নবুওয়াত ও রিসালাত বলতে কী বুঝেন? নবী-রাসূলগণে বিশ্বাস করা কী অপরিহার্য? প্রমাণ দিন।

রিসালাত ও নবুওয়াত
আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এ পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মানব জাতির আদি
পিতা হযরত আদম (আ) -এর উপর সর্বপ্রথম এই প্রতিনিধিত্বের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। তাই
তাঁকে রিসালাত ও নবুওয়াত প্রদান করা হয়। হযরত আদম (আ) থেকে রিসালত ও নবুওয়াতের ধারা
শুরু হয়ে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর উপর তার পরিসমাপ্তি ঘটে। রিসালতের মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা
মানব জাতির জন্য কল্যাণকর সহজ সরল পথের সন্ধান দিয়ে থাকেন। মানুষ এই পৃথিবীতে আল্লাহর
প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সমাজে চিরন্তন ও কল্যাণকর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে তাঁর পক্ষ থেকে
আদেশ-নিষেধ সম্বলিত বিধানের অপেক্ষায় থাকেন। কেননা মানব প্রসূত স্বল্প জ্ঞান বিশ্বমানবতার
চিরকল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। তাই আল্লাহ বিশ্ব মানবের মুক্তির দূত ও বার্তবাহক হিসেবে নবীরাসূল প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে তাঁর বিধানাবলি মানব জাতির নিকট পৌছে
দেওয়ার মাধ্যমকে রিসালাত ও নবুওয়াত বলা হয়। আর এ দায়িত্ব সম্পন্নকরার জন্য যাঁকে মনোনীত
করা হয় তিনি হচ্ছেন রাসূল বা নবী। রিসালাতে বিশ্বাস স্থাপন করা প্রতিটি মানুষের জন্য অবশ্য
কর্তব্য। কেউ রিসালাতকে অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে। হযরত মুহাম্মদ (স) হলেন সর্বশেষ
নবী। তাঁর পরে আর কোন নবী বা রাসুলের আগমন ঘটবে না। যদি কোন ব্যক্তি মহানবী হযরত
মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াতের পর নিজেকে নবী হিসেবে দাবি করে, তাহলে সে হবে মিথ্যাবাদী বা
কাযযাব।
বর্তমানে কাদিয়ানী স¤প্রদায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর পর গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকে নবী
স্বীকার করায় তারা কাফির হিসেবে বিশ্বমুসলিম স¤প্রদায়ের কাছে ঘৃণিত হয়েছে।
মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে হযরত মুহাম্মদ (স)-কে শেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল
হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে তাঁরই আনীত বিধান অনুসারে জীবন-যাপন করতে হবে। আর তা হলেই
পৃথিবীতে শান্তিপ্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহ তা’আলা এ পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি প্রেরণ করার ইচ্ছ পোষণ করে হযরত আদম (আ)-কে
সৃষ্টি করলেন। হযরত আদম (আ) পৃথিবীর প্রথম মানুষ। আদম (আ) থেকেই মানবজাতির ক্রমধারা
আরম্ভ হয়েছে। আর এ মানবজাতিকে বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত করে কিভাবে প্রতিনিধিত্বের যোগ্য করে
তোলা যায় সে জন্য আল্লাহ তা’আলা নিজেই শিক্ষক হয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। এ বার্তা যাদের উপর
অবতীর্ণ হয়েছে তাঁরাই হলেন আল্লাহ তা’আলার মনোনীত নবী-রাসূল। নবী-রাসূলগণই আল্লাহ
তা’আলার পক্ষ থেকে বিভিন্নবিধি নিষেধ লাভ করে তা মানবাতির মধ্যে প্রচার করেছেন। এ ধারা
হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্তশেষ হয়। মানব জাতির হিদায়েতের
জন্য আল্লাহ তা’আলা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্তএকলাখ বা দুইলাখ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল প্রেরণ
করেছেন। নবী-রাসূলণ ঐশীবাণী শিক্ষালাভ করে মানব জাতির হিদায়াতের পক্ষে কাজ করেন। নবীরাসূলগণ সাধারণ মানুষের উর্ধ্বে। তারা গুনাহ থেকে মুক্ত। আল্লাহ তা’আলা তাঁদেরকে নিস্পাপ করে
দিয়েছেন। নবী-রাসূলগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরয। আল্লাহ তা’আলা
যাকে নির্দিষ্ট আদেশ পৌঁছানোর দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি হলেন রাসূল। রাসূলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে
রিসালাত বা কিতাব অর্থাৎ বিধি-বিধান প্রাপ্ত হন। রাসূলগণ সমগ্র মানবজাতির হিদায়াতের জন্য প্রেরিত
হয়ে থাকেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
وَ أ َرْ سَلْنَاكَ لِلنَّاسِ رَ سُولاً
“তোমাকে মানুষের জন্য রাসূল রূপে প্রেরণ করেছি।” (সূরা আন-নিসা-৭৯)।
সুতরাং নবুওয়াত ও রিসালাত হচ্ছে, আল্লাহ এবং তাঁর মনোনীত ব্যক্তির মধ্য সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যম, যা
ওহীর মাধ্যমে সংঘটিত হয়।
নবী ও রাসূলগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী প্রাপ্ত হয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তা প্রচার করে থাকেন।
আল্লাহ তা’আলার বিধি-নিষেধ বা বাণী মানুষের কাছে পৌঁছার মাধ্যম হলেন ফেরেশতা হযরত জিব্রাঈল
(আ)। তা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ তা’আলার বাণী বিভিন্নভাবে রাসূল (স)-এর কাছে পৌঁছেছে।
আল্লাহর নিকট থেকে নবী-রাসূলগণের কাছে প্রত্যাদেশ পৌঁছে তা হল ওহী।
এখানে ওহীর বিভিন্নপদ্ধতি আলোচনা করা হল। ওহী কয়েকভাবে নবী-রাসূলগণের কাছে প্রেরিত
হয়েছে। যেমন১. সত্য স্বপ্ন: আল্লাহ তা’আলা হযরত মুহাম্মদ (স)-কে ওহীর সকল দিক থেকেই পূর্ণত্ব দান
করেছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর কাছে প্রথম দিকে যে ওহী অবতীর্ণহয় তা ছিল সত্য
স্বপ্ন। হযরত মুহাম্মদ (স)-কে আল্লাহ স্বপ্নের মাধ্যমে কোন কিছু জানিয়ে দিতেন। তাই তিনি যা
কিছু স্বপ্নে দেখতেন তা দিবালোকের মতই সত্য হয়ে দেখা দিত। ওহীর এ পদ্ধতিটি বেশিরভাগ
গোড়ার দিকে অর্থাৎ নবুওয়াতের পথ দিকেই সংঘটিত হয়েছিল। মানবজাতিকে বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত করে কিভাবে প্রতিনিধিত্বের যোগ্য করে তোলা যায় সে জন্য আল্লাহ তা’আলা নিজেই শিক্ষক হয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। এ বার্তা যাদের উপর নাযিল হয়েছে তাঁরাই হলেন আল্লাহ তা’আলার মনোনীত নবীরাসূল।
২. ফেরেশতা কর্তৃক অন্তরে ফুঁকে দেওয়া : আল্লাহর বাণী বহনকারী ফেরেশতা মহানবী (স)-এর
অন্তরে ওহী ঢেলে দেন। অথচ তিনি ফেরেশতাকে দেখতে পাননি। যেমন- একটি রেওয়ায়েতে
আছে, হযরত (স) বলেছেন: হযরত জিবরাঈল (আ) আমার মনে এ কথা জাগ্রত করে দিয়েছেন
যে, কোন প্রাণীই মারা যাবে না যতক্ষণ না তার আহার্য শেষ হয়ে যায়। তাই আল্লাহকে ভয় কর
এবং সৎভাবে আহার্য সংগ্রহ কর। রুযী লাভে বিলম্ব দেখলে আল্লাহর নাফরমানীর আশ্রয় নিয়ে তা
পেতে যেয়ো না। কারণ আল্লাহর কাছে যে নিয়ামত আছে তা তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমেই লাভ করা
যায়।
৩. ঘন্টার আওয়াজের মত : কখনো কখনো ঘন্টার আওয়াজের মতো ওহী আসতো। আর এ পদ্ধতিটি
মহানবী (স)-এর জন্য খুবই কষ্টদায়ক ছিল। এমনকি শীতের দিনেও মহানবী (স) ঘেমে যেতেন।
তিনি যদি কিছুতে সওয়ার থাকতেন তা হলে সওয়ারী ওহীর ভারে মাটির সাথে লেগে যেত।
৪. মানুষের আকৃতিতে জিবরাঈল (আ)-এর আগমন : কখনো কখনো জিবরাঈল (আ) মানুষের রূপ
ধরে মহানবী (স)-এর কাছে ওহী নিয়ে আসতেন। হযরতকে সামনে রেখেই তিনি ওহী জ্ঞাত করে
যেতেন। এরূপ অবস্থায় কখনো বা সাহাবায়ে কিরাম সেই ফেরেশতাকে দেখতে পেতেন।
৫. ফেরেশতার নিজস্বরূপে আগমন : কখনো কখনো ওহী বাহক ফেরেশতা তাঁর নিজস্ব অবয়বে
আসতেন এবং মহানবী (স)-এর নিকট আল্লাহর বাণী পৌঁছে দিতেন। এভাবে দু’বার ওহী
এসেছিল। যেমন- আল্লাহ তা’আলা সূরা নাজমে এ পদ্ধতিটি উল্লেখ করেছেন।
৬. আল্লাহ স্বয়ং নবীকে সরাসরি জানিয়ে দিতেন : এ পদ্ধতিতে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা নবী (স)-এর
কাছে ওহী পৌঁছে দিতেন। এ ধরনের ওহী মিরাজের রাতে নাযিল হয়েছিল। বিশ্বনবী হযরত
মুহাম্মদ (স) যখন মিরাজের রাতে আকাশ পরিভ্রমণে গেলেন এবং তাঁর ওপর নামায ফরয করা
হল, তখন আল্লাহ তা’আলা হযরতের সাথে কথা বলেছিলেন।
৭. পর্দার আড়াল থেকে সম্বোধন করে ওহী পৌছান : এ ধরনের ওহী হযরত মূসা (আ)-এর উপর
অবতীর্ণহয়েছিল। আল্লাহ তা’আলা পাহাড়ের আড়াল থেকে হযরত মূসার সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। মহানবী (স)-কেও এভাবে পর্দার আড়াল থেকে
ঐশী বাণী শুনিয়ে দেওয়া হত, যার প্রমাণ হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায়।
নবী ও রাসূলগণের উপর ঈমান
সকল নবী ও রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। পবিত্র কুরআনে
আল্লাহ তা’আলা মাত্র পঁচিশজন নবী-রাসূলের নাম বর্ণনা করেছেন। সকল মুমিমনের জন্য তাঁদের
প্রত্যেকের নবুওয়াতের উপর ঈমান আনা ফরয। তাঁদের উপর এ ধরনের বিশ্বাস রাখা যে, তাঁরা নবী ও
রাসূল ছিলেন। তাঁরা মানুষের হিদায়েতের নিমিত্তে আল্লাহর নিকট থেকে প্রেরিত হয়েছেন। কোন
মুসলমানের জন্য এটা বৈধ নয় যে, আল-কুরআনে যে সকল নবী ও রাসুলের নাম বর্ণিত হয়েছে তাঁদের
সম্পর্কেঅজ্ঞতা প্রকাশ করা অথবা কাউকেও নবী হিসেবে সন্দেহ করা। আল-কুরআনে যে সকল নবী
ও রাসূলের নাম বর্ণিত হয়েছে তাঁরা হচ্ছেন:
হযরত আদম (আ), হযরত ইদ্রীস (আ), হযরত নূহ (আ), হযরত হূদ (আ), হযরত সালেহ (আ),
হযরত ইবরাহীম (আ), হযরত লুত (আ), হযরত ইসমাঈল (আ), হযরত ইসহাক (আ), হযরত
ইয়াকুব (আ), হযরত ইউসুফ (আ), হযরত শুআয়ব (আ), হযরত আইয়ুব (আ), হযরত যুলকিফল
(আ), হযরত মূসা (আ), হযরত হারুন (আ), হযরত সুলাইমান (আ), হযরত দাউদ (আ), হযরত
ইলিয়াস (আ), হযরত ইউশা (আ), হযরত ইউনুস (আ), হযরত যাকারিয়া (আ), হযরত ইয়াহইয়া
(আ), হযরত ঈসা (আ), হযরত মুহাম্মদ (স)।
আরো অনেক নবী রয়েছেন যাদের সম্পর্কেপবিত্র কুরআনে বিস্তারিত উল্লেখ নেই এবং পবিত্র কুরআনে
তাঁদের কোন ঘটনাও উল্লেখ নেই। কিন্তু তাঁদের উপর সামষ্টিকভাবে ঈমান আনয়ন করা ফরয। অর্থাৎ
এমন বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আল্লাহ তা’আলা স্থান ও কালের চাহিদা মোতাবেক প্রত্যেক জাতি ও
স¤প্রদায়ের নিকট অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। যেমন- পবিত্র কুরআনে বর্ণিত রয়েছে : সকল নবী ও রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা মাত্র পঁচিশজন নবী-রাসূলের নাম বর্ণনা করেছেন।
وَ رُ سُلاً لَّمْ نَقْصُصْ ھُمْ عَلَیْكَ
“অনেক রাসূল, যাদের কথা আমি তোমাকে বলিনি।” (সূরা আন-নিসা : ১৬৪)
নবুওয়াতের দিক দিয়ে নবীগণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই
একথা প্রত্যেক মুসলমানকেই বিশ্বাস করতে হবে যে, নবুওয়াতের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নবী এবং রাসূলই
সমান। তাঁদের মধ্যে কোন পারস্পরিক পার্থক্য নেই। তাঁদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা বৈধও নয়।
আর এটা আল-কুরআনের এ আয়াত দ্বারাও প্রমাণিত।
آمَ نَ الرَّ سُولُ بِمَ ا أ ُنزِ لَ إِلَیْھِ مِ ن رَّ بّ ِھِ وَ الْمُؤْ مِ نُونَ كُلٌّ آمَ نَ بِاللّھِ
وَ مَ لآئِكَتِھِ وَ كُتُبِھِ وَ رُ سُلِھِ لاَ نُفَرِّ قُ بَیْنَ أ َحَ دٍ مِّ ن رُّ سُلِھِ
“রাসূল তার প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ঈমান এনেছে এবং
মুমিনগণও। তাদের সকলে আল্লাহে, তাঁর ফেরেশতাগণে, তাঁর কিতাবসমূহে এবং তাঁর রাসূলগণে ঈমান
এনেছে। তারা বলে, আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না।” (সূরা আল-বাকারা :
২৮৫)
হাদীস থেকেও এ কথার সত্যতা প্রমাণ করা যায়। যেমন- রাসূল (সা) বলেন :
لا تخیر ونى على موسى ولا تفضلونى على الأنبیاء .
“তোমরা আমাকে মূসা (আ) -এর উপর শ্রেষ্ঠত্বদিও না আর তোমরা আমাকে অন্যান্য নবীদের উপর
প্রাধান্য দিও না।”
উপরিউক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা নবুওয়াত সম্পর্কে সমতার কথা বলা হয়েছে। নবীগণের মর্যাদাগত
বিষয় সম্পর্কেবলা হয়নি।
মর্যাদার দিক থেকে নবী-রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করা যায়। সকল মুসলমান এ বিষয়ে একমত যে,
আমাদের প্রিয় নবী (স) তিনি এককভাবে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কেননা গোটা মানবজাতির প্রতি প্রেরিত হওয়াটাই
তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। এ প্রসঙ্গে নবী (স) বলেন:
انا أكرم الأولین والاخرین عند اللھ ولا فخر
“আমি প্রথম ও শেষ মানবগণের মধ্যে আল্লাহ তা’আলার নিকট সম্মানিত। এতে গর্বের কিছু নেই।”
নবী রাসূলগণের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য
নবী-রাসূলগণের মধ্যে যে সকল শর্ত বা গুণ থাকা অবশ্যম্ভাবী তা নিম্নে বর্ণনা করা হলপ্রথমত : নবী রাসূলগণ পুরুষ হবেন : নবুওয়াত এবং রিসালাত নারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এ কথার
স্বপক্ষে যুক্তি ছিল যে, আল্লাহ তা’আলা যে সকল নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন সকলেই পুরুষ ছিলেন।
কোন মহিলাকে নবী-রাসূল করে পাঠাননি। নবী-রাসূল হওয়ার জন্য যে পরিপূর্ণগুণাবলী থাকা অনিবার্য
তা হল নবী-রাসূল নারী হওয়া থেকে মুক্ত থাকবেন। সকল মুসলমানই এ বিষয়ে একমত এবং এ বিষয়
সম্পর্কে মুসলমানদের মধ্যে কোন মতভেদ দেখা দেয়নি। হযরত মূসা (আ)-এর মাতা এবং হযরত ঈসা
(আ)-এর মায়ের প্রতি ওহী অবতীর্ণ হওয়া তাদের নবী-রাসূল হওয়ার প্রমাণ বহন করে না। কারণ সে
ওহী শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ জানিয়ে দেওয়া।
দ্বিতীয়ত : নবী রাসূলগণ সত্যবাদী ও আমানতদার হবেন
সত্যবাদী ও আমানতদার হওয়া নবী-রাসূল হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত। আল্লাহ তা’আলা নবী
রাসূলগণকে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে হেফাজত করেন। যদি তাঁরা এরূপ না হতেন
তবে তাদেরকে মানুষের প্রতি প্রেরণ করা নিরর্থক হত। নবী-রাসূলগণকে সৎপথে প্রতিষ্ঠিত রাখা আল্লাহ
সত্যবাদী ও আমানতদার হওয়া নবী-রাসূল হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত। আল্লাহ তা’আলা নবী রাসূলগণকে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে হেফাজত করেন।
তা’আলার জন্য কঠিন কাজ নয়। নবী-রাসূলগণ মিথ্যা বলা থেকে পবিত্র। তাঁরা শরীআতের বিষয়বস্তুও
আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে প্রত্যাদেশকৃত বিধি-নিষেধ আমানতদার হিসেবে রক্ষা করেন। তাঁতে
কোন কিছুসংযোজন বা বিয়োজন করা থেকে তাঁরা সবসময় পবিত্র ছিলেন। তাঁরা ছিলেন সত্যবাদী ও
আমানতদার। ভুলক্রমে যদি কোন ছগীরা গুনাহ হয়ে যেত সাথে সাথে তাঁরা অনুশোচনা করতেন এবং
আল্লাহ তা’আলা তা মাফ করে দিতেন।
তৃতীয়ত : নবী-রাসূলগণ পাপমুক্ত হবেন
গুণাহর মধ্যে লিপ্ত হওয়া থেকে অবশ্যই পবিত্র থাকবেন। নবী-রাসূল হওয়ার জন্য এ শর্তপূর্ণ হওয়া
অপরিহার্য। নবী-রাসূলগণ কুফরী করা থেকে পবিত্র। নবুওয়াতের পূর্বে ও পরে তাঁদের দ্বারা কবীরা
গুণাহ সংঘটিত হতে পারে না। তাঁদের দ্বারা সগীরা গুনাহ সংঘটিত হবে কিনা তা নিয়ে মুসলিম
ধর্মতত্ত¡বিদগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতে’র মতে নবুওয়াত প্রাপ্তির পর
তাঁরা ছোট গুনাহও করতে পারবেন না।
চতুর্থত : পরিপূর্ণজ্ঞান এবং ধারণ ক্ষমতা সম্পন্নহওয়া
নবী-রাসূলগণের দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে এ শর্তটি থাকা অত্যাবশ্যক। তাঁদের জ্ঞান অপূর্ণ হওয়া অথবা
ধারণ করার মধ্য দুর্বলতা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা এ সকল অসম্পূর্ণগুণ নবী-রাসূল
হওয়াকে রহিত করে। নবুওয়াত লাভ মানুষের ইচ্ছাধীন নয়। মানুষ চেষ্টা করে নবুওয়াত লাভ করতে
পারে না। এটি আল্লাহ তা’আলার এখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাঁকে ইচ্ছা নবী-রাসূল-এর মর্যাদা দান করেন।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. পৃথিবীর প্রথম মানুষ হলেনক) হযরত মুহাম্মদ (স);
খ) হযরত আদম (আ);
গ) হযরত খিযির (আ);
ঘ) হযরত লুকমান (আ)।
২. নবী-রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য হচ্ছেক) ইবাদত করা;
খ) মানবজাতিকে হিদায়াত করা;
গ) আল-কুরআনের প্রচার করা;
ঘ) কাবা ঘর মেরামত করা।
৩. ওহী অবতীর্ণহওয়ার পদ্ধতি কয়টি?
ক) ৬টি;
খ) ৯টি;
গ) ৭টি;
ঘ) ৪টি।
৪. আল-কুরআনে কতজন নবী-রাসূলের কথা বর্ণিত আছে?
ক) ৩২ জন;
খ) ২৮ জন;
গ) ৩০ জন;
ঘ) ২৫ জন।
৫. নবী-রাসূলগণের জন্য সত্যবাদী হওয়াক) সুন্নাত;
খ) মুস্তাহাব;
গ) উত্তম;
ঘ) শর্ত।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. নবুওয়াত ও রিসালাত এর পরিচয় দিন।
২. নুযুলে ওহীর পদ্ধতিগুলো লিখুন।
৩. নবী-রাসূলগণের উপর ঈমান আনা কী জরুরি? আপনার মতামতের স্বপক্ষে যুক্তি দিন।
৪. নবী-রাসূলগণের গুণাবলী লিপিবদ্ধ করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. নবুওয়াত ও রিসালাত বলতে কী বুঝেন? নবী-রাসূলগণে বিশ্বাস করা কী অপরিহার্য? প্রমাণ দিন।
২. নবী-রাসূলগণের গুণাবলী আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]