বিদ্আত বলতে কী বুঝায়? উদাহরণসহ বিদ্আতের প্রকারভেদ আলোচনা করুন।

বিদ্আত তাওহীদের-এর পরিপন্থী। বিদ্আতকে জানতে হলে প্রথমত তাওহীদের জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
তাওহীদ জানা না থাকলে বিদ্আতী কাজ কর্ম সম্পর্কেআকীদা পোষণ করা কঠিন। তাই এখানে প্রথমে
তাওহীদ সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা হল।
তাওহীদ
আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদে বিশ্বাস করাকে তাওহীদ বলে। রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা’আলাকে
এক এবং অদ্বিতীয় জানা এবং বিশ্বাস করা। তিনিই একমাত্র মালিক, তিনিই প্রতিপালনকারী। তিনি
জীবন ও মৃত্যুদাতা। এক্ষেত্রে তাঁর সমকক্ষ কেউ নয়। তিনি ইবাদাতের জন্য একমাত্র প্রকৃত ইলাহ বা
উপাস্য। তিনি ছাড়া আর যে সকল ইলাহকে মানুষ উপাসনা করে তা বাতিল এবং ভ্রান্ত। তাঁর সাথে
অন্য কাউকে ইলাহরূপে স্বীকৃতি দেয়া শিরক। আল্লাহ তা’আলা তাঁর পবিত্র নামসমূহ ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে
একক এবং অদ্বিতীয়। যে সকল নাম আল্লাহ তা’আলার জন্য নির্দিষ্ট তা কোন মানুষ ধারণ করতে পারে
না। যেমন: আল্লাহ তা’আলার নাম রাজ্জাক বা রিযিকদাতা। এটা আল্লাহ তা’আলার গুণবাচক নাম। এ
নামের সাথে কোন মাখলুক সমকক্ষ দাবি করতে পারে না এবং নিজকে রাযযাক হিসেবে নামকরণ
করতে পারে না। বরং সে আব্দুর রায্যাক হিসেবে অর্থাৎ রিযিকদাতার দাস হিসেবে নাম ধারণ করতে
পারবে। যদি কেউ রায্যাক নাম ধারণ করে, তবে সে আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব স্থাপন করলো, যা
ইসলামে নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদের স্বীকৃতি দেয়ার সাথে সাথে এ কথারও স্বীকৃতি দিতে হবে যে, হযরত
মুহাম্মদ (স) আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল। আল্লাহ তা’আলা তাঁর মনোনীত বান্দা ও রাসূলের প্রতি যে
শরীআত প্রেরণ করেছেন, তার মধ্যে ইবাদাতের ক্ষেত্রে কোন কিছু নতুন সংযোজন করা যাবে না।
কারণ ইসলামি শরীআত একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা যার মধ্যে সব কিছুর বিধান দেয়া হয়েছে। সুতরাং
কোন কিছুসংযোজন যেমন বৈধ নয়, তেমনি কোন কিছু বিয়োজন করাও বৈধ নয়। তেমনিভাবে কোন
কোন আমলের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করা যেমন নিষিদ্ধ, তেমনিভাবে কোন কোন আমলের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তা
এবং সংক্ষিপ্ত করাও নিষিদ্ধ। ইবাদাতের ক্ষেত্রে যে আমল যেভাবে করার বিধান রয়েছে, তা সঠিক ও
নির্দিষ্টভাবে সম্পাদন করাই তাওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
তাওহীদের গুরুত্ব
তাওহীদ আল্লাহর একত্ববাদের প্রসার এবং প্রতিষ্ঠা করে। অপরদিকে সকল শিরক ও বিদ্আতকে ধংস
করে। তাওহীদবাদীরা আল্লাহর প্রিয়পাত্র হিসেবে বিবেচিত হন। তাওহীদ পৃথিবীতে সকল কল্যাণের
আধার। তাওহীদের মাধ্যমে পৃথিবীতে সকল অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন বিলোপ সাধিত হয়।
তাওহীদের মাধ্যমে পৃথিবীতে ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে, মানুষের মধ্যে মানবতাবোধ
পাঠ-৮
জন্মে। মানুষ ফেরেশতা বা মালাইকা থেকেও ঊর্ধ্বে আরোহণ করে। তাওহীদের কারণে মানুষ
জাহান্নামের কঠিন শাস্তিথেকে নিষ্কৃতি লাভ করে চির সুখী হয়। সকল ইবদাত গ্রহণযোগ্যতা লাভ করার
মূল চাবিকাঠি হলো তাওহীদ। তাওহীদ সকল ইবাদাতের মূল। প্রতিটি মানব তথা মুসলামনের জন্য
তাওহীদ শিক্ষা করা, তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা ফরয।
বিদ্আত
ইসলামে বিদ্আত হচ্ছে এমন কাজ যার প্রতি শরীআত সমর্থিত কোন দলীল বা প্রমাণ নেই। বিদ্আত
ইসলামের মধ্যে ইবাদাতের নামে এক নতুন সংযোজন। ইসলাম বিদ্আতকে কখনো স্বীকৃতি দেয় না।
যারা ইসলাম ধর্মের মধ্যে কুরআন হাদীস বর্জিত নতুন কোন কাজ ইবাদাতের উদ্দেশ্যে গ্রহণ করে তা
গ্রহণযোগ্য নয়। পক্ষান্তরে ঐ ব্যক্তি আল্লাহর নিকট নিন্দনীয়।
বিদ্আত অর্থ
ইমাম রাগিব (র) বিদ্আতের অর্থ করেছেন এভাবে-কোনরূপ পূর্ব নমুনা বা মডেলের অনুকরণ অনুসরণ
না করেই কোন কিছু নতুনভাবে সৃষ্টি করা। (মুফরাদাত)
মাযহাবের ক্ষেত্রে বিদ্আতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ইমাম রাগিব বলেছেন :
والبد عة فى المذا ھب إیراد قول لم یستن قائلھا وفاعلھا فیھ بصاحب
الشریعة أماثلھا المتقدمة وأصولھا المتقننة.
“মাযহাবের ক্ষেত্রে বিদ্আত হচ্ছে এমন কোন কথা উপস্থাপন করা যার প্রবক্তা ও অনুসারী শরীআত
প্রবর্তক বা প্রচারক কর্তৃক প্রচারিত শরীআতের মৌলনীতি ও সুষ্ঠু পরিচ্ছন্নআদর্শের অনুকরণ অনুসরণ
করেন না।” অর্থাৎ শরীআত প্রবর্তক যে কথা বলেননি, সে কথা বলা এবং তিনি যা করেননি, এমন
কাজকে আদর্শ রূপে গ্রহণ করাই হচ্ছে বিদ্আত।
ইমাম নববী বিদ্আত শব্দের অর্থ লিখেছেন এভাবে-
البد عة كل شئ وعمل على غیر مثال سا بق.
“বিদ্আত হল এমন কাজ যার পূর্ব কোন দৃষ্টান্তনেই।”
মুল্লা আলী কারীর মতে, শরীয়াতের পরিভাষায় বিদ্আত হল :
إحدات ما لم یكن فى عھد رسول اللھ صلى اللھ علیھ وسلم .
“রাসূলের যুগে ছিল না এমন নীতি ও পথকে সম্পূর্ণনতুনভাবে প্রবর্তন করা।”
ইমাম শাতেবীর মতে :
یقا ل ابتدع فلان بدعة یعنى ابتدأ طریقة لم یسبقھ إلیھا سابق .
“আরবি ভাষায় বলা হয় অমুক ব্যক্তি বিদ্আত করেছে। এর অর্থ হল, অমুক লোক নতুন পন্থার উদ্ভাবন
করেছে, ইত:পূর্বেযার কোন দৃষ্টান্তসৃষ্টি হয়নি।”
আর এ জন্যই নবোদ্ভাবিত কাজকেই বিদ্আত বলা হয় এবং অনুসরণের জন্য নতুন পন্থা বের করাকে
ابتداع) ইবতেদা) বলা হয়। আর এর ফলে যে কাজটি সংঘটিত হয় তাকে বলা হয় বিদ্আত।
তিনি আরো বলেন :
ولا معنى للبد عة إلا أن یكون الفعل فى اعتقاد المبتدع شرعا ولیس
بمشروع.
“বিদ্আত তখনই বলা হবে, যখন বিদ্আতী কোন কাজকে শরীআত মোতাবেক কাজ বলে মনে করবে
অথচ তা মূলত শরীআত মোতাবেক নয়।”
অর্থাৎ শরীআত মোতাবিক নয় এমন কাজকে শরীআত মোতাবিক কাজ বলে আকীদা হিসেবে বিশ্বাস
করে নেয়াই হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে বিদ্আত। তিনি আরো বলেন:
فمن ھذا المعنى سمى العمل الذى لا دلیل علیھ فى الشرع بدعة .
“এ কারণেই এমন কাজকেও বিদ্আত বলা হয়েছে, যে কাজের সমর্থনে শরীআতের কোন দলীল বা
প্রমাণ নেই।” সুতরাং বিদ্আত হল-
فالبدعة إذن عبارة عن طریقة فى الدین مخترعة تضاھى الشریعة
یقصد بالسلوك علیھا المبا لغة فى التعبد للھ سبحا نھ
“মোটকথা হচ্ছে, বিদ্আত বলা হয় দীন ইসলামে বাহ্যিকভাবে এমন কর্মনীতি বা কর্মপন্থা চালু করা যা
শরীআতের অনুরূপ এবং যা করে আল্লাহর বন্দেগীর ব্যাপারে আতিশয্য ও বাড়াবাড়ি করাই লক্ষ্য হয়।”
(আল-ইতিসাম)
তিনি আরো বলেন, প্রকৃত ও সত্যিকারের বিদ্আত তাই, যার স্বপক্ষে ও সমর্থনে শরীআতের কোন
দলীল নেই। না আল্লাহর কিতাবে, না রাসুলের হাদীসে, না ইজমাতে, না এমন কোন দলীল পেশ করা
যায় যা বিজ্ঞজনের নিকট গ্রহণযোগ্য। না মোটামোটিভাবে, না বিস্তারিত ও খুঁটিনাটিভাবে। এ জন্য এর
নাম দেয়া হয়েছে বিদ্আত। কেননা তা মনগড়া স্বকল্পিত, শরীআতে যার কোন পূর্ব দৃষ্টান্তনেই।
সুন্নাতের পরিপন্থী কাজই বিদ্আত এবং নিন্দনীয়।
বিদ্আতের প্রকারভেদ
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনীর মতে বিদ্আত দু’প্রকার। বিদ্আত হাসানা বা
উত্তম বিদ্আত ২. বিদ্আত মুসতাকবাহা অর্থাৎ ঘৃণিত ও জঘন্য বিদ্আত।
বিদ্আত যদি কোন শরীআত সম্মত ভালোকাজের মধ্যে গণ্য হয় তবে তা বিদ্আত হাসানাহ। আর যদি
তা শরীআতের দৃষ্টিতে খারাপ ও জঘন্য কাজের মধ্যে হয় তবে তা বিদ্আতে মুসতাকবাহা ঘৃণ্য ও
জঘন্য বিদ্আত।
বিদ্আতের এই শ্রেণীবিভাগ করাও একটি বিদ্আত বলে কেউ কেউ মনে করেন। কারণ বিদ্আতকে
ভালো ও মন্দ এ দু’ভাগে ভাগ করার ফলে বÐ সংখ্যক বিদ্আতই ভালো বিদ্আত হওয়ার সমর্থন নিয়ে
ইসলামি আকীদা ও আমলের বিশাল ব্যবস্থায় আগোচরে অনুপ্রবেশ করেছে। ফলে তাওহীদবাদীরাই
আজ এমন সব কাজ অবলীলাক্রমে করে যাচ্ছে, যা প্রকৃত পক্ষেই তাওহীদ বিরোধী যা সুস্পষ্টরূপে
বিদ্আত এবং কোন তাওহীদবাদীর পক্ষেই তা গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও বহুগ্রন্থ প্রণেতা ইমাম শাওকানী বলেছেন, যাই সুন্নাতের বিপরীত তাই বিদ্আত।
অতএব বিদ্আতের সব কিছুই নিন্দনীয়, পরিত্যাজ্য। যার মধ্যে কোন দিকই প্রশংসনীয় বা ভালো হতে
পারে না। অন্য কথায়, বিদ্আতকে দু’ভাগে ভাগ করে একভাগকে ভালো বলে আখ্যায়িত করা এবং
অপর ভাগকে মন্দ বিদ্আত বলা একেবারেই অমূলক।
ইসলামি শরীআতে যার ভিত্তি বা দৃষ্টান্তখুঁজে পাওয়া যাবে, তা কোন ক্রমেই সুন্নাতের বিপরীত হতে
পারে না। কাজেই যা সুন্নাতের বিপরীত নয়, তা বিদ্আতও নয়। আর যার কোন দৃষ্টান্তই ইসলামের
সোনালী যুগে পাওয়া যায় না, শরীআতে পাওয়া যায় না, যার কোন ভিত্তি নেই তা কোন ক্রমেই
শরীআত সম্মত নয় বরং তাই সুন্নাতের বিপরীত এবং তাই বিদ্আত। এর কোন দিকই ভালো
প্রশংসনীয় বা গ্রহণযোগ্য নয়। এক কথায় বিদ্আতকে ভালো ও মন্দ এ দু’ভাগে ভাগ করা অযৌক্তিক।
হযরত উমার (রা) এর উক্তি عة البد نعمت) কতই না সুন্দর বিদ্আত) দ্বারা কেউ কেউ বিদ্আতে
হাসানা এর প্রমাণ গ্রহণ করে থাকে। মূলত হযরত উমারের (রা) উক্তিতে উল্লিখিত বিদ্আত শব্দটি
শাব্দিক অর্থে বিদ্আত। শরীআতের পারিভাষিক অর্থে বিদ্আত নয়।
Ðকুমের দিক থেকে বিদ্আতের প্রকারভেদ
বিদ্আতের ঘৃণ্যতা ও জঘন্যতার দিকে লক্ষ্য করে তাওহীদবাদীগণ বিদ্আতকে বিভিন্নভাগে ভাগ
করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল :
১. কাফির পরিণতকারী বিদ্আত : শরীআতের কোন বিধানকে ত্রæটিপূর্ণমনে করে তার স্থলে নিজের
মনগড়া কিছু চালু করা।
২. অবৈধ বা হারামকৃত বিদ্আত : যেমন মৃতদেরকে মাধ্যম বানিয়ে ওসীলা গ্রহণ করা, কবর মুখী
হয়ে নামায আদায় করা এবং তার জন্য নযর মানা, তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা আর কবরের
উপর সৌধ ইত্যাদি নির্মাণ করা।
৩. মাকরূহ বা অপছন্দনীয় বিদ্আত : যেমন- জুমআর নামাযের পর যোহরের নামায আদায় করা,
আযানের পূর্বেউচ্চঃস্বরে দরুদ ও সালাম পাঠ করা ইত্যাদি।
এ সকল বিদ্আত থেকে প্রতিটি মুসলমান নর-নারীকে বেঁচে থাকতে হবে। কোন আমল করার
পূর্বে বিচার করতে হবে তা সুন্নাতের-বিপরীত কিনা। কারণ আপাত দৃষ্টিতে তা অনেক ভাল
দেখালেও শরীআতে তার কোন মূল্য নেই।
বিদ্আত নিন্দনীয় হওয়ার প্রমাণ
মহানবী (স) বিদ্আত সম্পর্কে Ðশিয়ার করে ঘোষণা করেছেন :
إیا كم و محد ثات الأمور فإن كل محد ثة بد عة و كل بد عة ضلا لة
.
“তোমরা নিজেদেরকে ধর্মের মধ্যে নব উদ্ভাবিত বিষয়াদি থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। কেননা ধর্মের
মধ্যে প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত জিনিসই বিদ্আত আর প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।”
এ হাদীসে বর্ণিত শব্দ ‘মুহদাসাতুল উমুর’-এর ব্যাখ্যায় আল্লামা আহমাদুল বান্না (র) বলেন,
মুহদাসাতুল উমুর বুঝায় এমন জিনিস ও বিষয়াদিকে যা কুরআন, সুন্নাহ এবং ইজমা অর্থাৎ কোন দিক
দিয়েই শরীআতে বিধিবদ্ধ নয়। আর এই হচ্ছে বিদ্আত।
হযরত আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা) বলেছেন :
من عمل عملا لیس فیھ أمرنا فھو رد .
“যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল, যার অনূকুলে ও সমর্থনে কোন প্রমাণ নেই, (অর্থাৎ যা শরীআত
মোতাবেক নয়) তা প্রত্যাখ্যাত।”
রাসূল (স) থেকে আরো বর্ণিত আছে :
فإن خیرا الحدیث كتاب اللھ وخیر الھدى ھدى محمد صلى اللھ علیھ
وسلم وشر الأمور محد ثا تھا وكل بدعة ضلالة
“জেনে রেখো, সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম কর্মবিধান হচ্ছে মুহাম্মদ (স)-এর
উপস্থাপিত জীবন বিধান। পক্ষান্তরে নিকৃষ্টতম জিনিস হচ্ছে নবোদ্ভাবিত মতাদর্শ আর প্রত্যেক
নবোদ্ভাবিত মতাদর্শসুস্পষ্ট গোমরাহী।” (মুসলিম)
এ হাদীসে বর্নিত محدثانھا শব্দটির ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী (র) বলেন :
المحدثات یعنى البدع الاعتقادیة والقولیة و الفعلیة .
“মুহদাসাত বলতে বুঝায় সে সব বিদ্আত, যা আকীদা, কথা-বার্তা এবং আমলের ক্ষেত্রে নতুন
উদ্ভাবিত।”
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, “শিরক তাওহীদের পরিপন্থী আর বিদ্আত সুন্নাতের
বিপরীত। শিরক হলো, ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ কালেমার এই প্রথম অংশের অস্বীকৃতি। আর বিদ্আত
হচ্ছে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ কালেমার এই শেষাংশের বিপরীত এবং অন্তর থেকে তার অস্বীকৃতি।”
নবী করীম (স) থেকে সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, “আমাদের এই দীনে যে কেউ নতুন
কিছু উদ্ভাবন করবে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত অন্য এক হাদীসে নবী করীম (স) বলেছেন, “কেউ যদি এমন কাজ করে যা
আমাদের এই শরীআতে নেই তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে।”
তিনি অন্য এক হাদীসে ঘোষণা করেছেন- “তোমরা আমার সুন্নাত এবং আমার পরবর্তী খোলাফায়ে
রাশেদীনের সুন্নাত পালন করবে। আর তা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করবে। সাবধান! দীনে নব প্রবর্তিত
কোন বিষয় গ্রহণ করবে না। কেননা প্রত্যেক নব প্রবর্তিত বিষয়ই বিদ্আত এবং প্রত্যেক বিদ্আতই
পথভ্রষ্টতা।”
এ সকল হাদীসে বিদ্আত প্রবর্তনের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে এবং উম্মতকে এর
ভয়াবহতা সম্পর্কেসাবধান করা হয়েছে। আর এতে লিপ্ত হওয়া থেকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে :
ٱلْیَوْ مَ أ َكْمَل ْتُ ل َكُمْ دِینَكُمْ وَ أ َت ْمَمْتُ عَل َیْكُمْ نِعْمَتِى وَ رَ ضِ یتُ ل َكُمُ ٱلأِسْلاَمَ
دِینا ً
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পরিপূর্ণ করে দিলাম আর তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত
পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন হিসেবে মনোনীত করলাম।”(সূরা আল-মায়িদা : ৩)
এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, এই উম্মতের জন্য আল্লাহ দীন ইসলামকে পরিপূর্ণ
করেছেন। মহানবী (স) পরিষ্কারভাবে বলে গেছেন, তার পরে লোকেরা কথায় ও কাজে যেসব নব প্রথার
উদ্ভাবন করে শরীআতের সাথে সম্পৃক্ত করবে সে সব বিদ্আত বিধায় প্রত্যাখ্যাত হবে।
সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীগণ বিদ্আত থেকে জনগণকে সতর্কও ভীতি প্রদর্শন করেছেন। কেননা
এটা দ্বীনে অতিরিক্ত সংযোজন যার অনুমতি আল্লাহ তা’আলা কাউকে দেননি এবং আল্লাহর শত্রæ
ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান কর্তৃক তাদের ধর্মে নব নব প্রথা সংযোজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য স্বরূপ। এরূপ করার অর্থ
এই দাঁড়ায় যে, ইসলামকে অসম্পূর্ণও ত্রæটিপূর্ণ বলে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার সুযোগ প্রদান করা। এটা যে
কতো বড় জঘন্য কাজ এবং আল্লাহর বাণীর বিরোধিতা তা চিন্তা করে সকলকে বিদ্আত থেকে মুক্ত থাকা আবশ্যক।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. তাওহীদ কত প্রকার?
ক) তিন প্রকার;
খ) এক প্রকার;
গ) চার প্রকার;
ঘ) পাঁচ প্রকার।
২. তাওহীদের স্বীকৃতি প্রদানক) ওয়াজিব;
খ) সুন্নাত;
গ) ফরয;
ঘ) ফরযে কিফায়াহ।
৩. বিদ্আত হল এমন কাজ যার কোন পূর্বদৃষ্টান্তনেই-এটি কার অভিমত?
ক) হযরত ওমর (রা);
খ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা);
গ) ইমাম আবুহানীফা (র);
ঘ) ইমাম নববী (র)।
৪. বিদ্আত বলা হয়ক) ফরযের পরিপন্থী কাজকে;
খ) সুন্নাতের পরিপন্থী কাজকে;
গ) ফরয ও সুন্নাতের পরিপন্থী কাজকে;
ঘ) শরীআতে সৃষ্ট নতুন কোন কাজকে।
৫. হারাম বিদ্আত কোনটি?
ক) কবরমুখী হয়ে নামায আদায় করা;
খ) মসজিদে বাতি জ্বালানো;
গ) জুমআর নামাযের পর যোহরের নামায আদায় করা;
ঘ) উপরের কোন উত্তর সঠিক নয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. তাওহীদ কী? বুঝিয়ে লিখুন এবং তাওহীদের গুরুত্ববর্ণনা করুন।
২. বিদ্আত বলতে কী বুঝায়? লিখুন।
৩. বিদ্আত-এর একটি পরিপূর্ণসংজ্ঞা প্রদান করুন।
৪. বিদ্আত কত প্রকার ও কী কী? লিখুন।
৫. বিদ্আত নিন্দনীয় হওয়ার স্বপক্ষে প্রমাণাদি উপস্থাপন করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. বিদ্আত বলতে কী বুঝায়? উদাহরণসহ বিদ্আতের প্রকারভেদ আলোচনা করুন।
২. ব্যাখ্যা করুন, ‘বিদ্আত ধর্মের নামে একটি জঘন্য প্রথা।’

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]