত করে তোলা হয়েছে, -কিন্তু
আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমানের ব্যাপারে যার হৃদয় মন অন্তর সম্পূর্ণ স্থির ও সম্পূর্ণ অবিচল থাকবে, সে লোক
আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর গজব ও আযাব থেকে মুক্ত থাকবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- এ
আয়াত হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা.) সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। তাঁকে মুশরিকরা নির্মমভাবে নিপীড়িত ও
অত্যাচারিত করেছিল হযরত মুহাম্মদ (স) কে নবী ও রাসূল বলে স্বীকার করার কারণে। তিনি এতে অতিষ্ঠ ও
নিরুপায় হয়ে তাদের সাথে একমত প্রকাশ করেন। পরে তিনি রাসূলে করীমের নিকট এ ঘটনা বিবৃত করেন। এর
পরই কিংবা এ প্রসঙ্গেই এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।
তখন নবী করীম (স.) হযরত আম্মার (রা.) কে জিজ্ঞেস করলেনقلبك تجد كیف “তুমি তোমার মনের অবস্থা কিরূপ পেয়েছ ?”
তিনি বললেন-بالایمان مطمئنا ঈমানে অবিচল ও পূর্ণ আশ্বস্ত। তখন নবী করীম (সা) বললেনفعد عادوا ان তা হলে কোন আশংকাই নেই। তারা যদি আবার তোমাকে বাধ্য করে, তবে তুমিও মৌখিক ঐক্য
জানানোর কাজ করতে পার।
আলোচ্য হাদীসে দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে ফরয সালাত সম্পর্কে। ইচ্ছা করে কখনই ফরয সালাত ত্যাগ করবে না।
কেননা যে লোক ইচ্ছা করে ফরয সালাত ত্যাগ করে তার সম্পর্কেআল্লাহর গ্রহণ করা রহমত দান ও রক্ষণাবেক্ষণের
দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। এ হাদীসে সালাত পর্যায়ে বলা হয়েছে, ইচ্ছাপূর্বক ফরয সালাত ত্যাগ করা একটা সাধারণ
সামান্য ও নগণ্য গুনাহ নয়। প্রকৃতপক্ষে এটা আল্লাহর বিরোধিতামূলক একটা অতিবড় অপরাধ, তাতে সন্দেহ নেই।
এ অপরাধ করার পর কোন লোকই আল্লাহর সে বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহ লাভের অধিকারী থাকতে পারে না। তখন
আল্লাহর নিজের দয়ায় গ্রহণ করা দায়িত্ব আপনা আপনি নিঃশেষ হয়ে যায়। আলোচ্য হাদীসে ফরয সালাত ইচ্ছাপূর্বক
তরক করার পরিণাম সম্পর্কে এ কথাই বলা হয়েছে।
সালাত সম্পর্কিত অপর একটি হাদীসের শেষভাগে রাসূলে করীম (সা)-এর এ বাক্যাংশে উদ্ধৃত হয়েছে-
من تركھا متعمدا فقد خرج من الملة.
“যে লোক ইচ্ছা করে ফরয সালাত ত্যাগ করবে, সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যায়।” সুতরাং ইচ্ছাকৃতভাবে
সালাত আদায় না করা কুফরি এবং মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে গিয়েছে বলে বুঝতে হবে।
এসব হাদীসে দুটি মূল কথা বলা হয়েছে। একটি এই যে, ফরয সালাত তরক করা কুফরী পর্যায়ের কাজ। আর দ্বিতীয়
হল, এর দরুন কার্যত মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যাওয়া হয়।্ এর কারণ এই যে সালাত ইসলামের সর্ব প্রধান ও
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এটা ইচ্ছাপূর্বক পরিত্যাগ করা এমন একটি সুস্পষ্ট ও অকাট্য প্রমাণ, যা থেকে নিঃসন্দেহে
বুঝতে পারা যায় যে, আল্লাহ, রাসূল ও দীন ইসলামের সাথে এ লোকটির কার্যত কোন সম্পর্ক নেই এবং সে নিজেকে
সালাতী লোকদের সমন্বয়ে গঠিত ইসলামী সমাজ ও মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করে না। সে নিজেই নিজেকে এর বাইরে
নিয়ে গিয়েছে। বিশেষত রাসূলে করীম (সা)-এর সোনালী যুগে কোন মুসলমান সালাত তরককারী থেকে পারে তা ছিল
কল্পনাতীত ব্যাপার। তাই সেকালে সালাত পড়া মুসলমান হওয়ার এবং সালাত তরক করা কাফির হওয়ার সুস্পষ্ট
নিদর্শনরূপে পরিগণিত হতো।
অর্থাৎ সালাত তরক করলে কুফরী হয়, এটাই ছিল সাহাবীদের বিশ্বাস, তৃতীয়ত বলা হয়েছে মদ্যপান সম্পর্কে। এতে
মদ্যপান করতে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। কুরআনের আয়াতেই মদ্যপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও সম্পূর্ণ বর্জনীয়
বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন-
یَѧـۤأ َیُّھَا ٱل َّѧذِینَ آمَنُѧوا ْ إ ِنَّمَ ѧا ٱلْخَمْѧرُ وَ ٱلْمَیْسِѧرُ وَ ٱلأ َنصَѧابُ وَ ٱلأ َزْ لاَمُ رِ جْѧسٌ مِّѧنْ عَمَ ѧلِ
ٱلشَّیْطَانِ فَٱجْتَنِبُوهُ ل َع َل َّكُمْ تُفْلِحُونَ . (المائدة-٩٠ (
হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা
বর্জন- যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আল-মায়িদা : ৯০)
আয়াতের বক্তব্য হল, মদ্য প্রথমত অপবিত্র, দ্বিতীয়ত তা পান করা সম্পূর্ণ শয়তানী কাজ। তৃতীয়ত এটা পরিহার
করার এটা স্পষ্ট নির্দেশ এবং চতুর্থ তা পরিহার করলেই কল্যাণের আশা করা যায়। আর মদ্যপানে এ সমস্তঅন্যায় ও
মলিনতায় নিমজ্জিত হওয়া অনিবার্য। পরবর্তী আয়াতে এ নিষেধের কারণ বলা হয়েছে ঃ শয়তান এ মদ্যপান ও জুয়া
খেলার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রæতার সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর যিকর ও সালাত থেকে লোকদেরকে
বিরত রাখে।
সালাত আদায় করা মুক্তির কারণ হবে
عن ابى ھریرة رضى اللھ تعالى عنھ قال سمعت رسول اللھ صلى اللѧھ علیѧھ و سѧلم
یقول. ان اول ما یحاسب بھ العبد یوم القیامة من عملھ صلاتھ فان صѧلحت فقѧد افلѧح
و انجح و ان فسدت فقد خاب و خسر فان انتقص من فریضة شیئا قال الѧرب تبѧارك
و تعالى انظروا ھل لعبدى مѧن تطѧوع فیكمѧل بھѧا مѧا انѧتقص مѧن الفریضѧة ثѧم یكѧون
سائر عملھ على ذلك. (ترمذى)
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে করীম (স)-কে বলতে শুনেছি ঃ কিয়ামতের দিন
বান্দার আমল পর্যায়ে সর্বপ্রথম তার সালাত সম্পর্কে হিসাব নেয়া হবে। তার সালাত যদি যথাযথ প্রমাণিত হয় তবে সে
সাফল্য ও কল্যাণ লাভ করবে। আর যদি সালাতের হিসাবই খারাপ হয় তবে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্তহবে। সালাতের
ফরযের মধ্যে যদি কিছু কম পড়ে, তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তখন বলবেন ঃ তোমরা দেখ, আমার বান্দার কোন
নফল সালাত বা নফল ইবাদত আছে কিনা? যদি থাকে, তা হলে এর দ্বারা ফরযের ঘাটতি পূরণ করা হবে। পরে তার
অন্যান্য সব আমল এরই ভিত্তিতে বিবেচিত হবে ও অনুরূপভাবে ঘাটতি পূরণ করা হবে। (তিরমিযী)
ব্যাখ্যা
ইসলামী শরীআতে ইবাদতসমূহের মধ্যে সালাত সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এ সালাত সঠিকভাবে ও
রীতিমত আদায় করার উপরই বান্দার পরকালীন মুক্তি ও সাফল্য সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। আর বান্দার উপর আল্লাহর
হকসমূহের মধ্যে এ সালাত সম্পর্কেই কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম হিসাব নেয়া হবে। এ হিসাবে যদি কারো সালাত ঠিক
ঠিকভাবে পড়া হয়েছে বলে প্রমাণিত হয় তবেই সে নি®কৃতি পাবে, পাবে কল্যাণ ও সাফল্য। বুঝতে হবে সে লোক
তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছে। আর যদি কারো সালাতের হিসাবে দেখা যায় যে, সে তা পড়েনি কিংবা পড়েছে বটে,
কিন্তু নির্ভুলভাবে নয়, এমনভাবে পড়েছে যা ভুল ও গ্রহণ অযোগ্য, তবে তার ব্যর্থতা ও ক্ষতিগ্রস্ততা অবধারিত। সে
সাফল্য ও কল্যাণ লাভ থেকে বঞ্চিত হবে। আযাব পাওয়া থেকে তার নি®কৃতি লাভ সম্ভব হবে না।
সালাত পড়েছে এমন বান্দার হিসাবে যদি দেখা যায় যে, ফরয সালাত আদায়ের ব্যাপারে কিছু ঘাটতি পড়েছে, মাত্রা
কিংবা মান যথাযথ রক্ষিত হয়নি, তখন আল্লাহ তাআলা তার নফল সালাত বা নফল ইবাদত দ্বারা সে ঘাটতি পূরণ
করে দেবেন। মুসনাদে আহমদ-এ এখানে আল্লাহর হুকুমের ভাষা হল ঃ
فكملوا بھا فریضتھ .
“সেই নফল দ্বারা তার ফরয সম্পূর্ণ করে নাও।”
এ সম্পর্কে বলা হয়েছে -
و اللھ سبحانھ و تعالى یقبل من التطوعات الصحیحة عوضا من الصلوات
المفروضة .
“আল্লাহ তাআলার বান্দার সহীহভাবে আদায় করা নফল সালাত বা নফল ইবাদত ফরয সালাতের বদলে ও বিকল্পরূপে
কবুল করবেন।”
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয
عن طلحة بن عبید اللھ رضى اللھ تعالى عنھ یقول. جاء رجل الى رسول اللھ صѧلى
اللھ علیھ و سلم من اھل نجد ثائر الرأس نسمع دوى صوتھ ولا نفقھ مایقول حتى دنا
من رسول اللھ صلى اللѧھ علیѧھ و سѧلم فѧاذا ھѧو یسѧئل عѧن الاسѧلام فقѧال رسѧول اللѧھ
صلى اللھ علیھ و سلم خمس صلوات فى الیوم واللیلة فقال ھѧل علѧى غیѧرھن قѧال لا
الا ان تطوع و صیام شھر رمضان فقال ھل على غیره فقال لا الا ان تطوع و ذكѧر
لھ رسول اللھ صلى اللھ علیھ و سلم الزكوة فقال ھل على غیره قѧال لا الا ان تطѧوع
قال فادبر الرجل و ھو یقول واللھ لا ازید على ھذا ولا انقص منѧھ فقѧال رسѧول اللѧھ
صلى اللھ علیھ و سلم افلح ان صدق. (مسلم)
হযরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নজদের অধিবাসীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি
রাসূলে করীম (সা)-এর নিকট আগমন করল। লোকটির মাথার চুল উস্কুখুসকু ছিল। তার মুখনিঃসৃত শব্দ আমরা
শুনতে পাচ্ছিলাম কিন্তু এর কোন অর্থ আমরা বুঝতে পার ছিলাম না। পরে সে লোকটি রাসূলে করীম (সা)-এর নিকটে
উপস্থিত হল এবং সহসা সে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল। তখন রাসূলে করীম (সা) বললেন ঃ দিন ও রাত্রের
মধ্যে পাঁচবার সালাত পড়তে হবে। লোকটি জিজ্ঞেস করল, এটা ছাড়া আরও সালাত পড়া কি আমার কর্তব্য? বললেন
ঃ না। তবে তুমি যদি অতিরিক্ত কর। আর (দ্বিতীয় কর্তব্য হল) রমযান মাসের রোযা পালন করবে। লোকটি জিজ্ঞেস
করল, এটা ছাড়াও রোযা রাখা আমার কর্তব্য কি ? বললেন ঃ না, তবে তুমি যদি অতিরিক্ত কর। অতঃপর রাসূলে
করীম (সা) সে লোকটিকে যাকাতের কথা বললেন। লোকটি বলল, এটা ছাড়াও আমার উপর কর্তব্য আছে কি?
বললেন, না। তবে তুমি যদি অতিরিক্ত কর। এর পর লোকটি এ কথা বলতে বলতে পিছনে সরে গেল যে, আল্লাহর
শপথ, আমি এর উপর কিছুই বাড়াব না ও এটা থেকে কিছুই কমাব না। একথা শুনে রাসূলে করীম (সা) বললেনঃ যদি
লোকটি সত্য বলে থাকে, তা হলে সে নিশ্চয় কল্যাণ লাভ করবে। (মুসলিম)
এ হাদীসে নজদবাসী এক ব্যক্তির প্রশ্নের জবাবে রাসূল (সা)-এর বলা কথাগুলো থেকে ইসলামের প্রধান রূকনগুলোর
মধ্যে তিনটির উল্লেখ পাওয়া য়ায়। তা হলঃ সালাত, সাওম ও যাকাত। সালাত পর্যায়ে জানা গেল, দিন-রাতের মধ্যে
মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরয এবং ইসলামী শরীআতের দৃষ্টিতে অবশ্য কর্তব্য। রোযার পর্যায়ে জানা
গেল, কেবল রমযানের একটি মাস রোযা থাকা কর্তব্য। আর যাকাত পর্যায়ে বলা হয়েছে, কেবল যাকাত আদায় করাই
ফরয। এর পরও কিছু কর্তব্য আছে কিনা, প্রত্যেকটির উল্লেখের পর লোকটি রাসূলে করীম (সা) কে এ প্রশ্ন করেছে।
আর প্রত্যেকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন। কথাটি হল ঃ
لا الا ان تطوع .
না, তবে তুমি যদি অতিরিক্ত কিছু কর।
এ বাক্যটির দু’টি অর্থ করা যায়। একটি-
لكن یستحب لك ان تطوع .
“তবে তুমি অতিরিক্ত আরো কিছু কর, এটাই তোমার জন্য ভালো।”
অর্থাৎ কেবল ফরয সালাত পড়েই ক্ষান্তহয়ে থেকো না। তা ছাড়া অতিরিক্ত নফল হিসাবে তোমার আরও সালাত
আদায় করা উচিত, যেমন বিতর, সুন্নাত এবং নফল সালাত ইত্যাদি। কেবল রমযান মাসের রোযা থেকেই দায়
এড়াতে চেয়ো না, বরং কিছু কিছু নফল রোযা রাখাও ভালো। আর কেবল শতকরা চল্লিশ ভাগ হিসাব করে ও গণনা
করে যাকাত আদায় করেই মনে করো না যে, আর একটি পয়সা কাউকেও দিতে হবে না। না, তা আদায় করার পরও
সাধারণ দান হিসাবে নফল স্বরূপ দান-সাদকা করা উচিত। এ বাক্যটির দ্বিতীয় অর্থ হল ঃ
من شرع فى صلاة نفل اوصوم نفل وجب علیھ اتمامھ .
ফরয সালাত ও রোযা আদায়ের পর কেউ যদি নফল সালাত পড়তে এবং নফল সাওম পালন শুরু করে, তাহলে তাকে
সম্পূর্ণ করা তার উপর ওয়াজিব।
এসব প্রশ্নোত্তর শেষ হওয়ার পর লোকটি চলে যাবার সময় যে কথাটি বলেছিল, তা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।
লোকটি বলেছিল ঃ আমি এর উপর কিছুই বাড়াব না এবং এ থেকে কিছুই কমাব না। এটা প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তির
স্বতঃস্ফুর্ত উক্তি। বস্তুত ইসলামের মৌল ভাবধারা যার হৃদয়ঙ্গম হয়েছে, সে কখনও ইসলামের মূল বিধানের উপর নিজ
থেকে কিছু বৃদ্ধি করে না, মূল বিধান থেকে কাট-ছাট করেও নেয় না। বরং মূল বিধান ও ব্যবস্থাকেই পূর্ণ আন্তরিকতা
ও অপরিসীম আল্লাহ ভীতি সহকারে অনুসরণ করে চলতে চেষ্টা করাই ঈমানদার লোকের কাজ। কেননা ইসলাম সম্পূর্ণ
আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ। এটা কোন লোকের মনগড়া বিধান নয়। ইচ্ছা করে কেউ এর উপর বৃদ্ধিও করতে
পারে না, কেউ কমও করতে পারে না। তা করার অধিকার কারো নেই। বৃদ্ধি কিংবা কমতি যা-ই করা হোক না কেন,
তাতে তা আর আল্লাহর বিধান থাকবে না, তার মনগড়া বিধান হয়ে যাবে।
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ফরয সালাত
হিসেবে ফজর, যুহর, আসর, মাগরিব এবং ঈশা এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রত্যেকটি প্রাপ্ত বয়স্ক, জ্ঞানবান মুসলিম নরনারীর উপর ফরয। এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় ও নাম অন্যান্য হাদীস দ্বারা স্বীকৃত। সুতরাং পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের
ব্যাপারে কম করা কোন মুসলমানের জন্য বৈধ নয়। ফরয সালাত হিসেবে দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত তাকে আদায় করতেই
হবে। নতুবা সে অবহেলাবশতঃ আদায় না করলে ফাসেক এবং অহংকার বশতঃ আদায় না করলে কাফির হয়ে যাবে।
তাই, প্রতিটি মুকাল্লাফ অর্থাৎ শরীআতের বিধান যার উপর প্রযোজ্য হয়েছে এমন ব্যক্তিকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মৃত্যু
পর্যন্তআদায় করতে হবে। এ থেকে সে কখনো নিস্কিৃতি লাভ করবে না বা অব্যাহতি পাবে না।
সালাত ফরয হওয়ার ইতিহাস
عن انس بن مالك قال فرضت على النبى صلى اللھ علیھ و سلم الصلوات لیلة اسرى
بھ خمسین ثم نقصت حتى جعلت خمسا ثم نودى یا محمد انھ لا یبدل القول لدى وان
لك بھذه الخمس خمیسن. (مسند احمد. ترمذى. نسائى)
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা)-এর প্রতি মিরাজের রাতে প্রথম পঞ্চাশ
ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছিল। পরে তা কম করে মাত্র পাঁচ ওয়াক্ত স্থায়ী করে রাখা হয়। অতঃপর ঘোষণা করা
হয়, হে মুহাম্মদ ! নিশ্চয় জেনে রেখো, আমার নিকট গৃহীত সিদ্ধান্তকখনও পরিবর্তিত হয় না। আপনার জন্য এ পাঁচ
ওয়াক্ত সালাতই পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ)
ব্যাখ্যা
উদ্ধৃত হাদীসটি ‘হাদীসুল ইসরা’ বা মি’রাজ সংক্রান্তদীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ। এটা থেকে প্রথমত জানা যায় যে,
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয হয়েছে মি’রাজের রাত্রে, যখন নবী করীম (সা) আল্লাহর অতীব নিকটে সিদরাতুল মুনতাহা
পর্যন্তউপণীত এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পূর্ণমাত্রায় লাভ করেছিলেন। এ সময় আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের প্রতি প্রথমত
দিন রাত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দেন। কিন্তু এত বেশী সালাত যথারীতি আদায় করা
মুসলমানদের পক্ষে অপরিসীম কষ্টকর হবে বিধায় আল্লাহ তাআলা দয়াপরবশ হয়ে শেষ পর্যন্তশুধু পাঁচ ওয়াক্ত সালাতই
বহাল রাখলেন এবং এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতই পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান সওয়াব বহন করবে, এ কথাও তিনি জানিয়ে
দিলেন।
এ হাদীসটি থেকে একথাও জানা গেল যে, ফরয সালাত কেবল এ পাঁচ ওয়াক্ত। এটা ছাড়া আর কোন সালাত ফরয
নয়। জুমুআর সালাত শুক্রবার দিন যুহরের স্থলাভিষিক্ত, জুহরের ওয়াক্তে তা পড়া হয় এবং তাও ফরয।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয এটা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। মি’রাজের পূর্বে নবী করীম (স) সালাত পড়তেন। কিন্তু
তখনকার সালাত ছিল প্রধানত রাত্রিকালীন এবং তখন সালাতের রাকআতও নির্দিষ্ট ছিল না, এমন কি তখন তার জন্য সময়ও নির্ধারিত ছিল না।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়
عن عبد اللھ بن عمروبن العاص رضى اللھ تعالى عنھ قال قال رسول اللھ صلى
اللھ علیھ و سلم: وقت الظھر اذا زالت الشمس و كان ظل الرجل كطولھ ما لم
یحضر العصر و وقت العصر ما لم تصفر الشمس و وقت صلوة المغرب ما لم
یغب الشفق و وقت العشاء الى نصف اللیل الاوسط و وقت صلوة الصبح من طلوع
الفجر ما لم تطلع الشمس فاذا طلعت الشمس فامسك عن الصلوة فانھا تطلع بین
قرنى الشیطان. (مسلم)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে করীম (সা) বলেছেন: যুহরের
সালাতের সময় হয় তখন, যখন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির ছায়া তার দৈর্ঘের সমান হয়। আর
এটা আসরের সালাতের সময় হওয়া পর্যন্তথাকে। আসরের সালাতের সময় সূর্যের হলুদ বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্তস্থায়ী
হয়, মাগরিবের সালাতের সময় অস্তআকাশের লালিমা বিলীন হয়ে না যাওয়া পর্যন্তথাকে। ইশার সালাতের সময় থাকে
মধ্য রাত্রি পর্যন্ত। আর ফজরের সালাতের সময় প্রথম উষা লগ্ন থেকে সূর্যোদয় পর্যন্তথাকে। কিন্তু যখন সূর্যোদয় থেকে
থাকে তখন সালাত পড়া থেকে বিরত থাক। কেননা, ওটা শয়তানের দুই শৃংগের মধ্যবর্তী স্থানে উদিত হয়।
(মুসলিম)
ব্যাখ্যা
এ হাদীসে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে পাঁচবার সালাত পড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সালাতের ওয়াক্তের
সূচনা ও শেষ সীমা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সালাতের ওয়াক্তসমূহ নি¤œরূপ১. যুহরের সময় সূর্যের মধ্য আকাশ থেকে পশ্চিমদিকে ঢলে পড়ার সময় থেকে আসরের সালাতের সময় উপস্থিত না
হওয়া পর্যন্তথাকে। সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলেছে কিনা তা অনুমান করার জন্য হাদীসে একটি মানদন্ডের উল্লেখ করা
হয়েছে। বলা হয়েছে একজন মানুষের ছায়া যখন তার দৈর্ঘ্যরে সমান হবে, তখনি যুহরের সালাতের সময় হয়েছে
বলে মনে করতে হবে।
২. আসরের সালাতের সময় হয় এর পর সূর্যের দীপ্ত খরতাপ যখন কিছুটা নিস্তেজ হয়ে আসবে এবং সূর্যরশ্মির
ফ্যাকাশে রঙ ধারণ করা পর্যন্ততা স্থায়ী হবে।
৩. মাগরিবের সালাতের সময় হয় সূর্যাস্তহওয়ার পর মুহুর্ত থেকে এবং তা স্থায়ী থাকে পশ্চিম আকাশের লালিমা
বিলীন না হওয়া পর্যন্ত।
৪. অস্তআকাশের লালিমা বিলীন হয়ে গেলে তখন ইশার সালাতের সময় উপস্থিত হয়। এটা স্থায়ী থাকে অর্ধেক রাত
পর্যন্ত।
৫. পূর্ব আকাশে প্রথম উষার উদয় হলে ফজরের সালাতের সময় হয় ও সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ততা স্থায়ী থাকে।
সূর্যোদয় থেকে শুরু করলে তখন সালাত পড়া নিষেধ। কেননা শয়তানের দুই শৃংগের মধ্যবর্তী স্থানে তা উদিত
হয়। ‘শয়তানের শৃংগ’ অর্থ, এর সম্মুখভাগ, এর ললাট দেশ। সূর্যোদয়ের সময় শয়তান তার সম্মুখদেশে নিজেকে
স্থাপন করে এবং সূর্যপূজারীদের নিকট থেকে পূজা গ্রহণ করে। কিন্তু কার্যত সূর্যের পরিবর্তে শয়তানের পূজা
অনুষ্ঠিত হয়। শয়তান মনে করে, এরা সূর্যের নয়, তারই পূজা করছে। এজন্য ঠিক এ সময় সালাত পড়তে নবী
করীম (সা) নিষেধ করেছেন। কেননা এ সময় সালাত পড়লে সূর্য পূজারীদের সাথে সাদৃশ্য হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে।
عن ابى ھریرة رضى اللھ تعالى عنھ قال قال رسول اللھ صلى اللھ علیھ وسلم:
ان للصلوة اولا واخرا وان اول وقت صѧلوة الظھѧر حѧین تѧزول الشѧمس واخѧر
وقتھا حین یدخل وقت العصر وان اول وقѧت صѧلوة العصѧر حѧین یѧدخل وقتھѧا
وان أخر وقتھا حین تصفر الشمس وان اول وقت المغرب حین تغѧرب الشѧمس
وان اخر وقتھا حین یغیب الافق. وان اول وقت العشاء حѧین یغیѧب الأفѧق. وان
اخر وقتھا حین ینتصف اللیل وان اول وقت الفجر حѧین یطلѧع الفجѧر وان اخѧر
وقتھا حین تطلع الشمس. (ترمذى)
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেন : প্রত্যেক সালাতেরই একটা প্রথম
সময় রয়েছে এবং রয়েছে একটা শেষ সময়। এর বিবরণ এই যে, যুহরের সালাতের প্রথম সময় শুরু হয় তখন, যখন
সূর্য মধ্য আকাশ থেকে পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ে। এর শেষ সময় আসরের সালাতের সময় শুরু হওয়ার সময় পর্যন্ত
থাকে। আসরের সালাতের প্রথম সময় শুরু হয় ঠিক এর সময় সূচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। আর এর শেষ সময় তখন
পর্যন্তথাকে যখন সূর্যরশ্মি হরিৎবর্ণ ধারণ করে। মাগরিব সালাতের সময় শুরু হয় যখন সূর্যাস্তঘটে। আর এর শেষ সময়
তখন পর্যন্তথাকে যখন সূর্যাস্তকালীন রক্তিম বর্ণের লালিমা নিঃশেষে মুছে যায়। ইশার সালাতের প্রথম সময় সূচিত হয়
যখন সূর্যাস্তকালীন রক্তিম আভা নিঃশেষ হয়ে যায় এবং এর শেষ সময় দীর্ঘায়িত হয় অর্ধেক রাত পর্যন্ত। আর ফজরের
সালাতের প্রথম সময় শুরু হয় প্রথম উষার উদয়লগ্নে এবং এর শেষ সময় সূর্যোদয় পর্যন্তথাকে। (তিরমিযী)
ব্যাখ্যা
সালাতের সময়সূচির ব্যাপারে আরো অধিকতর সতর্ক থাকার জন্য এখানে আরো একটি হাদীসের উদ্বৃতি দেওয়া হল।
যদিও হাদীস দু’টির বিষয়বস্তু প্রায় একই।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় এবং এর আরম্ভ ও শেষ সময় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়ার উদ্দেশ্যেই নবী করীম (সা) এ
হাদীসের কথাগুলো বলেছেন। হাদীসটি পাঠ করলেই স্পষ্ট বুঝতে পারা যায় যে, নবী করীম (সা) যাঁদের সম্মুখে
সালাতের সঠিক সময়ের এ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, তাঁরা সালাতের সময় সম্পর্কে মোটামুটিভাবে ওয়াকিবহাল ছিলেন। সে
কারণেই কথার ধরন এমন হয়েছে যেমন আসরের সালাতের প্রথম সময় শুরু হওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে ঃ ‘আসরের
সালাতের সময় শুরু হয় ঠিক এর সময় সূচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই।’ আসরের সালাতের শেষ সময় সম্পর্কে বলা
হয়েছে- তা তখন পর্যন্তথাকে, যখন সূর্যরশ্মি হরিৎ বর্ণ ধারণ করে অর্থাৎ সূর্যরশ্মি হরিৎবর্ণ ধারণ করা পর্যন্তআসরের
সালাতের জন্য ভালো ও পছন্দসই সময়। কিন্তু এর পর যে আসরের সালাত আর পড়া যাবে না এমন নয়। কেননা
প্রয়োজনের সময় সূর্যাস্তকাল পর্যন্তএ সালাত আদায় করা যেতে পারে। তবে সূর্যরশ্মি হরিৎবর্ণ ধারণ করার পূর্বেই
আসরের সালাত পড়ে নেয়া বাঞ্ছনীয়। আর যদি কারো পক্ষে যথাসময়ে আসরের সালাত আদায় করে নেওয়া বিশেষ
কোন কারণে সম্ভবপর না হয়, তবে সে সূর্যাস্তকাল পর্যন্তআদায় করতে পারে। তাতেও সালাত হবে। এ পর্যায়ে নবী
করীম (সা)-এর অপর দুটি বাণী স্মরণীয়। একটিতে তিনি বলেছেন-
من ادرك ركعة من العصر قبل ان تغرب الشمس فقد ادرك العصر.
যে লোক সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রাকআত সালাতও পড়তে পারল, সে পুরা আসরই পেল।
অপর হাদীসে বলা হয়েছে ঃ
من ادرك سجدة من العصر قبل ان تغرب الشمس فقد ادرك العصر.
যে লোক সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের সালাতের একটি সিজদাও দিতে পারল সে যেন পূর্ণ আসরই পড়তে পারল।
এর অর্থ এই যে, যদি কেউ যথাসময়ে আসরের সালাত পড়তে না-ই পারে, সময় যদি শেষ হয়েই যায়, তাহলে সে যে
আসরের সালাত পড়বে না তা নয়, বরং অনতিবিলম্বে তাকে সালাতে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। সূর্যাস্তের পূর্বে এক রাকআত
পড়তে পারলেও ধরা যাবে যে, সে সেই দিনের আসরের সালাত পড়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
নৈর্ব্যক্তিক উত্তর-প্রশ্ন
১. কাফির ও মুসলমানের মধ্যে পার্থক্য করা হয়ক. সালাতের মাধ্যমে; খ. রোযার মাধ্যমে;
গ. সুন্নাত পালনের মাধ্যমে; ঘ. ইসলামের বিধান বোঝার মাধ্যমে।
২. স্বেচ্ছায় সালাত বর্জনের পরিণতি কী?
ক. শিরক; খ. কুফর;
গ. ফাসিক; ঘ. জাহিল।
৩. মদ্যপান নিষিদ্ধ কেন?
ক. মদ্য অপবিত্র জিনিস; খ. মদ্য পান করা শয়তানের কাজ;
গ. মদ্যপানে মস্তিস্কের বিকৃতি ঘটে; ঘ. সব ক’টি উত্তরই সঠিক।
৪. মৃত্যুর পর কোন আমল সম্পর্কেপ্রথম প্রশ্ন করা হবে?
ক. যাকাতের বিষয়ে; খ. ঈমানের বিষয়ে;
গ. সাওমের বিষয়ে; ঘ. সালাতের বিষয়ে।
৫. দৈনিক কতবার সালাত আদায় করা ফরয?
ক. পাঁচবার; খ. ছয়বার;
গ. চারবার; ঘ. তিনবার।
৬. মিরাজের রাতে প্রথমে কত ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছিল?
ক. পাঁচ ওয়াক্ত; খ. পঞ্চাশ ওয়াক্ত;
গ. পাঁচশত ওয়াক্ত; ঘ. চল্লিশ ওয়াক্ত।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে মহানবী (সা.) ক’টি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন? লিখুন।
২. যারা জীবনের ভয়ে মুখে কুফরি প্রকাশ করে তাদের স¤পর্কে ইসলামের বিধান কী? লিখুন।
৩. হাদীসের দৃষ্টিতে সালাতের গুরুত্ববর্ণনা করুন।
৪. হাদীসের আলোকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সূচি লিখুন।
৫. সালাত ফরয হওয়ার ইতিহাস লিখুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. সালাতের গুরুত্বস¤পর্কিত হাদীসটির অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করুন।
২. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয হওয়ার হাদীসটির অনুবাদ ও ব্যাখ্যা লিখুন।
৩. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের হাদীসটির অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করুন।
৪. সালাতের গুরুত্ব, সালাতের ফরয হওয়ার বিষয় এবং সালাতের ওয়াক্ত স¤পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]