নবী ও রাসূলের প্রতি ঈমান ও আনুগত্যের গুরুত্ব আলোচনা করুন।

নবী ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান ও আনুগত্য
তাওহীদের পর ইসলামের দ্বিতীয় মৌল বিশ্বাস হচ্ছে, নবুওয়াত-এর প্রতি (রিসালাত) বিশ্বাস। যেরূপ
প্রত্যয়ের ক্ষেত্রে তাওহীদ হচ্ছে প্রকৃত দীন, তেমনি আনুগত্যের ক্ষেত্রেও নবুওয়াত হচ্ছে প্রকৃত দীন।
নবুওয়াত (রিসালাত)-এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, পয়গাম্বরি বা বার্তাবহন। যে ব্যক্তি একজনের বাণী
অন্যজনের কাছে নিয়ে পৌছায়, তাকে বলা হয় নবী (রাসূল) বা বাণী বাহক।
ইসলামী পরিভাষায় নবী বলা হয় তাঁকে, যিনি আল্লাহর বাণী তাঁর বান্দাদের কাছে পৌঁছান এবং আল্লাহর
নির্দেশ অনুযায়ী তাদেরকে সৎপথে পরিচালনা করেন। এ কারণেই কুরআনে নবী বা রাসূলের জন্য
‘পথপ্রদর্শক’ শব্দটিও ব্যবহার করা হয়েছে অর্থাৎ তিনি শুধু বাণীই পৌঁছান না, লোকদেরকে সহজ সরল
পথেও পরিচালনা করেন।
নবীর প্রতি ঈমানই গোটা মানব জাতিকে একটি বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। নবীগণকে
অলৌকিক জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা অলঙ্কৃত করা হয়েছে। তাদের ধারণা, শিক্ষা ও কর্মপন্থায় মতানৈক্যের
সৃষ্টি হওয়া মোটেই সম্ভবপর নয়। এ কারণেই কুরআন বলে, সমস্তনবী একই দলভুক্ত, সবার শিক্ষা ও
দীন মূলত একই। একই সিরাতে মুস্তাকীমের দিকে সবাই আহবান জানিয়েছেন। আর মুমিনের জন্য
সবার প্রতি ঈমান আনাই আবশ্যক। যে ব্যক্তি নবীগণের মধ্য থেকে কোন একজন নবীকেও অস্বীকার
করবে, সে সকল নবীর প্রতি অস্বীকৃতির অপরাধে অপরাধী সাব্যস্তহবে এবং তার অন্তরে ঈমানের
চিহ্নমাত্র বাকী থাকবে না। কারণ যে শিক্ষাকে সে অস্বীকার করল তা শুধু একজন নবীরই শিক্ষা নয় বরং
তা সমস্তনবীরই শিক্ষা।
নবীর আনুগত্য ও অনুসরণ
নবুওয়াতের প্রতি বিশ্বাসের অনিবার্যদাবি হচ্ছে, শুধুঈমান ও ইবাদাতের ব্যাপারেই নয়, জীবনের
সকল ক্ষেত্রে নবী-রাসূলগণের অনুসৃত পন্থার অনুসরণ করতে হবে। কারণ আল্লাহ তা’আলার ‘জ্ঞান’ ও
অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা তাঁদেরকে সম্মানিত করেছেন। তদ্বারা ভ্রান্ত ও যথার্থ পন্থাগুলোর পার্থক্য তাঁরা
সুনিশ্চিতভাবেই জানতে পারতেন। এ কারণেই তাঁরা যা কিছু অর্জন বা গ্রহণ করতেন এবং যা কিছু
নির্দেশ দিতেন, তা সবই করতেন আল্লাহ তা’আলার ইঙ্গিতে। সাধারণ মানুষ বছরের পর বছর, এমন
কি যুগের পর যুগ অভিজ্ঞতা লাভ করেও ভ্রান্তিও যথার্থের পার্থক্য সৃষ্টিতে পুরোপুরি সফলকাম হতে
পারতো না। আর কিছুটা সাফল্য অর্জিত হলেও তা অকাট্য ও দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত
হতো না। বরং তা নিছক আন্দাজ অনুমান ও অনুসন্ধানের ওপর নির্ভরশীল হতো, তাতে ভ্রান্তির আশঙ্কা
অবশ্যই থেকে যেতো। পক্ষান্তরে রাসূলগণ জীবনের ক্রিয়াকাÐে যে পন্থা অবলম্বন করেছেন এবং যে পথে
চলবার শিক্ষা দিয়েছেন, তা করেছিলেন ওহীরজ্ঞানের ভিত্তিতে। এ জন্যই তাতে ভ্রান্তির কোন সম্ভাবনা
নেই। আর এ কারণেই কুরআন মাজীদ বারবার নবী-রাসূলগণের আনুগত্য এবং তাদের অনুসরণ করার
নির্দেশ দিয়েছে। তাদের অনুসৃত পন্থাকে শরীআত, সোজাপথ ও সিরাতে মুস্তাকীম বলে অভিহিত
করেছে। অন্যান্য মানুষের আনুগত্য বর্জন করে কেবল নবীদেরই আনুগত্য করার এবং তাঁদেরই পদাঙ্ক
ইসলামী পরিভাষায় নববলা হয় তাঁকে, যিনি আল্লাহর বাণী তাঁর
বান্দাদের কাছে পৌঁছাএবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী তাদেরকে সৎপরিচালনা করেন।
অনুসরণের তাকিদ দিয়েছে। কারণ তাঁদের আনুগত্য হচ্ছে ঠিক আল্লাহ তা’আলারই আনুগত্য এবং
তাঁদের অনুসরণ হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছার অনুসরণ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَ مَ آ أ َرْ سَلْنَا مِ ن رَّ سُولٍ أِلاَّ لِیُطَاعَ بِإ ِذْنِ ٱللَّھِ
“আমি রাসূল এ উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তার আনুগত্য করা হবে।” (সূরা
আন-নিসা : ৬৪)
مَّنْ یُطِ عِ ٱلرَّ سُولَ فَقَدْ أ َطَاعَ ٱللَّھَ
“কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করলো।” (সূরা আন-নিসা : ৮০)
ق ُلْ إِن كُنتُمْ تُحِ بُّونَ ٱللَّھَ فَٱتَّبِعُونِى یُحْ بِبْكُمُ ٱللَّھُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ
ذ ُنُوبَكُمْ وَ ٱللَّھُ غَفُورٌ رَّ حِ یمٌ . ق ُلْ أ َطِ یعُواْ ٱللَّھَ وَ ٱلرَّ سُولَ فإ ِن
تَوَ لَّوْ اْ فَإ ِنَّ ٱللَّھَ لاَ یُحِ بُّ ٱلْكَ افِرِ ینَ
“বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন
এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ অত্যন্তক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। বল, আল্লাহ ও
রাসূলের অনুগত হও, যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে জেনে রাখ আল্লাহ তো কাফিরদের পছন্দ
করেন না।” (সূরা আলে-ইমরান : ৩১-৩২)
یٰ أ َیُّھَا ٱلَّذِینَ آمَ نُ وۤ اْ أ َطِ یعُواْ ٱللَّھَ وَ رَ سُولَھُ وَ لاَ تَوَ لَّوْ ا عَنْھُ وَ أ َنْتُمْ
تَسْمَ عُونَ . وَ لاَ تَكُونُواْ كَالَّذِینَ قَال ُوا سَمِ عْنَا وَ ھُمْ لاَ یَسْمَ عُونَ .
إِنَّ شَرَّ ٱلدَّوَ ابّ ِ عِندَ ٱللَّھِ ٱلصُّمُّ ٱلْبُكْمُ ٱلَّذِینَ لاَ یَعْقِل ُونَ
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। আর তোমরা যখন তাঁর কথা শুন তখন তা
থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বলে, আমরা শোনলাম, অথচ তারা
কিছুই শুনে না। আল্লাহর কাছে তারাই হচ্ছে নিকৃষ্টতম জীব, সেই বধির ও মূক যারা কিছুই বোঝে
না।” (সূরা আল-আনফাল : ২০-২২)
وَ مَ ا كَانَ لِمُ ؤْ مِ نٍ وَ لاَ مُؤْ مِ نَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّھُ وَ رَ سُول ُھُ أ َمْ را ً أ َن
یَكُونَ لَھُمُ ٱلْخِ یَرَ ةُ مِ نْ أ َمْ رِ ھِمْ وَ مَ ن یَعْصِ ٱللَّھَ وَ رَ سُولَھُ فَقَدْ
ضَلَّ ضَلاَلاً مُّ بِینا ً
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা কোন মুমিন নারীর সে
বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না। কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সে তো
স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।” (সূরা আল-আহযাব : ৩৬)
এরূপ আরও অনেক আয়াতে নবীর আনুগত্য ও অনুসরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। উপরন্তু
সূরা আহযাবে এ বিষয়টি অত্যন্তসুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, যারা আখিরাতে সাফল্য এবং আল্লাহর কাছ
থেকে পুরস্কার আশা করে, রাসূলের জীবন হচ্ছে তাদের জন্য এক অনুকরণযোগ্য আদর্শ।
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَ سُولِ ٱللَّھِ أ ُسْوَ ةٌ حَ سَنَةٌ
“আল্লাহর রাসূলের জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ”। (সূরা আল-আহযাব : ২১)
নিরংকুশ আনুগত্য
আল্লাহর পরে নিরংকুশ আনুগত্য একমাত্র রাসূল (স)-এর জন্য, অন্য কারো জন্য নয়। কথায়, কাজে ও
চিন্তায় রাসূল (স)-এর আনুগত্যের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
কার্যত: রাসূল (স)-এর নাফরমানি করা তো দূরের কথা, মনে মনেও যদি নাফরমানীর ইচ্ছা পোষণ করা
হয় তাহলেও নিশ্চিতভাবে ঈমান চলে যায়। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
فَلاَ وَ رَ بّ ِكَ لاَ یُؤْ مِ نُونَ حَ تَّىٰ یُحَ كِّ مُوكَ فِیمَ ا شَجَ رَ بَیْنَھُمْ ث ُمَّ لاَ
یَجِ دُواْ فِيۤ أ َنْفُسِ ھِ مْ حَ رَ جا ً مِّ مَّا قَضَ یْتَ وَ یُسَلِّمُواْ تَسْلِیما ً
“কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ততারা তাদের
নিজেদের পারস্পরিক মতবিরোধের বিচার-ভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অত:পর তোমার সিদ্ধান্ত
সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্ত:করণে তা মেনে নেয়।” (সূরা আন-নিসা : ৬৫)
রাসূলের অবাধ্যতা মানুষের জীবনে এনে দেয় চিরন্তন ক্ষতি ও ব্যর্থতা। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
یَوْ مَ ئِذٍ یَوَ دُّ ٱلَّذِینَ كَفَرُ واْ وَ عَصَوُ اْ ٱلرَّ سُولَ لَوْ تُسَوَّ ىٰ بِھِ مُ
ٱلأ َرْ ضُ
“যারা কুফরী করছে এবং রাসূলের অবাধ্য হয়েছে তারা সেদিন কামনা করবে, যদি তারা মাটির সাথে
মিশে যেত।” (সূরা আন-নিসা : ৪২)
নবী মানুষকে তাঁর দাসে পরিণত করেন না
নবীর আনুগত্য এবং তাঁর নির্দেশের প্রতি পূর্ণআত্মসমর্পণের উপর দীন ও ঈমান নির্ভরশীল। হিদায়াত
নির্ভর করে নবীর পুঙ্খানুপুঙ্খ আনুগত্যের উপর। মানুষ অথবা ব্যক্তি হিসেবে এ আনুগত্য যে নবীর
প্রাপ্য নয় তা পূর্বেই বলা হয়েছে। মানুষকে নিজের দাস ও গোলাম বানাবার জন্য নবীগণ প্রেরিত হননি।
বরং মানুষকে আল্লাহর অনুগত করে দেওয়ার জন্যই তারা প্রেরিত হয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ
তা’আলা বলেন-
مَ ا كَانَ لِبَشَرٍ أ َن یُؤْ تِیَ ھُ ٱللَّھُ ٱلْكِتَابَ وَ ٱلْحُكْمَ وَ ٱلنُّبُوَّ ةَ ث ُمَّ یَقُولَ
لِلنَّاسِ كُونُواْ عِبَادا ً لِّى مِ نْ دُونِ ٱللَّھِ وَ لَـٰ كِ نْ كُونُواْ رَ بَّانِیّ ِینَ
“কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে, আল্লাহর
পরিবর্তে তোমরা আমার দাস হয়ে যাও, এ কাজ তার জন্য সংগত নয় বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী
হয়ে যাও।” (সূরা আলে-ইমরান : ৭৯)
নবী (স) এজন্য আগমন করেননি যে, তিনি মানুষকে তাঁর ব্যক্তিগত কামনা-বাসনার আনুগত্য করতে
বাধ্য করবেন। নিজের মহত্ত¡ ও বুজুর্গির প্রভাব তাদের উপর বিস্তার করবেন এবং তাঁর ব্যক্তি ক্ষমতার
যাঁতাকলে তাদেরকে পিষ্ট করে এমন অসহায় করে ফেলবেন যে, তারা তার মতামতের মোকাবিলায়
নিজেদের মতামত পোষণ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। এতো সেই গায়রুল্লাহর বন্দেগীই হল যার
মূলোৎপাটনের জন্যই নবীর আগমন হয়েছে এ পৃথিবীতে। মানুষের কাঁধে মানুষের দাসত্বের যত রকম
শৃঙ্খল চাপানো হয়েছে, তা সব ছিন্ন করার জন্যই তো নবীর আগমন। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَ یَضَعُ عَنْھُمْ إِصْ رَ ھُمْ وَ ٱلأ َغْلاَلَ ٱلَّتِى كَانَتْ عَلَیْھِ مْ
“এবং সে মুক্ত করে তাদেরকে তাদের গুরুভার হতে যা তাদের উপর ছিলো।” (সূরা আল-আরাফ :
১৫৭)
মানুষ মানুষের অধিকার ও কর্তব্য নির্ধারণ এবং বৈধ ও অবৈধের মনগড়া সীমারেখা নির্ধারণ করার যে
ক্ষমতা ও এখতিয়ার করায়ত্ব করে রেখেছিল, তা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য নবীগণের আবির্ভাব হয়। আল্লাহ
তা’আলা বলেন:
وَ لاَ تَقُول ُواْ لِمَ ا تَصِ فُ أ َلْسِنَتُكُمُ ٱلْكَذِبَ ھَـٰذَا حَ لاَلٌ وَ ھَ ـٰذَا حَ رَ امٌ
“তোমাদের জিহবা মিথ্যারোপ করে বলে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করার জন্য তোমরা বলো না, এটা
হালাল এবং এটা হারাম।” (সূরা আন-নাহল : ১১৬)
মানুষের Ðকুম ও সিদ্ধান্তকে মাথা পেতে নেওয়ার মত যে হীনতা মানুষকে পেয়ে বসেছিল তা থেকে মুক্তি
দেওয়ার জন্যই নবুওয়াতের আবির্ভাব ঘটেছিল। কুরআন এ কথাই মানুকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে:
وَ لاَ یَتَّخِ ذَ بَعْضُنَا بَعْضا ً أ َرْ بَابا ً مِّ ن دُونِ ٱللَّھِ
“আমাদের কেউ কাউকে যেন আল্লাহ ব্যতীত রব হিসেবে গ্রহণ না করে।” (সূরা আলে-ইমরান : ৬৪)
সুতরাং একজন নবী মানুষের কাঁধের ওপর থেকে অপরের গোলামীর শিকল ছিন্ন করে তাদেরকে নিজের
গোলামীর শিকল দিয়ে নতুন করে বাধবেন, এটা কি করে বৈধ হতে পারে? তিনি হালাল-হারাম
নির্ধারণের অধিকার অন্য সবার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবেন এবং পরক্ষণে নিজেই তা দখল করে বসবেন
এবং ক্ষমতা ও আধিপত্যের আসন থেকে অন্য সবাইকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই গিয়ে তার ওপর সমাসীন
হবেন, এটা কেমন করে সমীচীন হতে পারে? যে নবী ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের এই বলে তিরস্কার করেন
যে, তারা নিজেদের ধর্মীয় নেতা ও পীর- পুরোহিতদের আল্লাহর পরিবর্তে রব বানিয়ে নিয়েছে, তিনি কি
করে বলবেন যে, এখন তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে রব বা প্রতিপালক বলে আমাকে স্বীকার
কর এবং আমার ইচ্ছা ও প্রবৃত্তির দাসত্ব কর?
আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّآ أ َنْزَ لْنَا إِلَیْكَ ٱلْكِتَابَ بِٱلْحَ قّ ِ لِتَحْ كُمَ بَیْنَ ٱلنَّاسِ بِمَ آ أ َرَ اكَ ٱللَّھُ
“আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি যে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সেই
অনুসারে মানুষের মাঝে বিচার-মীমাংসা কর।” (সূরা আন-নিসা : ১০৫)
وَ مَ ن لَّمْ یَحْ كُم بِمَ آ أنزَ لَ ٱللَّھُ فَأ ُوْ لَـٰ ئِكَ ھُمُ ٱلظَّالِمُونَ
“আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই যালিম।” (সূরা আল-মায়িদা :
৪৫)
আল্লাহর এই আইন মেনে চলতে যেমন অন্য সব মানুষ বাধ্য, তেমনি একজন মানুষ হিসেবে স্বয়ং নবীও
মেনে চলতে বাধ্য।
إِنْ أ َتَّبِعُ إِلاَّ مَ ا یُوحَ ىٰ إِلَىَّ
“আমার প্রতি যা ওহী হয় আমি শুধু তারই অনুসরণ করি।” (সূরা আল-আনআম : ৫০)
নবীর আনুগত্য আল্লাহর নির্দেশের অধীন
উপরোক্ত আয়াতগুলো ছাড়া আরও বহু আয়াত সুস্পষ্টরূপে প্রমাণ করে যে, আনুগত্য কেবল আল্লাহরই
জন্য আর কারও নয়। আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুর দাসত্ব এবং মানুষের ওপর মানুষের আনুগত্যের যদি
অবকাশ থেকে থাকে, তবে তা মানুষ হিসেবে নয়। নবীর আনুগত্য করতে হবে, কিন্তু সেটা এ জন্য যে,
আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে নির্দেশ জারী করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। শাসক প্রশাসকদের আনুগত্য
করতে হবে এ জন্য যে, তারা আল্লাহ ও রাসূলের Ðকুম প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত।
আলিমদের আনুগত্য এ জন্য করতে হবে যে, তারা আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ-নিষেধ এবং তাঁর
নির্দেশিত বৈধ অবৈধের সীমা রেখা জানিয়ে দেন। এদের মধ্যে কেউ যদি আল্লাহর Ðকুম পেশ করেন
তবে তার সামনে মাথা নত করে দেওয়া প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। এর যৌক্তিকতা বা বৈধতা চ্যালেঞ্জ
করার অধিকার কারো নেই। আল্লাহর সামনে কোন মুমিনের চিন্তার স্বাধীনতা ও মতামতের স্বাধীনতা
নেই। কিন্তুযদি কোন মানুষ আল্লাহর Ðকুম নয়, বরং নিজের কোন মত বা ধারণা পেশ করে তবে তা
মেনে নেওয়া মুসলমানের ওপর ফরয নয়। সেক্ষেত্রে সে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ও নিজস্ব মত পোষণের
অধিকার রাখে। স্বেচ্ছায় তার মতকে গ্রহণ বা স্বেচ্ছায় তার সাথে দ্বিমত পোষণ করার অধিকার তার
র আইন মেনে চলতে অন্য সব মানুষ বাধ্য, তেমনি একজন মানুষ সবে স্বয়ং নবীও মেনে চলতে বাধ্য।
আনুগত্য করতে হবে, কিন্তু সেটা এ জন্য যে,
াহর পক্ষ থেকে তাঁকে জারী করার অধিকার
দওয়া হয়েছে। শাসক প্রশাসকদের আনুগত্য রতে হবে এ জন্য যে, ারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রয়োগ ও বস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত। রয়েছে।
নবীর আনুগত্য শর্তহীন
দ্বিতীয় আয়াতের বক্তব্য এই যে, রাসূলের ওপর ঈমান আনার অর্থতাঁকে শুধুরাসূল বলে স্বীকার করে
নেওয়াই নয় বরং সেই সাথে রাসূলের আনুগত্য তথা তাঁর নির্দেশাবলী মেনে চলাও অপরিহার্য। শুধুএ
আয়াতে নয় বরং কুরআনের যেখানে-যেখানে এ আনুগত্যের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে নির্দেশটি
শর্তহীন। কোনও একটি জায়গায়ও এমন কথা বলা হয়নি যে, রাসূলের আনুগত্য অমুক-অমুক ক্ষেত্রে
করতে হবে এবং ঐগুলো ছাড়া আর কোন ক্ষেত্রে আনুগত্যের দরকার নেই। সুতরাং এ কথা নিশ্চিত যে,
রাসূল আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়োজিত এমন একজন শাসনকর্তা যার কর্তৃত্বনিরংকুশ এবং যার নির্দেশ
সর্বক্ষেত্রে, সকল অবস্থায় পরিপূর্ণভাবে মান্য করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। রাসূল যদি তাদেরকে কৃষি,
বাণিজ্য ও কামারগিরী ইত্যাদির কোনও একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি গ্রহণের নির্দেশ দিতেন তাহলে নির্দ্বিধায় ও
বিনা সংকোচে সে নির্দেশ মেনে নিতে হতো।
নবীর আনুগত্য সাধারণ মানুষের আনুগত্যের মত নয়
এ রকম শর্তহীন ও সীমাহীন আনুগত্যের নির্দেশ যখন দেওয়া হয়েছে তখন সেটা যে একজন সাধারণ
মানুষের আনুগত্যের মত নয়, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল। কেননা অজ্ঞ কাফেররা তাঁকে
নিছক একজন সাধারণ মানুষ বলেই ভাবতো। আল-কুরআন এ ব্যাপারে তথ্য প্রদান করেছে। তারা
(কাফিরা) মানুষকে বলত:
ھَلْ ھَـٰذَآ إِلاَّ بَشَرٌ مِّ ثْل ُكُمْ
“সে তো তোমাদের মত একজন মানুষই।” (সূরা আল-আম্বিয়া : ৩)
আল-কুরআনে আরও বর্ণিত হয়েছে-
مَ ا ھَـٰذَا إِلاَّ بَشَرٌ مِّ ثْلُكُمْ یُرِ یدُ أ َن یَتَفَضَّلَ عَلَیْكُمْ
“সে তো তোমাদের মত একজন মানুষ ছাড়া কিছুই নয়। উপরন্তুসে চায় তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্বলাভ
করতে।” (সূরা আল-মুমিনুন : ২৪)
তারা আরও বলত-
وَ لَئِنْ أ َطَعْتُمْ بَشَرا ً مِّ ثْلَكُمْ إِنَّكُمْ إِذا ً لَّخَاسِ رُ ونَ
“তোমরা যদি তোমাদের মত একজন মানুষের আনুগত্য কর, তাহলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তহবে।” (সূরা
আল-মুমিনুন : ৩৪)
বস্তুত, নবীর আনুগত্য আসলে আল্লাহরই আনুগত্য। কেননা নবী যা কিছুবলেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে
বলেন এবং যা কিছু করেন আল্লাহর নির্দেশের অধীনেই করেন। তিনি নিজের খেয়াল-খুশীমত কিছুই
বলেন না। কেবল আল্লাহর ওহীর অনুসরণ করেন। কাজেই এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকা উচিত যে, তাঁর
আনুগত্যে কোন রকম পথভ্রষ্টতা বা বিপদগামী হওয়ার ভয় নেই।
রাসূল আল্লাহর পক্ষ িেনয়োজিত এমন একজসত্তা যার কর্তৃত্ব নিরএবং যার নির্দেশ সর্বসেকল অবস্থায় পরিপূর্ণমান্য করা প্রতিটি মুমিকর্তব্য।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. ইসলামের দ্বিতীয় মৌল বিশ্বাস হচ্ছেক. আকায়িদ; খ. রিসালাত;
গ. পরকাল; ঘ. যাকাত।
২. রাসূল (স) এর অবাধ্যকারী হলক. ফাসিক; খ. কাফির;
গ. মুনাফিক; ঘ. অগ্নিপূজক।
৩. প্রকৃত যালিম হচ্ছেক. যারা নামায আদায় করে না;
খ. যারা আল্লাহর আইন অনুসারে ফয়সালা করে না;
গ. যারা মানুষের ক্ষতি করে;
ঘ. যারা হারাম বস্তুভক্ষণ করে।
৪. হিদায়াত কিসের ওপর নির্ভরশীল?
ক. ঈমানের ওপর;
খ. ইসলামের ওপর;
গ. মা বাবার আনুগত্যের ওপর;
ঘ. মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) -এর সঠিক আনুগত্যের ওপর।
৫. পৃথিবীর সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা যায় কীভাবে?
ক. পুঁজিবাদের মাধ্যমে;
খ. সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে;
গ. আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমে;
ঘ. রাষ্ট্রশক্তির মাধ্যমে।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. নবী ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান ও আনুগত্যের গুরুত্বআলোচনা করুন।
২. ‘নবী (স)-এর আনুগত্য মানুষকে তাঁর গোলামে পরিণত করে না’-ব্যাখ্যা করুন।
৩. ‘আল্লাহর পর নিরংকুশ আনুগত্য একমাত্র মহানবী (স)-এর জন্য’ প্রমাণ দিন।
৪. ব্যাখ্যা করুন-‘নবী (স)-এর আনুগত্য আল্লাহর নির্দেশের অধীন।’
৫. ‘নবীর আনুগত্য সাধারণ মানুষের আনুগত্যের মত নয়’, বুঝিয়ে লিখুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. নবী ও রাসূলের প্রতি ঈমান ও আনুগত্যের গুরুত্ব আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]