হজ্জ ও উমরার গুরুত্বস¤পর্কে হাদীসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করুন।

জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয
عن ابن عباس (رضـ) قال قال رسول اللھ صلى اللѧھ علیѧھ و سѧلم: یѧا ایھѧا النѧاس ان
اللھ كتب علیكم الحج فقام الاقرع بن حابس (رضـ) فقال افى كل عام یا رسول اللѧھ!
قال لو قلتھا نعم. لوجبت و لو وجبت لم تعملѧوا بھѧا ولѧم تسѧتطیعوا. الحѧج مѧرة فمѧن
زاد فتطوع. (ترمذى. مسند احمد. نسائى. دارمى)
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেন: হে মানবজাতি ! নিশ্চয়ই আল্লাহ
তাআলা তোমাদের প্রতি হজ্জ ফরয করেছেন। তখন আকরা ইবনে হাবিস দাঁড়িয়ে বললেন ঃ হে আল্লাহর রাসূল !
প্রত্যেক বছরই কি হজ্জ করা ফরয ? মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বললেন- আমি যদি এর জওয়াবে ‘হ্যাঁ’ বলি, তবে
সেটাই ওয়াজিব হয়ে যাবে। আর যদি তা ওয়াজিব হয়ে যেত, তবে তোমরা তদানুযায়ী আমল করতে না। আর
তোমরা তা করতে পারতেও না। হজ্জ মূলত একবারই ফরয, যদি কেউ এর অধিক করে, তবে তা নফল। (তিরমিযী,
মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ, দারেমী)
ব্যাখ্যা
হাদীসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর একটি ভাষণের উল্লেখ করা হয়েছে। আলোচ্য হাদীসে ‘হে মানবজাতি’রাসূলের এই সম্বোধনই এ কথা প্রমাণ করে। অবশ্য হযরত আবূ হুরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত এ বিষয়েরই অপর একটি
হাদীসে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে-
خطبنا رسول اللھ صلى اللھ علیھ وسلم .
আল্লাহর রাসূল (সা) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দান করলেন।
মুসনাদে আহমাদ-এ উদ্ধৃত হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত এ হাদীসের শুরুতেও এ কথার উল্লেখ রয়েছে।
হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে এ প্রসঙ্গে আরও তথ্য পাওয়া যায়। তা হল, যখন কুরআন মাজীদের আয়াত-
وَ لِل َّھِ عَل َى ٱلنَّاسِ حِ جُّ ٱلْبَیْتِ مَنِ ٱسْتَطَاعَ إ ِل َیْھِ سَب ِیلا ً .
“মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য।” (সূরা
আলে-ইমরান : ৯৭) নাযিল হয়, তখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এ ভাষণ প্রদান করেন। কুরআন থেকে এ কথা
প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা অর্থাৎ তথায় যাওয়া-আসার মতো শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্যবান প্রত্যেক
মুসলমানের প্রতিই ফরয। কিন্তু এটা জীবনে কয়বার আদায় করতে হবে, কিংবা জীবনে মাত্র একবার হজ্জ আদায়
করলেই দায়িত্ব পালন শেষ হয়ে যাবে কিনা, তা হাদীস থেকে জানা যায় যে, হজ্জ জীবনে একবার আদায় করাই
ফরয। একবার ফরয আদায় করার পরও যদি কেউ হজ্জ করে তবে তা নফল হবে এবং তাতে নফল হজ্জ পালনেরই সওয়াব পাওয়া যাবে।
হযরত আকরাম (রা)-এর মনে এ সম্পর্কে প্রশ্ন জেগেছিল। সেজন্যই তিনি রাসূলের কথা শোনার পরই প্রশ্নটি পেশ
করেছিলেন। অন্য হাদীসের বর্ণনা মতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সা) প্রশ্নটির জবাব সঙ্গে সঙ্গে দেননি। বরং তিনি চুপ
করেছিলেন। রাসূলের প্রথমত চুপ থাকার তাৎপর্য থেকে এটাই বুঝতে পারা যায় যে, তিনি এভাবে প্রশ্নকরাকে মোটেই
পছন্দ করতে পারেননি বলে এ ধরনের ক্ষেত্রে চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করেন। অন্যকথায় অধিক শরীয়াতী দায়িত্ব পেয়ে
বসার আশংকা রয়েছে। পূর্বেও কয়েকবার এরূপ প্রশ্ন উঠেছে। নবী করীম (সা) তা নিষেধ করে দিয়েছেন। কিন্তু নবী
করীম (সা) যেহেতু দুনিয়ায় শরীঅতের জরুরী জ্ঞান বিস্তারের দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন, এজন্য তিনি বেশীক্ষণ চুপ করে
থাকতে পারলেন না। প্রশ্নকারী যখন একবার, দুবার, তিনবার প্রশ্নটি উত্থাপন করল, তখন নবী করীম (সা) বললেনএর উত্তরে আমি ‘হ্যা’ বললে প্রত্যেক বছরেই হজ্জ করা ফরয হয়ে পড়ত। প্রত্যেক বছরেই হজ্জ করা হবে, না এক
বছর করলেই একজনের সারা জীবনের কর্তব্য পালন হয়ে যাবে, সে সম্পর্কে ফয়সালা করার দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ
থেকে রাসূলে করীমের (সা) উপর অর্পিত হয়েছিল। এজন্য তিনি জবাবে বলেছেন যে, ‘আমি হ্যা’ বললেই তা
ওয়াজিব হয়ে যেত ; কিন্তু তোমরা তা করবে না বা করতে পারবে না। তাই জীবনে একবার হজ্জ করাকেই ফরয করা
হয়েছে।
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- আমি নবী করীম (সা) কে বলতে শুনেছি ঃ যে ব্যক্তি
আল্লাহরই জন্য হজ্জ করল এবং এ সময়ের মধ্যে স্ত্রী সহবাস ও কোনরূপ ফাসিকী কাজ করল না, সে তার মা কর্তৃক
ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনের মতই নি®পাপ হয়ে গেল।
হজ্জের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ
হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। ‘হজ্জ’ শব্দের অর্থ- دѧالقص ‘কোন বিষয়ের বা কাজের ইচ্ছা বা দৃঢ় সংকল্প
গ্রহণ।’ খলীল বলেছেন- ‘হজ্জ’ অর্থ معظم الى القصد كثرة
কোন মহৎ বিরাট কাজের বারবার ইচ্ছা ও সংকল্প গ্রহণ করা।
আযহারী বলেন- হজ্জ অর্থ ‘কোন স্থানে একবারের পর দ্বিতীয়বার আসা’। এ কারণে মক্কা গমনকে تѧالبی جѧح
আল্লাহর ঘরের হজ্জ বলা হয়।
ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় হজ্জ শব্দের অর্থ হচেছ-
الحج قصد الى زیارة البیت الحرام على وجھ التعظیم بافعال مخصوصة .
আল্লাহর ঘরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশে কতকগুলো বিশেষ ও নির্দিষ্ট কাজ সহকারে মহান ঘরের যিয়ারতের
সংকল্প করাই হল হজ্জ। বদরুদ্দীন আইনী হজ্জের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন-
الحج قصد زیارة البیت على وجھ التعظیم.
আল্লাহর ঘরের সম্মান ও মহত্ব প্রকাশের উদ্দেশ্যে উহার যিয়ারতের সংকল্প করাই ‘হজ্জ’।
কিরমানী হজ্জের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন-
الحج قصد الكعبة للنسك بملابسة الوقوف بعرفة.
কা’বা ঘরের অনুষ্ঠানাদি পালন ও আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের উদ্দেশ্যে তথায় গমন করাই হজ্জ।
আল কুরআনে হজ্জ ফরয হওয়ার দলীল
কুরআন মাজীদের যে আয়াতে হজ্জ ফরয হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা হল-
وَ لِل َّھِ عَل َى ٱلنَّاسِ حِ جُّ ٱلْبَیْتِ مَنِ ٱسْتَطَاعَ إ ِل َیْھِ سَب ِیلا ً . (ال عمران. ٩٧ (
“মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য।” (সূরা
আলে-ইমরান : ৯৭)
এ আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর ঘর পর্যন্তযাতায়াত সংক্রান্তযাবতীয় ব্যয়, সুযোগ-সুবিধা ও শক্তি-সামর্থ্যরে অধিকারী
প্রত্যেক ব্যক্তির উপর হজ্জ করা ফরয। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)ও হজ্জ ফরয হওয়ার কথা সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা
করেছেন। ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে হজ্জ একটি। এ সম্পর্কিত হাদীসসমূহ ১৬ জন সাহাবী কর্তৃক অত্যন্ত
নির্ভরযোগ্য সূত্রে ও বলিষ্ঠ ভাষায় বর্ণিত ও হাদীসের গ্রন্থাবলীতে উদ্ধৃত হয়েছে। সব কয়টি হাদীসে হজ্জকে ইসলামের
পঞ্চম ‘রুকুন’ বলা হয়েছে এ ভাষায়-
وحج البیت ان استطعت الیھ سبیلا.
আল্লাহর ঘরের হজ্জ- যদি তথায় যাতায়াতের সামর্থ্য তোমার থাকে।
এ ‘আল্লাহর ঘরই’ হজ্জ ফরয হওয়ার কারণ। আর আল্লাহর ঘর ‘কা’বা শরীফ’ মাত্র একটি। এজন্য হজ্জ জীবনে মাত্র
একবারই ফরয। জীবনে একাধিকবার হজ্জ করা ফরয নয়। যে লোক ‘হজ্জ’ করে তাকে বলা হয় اجѧالح ‘আলহাজ্জ’‘হাজী’। কিন্তু এটা কোন পদবী বা উপাধি নয়। এর এ আলহাজ বা হাজী শব্দটি হজ্জ করার পর নামের পূর্বে ব্যবহার
করা যথার্থ নয়। কারণ কেউ যদি নামায আদায় করে তবে তার নামের পূর্বে নামাযী বা যাকাত আদায় করলে তাকে
যাকাত দাতা বলা হয় না। অনুরূপ হজ্জ করলে তাকে হাজী নামে ডাকা ঠিক নয়।
হজ্জ কখন ফরয হয়
কেউ কেউ বলেছেন- হজ্জ হিজরতের পূর্বেই ফরয হয়েছে। কিন্তু এটা সর্বজনগ্রাহ্য কথা নয়। ইমাম কুরতুবী
বলেছেন- হজ্জ ফরয হয়েছে হিজরতের পঞ্চম বৎসর। অধিকাংশ আলিমদের মত হল, হজ্জ ফরয হয়েছে ষষ্ঠ হিজরী
সনে। কেননা এ সনেই কুরআনের আয়াত ঃ
وَ أ َتِمُّوا ْ ٱلْحَجَّ وَ ٱلْعُمْرَ ةَ لل َّھِ
“তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরা পালন করো।” (সূরা আল-বাকারা : ১৯৬)
কিন্তু নবম হিজরী সনে হজ্জ ফরয হওয়ার কথা অধিক সঠিক। আল্লামা মাওয়ার্দী বলেছেন- অষ্টম হিজরী সনে হজ্জ
ফরয হয়েছে। হজ্জ ফরয হওয়ার তারিখ বা সাল নিয়ে মতভেদ থাকলেও ইসলামের পঞ্চম বুনিয়াদ এবং
সামর্থ্যবানদের উপর তা ফরয তাতে কোন মতভেদ নেই। সুতরাং ফরয হওয়ার তারিখ নিয়ে মতভেদ হজ্জ ফরয
হওয়ার গুরুত্বকে খাটো করে না।
হজ্জ ও উমরার গুরুত্ব
عن عبد اللھ بن مسعود (رضـ) قال قال رسول اللھ صلى اللھ علیھ وسلم تابعوا بین
الحج والعمرة فانھما ینفیان الفقر والذنوب كما ینفى الكیر خبث الحدید والذھب
والفضة و لیس للحجة المبرورة ثواب الا الجنة. (ترمذى. ابوداؤد. مسند احمد. ابن
خزیمة. ابن حبان)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রাসূল (সা) বলেছেন ঃ তোমরা হজ্জ ও
উমরা পর পর সঙ্গে সঙ্গে আদায় কর। কেননা এ দু’টি কাজ দারিদ্র্য ও গুনাহ্-খাতা নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যেমন রেত
লৌহের মরিচা ও স্বর্ণ-রৌপ্যের জঞ্জাল দূর করে দেয়। আর হজ্জে মাবরূর বা কবুল হওয়া হজ্জের সওয়াব জান্নাত ছাড়া
আর কিছুই নয়। (আবু দাউদ, তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে খুযায়মা ও ইবনে হিববান)
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর এ বাণীতে হজ্জ এবং উমরাহ উভয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তিনি যা
বলেছেন- উহার শাব্দিক অর্থ হল ‘হজ্জ ও উমরার মধ্যে একটিকে অপরটির পরে পরে কর। অর্থাৎ এ দুটি অনুষ্ঠান
কাছাকাছি সময়ের মধ্যে পালন কর। এ হাদীসের নির্দেশ অনুসারে ‘হজ্জে কিরান’ করে এ আদেশ পালন করা যায়,
নতুবা হজ্জ করে উমরা আদায় করা যায় বা উমরা করে হজ্জ করা যায়। তায়্যিবী বলেছেন, রাসূল (সা)-এর এ
কথাটির অর্থ হল ঃ
اذا اعتمرتم فحجوا و اذا حججتم فاعتمروا.
তোমরা যখন উমরা সমাপন করলে তখন তোমরা হজ্জ কর, আর যখন হজ্জ অনুষ্ঠান শেষ করলে, তখন তোমরা
অবশ্যই উমরা করবে।
উমরা رةѧعم শব্দের অর্থ ارةѧالزی ‘সাক্ষাত বা দেখার জন্য উপস্থিত হওয়া’। আর শরীঅতের পরিভাষায় - উমরাহ শব্দের অর্থ হচেছ-
الاتیان بالنسك المعروف على الصفة الثابتة.
পরিচিত এবং সুনির্দিষ্ট কতকগুলো অনুষ্ঠান বিশেষ দলীল দ্বারা প্রমাণিত নিয়ম ও পদ্ধতিতে পালন করা। (ইমাম
শাওকানী)
মুল্লা আলী-আলকারী বলেন, শরীঅতের পরিভাষায় وافѧالط دѧقص عىѧوالس আল্লাহর ঘর তওয়াফ করা ও
সাফা-মারওয়ায় দৌঁড়ানোর সংকল্প করার নাম উমরা।
হজ্জের জন্য সময় ও দিন-তারিখ নির্দিষ্ট। সেই সময় ও দিন-তারিখ ছাড়া হজ্জ আদায় হয় না। কিন্তু উমরার জন্য
কোন সময় বা দিন-তারিখ নির্দিষ্ট নেই। উহা সব সময় এবং যে কোন সময়ই থেকে পারে।
কেউ কেউ হজ্জের মাসে উমরা করা মকরূহ মনে করেন। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা এর কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ ও
দলীল নেই। কেননা স্বয়ং মহানবী (সা) ও হজ্জের সময় ও মাসে উমরা করেছেন। ইমাম আবূ হানীফা (রঃ)
আরাফাতে অবস্থানের দিন উমরা করা মাকরূহ মনে করেছেন মাত্র।
‘হজ্জে মাবরুর’ বলতে বোঝায়, যে হজ্জ আল্লাহর নিকট গৃহীত হয়েছে, কিংবা যে হজ্জ উদযাপন কালে এক বিন্দু
গুনাহের স্পর্শও লাগেনি, তাই ‘হজ্জে মাবরুর।’ বিশেষজ্ঞদের ভাষায় এ শব্দটির বিভিন্ন অর্থ বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে
বটে ; কিন্তু সব কথার সার একই। আর তা হল- যে হজ্জ পালনে যাবতীয় নিয়ম বিধান যথাযথভাবে পালন করা
হয়েছে। ফলে প্রত্যেকটি কাজ ঠিক সেভাবেই সম্পন্ন করা হয়েছে যেভাবে সম্পন্ন হওয়া আল্লাহর পছন্দ এবং তাঁর
সম্মতি ও সন্তোষের কারণ, তাই হজ্জে মাবরুর। হজ্জে মাবরূর শব্দের অর্থ স¤পর্কে ইমাম নববী (র) বলেন ঃ
الذى لا یخالطھ شئ من الاثم.
হজ্জে মাবরুর তাই, যা করার সময় কোনরূপ গুনাহ করা হয়নি।
হজ্জ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ, এটা ফরয। এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ বা মতবিরোধ নেই। কিন্তু আলোচ্য হাদীসে হযরত
মুহাম্মদ (সা) হজ্জ ও উমরা পালনের নির্দেশ এক সঙ্গে দিয়েছেন। এ কারণে শরীঅতে উমরাহর আসল মর্যাদা কি, তা
আলোচনা করা আবশ্যক। নি¤েœউমরাহর গুরুত্বতুলে ধরা হল।
উমরার গুরুত্ব
এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদে আল্লাহর নির্দেশ উদ্ধৃত হয়েছে-
وَ أ َتِمُّوا ْ ٱلْحَجَّ وَ ٱلْعُمْرَ ةَ لل َّھِ. (البقرة-١٩٦(
“তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরা পূর্ণ করো।” (সূরা আল-বাকারা : ১৯৬)
প্রসঙ্গে ইমাম মালিক (র) বলেন-
العمرة سنة ولا نعلم احدا ارخص فى تركھا.
উমরা করা সুন্নাত। তা তরক করার অনুমতি কেউ দিয়েছে, এমন কথা আমার জানা নেই।
ইমাম আবূ হানীফা (র.) উমরা করা হজ্জের মতই কর্তব্য বলে মনে করতেন। তবে তাঁর মতে উমরাহ রাসূলে করীম
(সা)-এর প্রবর্তিত ‘সুন্নাত’ এবং দলীল দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও হযরত জাবির ইবনে
আবদুল্লাহও এমত প্রকাশ করেছেন। এ পর্যায়ে হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহর একটি বর্ণনা উদ্বৃত করা যায়। তিনি
বলেন- একটি লোক রাসূল (সা)- কে সালাত, যাকাত ও হজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে- وѧھ بѧأواج এ কাজ কি
অবশ্য কর্তব্য ? জবাবে মহানবী (সা) বললেন ঃ ‘হ্যা’। পরে জিজ্ঞাসা করল উমরা সম্পর্কে ىѧھ ةѧأواجب উমরা
করাও কি ওয়াজিব ? জবাবে মহানবী (সা) বললেন-
لا وان تعتمر خیرلك .
উহা ঠিক ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য নয়। তবে তুমি যদি উমরাহ আদায় কর, তা হলে উহা তোমার জন্য খুবই
কল্যাণবহ হবে।
হযরত আমের ইবনে রবীয়াহ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলে করীম (সা) বলেছেন ঃ এক উমরা থেকে আর
এক উমরা পর্যন্তএ দু’টির মধ্যবর্তীকালের সমস্তগুনাহ ও ভুলত্রæটির জন্য উহা কাফফারা স্বরূপ। আর হজ্জে মাবরুরএর একমাত্র প্রতিফল হল জান্নাত। (মুসনাদে আহমদ)
আলোচ্য হাদীসে হজ্জ ও উমরাহর সওয়াব স্পষ্ট ভাষায় ঘোষিত হয়েছে। হাদীসের প্রথমাংশে উমরাহর সওয়াব ও
কল্যাণ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার সারকথা হল, ‘একটি উমরাহ থেকে আর একটি উমরাহ পর্যন্তযে সময়, এ সময়ে
যত গুনাহ খাতা হবে, তা সবই ক্ষমা প্রাপ্ত হবে। অবশ্য কেবল সগীরা গুনাহই মাফ হয়ে যাবে, কবীরা গুনাহ নয়।
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে একই অর্থবোধক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
العمرة الى العمرة كفرة لما بینھما. (ترمذى)
এক উমরা থেকে অপর উমরা পর্যন্তমাঝখানে করা গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (তিরমিযী)
সারকথা
হজ্জ ইসলামের পঞ্চম ভিত্তি। হজ্জ ফরয হওয়ার তারিখ স¤পর্কে উলামাদের মতভেদ রয়েছে। মহানবী (সা) জীবনে
একবার হজ্জ পালন করেছেন। শারিরীক ও আর্থিক সামর্থবান ব্যক্তিদের জন্য কাবা ঘরে গিয়ে হজ্জ করা ফরয। এ
হজ্জ ইবরাহীম (আ.) এর সময় থেকেই পালিত হয়ে আসছে। হজ্জে গিয়ে কোন পাপাচারে ও অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়া
যাবে না। ইহরাম অবস্থায় কোন প্রাণী এমনকি মশা-মাছি মারাও নিষিদ্ধ। হজ্জ শুধু আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করতে হয়।
আর তার বিনিময়স্বরূপ আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। হজ্জের ন্যায় উমরাহ করার গুরুত্বও কম নয়। উমরাহ
করা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এর সুন্নাত। হজ্জ যেমন নির্দিষ্ট সময় ও দিনক্ষণ অনুসারে আদায় করতে হয় উমরাহ
কিন্তু তেমন নয়। যে কোন সময়ে উমরাহ আদায় করা যায়। উমরাহর সাওয়াব হিসেবে মহানবী (সা) বলেন- এক
উমরাহ করা থেকে অপর উমরাহ করা পর্যন্তমধ্যবর্তী সময়ে মানুষ যত সগীরা গুনাহ করবে, আল্লাহ তা ক্ষমা করে
দেবেন। সুতরাং সামর্থ্যবান মুসলমান নর-নারীদের জন্য এ আমল দু’টি করা বাঞ্ছনীয়।
১. হজ্জ কোন স্তরের ইবাদত?
ক. ফরযে আইন; খ. ইসলামের ৫ম ভিত্তি;
গ. আরকানে ইসলাম; ঘ. সব ক’টি উত্তর সঠিক।
২. কেউ একাধিক হজ্জ করলে তার বিধান কী?
ক. প্রথমটি ফরয দ্বিতীয়টি সুন্নাত; খ. প্রথমটি ফরয দ্বিতীয়টি ওয়াজিব;
গ. প্রথমটি ফরয দ্বিতীয়টি মাকরূহ; ঘ. প্রথমটি ফরয দ্বিতীয়টি মুবাহ।
৩. হজ্জ শব্দের অর্থ হচেছক. নিয়াত করা; খ. কোন কাজে দৃঢ় সংকল্প করা;
গ. কোন স্থানে একবারের পর দ্বিতীয়বার গমন করা; ঘ. ২ এবং ৩ নং উত্তর সঠিক।
৪. আল্লাহর জন্যই হজ্জ ও উমরা পালন কর- এটি কার বাণী?
ক. আল্লাহর; খ. মহানবী (সা); -এর
গ. হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর; ঘ. হযরত আলী (রা.)-এর।
৫. উমরা করার বিধান কী?
ক. উমরা করা ফরয; খ. উমরা করা ওয়াজিব;
গ. উমরা করা সুন্নাত; ঘ. উমরা করা মাকরূহ।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. হজ্জ স¤পর্কেএকটি টীকা লিখুন।
২. হজ্জের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ লিখুন।
৩. উমরা শব্দের অর্থ কী? ইবাদত হিসেবে উমরার গুরুত্বলিখুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. হজ্জ ও উমরার গুরুত্বস¤পর্কে হাদীসের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]