ক’টি বিষয়ে হযরত মুহাম্মদ (স)-কে অন্যান্য নবীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে? সেগুলো

হযরত মুহাম্মদ (স) সর্বশ্রেষ্ঠ নবী
হযরত মুহাম্মদ (স) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও বিশ্বনবী-এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আল্লাহ
তা’আলা তাঁকে দুনিয়াতে সম্মানিত করেছেন এবং পরকালেও মর্যাদাবান করেছেন, যা অন্য কোন নবী
ও রাসূলগণ লাভ করতে সক্ষম হননি। পার্থিব জীবনে আল্লাহ তা’আলা হযরত মুহাম্মদ (স)-কে
আশিটিরও অধিক বৈশিষ্ট্য মÐিত মর্যাদা দান করেছিলেন, যেগুলোতে তিনি একক বিশেষত্বের অধিকারী
ছিলেন। এ সকল বৈশিষ্ট্য তাঁর একার জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। এ পৃথিবীতে তাঁর আবির্ভাবের পূর্বেই আল্লাহ
তা’আলা তাঁর অনেক বৈশিষ্ট্যের কথা প্রকাশ করেছিলেন এবং তাঁর আবির্ভাবের পর সেগুলোকে আরো
সৌন্দর্যমÐিত করেছেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, তিনি নবী ও রাসূলদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। নিম্নে
কুরআনও হাদীসের আলোকে তা প্রমাণ করা হল :
আল-কুরআনের আলোকে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ
১. হযরত মুহাম্মদ (স) সম্পর্কে সকল নবী ও রাসূলের নিকট থেকে আল্লাহ তা’আলার
অঙ্গীকার গ্রহণ:
আল্লাহ তা’আলার এ অঙ্গীকার গ্রহণের ফলে হযরত মুহাম্মদ (স) সকল নবী ও রাসূলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে
প্রমাণিত হন। এ প্রসঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছেনঃ
وَ إِذْ أ َخَذَ ٱللَّھُ مِ یثَاقَ ٱلنَّبِیّ ِیْنَ لَمَ آ آتَیْتُكُمْ مِّ نْ كِتَابٍ وَ حِ كْمَ ةٍ ث ُمَّ
جَ آءَكُمْ رَ سُولٌ مُّ صَدِّ قٌ لِّمَ ا مَ عَكُمْ لَتُؤْ مِ نُنَّ بِھِ وَ لَتَنْ صُرُ نَّھُ قَالَ
أ َأ َقْرَ رْ تُمْ وَ أ َخَذْتُمْ عَلَىٰ ذٰ لِكُمْ إِصْ رِ ى قَال ُوۤ اْ أ َ قْرَ رْ نَا قَالَ فَٱشْھَدُواْ
وَ أ َنَا ْ مَ عَكُمْ مِّ نَ ٱلشَّاھِدِینَ
“স্মরণ কর, যখন আল্লাহ নবীগণের অংগীকার নিয়েছিলেন যে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমতে যা
কিছু দিয়েছি অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরূপে যখন একজন রাসূল আসবে তখন
তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি স্বীকার
করলে এবং এ সম্পর্কে আমার অংগীকার কি তোমরা গ্রহণ করলে? তারা বলল, আমরা স্বীকার করলাম।
তিনি বললেন, তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।” (সূরা আলেইমরান : ৮১)।
হযরত আলী ও ইবনে আবাস (রা) বলেন, “আল্লাহ তা’আলা সকল নবী ও রাসূলের কাছ থেকে মুহাম্মদ
(স) সম্পর্কেএ অঙ্গীকার নেন যে, তারা স্বয়ং যদি তাঁর সময়ে জীবিত থাকেন, তবে যেন তাঁর প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং তাঁকে সাহায্য করেন এবং স্বীয় উম্মতকেও যেন এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে যান।”
হযরত মুহাম্মদ (স) যদি সে সব নবী ও রাসূলগণের সময়ে আবির্ভূত হতেন, তবে তিনি সবার নবী এ পৃথিবীতে তাঁর
আবির্ভাবের পূর্বেই আল্লাহ তা’আলা তাঁর অনেক
বৈশিষ্ট্যের কথা প্রকাশ
করেছিলেন এবং তাঁর আবির্ভাবের পর সেগুলোকে
আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করেছেন।
হতেন এবং তাঁরা সবাই তাঁর উম্মত হতেন। এতে বুঝা যায় যে, তিনি শুধু নিজের উম্মতেরই নবী নন,
নবীগণেরও নবী। হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন, “আজ যদি মূসা (আ) জীবিত থাকতেন, তবে তিনি
আমার অনুসরণ করা ছাড়া তাঁর কোন পথ থাকত না।”
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে যখন হযরত ঈসা (্অ) পৃথিবীতে অবতরণ করবেন, তখন তিনিও আলকুরআন এবং তোমাদের নবীর বিধি বিধান মেনে চলবেন।
২. তাঁর সম্পর্কে সকল নবীর অবহিত হওয়া :
পৃথিবীতে এমন কোন নবীর আবির্ভাব ঘটেনি যিনি হযরত মুহাম্মদ (স), তাঁর প্রেরিত হওয়া,
আবির্ভাবের সময়, হিজরাত এবং তাঁর নিদর্শনাবলী ও গুণাবলী সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। এ সম্পর্কে
হযরত মুহাম্মদ (স) বলেন :
“আমি যখন আল্লাহর নিকট সর্বশেষ নবী হিসেবে স্বীকৃত, তখন হযরত আদম (আ) মাটির সাথে
মিশ্রিত ছিলেন। তিনি আরো বলেন: আমি হযরত ইবরাহীম (আ)-এর দুআর ফসল, হযরত ঈসা (আ)
এর সুসংবাদ এবং আমার মায়ের স্বপ্ন-যখন তিনি আমাকে ভ‚মিষ্ঠ করেছিলেন তখন তিনি দেখেছেন যে,
তার গর্ভ থেকে আর্ভিভ‚ত হয়েছে এক উজ্জ্বল আলো যার দ্বারা সিরিয়ার রাজপ্রসাাদসমূহ আলোকিত
হয়েছে।”
মায়সারাতুল ফজর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি
কখন থেকে নবী ছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, আদম (আ) যখন আত্মা ও শরীর-এর মধ্যবর্তী স্থানে
অবস্থান করছিলেন।”
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) যে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন তা উপরে বর্ণিত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আমরা
জানি, হযরত আদম (আ) সর্বপ্রথম মানুষ ও নবী। কিন্তু তাঁর জন্মের পূর্বেই আল্লাহ তা’আলা হযরত
মুহাম্মদ (স)-কে নবীরূপে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যদিও তিনি এ পৃথিবীতে সর্বশেষ নবী হিসেবে আবিভর্‚ত
হয়েছিলেন। এটাই তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের উজ্জ্বল প্রমাণ।
মহানবী (স) একজন নবী এবং রাসূল হওয়া সত্তে¡ও প্রথম মুসলমান হওয়ার জন্য আদিষ্ট হয়েছেন, যা
অন্যান্য নবী-রাসূল থেকে স্বতন্ত্র। সুতরাং এ স্বতন্ত্রতা নবীদের মধ্যে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বই বহন করে।
৩. মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মুজিযা তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ
আল্লাহ তা’আলা হযরত আদম (্আ) থেকে নিয়ে হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্তঅসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ
করেছেন। তাঁদের সত্যতা প্রমাণ ও মানুষকে সৎপথের সহায়ক শক্তিরূপে তাঁদের প্রত্যেককে কোন না
কোন অলৌকিক প্রমাণ বা মুজিযা দান করেছেন। সেগুলো তাঁদের নবুওয়াতের পক্ষে অকাট্য প্রমাণ
হিসেবে কাজ করেছে। সকল যুগে রিসালাতের সত্যতা প্রমাণ ও হিদায়াতের পথ সুগম করে ঈমানী
সফলতা আনয়নে মুজিযার ভ‚মিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু তাঁদের সকলেরই মুজিযা ছিল তৎকালীন
সময়ের জন্য। তাঁদের তিরোধানের সাথে সাথে তাঁদের মুজিযারও অবসান ঘটেছিল। যেমন- হযরত মূসা
(আ)-এর লাঠি যা সাপে পরিণত হত, হযরত ঈসা (আ) মাটির টুকরায় ফুঁ দিলে পাখি হয়ে উড়ে যেত
ইত্যাদি।
হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াতী জীবনে অসংখ্য মুজিযা সংঘটিত হয়েছিল। তাঁর সবচেয়ে বড় মুজিযা
হচ্ছে, আল-কুরআন। উম্মী হওয়া সত্তে¡ও আল-কুরআনের মত গ্রন্থমহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর
উপর নাযিল হওয়াটাই এত বড় মুজিযা যে, তাঁর রাসূল হওয়ার উপর বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য এটাই
যথেষ্ট। আল-কুরআনকে তিনি সর্বসমক্ষে প্রমাণ হিসেবে বিরোধীদেরকে-এর প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে
প্রকাশ্যে আহবান করেছিলেন। কিন্তু কেউই আল-কুরআন এর মতো একটি গ্রন্থ রচনা তো দূরের কথা,
আল-কুরআনের অনুরূপ একটি ক্ষুদ্র সূরাও রচনা করতে সক্ষম হয়নি। আল-কুরআনে হযরত মুহাম্মদ
(স)-এর মুজিযার সঙ্গে মোকবিলা করার জন্য অমুসলিমদের আহবান করে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন:
وَ إِن كُنْتُمْ فِى رَ یْبٍ مِّ مَّا نَزَّ لْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأ ْتُواْ بِسُورَ ةٍ مِّ ن مِّ ثْلِھِ
وَ ٱدْعُواْ شُھَدَآءَكُم مِّ ن دُونِ ٱللَّھِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِینَ
পৃথিবীতে এমন কোন নবীর আবির্ভাব ঘটেনি যিনি
হযরত মুহাম্মদ (স), তাঁর প্রেরিত হওয়া, আবির্ভাবের সময়, হিজরাত এবং তাঁর নিদর্শনাবলী ও গুণাবলী
সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না।
“আমি আমার বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার
অনুরূপ একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে আহবান
কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।” (সূরা আল-বাকারা : ২৩)
এই আয়াতটি আল-কুরআনের অন্যতম চিরন্তন মুজিযা এবং অবিশ্বাসীদের প্রতি চিরন্তন চ্যালেঞ্জ। আলকুরআন সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ এবং কিয়ামত পর্যন্তস্থায়ী থাকবে। আল-কুরআন মহানবী (স)-এর শ্রেষ্ঠ মুজিযা
যা চিরস্থায়ী। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মুজিযার চিরস্থায়িত্ব তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের দলীল বহন করে।
৪. হযরত মুহাম্মদ (স) ছিলেন খাতামুল আম্বিয়া
এটা নবীগণের উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, তিনিই নবুওয়াতের ধারা
খতমকারী। হযরত আদম (আ) যখন আত্মা ও শরীর এ দুয়ের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করছিলেন তখন
তিনি নবী ছিলেন। তিনি মানব সমাজের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বনি আদম। প্রত্যেক নবীর জীবন ব্যবস্থা বা
শরীআত ছিল স্বল্প সময়ের জন্য। একজন নবীর তিরোধন হয়ে গেলে আরেকজন নবী নতুন বিধান নিয়ে
আবির্ভূত হতেন। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (স) যে বিধান নিয়ে এসেছেন, তা কিয়ামত পর্যন্তঅবশিষ্ট
থাকবে। আর অন্যান্য নবীগণ কোন গোত্র বা দেশের জন্য আবির্ভূত হতেন এবং তাদের তিরোধানের
সাথে সাথে সেই শরীআত রহিত হয়ে যেত। কিন্তু সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স) সকল যুগের সকল
জাতির মানুষের হিদায়েতের জন্য আবির্ভূত হয়েছেন। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুওয়াত সর্বকালের
সকল যুগের মানুষের হিদায়াতের জন্য উপযোগী হওয়াটা অন্যান্য নবীদের উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ
বহন করে।
৫. নবীদের প্রতি আল্লাহর সম্বোধন
আল্লাহ তা’আলা হযরত আদম (আ) থেকে নিয়ে আন্বিয়ায়ে কিরামগণের নাম ধরে সম্বোধন করেছেন
কিন্তু কোথাও হযরত মুহাম্মদ (স)-কে নাম ধরে সম্বোধন করেননি। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
إِنَّآ أ َوْ حَ یْنَآ إِلَیْكَ كَمَ آ أ َوْ حَ یْنَآ إِلَىٰ نُوحٍ وَ ٱلنَّبِیّ ِینَ مِ ن بَعْدِهِ
وَ أ َوْ حَ یْنَآ إِلَىٰ إِبْرَ اھِیمَ وَ إِسْمَ اعِیلَ وَ إْسْحَ اقَ وَ یَعْقُوبَ وَ ٱلأ َسْبَاطِ
وَ عِیسَىٰ وَ أ َیُّوبَ وَ یُونُسَ وَ ھَارُ ونَ وَ سُلَیْمَ انَ وَ آتَیْنَا دَاوُ ودَ
زَ بُورا ً
“আমি তোমার প্রতি ওহী পাঠিয়েছি, যেমন ওহী পাঠিয়েছিলোম নূহের প্রতি এবং সে সমস্তনবী-রাসূলের
প্রতি যারা তার পরে প্রেরিত হয়েছে। আর ওহী পাঠিয়েছি ইসমাঈল, ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকুব ও
তার সন্তানবর্গের প্রতি এবং ঈসা, আইয়ুব, ইউনুস, হারুন ও সুলাইমানের প্রতি। আর আমি দাউদকে
দান করেছি যাবুর।” (সূরা আন-নিসা : ১৬৩)
আল-কুরআনের যে সকল স্থানে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নাম উল্লিখিত হয়েছে, সেখানে তাঁকে নাম
ধরে সম্বোধন করা হয়নি। বরং সেখানে তাঁর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন:
مَّا كَانَ مُحَ مَّ دٌ أ َبَآ أ َحَ دٍ مِّ ن رِّ جَ الِكُمْ وَ لَـٰ كِ ن رَّ سُولَ ٱللَّھِ وَ خَاتَمَ
ٱلنَّبِیّ ِینَ
“মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নয়, বরং সে আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী।” (সূরা
আল-আহযাব : ৪০)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ مُّ حَ مَّدٌ رَّ سُولُ ٱللَّھِ وَ ٱلَّذِینَ مَ عَھُ أ َشِدَّآ ءُ عَلَى ٱلْكُفَّارِ رُ حَمَ آءُ
بَیْنَھُمْ تَرَ اھُمْ رُ كَّعا ً سُجَّدا ً یَبْتَغُونَ فَضْلاً مِّ نَ ٱللَّھِ وَ رِ ضْوَ انا ً
“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল; তার সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর আর নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি
সহানুভ‚তিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদারত দেখবে।” (সূরা
আল-ফাতহ : ২৯)
আল্লাহ তা’আলা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-কে যখনই সম্বোধন করেছেন, তখন তাকে হে নবী বা হে
রাসূল বলে সম্বোধন করেছেন। কখনো নাম ধরে সম্বোধন করে বলেননি যে, (হে মুহাম্মদ)। এমনকি
রাসূলের সামনে কণ্ঠস্বর উঁচুনা করার এবং একে অপরের সাথে যে রকমভাবে উঁচুস্বরে কথা বলে এবং
নাম ধরে ডাকে সেরূপ তাঁর বেলায় করতে উম্মতদেরকে নিষেধ করেছেন, যা অন্যান্য নবীদের বেলায়
নিষিদ্ধ ছিল না। এতে রাসূল (স)-এর উচ্চ মর্যাদা এবং অন্যান্য নবী-রাসূলের থেকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত
হয়।
৬. কিয়ামত দিবসে নবীদের নেতা নির্বাচিত হওয়া তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ
যখন কিয়ামত দিবস অনুষ্ঠিত হবে, তখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) সকল নবীর নেতা বা ইমাম
নির্বাচিত হবেন এবং তাঁদের খতীব হবেন। তাঁদের সুসংবাদদাতা হবেন। তাঁদের শাফায়াতকারী
হবেন। আর এটা হবে তাঁর জন্য সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা।
তিরমিযী শরীফের হাদীসে বর্ণিত আছে। রাসূল (স) বলেন-
أنا أول الناس خروجا اذا بعثوا . وأنا خطیبھم اذا وفدوا. وأنا
مبشر ھم اذا ائسوا، . لواء الحمد یومئذ بیدى ، وانا اكرم ولد
ادم عند ربى ولا فخر .
“কিয়ামত দিবসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আমাকে উঠানো হবে, যখন তারা একত্রিত হবে তখন আমি
তাদের খতীব হব, যখন তারা নিরাশ হয়ে যাবে তখন আমি তাদের সুসংবাদদাতা হব, প্রশংসার
পতাকা সেদিন আমার হাতে থাকবে। আমি আদম সন্তানদের মধ্যে আল্লাহর কাছে বেশী সম্মানিত হব,
এতে গর্বের কিছু নেই।”
অপর এক হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল (স) বলেছেন : “কিয়ামত দিবসে আমি নবীগণের নেতা হব
এবং তাদের খতীব হব এবং তাঁদের শাফায়াতকারী হব। এতে আমার গর্ব নেই।” (ইমাম আহমদ,
তিরমিযী, হাকেম)।
৭. অন্যান্য নবীর তাঁর পতাকাতলে সমবেত হওয়া
কিয়ামত দিবসে সকল নবীর হযরত মুহাম্মদ (স)-এর পতাকাতলে সমবেত হওয়া তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের
প্রমাণ। কিয়ামত দিবসে লোকজন তথা নবীগণ তাঁর পতাকতলে সমবেত হবেন। আর এটা হবে তাঁর
প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা। হযরত ওবাদা ইবন সামেত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল
(স) বলেছেন : “আমি কিয়ামত দিবসে মানবজাতির নেতা হব, এতে আমার কোন গর্ব নেই। কিয়ামত
দিবসে সবাই আমার পতাকা তলে অবস্থান করবে।”
হযরত মুহাম্মদ (স)-এর শ্রেষ্ঠত্বসম্পর্কে অপর একটি হাদীসে বর্ণিত। তিনি বলেন,
فضلت عل الانبیاء بست، لم یعطھن أحد كان قبلى : غفرلى
ماتقدم من ذنبى وما تأخر. وأحلت لى الغنا ئم ولم تحل لأحد
كان قبلى ، وجعلت أمتى خیر الأمم ، وجعلت لى الأرض
مسجدا وطھورا وأعطیت الكوثر. ونصرت با لرعب.
“আমাকে সকল নবীর উপর ছয়টি বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আমার পূর্বে অন্য কাউকে তা দেওয়া
হয়নি। আমার অগ্র এবং পশ্চাতের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। মালে গণীমত (যুদ্ধে লব্ধ
সম্পদ) আমার জন্য বৈধ করা হয়েছে, আমার পূর্বে কারো জন্য তা বৈধ ছিল না। আমার উম্মতকে
সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত করা হয়েছে। জমীনকে আমার জন্য মসজিদ এবং পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে। আমাকে
হাউজে কাওছার দান করা হয়েছে। শত্রæর অন্তরে ভয়-ভীতির দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।
(মাজমাউয যাওয়ায়িদ, পৃ. ৪৬৯)
যখন কিয়ামত অনুষ্ঠিত
হবে, তখন মহানবী হযরত
মুহাম্মদ (স) সকল নবীর
নেতা বা ইমাম নির্বাচিত
হবেন এবং তাঁদের খতীব হবেন। তাদের সুসংবাদদাতা হবেন।
তাঁদের শাফায়াতকারী হবেন।
৮. জান্নাতের দরজায় সর্বপ্রথম আঘাত করা তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ
পারলৌকিক জীবনে তিনি সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজায় আঘাত দিবেন এবং তার জন্য সর্বপ্রথম জান্নাতের
দরজা খুলে দেওয়া হবে। হযরত মুহাম্মদ (স)-এর প‚র্বে অন্য কারো জন্য জান্নাতের দরজা খোলা হবে
না। হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে, হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন:
أنا أكثر الانبیاء تبعا یوم القیا مة وأنا أول من یقرع باب
الجنة.
“কিয়ামত দিবসে আমার অনুসারী সংখ্যা অন্যান্য নবীর অনুসারীদের তুলনায় বেশি হবে। আর আমি হব
জান্নাতের দরজায় আঘাতকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি।” (মুসলিম)
হযরত মুহাম্মদ (স) সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যাকে পুলসিরাত পার
হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। মহানবী (স)-এর এ সকল বিরল সম্মান ও মর্যাদা যা উপরে আলোচনা
করা হয়েছে। এ সবগুলোই সকল নবীদের উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র
কুরআনে নবী-রাসূলগণের যে শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিয়েছেন, হযরত মুহাম্মদ (স)-এর শানেই তা
বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. হযরত মুহাম্মদ (স) কেন শ্রেষ্ঠ নবী?
ক. তিনি কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন;
খ. তিনি আরবের শ্রেষ্ঠ ধনী মহিলার স্বামী ছিলেন;
গ. আল্লাহ তা’আলা তাঁকে দুনিয়া আখিরাতে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা দিয়েছেন;
ঘ. তিনি সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন।
২. উম্মী কাকে বলে?
ক. যিনি উম্মত গঠন করেন; খ. যিনি লেখাপড়া জানেন না;
গ. যিনি সামান্য লেখাপড়া জানেন; ঘ. যিনি তাওরাত সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন।
৩. প্রথম নবী কে ছিলেন?
ক. হযরত আদম (আ); খ. হযরত সুলাইমান (আ);
গ. হযরত ঈসা (আ); ঘ. হযরত মুহাম্মদ (স)।
৪. হযরত মুহাম্মদ (স)-কে অন্য নবীগণের উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছেক. ৩টি বিষয়ে; খ. ৯টি বিষয়ে;
গ. ৬টি বিষয়ে; ঘ. ৫টি বিষয়ে।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. হযরত মুহাম্মদ (স) সম্পর্কে “সকল নবী ও রাসূলের নিকট থেকে আল্লাহর অঙ্গীকার গ্রহণ তাঁর
শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ” ব্যাখ্যা করুন।
২. “মহানবী (স)-এর চিরন্তন অলৌকিকতা তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ” কথাটি বুঝিয়ে লিখুন।
৩. মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) কিয়ামত দিবসে সকল নবীর নেতা নির্বাচিত হবেন, হাদীসের
আলোকে প্রমাণ করুন।
৪. ক’টি বিষয়ে হযরত মুহাম্মদ (স)-কে অন্যান্য নবীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে? সেগুলো আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]