তাওহীদ কত প্রকার ও কী কী? দলীল-প্রমাণসহ লিখুন।

তাওহীদ-এর প্রকারভেদ
তাওহীদ শুধু আল্লাহর সত্তা সম্পর্কিত একটি ধারণাই নয় বরং এটি বাস্তব জীবনের একটি সুস্পষ্ট
নিয়ামক। পবিত্র কুরআনের শিক্ষা অনুসারে আল্লাহ তা’আলা যেমন সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও মৃত্যুদাতা,
তেমনি তিনি বিধানদাতা, রিযিকদাতা ও মঙ্গলদাতা। তিনিই ইবাদাত এবং উপাসনা পাওয়ার একমাত্র
সত্তা, তাঁর সাথে ইবাদতে আর কাউকে অংশীদার করা যাবে না। আল্লাহ তা’আলার এ সকল গুণাবলী
(صفات (পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়। একটি অপরটির সাথে সম্পৃক্ত এবং অবিচ্ছেদ্য। আর সে সূত্রটিই
তাওহীদ।
তাওহীদ তিন প্রকার যথা১. بیة الربو توحید তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ (রুবিয়্যাতের তাওহীদ)
২. ھیة الألو توحید তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ (উলুহিয়্যাতের তাওহীদ)
৩. والصفات الأسماء توحید তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাত (আল্লাহর নাম ও সিফাতের
তাওহীদ)
প্রত্যেক প্রকার তাওহীদের বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হল১. الربوبیة توحید তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ-এর পরিচয়
এ বিষয়ে স্বীকৃতি প্রদান করা যে, আল্লাহ তা’আলা সব কিছুর রব বা প্রতিপালক এবং বিশ্ব অধিপতি,
সকল কিছুর স্রষ্টা ও সকল প্রাণীর রিযিকদাতা। আর তিনিই জীবন ও মৃত্যুদাতা, ভাল মন্দ তিনিই
নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। বিপদ আপদে একমাত্র তিনিই বান্দার আহবানে সাড়া দেন। সমস্তসৃষ্টি জগত
নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলাই হচ্ছেন এক ও অভিন্নরব বা প্রতিপালক। তিনি অফুরন্তনিয়ামতের
মাধ্যমে গোটা সৃষ্টিজগতকে প্রতিপালন করছেন। সমস্তক্ষমতা তাঁরই জন্য এবং তাঁরই হাতে নিহিত
রয়েছে সকল মঙ্গল। তিনি যা ইচ্ছা করেণ তা করতে তিনি সক্ষম। তাঁর সার্বভৌমত্বে কারও কোন
অংশীদারীত্ব নেই।
আল-কুরআনে এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন Ðকুমদান ও আইন-বিধান
প্রদানের কর্তৃত্বে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো অধিকারের প্রতি এক বিন্দু স্বীকৃতি বা অনুমতি দেয়নি।
আল্লাহ ছাড়া মানুষকে আর কেউ কোন কাজের আদেশ দিতে পারে না এবং মানুষ অপর মানুষের
দাসত্ববরণ করতে পারে না।
তাওহীদে রুবুয়িয়্যাহ এককভাবে ইসলাম গ্রহণের জন্য যথেষ্ট নয়। বরং অবশ্যই রুবুবিয়্যাতের সাথে
তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাত এবং তাওহীদুল উলুহিয়ার সমাবেশ ঘটাতে হবে। কেননা আল্লাহ
তা’আলা এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে মুশরিকদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তারাও এ তাওহীদুর
রুবুবিয়্যাতে বিশ্বাস করে তা, সত্তে¡ও তারা মুমিন বা তাওহীদে বিশ্বাসী নয়। আল্লাহ তা’আলা এ প্রসঙ্গে
ঘোষণা করেন
তাওহীদ শুধু আল্লাহর সত্তা
সম্পর্কিত একটি ধারণাই নয়
বরং এটি বাস্তব জীবনের
একটি সুস্পষ্ট নিয়ামক।
আল্লাহ তা’আলা যেমন
সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও
মৃত্যুদাতা, তেমনি তিনি
বিধানদাতা, রিযিকদাতা ও
মঙ্গলদাতা। তিনিই
ইবাদাত এবং উপাসনা
পাওয়ার একমাত্র সত্তা। তাঁর
সাথে ইবাদাতে কাউকে
অংশীদার করা যাবে না।
ق ُلْ مَن یَرْ زُ ق ُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَ ٱلأ َرْ ضِ أ َمَّن یَمْلِكُ ٱلسَّمْعَ وٱلأ َبْصَارَ وَ مَن
یُخْ رِ جُ ٱلْحَىَّ مِنَ ٱلْمَیِّتِ وَ یُخْرِ جُ ٱل ْمَیِّتَ مِنَ ٱل ْحَىِّ وَ مَن یُدَ بِّرُ ٱلأ َمْرَ
فَسَیَق ُول ُونَ ٱلل َّھُ فَق ُلْ أ َفَلاَ تَتَّق ُونَ
“বল, কে তোমাদেরকে রিযিক দান করে আকাশ ও যমীন থেকে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার
কর্তৃত্বাধীন, জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে কে বের করে এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে কে বের
করে এবং সকল বিষয় কে নিয়ন্ত্রণ করে? তখন তারা বলবে, আল্লাহ। তবুও কি তোমরা সাবধান হবে
না।” (সূরা ইউনুস : ৩১)।
আল্লাহ তা’আলা আরো ঘোষণা করেন-
وَ لَئِن سَأ َلْتَھُم مَّنْ خَلَقَھُمْ لَیَقُول ُنَّ ٱلل َّھُ
“যদি তুমি তাদের জিজ্ঞেস কর, কে তাদের সৃষ্টি করেছে? তবে তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।” (সূরা
আযযুখরুফ : ৮৭)
আল্লাহ তা’আলা আরো ঘোষণা করেন-
وَ ل َئِن سَأ َلْتَھُمْ مَّن نَّزَّ لَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءً فَأ َحْیَا ب ِھِ ٱلأ َرْ ضَ مِن بَعْدِ مَوْ تِھَا
ل َیَق ُول ُنَّ ٱلل َّھُ
“যদি তুমি তাদের জিজ্ঞেস কর, কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে, কে ভূমিকে সঞ্জীবিত করে মৃত্যুর
পর? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।” (সূরা আল-আনকাবুত : ৬৩)
আল্লাহ তা’আলা আরো ঘোষণা করেন-
أ َمَّن یُجِ یبُ ٱلْمُضْطَرَّ إ ِذَا دَعَاهُ وَ یَكْشِفُ ٱلسُّوۤ ءَ وَ یَجْع َل ُكُمْ حُل َفَآءَ ٱلأ َرْ ضِ
أ َإ ِل َـٰھٌ مَّعَ ٱلل َّھِ قَلِیلا ً مَّا تَذَكَّرُ ونَ
“বরং তিনি, যিনি আর্তের ডাকে সাড়া দেন, যখন সে তাকে ডাকে এবং বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন
এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেন। আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে কি? তোমরা
অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাক।” (সূরা আন-নামল : ৬২)
মুশরিকরা জানত উপরে বর্ণিত সকল বিষয়ই একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্য, তা সত্তে¡ও তারা
মুসলমান হতে পারেনি। হযরত ইবনে অব্বাস (রাঃ) এবং আতা এবং দাহহাক প্রমুখ বলেন যে,
কাফেররা আল্লাহ তা’আলাকে জানত এবং রুবুবিয়্যাত সম্পর্কেও তারা জানত এবং আল্লাহর সার্বভৌমত্ব
ও রাজত্ব সম্পর্কেও তাদের ধারণা ছিল। কিন্তু তারা এ সব বিশ্বাসের সাথে সাথে ইবাদতের ক্ষেত্রে
আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব করত তাই তারা পরিপূর্ণ তাওহীদে বিশ্বাস স্থাপন করে মুমিন হতে পারেনি।
সুতরাং তাওহীদের সকল শাখায় বিশ্বাস স্থাপন করা মুমিন হওয়ার জন্য অপরিহার্য।
২. لوھیة الا توحید তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বা ইবাদতের তাওহীদ-এর পরিচয়
তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বা ইবাদতের তাওহীদ হচ্ছে, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় দাসত্ব এককভাবে
আল্লাহর জন্যই সুনির্দিষ্ট করা এবং ইবাদতের ব্যাপারে তাঁর সাথে কাউকেও অংশীদার স্থির না করা।
অর্থাৎ ইবাদাত এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য করা যাবে না। একমাত্র আল্লাহকেই তাঁর সমগ্র সৃষ্টি
জগতের উপর উলুহিয়্যাত এবং উবুদিয়্যাতের তথা দাসত্ব ও আনুগত্যের অধিকারী হিসেবে জানা এবং
স্বীকার করা এবং যাবতীয় ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর একত্বের প্রমাণ দান করাই এই প্রকার তাওহীদের
উদ্দেশ্য। শেষোক্ত তাওহীদের জন্য প্রথমোক্ত উভয় প্রকার তাওহীদই অনিবার্য। এজন্যই প্রথমোক্ত
উভয় প্রকার তাওহীদই শেষোক্ত তাওহীদের অন্তর্ভুক্ত। কেননা উলুহিয়্যাত এমন একটি ব্যাপক গুণের
নাম, পরিপূর্ণতা, প্রতিপালন এবং শ্রেষ্ঠত্বের সমস্তগুণাবলী যার অন্তর্ভুক্ত। তাই তাঁর শ্রেষ্ঠত্বও মহত্বের
গুণে এবং সৃষ্টির প্রতি তাঁর অপরিসীম করুণা ও দয়ার গুণেই তিনি ইলাহ এবং মাবুদ বা উপাস্য হওয়ার
তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ
প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় দাসত্ব এককভাবে
আল্লাহর জন্যই সুনির্দিষ্ট করা এবং ইবাদতের
ব্যাপারে তাঁর সাথে কাউকেও অংশীদার স্থির না করা।
যোগ্য। তাঁর পরিপূর্ণগুণাবলী এবং প্রতিপালনের একক দাবি হচ্ছে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্তা
ইবাদাতের অধিকারী হতে পারে না। মানুষের অধিকার নেই এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে মাবুদ
রূপে গণ্য করার। সে যত বড় দাপটের বা ক্ষমতার এবং সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হোক না কেন।
সকল বিবেচনায় আল্লাহই পূর্ণত্বের অধিকারী। ইবাদাত পাওয়ার একমাত্র যোগ্য সত্তা তিনিই। ফলে এক
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত যেমন যুক্তিবিরোধী, বিবেক-বুদ্ধি পরিপন্থী, তেমনি ইসলামি
শরীআতেও সম্পূর্ণনিষিদ্ধ।
এ ইবাদাত শুধুআল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। তাই সকল মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক যে, তারা যখন প্রকাশ্য
ও অপ্রকাশ্যভাবে ইবাদাত করবে, তখন সেটা একমাত্র আল্লাহর জন্যই করতে হবে। তাঁর সাথে কোন
অংশীদার স্থির করা যাবে না। কোন জনপ্রিয় রাজা বাদশাহকেও নয়, কোন প্রেরিত নবী-রাসূলকেও নয়,
কোন অলি-আউলিয়াকেও নয়, যদিও অন্যদের তুলনায় তারা অধিক মর্যাদাশীল।
বর্তমান যুগে ইসলামের দাবিদারদের তুলনায় কাফিরদের তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ সম্পর্কে কম ধারণা ছিল
না। তাদের নিকট ইলাহ ছিলেন সেই সত্তা যাকে বিপদাপদে ডাকা হত, যার জন্য মানত মানা হতো,
যাঁর নামে পশু পাখী যবেহ করা হতো, যার নিকট আশ্রয় ও সাহায্য চাওয়া হতো। কিন্তুএ সব বিষযে
যদি মালাইকা, নবী-রাসূল, অলি-আউলিয়া, পীর-মুর্শীদ, বৃক্ষ, কবর, জিন, নদ-নদী প্রভৃতির নিকট
প্রার্থনা জানানো হয়, তবে প্রকৃত প্রস্তাবে তাদেরকেই ইলাহর আসনে বসানো হয়। নবীগণ কাফিরদের
একথা বোঝাবার প্রয়োজন বোধ করেনি যে, আল্লাহ হচ্ছেন স্রষ্টা, আহারদাতা এবং সমস্তকিছুর
ব্যবস্থাপক-পরিচালক। কেননা কাফিররা এটা ভাল করেই জানত এবং স্বীকার করত এ সব গুণাবলীর
অর্থাৎ সৃষ্টি করা, আহারদান এবং ব্যবস্থাপনা একমাত্র এক আল্লাহর জন্য সুনির্দিষ্ট আর কারো পক্ষেই তা
করার ক্ষমতা নেই।
তাছাড়া সে যুগের মুশরিকরা ‘ইলাহ’ -এর সেই অর্থই বোঝত যা আজকালের মুশরিকরা ‘সাইয়েদ’
মুর্শিদ, পীর ইত্যাদি শব্দ দ্বারা বুঝে থাকে। নবী করীম (সা) তাদের নিকট যে কালেমায়ে তাওহীদ
নিয়ে আগমন করেছিলেন সেটা হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আর এই কালিমার প্রকৃত তাৎপর্যই হচ্ছে,
এর আসল উদ্দেশ্য, শুধু এর শব্দগুলোই উদ্দেশ্য নয়। কালিমার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে
যাবতীয় বস্তুর সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করা। তাঁকে ছাড়া আর যাকে বা যে বস্তুকে উপাসনা করা হয় তা
সম্পূর্ণ অস্বীকার করা এবং এর থেকে তাঁকে সম্পূর্ণ পাক ও পবিত্র রাখা। আল-কুরআনের সূরা আলফাতিহার মধ্যেও এই কথাই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে:
إ ِیَّاكَ نَعْبُدُ وإ ِیَّاكَ نَسْتَعِینُ
“আমরা শুধু তোমারই ইবাদাত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।” (সূরা আল-ফাতিহা :
৪)
এ তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য আল্লাহ তা’আলার আদেশ রয়েছে যেঃ
فَٱعْبُدْهُ وَ تَوَ كَّلْ عَل َیْھِ وَ مَا رَ بُّكَ ب ِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَل ُونَ
“সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত কর এবং তাঁর উপর ভরসা রাখ। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে তোমার
প্রতিপালক অনবহিত নন।” (সূরা Ðদ : ১২৩)
আল্লাহ তা’আলা বলেন :
فَإ ِن تَوَ ل َّوْ ا ْ فَق ُلْ حَسْب ِىَ ٱلل َّھُ لاۤ إ ِل َـٰھَ إ ِلا َّ ھُوَ عَل َیْھِ تَوَ كَّلْتُ وَ ھُوَ رَ بُّ ٱلْع َرْ شِ
ٱلْع َظِ یمِ
“অত:পর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলবে, আমার জন্য আল্লাহ-ই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত
অন্য কোন ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই নির্ভর করি এবং তিনি মহাআরশের অধিপতি।” (সূরা আততাওবা : ১২৯)
আল্লাহ তা’আলা আরো ঘোষণা করেন: সে যুগের মুশরিকরা ‘ইলাহ’ এর সেই অর্থই বোঝত যা
আজকালের মুশরিকরা ‘সাইয়্যেদ’ মুর্শিদ, পীর
ইত্যাদি শব্দ দ্বারা বুঝে থাকে।
رَّ بُّ ٱلسَّمَاوَ اتِ وَ ٱلأ َرْ ضِ وَ مَا بَیْنَھُمَا فَٱعْبُدْهُ وَ ٱصْطَب ِرْ لِعِبَادَتِھِ ھَلْ تَعْل َمُ
ل َھُ سَمِیّا ً
“তিনি নভোমÐল, ভ‚মÐল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুরই পালনকর্তা। সুতরাং তাঁরই ইবাদাত কর
এবং তাঁর ইবাদতে ধৈর্যশীল থাক। তুমি কি তাঁর সমগুণ সম্পর্কে কাউকেও জানো?” (সূরা মারইয়াম :
৬৫)
সকল আসমানী গ্রন্থে এবং সকল নবী-রাসূল এ তাওহীদের প্রতি মানুষকে আহবান করেছেন এবং এর
বিপরীত ধ্যান-ধারণা তথা শিরক ও অংশীবাদিতাকে নিষিদ্ধ করেছেন। বিশেষ করে হযরত মুহাম্মদ
(স) ও মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এ তাওহীদকে ফরয করেছে। দৃঢ়তার সাথে মহানবী এ তাওহীদের
ঘোষণা দিয়েছেন এবং বলিষ্ঠ ভাষায় এর বর্ণনা করেছেন। সাথে সাথে একথা জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ
তাওহীদ ব্যতীত কোন মুক্তি নেই, কোন কল্যাণ নেই, সুখ শান্তির কোন অবকাশ নেই, যাবতীয় যুক্তি ও
তথ্য প্রমাণাদি এ তাওহীদেরই অপরিহার্যতার প্রমাণ পেশ করে।
অতএব তাওহীদ হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলার অধিকার যা মেনে নেয়া বান্দার উপর ফরয। তাওহীদ দ্বীনের
সর্বশ্রেষ্ঠ বুনিয়াদ। সকল মূলনীতির মূল এবং আমলের ভিত্তি।
৩. والصفات الآسماء توحید তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাত-এর পরিচয়
তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাত অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলার নাম ও গুণাবলীর তাওহীদ। আল্লাহ তা’আলা
শ্রেষ্ঠত্ব মহত্ব ও সৌন্দর্য্যরে যাবতীয় গুণাবলীতে এক, একক এবং নিরংকুশভাবে পূর্ণতার অধিকারী।
এক্ষেত্রে কোনক্রমেই কেউ তাঁর অংশীদার হতে পারে না। উপরোক্ত আকীদা পোষণ করার নামই হচ্ছে
আসমা ও সিফাতের তাওহীদ।
আল-কুরআনে আল্লাহ তা’আলার যে সকল গুণবাচক নাম রয়েছে অথবা রাসূল (সা) আল্লাহ তা’আলার
যে গুণাবলীর উল্লেখ করেছেন সেগুলোর প্রতি সমভাবে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আল্লাহ তা’আলা
যাবতীয় গুণে গুণান্বিত ও ভূষিত। জ্ঞান, শক্তি-সামর্থ্য, চিরঞ্জীব প্রভৃতি বÐ মহৎ গুণ আল্লাহ তা’আলার
রয়েছে, যা আল-কুরআনে উল্লেখ আছে।
আল্লাহ তা’আলার প্রতিটি গুণ অন্য গুণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি অপরটি থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। উপরন্তু
সে গুণাবলীও আল্লাহর মূল সত্তায় নিহিত এর বাইরে নয়। যেমন-আল্লাহ তা’আলার ইলম বা জ্ঞান। তাঁর
গোটা সত্তাই ইলম। ঠিক যখন তিনি কুদরত গুণে ভ‚ষিত, তখন তাঁর সত্তায় জ্ঞানের বাস্তবতা কুদরতের
বাস্তবতা থেকে ভিন্ন নয়। বরং এর প্রত্যেকটিই অপরটির মধ্যে নিহিত। আর এ সবের ব্যাপক সমন্বয়
রয়েছে আল্লাহর মহান সত্তায়।
শুধু তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাত ইসলাম গ্রহণের জন্য যথেষ্ট নয়। বরং এর সাথে তাওহীদুর
রুবুবিয়্যাহ এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহও জরুরি ভিত্তিতে পাওয়া যেতে হবে। কাফিররাও এ জাতীয়
তাওহীদের বিশ্বাস করে, যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক পরবর্তীতে অস্বীকার করেছে। আবার
তাদের এ অস্বীকৃতি মূর্খতার কারণে অথবা ইচ্ছকৃতভাবে। যেমন-আল্লাহ বলেন-
وَ ھُمْ یَكْفُرُ ونَ ب ِٱلرَّ حْمَـٰنِ
“তারা দয়াময়কে অস্বীকার করে।” (সূরা রা‘দ : ৩০)
এ বিষয়ে হাফেয ইবনে কাসীর (র) বলেনঃ এ কথা অত্যান্তস্পষ্ট যে, আল্লাহর গুণাবলীকে অস্বীকার
করাটা তাদের অজ্ঞতা, ধর্মান্ধতা এবং কুফরীর প্রতি লিপ্ততারই কারণ। কেননা জাহেলী যুগের অনেক
কবিতায় আল্লাহ তা’আলার নামকে রহমান (দয়াময়) দ্বারা আহবান করা হয়েছে। যেমন কবি যুহাইর
বলেনঃ
فلا تكتمن اللھ ما فى نفو سكم لیخفى ومھما یكتم اللھ یعلم
“তোমাদের মনের মধ্যে যা আছে তা তোমরা গোপন করো না। তোমরা যতই গোপন কর না কেন
আল্লাহ তা জানতে পারেন।”
আল্লাহ তা’আলা শ্রেষ্ঠত্ব,
মহত্ব ও সৌন্দর্যের যাবতীয়
গুণাবলীতে এক, একক
এবং নিরঙ্কুশভাবে পূর্ণতার
অধিকারী। এক্ষেত্রে
কোনক্রমেই কেউ তাঁর
অংশীদার হতে পারে না।
উপরোক্ত আক্বীদা পোষণ
করার নামই হচ্ছে আসমা
ওয়াস সিফাতের তাওহীদ।
রহমান নামক আল্লাহ তা’আলার বিশেষ গুণ ছাড়া তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাতকে তারা অস্বীকার
করত না। যদি তারা অন্যান্য গুণকে অস্বীকার করত তবে নিশ্চয় ঐ সকল গুণ নিয়ে রাসূল (সা)-এর
কাছে আপত্তি করত যেমনটি তারা তাওহীদে উলুহিয়্যাত-এর ব্যাপারে করেছিল। তারা বলেছিলঃ
أ َجَعَلَ ٱلآلِھَةَ إ ِلَـٰھا ً وَ احِ داً إِنَّ ھَـٰذَا لَشَيْ ءٌ عُجَ ابٌ
“সে কি বÐ ইলাহকে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? এতো এক বিস্ময়কর ব্যাপার!” (সূরা সোয়াদ : ৫)
উপরের দলীল-প্রমাণ থেকে একথা প্রমাণিত হল যে, তারা আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলীর মধ্যে
রহমান ব্যতীত অন্যান্য গুণাবলী মেনে নিয়েছিল অথচ আল্লাহর রাসূল (স) তাদেরকে সেই তাওহীদের
অন্তর্ভুক্ত করেননি, যার প্রতি তিনি আহবান জানিয়ে ছিলেন। এ তাওহীদের যে গুণটিকে তারা অস্বীকার
করেছিল সেটি ছিল আল্লাহ তা’আলার সত্তাগত বিশেষ গুণ যা আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। অন্য কারো
জন্য সে গুণে গুণান্বিত হওয়া বৈধ নয়।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ মানেক. একমাত্র আল্লাহকে প্রতিপালক মনে করা; খ. আল্লাহর গুণাবলীতে অন্যকে শরীক করা;
গ. নামায পড়া; ঘ. সর্বকাজে একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করা।
২. কাফেরগণ আল্লাহর যে তাওহীদ স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তা হলক. গুণাবলীর তাওহীদ; খ. রুবুবিয়্যাতের তাওহীদ;
গ. সৃষ্টির তাওহীদ; ঘ. দাসত্ব ও আনুগত্যের তাওহীদ।
৩. মুসলিম হওয়ার জন্য-
ক. শুধু তাওহীদুর রুবুবিয়্যাত যথেষ্ট; খ. শুধু তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাত যথেষ্ট;
গ. শুধু তাওহীদুল উলুহিয়্যাত যথেষ্ট; ঘ. সকল প্রকার তাওহীদের প্রয়োজন।
উত্তর সঠিক হলে ‘স’ আর মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১. আল্লাহর সকল গুণ তাঁর সত্তার সাথে সম্পর্কিত।
২. তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ এককভাবে ইসলাম গ্রহণের জন্য যথেষ্ট।
৩. কাফির-মুশরিকরা আল্লাহর রুবুবিয়্যাত সম্পর্কেবিশ্বাস করত।
৪. কাফিররা আল্লাহর গুণাবলীর মধ্যে রহমান গুণটি মেনে নিয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. তাওহীদের প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারণা দিন।
২. রুবুবিয়্যাতের তাওহীদ বলতে কী বুঝেন? লিখুন।
৩. তাওহীদুল উলুহিয়্যাত কী? আলোচনা করুন।
৪. আল্লাহর গুণাবলীর মধ্যে তাওহীদ সম্পর্কেপ্রমাণ দিন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. তাওহীদ কত প্রকার ও কী কী? দলীল-প্রমাণসহ লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]