আসমানী কিতাবের পরিচয় দিন। আসমানী কিতাবের আলোচ্য বিষয়বস্তু কী? আসমানী কিতাবের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আসমানী কিতাব নাযিলের উদ্দেশ্য আসমানী কিতাবের সংখ্যা কত?

আসমানী কিতাব ও মালাইকা
মহান আল্লাহ দুনিয়ার মানুষকে হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূলদের কাছে ওহীর মাধ্যমে তাঁর
বাণী বা বিধি-বিধান প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা’আলার ঐ বাণী সমষ্টিকেই আসমানী কিতাব বলা হয়।
আসমানী কিতাবে বিশ্বাস ইসলামী আকীদার একটি মৌলিক বিষয়। আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাসে
গরমিল থাকলে ঈমানে পরিপূর্ণতা আসে না। আসমানী কিতাবই হচ্ছে একমাত্র নির্ভরযোগ্য হিদায়াতের
মাধ্যম, চলার পথের পাথেয়। এ দুনিয়াতে মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য, উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পদ্ধতি, মানুষের
দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ এতে আলোচিত হয়েছে। আসমানী কিতাবই হচ্ছে মানুষের পথনির্দেশিকা বা
জীবন বিধান। পৃথিবীতে মানুষের সূচনার সময় থেকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) পর্যন্তঅগণিত নবীরাসূলের মধ্যে যুগে যুগে বাছাইকৃত নবী-রাসূলের কাছে আসমানী কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে। এর
সংখ্যা ১০৪ খানা। তার মধ্যে তাওরাত, যাবুর, ইনজীল ও কুরআন মাজীদ প্রধান কিতাব। বাকী
একশতটি সহীফা। কুরআন শরীফ ব্যতীত বর্তমানে অন্যান্য আসমানী কিতাবের অবিকল অস্তিত্বপাওয়া
যায় না। ঐগুলোর বিধান কুরআন নাযিল হওার সাথে সাথে রহিত করা হয়েছে। এখন কিয়ামত পর্যন্ত পবিত্র কুরআন থেকেই বিশ্ব মানবতাকে হিদায়াতের সন্ধান গ্রহণ করতে হবে। আসমানী কিতাবের পরিচয়
আসমানী কিতাব ইসলামী বিশ্বাসের একটি মৌলিক বিষয়। সাতটি বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের নাম
ঈমান, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আসমানী কিতাবে বিশ্বাস। আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাসে
যদি অতি সামান্যতম গরমিল থাকে তাহলে ঈমান নামক অমূল্য রতেœর মাঝে ত্রæটি দেখা দেবে।
আসমানী কিতাব হচ্ছে ঐ কিতাব যা যুগে যুগে মানবতার হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তাঁর বাছাইকৃত নবীরাসূলগণের ওপর নাযিল করেছেন। আসমানী কিতাবই হচ্ছে একমাত্র নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ, যা বিভ্রান্ত
মানবতাকে সত্য, সুন্দর ও সৎ পথের সন্ধান দিয়ে থাকে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুনিয়ার মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূলের মাধ্যমে
তাঁর বাণী বা বিধি-বিধান প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা’আলার ঐ বাণীকেই আসমানী কিতাব বলা হয়।
অন্য কথায় যে সকল গ্রন্থে আল্লাহ তা’আলার বাণী বা ওহী লিপিবদ্ধ রয়েছে, তাকে আসমানী কিতাব
বলা হয়। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান সমাজ ও রাষ্ট্রপরিচালনার নিয়ম-নীতি ইত্যাদি যা কিছু
তিনি নবী-রাসূলগণের নিকট পাঠিয়েছেন তার সবই আসমানী কিতাবের আলোচ্য বিষয়।
আসমানী কিতাবের আলোচ্য বিষয়
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আসমানী গ্রন্থসমূহে তার সৃষ্টির বর্ণনা দিয়ে তার সৃষ্টি বৈচিত্র্য সম্পর্কেমানব
জাতিকে সম্যক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আল্লাহর পরিচয়, তাঁর ক্ষমতা, তাঁর সার্বভৌমত্ব,
তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত ইত্যাদি সম্পর্কেএতে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ দুনিয়াতে মানুষ
সৃষ্টির উদ্দেশ্য, মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহও এতে আলোচিত হয়েছে। তাছাড়া দুনিয়াতে মানুষের
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের বিভিন্নদিকের বিধি-বিধানও এতে
সবিস্তারে বিধৃত হয়েছে। বেহেশত ও দোযখের চিত্র এবং কারা এ বেহেশতের অধিকারী হবেন এবং
কারা দোযখের অধিবাসী হবে তারও বর্ণনা এতে দেয়া হয়েছে। মোটকথা আসামনী কিতাবই হচ্ছে
মানুষের পথনির্দেশিকা বা জীবন বিধান।
আসমানী কিতাবের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
মানব জীবনে আসমানী কিতাবের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মানুষকে একদিকে যেমন
আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে, তেমনি তাদেরকে আসমানী
কিতাবের মাধ্যমে দুনিয়াতে চলা-ফেরা, আচার-আচরণ, লেন-দেন, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বিভিন্ন বিধান
দেওয়া হয়েছে। এসব বিধি-বিধান দেয়া না হলে মানুষ তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী, তাদের দায়িত্বও কর্তব্য
কী, তা জানতে পারত না। ফলে তার জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে সে সঠিক দিকনির্দেশনা পেত না। এ
দিকনির্দেশনার অভাবে সে তার জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারত না। আল্লাহ তা’আলা আসমানী
কিতাবের মাধ্যমে আমাদেরকে এসব বিষয়ে শিক্ষাদান করেছেন। যেমন-আল-কুরআনে আল্লাহ তা’আলা আল্লাহ দুনিয়ার মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূলের মাধ্যমে তাঁর বাণী প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার ঐ বাণীকেই আসমানী কিতাব বলা হয়। ঘোষণা করেছেন- وَ مَآ أ َرْ سَلْنَا مِن رَّ سُولٍ إ ِلا َّ ب ِلِسَانِ قَوْ مِھِ لِیُ بَیّ ِنَ لَھُمْ
“আমি সকল রাসূলকে তার স্বজাতির ভাষাভাষি করে প্রেরণ করেছি, তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা
করবার জন্য।” (সূরা ইবরাহীম : ৪)
আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক জাতির জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন যেন তারা আল্লাহর
একত্ববাদকে স্বীকার করে নেয়। আসমানী কিতাব প্রেরণ না করলে যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি এ
হিদায়াতের বাণী থেকে বঞ্চিত হয়ে দিশেহারা হয়ে যেত। কারণ আল্লাহ তা’আলা আল-কুরআনের প্রথম
সূরায় উল্লেখ করেছেন-
عَل َّمَ ٱلإِ نسَانَ مَا لَمْ یَعْلَمْ
“তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।” (সূরা আল-আলাক : ৫)
আসমানী কিতাব প্রেরণের অন্য একটি প্রয়োজনীয়তা হল, এর দ্বারা মানুষের বাহ্যিক শরীরকে বাইরের
ময়লা থেকে এবং তাদের অন্তরসমূহকে দুনিয়ার চাকচিক্য ও শয়তানের প্রতারণা থেকে পবিত্র করা।
আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন-
ھُوَ ٱل َّذِى بَع َثَ فِى ٱلأ ُمِّیّ ِینَ رَ سُولا ً مِّنْھُمْ یَتْل ُو عَلَیْھِمْ آیَاتِ ھِ وَ یُزَ كِّیھِ مْ
“তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত্তি করে
তাঁর আয়াতসমূহ এবং তাদের পবিত্র করে।” (সূরা আল-জুমুআহ : ২)
আসমানী কিতাব প্রেরণ করে আল্লাহ তা’আলা মানুষদের পরকালে পেশকৃত ওযর আপত্তির জবাব
দিয়েছেন, যেন মানুষ পরকালে বলতে না পারে যে, আপনি আমাদের নিকট কোন কিতাব পাঠাননি,
যদি পাঠাতেন তাহলে আমরা তা শুনতান। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন-
لِئَلا َّ یَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى ٱلل َّھِ حُجَّة ٌ
“যাতে রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে।” (সূরা আন-নিসা :
১৬৫)
আল্লাহ তা’আলা কোন জাতির কাছে আসমানী কিতাব না পাঠিয়ে তাকে শাস্তিদেন না। সুতরাং যারা
ধংসের পথ বেছে নেয়, তারা যেন দলীল-প্রমাণ দেখার পরই বেছে নেয়। এছাড়া যারা মুক্তির পথ পছন্দ
করে তারাও যেন দলীল-প্রমাণ দেখার পরই তা করে। যেমন আল্লাহ বলেন-
وَ مَا كُنَّا مُع َذ ِّبِینَ حَ تَّىٰ نَبْعَثَ رَ سُولاً
“আমি রাসূল না পাঠান পর্যন্তকাউকে শাস্তিদেই না।” (সূরা আল-ইসরা : ১৫)
এ সকল আলোচনার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি যে, মানব জীবনে আসমানী কিতাবের গুরুত্ব
অপরিসীম।
আসমানী কিতাব নাযিলের উদ্দেশ্য
পৃথিবীতে নবী-রাসূলগণের ওপর যত কিতাব অবতীর্ণহয়েছে তার সবই আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে
অবতারিত অমোঘ বাণী। আর এ বাণী প্রেরণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর সাথে বান্দার তথা আবদ ও
মাবুদ-এর সম্পর্ক ও পরিচয় করিয়ে দেয়া। এ সম্পর্ককিভাবে বজায় রাখতে হবে, কিতাব তা বাতলে
দেয়। আসমানী কিতাবের উদ্দেশ্য হচ্ছে পথভ্রষ্ট, দিকভ্রান্তবিশ্ব মানবতাকে হিদায়াত করা, সহজ সরল
পথে পরিচালিত করা, মানবজীবনের উদ্দেশ্যকে সফল করে তোলা এবং মানব সমাজকে কল্যাণের পথে
আহবান করা।
হক-বাতিল, ন্যায়-অন্যায় এবং সত্য-অসত্যের মধ্যে পার্থক্য এবং বিভিন্নআদেশ-নিষেধ সম্বলিত বিধিবিধান, প্রতিশ্রæতি ও শান্তির বিষয় বর্ণনা করাই হচ্ছে আসমানী কিতাব নাযিলের উদ্দেশ্য। সর্বোপরি আসমানী কিতাবের উদ্দেশ্য হচ্ছে-পথভ্রষ্ট, দিকভ্রান্তবিশ্ব মানবতাকে হিদায়াত করা, সহজ সরল পথে পরিচালিত করা, মানবজীবনের উদ্দেশ্যকে সফল করে তোলা এবং মানব সমাজকে কল্যাণের পথে আহবান করা।
শয়তানী শক্তির বেড়াজাল হতে আল্লাহর বান্দাদের বের করে আনা এবং সকল মতবাদের ওপর
ইসলামের বিজয় সাধন করে মানবতাকে মুক্তি দেয়াই আসমানী কিতাব নাযিল করার লক্ষ্য। আল্লাহ
আসমানী কিতাব প্রেরণের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন-
ھُوَ ٱل َّ ذِيۤ أ َرْ سَلَ رَ سُولَھُ ب ِٱلْھُدَىٰ وَ دِینِ ٱلْحَقّ ِ لِیُظْھِرَ هُ عَلَى ٱلدِّینِ كُل ِّھِ
“তিনিই তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, অপর সমস্তদীনের উপর একে
জয়যুক্ত করার জন্য।” (সূরা আল-ফাতহ : ২৮)
আসমানী কিতাব নাযিলের অপর উদ্দেশ্য বর্ণনায় আল্লাহ তা’আলা হযরত মুহাম্মদ (স)-কে সম্বোধন
করে বলেন, এ কিতাব আপনার প্রতি নাযিল করার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, আপনি লোকদেরকে
অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে হিদায়াতের আলোকজ্জ্বল পথের দিকে বের করে নিয়ে আসবেন।’ (সূরা
ইবরাহীম : ১)
إ ِنَّآ أ َنْزَ لْنَا إ ِلَیْكَ ٱلْكِتَابَ ب ِٱلْحَقّ ِ لِتَحْكُمَ بَ یْنَ ٱلنَّاسِ ب ِمَآ أ َرَ اكَ ٱللَّھُ
“আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সেই
অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা কর।” (সূরা আন-নিসা : ১০৫)
আসমানী কিতাবের সংখ্যা
শরহে উমদাতুল ক্বারী গ্রন্থেউল্লেখ করা হয়েছে যে, আসমানী কিতাবের সংখ্যা ১০৪ খানা। যেমনহযরত আবু যার গিফারী (রা) হতে বর্ণিত। সে সকল রাসূলের প্রতি আল্লাহর বাণী কিতাব ও সহীফা
আকারে নাযিল হয়েছে, এ কিতাব এবং সহীফার সর্বমোট সংখ্যা ১০৪ খানা। এ সকল আসমানী
কিতাবসমূহের মধ্যে সহীফা বা ছোট কিতাব ১ শ খানা। হযরত শীছ (আ)-এর প্রতি ৫০ খানা, হযরত
ইদরীস (আ)-এর প্রতি ৩০ খানা। হযরত ইবরাহীম (আ) প্রতি ১০ খানা এবং হযরত আদম (আ)-এর
প্রতি ১০ খানা অবতীর্ণ হয়েছিল।”
বাকি ৪ খানা হল প্রধান এবং প্রসিদ্ধ আসমানী কিতাব। এ ৪টি প্রধান আসমানী কিতাব পর্যায়ক্রমে,
তাওরাত বনী ইসরাইলকে হিদায়াতের জন্য হযরত মুসা (আ)-এর প্রতি; যাবুর হযরত দাউদ (আ)-এর
প্রতি; ইনজীল হযরত ঈসা (আ)-এর প্রতি এবং বিশ্ব মানবতার হিদায়াতের জন্য সর্বশেষ ও পূর্ববর্তী
সমস্তকিতাব রহিতকারী ‘আল-কুরআন’ সর্বশেষ নবী ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়।
আসমানী কিতাবসমূহের অস্তিত্ব
লাওহে মাহফুজে সমস্তআসমানী কিতাব বিদ্যমান থাকলেও পৃথিবীর বুকে একমাত্র কুরআন ছাড়া
অন্যান্য আসমানী কিতাব অনুপস্থিত। বর্তমানে কুরআন ছাড়া আসমানী কিতাবের নামে যে সকল
কিতাব পাওয়া যায়, তার কোনটাই মূল ভাষা ও অর্থে সুরক্ষিত নেই। বরং সেগুলোতে রয়েছে ব্যাপক
রদবদল। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন-
یُحَرِّ فُونَ ٱلْكَلِمَ عَن مَّوَ اضِ عِھِ
“তারা শব্দগুলোর আসল অর্থ বিকৃত করে।” (সূরা আল-মায়েদা : ১৩)
বুখতে নসর নামক একজন প্রতাপশালী ইয়াহূদীর শাসনামলে তাওরাত গ্রন্থ সম্পূর্ণ রূপে বিলীন হয়ে
যায়। তখন লোকদের যা মুখস্থছিল তা লিপিবদ্ধ করে তার মধ্যে নিজেদের সুবিধামত রদবদল করে
নিয়ে জনৈক বাদশাহ এটা ধংস করে দিরে ইয়াহূদী আলিমগণ তা জোড়াতালি দিয়ে একীভূত করে আরএর মধ্যেও নিজেেেদর অনেক নতুন নতুন ধর্মীয় আচার-পদ্ধতি সংকলিত করে তার নাম দেয়
সেপটুনাজেন্ট।
এ রূপে খ্রিস্টানদের কবল থেকে হযরত ঈসা (আ)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার পর ইনজীলের একটি
মাত্র আসল কপি বর্তমান ছিল। খ্রিস্টানরা তা জ্বালিয়ে ফেলে। তারপর তাঁর অনুসারীগণের মধ্য হতে
কিছু লোক হযরত ঈসা (আ) কর্তৃক বর্ণনা এবং ইনজিলের কিছু বিষয় যা তাদের স্মরণ ছিল এর সাথে লাওহে মাহফুজে সমস্ত
আসমানী কিতাব বিদ্যমান থাকলেও পৃথিবীর বুকে একমাত্র কুরআন ছাড়া অন্যান্য আসমানী কিতাব অনুপস্থিত। বর্তমানে কুরআন ছাড়া আসমানী কিতাবের নামে যে সকল
কিতাব পাওয়া যায়, তার
কোনটাই মূল ভাষা ও অর্থে সুরক্ষিত নেই।
নিজেদের সুবিধামত বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে নেয়, যা বর্তমানে ইনজীল, মথী, লুক, মারকস, ওল্ড
টেস্টামেন্ট, নিউ টেস্টামেন্ট ইত্যাদি নামে প্রসিদ্ধ।
আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ওপর যে আসমানী কিতাব নাযিল
হয়েছিল, বর্তমানে সেটাই একমাত্র কিতাব যা বিশ্ববাসীর সামনে আসল ও অবিকৃতরূপে বিদ্যমান।
আল-কুরআনের একটি যের, জবর, পেশ কিংবা একটি নুকতাও পরিবর্তিত হয়নি। বরং এটা কিয়ামত
পর্যন্তপ্রচলিত ও বলবৎ থাকবে। কারণ, এর সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নিজেই নিয়ে ঘোষণা করেন-
إ ِنَّا نَحْنُ نَزَّ لْنَا ٱلذ ِّكْرَ وَ إ ِنَّا لَھُ لَحَافِظ ُونَ
“আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তার সংরক্ষক।” (সূরা আল-হিজর : ৯)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন-
إ ِنَّ عَلَیْنَا جَمْع َھُ وَ ق ُرْ آنَھُ
“এর সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই।” (সূরা আল-কিয়ামাহ : ১৭)
যেহেতু কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য আসমানী কিতাবের বিধি-বিধান রহিত হয়ে
গিয়েছে সেহেতু কুরআনই হচ্ছে আসমানী হিদায়াত ও ঐশী শিক্ষা সংক্রান্তসর্বশেষ কিতাব। সুতরাং
ঐশী হিদায়াতের অšে¦ষণকারী ব্যক্তিদের জন্য এ সর্বশেষ কিতাবের অনুসরণ করা একান্তঅপরিহার্য।
আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস
নবী-রাসূলগণের প্রতি যত কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে, এগুলো সবই আল্লাহর পক্ষ হতে জিবরাঈল (আ)-
এর মারফতে প্রেরিত। আসামানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস করা ঈমানের অঙ্গ। মুমিন মুসলমান
হওয়ার জন্য যেমন সমস্তনবী-রাসূলের প্রতি ঈমান আনা আবশ্যক, তেমনি সমস্তআসমানী কিতাবের
প্রতিও ঈমান আনা আবশ্যক। এটা ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ মর্মে আল-কুরআনে
আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وٱل َّذِینَ یُؤْمِنُونَ ب ِمَآ أ ُنْزِ لَ إ ِلَیْكَ وَ مَآ أ ُنْزِ لَ مِن قَبْلِكَ
“তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তাতে যারা ঈমান আনে।” (সূরা
আল-বাকারা : ৪)
মহান আল্লাহ আরো ঘোষণা করেন-
كُلٌّ آمَنَ ب ِالل ّھِ وَ مَلآئِكَتِھِ وَ كُتُب ِھِ وَ رُ سُلِھِ
“তাদের সকলে আল্লাহে, তাঁর ফেরেশতাগণে, তাঁর কিতাবসমূহে এবং তাঁর রাসূলগণে ঈমান আনয়ন করেছে।” (সূরা আল-বাকারা : ২৮৫) কুরআন নাযিল হওয়ার সাথে সাথে অন্যান্য আসমানী কিতাবের বিধিবিধান রহিত হয়ে গিয়েছে সেহেতু কুরআনই হচ্ছে আসমানী হিদায়াত ও ঐশী শিক্ষা সংক্রান্ত সর্বশেষ কিতাব।
সারসংক্ষেপ
আসমানী কিতাব ইসলামী আকিদার একটি মৌলিক বিষয়। সাতটি বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের
নাম ঈমান। তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আসমানী কিতাব। আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাসে
যদি অতি সামান্যতম গরমিল থাকে; তাহলে ঈমান নামক অমূল্য রতেœর মাঝে ত্রæটি দেখা দেবে
সন্দেহাতীতভাবে। আসমানী কিতাব হচ্ছে, ঐ কিতাব যা যুগে যুগে মানবতার হিদায়াতের জন্য
মহান আল্লাহ তার বাছাইকৃত নবী-রাসূলগণের ওপর নাযিল করেছেন। আসমানী কিতাবই হচ্ছে,
একমাত্র নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ, যা বিভ্রান্তমানবতাকে সত্য সুন্দর পথের সন্ধান দেয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুনিয়ার মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসূলের
মাধ্যমে তাঁর বাণী বা বিধি-বিধান প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা’আলার ঐ বাণীকেই আসামনী কিতাব
বলা হয়। অন্য কথায় যে সকল গ্রন্থে আল্লাহ তা’আলার বাণী বা ওহী লিপিবদ্ধ রয়েছে তাকে
আসমানী কিতাব বলা হয়। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়মনীতি ইত্যাদি যা কিছু তিনি নবী-রাসূলদের নিকট পাঠিয়েছেন, তার সবই আসমানী কিতাবের
আলোচ্য বিষয়।
আসমানী কিতাবের সংখ্যা ১০৪ খানা। এর মধ্যে প্রসিদ্ধ হল তাওরাত, যাবুর, ইনজীল ও কুরআন।
বর্তমানে একমাত্র কুরআনের অস্তিত্ব ও শিক্ষা অবিকৃত অবস্থায় আছে। মানবজাতি কুরআন থেকেই তাদের পথের দিশা পেয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতে ও পেতে থাকবে।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. আসমানী কিতাবে বিশ্বাস ইসলামী আকীদার একটিক. মৌলিক বিষয়; খ. অন্যতম বিষয়;
গ. গৌণ বিষয়; ঘ. সামান্য বিষয়।
২. মানবতাকে সত্য, সুন্দর ও সুপথ প্রদর্শনের জন্য নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছেক. আসমানী কিতাব; খ. জাতীয় সংসদ;
গ. জাতিসংঘ সনদ; ঘ. সংবিধান।
৩. আসমানী কিতাবের সর্বমোট সংখ্যা কত?
ক. ১১৪ খানা; খ. ৩০ খানা;
গ. ১০৪ খানা; ঘ. ৪ খানা।
৪. প্রসিদ্ধ বা প্রধান আসমানী কিতাব কয় খানা?
ক. ১৩০ খানা; খ. ১০৪ খানা;
গ. ১০০ খানা; ঘ. ৪ খানা।
৫. পবিত্র কুরআন ব্যতীত অন্যান্য আসমানী কিতাব বর্তমানে কী অবস্থায় আছে?
ক. অবিকৃত অবস্থায়; খ. খÐিত আকারে;
গ. বিকৃত অবস্থায়; ঘ. অবিকল ভাষায়।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. আসমানী কিতাবের পরিচয় দিন।
২. আসমানী কিতাবের আলোচ্য বিষয়বস্তু কী?
৩. আসমানী কিতাবের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করুন।
৪. আসমানী কিতাব নাযিলের উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করুন।
৫. আসমানী কিতাবের সংখ্যা কত?
৬. আসমানী কিতাবসমূহের অস্তিত্ব বর্তমানে আছে কি? এ ব্যাপারে প্রামাণ্য ব্যাখ্যা দিন।
৭. আসমানী কিতাবের প্রতি কি বিশ্বাস রাখতে হবে?
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. আসমানী কিতাব সম্পর্কেএকটি নাতিদীর্ঘপ্রবন্ধ লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]