নিফাকে আসগার বলতে কী বুঝায়? লিখুন। মুনাফিকের তৃতীয় আলামত কী? লিখুন।

নিফাক
নিফাক একটি অতি ঘৃণ্য পাপ। কারণ মুনাফিক বাহ্যত ইসলামের কাজ করে এবং মুসলিমদের
অনুষ্ঠানাদিতে যোগদান করে নিজকে মুসলিম হিসেবে প্রকাশ করে এবং আর্থসামাজিক সুযোগ-সুবিধা
ভোগ করে। পক্ষান্তরে সে আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস ও তাঁর প্রতি অবাধ্যতা গোপন রাখে এবং ইসলামের
শত্রæদের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে এবং মুসলিম সমাজের ক্ষতি করে। এদিক থেকে মুনাফিক কাফির,
এমনকি কাফিরের চেয়েও খারাপ। কেননা মানুষ প্রকাশ্য শত্রæ থেকে সচেতন হতে পারে, কারণ তারা
মুখ চেনা শত্রæ। কিন্তু গোপন শত্রæ থেকে রেহাই পাওয়া দুষ্কর। এরা সব সময় মুসলমানদের জব্দ করার
জন্য সচেষ্ট থাকে। গোপনে ষড়যন্ত্রও বিশ্বাসঘাতকতা করে মুসলিম সমাজের ক্ষতি সাধন করে।
এ সকল কাজ-কর্ম তাওহীদের পরিপন্থী। যারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করে, হযরত মুহাম্মদ (স)-
এর নবুয়াতের বিশ্বাস করে, পরকালের শান্তিও শাস্তিঅর্থাৎ জান্নাত-জাহান্নামে বিশ্বাস করে তারা কখনো
কপট হতে পারে না। তারা মুখে এক ও অন্তরে ভিন্নতা পোষণ করতে পারে না। তাওহীদ পন্থীরা এ
ধরণের কপট ও বিশ্বাসঘাতকদের থেকে সব সময়ই সতর্ক থাকেন।
নিফাক শব্দের অর্থ
নিফাক আরবি অর্থ। এর অর্থ হচ্ছে, কপটতা অর্থাৎ মুখে এক কথা বলা এবং অন্তরে ভিন্নমত পোষণ
করা। যারা এরূপ করে তাদেরকে মুনাফিক বা কপট বলা হয়। ইসলামি পরিভাষায় মুনাফিক ঐ সব
লোককে বলা হয় যারা মুখে মুখে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে কিন্তু অন্তরে ঘোর অবিশ্বাস ও বিদ্বেষ পোষণ
করে।
নিফাক শব্দের প্রায়োগিক অর্থ
নিফাক শব্দের প্রায়োগিক অর্থ হল, বাইরে প্রকাশিত বিষয় অন্তরে লুকায়িত বিষয়ের বিপরীত। অর্থাৎ
অন্তরে এক রকম পোষণ করা এবং বাইরে অন্য রকম প্রকাশ করা। অন্তরে বিরোধিতা গোপন করে
বাইরে আনুগত্য প্রদর্শন করা। অর্থাৎ অন্তরে কুফরী গোপন রেখে বাইরে মুখে মুখে ঈমানের কথা বলা
বা স্বীকার করা এবং লোক দেখানো অনুষ্ঠানাদি পালন করা। যে ব্যক্তি এরূপ করে তাকে মুনাফিক বা
কপট বলা হয়।
মুনাফিকদের শ্রেণী বিভাগ
মুনাফিক দুইভাগে বিভক্ত
আকীদা-বিশ্বাসগত ও আমলের দিক থেকে বিবেচনা করে মুনাফিককে দু’শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে।
১. আকীদা ও বিশ্বাসগত মুনাফিক : অন্তরের সাথে যাদের বাইরের গরমিল বা বাইরের সাথে অন্তরের
গরমিল। যথা-যারা মুখে ইসলাম প্রকাশ করে এবং অন্তরে কুফরী গোপন রাখে তাদেরকে
পাঠ-৭
ইসলামী পরিভাষায় মুঐ সব লোককে বলা যারা মুখে মুখে আল্লাহপ্রতি ঈমান আনে কিন্তুঅন্তরে ঘোর অবিশ্বাস বিদ্বেষ পোষণ করে।
আকীদাগত মুনাফিক বলে।
২. আমল বা কর্মের দিক থেকে মুনাফিক : এ শ্রেণীর মুনাফিকরা ইসলামের সত্যতায় প্রভাবিত হয়ে
প্রকৃত মুমিন হতে ইচ্ছা করে, কিন্তুপার্থিব স্বার্থেতারা এ উদ্দেশ্য থেকে বিরত থাকে। আর এটা
হচ্ছে আমলের বা কর্মের নিফাক।
আমলগত মুনাফিকের আলামত
হাদীস শরীফে মুনাফিকের চারটি আলামত বর্ণনা করা হয়েছে। বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে
এসেছে-নবী (স) বলেন-
عن عبد اللھ بن عمروقال : قا ل رسول اللھ صلى اللھ علیھ وسلم
اربع من كن فیھ كان منا فقا خا لصا . ومن كانت فیھ خصلة منھن
كانت فیھ خصلة من النفاق حتى ید عھا إذا حدث كذب و إذا وعد
أخلف وإذا خا صم فجر و إذا عاھد غدر .
“হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স) বলেছেন: চারটি দোষ বা
আলামত যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে প্রকৃত মুনাফিক। আর যার মধ্যে এর কোন একটি দোষ বা
আলামত থাকবে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ততার মধ্যে মুনাফেকীর একটি স্বাভাব থেকে যাবে। যখন সে
কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন কোন ওয়াদা বা অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করে, যখন ঝগড়া করে অশ্লীল
গালিগালাজ করে, আর যখন চুক্তি করে তা পরিপূর্ণ করে না।” (বুখারী ও মুসলিম)
অপর এক হাদীস দ্বারা মুনাফিকদের তিনটি আলামতের কথা বলা হয়েছে, হাদীসটি এরূপ:
عن أبى ھریرة رضى اللھ عنھ : أن رسول اللھ صلى اللھ علیھ وسلم
قال : أیة المنا فق ثلاث : إذا حدث كذب، واذا وعد اخلف وإذا اؤتمن
خان .
“হযরত আবু Ðরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি: যখন সে
কথা বলে তখন মিথ্যা বলে; যখন সে ওয়াদা করে বা অঙ্গীকার করে তখন তা ভঙ্গ করে এবং যখন তার
কাছে আমানত রাখা হয় তখন সে তা আত্মসাৎ করে।” (বুখারী ও মুসলিম)
প্রথম হাদীসে মুনাফিকের আলামত চারটি এবং দ্বিতীয় হাদীসে তিনটি আলামত উল্লেখ করা হয়েছে।
এক হাদীসে তিনটি অপর হাদীসে চারটি আলামত বর্ণনার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। স্থান-কাল-পাত্র
ভেদে প্রয়োজনের কারণে বর্ণনার তারতম্য হয়েছে। অথবা যার মধ্যে চারটি চিহ্ন পাওয়া যাবে সে খাঁটি
মুনাফিক আর যার মধ্যে তিনিটি চিহ্নি পাওয়া যাবে সে তুলনামূলক হালকা মুনাফিক।
প্রথম প্রকার মুনাফিক আকীদাগত মুনাফিক
আকীদা ও বিশ্বাস গত দিক থেকে মুনাফিক হল বাইরের সাথে যাদের অন্তরের গরমিল। মুখে যারা
ঈমানের কথা বলে আর অন্তরে কুফরী পোষণ করে। লোক দেখানোর জন্য তারা ইসলামি অনুষ্ঠানাদি
পালন করে পক্ষান্তরে গোপনে মুসলিম সমাজকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করে। তারা খুব ভয়ানক, তাদের
এ নিফাক অত্যন্তজঘন্য ও ঘৃণ্য অপরাধ এবং মারাত্মক ব্যাধি। আর এ ধরণের নিফাক আল্লাহর কাছে
শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের নিফাককে নিফাকে আকবার বা সবচেয়ে বড় নিফাক বলা হয়, যা
কুফরী থেকেও মারাত্মক। কেননা, এ জাতীয় মুনাফিকরা আল্লাহ তা’আলার উপর ফেরেশতাদের উপর,
আসমানী কিতাবের উপর এবং কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার উপর প্রকাশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে আর অন্তরে
কুফরী করে। ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে কাফির ও মুশরিকরা রাসূল (স) ও নব মুসলিমদের
নানাভাবে কষ্ট দিয়েছে ও প্রকাশ্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু মুনাফিকরা তাদের গুপ্তচর বৃত্তি ও
ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বার বার মুসলিমদেরকে বিব্রত ও ক্ষতিগ্রস্তকরেছে। তাদের সম্বন্ধে আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেনীদা ও বিশ্বাসগত দিক কে মুনাফিক, বাইরের সাথে যাদের অন্তরের ল। মুখে যারা ঈমানের কথা বলে আর অন্তরে
রী পোষণ করে। লোক দেখানোর জন্য তারা লামী অনুষ্ঠানাদি পালন করে পক্ষান্তরে গোপনে
সলিম সমাজকে ধ্বংস ার ষড়যন্ত্র করে। তারা ব ভয়ানক। তাদের এ
ফাক অত্যন্ত জঘন্য ও অপরাধ এবং মারাত্মক ব্যাধি।
وَ مِنَ ٱلنَّاسِ مَن یَق ُولُ آمَنَّا ب ِٱلل َّھِ وَ ب ِٱلْیَوْ مِ ٱلآخِ رِ وَ مَا ھُم ب ِمُؤْ مِنِینَ
“আর মানুষের মধ্যে এমনও কিছু লোক রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান
এনেছি অথচ তারা আদৌ ঈমানদার নয়।” (সূরা আল-বাকারা : ৮)
এদের সম্বন্ধে আল্লাহ তা’আলা আরো ঘোষণা করেছেন :
وَ إ ِذَا ل َق ُوا ْ ٱل َّذِینَ آمَنُوا ْ قَال ُوۤ ا آمَنَّاوَ إ ِذَا خَل َوْ ا ْ إ ِل َىٰ شَیَاطِ ینِھِمْ قَال ُوۤ ا ْ إ ِنَّا مَع َكُ مْ
إ ِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَھْزِ ئُونَ
“আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি; আবার যখন তাদের
শয়তানদের সাথে একান্তেসাক্ষাৎ করে তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি, আমরা তো
মুসলমানদের সাথে উপহাস করছি মাত্র।” (সূরা আল-বাকারা : ১৪)
মুসলমানদেরকে ধোঁকা দেয়ার জন্য এবং তাদের গোপন কথা জানার জন্যই তারা এরূপ করত।
মুনাফিকদের এ ধরনের কপটতা ও দ্বিমুখী নীতির নিন্দাবাদ করেই উপরোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।
মুনাফিকরা মনে করতো যে তারা এভাবে মুসলমানদের সাথে উপহাস করে চলবে এবং বোকা বানাবে।
কিন্তু আল্লাহ তা’আলা তাদের উপহাস ও ষড়যন্ত্রের প্রত্যুত্তরে তাদের প্রতি এরূপ আচরণ করেছেন যে,
তারাই উপহাস ও বিদ্রƒপের পাত্র হয়েছে।
আকীদাগত মুনাফিকদের পরিণাম
এ প্রকার মুনাফিকরা পরকালে কাফিরদের সাথে এক ও অভিন্ন শাস্তিভোগ করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ
তা’আলা ঘোষণা করেছেন:
إ ِنَّ ٱلل َّھَ جَامِعُ ٱلْمُنَافِقِینَ وَ ٱلْكَافِرِ ینَ فِى جَھَنَّمَ جَمِیعا ً
“নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফির সকলকেই জাহান্নামে একত্র করবেন।” (সূরা আন-নিসা :
১৪০)
আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মদ (স)-কে আদেশ দিয়ে ঘোষণা করেছেন।
یٰأ َیُّھَا ٱلنَّب ِىُّ جَاھِدِ ٱلْكُفَّارَ وَ ٱلْمُنَافِقِینَ وَ ٱغْل ُظْ عَل َیْھِمْ وَ مَأ ْوَ اھُمْ جَھَنَّمُ وَ ب ِئ ْسَ
ٱلْمَصِ یرُ
“হে নবী! কাফির এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো ও তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করো।
তাদের ঠিকানা জাহান্নাম আর তা হল নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।” (সূরা আত-তাওবা : ৭৩)
আল্লাহ তা’আলা মুনাফিকদের সম্বন্ধে আরো ঘোষণা করেছেন:
إ ِنَّ ٱلْمُنَافِقِینَ فِى ٱلدَّرْ كِ ٱلأ َسْفَلِ مِنَ ٱلنَّارِ
“নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের নি¤œতম স্তরে থাকবে।” (সূরা আন-নিসা : ১৪৫)
মুনাফিকদের শাস্তিসম্পর্কেআল্লাহ তা’আলা আরো বলেন :
وَ عَدَ اللھ الْمُنَافِقِینَ وَ ٱلْمُنَافِقَاتِ وَ ٱلْكُفَّارَ نَارَ جَھَنَّمَ خَالِدِینَ فِیھَا ھِىَ
حَسْبُھُمْ وَ ل َع َنَھُمُ ٱلل َّھُ وَ ل َھُمْ عَذَابٌ مُّقِیمٌ
“আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী এবং কাফেরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের,
তাতে তারা স্থায়ী হবে। সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদের প্রতি অভিশম্পাত করেছেন। আর
তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী শাস্তি।” (সূরা আত-তাওবা : ৬৮)
মুনাফিকদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করে আল্লাহ তা’আলা বলেন :
وَ لا ت ُصَلِّ عَل َىٰ أ َحَدٍ مِّنْھُم مَّاتَ أ َبَدا ً وَ لاَ تَق ُمْ عَل َىٰ قَبْرِ هِ إ ِنَّھُمْ كَفَرُ وا ْ ب ِٱلل َّھِ
وَ رَ سُولِھِ وَ مَاتُوا ْ وَ ھُمْ فَاسِق ُونَ
“আর তাদের মধ্য থেকে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো তার জন্য জানাযার নামায পড়বে না এবং তার
কবরের পাশেও দাঁড়াবে না। তারা তো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে। বস্তুত: পাপাচারী
অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।” (সূরা আত-তাওবা : ৮৪)
তাদের সম্পর্কেআরো কঠোর বাণী ঘোষিত হয়েছে, আল্লাহ তা’আলার ঘোষণা :
ٱسْتَغْفِرْ ل َھُمْ أ َوْ لاَ تَسْتَغْفِرْ ل َھُمْ إ ِن تَسْتَغْفِرْ ل َھُمْ سَبْعِینَ مَرَّ ةً فَل َن یَغْفِرَ ٱلل َّھُ
ل َھُمْ
“তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না কর একই কথা; তুমি সত্তরবার
তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।” (সূরা আত-তাওবা: ৮০)
দ্বিতীয় প্রকারের নিফাক
যে নিফাক আমল বা কর্মের দিক থেকে (আমলগত নিফাক) সংঘটিত হয় তাকে নিফাকে আসগার বা
ছোট নিফাক বলা হয়। এ ধরনের নিফাককারীরা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, নবী-রাসূল ও আসমানী
কিতাবের উপর বিশ্বাস করে এবং ইবাদাতে একাগ্রতা প্রকাশ করে কিন্তুকতিপয় কবীরা গুণাহ করে
থাকে যা মুনাফিকের আলামত সম্বলিত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এ ধরণের মুনাফিকগণ সম্পূর্ণভাবে ধর্ম
থেকে বিচ্যুত হয় না, কিন্তুতারা এমন পথ অবলম্বন করে যা তাদেরকে নিফাকে আকবার বা কুফরের
দিকে ধাবিত করে এবং তাদের দ্বারা পাপ কার্য হতে থাকে। এ জাতীয় নিফাক মুনাফিকদের সেই ঘৃণ্য
আলামতের দিকেই একজন মানুষকে টেনে নিয়ে যায় যার মধ্যে রয়েছে মিথ্যা বলা। আর মিথ্যা বলা
কাবীরা গুনাহ।
নিফাকের দ্বিতীয় আলামত হল, যখন তার কাছে কোন কিছু আমানত রাখা হয় তখন সে তা খেয়ানত
করে। অর্থাৎ যখন তার কাছে কোন ধনসম্পদ বা কোন হক অথবা কোন গোপনীয় বিষয় আমানত রাখা
হয়, তখন সেটা নষ্ট করে দেয় এবং তার সংরক্ষণ করে না। এটা কোন মতেই কাম্য নয়।
মুনাফিকের তৃতীয় আলামত হল, যখন সে চুক্তিবদ্ধ হয় তখন তা ভঙ্গ করে। চুক্তি আল্লাহর সাথেও হতে
পারে অথবা অপর কোন মানুষের সাথেও হতে পারে বা অন্য কোন সৃষ্টির সাথেও হতে পারে। তখন সে
চুক্তি পূর্ণ করে না। অথচ তা পূর্ণকরার জন্য আল্লাহ তা’আলা আদেশ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা
বলেন:
وَ أ َوْ ف ُوا ْ ب ِالْع َھْدِ إ ِنَّ ٱلْع َھْدَ كَانَ مَسْؤُولا ً
“তোমরা চুক্তি পূর্ণ কর। নিশ্চয় চুক্তির বিষয়ে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।” (সূরা বনী-ইসরাঈল : ৩৪)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন :
وَ أ َوْ ف ُوا ْ ب ِع َھْدِ ٱلل َّھِ إ ِذَا عَاھَدتُّمْ
“তোমরা আল্লাহর সাথে তোমাদের চুক্তি পূর্ণকর, যখন তোমরা চুক্তি কর।” ( সূরা আন-নাহল : ৯১)
চুক্তি ভঙ্গ করা কবীরা গুনাহ। যদি কাফিরের সাথেও চুক্তি হয় তবুও তা পূর্ণ করতে হবে। চুক্তির
ব্যাপারে কোন অসম্পূর্ণতা বৈধ নয়।
মুনাফিকের চতুর্থআলামত বা স্বভাব হচ্ছে : যখন ঝগড়া করে তখন সে অশ্লীলতা প্রদর্শন করে।
যে ব্যক্তির মধ্যে মুনাফিকদের চারটি স্বভাব প্রতিফলিত হবে (কথা-বার্তায় মিথ্যা বলা, আমানতের
খিয়ানত করা, চুক্তি ভঙ্গ করা, ঝগড়ায় লিপ্ত হলে অশ্লীলতা প্রদর্শন করা) তা হলে সে প্রকৃত আমলী
মুনাফিক হয়ে যাবে, তবে কাফির হবে না। আর যদি কারো মধ্যে এ চারটি স্বভাবের যে কোন একটি
স্বভাব পাওয়া যায়, সে মুমিন থাকবে, তাকে কাফির বলা যাবে না। এ ধরনের মুনাফিককে তাওবা করে
সংশোধন হতে হবে। তারা আজীবন জাহান্নামে থাকবে না। তাদেরকে মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা
করে দিতে পারেন। এ ধরনের নিফাক থেকে পূর্ববর্তী আলিমগণ এজন্য সতর্ক করেছেন যে, এটি
মানুষকে আকীদাগত নিফাকের দিকে ধাবিত করে। তাই নবী (স) এগুলোকে মুনাফিকী স্বভাব
বলেছেন।
মুমিনের মধ্যে নিফাকে আমলী প্রকাশিত হলে তার Ðকুম
কোন মুমিনের মধ্যে নিফাকের নির্দশন পাওয়া গেলে তার হুকুম কী এ নিয়ে ইসলামি পÐিতগণ মতভেদ
করেছেন
১. কেউ কেউ, নবী করীম (স) এর এ উক্তি
من كانت فیھ خصلة منھن كانت فیھ من النفاق .
“যার মধ্যে নিফাকের কোন একটি নির্দশন পাওয়া যাবে তার মধ্যে ততটুকু নিফাক থাকবে।”
প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে বলেন, মুমিন ব্যক্তির মধ্যে যদি কুফর বা নিফাকের নির্দশন পাওয়া যায়
তবে সে ঈমান হতে সম্পূর্ণখারিজ হবে না।
২. ইমান খাত্তাবীর (র) মতে, হাদীসে বর্ণিত স্বভাবগুলো যার মধ্যে পাওয়া যায় সে মুনাফিক হয়ে
যাবে-এ উক্তি দ্বারা নবী করীম (স) মুমিনদের নিফাকী স্বভাব থেকে সতর্ক করেছেন। বস্তুত সে
প্রকৃত মুনাফিক হবে না। যেমন: নামায না পড়া হতে সতর্ক করার জন্য كفر فقدে স কুফুরী
করেছে বলে সতর্ক করা হয়েছে। মুলত সে কাফির হবে না।
৩. ইমাম নববীর মতে বর্ণিত স্বভাবগুলো কারো মধ্যে পাওয়া গেলে সে রূপক অর্থেমুনাফিক হবে,
বাস্তব অর্থে মুনাফিক হবে না।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. আকীদাগত নিফাকের Ðকুম কী?
ক) বিদ্আত;
খ) পাপ;
গ) কুফরী;
ঘ) জঘন্য অপরাধ।
২. নিফাক শব্দের অর্থ হচ্ছেক) মুখে এক অন্তরে তার বিপরীত;
খ) মুখে এবং অন্তরে একই চিন্তা করা;
গ) কাজ-কর্মে বিদ্আত প্রদর্শন করা;
ঘ) উপরের কোনটিই ঠিক নয়।
৩. খাঁটি মুনাফিকের আলামত ক’টি?
ক) ৪টি;
খ) ৫টি;
গ) ৩ টি;
ঘ) ২টি।
৪. আমলগত মুনাফিকদের Ðকুম কী?
ক) ফাসিক;
খ) কাফির;
গ) পৌত্তলিক;
ঘ) মুশরিক।
৫. আকীদাগত মুনাফিকদের মৃত্যু হয়?
ক) ঈমানের সাথে;
খ) নাফরমানীর সাথে;
গ) কুফরীর সাথে;
ঘ) শিরকের সাথে।
৬. চুক্তি ভঙ্গ করা
ক) সামাজিক অপরাধ;
খ) অবৈধ এবং হারাম;
গ) মুনাফিকের আলামত;
ঘ) উপরের কোনটিই নয়।
সংক্ষিপ্ত রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. নিফাক -এর শাব্দিক, পারিভাষিক ও প্রায়োগিক অর্থ লিখুন।
২. মুনাফিকের শ্রেণী বিভাগসহ প্রত্যেক শ্রেণীর সংজ্ঞা উল্লেখ করুন।
৩. মুনাফিকের আলামত ক’টি ও কী কী? হাদীসের আলোকে বর্ণনা করুন।
৪. আকীদা ও বিশ্বাসগত দিক থেকে মুনাফিক বলতে কী বুঝায়? এ প্রকার মুনাফিকের পরিণতি বর্ণনা
করুন।
৫. নিফাকে আসগার বলতে কী বুঝায়? লিখুন।
৬. মুনাফিকের তৃতীয় আলামত কী? লিখুন।
৭. মুমিনের মধ্যে আমলগত নিফাক প্রকাশ পেলে তার Ðকুম কী? বর্ণনা করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. নিফাক কী? নিফাক কতপ্রকার ও কী কী? এর পরিণাম কী? মুনাফিকের আলামতসমূহ বর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]