‘মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণপ্রয়োজন নবী-রাসূল’ ব্যাখ্যা করুন।

নবী ও রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য
নবুওয়াত ও রিসালাত মানব জাতির জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ রহমত। পবিত্র
কুরআন ও হাদীস অধ্যয়নে এবং বুদ্ধিবৃত্তির নিরিখে পর্যালোচনা করলে নবী-রাসূল প্রেরণের কতিপয়
উদ্দেশ্য ও কারণ পরিলক্ষিত হয়। এখানে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হলমানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন
দুনিয়ায় জীবন যাপনের জন্য মানুষের যে সব জিনিসের প্রয়োজন হয় আল্লাহ তা’আলা নিজেই সে সবের
ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিসে মানুষের মঙ্গল ও অমঙ্গল হয়, সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির দিক নির্দেশনা
দানকারীর ব্যবস্থাও করেছেন। মানুষ কীভাবে জীবন যাপন করে নিশ্চিত ও চিরন্তন সাফল্য লাভ করতে
পারে, মানুষের সকল প্রয়োজনের চেয়ে এটি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় প্রয়োজন। আর আল্লাহ যুগে যুগে
নবী ও রাসূল পাঠিয়ে সবচেয়ে বড় এ প্রয়োজনটি পূরণের ব্যবস্থা করেছেন। এ মর্মে মহান আল্লাহর
বাণী-
وَ جَ عَلْنَاھُمْ أ َئِمَّ ةً یَھْدُونَ بِأ َمْ رِ نَا وَ أ َوْ حَ یْنَآ إِلَیْھِ مْ فِعْلَ ٱلْخَیْرَ اتِ
وَ إِقَامَ ٱلصَّلواَةِ وَ إِیتَآءَ ٱلزَّ كَواةِ وَ كَانُواْ لَنَا عَابِدِینَ
“আমি তাদের নেতা বানিয়েছিলাম, তারা আমার নির্দেশ অনুযায়ী মানুষকে পথ প্রদর্শন করতো। তাদের
প্রতি আমি ওহী প্রেরণ করেছিলাম, সৎকাজ করতে, সালাত আদায় করতে এবং যাকাত দিতে; তারা
আমারই ইবাদত করতো।” (সূরা আল-আম্বিয়া : ৭৩)
আল্লাহর ইবাদত ও দাসত্বের প্রতি আহবান
নবী ও রাসূলগণ প্রেরিত হয়েছেন দুনিয়ার মানুষকে তাদের ভুলে যাওয়া পাঠ স্মরণ করিয়ে দেওয়ার
জন্য। মানব জাতিকে এক ও একক মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তার
ঐকান্তিক দাসত্ব কবুলের জন্য এবং একমাত্র তাঁর ইবাদত করার দিকে আহবান জানানোর নিমিত্তেই
আল্লাহ তা’আলা নবী ও রাসূলদের প্রেরণ করেছেন। এ পর্যায়ে আল-কুরআনের ঘোষণা-
وَ مَ آ أ َرْ سَلْنَا مِ ن قَبْلِكَ مِ ن رَّ سُولٍ إِلاَّ نُو حِ يۤ إِلَ یْھِ أ َنَّھُ لاۤ إِلَـٰھَ إِلاَّ
أ َنَا ْ فَٱعْبُدُونِ
“আমি তোমার পূর্বেএমন কোন রাসূল প্রেরণ করিনি তার প্রতি এই ওহী ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত অন্য
কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত করো।” (সূরা আল আম্বিয়া : ২৫)
পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের ধারক-বাহক হিসেবে
আল্লাহ তা’আলার আদেশ-নিষেধ সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান জনগণের নিকট পৌছে দেওয়া নবীরাসূলদের প্রধান কর্তব্য। আর এ বিরাট লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তাঁরা প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহর বিধান
মানুষ কীভাবে জীবন- যাপন করে নিশ্চিত সাফল্য লাভ করতে পারে, যুগে যুগে নবী ও রাসূল পাঠিয়ে আল্লাহ সবচেয়ে বড় এ প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ তা’আলার আদেশনিষেধ সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান জনগণের নিকট পৌছে দেওয়া নবীরাসূলদের প্রধান কর্তব্য।
পৌছে দেওয়ার জন্য যে মাধ্যম ও বাহন প্রয়োজন তা অনস্বীকার্য। আল্লাহ নিজেই এই বাহন ও
মাধ্যমরূপে নবী-রাসূলদের প্রেরণের নিয়ম চালুকরেছেন। নবী-রাসূলগণ তাঁদের নবুওয়াত জীবনব্যাপী
এই কঠিন দায়িত্বপালন করেছেন। তাঁরা সে দায়িত্ব পালনের বিন্দুমাত্রও ত্রæটি করেননি। তাঁদের প্রতি
অর্পিত দায়িত্ব কখনই উপেক্ষা করেননি।
আল্লাহ তা’আলা মহানবী (স)-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন-
یَـۤأ َیُّھَا ٱلرَّ سُولُ بَلِّغْ مَ آ أ ُنزِ لَ إِلَیْكَ مِ ن رَّ بّ ِكَ وَ إِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَ ا
بَلَّغْتَ رِ سَالَتَھُ
“হে রাসূল! তোমার রব এর পক্ষ থেকে যা কিছু নাযিল হয়েছে, তা প্রচার করো। যদি তা না কর, তবে
তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না।” (সূরা আল-মায়িদা : ৬৭)
অনুসরণীয় আদর্শ নেতা রূপে
আল্লাহর নবী ও রাসূলগণ বিশ্বমানবের অনুসরণীয় নেতা, আদর্শও পথপ্রদর্শক। আল্লাহ তাঁদেরকে যেমন
উচ্চতর মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন, তেমনি তাঁরা হলেন বিবেক বুদ্ধির দিক দিয়ে পরিপূর্ণএবং আচার
আচরণে পবিত্রতম। কুরআন মাজীদে উল্লেখ আছে-
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَ سُولِ ٱللَّھِ أ ُسْوَ ةٌ حَ سَنَة ٌ لِّمَ ن كَانَ یَرْ جُو ٱللَّھَ
وَ ٱلْیَوْ مَ ٱلآخِ رَ وَ ذَكَرَ ٱللَّھَ كَثِیرا ً
“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য
রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আল-আহযাব : ২১)
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أ ُسْوَ ةٌ حَ سَنَة ٌ فِيۤ إِ بْرَ اھِیمَ وَ ٱلَّذِینَ مَ عَھُ
“তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আল-মুমতাহানা৪)।
আল্লাহ তা’আলা এই আদর্শহিসেবেই তাদের অনুসরণ করে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন।
أ ُوْ لَـٰ ئِكَ ٱلَّذِینَ ھَدَى ٱللَّھُ فَبِھُدَاھُمُ ٱقْتَدِهْ
“তাদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের পথের অনুসরণ করো।” (সূরা
আল-আনআম : ৯০)।
সত্যের আলোকোজ্জ্বল পথের সন্ধানদাতা হিসেবে
পথভোলা মানব জাতিকে সত্যের আলোকোজ্জ্বল পথের বা সিরাতুল মুস্তাকীমের দিকে নিয়ে আসা, সে
পথে চলতে সাহায্য করা এবং সে পথের লক্ষ্যস্থলে পরিপূর্ণভাবে পৌঁছ দেওয়ার জন্য নবী রাসূলগণ
প্রেরিত হয়েছেন। তাঁরা মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচয় করান ও তাঁর বিধান জানিয়ে দেন। সেগুলো
বাস্তবভাবে পালনের মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়ার পথের সন্ধান দেন, পথের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি
সন্ধিক্ষণে মানুষকে বিভ্রান্তিথেকে রক্ষা করে নির্ভুল পথের দিকে চালিত করেন। এ কাজ নির্ভুলভাবে
করতে পারার জন্যই আল্লাহ তা’আলা ওহীর মাধ্যমে নবী-রাসূলগণের উপর কিতাব নাযিল করেন।
আল-কুরআনে ঘোষিত হয়েছে-
الۤ ر كِتَابٌ أ َنزَ لْنَاهُ إِلَیْكَ لِتُخْ رِ جَ ٱلنَّاسَ مِ نَ ٱلظُّل ُمَ اتِ إِلَى ٱلنُّورِ
بِإ ِذْنِ رَ بّ ِھِ مْ إِلَىٰ صِ رَ اطِ ٱلْعَزِ یزِ ٱلْحَمِ یدِ
“আলিফ-লাম-রা, এই কিতাব, এটি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানবজাতিকে তাদের
প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে বের করে আনতে পার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, তাঁর পথে যিনি পথভোলা মানব জাতিকে সত্যের আলোকোজ্জ্বল
পথের দিকে নিয়ে আসা এবং সে পথে লক্ষ্যস্থলে
পরিপূর্ণভাবে পৌঁছ দেওয়ার জন্য নবী রাসুলগণ প্রেরিত হয়েছেন।
পরাক্রমশালী প্রশংসার্হ।” (সূরা ইবরাহীম : ১)
এ আয়াতটিতে আল্লাহর কিতাব নাযিল হওয়ার এবং রাসূল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে বলা
হয়েছে। আর তা হচ্ছে, মানুষকে কুফর ও শিরকের পুঞ্জীভূত অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে
নিয়ে আসা এবং মানুষকে আল্লাহর পথের সন্ধান দেওয়া, আল্লাহর পথে চালিত করে শেষ মনযিল তথা
আল্লাহকে পাওয়া পর্যন্তসঙ্গে নিয়ে চলা। আল্লাহ বলেন,
قَدْ جَ آءَكُمْ رَ سُول ُنَا یُبَیّ ِنُ لَكُمْ كَثِیرا ً مِّمَّا كُنْتُمْ تُخْ فُونَ مِ نَ ٱلْكِتَابِ
وَ یَعْفُوا ْ عَن كَثِیرٍ قَدْ جَآءَكُمْ مِّ نَ ٱللَّھِ نُورٌ وَ كِتَابٌ مُّب ِینٌ - یَھْدِى بِھِ
ٱللَّھُ مَ نِ ٱتَّبَعَ رِ ضْوَ انَھُ سُبُلَ ٱلسَّلاَمِ وَ یُخْ رِ جُھُمْ مِّ نَ ٱلظُّل ُمَ اتِ إ ِلَى
ٱلنُّورِ ب ِإ ِذْنِھِ وَ یَھْدِیھِ مْ إِلَىٰ صِ رَ اطٍ مُّسْتَقِیمٍ
“আমার রাসূল তোমাদের কাছে এসেছে। তোমরা কিতাবের যা কিছু গোপন করতে সে তার অনেক
তোমাদের নিকট প্রকাশ করে এবং অনেক উপেক্ষা করে থাকে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়,
এর দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর
দিকে নিয়ে আসেন এবং তাদের সরল পথে পরিচালিত করেন।” (সূরা আল-মায়িদা : ১৫-১৬)
মানব ও মানবাত্মাকে পরিশুদ্ধ করা
আল্লাহ প্রদত্ত জীবন-বিধানের আলোকে মানব ও মানবাত্মাকে এবং সমাজ সভ্যতাকে শিক্ষা- প্রশিক্ষণের
মাধ্যমে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পরিশুদ্ধ ও সংশোধন কল্পে মানবের মধ্যে উত্তম ও সৎগুণাবলীর বিকাশ
সাধন এবং নির্মল সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার্থে নবী ও রাসূলগণ এ পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ
তা’আলা এ মর্মে বলেন:
ل َقَدْ مَنَّ ٱلل َّ ھُ عَل َى ٱلْمُؤمِنِینَ إ ِذْ بَع َثَ فِیھِمْ رَ سُولا ً مِّنْ أ َنْفُسِھِمْ یَتْل ُوا ْ عَل َیْھِمْ آیَاتِھِ
وَ یُزَ كِّیھِمْ وَ یُع َل ِّمُھُمُ ٱلْكِتَابَ وَ ٱلْحِ كْمَة َ وَ إ ِن كَانُوا ْ مِنْ قَبْلُ ل َفِى ضَلالٍ مُّب ِینٍ
“আল্লাহ অবশ্যই মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য হতে তাদের কাছে
রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে তাঁর আয়াতসমূহ তাদের কাছে পাঠ করে, তাদের পরিশোধন করে এবং
কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।” (সূরা আলে-ইমরান : ১৬৪)
মানবকে নৈতিকতাবাদী হিসেবে তৈরি করা
নবীগণ মানুষকে ধ্বংসশীল বৈষয়িক জীবন থেকে পরকালীন স্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুত করেন।
বস্তুবাদের পরিবর্তেতাকে নৈতিকতাবাদী বানানোর মিশন ও কর্তব্য নিয়েই নবী-রাসূলদের আগমন।
আল-কুরআনের নির্দেশ-
وَ مَ ا ھَـٰذِهِ ٱلْحَ یَاةُ ٱلدُّنْیَآ إِلاَّ لَھْوٌ وَ لَعِ بٌ وَ إِنَّ ٱلدَّارَ ٱلآخِ رَ ةَ لَھِ ىَ
ٱلْحَ یَوَ انُ لَوْ كَانُواْ یَعْلَمُ ونَ
“এ পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া কিছু নয়। পারলৌকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন, যদি
তারা জনতো!” (সূরা আল-আনকাবুত : ৬৪)
পরকালীন জীবন সম্পর্কেঅবহিত করা
মানুষকে পরকালের কথা জানিয়ে দেওয়া। পরকালে পুনরুত্থানের কথা বলে তাদের উপদেশ প্রদান।
মৃত্যুর পর মানুষকে যে অনিবার্যরূপে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে সে বিষয়ে তাদেরকে জানিয়ে
দিয়ে সতর্ক করা। আর কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে মানব ও জিন জাতি যে কঠিন অবস্থা এবং জবাবদিহির
মুখোমুখি হবে সে বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়ার লক্ষ্যে নবী ও রাসূলগণ প্রেরিত হয়েছেন।
আল-কুরআনে সে মর্মে বর্ণিত হয়েছে-
أ َلَمْ یَأ ْتِكُمْ رُ سُلٌ مِّ نْكُمْ یَقُصُّونَ عَلَیْكُمْ آیَاتِى وَ یُنذِ رُ ونَكُمْ لِقَآءَ আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধানের আলোকে মানব ও মানবাত্মাকে এবং সমাজ সভ্যতাকে শিক্ষাপ্রশিক্ষণের মাধ্যমে আদর্শ সমাজ-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার্থে নবী-রাসূলগণ এ পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন।
یَوْ مِ كُمْ ھَـٰذَا
“তোমাদের নিকট কি তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ আসেনি, যারা আমার নিদর্শন তোমাদের নিকট
বর্ণনা করত এবং তোমাদেরকে এ দিনের সম্মুখীন হওয়া সম্পর্কে সতর্ক করতো?” (সূরা আল-আন’আম
: ১৩০)
সাক্ষী হিসেবে
কিয়ামতের দিন যখন মানুষের সম্মুখে তাদের আমলের হিসাবের ফর্দ তুলে ধরা হবে, তখন তারা
আতংকে এবং পরবর্তী পরিণামের চিন্তায় অসৎ আমল ও পাপাচারকে অস্বীকার করে বলবে, আমরা তো
এসব কাজ করিনি। এগুলো আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মাত্র। এহেন মিথ্যা দাবি যেন তারা সেদিন
উত্থাপন করতে না পারে, তাদের আমলের সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ তা’আলা নবী-রাসূলদের প্রেরণ
করেছেন। আল-কুআনের বাণী-
إِنَّآ أ َرْ سَلْنَآ إِلَیْكُمْ رَ سُولاً شَاھِدا ً عَلَیْكُمْ كَمَ آ أ َرْ سَلْنَآ إِلَىٰ فِرْ عَوْ نَ
رَ سُولاً
“নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট রাসূলকে সাক্ষী হিসেবে প্রেরণ করেছি, যেমনি ফিরাঊনের নিকট
পাঠিয়েছিলাম একজন রাসূল।” (সূরা আল-মুযযাম্মিল : ১৫)
অভিযোগ-অজুহাত দূরীকরণ
নবী ও রাসূলগণ মানুষের প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে তাদের হিদায়েত করার দায়িত্ব নিয়েই প্রেরিত হয়েছেন
যাতে কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে মানুষ এ মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন না করতে পারে যে, হে আল্লাহ
তোমার বিষয়ে, তোমার আইন-কানুন, আহকাম, শরীয়াতের কোন বিষয়েই তো আমরা জানতে
পারিনি। আমরা এসব বিষয়ে জানলে অবশ্যই তোমার অনুগত্য করতাম। আল কুরআনের ঘোষণাও
তাই-
رُّ سُلاً مُّ بَشِّ رِ ینَ وَ مُنذِرِ ینَ لِئَلاَّ یَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى ٱللَّھِ حُجَّة ٌ بَعْدَ
ٱلرُّ سُلِ
“আল্লাহ নবী-রাসূলদের প্রেরণ করেছেন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসাবে; যাতে রাসূলদেরকে
প্রেরণের পর মানুষের পক্ষে আল্লাহর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকে।” (সূরা আন-নিসা : ১৬৫)।
আইন প্রণেতা, ব্যাখ্যাদাতা ও রূপকার হিসেবে
নবী ও রাসূলগণই মানব সমাজে আইন প্রণয়ন করেন, আল্লাহর আইনের ব্যাখ্যা দেন এবং প্রয়োগ
করেন। কারণ মানব রচিত আইন সাময়িক শান্তি-সুখ ও স্থিতি আনতে সক্ষম হলেও চিরস্থায়ী, অনন্ত
সুখ-সমৃদ্ধি ও স্থিতি আনতে অক্ষম। যেহেতুমানুষ রচিত আইন দূরদর্শী নয়, তাই আল্লাহর দূরদর্শী
আইন মানব সমাজে প্রয়োগ, প্রণয়নের জন্য নবী ও রাসূলদের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে
তাদের প্রেরণ আবশ্যক ছিল। তাই কুরআনে বলা হয়েছে-
ٱلَّذِینَ یَتَّبِعُونَ ٱلرَّ سُولَ ٱلنَّبِىَّ ٱلأ ُمِّ ىَّ ٱلَّذِى یَجِ دُونَھُ مَ كْتُوبا ً
عِندَھُمْ فِى ٱلتَّوْ رَ اةِ وَ ٱلإِ نْجِ یلِ یَأ ْمُرُ ھُم بِٱلْمَ عْرُ وفِ وَ یَنْھَاھُمْ عَنِ
ٱلْمُنْكَرِ
“যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উম্মী নবীর, যার উল্লেখ তাওরাত ও ইনজীল, যা তাদের নিকট আছে
তাতে লেখা পায়, যে তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎ কাজে বাঁধা দেয়।” (সূরা আল-আরাফ : ১৫৭) নবী ও রাসূলগণই মানব
সমাজে আইন প্রণয়ন করেন, আল্লাহর আইনের ব্যাখ্যা দেন এবং প্রয়োগ করেন।
বাস্তব প্রশিক্ষণদান
কেবল তত্ত¡ও তথ্যগত জ্ঞান থাকলেই খোদায়ী বিধান মেনে চলা সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না। সে জন্য
প্রয়োজন বাস্তব ও যথাযথ প্রশিক্ষণ। নবী ও রাসূলগণ খোদায়ী বিধান নিজেরা যথাযথরূপে অনুশীলন ও
অনুসরণের মাধ্যমে মানুষকে সে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ সম্পর্কেকুরআন মাজীদে বলা হয়েছে-
كَمَ آ أ َرْ سَلْنَا فِیكُمْ رَ سُولاً مِّ نْكُمْ یَتْلُواْ عَلَیْكُمْ آیَاتِنَا وَ یُزَ كِّ یكُمْ
وَ یُعَلِّمُكُمُ ٱلْكِتَابَ وَ ٱلْحِ كْمَ ةَ وَ یُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُواْ تَعْلَمُونَ
“যেমন করে আমি তোমাদের মধ্য থেকে রাসূল পাঠিয়েছি, যে আমার আয়াতসমূহ তোমাদের নিকট পাঠ
করে, তোমাদের পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয় এবং তোমরা যা জানতে না তা শিক্ষা
দেয়।” (সূরা আল-বাকারা : ১৫১)
ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা
যে সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ নেই, সে সমাজে সুখ-শান্তিআসতে পারে না। তাই মানব সমাজকে সুখশান্তিসমৃদ্ধ করে বসবাস উপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মহান আল্লাহ নবী ও রাসূলদের
পাঠিয়েছেন। আর সে লক্ষ্যেই তাদেরকে আসমানী কিতাব দান করেছেন যার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং
যার সাম্য নীতির অনুশীলন ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। আল্লাহ বলেন-
لَقَدْ أ َرْ سَلْنَا رُ سُلَنَا بِٱلْبَیّ ِنَاتِ وَ أ َنزَ لْنَا مَ عَھُمُ ٱلْكِتَابَ وَ ٱلْمِ یزَ انَ
لِیَقُومَ ٱلنَّاسُ بِٱلْقِسْطِ وَ أ َنزْ لْنَا ٱلْحَ دِیدَ فِیھِ بَأ ْسٌ شَدِیدٌ وَ مَ نَافِعُ
لِلنَّاسِ
“নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদের প্রমাণ সহকারে পাঠিয়েছি, আর তাদের নিকট কিতাব ও ন্যায়নীতি
দিয়েছি যাতে মানুষ সুবিচার করে। আমি লৌহও দিয়েছি, যাতে রয়েছে প্রচÐ শক্তি ও রয়েছে মানুষের
জন্য বহুবিধ কল্যাণ।” (সূরা আল-হাদীদ : ২৫)
সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ
মানব সমাজকে সংস্কার করার লক্ষ্য নিয়েই নবী-রাসূলদের আগমন। আর ব্যাপকভাবে, এ মিশন সাধিত
হবে যখন মানব সমাজের পরতে পরতে আমর বিল-মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকারের গুণাবলী (সৎ
কাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধের) প্রবেশ করবে। তাই নবী-রাসূলদের প্রধান দায়িত্ব
হল, আমর বিল-মারুফ ওয়া নাহি আনিল-মুনকার সমাজের রন্ধ্রেরন্ধ্রেপৌঁছিয়ে দেওয়া।
আল-কুরআনের বাণী-
وَ لْتَكُنْ مِّ نْكُمْ أ ُمَّ ة ٌ یَدْعُونَ إِلَى ٱلْخَیْرِ وَ یَأ ْمُرُ ونَ بِٱلْمَ عْرُ وفِ
وَ یَنْھَ وْ نَ عَنِ ٱلْمُنْكَرِ
“নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে এমন একটি স¤প্রদায় হতে হবে, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান
জানাবে, সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে।” (সূরা আলে-ইমরান :১০৪)
বস্তুত নবী ও রাসূলগণকে আল্লাহ তা’আলা অতীব দয়াপরবশ হয়ে রহমতস্বরূপ এজন্য প্রেরণ করেছেন,
যাতে তাঁরা মানব জাতিকে ভুলে যাওয়া পাঠ স্মরণ করিয়ে দেন এবং তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত
করার সঠিক পথ বাতলে দেন। আর যাবতীয় শিরক ও জাহেলী ধারণা রহিত করেন। সাথে সাথে চির
সত্য-সুন্দর, শান্তিও মুক্তির পথ ইসলামের দিকে আহবান জানান। আল-কুরআনের ঘোষণা-
لَقَدْ مَنَّ ٱللَّھُ عَلَى ٱلْمُؤمِ نِینَ إِذْ بَعَثَ فِیھِ مْ رَ سُولاً مِّ نْ أ َنْفُسِ ھِ مْ یَتْل ُواْ عَلَیْھِ مْ آیَاتِھِ وَ یُزَ كِّ یھِ مْ وَ یُعَلِّمُھُمُ ٱلْكِتَابَ وَ ٱلْحِ كْمَ ةَ وَ إِن كَانُواْ مِ نْ قَبْلُ لَفِى ضَلالٍ مُّ بِینٍ মানব সমাজকে সংস্কার করার লক্ষ্য নিয়েই নবী ও
রাসূলগণের আগমন। আর ব্যাপকভাবে এ মিশন
সাধিত হবে যখন মানব সমাজের পরতে পরতে আমর বিল-মারুফ ওয়া নাহি
আনিল মুনকারের গুণাবলী (সৎ কাজের আদেশ এবং
অসৎকাজ থেকে নিষেধের) প্রবেশ করবে।
“আল্লাহ অবশ্যই মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য হতে তাদের কাছে
রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে তাঁর আয়াতসমূহ তাদের কাছে পাঠ করে, তাদের পরিশোধন করে এবং
কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।” (সূরা আলে-ইমরান : ১৬৪)
সত্য দীনকে সকল দ্বীনের বিজয়ী করা
নবী ও রাসূলগণের প্রেরিত হবার অন্যতম কারণ ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর মনোনীত দীন ও জীবনবিধানকে অন্য সকল ধর্ম, মতাদর্শও ইজমের উপর প্রাধান্য, বিজয়ী ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করার জন্য। আলকুরআনের ঘোষণা-
ھُوَ ٱلَّ ذِيۤ أ َرْ سَلَ رَ سُولَھُ بِٱلْھُدَىٰ وَ دِینِ ٱلْحَ قّ ِ لِیُظْھِ رَ هُ عَلَى
ٱلدِّینِ كُلِّھِ وَ لَوْ كَرِ هَ ٱلْمُشْرِ كُونَ
“মুশরিকরা অপ্রীতিকর মনে করলেও অপর সমস্তদীনের উপর জয়যুক্ত করবার জন্য তিনিই পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ তাঁর রাসূল প্রেরণ করেছেন।” (সূরা আত-তাওবা : ৩৩)
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. নবুওয়াত ও রিসালাত মানবজাতির জন্য
ক) বোঝা;
খ) নিয়ামত ও রহমত;
গ) নিয়ামত ও কঠোরতা;
ঘ) কল্যাণকর নয়।
২. নবী ও রাসূলগণ হলেনক) আংশিক জীবন -বিধানের ধারক বাহক;
খ) জীবন বিধান রচনাকারী;
গ) পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের ধারক ও বাহক;
ঘ) বস্তুবাদী জীবন ব্যবস্থার দিকে আহবানকারী।
৩. ন্যায় ও ইনসাফের মানদÐ হচ্ছেক) মানব রচিত আইন;
খ) ব্রিটিশ আইন;
গ) জাতিসংঘ সনদ;
ঘ) আল্লাহ প্রদত্ত আইন।
৪. আমর বিল-মারুফ অর্থ কী?
ক) অসৎ কাজে বাঁধা দান;
খ) সৎকাজের আদেশ;
গ) সৎপথে চলা;
ঘ) সৎ চিন্তা করা।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. ‘মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণপ্রয়োজন নবী-রাসূল’ ব্যাখ্যা করুন।
২. ‘নবী ও রাসূলগণ পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের ধারক বাহক ছিলেন’ বুঝিয়ে লিখুন।
৩. ‘সাক্ষী হিসেবে নবী ও রাসূলগণ প্রেরিত হয়েছেন’ দলীলসহ বুঝিয়ে লিখুন।
৪. ‘নবী ও রাসূলগণের দায়িত্ব হচ্ছে ‘সৎকাজের আদেশ প্রদান ও অসৎ কাজ থেকে মানুষকে বিরত
রাখা’ আলোচনা করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. নবী-রাসূল প্রেরণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দলীলসহ আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]