আল্লাহ যে এক ও অদ্বিতীয় যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে তা প্রতিষ্ঠিত করুন।

আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদের প্রমাণ
আল্লাহ তা’আলা এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই। রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রেও নেই এবং
উলুহিয়্যাতের ক্ষেত্রেও নেই। তিনি সকল ক্ষেত্রে পূর্ণতার অধিকারী এবং তাঁর মধ্যে কোন অপূর্ণতার
লেশমাত্র নেই। এই নিখিল বিশ্ব পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর কোন অংশীদার বা সমকক্ষ নেই এবং তিনিই
একমাত্র ইলাহ বা উপাস্য অন্য কেউ তার মর্যাদায় আসীন হতে পারে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ
তা’আলার একত্ববাদের অনেক প্রমাণ রয়েছে।
ইসলামের প্রথম স্তম্ভ তাওহীদের বাণী “কালেমার নির্যাসই হচ্ছে আল্লাহর একত্ববাদ”। তাওহীদ বা
আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা মুসলমান হওয়ার জন্য অপরিহার্য। ইসলাম মানুষকে সর্বপ্রথম তাওহীদ
বা আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহবান করে। তাওহীদের আলোকেই একজন মুমিন বান্দার জীবন
নিয়ন্ত্রিত হয়। তাওহীদই বিশ্বজগতের আত্মা। এ জগত একমাত্র তাওহীদের শক্তিতেই টিকে আছে।
আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা মানব ইতিহাসের প্রাথমিক অবস্থা থেকে আরম্ভ
হয়েছিল, তখন পৌত্তলিকতা বলতে কিছুই ছিল না। কেননা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করাটা
ছিল মানুষের ফিতরাত বা স্বভাবগত বিষয় আর এ ধারাই সকল নবী রাসূল তাঁদের প্রচারের মাধ্যমে
অব্যাহত রেখেছেন। হযরত আদম (আ) থেকে নিয়ে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্ত
প্রত্যেকেই আল্লাহর একত্ববাদের বাণী প্রচার করেছেন। সমগ্র মানবজাতি তখন একত্ববাদের উপর
বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। যদিও পরবর্তীকালে মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে একত্ববাদের স্থলে
বÐত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ে নিজেদেরকে ধংসের সম্মুখীন করেছে। নিম্নে আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদের
প্রমাণ উপস্থাপন করা হলঃ
আল্লাহ তা’আলাই একমাত্র উপাস্য। তিনি নভোমÐল ও ভ‚-মÐলের সকল বস্তুর স্রষ্টা। যা কিছু সৃষ্টি
হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হবে সমস্তসৃষ্টির একচ্ছত্র অধিকারী আল্লাহ। তিনিই বিশ্বজগতের একক
স্রষ্টা, পালনকর্তা ও ধ্বংসকর্তা। তাঁর অস্তিত্বের গুণাবলীতে, কার্যপ্রণালী ও বিধি-বিধানে অংশীদারীত্বের
বিন্দুমাত্রও অবকাশ নেই। তাই আল্লাহ ব্যতীত অন্য যাদেরকে উপাস্য হিসেবে আহবান করা হয়, তারা
শক্তিহীন এবং দুর্বল। যেমন, আল্লাহ তা’আলা নিকৃষ্ট একটি প্রাণির উদাহরণ দিয়ে তাঁর একত্ববাদ
প্রতিষ্ঠা করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন :
یٰأ َیُّھَا ٱلنَّاسُ ضُرِ بَ مَث َلٌ فَٱسْتَمِعُوا ْ ل َھُ إ ِنَّ ٱل َّذِینَ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱلل َّھِ ل َن
یَخْ ل ُق ُ وا ْ ذ ُبَابا ً وَ ل َوِ ٱجْتَمَعُوا ْ ل َھُ وَ إ ِن یَسْل ُبْھُمُ ٱلذ ُّبَابُ شَیْئا ً لا َّ یَسْتَنقِذ ُوهُ مِنْھُ
ضَعُفَ ٱلطَّالِبُ وَ ٱلْمَطْل ُوبُ مَا قَدَرُ وا ْ ٱلل َّھَ حَقَّ قَدْرِ هِ إ ِنَّ ٱلل َّھَ ل َقَوِيٌّ عَزِ یزٌ
“হে মানুষ! একটি উপমা বর্ণনা করা হল, মনোযোগ দিয়ে তা শোন: তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের
ডাক তারা তো কখনও একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে এ উদ্দেশ্যে একত্র
পাঠ-৩
ইসলামের প্রথম স্তম্ভ
তাওহীদের বাণী কালেনির্যাসই হচ্ছে আল্লাহরএকত্ববাদ। তাওহীদ বআল্লাহর একত্ববাদে বিকরা মুসলমান হওয়ারঅপরিহার্য।
হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয় তাও উদ্ধার করতে পারবে না।
প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয় উভয়ই দুর্বল। তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা বোঝেনি।
নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমতাবান, পরাক্রমশালী। (সূরা আল-হাজ্জ : ৭৩-৭৪)
আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদে অবিশ্বাসীদের বোকামী ও একত্ববাদের পরিবর্তেমূর্তিপূজা বা বÐত্ববাদে
বিশ্বাসীদের অসারতা প্রমাণ করতে গিয়ে আল্লাহ তা’আলা নিকৃষ্ট এবং ক্ষুদ্র প্রাণীর উদারহণ দিয়েছেন।
তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, তারা এতই দুর্বল ও অসহায় যে, তারা সকলে মিলে একটি নিকৃষ্ট ও ক্ষুদ্রপ্রাণী
মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। আর সৃষ্টি করা তো দূরের কথা বরং ক্ষুদ্র মাছি তাদের খাদ্য দ্রব্যের
উপর যখন বসে এবং তা ভক্ষণ করে, তখন তাদের কাছ থেকে নিজেদের ভোগের বস্তুকে বাঁচিয়ে রাখার
শক্তিও তাদের নেই। অতএব তারা তোমাদের বিপদ থেকে কীভাবে উদ্ধার করবে?
স্বচ্ছ বিবেক ও প্রকৃত জ্ঞান মানুষকে সত্যের দ্বারাপ্রান্তেনিয়ে যায়। যখন জ্ঞান তার সিঁড়ি বেয়ে
পরিপূর্ণতার দিকে অগ্রসর হতে থাকে, তখন সত্যকে অনুধাবন করা সহজ ও নিকটবর্তী হয়ে যায়।
এজন্যই আমরা দেখতে পাই যে, জীব বিজ্ঞানীগণ ঊনবিংশ শতাব্দির শেষ দিকে তাদের পূর্ববর্তী চিন্তা
গবেষণার ফসল বাদ দিয়ে সত্য উদঘাটনের দিকে ফিরে এসে বলেছেন: ‘জীবনের উৎপত্তি এবং তার
চলমান গতি শক্তিশালী একজন সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত কল্পনা করাও মানুষের জন্যে বোকামি ছাড়া আর কিছু
নয়।’
মার্কসবাদীরা বিশ্বাস করেন যে, বিশ্ব একটি গোপনীয় শক্তির অধীনে এরই নির্দেশে পরিচালিত যাকে
বলা হয় প্রকৃতি। আর এটা প্রকৃতপক্ষে তাদের উপাস্য যাকে এই সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা হিসেবে সম্বোধন
করা হয়। মার্কসবাদীরা একথা বলেন, এ বিশ্ব নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে। তাদের কাছে যে শক্তি
প্রকৃতি নামে স্বীকৃত, মুসলমানদের কাছে সে শক্তিই আল্লাহ তা’আলা। আর দার্শনিকরা সেই শক্তিকে
‘ইলাÐল মুতাহাররিক আল-আউয়াল বা প্রথম শক্তিমান উপাস্য নামে আখ্যায়িত করে থাকেন। এ জন্য
আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্বের প্রমাণই আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদের প্রমাণ হিসেবে স্বীকৃত। যেমন পবিত্র
কুরআনে বর্ণিত আছেঃ
ل َو ْ كَانَ فِیھِمَآ آلِھَة ٌ إ ِلا َّ ٱلل َّھُ ل َفَسَدَتَا فَسُبْحَانَ ٱلل َّھِ رَ بّ ِ ٱل ْع َرْ شِ عَمَّا یَصِ فُونَ
“যদি নভোমÐল ও ভ‚মÐলে আল্লাহ ব্যতীত বÐ ইলাহ থাকত, তবে উভয়ই ধংস হয়ে যেত। অতএব
তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র, মহান।” (্সূরা আল-আম্বিয়া : ২২)
আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদের যুক্তিভিত্তিক প্রমাণ
এ আয়াতটি আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদের প্রমাণ যা স্বভাবগত ও যুক্তিগত। এ আয়াত দ্বারা একাধিক
ইলাহ এর অসারতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। একাধিক ইলাহ বা উপাস্যের ধারণা ভ্রান্ত, যার কোন মৌলিক
ও জ্ঞানগত ভিত্তি নেই। কেননা একাধিক সৃষ্টিকর্তার ধারণা পৃথিবীতে ফ্যাসাদের কারণও হতো এবং
পৃথিবী যে একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আবর্তমান তার মধ্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতো। এমনকি যদি এ
বিশ্বের দু’জন সৃষ্টিকর্তা থাকতো তা হলে এতে মৌলিক কোন বস্তু পাওয়া যেত না। কেননা স্রষ্টা বা
উপাস্য তারা নিজেরাই অস্তিত্ব এবং গুণাগুণের দিক দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করতেন না আর তাদের মধ্যে
বিরাজ করত দোষ-ত্রæটি এবং অপূর্ণতা। যদি সৃষ্টিকর্তা দোষ-ত্রæটি এবং অপূর্ণতা থেকে মুক্ত না থাকেন,
তা হলে সৃষ্ট বস্তু ত্রæটিপূর্ণহবে। আর তখন স্রষ্টা এবং সৃষ্টবস্তুর মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না।
পৃথিবী ও আকাশে দু’জন সৃষ্টিকর্তা থাকলে উভয়েই সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হবে। এমতাবস্থায়
উভয়ের নির্দেশাবলী পৃথিবী ও আকাশে পূর্ণরূপে কার্যকর হওয়া উচিত। স্বভাবগতভাবে এটা অসম্ভব যে,
একজন যে নির্দেশ দেবে, অন্যজন সেই একই নির্দেশ দেবে, একজন যা পছন্দ করবে অন্যজনও তাই
পছন্দ করবে। তাই উভয়ের মধ্যে মাঝে মাঝে মতবিরোধ ও নির্দেশ বিরোধ হওয়া অবশ্যম্ভাবী। যখন
দুই খোদার নির্দেশাবলী পৃথিবী ও আকাশে বিভিন্নরূপে প্রচলিত হবে, তখন এর ফলশ্রæতি পৃথিবী ও
আকাশের ধ্বংস ছাড়া আর কী হবে। এক খোদা চাইবে একজন জীবিত থাকুক, অপরজন চাইবে সে
মৃত্যুবরণ করুক। একজন চাইবে এখন সূর্য উদয় হোক, অপরজন চাইবে এখন সূর্য অস্তগিয়ে রাতের
আঁধার নেমে আসুক। একজন চাইবে এখন বৃষ্টি হোক, অপরজন চাইবে বৃষ্টি না হোক। এমতাবস্থায়
ব বিজ্ঞানীগণ ঊনবিংশ ব্দির শেষ দিকে তাদের
পূর্ববর্তী চিন্তা-গবেষণার ফসল বাদ দিয়ে সত্য দঘাটনের দিকে ফিরে
সে বলেছেন: ‘জীবনের পত্তি এবং তার চলমান
গতি শক্তিশালী একজন
সষ্টিকর্তা ব্যতীত কল্পনা
করাও মানুষের জন্যে
বাকামি ছাড়া আর কিছু নয়।’ হ তিনিই হবেন যিনি
রো অধীন নন, যাকে জ্ঞাসা করার অধিকার
ারো নেই। পরামর্শের ন দুই খোদা থাকলেও
ত্যকই অপরিহার্যরূপে কে জিজ্ঞাসা করার ও রামর্শ বর্জনের কারণে
কড় হওয়ার অধিকারী । আর এটা খোদায়ী
দার সম্পূণ পরিপন্থী।
উভয়ের পরস্পর বিরোধী নির্দেশ কিরূপে প্রযোজ্য হবে? যদি একজন পরাভ‚ত হয়ে যায়, তবে সে সর্বময়
কর্তত্বের অধিকারী ও খোদা থাকতে পারবে না। যদি যুক্তি প্রদর্শন করা হয় যে, উভয় খোদা পরস্পরে
পরামর্শ করে নির্দেশ জারি করবেন তাতে অসুবিধা কি? এর উত্তরে বলা যেতে পারে যে, যদি উভয়ই
পরামর্শের অধীন হয় এবং একজন অন্য জনের পরামর্শ ছাড়া কোন কাজ করতে না পারে, তবে এতে
জরুরী হয়ে যায় যে, তাদের কেউ সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী নয় বরং কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণও নয়।
বলাবাÐল্য, স্বয়ংসম্পূর্ণ না হয়ে খোদা হওয়া যায় না। যে ব্যক্তি কোন আইনের অধীন, যার ক্রিয়া কর্ম
জবাবদিহির অবকাশ রাখে, যিনি আইনের ঊর্ধে নন, তিনি খোদা হতে পারবেন না। খোদা তিনিই
হবেন যিনি কারো অধীন নন, যাকে জিজ্ঞাসা করার অধিকার কারো নেই। পরামর্শের অধীন দুই খোদা
থাকলেও প্রত্যেকই অপরিহার্যরূপে অপরকে জিজ্ঞাসা করার ও পরামর্শবর্জনের কারণে ধরপাকড় হওয়ার
অধিকারী হবে। আর এটা খোদায়ী পদমর্যাদার সম্পূর্ণপরিপন্থী। সুতরাং এ অভ্যাসগত যুক্তিতে আল্লাহর
একত্ববাদ নিশ্চিতভাবে স্বীকৃত।
আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদের নিয়ম-শৃংখলা ভিত্তিক প্রমাণ
এ নিখিল বিশ্ব এবং এর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ব্যবস্থা এক নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে শৃংখলিত। এ নিয়মশৃঙ্খলা নিখিল বিশ্ব প্রতিটি বস্তু তথা অনু-পরমাণুকেও গ্রাস করেছে। কোন কিছুই এর বাইরে নয় এবং
এর থেকে মুক্তও নয়। এ ধরনের সর্বব্যাপি ও চিরস্থায়ী নিয়ম-শৃঙ্খলা এক মহাপরিচালক সর্বাত্মক
নিয়ন্ত্রক গতি সম্পন্নসত্তা ব্যতীত চিন্তা করা যায় না। যেমন- পবিত্র কুরাআনে বর্ণিত হয়েছে :
وَ ل َھُ أ َسْل َمَ مَنْ فِى ٱلسَّمَاوَ اتِ وَ ٱلأ َرْ ضِ طَوْ عا ً وَ كَرْ ھا ً -
“নভোমÐলে ও ভূমÐলে যা কিছু আছে তা সবই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ
করেছে।” (সূরা আলে-ইমরান : ৮৩)
এ আয়াতে এক আল্লাহর সার্বভৌমত্বই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রাকৃতিক বা স্বভাবগত প্রমাণ
এ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই আল্লাহকে স্বীকার করে। কেউ সৃষ্টিকর্তা হিসেবে, কেউ রিযিকদাতা হিসেবে,
কেউ প্রকৃতি হিসেবে, কেউ বা মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিশ্বাস করে। আর এ বিশ্বাস জীবনের কোন
এক সময়ে অন্তরে বদ্ধমূল হয়। এ পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষই আস্তিক। তারা তাদের ধর্ম-কর্মের মধ্য
দিয়ে আল্লাহকে স্বীকার করে। মানুষের অন্তরে যে আধ্যাত্মিক জ্যোতি রয়েছে, সেটাই তাকে এক
পরাক্রমশালী শক্তির সন্ধান দেয়। মানুষের আত্মা আল্লাহর নিকট থেকে আগত বিধায় এ আত্মা আল্লাহর
দিকেই ধাবিত থাকে। প্রতিটি মানুষের এই আল্লাহ মুখিতা ও আল্লাহ প্রবণতা আল্লাহ তা’আলার
একত্বের একটি প্রমাণ বিশেষ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন :
و َ ل َئِن سَأ َلْتَھُمْ مَّنْ خَل َقَ ٱلسَّمَاوَ اتِ وَ ٱلأ َرْ ضَ ل َیَق ُول ُنَّ خَل َقَھُنَّ ٱلْع َزِ یزُ ٱلْع َلِیمُ
“তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস কর, কে নভোমÐল ও ভ‚মÐল সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো
তো মহাপরাক্রমশালী আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আয-যুখরুফ : ৯)
আল্লাহ তা’আলা আরো ঘোষণা করেছেনঃ
ق ُلْ أ َنَدْعُوا ْ مِن دُونِ ٱلل َّھِ مَا لاَ یَنفَعُنَا وَ لاَ یَضُرُّ نَا وَ نُرَ دُّ عَل َىٰ أ َعْ قَاب ِنَا بَعْدَ
إ ِذ ْ ھَدَانَا ٱلل َّھُ كَٱل َّذِى ٱسْتَھْوَ ت ْھُ ٱلشَّیَاطِ ینُ فِى ٱلأ َرْ ضِ حَیْرَ انَ ل َھُ أ َصْحَابٌ
یَدْعُونَھُ إ ِل َى ٱلْھُدَى ٱئ ْتِنَا ق ُلْ إ ِنَّ ھُدَى ٱلل َّھِ ھُوَ ٱلْھُدَىٰ
“বল, আমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকব যে আমাদের কোন উপকার কিংবা ক্ষতি করতে
পারে না? আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথ প্রদর্শনের পর আমরা কি সেই ব্যক্তির ন্যায় পূর্বাবস্থায় ফিরে যাব,
যাকে শয়তান দুনিয়ার পথ ভুলিয়ে হয়রান করেছে, যদিও তার সহচরগণ তাকে সঠিক পথে আহবান
করে বলে, আমাদের নিকট এসো? বল, আল্লাহর পথই পথ।”। (সূরা আল-আনআম : ৭১)।
আল্লাহ তা’আলা তাঁর একত্ববাদ সম্পর্কেনিজেই ঘোষণা করেনঃ
এ পৃথিবীর প্রতিটি মানআল্লাহকে স্বীকার করেকেউ সৃষ্টিকর্তা হিসেবেকেউ রিযিকদাতা হিসেকেউ প্রকৃতি হিসেবে,বা মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রক হিসেবে।
لاَ تَتَّخِ ذ ُوا ْ إ ِلـٰھَیْنِ ٱث ْنَیْنِ إ ِنَّمَا ھُوَ إ ِلـٰھٌ وَ احِ دٌ
“তোমারা দু’জন ইলাহ গ্রহণ করো না; তিনিই তো একমাত্র ইলাহ। (সূরা আন-নাহল : ৫১)
আল্লাহ তা’আলা আরো ঘোষণা করেছেন :
و مَا كَانَ مَع َھُ مِنْ إ ِل َـھٍ إ ِذا ً ل َّذَھَبَ كُلُّ إ ِل َـٰھٍ ب ِمَا خَل َ قَ وَ ل َع َلاَ بَعْضُھُمْ عَل َىٰ
بَعْضٍ سُبْحَانَ ٱلل َّھِ عَمَّا یَصِ فُونَ
“তাঁর সাথে অপর কোন ইলাহ নেই; যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে
যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতো। তারা যা বলে, আল্লাহ তা থেকে কত পবিত্র!”
(সূরা আল-মুমিনুন : ৯১)
মানুষ তার চারপাশে তাকালে দেখতে পায় যে, সৃষ্টির আদি হতেই নিখিল বিশ্বের সব কিছু একই নিয়মে
চলছে। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র সবই একই নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন ব্যতিক্রম হচ্ছে না,
কোনো অনিয়ম ঘটছে না, কোনো বিশৃংখলার সৃষ্টি হচ্ছে না। এ নিয়মের ব্যাঘাত ঘটাবার ক্ষমাতা
আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। এতে প্রমাণিত হয় যে, একই সৃষ্টি কর্তার নির্দেশে ও আনুগত্যে বিশ্বের
সবকিছুপরিচালিত হচ্ছে। একের অধিক সৃষ্টিকর্তা থাকলে নিয়ম-শৃংখলা বিরাজমান থাকা কখনও সম্ভব
হতো না।
মহাবিশ্ব ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা একাধিক নয় এবং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ নন। পবিত্র
কুরআনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে :
وَ ل َقَدْ خَل َقْنَا ٱلسَّمَاوَ اتِ وَ ٱلأ َرْ ضَ وَ مَا بَیْنَھُمَا فِى سِتَّةِ أ َیَّامٍ
“আমি আকাশমÐলী ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সমস্তকিছু সৃষ্টি করেছি ছয় দিনে।” (সূরা কাফ
: ৩৮)
গোটা বিশ্বপ্রকৃতিই আল্লাহর একত্ববাদের জ্বলন্তপ্রমাণ। যেমন: আসমান ও জমিনের সৃষ্টি, চন্দ্র ও সূর্যের
উদয়াস্ত, আবহাওয়ার পরিবর্তন, উদ্ভিদ ও প্রাণি জগতের বৈচিত্র্য, মানুষের মুখের ভাষা ও রং এর বিস্তার
প্রভৃতি আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদেরই নিদর্শন।
বিশ্বের সব কিছুই যে এক আল্লাহর নিয়ম মেনে চলছে তা পবিত্র কুরআনেও সুষ্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা
হয়েছে যেমন:
تُسَبِّحُ ل َھُ ٱلسَّمَاوَ اتُ ٱلسَّبْعُ وَ ٱلأ َرْ ضُ وَ مَن فِیھِنَّ وَ إ ِن مِّن شَيْ ءٍ إ ِلا َّ یُسَبِّحُ
ب ِحَمْدَهِ وَ ل َـٰكِن لا َّ تَفْقَھُونَ تَسْب ِیحَھُمْ
“সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং তাদের অন্তর্বর্তী সমস্তকিছু তাঁরই প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে
এবং এমন কোন বস্তুনেই যা তাঁর প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু তোমরা তাদের
সেই প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা বুঝতে পার না।” (সূরা বনী ইসরাঈল : ৪৪)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন :
وَ ل َھُ أ َسْل َمَ مَنْ فِى ٱلسَّمَاوَ اتِ وَ ٱلأ َرْ ضِ طَوْ عا ً وَ كَرْ ھا
“আকাশমÐল ও ভূমÐলে যা কিছুআছে তা সবই ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই নিকট
আত্মসমর্পণ করে।” (সূরা আলেইমরান : ৮৩)
এক আল্লাহর সার্বভৌমত্বোর প্রতি আনুগত্যই প্রকৃতির নিয়ম এবং এ আনুগত্যের মধ্য দিয়ে বিশ্ব চির গতিশীল ও কর্মচঞ্চল রয়েছে। প্রত্যাদেশ ভিত্তিক প্রমাণ
আল্লাহ তা’আলা মানবজাতির হিদায়াতের উদ্দেশ্যে জিবরাইল (আ)-এর মাধ্যমে রাসূলগণের প্রতি সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে ও নুগত্যে বিশ্বের সবকিছু রচালিত হচ্ছে। একের অধিক সৃষ্টিকর্তা থাকলে য়ম-শৃঙ্খলা বিরাজমান কা কখনও সম্ভব হতো না।
প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছেন। প্রত্যাদেশ বা ওহী আল্লাহ তা’আলার অস্তিত্বের জ্বলন্তপ্রমাণ। এই ওহী বা
প্রত্যাদেশের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা মানব জাতির নিকট তাঁর সার্বভৌমত্ব, কর্তৃত্ব, গুণাবলী ও
ক্ষমতার কথা বলেছেন। সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলার প্রতিনিধি হিসেবে তাঁকে উপযুক্ত করে গড়ে
তোলার জন্যে সঠিক শিক্ষা দান করেছেন। হযরত আদম (আ) থেকে নিয়ে হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্ত
এক লাখ বা দুই লাখ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই
একত্ববাদের বাণী প্রচার করেছেন। যদি সেখানে একাদিক উপাস্য থাকতো তাহলে হিদায়াতের ধারাও
ভিন্ন হতো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, প্রত্যেক নবী ও রাসূলগণই মানুষকে দ্বিত্ববাদ, বÐত্ববাদ,
অংশীদারবাদ থেকে একত্ববাদের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। নবী ও রাসূলগণের এ দাওয়াতের
ধারাবাহিকতা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা’আলা এক ও অদ্বিতীয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ
তা’আলা স্বীয় একক সত্তার ও আধিপত্যের ঘোষণা দিয়ে বলেনঃ
فَآمِنُوا ْ ب ِٱلل َّھِ وَ رَ سُولِھِ وَ ٱلنُّ ورِ ٱل َّذِ يۤ أ َ نزَ لْنَا وَ ٱلل َّھُ ب ِمَا تَعْمَل ُونَ خَب ِیرٌ
“তোমরা আল্লাহ ও তদীয় রাসূল এবং যে নূর আমি অবতীর্ণ করেছি তাতে বিশ্বাস কর। তোমরা যা কর
আল্লাহ সে বিষয় সর্বজ্ঞ।” (সূরা আত-তাগাবুন : ৮)
তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতি আনুগত্য এবং এ আনুগত্যের মধ্য দিয়ে চিন্তা চিরগতিশীল ও কর্মচঞ্চল
রয়েছে।
আল্লাহ একত্বের প্রতি বিশ্বাসের আবশ্যকতা
ইসলামের প্রত্যয় ও আচরণের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় প্রথম ও মৌলিক জিনিস হচ্ছে আল্লাহর একত্বের
প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। প্রত্যয় ও বিশ্বাসের আর যতো দিক রয়েছে তা হচ্ছে ঐ এক মূলকাÐেরই শাখাপ্রশাখামাত্র। ইসলামের যতো নৈতিক বিধি ব্যবস্থা ও সামাজিক আইন- কানুন রয়েছে তা ঐ কেন্দ্র বিন্দু
থেকেই উৎসারিত। এখানকার প্রতিটি জিনিসেরই উৎস ও প্রত্যাবর্তনস্থল হচ্ছে আল্লাহর একক সত্তা।
ফেরেশতা, আসমানী কিতাব, নবী-রাসূল, কিয়ামত ও আখিরাত, ফরয ও ওয়াজিব এক কথায়
ইসলামের প্রতিটি জিনিসের ভিত্তি আল্লাহর একত্বেবিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। এ একটি মাত্র জিনিসকে
বিচ্ছিন্ন করে ফেললে ফিরিশতা, কিয়ামত ও আখিরাতে বিশ্বাস একেবারে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। নবীরাসূল এবং তাঁদের আনীত কিতাবাদি আনুগত্য লাভের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফরয, ওয়াজিব,
আনুগত্য অধিকার ইত্যাদি তাৎপর্য হারিয়ে ফেলে। আদেশ-নিষেধ ও বিধি ব্যবস্থায় কোন বাধ্য-বাধকতা
থাকে না। মোটকথা, এ একটি মাত্র কেন্দ্রবিন্দুঅপসৃত হলেই গোটা ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
বরং ইসলাম বলে কোন জিনিসেরই অস্তিত্ব থাকে না।
নোট করুন
ইসলামের প্রত্যয় ও
আচরণের সামগ্রিক
ব্যবস্থাপনায় প্রথম ও
মৌলিক জিনিস হচ্ছেআল্লাহর একত্বের প্রতিবিশ্বাস স্থাপন। প্রত্যয়বিশ্বাসের আর যতো রিয়েছে তা হচেছ ঐ এমূলকাÐেরই শাখা-প্রশমাত্র।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করাক) মানব ইতিহাসের প্রথম থেকে শুরু হয়;
খ) হযরত নূহ (আ) থেকে শুরু হয়;
গ) হযরত ইব্রাহীম (আ) থেকে শুরু হয়;
ঘ) হযরত মুহাম্মদ (সা) থেকে শুরু হয়।
২. ‘আল্লাহ তা’আলাই একমাত্র উপাস্য’ এটিক) ইয়াহূদী মতবাদ;
খ) ইসলামি মতবাদ;
গ) খ্রিষ্ট মতবাদ;
ঘ) আর্যমতবাদ।
৩. মার্কসবাদের ধারণা হলোক) আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়;
খ) আল্লাহ বলতে কোন সত্তা নেই;
গ) এই বিশ্বপ্রকৃতির নিয়ন্ত্রণাধীন;
ঘ) এ বিশ্বনিজে নিজে সৃষ্টি হয়েছে।
৪. ইসলামের মৌলিক বিষয় হচ্ছেক) সুখ-শান্তি;
খ) জান্নাত লাভ;
গ) রাসূলের আনুগত্য;
ঘ) আল্লাহর একত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. একত্ববাদ কী? আলোচনা করুন।
২. আল-কুরআন থেকে একত্ববাদের প্রমাণ দিন।
৩. একত্ববাদের স্বপক্ষে যুক্তিভিত্তিক প্রমাণ উপস্থাপন করুন।
৪. আল্লাহর একত্ববাদের নিয়ম-শৃংখলা ভিত্তিক প্রমাণ দিন।
৫. একত্ববাদের পক্ষে প্রকৃতিগত বা স্বভাবগত প্রমাণ উপস্থাপন করুন।
৬. আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসের আবশ্যকতা কী? বর্ণনা করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. আল্লাহ যে এক ও অদ্বিতীয় যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে তা প্রতিষ্ঠিত করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]