কালাম শাস্ত্র বলতে কী বুঝায়? কালাম শাস্ত্রের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে

কালাম শাস্ত্র
ইলমুল কালাম বা কালাম শাস্ত্র হচ্ছে ইসলামী আকীদা বিশ্বাস সংক্রান্তবিজ্ঞান। যে শাস্ত্রে ইসলামের
মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস সংক্রান্তবিষয়গুলো সম্পর্কে যুক্তি ও দর্শনভিত্তিক আলোচনা করা হয় তাকে
কালাম শাস্ত্র বলা হয়। এ শাস্ত্রকে ইলমুল আকায়িদ ও ইলমুত তাওহীদও বলা হয়ে থাকে। কেননা এ
শাস্ত্রের মূল আলোচ্য বিষয় হল, তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।
কালাম শাস্ত্রের মাধ্যমে ইসলামের মূল বিশ্বাস ও প্রত্যয়সমূহ সম্বন্ধে সুষ্ঠু, সঠিক ও সম্যক জ্ঞানার্জন করা
যায়। এর মাধ্যমে ইসলাম বিরোধী মতবাদ ও বিরুদ্ধবাদীদের নানা প্রশ্ন, দ্বিধা-দ্ব›দ্ব ও সংশয়ের সঠিক
উত্তর প্রদানের যোগ্যতা অর্জন করা যায়। আল্লাহ তা’আলার যাত-সিফাত, একত্ববাদ, ফেরেশতা,
আসমানী কিতাব, রিসালাত-নবুওয়াত, খাতামুন নবুওয়াত, তাক্দীর, আখিরাতের জীবন ও কিয়ামতের
সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্বন্ধে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাস, যুক্তি-প্রমাণ ও দার্শনকি আলোচনার মাধ্যমে
সঠিক জ্ঞান আহরণ ও তাতে বিশ্বাস স্থাপন কালাম শাস্ত্রের আলোচ্য বিষয় ও উদ্দেশ্য।
কালাম শাস্ত্রকে ইসলামের শ্রেষ্ঠতম শাস্ত্র বলা হয়। কারণ ইসলাম ও আকীদা যেমন ধর্মের মূলভিত্তি,
তেমনি ঈমান-আকীদা সম্পর্কীয় শাস্ত্রও সমস্তশাস্ত্রের মূলভিত্তি। তাই এটি সকল শাস্ত্রের উপরে মর্যাদার
দাবি রাখে। ঈমান ও আকীদা সম্পর্কে যুক্তি প্রমাণ ও দর্শন ভিত্তিক সম্যক জ্ঞান লাভ করাই কালাম শাস্ত্র
শিক্ষার মহান উদ্দেশ্য। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ শাস্ত্রের তেমন প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়নি। কিন্তু গ্রিক
দর্শনের মাধ্যমে যখন ইসলামী আকীদার উপর নানাভাবে আক্রমণ আসতে থাকে এবং গ্রিক দর্শনে
প্রভাবিত হয়ে মুসলিম মনীষীদের একটি অংশ ইসলামের আকীদা সংক্রান্তবিষয়গুলোকে ভ্রান্তযুক্তি দ্বারা
ত্রæটিপূর্ণভাবে প্রমাণ করতে আরম্ভ করে, তখন এ শাস্ত্রের উদ্ভব হয়। ইলমুল কালাম-এর পরিচয়
ইলম (علم (শব্দের অর্থ জ্ঞান, বিদ্যা, বিজ্ঞান, শাস্ত্র। আর কালাম (م الكلا (অর্থ হচ্ছে, বাক্য,
বাণী, উক্তি, কথা, অর্থবোধক ধ্বনি, ঝবহঃবহপব ঝঢ়বধপয, গবংংধমব, ডড়ৎফ ্ উরধষড়ঁমব ইত্যাদি।
ইলমুল কালাম-এর পরিচয় ব্যক্ত করে মনীষীগণ যে সব সংজ্ঞা নিরূপণ করেছেন, তার মধ্যে
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা এখানে উপস্থাপন করা হল-
 যে শাস্ত্র পাঠ করলে ইসলামের আকীদা ও বিশ্বাস সম্পর্কে সুষ্ঠু, সঠিক ও সম্যক জ্ঞান লাভ করা
যাায় এবং যুক্তি-প্রমাণের আলোকে ইসলাম বিরোধী মতবাদ ও বিরুদ্ধবাদীদের নানা প্রশ্ন, দ্বিধা-দ্ব›দ্ব
ও সংশয়ের উত্তর প্রদানের যোগ্যতা অর্জন করা যায় তাকে ‘ইলমুল কালাম’ বলে।
 আল্লামা মুহাম্মদ আলী (র) ইলমুল কালামের পরিচয় দিয়ে বলেন, ইলমুল কালাম হল এমন বিদ্যার
নাম যার মাধ্যমে ব্যক্তি দলীল-আদিল্লাহ বা যুক্তি-প্রমাণের দ্বারা ইসলামী আকীদা ও বিশ্বাসগুলোকে
প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত করতে পারে এবং এ সংক্রান্তযাবতীয় দ্বিধা-দ্ব›দ্ব, সন্দেহ-সংশয় দূরীভ‚ত করে
সঠিক ঈমান গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।
মোটকথা ইলমে কালাম হল এমন শাস্ত্র, যা ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস সংক্রান্তবিষয়গুলো প্রামাণ্যভাবে
আলোচনা করে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসের আলোচিত বিষয় সম্পর্কে যাবতীয় সন্দেহ, সংশয় এবং
বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের উত্তর প্রদানে কার্যকর ভ‚মিকা পালন করে।
উল্লেখ্য যে, ইলমুল কালাম বা কালাম শাস্ত্রকে ইলমুত তাওহীদ (التوحید علم (এবং
ইলমুল আকায়িদ
(ئد العقا علم (ও বলা হয়। এ শাস্ত্রকে ইলমুল কালাম বলার কারণ হল, আল্লাহর কালাম
বা বাণীকে কেন্দ্র করেই এ শাস্ত্রের উদ্ভব অথবা আল্লাহর কালামই এর মূল বিষয়বস্তু। আর এ বিদ্যায়
প্রধানত ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ও ঈমান সম্পর্কিত বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাই একে
ইলমুল আকায়িদও বলে। অন্যদিকে এ শাস্ত্রের মূল উদ্দেশ্য ও আলোচ্য বিষয় আল্লাহর একত্ববাদ এবং
একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা। তাই এটিকে ইলমুত তাওহীদও বলা হয়।
প্রকারভেদ
কালাম শাস্ত্রবিদগণ ইলমুল কালাম-কে দুই ভাগে ভাগ করে থাকেন। যথা১. (مین المتقد (القدماء كلام বা প্রাচীনদের কালাম শাস্ত্র
২. خرین المتا كلام বা উত্তরসূরীদের কালাম শাস্ত্র।
কালামুল কুদামা বা প্রাচীনদের কালামশাস্ত্র
কালামুল কুদামা বা প্রাচীনদের কালাম শাস্ত্র হচ্ছে, যে শাস্ত্রে দার্শনিক যুক্তি প্রমাণ ও প্রাজ্ঞতা ব্যতীত শুধু
কুরআন-হাদীসের দলীলের আলোকে ধর্মীয় আকীদা, বিশ্বাসগুলো প্রমাণ করতে চেষ্টা করা হয়েছে।
আর এ বিষয়ের উপর রচিত কয়েকটি গ্রন্থ হল-ইমাম আবু হানীফার ‘আল ফিকÐল আকবার’; আল্লামা
নাসাফী (র.)-এর ‘বাহরুল কালাম’ এবং ‘কিতাবুত তামহীদ’ ইত্যাদি।
কালামুল মুতাআখখিরীন বা উত্তরসূরীদের কালাম শাস্ত্র
কালামুল মুতাআখখিরীন বা উত্তরসূরীদের কালাম শাস্ত্র হচ্ছে, যে শাস্ত্রে ধর্মীয় আকীদা বিশ্বাসগুলো
আলোচনার ও প্রমাণের ক্ষেত্রে কুরআন-হাদীসের দলীলের পাশাপাশি বুদ্ধিভিত্তিক প্রাজ্ঞতা ও দার্শনিক
যুক্তি প্রমাণকেও স্থান দেওয়া হয়েছে। এ পর্যায়ের কয়েকটি গ্রন্থ হল : আল-মাওয়াফিক, শরÐল
মাকাসিদ, আত-তাহযীব, ইমাম রাযীর কিতাব ইত্যাদি।
ইলমুল-কালামের আলোচ্য বিষয়
মাওয়াকিফ নামক গ্রন্থে আল্লামা কাজী ইযযুদ্দীন আবদুর রহমান ‘ইলমে কালামের’ আলোচ্য বিষয় বর্ণনা
প্রসঙ্গে তিনটি মত উল্লেখ করেন১. অধিকাংশ আলিমের মতে-‘ইলমুল-কালামের আলোচ্য বিষয় হল, ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসগুলোর
আলোচনা, প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা সংক্রান্তযাবতীয় জ্ঞান।
২. কাজী আরমুভী (র) বলেন, ইলমুল কালামের আলোচ্য বিষয় হল, আল্লাহ তা’আলার যাত বা
সত্তা। যে কারণে এ শাস্ত্রে আল্লাহ তা’আলার সিফাত বা গুণাবলী, তাঁর পার্থিব কার্যাবলী,
পারলৌকিক কার্যাদি যেমন-হাশর-নাশর, হিসাব-নিকাশ, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি এবং তাঁর
Ðকুম-আহকাম সম্পর্কেই আলোচনা করা হয়ে থাকে।
৩. ইমাম গাযালী (র) বলেন, ‘সাধারণত অস্তিত্বশীল বস্তুই হল-এর আলোচ্য বিষয়। কারণ ইসলামী
আকীদা-বিশ্বাসের বর্ণনা, প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা একমাত্র অস্তিত্বশীল বিষয়ের সাথেই সংশ্লিষ্ট।
আল্লাহ তা আলার একত্ববাদ, ফেরেশতা, আসমানী কিতাবসমূহ, রাসুলগণ, তাকদীরের ভালমন্দ
ও কিয়ামতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আকাদী-বিশ্বাস ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করাই হল কালাম শাস্ত্রের
আলোচ্য বিষয়।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, ইলমুল কালাম-এর আলোচ্য বিষয় প্রধানত তিন
প্রকার। যথাপ্রথমত : এর আলোচ্য বিষয় হল, আল্লাহর যাত বা সত্তা এবং সিফাত বা গুণাবলী সম্পর্কে
আলোচনা করা। আল্লাহ তা’আলার তাওহীদ বা একত্ববাদের প্রমাণ এবং আল্লাহ তা’আলার সমস্ত
ইতিবাচক ও নেতিবাচক গুণাবলী কালাম শাস্ত্রের প্রধান আলোচ্য বিষয়।
দ্বিতীয়ত: ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ঈমানের সাথে সম্পর্কিত, ইলমুল
কালাম-এর আলোচ্য বিষয়।
তৃতীত: সাধারণত অস্তিত্বশীল বস্তু বা বিষয়-এর আলোচ্য বিষয়। কারণ ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসের
বর্ণনা, প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা কেবল অস্তিত্বশীল বিষয়ের সাথেই সংশ্লিষ্ট।
ইলমুল কালাম এর উদ্দেশ্য-লক্ষ্য
‘ইলমুল কালাম’ বা কালাম শাস্ত্রের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য হল, বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসের উপর যথাযথ জ্ঞান
অর্জন করা এবং বাতিল ও ভ্রান্তআকীদা-বিশ্বাস হতে মুক্তি লাভ করা। সাথে সাথে বাতিল ও ভ্রান্ত
আকীদা-বিশ্বাসের অসারতা প্রতিপন্ন করা, বিরুদ্ধবাদীদের অপযুক্তি খÐনের শক্তি ও যোগ্যতা অর্জন
করা। এ উদ্দেশ্যসমূহকে চারটি পয়েন্টে উল্লেখ করা যায়।
ক. যারা ইসলামী আকীদায় বা মূল বিশ্বাসের প্রতি অনুসন্ধানী তাদের দীপ্তিমান দলীল-প্রমাণাদির
সাহায্যে সঠিক পথ নির্দেশ করা। অপর পক্ষে যারা ইসলামী বিশ্বাসের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের
যুক্তি-তর্ক ও প্রশ্নের দাঁতভাঙ্গা জাবাবের জন্য অকাট্য যুক্তি প্রমাণাদি উপস্থাপন করা।
অধিকাংশ আলিমের মতেইলমুল কালামের আলোচ্য
বিষয় হল, ইসলামী
আকীদা-বিশ্বাসগুলোর
আলোচনা, প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা
সংক্রান্তযাবতীয় জ্ঞান।
ইলমুল কালাম বা কালাম
শাস্ত্রের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য হলবিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসের
উপর যথাযথ জ্ঞান অর্জন
করা এবং বাতিল-ভ্রান্ত
আকীদা বিশ্বাস হতে মুক্তি
লাভ করার সাথে সাথে
বাতিল ও ভ্রান্তআকীদাবিশ্বাসের অসরাতা প্রতিপন্ন
করা, বিরুদ্ধবাদীদের
অপযুক্তি খÐনের শক্তি ও
যোগ্যতা অর্জন করা।
খ. ভ্রান্তও বাতিলপন্থীরা ইসলামী বিশ্বাস ও বিধানসমূহের উপর অহেতুক সন্দেহবশত আক্রমণ করে,
তাদের আক্রমণ প্রতিহত করে ইসলামী বিশ্বাস ও বিধানকে প্রতিষ্ঠা করা।
গ. মানুষ যাতে অন্ধভাবে কোন কিছু অনুকরণ না করে সে দিকে দৃষ্টি রেখে তাদেরকে দৃঢ় বিশ্বাসের
উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করা।
ঘ. সর্বোপরি ঈমান-আকীদা সম্বন্ধে বিজ্ঞান ও দর্শন ভিত্তিক সুষ্ঠু জ্ঞান লাভ করা।
এছাড়া আরও বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ ও বিচারে ইলমুল কালামের উদ্দেশ্য বিভিন্ন হয়ে থাকে। আল্লামা
মুহাম্মদ আলী (র.) ইলমুল কালামের পাঁচটি উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। যেমন১. ইলমুল কালামের উদ্দেশ্য হল, অন্ধ অনুসরণের নাগপাশ ছিন্ন করে দৃঢ় বিশ্বাসের উচ্চতম
মার্গে উপনীত হওয়া।
২. ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাসের সঠিক পথ অšে¦ষণকারীদেরকে স্পষ্ট দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে সঠিক
পথ প্রদর্শন এবং বিরুদ্ধবাদীদের দাঁতভাঙ্গা জবাবের জন্য অকাট্য দলীল প্রমাণ উপস্থাপন
করা।
৩. বাতিলপন্থীদের সন্দেহ-সংশয়ের আক্রমণ থেকে ইসলামী মূলনীতি তথা আকীদাবিশ্বাসগুলোকে রক্ষা কর।
৪. কর্মসমূহে নিয়াতের বিশুদ্ধতা সৃষ্টি করা এবং কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট আহকামের বিশুদ্ধ বিশ্বাসের
প্রত্যয় সৃষ্টি করা। কারণ এর ফলেই কর্ম গৃহীত বা কবুল হয়ে থাকে।’
৫. ইলমুল কালামের উপর ভিত্তি করে শরয়ী জ্ঞান-বিজ্ঞানের উদ্ভাবন করা। কারণ, ইলমুল
কালামের মাধ্যমে যখন এক-একক, সর্বশক্তিমান, আদেশদাতা রাসুল-প্রেরক ও কিতাব
অবতারক আল্লাহর অস্তিত্বপ্রতিষ্ঠিত হবে তখন ইলমে তাফসীর, ইলমে হাদীস, ইলমে ফিকহ
সহ অন্যান্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয় আবিষ্কৃত হবে।
বস্তুত, ইলমুল কালামের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য সম্পর্কিত আলিমদের সকল মতের সারকথা হল,
ইহকাল ও পরকালের পরিপূর্ণ সফলতা অর্জন করাই হচ্ছে ইলমুল কালামের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য।
কালাম শাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা
কালাম শাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গিয়ে আল্লামা নাসাফী উল্লেখ করেন, প্রাথমিক যুগের
মুসলমানগণ তথা সাহাবায়ে কিরাম (রা.) ও তাবিঈগণ তাদের নিষ্কলুষ আকীদা-বিশ্বাস এবং রাসূলুল্লাহ
(সা.)-এর পবিত্র সান্নিধ্য লাভের বরকতে ও তাঁর যুগের সাথে নিকটবর্তী যুগ হওয়ার কারণে, তদুপরি
সে যুগে ঘটনাবলীর স্বল্পতা ও পারস্পরিক মতভেদ একান্তঅল্প থাকার কারণে সর্বোপরি নির্ভরযোগ্য ও
সর্বজনমান্য ব্যক্তিবর্গের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ থাকার দরুণ তাঁরা ইলমে ফিকহ ও ইলমুল কালামের
প্রতি আদৌ মুখাপেক্ষি ছিলেন না।
পরবর্তীকালে যখন মুসলমানদের মধ্যে নানাবিধ ফিতনা-ফ্যসাদ ও ভ্রান্তমতবাদের অভ্যুদয় ঘটল,
উলামায়ে দ্বীন ও মুসলিম মনীষীদের প্রতি অন্যায়-অত্যাচার শুরু হল, মানুষের মধ্যে মতের পার্থক্য
দেখা দিতে শুরু করল, বিদ্আত ও মনগড়া চালচলনে আসক্তি দেখা দিতে লাগল, ফাতওয়া ও
ঘটনাবলীর ফিরিস্তিক্রমশ বৃদ্ধি পেতে লাগল, জটিল বিষয়ে আলিমদের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা
ঘটনাবলীর ফিরিস্তিক্রমশ বৃদ্ধি পেতে লাগল, জটিল বিষয়ে আলিমদের শরণাপন্নহওয়ার প্রয়োজনীয়তা
দেখা দিল। তখনই শরয়ী মাসায়েল উদ্ভাবন ও তজ্জন্য নীতিমালা নির্ধারণ এবং বিশুদ্ধ আকীদাসমূহ
দলীল-প্রমাণসহ সাব্যস্তকরা এবং বাতিল আকীদাগুলো খÐন করার দলীল ও যুক্তি নির্ধারণের প্রয়োজন
দেখা দেয়। এভাবে মুসলমনাদের ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাসকে ত্রæটি মুক্ত রাখার তাগিদে এবং ভ্রান্ত
মতবাদীদের প্রত্ত্যুত্তর দেওয়ার প্রয়োজনে মুসলিম সমাজে ইলমুল কালাম বা কালাম শাস্ত্রের চর্চার
আবশ্যকতা সৃষ্টি হয়েছে। (-আকাঈদে নাসাফী)
বস্তুত ইলমুল কালামের
উদ্দেশ্য-লক্ষ্য সম্পর্কিত
আলিমদের সকল মতের
সারকথা হল, ইহকাল ও
পরকালের পরিপূর্ণ সফলতা
অর্জন করাই হচ্ছে ইলমুল
কালামের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য।
সারসংক্ষেপ
‘ইলম’ অর্থ জ্ঞান-বিজ্ঞান, বিদ্যা, শাস্ত্র, আর ‘কালাম’ শব্দের অর্থ কথন, উক্তি, বাক্য। ইসলামের
পরিভাষায় যে শাস্ত্র বা বিষয় পাঠ করলে যুক্তি প্রমাণের মাধ্যমে ইসলামী আকীদা ও বিশ্বাসমূহ
সম্পর্কে সুষ্ঠু, সঠিক ও সম্যক-জ্ঞান অর্জন করা যায় এবং ইসলাম বিরোধী মতবাদ ও
বিরুদ্ধবাদীদের নানা প্রশ্ন, দ্বিধা-দ্ব›দ্ব, সন্দেহ-সংশয় ও যুক্তি-তর্কের সঠিক ও বুদ্ধিভিত্তিক উত্তর
প্রদানের যোগ্যতা অর্জন করা যায় তাকে ইলমুল কালাম বা কালাম শাস্ত্র বলা হয়। এ শাস্ত্রকে ইলমুল
আকায়িদ এবং ইলমুত তাওহীদও বলা হয়। কারণ এ শাস্ত্রেই আল্লাহর সত্তা, গুণাবলী ও একত্ববাদ
এবং ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও আকীদাসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। মূলত, এর আলোচ্য
বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ, আল্লাহর একত্ববাদ, রিসালাত, ফেরেশতা, আসমানী কিতাব, তাকদীর,
আখিরাতের জীবন, ও কিয়ামত সম্পর্কিত বিষয়াবলী সম্পর্কে সম্যক যুক্তি ও দর্শন ভিত্তিক জ্ঞান
আহরণ। এরই মাধ্যমে ঈমানকে পরিশুদ্ধ ও দৃঢ় মূলে প্রতিষ্ঠা করা ও অবিচল থাকা যায়। কাজেই, কালাম শাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সকল শাস্ত্রের চেয়ে বেশি এবং শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। নোট করুন
 সঠিক উত্তরে টিক ( চিহ্ন দিন১. ‘ইলম’ শব্দের অর্থ-
ক. জ্ঞান, বিদ্যা, বিজ্ঞান, শাস্ত্র;
খ. বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান, গরিমা;
গ. বাণী, জ্ঞান, বুদ্ধি, উক্তি;
ঘ. বাক্য, জ্ঞান, বিজ্ঞান, শাস্ত্র।
২. ইলমুল কালাম অর্থ-
ক. ফিকহ শাস্ত্র;
খ. কালাম শাস্ত্র;
গ. তর্ক শাস্ত্র;
ঘ. ধর্মতত্ত¡ শাস্ত্র।
৩. ইলমুল কালামকে আরও বলা হয়ক. ইলমুত তাওহীদ ও ইলমুল আকায়িদ;
খ. ইলমুত তাওহীদ ও ইলমুল ফিকহ;
গ. ইলমুল ফিকহ ও ইলমুত তাজবীদ;
ঘ. ইলমুল ফিকহ ও মাওয়াকিফ।
৪. কালাম শাস্ত্রের মূল উদ্দেশ্য ও আলোচ্য বিষয় হচ্ছেক. কালাম শাস্ত্র;
খ. ফিকহ শাস্ত্র;
গ. আল্লাহর একত্ববাদ;
ঘ. আল্লাহর বিধানাবলী।
৫. ইলমুল কালাম-এর আলোচ্য বিষয় প্রধানত ক’টি?
ক. ৫টি;
খ. ৬টি;
গ. ৩টি;
ঘ. ১টি।
৬. কালাম শাস্ত্রের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য হলক. কালাম শাস্ত্র সম্পর্কিত জ্ঞান লাভ;
খ. কালাম ও ফিকহ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন;
গ. আল্লাহর বিধান ও একত্ববাদ সম্পর্কিত জ্ঞান লাভ;
ঘ. ইহকাল ও পরকালের পরিপূর্ণ সফলতা অর্জন করা।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. ইলমুল কালাম-এর পরিচয় দিন।
২. কালাম শাস্ত্রবিদগণ ইলমুল কালাম-কে কয়ভাগে বিভক্ত করেন এবং সেগুলো কী কী? লিখুন।
৩. ইলমুল কালাম এর আলোচ্য বিষয় আলোচনা করুন।
৪. ইলমুল-কালাম -এর উদ্দেশ্য-লক্ষ্য বিশ্লেষণ করুন।
৫. কালাম শাস্ত্রের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আল্লামা নাসাফীর বক্তব্য তুলে ধরুন।
 বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. কালাম শাস্ত্র বলতে কী বুঝায়? কালাম শাস্ত্রের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]