সুদ বলতে কী বোঝায়? সুদের বিধান স¤পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন। জুয়া কী? ঘুষ ও জুয়ার বিধান আলোচনা করুন।

যুল্ম-নির্যাতনকারী এবং স¤পর্ক ছিন্নকারীর পরিণতি স¤পর্কে আলোচনা করতে পারবেন।
عن جابر رضى اللھ عنھ قال: قال رسѧول اللѧھ صѧلى اللѧھ علیѧھ و سѧلم انصѧر أخѧاك
ظالما او مظلوما ان یك ظالما فاردده من ظلمھ و ان یك مظلوما فانصره (الدارمى)
হযরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন ঃ তুমি তোমার ভাইকে অত্যাচারী ও
অত্যাচারিত উভয় অবস্থায় সাহায্য কর। যদি সে অত্যাচারী হয়, তবে তাকে অত্যাচার করা থেকে বিরত রাখ এবং
যদি সে অত্যাচারিত হয়, তবে তাকে সাহায্য কর। (আদ-দারিমী)
ব্যাখ্যা
সুনান আদদারিমীতে সংকলিত এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) যালিমকে যুল্ম থেকে বিরত রেখে এবং মজলুমকে
যালিমের অত্যাচার থেকে রক্ষা করে সাহায্য করতে বলেছেন।
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নির্দেশ হচ্ছে- কোন লোক অত্যাচার করলে তাকে যথা শক্তি প্রয়োগে প্রতিরোধ কর,
তাকে যুল্ম ও অত্যাচার করতে দিওনা। মযলুম বা অত্যাচারিত ও উৎপীড়িত ব্যক্তিকে অত্যাচারীর কবল থেকে রক্ষা
কর। আসলে যুল্ম একটি অন্যায় ও জঘন্য অপরাধ যা ইসলামী জীবন দর্শনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি
কারো প্রতি কোনরূপ যুল্ম ও অত্যাচার করে তবে আমাদের উচিত অত্যাচারীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাধা দেয়া।
অত্যাচারিত ব্যক্তিকে প্রয়োজনমত যথাসাধ্য সাহায্য করা।
এজন্যই হাদীসে বলা হয়েছে- অত্যাচারী ব্যক্তি যদি আপন ভাইও হয়, তবু তাকে বাধা দিতে হবে। অত্যাচার করা
থেকে যে কোন উপায়েই হোক না কেন, তাকে বিরত রাখতে হবে। তাকে প্রতিরোধ করতে হবে।
কেননা যে অন্যায় করে এবং যে অন্যায় সহে উভয়ই সমঅপরাধী। যেমন কবির ভাষায়অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে।
কেননা যুল্ম ও অত্যাচার চলতে থাকলে সে সমাজে বাস করা জাহান্নামে বাস করার মতই অসহনীয় হয়। আর এটা
সমাজ সভ্যতা বিকাশের পরিপন্থীও বটে। সুতরাং সমাজ থেকে এরূপ জঘন্য ও গর্হিত কাজ যা মহান আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল (সা) মোটেই পছন্দ করেন না চিরতরে দূর করে দিতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর থেকে কঠোরতম পন্থা অবলম্বন
করে যুল্ম মুক্ত সমাজ গঠন করতে হবে।
অতএব আলোচ্য হাদীসের মাধ্যমে আমরা
 কারও প্রতি যুলম করা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে অঙ্গীকার করি।
 অত্যাচারী বা যালিমকে অত্যাচার করতে দেয়া যাবে না। সম্ভব হলে শক্তি প্রয়োগ করে জুল্ম-নির্যাতন বন্ধ
করার প্রত্যয় গ্রহণ করি।
 অত্যাচারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা মুসলমানদের নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে আমরা প্রতিটি মানুষকে
একাজে উদ্বুদ্ধ করি।
 অত্যাচারীকে যুল্ম থেকে বাধা দিয়ে সৎপথে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় চেষ্টা করতে সমাজের সকলে
এগিয়ে আসি।
 মজলুম বা অত্যাচারিতের পক্ষাবলম্বন করে প্রত্যেকে ঈমানী দায়িত্ব পালন করি।
 মজলুম মানবতার অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়া ও তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা ইসলামী আদর্শের অংশ
হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।
অন্যায়ভাবে ও জুল্ম করে কারো জমি দখল করার শাস্তি
عن عائشة رضى اللھ عنھا ان رسول اللھ صلى اللѧھ علیѧھ وسѧلم قѧال : مѧن ظلѧم قیѧد
شبرا من الارض طوقھ من سبع ارضین. متفق علیھ.
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত পরিমাণ জমি দখল
করবে তার গলায় সাত তবক জমি ঝুলিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
ব্যাখ্যা
মুসলমান একজন অন্যজনকে সম্মান করবে। কোন প্রকার বিরোধীতা করা বা শত্রæতা পোষণ করা বা ষড়যন্ত্র করা এবং
অন্যায়ভাবে পর সম্পদ গ্রাস করা থেকে বিরত থাকবে। আলোচ্য হাদীসে মহানবী (সা) অন্যায়ভাবে কারো ভূমি তথা
সম্পদ আত্মসাৎ করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন- যে ব্যক্তি এভাবে এক বিঘত পরিমাণ জমি
অন্যায়ভাবে দখল করে অথবা সীমানা অন্যের জমির ভিতর ঢুকিয়ে দেয় অথবা আইল কেটে নিজের জমির ভিতর নিয়ে
নেয় অথবা জোরপূর্বক দখল করে নেয় অথবা কোন প্রাকৃতিক কারণে আইল ভেঙ্গে নিজের জমির সাথে মিশে যায়
এতে সে ব্যক্তি নিজ খুশীতে তা নিয়ে নেয় এবং মালিককে তা ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা করে না। নিশ্চয়ই কিয়ামত
দিবসে এ ধরনের অন্যায়, যুল্ম ও অবৈধ দখলের জন্য তাকে অভিযুক্ত করা হবে এবং তাকে সে জমি বহন করতে
দেয়া হবে। সাত তবক জমি বা সম পরিমাণ জমির গভীরতা ও ভার তার গলার উপর ঝুলিয়ে দেয়া হবে। আর তাকে
বলা হবে যে, এ শাস্তিতোমার গাদ্দারীর জন্য। অন্যায়ভাবে অপরের জমি আত্মসাৎ করার পরিণত্ িআজ গলায় ধারণ
কর যাতে লোকেরা তা দেখতে পায়। অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভোগ করার পরিণতি আজ ভোগ কর, অন্যের
অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করে যুল্ম করার পরিণাম ভোগ কর। অবৈধ পন্থায় কারো জমি কর্তন করার
পরিণতির শাস্তিআজ ভোগ কর। এখানে উল্লেখ্য যে, কারো জমি থেকে নিজ প্রয়োজনে মাটি কেটে আনার অধিকারও
ইসলাম অন্যকে দেয়নি। মাটি কেটে আনতে হলে অবশ্যই জমির মালিকের অনুমতি লাগবে। অতএব, মুসলিম
স¤প্রদায় হিসেবে আমাদের কর্তব্য হল- অন্যায় ও যুলমের মাধ্যমে আমরা অন্যের জমি কর্তন করব না। যাতে করে
হাদীসে বর্ণিত শাস্তিআমাদের গ্রাস না করতে পারে এবং কিয়ামত দিবসে সাত তবক জমি কাঁধে বহন করে
আমাদেরকে মানুষের সামনে দিয়ে চলতে না হয়। যদি কেউ কারো সম্পদ আত্মসাৎ ও অবৈধভাবে দখল করে অথবা
কারো জমি কর্তন করে নেয় তাহলে মুসলিম ভাইদের উচিত তারা যেন তাকে মালিকের কাছে তা ফেরত দেয়ার জন্য
উপদেশ ও পরমর্শ প্রদান করে। যাতে করে মুসলিম সমাজে যুলম, নির্যাতন বন্ধ থাকে এবং ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট না
হয়। সমাজের প্রতিটি মানুষ পরস্পর ভাই ভাই হিসেবে নিরাপদে বসবাস করতে পারে।
আল্লাহ তাআলা হাদীসে কুদসীতে বলেছেন-
یا عبادى: انى حرمت الظلم على نفسى و جعلتھ بینكم محرما فلا تظالموا.
হে বান্দাগণ ! আমি নিজের উপর যুলম করাকে নিষিদ্ধ ও হারাম করেছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও যুলমকে
হারাম করে দিয়েছি। সুতরাং তোমরা পরস্পরে যুল্ম করবে না।
আলোচ্য হাদীস থেকে একথাই প্রতীয়মান হয় যে,
 এক মুসলমান উপর অপর মুসলমানের প্রতি যুল্ম করা হারাম। যদি কোন ব্যক্তি অন্যায় করে এক বিঘত
পরিমাণ জমি দখল করে নেয় তাহলে কিয়ামতের দিন সাত তবক জমি বা তার সমপরিমাণ ভার উক্ত
ব্যক্তির গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে। সমাজের মানুষ যদি একে অন্যের উপর যুল্ম করা থেকে বিরত থাকে
তাহলে সমাজের প্রতিটি মানুষের মধ্যে ভালবাসা ও ঐক্য বিরাজ করবে।
যুল্ম ও নির্যাতন এবং সম্পর্ক ছিন্নকারীর পরিণতি
عن ابى بكرة رضى اللѧھ عنѧھ قѧال : قѧال رسѧول اللѧھ صѧلى اللѧھ علیѧھ و سѧلم : مѧا مѧن ذنѧب
اجѧدر ان یعجѧل اللѧھ لصѧاحبھ العقوبѧة فѧى الѧدنیا مѧع مѧا یѧدخره لѧھ فѧى الاخѧرة مѧن البغѧى و
قطیعة الرحم ( ابوداؤد)
হযরত আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: যুলম ও নির্যাতনকারী এবং রক্ত
সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি থেকে অধিক গুণাহকারী আর কেউ হবে না, যাদেরকে আল্লাহ দুনিয়া এবং আখিরাতে শাস্তি
দান করবেন। (আবুদাউদ)
ব্যাখ্যা
প্রত্যেক পাপই নিকৃষ্ট এবং ঘৃণিত, কেননা তা মানুষের জন্য দুনিয়া এবং আখিরাতে শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শাস্তির
দিক থেকে সবচেয়ে কঠিন পাপ যা দুনিয়াতে দ্রæত নিপতিত হবে এবং পরকালেও ভয়ানক শাস্তিদেয়া হবে তা হচ্ছে
মানুষের উপর যুল্ম নির্যাতন এবং রক্ত সম্পর্ক ছিন্ন করা। সত্যের সাধক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এ সংবাদ
প্রদান করেছেন। নিশ্চয় যারা মানুষের উপর নির্যাতন ও যুল্ম করবে এবং যারা মা-বাবাকে কষ্ট দেবে এবং রক্ত
সম্পর্ক ছিন্ন করবে আর তাদের সাথে কোনরূপ সুন্দর আচরণ করবে না, মা-বাবার প্রতি ইহসান করার জন্য আল্লাহর
নির্দেশ ভুলে যাবে দুনিয়াতে অতি সত্তর আল্লাহর শাস্তিতাদেরকে গ্রাস করবে এবং আখিরাতেও তারা আল্লাহর
নির্ধারিত শাস্তিভোগ করবে। সুতরাং মুসলিম ভাইদের উচিত তারা যেন মাতা-পিতার সাথে সুন্দর আচরণ করে এবং
তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে, তারা কখনও সমাজে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টির পায়তারা না করে তাহলে তারা এ
কঠিন শাস্তিথেকে রক্ষা পাবে। তাদের জন্য পরিবারে এবং সমাজে উচ্চ স্থান নির্ধারিত হবে। এ সকল লোকই আল্লাহ
তাআলার সন্তুষ্টি লাভের কামনা করতে পারে যারা মাতা-পিতার প্রতি সদাচারণে গুরুত্বারোপ করে, রক্তের সম্পর্ক স্থায়ী
রাখে এবং ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও যুল্ম থেকে বিরত থাকে। আমাদের দুনিয়াতে শান্তিএবং পরকালে মুক্তির জন্য যুল্ম ,
নির্যাতন, রক্ত সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকতে হবে। তাহলে কাংখিত ফল লাভ সম্ভব হবে।
যুলম স¤পর্কিত অপর একটি হাদীস এখানে উল্লেখ করা হল-
عن ابن عمر رضى اللھ عنھ ان رسول اللھ صلى اللھ علیھ و سلم قѧال: المسѧلم اخѧو
المسلم لا یظلمѧھ ولا یسѧلمھ و مѧن كѧان فѧى حاجѧة أخیѧھ كѧان اللѧھ فѧى حاجتѧھ. (متفѧق
علیھ)
হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ঘোষণা করেছেন, এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে
তাকে অত্যাচারও করবে না এবং তাকে শত্রæর নিকট সমর্পণও করবে না। আর যে ব্যক্তি তার কোন মুসলমান ভাইয়ের
প্রয়োজনে এগিয়ে আসে, আল্লাহ তার প্রয়োজনে এগিয়ে আসেন। (বুখারী ও মুসলিম)
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
বুখারী শরীফের এ হাদীসে মহানবী (সা) মুসলমানগণের পরস্পরের সম্পর্ক এবং তাদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে
উল্লেখ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা) মুসলিম উম্মাহকে লক্ষ করে ঘোষণ করেছেন যে- মুসলমানগণ পরস্পর ভাই ভাই। মুসলমান ভাইয়ের
কর্তব্য হল আরেক ভাইকে সকল বিপদাপদে সাহায্য-সহযোগিতা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা। শত্রæর আক্রমণ ও
আঘাত থেকে সর্বদা রক্ষা করা।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ এ মর্মে ঘোষণা করেন ঃ
إ ِنَّمَا ٱلْمُؤْ مِنُونَ إ ِخْ وَ ةٌ فَأ َصْلِحُوا ْ بَیْنَ أ َخَوَ یْكُمْ .
মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই ; সুতরাং তোমাদের ভাইদের মধ্যে শান্তিস্থাপন কর। (সূরা আল-হুজুরাত : ১০)
কোন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনরূপ অত্যাচার করতে পারবে না। যত বড় মারাত্মক অপরাধই করুক না কেন
তাকে কোন অবস্থাতেই দুশমনের হাতে ছেড়ে দেয়া যাবে না।
আপন ভাইয়ের বিপদের সময়ে ভাই যেমন সাহায্য করতে এগিয়ে এসে, তেমনি এক মুসলমান ভাইও অপর মুসলমান
ভাইয়ের বিপদে-মুছিবতে সম্ভাব্য সকল উপায়ে তার সাহায্যে এগিয়ে আসা ঈমানী কর্তব্য।
এ মর্মে রাসূল (সা) বলেন- আল্লাহ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ততাঁর বান্দার সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্তসে তার
কোন মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে লিপ্ত থাকে। (মুসলিম)
কাজেই আল্লাহ তাআলার সাহায্য পেতে হলে অপর মুসলমান ভাইয়ের সাহায্য করা কর্তব্য। এক মুসলমানের বিপদে
অপর মুসলমান ভাইয়ের এগিয়ে না আসার কারণেই আজ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানগণ অত্যাচারিত, নিপীড়িত
ও নির্যাতিত হচ্ছে। বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত হচ্ছে। স্বাধীনতা হারিয়ে পরাধীনতার লাঞ্ছিত জীবন অতিবাহিত করছে।
যদি আল্লাহ ও রাসূলের (সা) নির্দেশ অনুযায়ী মুসলমানগণ নিজেদের ভোগ-বিলাস ও সংকীর্ণ স্বার্থ-চিন্তা পরিহার করে
মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যের জন্য জিহাদের ময়দানে অবতীর্ণ থেকো, তবে কোন জাতির পক্ষেই মুসলমানদের উপর
অত্যাচার করা সম্ভব হত না। আর এ কারণেই আজ মুসলমানগণ আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত।
সারকথা
মুসলমানগণ পরস্পর ভাই ভাই। তারা পর¯পরে মিলেমিশে বসবাস করবে। এক মুসলমান তার অপর মুসলমান
ভাইয়ের উপর অত্যাচার করতে পারে না। অথবা তাকে শত্রæর নিকটও সোপর্দ করতে পারে না। এটা মুসলমানের
আদর্শ নয়। সর্বদা মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে এগিয়ে আসা কর্তব্য। তাহলেই আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যাবে।
অতএব, আল্লাহ আমাদের এ হাদীসের শিক্ষা গ্রহণ করে তা জীবনে অনুশীলনের তাওফীক দান করুন।
সঠিক উত্তরে টিক দিন
১. অত্যাচারীকে কীভাবে সাহায্য করা যায়?
ক. অত্যাচার থেকে বিরত রেখে; খ. অত্যাচার করতে সাহায্য করে;
গ. অত্যাচারিতকে সাহায্য দিয়ে; ঘ. উত্তর ক এবং গ সঠিক।
২. যুল্ম করা কী?
ক. হারাম; খ. জায়েয;
গ. মাকরূহ; গ. মুবাহ।
৩. এক বিঘত পরিমাণ জমি দখল করার পরিণতি কী?
ক. অন্যায়; খ. দখলকারীর গলায় সাত স্তর জমি ঝুলিয়ে দেয়া হয়ে;
গ. দখলকারীর সাথে শত্রæতা রাখতে হবে; ঘ. দখলকারীকে বয়কট করতে হবে।
৪. হাদীসে কুদসী কী?
ক. জিবরীল (আ)-এর মাধ্যমে প্রেরিত আল্লাহর বাণী; খ. সরাসরি আল্লাহর বাণী;
গ. জিবরীল (আ) -এর বাণী; ঘ. হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর বাণী।
৫. মুসলমানগণ পৃথিবীতে নির্যাতিত কেন?
ক. আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে; খ. মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার কারণে;
গ. মুসলমানগণ জিহাদ ত্যাগ করার কারণে; ঘ. সব ক‘টি উত্তরই সঠিক।
সুদ, ঘুষ, জুয়া রোধ সংক্রান্তহাদীস
উদ্দেশ্য
এ পাঠ অধ্যয়ন করে আপনি
 সুদ কী তা বলতে পারবেন
 সুদের আদান-প্রদান সংক্রান্তইসলামী বিধান আলোচনা করতে পারবেন
 জুয়া এবং এর বিধান স¤পর্কে বলতে পারবেন।
সুদ
সুদ এর আরবি প্রতিশব্দ রিবা (واѧرب (এর অর্থ হচেছ বৃদ্ধি পাওয়া বা অতিরিক্ত হওয়া। অর্থাৎ প্রদত্ত পরিমাণের চেয়ে
অতিরিক্ত আদায় করাকে সুদ বলে। একই শ্রেণীর জিনিসের ক্ষেত্রে এ সুদ প্রযোজ্য এবং সুদ সাধারণত বাকী বিক্রির
বেলায়ই হয়ে থাকে। যেমন কেউ এক কেজি আটার বিনিময়ে এক কেজি আটাই গ্রহণ করতে পারে। এর বেশি গ্রহণ
করলে সুদ হিসেবে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে এক কেজি আটার বিনিময়ে এক কেজি আটা এবং এর অতিরিক্ত অন্য যে
কোন জিনিস বা অর্থ গ্রহণ করলে সুদ গ্রহণ করা হয়। সুদের পরিচয় প্রসঙ্গে মহানবী (সা) বলেন- সোনার বিনিময়ে
সোনা, রূপার বিনিময়ে রূপা, যবের বিনিময়ে যব, আটার বিনিময়ে আটা, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, লবণের বিনিময়ে
লবণ-একই প্রকার দ্রব্যের বিনিময়ে একই প্রকার দ্রব্য নগদ (আদান-প্রদান) আর অতিরিক্ত হলেই সুদ অর্থাৎ কেউ
বেশি দিলে বা বেশি নিলে উভয়েই সুদের মধ্যে লিপ্ত হবে। (মুসলিম)
ইসলামে সুদ নিষিদ্ধ
ইসলামে সুদ সম্পূর্ণরূপে হারাম অর্থাৎ নিষিদ্ধ। এটা মারাত্মক গুনাহের কাজ। সুদ খাওয়া আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করার
নামান্তর। পবিত্র কুরআনের মোট ৭টি আয়াত, ৪০টিরও অধিক হাদীস এবং ইজমা দ্বারা সুদ হারাম প্রমাণীত। সুদের
অবৈধতা এবং সুদের সাথে সংশ্লিষ্টদের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কিত মাত্র কয়েকটি হাদীসের বাণী নি¤েœতুলে ধরা হলঃ
وعن جابر بن عبد اللھ رضى اللھ عنھ قال: لعن رسول اللѧھ صѧلى اللѧھ علیѧھ و سѧلم
اكل الربا و موكلھ و كاتبھ و شاھدیھ و قال ھم سواء.
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সা) সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সুদের লেখক এবং
সুদের লেনদেনের সাক্ষীদ্বয়ের প্রতি অভিশম্পাত করেছেন। তিনি বলেছেন, তারা সকলেই সমান (অপরাধী)। (বুখারী
ও মুসলিম)
সুদ হচ্ছে জুল্ম ও শোষণের একটি হাতিয়ার। এ জন্য ইসলাম সুদকে চিরতরে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। সমাজ বিজ্ঞানী,
দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও ইসলামী চিন্তাবিদদের অনেকেই সুদের কুফল আলোচনা করেছেন। সুদের অনিষ্ট শুধু
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয় বরং নৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এর প্রভাব সুদূর প্রসারী। সুদের
ব্যাপক অনিষ্টকারিতার কারণে মহানবী (সা) সুদ ও সুদখোর এবং সুদী কারবারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
সুদের ফলে সমাজ জীবনের উপর যে বিপদ ঘনীভূত হয়ে আসে, সে সম্পর্কে হাদীসে সতর্কবাণী উল্লেখিত হয়েছে।
মহানবী (সা) বলেন-
اذا ظھر الربا والزنا فى قریة فقد احلوا بانفسھم عذاب اللھ.

সুদ ও ব্যভিচার-যেনা যখন কোন দেশে-শহরে বা গ্রামে ব্যাপকতা লাভ করে, তখন তাদের উপর আল্লাহর আযাব
আসা অনিবার্য হয়ে পড়ে। (হাকিম)
ইসলাম সুদের ব্যাপারে খুবই কঠোরতা অবলম্বন করেছে এবং অকাট্যভাবে হারাম করে দিয়েছে। এতে করে
সামগ্রিকভাবে মানুষের কল্যাণ সাধন করেছে। তাদের নৈতিকতা, সমাজ ও অর্থনীতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা
করার ব্যবস্থা করেছে।
ধনী লোকেরাই সুদ খায় ও সুদের ভিত্তিতে ঋণ দেয়। সুদখোর ব্যক্তি গরীবকে ঋণ দেয় এবং মূলধনের উপর সে
বাড়তি টাকা ফেরত নেয়। এরূপ ব্যক্তি আল্লাহর কাছেও যেমন অভিশপ্ত হয়ে থাকে, তেমনি জনগণের কাছেও
অভিশপ্ত। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে কেবল সুদ-খোররাই অপরাধী হয় না, যারা সুদ দেয়, সুদ খাওয়ায়, তারাও এ
অপরাধে শরীক রয়েছে। সুদের দলিল যারা লিখে এবং তাতে যারা সাক্ষী হয়, তারাও কোন অংশে কম অপরাধী নয়।
হাদীসে বলা হয়েছে।
لعن اللھ اكل الربا و مؤكلھ و شاھدیھ و كاتبھ.
যে সুদ খায়, সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী হয় এবং তার দলিল লিখে তাদের সকলের উপর আল্লাহ তাআলা অভিশাপ
করেছেন। (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
সমাজে যখন করযে হাসানার প্রবর্তন না থাকে এবং সুদের ভিত্তিতে ঋণ গ্রহণ করার যদি তীব্র প্রয়োজন দেখা দেয়, তা
হলে শুধু সুদখোরই গুনাহগার হবে। সুদের ভিত্তিতে ঋণ না করাই উত্তম। তাই সুদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য
সকলকেই প্রাণপণ চেষ্টা চালাতে হবে। একান্তকঠিন সমস্যায় পড়া ছাড়া সুদ গ্রহণ করা ঠিক নয়। আর সমস্যায় পড়ে
একাজ করতে হলে অত্যন্তঘৃণা সহকারে একাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করা চলবে না। এরূপ অবস্থা
হলে আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন।
সূদের পরিণাম স¤পর্কে মহানবী (সা) আরো বলেন-
و عن عبد اللѧھ بѧن مسѧعود رضѧى اللѧھ عنѧھ عѧن النبѧى صѧلى اللѧھ علیѧھ و سѧلم قѧال:
الربا ثلث و سبعون بابا ایسرھا مثل ان ینكح الرجل امھ.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, সুদের মধ্যে তিহাত্তরটি গুনাহ
রয়েছে। আর সর্বনি¤œগুনাহটি হল- নিজের মাতাকে বিবাহ করার সমতুল্য। (মুসতাদরাকে হাকিম)
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন- সুদের ভিতর তিহাত্তর প্রকার গুনাহ রয়েছে-এর
মধ্যে সর্বনি¤œগুনাহ হল নিজের মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবার সমতুল্য। (বায়হাকী ও ইবনে মাজা)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন, জেনে শুনে সুদের এক দিরহাম
গ্রহণ করা ছত্রিশ বার যিনা করা অপেক্ষা মারাত্মক অপরাধ। (মুসনাদে আহমদ ও তাবারানী)
হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যখন কোন জাতিকে ধ্বংস করার ইচ্ছা
পোষণ করেন তখন সে সমাজে সুদের প্রচলন বৃদ্ধি করে দেন।
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ঋণ মুনাফা টানে তা সুদ। (কানযুল উম্মাল)
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ক্ষতিকর সাতটি বিষয় থেকে তোমরা বিরত
থাকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা) ! সে সাতটি বিষয় কী ? জবাবে তিনি বললেন, (১)
আল্লাহর সাথে শরীক করা, (২) যাদু বিদ্যা শিক্ষা ও প্রদর্শন করা, (৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা (৪) সুদ
ভক্ষণ করা, (৫) ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ করা, (৬) ধর্ম যুদ্ধ থেকে পলায়ন করা এবং (৭) কোন স্বতী-সাধবী রমণীকে
অপবাদ দেয়া। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসাঈ)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। বিশ্বনবী (সা) বলেছেন, সুদখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (হাকিম)
সুদ খাওয়ার অর্থ
পবিত্র কুরআন ও হাদীসে সুদ খাওয়া এবং খাওয়ানোকে হারাম অর্থাৎ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুদ সম্পর্কে যে
আরবী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তার অর্থ হচ্ছে খাওয়া। যেমনواѧالرب أكلونѧی الذین) যারা সুদ খায়), واѧالرب أكلوѧت لا)ে তামরা সুদ খেয়ো না), ھѧموكل و اѧالرب لѧاك
(সুদ যে খায় এবং যে দেয়) ইত্যাদি।
বর্তমান যুগে সুদখোর এবং এক শ্রেণীর স্বার্থপর লোক যাদের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান নেই তারা সুদকে হালাল করার
জন্যে ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা বলেন- কুরআনে সুদ খাওয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিন্তু এর ব্যবহারকে নিষিদ্ধ
করা হয়নি। তাদের এ দাবীর প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পবিত্র কুরআন ও হাদীসে সুদ খাওয়ার নিষিদ্ধতা সম্পর্কে যা বলা
হয়েছে তা অসত্য নয়। কিন্তু সুদ খাওয়া অর্থ হচ্ছে সুদ ব্যবহার করা বা গ্রহণ করা বা সুদের আদান-প্রদান করা।
আর তা খাওয়ার জন্যে ব্যবহার করা হোক বা ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্যে ব্যবহার করা হোক বা আসবাব পত্র ক্রয়ের
জন্যে ব্যবহার করা হোক বা পোষাক পরিচ্ছদের জন্যে ব্যবহার করা হোক। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে সুদ ব্যবহার
শব্দটি উল্লেখ না করে সুদ খাওয়া শব্দ ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে এই যে, অন্যায়ভাবে কারো কোন জিনিস ব্যবহার
করার পর সে সম্বন্ধে জ্ঞাত হবার পরে তা মালিকের নিকট ফেরত দেয়া যায়। কিন্তু কোন জিনিস খেয়ে ফেলা হলে তা
আর ফেরত দেয়া যায় না। সুদের ব্যাপারটি ঠিক অনুরূপ। সুতরাং সম্পূর্ণ আত্মসাৎ করার কথা বোঝাতে গিয়ে কুরআন
ও হাদীসে খাওয়া শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। এটি ভাষার একটি সাধারণ বাকপদ্ধতি। সুতরাং সুদ খাওয়া অর্থাৎ সুদের
সর্বপ্রকার ব্যবহার তথা আসবাবপত্র ক্রয়, ঘরবাড়ি নির্মাণ, পোষাক পরিচ্ছদ ক্রয়, সুদ দেয়া নেয়া, সুদের সাক্ষ্য দেয়া,
সুদের দলিল লেখা, সরল সুদ, চক্রবৃদ্ধি সুদ, বাণিজ্যিক সুদ এবং সর্বপ্রকার সুদী লেনদেন ইসলামে সম্পূর্ণরূপে
হারাম। কেউ যদি সুদের নাম পরিবর্তন করে সুদকে অন্য কোন নতুন নামে আখ্যায়িত করে তাহলে সুদ হালাল হবে
না বরং হারামই থাকবে। হারামকে হারামই মনে করতে হবে। সুদকে কোন অবস্থাতেই বৈধ বা হালাল হিসেবে চিন্তা
করা যাবে না। এটা ঈমানের দাবী।
ঘুষ সংক্রান্তহাদীস
হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসূল (সা) ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতাকে অভিশপ্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
عن عبد اللھ بن عمرو رضى اللھ تعالى عنھ قال: لعن رسول اللھ صلى اللھ علیѧھ و
سلم الراشى والمرتشى .
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়কেই অভিশম্পাত করেছেন।
(তিরমিযী)
ঘুষ চাওয়া, ঘুষ লওয়ার চেষ্টা করা, না দিলে বিপদ হবে এরূপ হুমকি বা ধমক দেয়াও ঘুষ গ্রহণের শামিল। এছাড়া
যারা ঘুষ দিবে এবং যারা ঘুষের আদান প্রদানে কোনরূপ সাহায্য সহযোগিতা করবে তারাও ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার
ন্যায় সমান অপরাধী বলে গণ্য হবে। কেননা হারাম কাজ করা যেমন অন্যায়, তদরূপ হারাম কাজে সাহায্য
সহযোগিতা করাও অন্যায়।
এ বিষযে হযরত উমর ফারুক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসকে দলিল হিসেবে পেশ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগে
একদল লোক সাদাকার অর্থ পাবার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জড়িয়ে ধরত। তারা সাদাকার অর্থ না নিয়ে ফিরে যেতে
রাজি হত না। অথচ তারা এর হকদার ছিল না। তথাপি তাদের পিড়াপিড়িতে রাসূলুল্লাহ (সা) তাদেরকে কিছু দিয়ে
দিতেন। এ সম্পর্কে হযরত উমর (রা) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন ঃ
ان احدكم لیخرج بصدقتھ من عندى متابطھا و انما ھى نار قال عمر: یا رسѧول اللѧھ
اكیف تعطیھ و قد علمت انھا لھ نار قال فما اصنع یأبون الا مسالتى و یابى اللѧھ عѧز
و جل لى البخل .
তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে, যারা আমার নিকট থেকে সাদাকার মাল নিয়ে বগলে চেপে বের হয়ে যায়
অথচ উহা তার জন্য আগুনের ন্যায়। হযরত উমর (রা.) বললেন, আপনি যখন জানেনই যে সেটা তার জন্য আগুনের
ন্যায় তখন আপনি তাকে দেন কেন ? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আমি কি করব ? ওরা এমনভাবে আবদার
করে বসে যে, ওদেরকে ফিরানোই যায় না। মহিমান্বিত আল্লাহ চান না যে, আমি কৃপণতা করি। (মুসনাদে আহমাদ)
ব্যাখ্যা ও শিক্ষা
উপরোক্ত হাদীস থেকে জানা যায়, সাদাকার অর্থ তাদের ন্যায্য প্রাপ্য না হওয়া সত্তে¡ও এবং তা তাদের জন্য অগ্নি এটা
জেনেও তাদের চেপে ধরার কারণে রাসূলুল্লাহ (সা) তাদেরকে কিছু মাল দিয়ে দিতেন। সুতরাং ঘুষ দেয়া এবং তা
গ্রহণ করা হারাম জেনেও যারা ঘুষ ব্যতীত কাজ করতে চায় না, ঘুষ না দিলে যারা ফাইল পত্র লুকিয়ে রাখে, কিংবা
দিনের পর দিন টেবিলে ফাইল ধরে রাখে তাদেরকে যদি নিজের ন্যায্য হক আদায়ের জন্য কিংবা তাদের জুল্ম থেকে
রক্ষা পাবার জন্য নিরূপায় হয়ে শেষ প্রচেষ্টায় ঘুষ দেয়া হয় তাহলে গুনাহ এবং হারাম হবার কথা নয়।
অন্যদিকে ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা এবং ঘুষের আদান প্রদানে যারা সহযোগিতা করবে তারাও অভিশপ্তদের অন্তর্ভুক্ত
হবে। কেননা পাপ কাজ করা বা পাপ কাজে সহযোগিতা করা উভয়ই সমান অপরাধ। তবে তৃতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ
সাহায্যকারী যদি ঘুষদাতা কর্তৃক নিযুক্ত হয় এবং ন্যায্য অধিকার আদায় বা জুল্ম থেকে বাঁচার জন্য নিরুপায় হয়ে
ঘুষের আদান প্রদানে সহযোগিতা করে তাহলে তার অবস্থা ঘুষদাতার মতোই হবে অর্থাৎ সে অভিশপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে
না। আর যদি অবৈধ ও নিয়ম বহির্ভুতভাবে সুযোগ সুবিধা লাভের জন্য ঘুষ প্রদানে সহযোগিতা করে তাহলে সে
ঘুষদাতার ন্যায় অভিশপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। অপরদিকে তৃতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ সাহায্যকারী যদি ঘুষ গ্রহণকারী কর্তৃক
ইসলামিক স্টাডিজ-১ : উলূমুল কুরআন ও উলূমুল হাদীস বিএ/বিএসএস প্রোগ্রাম
ইউনিট-৫ : নির্বাচিত হাদীস-এর অনুবাদ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা পৃষ্ঠা- ২৪৮
নিযুক্ত হয় এবং ঘুষের আদান প্রদানে সহযোগিতা করে যায় তাহলে সে ঘুষ গ্রহীতার ন্যায় অভিশপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
কারণ তাকে তো ঘুষ খেতে কেউ বাধ্য করেনি। ঘুষ খাওয়া বা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছার উপরই নির্ভর করে।
এছাড়া শাসককে ঘুষ দেয়া সর্বাবস্থায় হারাম, তা কারো কোন প্রকার জুল্ম থেকে বাঁচার জন্য হোক বা ন্যায্য অধিকার
আদায়ের জন্য হোক।
জুয়া কি?
জুয়া জঘন্যতম সামাজিক অনাচার। জুয়াকে কুরআন মাজীদের ভাষায় মাইসির বলা হয়েছে। মাইসির অর্থ- সহজ
উপার্জন। অন্যায়ভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অপরকে বঞ্চিত করে যে অর্থ উপার্জিত হয় তাকে জুয়া বলা হয়। জুয়ার
মালিকানা বা লাভ ঘটনাক্রমের ওপর নির্ভরশীল। এক ব্যক্তির সম্পদ অন্য ব্যক্তির হস্তগত হওয়ার ভাগ্যক্রমে বা দৈব
চক্রের সব কাজই জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। এটি একটি শয়তানী, অত্যন্তঘৃণ্য ও প্রতারণামূলক কাজ।
জুয়া স¤পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
یَـۤأ َیُّھَا ٱل َّذِینَ آمَنُوا ْ إ ِنَّمَا ٱلْخَمْرُ وَ ٱلْمَیْسِرُ وَ ٱلأ َنصَابُ وَ ٱلأ َزْ لاَمُ رِ جْسٌ مِّنْ عَمَ ѧلِ ٱلشَّѧیْطَانِ
فَٱجْتَنِبُوهُ ل َع َل َّكُمْ تُفْلِحُونَ .
হে মুমিনগণ ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদীও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ; সুতরাং তোমরা তা
বর্জ কর-যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (সূরা আল-মায়িদা ঃ ৯০)
জুয়া ও লটারি সামাজিক অনাচার ও অপরাধের মধ্যে একটি মারাত্মক অপরাধ। মানুষ বহু প্রাচীনকাল থেকে এ
পাপাচার ও পাপানুষ্ঠানে আসক্ত হয়ে আছে। সমাজের বহু অন্যায় এ জুয়ার পাপাচার থেকে ছড়িয়ে পড়ে। ইসলাম তাই
জুয়াকে চিরতরে নিষিদ্ধ ও হারাম ঘোষণা করেছে।
জাহেলী যুগে জুয়া
আরবের জাহিলী যুগের লোকেরা নানাভাবে জুয়া খেলত। তার মধ্যে একটি হচেছ- আযলাম। আযলাম এমন শরকে
বলা হয়, যা দ্বারা আরবে ভাগ্য নির্ধারণী জুয়া খেলার প্রথা প্রচলিত ছিল। দশ ব্যক্তি শরীক হয়ে একটি উট যবাহ
করত। কিন্তু সমান অংশে মাংস ভাগ না করে তা দ্বারা জুয়া খেলা হত। দশটি শরের সাতটিতে বিভিন্ন অংশ অঙ্কিত
থাকত। আর তিনটি শর অংশবিহীন সাদা থাকত। যার নামে যে অংশ বিশিষ্ট শর ওঠত সে তত অংশ মাংস পেত।
আর যার নামে অংশবিহীন শর ওঠত, সে কিছুই পেত না। ইসলামে এ ধরনের কাজকে হারাম করা হয়েছে। কেননা,
এতে প্রকৃত মালিক বঞ্চিত হয়। সুরা মায়িদায় বলা হয়েছে- ‘‘শয়তান চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পর¯পরের
মাঝে শত্রæতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব
তোমরা এখনও কি নিবৃত হবে না।’’ (সুরা-মায়িদাঃ ৯১)
আধুনিক কালে জুয়া
আধুনিক বিশ্বে নানাভাবে নানা উপায়ে এ জুয়ার আসর জমজমাট করে রেখেছে। বিভিন্ন নামে চলছে জুয়ার আড্ডা।
লটারিও এক রকম একটি জুয়া। ইসলাম সব ধরনের জুয়াকে হারাম করেছে।
জুয়া ও লটারীর কুফল
জুয়া একটি শয়তানী কাজ। আল্লাহ বলেন ঃ এটি ঘৃণ্য বস্তু ও শয়তানের কাজ। (সূরা আল-মায়িদা : ৯০)
জুয়া ও মদ ইত্যাদির মাধ্যমে শয়তান মানুষের পরস্পরের মধ্যে শত্রæতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে। জুয়ার দ্বারা একজন
লাভবান হয় অন্যজন হয় নিঃস্ব। ফলে একে অপরের মধ্যে ভীষণ শত্রæতা শুরু হয়।
জুয়া সম্পদ অর্জনের কোন মাধ্যম নয়। এটা বিনা শ্রমে অন্যকে বঞ্চিত করে সম্পদ অর্জনের অপকৌশল। কাজেই
বন্টনের এ ব্যবস্থাটি ন্যায়নীতি বিহীন, নির্যাতন ও প্রবঞ্চনামূলক। তাই একাজের মাধ্যমে অর্থোপার্জন স¤পূর্ণভাবে
নিষিদ্ধ।
জুয়া সকলের জন্য খারাপ। এতে কোনো কল্যাণ নেই। এজন্য যে সব বস্তু বা কাজ আমাদের জন্য কল্যাণকর আল্লাহ
তাআলা তা আমাদের জন্য হালাল করেছেন। আর যা অকল্যাণকর তা হারাম করে দিয়েছেন।
জুয়া একটি প্রতারণামুলক অর্থোপার্জনের মাধ্যম। প্রতারণামূলকভাবে এতে অন্যের অধিকার কুক্ষিগত করা হয়।
মহানবী (সা) বলেন- যে প্রতারণা করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (মুসলিম)
জুয়ার দ্বারা আপাত লাভ হলেও এর দীর্ঘ মেয়াদী ফল হচ্ছে এক সময় জুয়াড়ী সর্বশান্তহয়ে পড়ে।
বিনা শ্রমে জুয়ার মাধ্যমে অর্জিত টাকা পেয়ে তা খরচ করার জন্য জুয়াড়ী নানা পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। জুয়াড়ী
যিনা-ব্যভিচার ও মাদকাসক্ত হয়।
জুয়ার টাকা সংগ্রহের জন্য জুয়ারী নানা ফন্দি-ফিকির করে। নিজের সম্পদ নষ্ট করে। অপরের টাকা লুট করে, চুরিডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি ও সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ে।
জুয়া অনেক অপকর্মের জন্ম দেয়। সমাজকে কলুষিত করে। জুয়ার দ্বারা সংক্রমিত ব্যক্তি ও সমাজ মানবতার ঘৃণ্য
শত্রæ। এজন্য কুরআনে একে শয়তানী কাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
জুয়া একটি সামাজিক অনাচার। অনেক পাপাচারের উৎসাহদাতা। জুয়া সংক্রমণ ব্যাধির মত। এ ব্যাধিতে আক্রান্ত
হলে ব্যক্তি, সমাজ, সভ্যতা কলুষিত হয় এবং নিঃশেষে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। এ কারণে ইসলাম জুয়াকে চিরতরে নিষিদ্ধ
ঘোষণা করেছে। তাই জুয়ার ন্যায় প্রতারণামূলক উপায়ে অর্থ উপার্জন থেকে প্রতিটি উম্মতকে নিরাপদ থাকতে হবে।
১. সুদ-এর আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছেক. আনফাল; খ. যিয়াদাহ;
গ. রিবা; ঘ. মাইসির।
২. আল্লাহর অভিশাপ কার উপর?
ক. সুদদাতার উপর; খ. সুদগ্রহীতার উপর;
গ. সুদের দলীল লেখকের উপর; ঘ. সব ক’টি উত্তরই সঠিক।
৩. সুদের সর্বনি¤œপাপ কোনটি?
ক. ব্যভিচার করার তুল্য; খ. নিজের মাতাকে বিবাহ করার সমতুল্য;
গ. নিজের মায়ের সাথে ব্যভিচার করার সমতুল্য; ঘ. সব ক’টি উত্তরই সঠিক।
৪. ঘুষগ্রহীতার পরিণাম কী?
ক. ঘুষ গ্রহীতা ঘৃণার পাত্র; খ. ঘুষ গ্রহীতা জাহান্নামী হবে;
গ. ঘুষ গ্রহীতার উপর আল্লাহর অভিশ¤পাত; ঘ. সব ক’টি উত্তরই সঠিক।
৫. মাইসির শব্দের অর্থ কী?
ক. সহজ উপার্জন; খ. জুয়া;
গ. প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন; ঘ. সব ক’টি উত্তরই সঠিক।
সংক্ষিপ্ত রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. রিবা বলতে কী বোঝায়? লিখুন।
২. ‘‘ইসলামে সুদ নিষিদ্ধ’’ আলোচনা করুন।
৩. হাদীসে বর্ণিত নিষিদ্ধ সাতটি বিষয় কী কী? লিখুন।
৪. ইসলামে ঘুষ গ্রহণের বিধান লিখুন।
৫. অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘুষ দিলে তার বিধান কী? লিখুন।
৬. জুয়া কী? জুয়ার কুফল আলোচনা করুন।
রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. সুদ বলতে কী বোঝায়? সুদের বিধান স¤পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন।
২. জুয়া কী? ঘুষ ও জুয়ার বিধান আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]