সর্বশেষ আসমানী কিতাব কী? প্রমাণ করুন। পবিত্র কুরআন অবতরণের সময়কাল বর্ণনা করুন।

কুরআন নাযিলের সময়কাল
কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, কুরআন মাজীদ ‘লাওহে মাহফুয’ থেকে মহানবীর (স)
কাছে দুটি পর্যায়ে নাযিল হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে মহান আল্লাহর আরশে আযীমে অবস্থিত ‘লাওহে মাহফুয’ বা ‘সুরক্ষিত ফলক’ হতে সম্পূর্ণ
কুরআন একইসাথে রমযান মাসের মহিমান্বিত ক্বদর রজনীতে পৃথিবী সংলগ্ন আসমানের ‘বায়তুল
ইযযতে’ নাযিল হয়। এ মর্মে মহান আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে :
شَھْرُ رَ مَضَانَ ٱل َّذِيۤ أ ُنْزِ لَ فِیھِ ٱلْقُرْ آنُ
“রমযান মাস, এতে মানুষের দিশারী কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।” (সূরা আল-বাকারা : ১৮৫)
إ ِنَّا أ َنزَ لْنَاهُ فِى لَیْلَةِ ٱلْقَدْرِ
“নিশ্চয় আমি কুরআন নাযিল করেছি মহিমান্বিত রাতে।” (সূরা আল-কদর : ১)
কদর রজনীতে কুরআন নাযিল হয়েছে’ একথাটির তিনটি ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে১. লাওহে মাহফুয হতে সম্পূর্ণ কুরআন এ ক্বদর রাতে আকাশ হতে নাযিল হয়েছে এবং সেখান হতে
প্রয়োজন অনুসারে অল্প অল্প করে দীর্ঘ ২৩ বছরে মহানবী (স)-এর উপর নাযিল হয়েছে।
নবুওয়াত লাভের পর রাসূলের (স) মাক্কী জীবনের ১৩ বছর এবং মাদানী জীবনে ১০ বছর উক্ত
২৩ বছরে অন্তর্ভুক্ত।
২. এ কুরআনের এক একটি অংশ প্রতি বছর ক্বদরের রাতে দুনিয়ার নিকটতম আকাশে নাযিল হয়েছে
এবং ২৩ বছর পর্যন্তএ ধারা অব্যাহত থাকে।
৩. ক্বদরের রাতে কুরআন নাযিলের সূচনা হয়েছে। এরপর যখন প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, তখনই
প্রয়োজন মাফিক বিভিন্ন আয়াত নাযিল হয়েছে। শেষোক্ত ব্যাখ্যাই অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে
অনেকে মনে করেন।
দ্বিতীয় পর্যায়ে বায়তুল ইযযাত থেকে মহানবীর (স) প্রতি আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা জিবরাইলের
(আ) মারফতে প্রত্যক্ষ ওহীযোগে প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে কুরআনের আয়াত ও খÐ খÐ সূরা
পর্যায়ক্রমিকভাবে নবী জীবনের সুদীর্ঘতেইশ বছরকাল ব্যাপী নাযিল হয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ
বলেন-
وَ ق ُرْ آنا ً فَرَ قْنَاهُ لِتَقْرَ أ َهُ عَلَى ٱلنَّاسِ عَلَىٰ مُكْثٍ وَ نَزَّ لْنَاهُ تَنْزِ یلاً
“আমি কুরআন নাযিল করেছি খÐ খÐ ভাবে, যাতে তুমি তা মানুষের নিকট পাঠ করতে
পারো।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ১০৬)।
সময় ও স্থান
সর্বপ্রথম ৬০৯ খ্রিস্টাব্দে নবী করীম (স)-এর ৪০ বছর বয়সে রমযান মাসের ক্বদর রাতে ‘হেরা গিরি
গুহায়’ সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত নাযিল হয়।
আল-কুরআন সর্বশেষ আসমানী কিতাব
আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য নাযিল হওয়া সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ এ কিতাব মানব জাতির জন্য
এক অনবদ্য অবদান। এ গ্রন্থের ভাব, ভাষা, মর্ম বিষয়বস্তুসবকিছুই মহান আল্লাহর নিজস্ব।
অতীতকালীন সকল নবী-রাসূলের দাওয়াত ও সকল আসমানী কিতাবের সারনির্যাস এ কুরআনে বর্ণিত
হয়েছে। আসমানী গ্রন্থসমূহের বর্ণিত সকল তত্ত¡ ও তথ্যের বিস্ময়কর সমাবেশ ঘটেছে এতে। কুরআনের
আবির্ভাব ও অবতরণের পর অন্য কোন গ্রন্থের কার্যকারিতা আর নেই। একাধারে পূর্ববর্তী সকল
আসমানী কিতাবই মানসুখ বা রহিত হয়ে গিয়েছে। এখন এ গ্রন্থই মানব জাতির সামগ্রিক কল্যাণ ও
মুক্তির দিশারী বা পথপ্রদর্শক। মহান আল্লাহ বলেছেন-
ھُدًى ل ِّلنَّاسِ وَ بَیّ ِنَاتٍ مِّنَ ٱلْھُدَىٰ وَ ٱلْفُرْ قَانِ
“মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন নাযিল
হয়েছে।” (সূরা আল-বাকারা : ১৮৫)।
وَ یَوْ مَ نَبْعَثُ فِى كُلّ ِ أ ُمَّةٍ شَھِ یداً عَلَیْھِ مْ مِّ نْ أ َنْفُسِ ھِ مْ وَ جِ ئْنَا بِكَ شَھِ یداً عَلَىٰ
ھَـٰؤُ لآءِ وَ نَزَّ لْنَا عَلَیْكَ ٱلْكِتَابَ تِبْیَانا ً ل ِّكُلّ ِ شَيْ ءٍ وَ ھُدًى وَ رَ حْ مَة ً وَ بُشْرَ ىٰ
لِلْمُسْ لِمِ ینَ
‘সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্যে
থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আপনার উপর এমন কিতাব নাযিল
করেছি, যা সকল বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনাকারী এবং আত্মসমর্পণকারীদের জন্য পথের দিশারী, করুণা
এবং সুসংবাদদাতা হিসবে।’ (সূরা আন-নাহল: ৮৯)
وَ مَ ا كَانَ ھَـٰذَا ٱلْقُرْ آنُ أ َن یُفْتَرَ ىٰ مِ ن دُونِ ٱللَّھِ وَ لَـٰكِن تَصْ دِیقَ ٱلَّذِى بَیْنَ
یَدَیْھِ وَ تَفْصِ یلَ ٱلْكِتَابِ لاَ رَ یْبَ فِیھِ مِ ن رَّ بّ ِ ٱلْعَالَمِ ینَ
‘এ কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও রচনা নয়। এটা এর পূর্বে যে সব আসমানী কিতাব অবতীর্ণ
হয়েছিল, তার সমর্থনকারী। এটা বিধি বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা দানকারী এতে কোন সন্দেহ নেই
যে, এটা বিশ্বপ্রভুর পক্ষ হতে অবতারিত গ্রন্থ।’ (সূরা ইউনুস : ৩৭)।
কুরআনের বাহক মহানবী (স) বলেন-
أن ھذا القران حبل اللھ والنور المبین والشفاء النافع لاھلاك لمن تمسك بھ وخجاة
لمن تبعھ.
“আল-কুরআন আল্লাহর রজ্জু। আল্লাহর পক্ষ থেকে অতি উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা, কল্যাণময়
প্রতিষেধক। যে কুরআনকে আকড়ে ধরবে এবং অনুসরণ করবে সে পাবে মুক্তির পথ, সে কখনও ধ্বংস
হবে না।” (হাকিম ও বায়হাকী)
এরপর কিয়ামত পর্যন্তআর কোন ঐশী গ্রন্থ অবতীর্ণ হবে না। এটাই আল্লাহর পক্ষ হতে মানব জাতির
কাছে সর্বশেষ আসমানী কিতাব। এর আগে মানব জাতির হিদায়াতের জন্য তাওরাত, যাবূর, ইনজীল -
এ বড় তিনটি আসমানী কিতাব এবং ১০০ খানা সহীফা বিভিন্ন নবী-রাসূলের কাছে নাযিল হয়েছিল।
এগুলো স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকেই নাযিল করা হয়েছিল। বর্তমানে এ সকল আসমানী কিতাব
আসল ভাষা ও অবিকল অবস্থায় সংরক্ষিত নেই। বর্তমানের তাওরাত, যাবুর ও ইনজীল আসল নয়।
আসল কিতাব বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হতে হতে হিব্রæ এবং গ্রিক ইত্যাদি ভাষায় রূপান্তরিত হয়ে ইংরেজি
ভাষায় আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। বিভিন্ন বিপর্যয় এবং ইয়াহূদী-খ্রিস্টান পাদ্রীদের কারসাজিতে
ঐসব গ্রন্থে ওহীর আসল ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
চিরন্তন ও শাশ্বত গ্রন্থ
অতীত যুগের সকল আসমানী গ্রন্থই ছিল নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠী, জাতি বা ভৌগোলিক সীমারেখা বেষ্টিত
জনগোষ্ঠীর জন্য এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হিদায়াতের উৎস। কিন্তু কুরআন মাজীদ কোন নির্দিষ্ট জাতি,
গোষ্ঠী, স¤প্রদায়, দেশ বা কালকে কেন্দ্র করে নাযিল হয়নি, বরং ইহা সর্বকালের সমগ্রবিশ্ব মানবতার
জন্য সর্বাত্মক হিদায়াতের সওগাত নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। তাই এটা চিরন্তন শাশ্বত ও বিশ্বজনীন গ্রন্থ।
পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা
এ পবিত্র কুরআনই ইসলামী জীবন দর্শন ও জীবনব্যবস্থা তথা ইসলামী শরীআতের মূলনীতি ও
অনুশাসনের উৎস এবং পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। পবিত্র কুরআনের উপরই ইসলামের সম্পূর্ণ ইমারতের
অবকাঠামো অধিষ্ঠিত। আল্লাহ মানুষকে তাঁর খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং
তাদের উপর বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য আরোপ করেছেন। আল্লাহ সেই খিলাফতের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে
আঞ্জাম দেয়ার জন্য মহাগ্রন্থআল-কুরআনকে পরিপূর্ণজীবন ব্যবস্থা রূপে অবতীর্ণকরেছেন। মানব
জাতির বর্তমান ও অনাগত কালের যে সব সমস্যা ও প্রয়োজন দেখা দিতে পারে, তার সব কিছুরই
মূলধারা ও মূলনীতি পবিত্র কুরআনে বলে দেয়া হয়েছে। কুরআনে মানব জীবনের ইহকালীন ও
পরকালীন সমস্তকিছুই উল্লেখ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কিছুই বাদ রাখা হয়নি। কেননা কুরআনই বিশ্ব
মানবতার প্রতি আল্লাহ তা’আলার সর্বশেষ আসমানী নির্দেশনা। এরপর আর কোন আসমানী কিতাব
আসবে না।
হযরত মুহাম্মদ (স) বিশ্বনবী এবং সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোন নবী-রাসূল আসবেন না। কাজেই
কুরআনের মাধ্যমে ইসলামী জীবনব্যবস্থা পরিপূর্ণকরে দেয়া হয়েছে। এরপর জীবন বিধান হিসেবে
জীবন দর্শনরূপে বা জীবন পথের দিশা স্বরূপ কোন কিছুরই প্রয়োজন হবে না।
ٱلْیَو ْ مَ أ َكْمَ لْتُ لَكُمْ دِینَكُمْ وَ أ َتْمَمْتُ عَلَیْكُمْ نِعْمَتِى وَ رَ ضِ یتُ لَكُمُ ٱلأِسْلاَمَ دِینا ً
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পরিপূর্ণকরে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ
সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।” (সূরা আল-মায়েদা : ৩)
وَ نَزَّ لْنَا عَلَیْكَ ٱلْكِتَابَ تِبْیَانا ً ل ِّكُلّ ِ شَيْءٍ وَ ھُدًى وَ رَ حْمَة ً وَ بُشْرَ ىٰ لِلْمُسْلِمِینَ
“আমি মুসলিমদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বরূপ, পথনির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদ স্বরূপ তোমার
প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করলাম।” (সুরা আন- নাহল : ৮৯)
ھُ دًى ل ِّلنَّاسِ وَ بَیّ ِنَاتٍ مِّنَ ٱلْھُدَىٰ وَ ٱلْفُرْ قَانِ
“মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ
হয়েছে।” (সূরা আল-বাকারা : ১৮৫)
কুরআনের বিধান পরিপূর্ণ এবং যাবতীয় উন্নয়ন ও কল্যাণের চাবিকাঠি।
আল-কুরআনকে পরিপূর্ণভাবে জীবন বিধান হিসেবে মেনে না নিলে, তারা হয় খোদাদ্রোহী কাফির। এ মর্মে আল্লাহ বলেন-
وَ مَن ل َّمْ یَحْكُم ب ِمَآ أ َنزَ لَ ٱلل َّھُ فَأ ُوْ لَـٰئِكَ ھُمُ ٱلْكَافِرُ ونَ
“আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই কাফির।” (সূরা আল-মায়িদা : ৪৪)
অবিকৃত ও নির্ভেজাল গ্রন্থ
বহু অর্বাচীন যুগে যুগে একে মানব রচিত বলে চরম ব্যর্থতার গøানি নিয়ে আনত শিরে স্বীকার করে নিয়ে
এর শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রামাণিকতা মেনে নিয়েছে। আর এটা যে মহান সত্তা আল্লাহর প্রত্যক্ষ কালাম,
নিশ্চিতভাবে খোদায়ী উৎস থেকে উৎসারিত পবিত্র বাণী, তা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে বহুভাবে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায়।
কুরআনের মাধ্যমে ইসলামী
জীবন ব্যবস্থা পরিপূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। এরপর জীবন
বিধান হিসেবে কোন কিছুরই প্রয়োজন হবে না।
আল-কুরআনের এটা একটি বড় মুজিযা ও বৈশিষ্ট্য যে,
কোন মানুষই সেই প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্তকুরআনের
অনুরূপ বাক্য রচনা করতে পারেনি।
আল-কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সময় আরবগণ নিজেদের ভাষার সাহিত্য রস ও লালিত্য সম্পর্কে গর্ববোধ
করতো। অন্য কোন ভাষাকে তারা কোন মর্যাদাই দিত না। এজন্য অনারবদের ‘আজমী’ বা মূক বলে
অভিহিত করতো। যখন হযরত মুহাম্মদ (স)-এর উপর কুরআন অবতরণ শুরু হয়, তখন কুরআনের
ভাষার বিশুদ্ধতা ও অলংকার তাদের গর্ব অহংকারকে ¤øান ও নিষ্প্রভ করে দেয়। আল-কুরআনের
বাকশৈলী, বলিষ্ঠ যুক্তিধারা ও ভাষার মাধুর্যে বিমোহিত হয়ে লোকেরা ইসলামের দিকে ধাবিত হতে শুরু
করে। একে আল্লাহর মহান বাণী বলে গ্রহণ করে। কিন্তু কিছু লোক নিজেদের কুসংস্কার ও জেদের
বশবর্তী হয়ে একে মানুষের রচনা বলে অপবাদ রটনা করে। একে কবিতা, জাদু কথা ইত্যাদি বলে
উপহাস করে। এতে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে এবং অনাগত কাল পর্যন্তযাদের মনে অমন ধারণা জন্ম
নেবে তাদের লক্ষ্য করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, এটা যদি সত্যিই কোন মানুষের রচনা হয়ে থাকে,
তাহলে তোমরা অনুরূপ বাক্য রচনা করে দেখাও। আল-কুরআনের এটা একটি বড় মুজিযা ও বৈশিষ্ট্য
যে, কোন মানুষই সেই প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্তকুরআনের অনুরূপ বাক্য রচনা করতে পারেনি।
কিয়ামত পর্যন্তকোন মানুষ বা জ্বিন তা পারবে না। সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে কুরআনের এ চ্যালেঞ্জ বিগত
দেড় হাজার বছর ধরে ছুঁড়ে দেয়া আছে। যুগে যুগে বহু মানুষ বিশেষ করে ইসলাম বিরোধী মহল এমন
কি ইয়াহূদী-খ্রিস্টান জগত এ বিজ্ঞানের যুগেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এ চিরন্তর চ্যালেঞ্জের
মোকাবেলায় কেউ সফল হয়নি। কুরআনের বিরোধীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হল তখন
নিজেদের অপরাগতা প্রকাশ করে অকুন্ঠ চিত্তে তারা বলতে বাধ্য হয়েছেالبشر كلام من ھذا لیس
“‘এটা কোন মানুষের বাণী নয়।”
অতীত উম্মতগণ তাদের প্রতি প্রেরিত আসমানী গ্রন্থ এবং তাদের নবীর শিক্ষা কালক্রমে নিজেদের
সুবিধামত পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন-বিয়োজন করে বিকৃতির অতলান্তেপৌঁছে ছেড়েছে। কিন্তু
পবিত্র কুরআনই কেবল এমন এক গ্রন্থ, যা যাবতীয় বিকৃতির অভিশাপ হতে চির মুক্ত ও চির পবিত্র
অবস্থায় অবিকল বিদ্যমান রয়েছে। যেমন: কুরআনের ঘোষণা-
ذٰ لِكَ ٱلْكِتَابُ لاَ رَ یْبَ فِیھِ
“এতো সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই।”(সূরা আল-বাকারা : ২)
জীবন সমস্যার সমাধান
এ মহান গ্রন্থে বিশ্ব মানবতার সকল সমস্যার সমাধান রয়েছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামজিক,
অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক আইন-আদালতসহ সকল ক্ষেত্রের জন্য কুরআন
পেশ করেছে চিরন্তর শান্তির সুস্পষ্ট সমাধান।
أن ھذا القران حبل اللھ وھو النور المبین والشفاء النافع عقد تمسك بھ ونجاة لمن
تبعھ.
“আল-কুরআন আল্লাহর রশি, আল্লাহর অত্যুজ্জ্বল নূর ও অব্যর্থ মহৌষধ। যে ব্যক্তি কুরআনকে আকড়ে
ধরবে, সে পাবে মুক্তি।” (হাকিম ও বাইহাকী)
বস্তুত, আল-কুরআন হচ্ছে মানব ও বিশ্ব জীবন সংক্রান্তএকটি পূর্ণাঙ্গ মহাগ্রন্থ। মহানবী (স) যেভাবে
বিশ্বে সকল মানুষের নিকট আল্লাহর প্রেরিত মুক্তিদূত, ঠিক তেমনিভাবে তার উপর প্রেরিত কুরআনও
সর্বকালীন মানুষের মুক্তির মহাসনদ। কুরআনের শিক্ষা পূর্ণ, পরিণত, যুক্তিসঙ্গত, পরীক্ষিত সত্য,
অদ্বিতীয়। সকল যুগের উপযোগী এবং মানব জীবনের সকল সমস্যার সমাধানকারী। আল-কুরআনের
বিধান সর্বকালের গ্রহণীয়, বরণীয় ও সকলের জন্য একান্তপালনীয়। কুরআন শুধু ধর্মীয় গ্রন্থই নয়, বরং
এটা বিশ্বগ্রন্থ। এর আবেদন বিশ্বজনীন। কুরআন শুধুধর্মীয় নীতি কথাই নয়, বরং এতে আছে ইতিহাস,
বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাষ্ট্র ও সমাজের সিকল নিয়ম কানুন, মানব মনের সকল জিজ্ঞাসার জবাব। এতে
বৈজ্ঞানিক, রাষ্ট্রনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক পদ্ধতি উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে
দেওয়ানী, ফৌজদারী আইন, পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনের আইন-কানুন উত্তরাধিকার সংক্রান্ত
যাবতীয় বিধি-বিধান উপস্থাপিত হয়েছে, যা ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রএক কথায় সকলের জন্য পূর্ণাঙ্গ
হিদায়াত। মানুষের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এতে বিস্তারিত আলোচনা সন্নিবেশিত
কুরআন মানুষের চিন্তা ও নৈতিক জগতে অভ‚তপূর্ব বিপ্লব এনেছে। ব্যক্তি,
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক
জীবনে এক কথায় জীবনের সকল পর্যায়ে এক মহাবিপ্লবের অধিনায়ক
হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) আর দিশারী মহাগ্রন্থ হল আল-কুরআন।
হয়েছে। মানুষের শ্রেষ্ঠ মর্যাদার কথা, মানুষের অমরত্বের কথা, মানুষের সম্ভাবনার কথা অত্যন্তসুস্পষ্ট
এবং বলিষ্ঠভাবে কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ কারণেই যুগে যুগে, দেশে দেশে, জাতিতে
জাতিতে কুরআনের শিক্ষা মানুষকে আকৃষ্ট করেছে এবং মানব মনকে দোলা দিয়েছে।
মূলত মানব জাতির ইতিহাস পরিবর্তনে মানবতার পূর্ণ বিকাশ ও উন্মেষ সাধনে পবিত্র কুরআনের
অবদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কুরআন মানুষের চিন্তা ও নৈতিক জগতে অভ‚তপূর্ব বিপব
এনেছে। ব্যক্তি, সমাজ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে এককথায় জীবনের সকল পর্যায়ে এক
মহাবিপ্লবের অধিনায়ক হলেন সৃষ্টির সেরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) আর তার দিশারী হল মহাগ্রন্থ
আল-কুরআন।
সারসংক্ষেপ
অতীত নবী-রাসূলগণের দাওয়াত ও হিদায়াতের সমষ্টি এবং সকল আসমানী কিতাবরে সারনির্যাস
হল, এ পবিত্র আল-কুরআন। এ গ্রন্থ সকল গ্রন্থের কার্যকারিতা রহিত করে দিয়ে পথভ্রষ্টতার পংকে
নিমজ্জিত মানবতাকে চিরায়ত মুক্তির প্রদীপ্ত পথ সিরাতুল মুস্তাকীমের সন্ধান দিয়ে চলেছে যুগ
যুগান্তর ধরে।
আল্লাহ তা’আলা আল-কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এ মহাগ্রন্থের বৈশিষ্ট প্রসঙ্গে বলেন যে, এটা সেই
গ্রন্থ, যা নবীদের উপর অবতীর্ণ সকল গ্রন্থের সত্যতা স্বীকার করে। এ মহাগ্রন্থে পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহের
শিক্ষা ও আদর্শের সারসংক্ষেপ বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
وَ مِن قَبْلِھِ كِتَابُ مُوسَىٰ إ ِمَاما ً وَ رَ حْمَة ً وَ ھَـٰذَا كِتَابٌ مُّصَدِّقٌ
“এর পূর্বে ছিল মূসার কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহ স্বরূপ। এ কিতাব এর সমর্থক।” (সূরা আলআহকাফ : ১২)
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন মহান আল্লাহর বাণী-সমষ্টি। এটা দুনিয়ার প্রচলিত কোন ধর্মীয়
পুস্তক বা মানব রচিত কোন পুস্তকের মত গ্রন্থ নয়। বরং এটা মহান আল্লাহ বিশ্ব মানবতার
হিদায়াতের জন্য তাঁর মনোনীত সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দা ও সর্বশেষ রাসূল হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নিকট
বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে নাযিলকৃত প্রত্যক্ষ ওহীর সমষ্টি, যা নবী জীবনের সুদীর্ঘ ২৩
বছরকাল ব্যাপী নাযিল হয়েছিল। এটা ইসলামী শরীআতের মূলনীতি, সমগ্র বিধি-বিধানের উৎস,
সর্ববিধ জ্ঞান-বিজ্ঞানের রহস্যাবলীও এতে সন্নিবেশিত। আরবী ভাষায় অবতীর্ণও পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ।
১. পবিত্র কুরআন কত সময় ব্যাপী নাযিল হয়ক. ২৩ বছরে;
খ. ১০ বছরে;
গ. ১৩ বছরে;
ঘ. ২৫ বছরে।
২. পবিত্র কুরআন কোন রাতে অবতীর্ণ হয়?
ক. শবে বরাতে;
খ. শবে ক্বদরে;
গ. শবে মিরাজে;
ঘ. রমযানের রাতে।
৩. পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ-
ক. বাইবেল;
খ. আল-কুরআন;
গ. তাওরাত;
ঘ. বুখারী শরীফ।
৪. সর্বপ্রথম কুরআন নাযিল হওয়া শুরু হয়ক. ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে;
খ. ৫৭১ খ্রিস্টাব্দে;
গ. ৬০৯ খ্রিস্টাব্দে;
ঘ. ৬২২ খ্রিস্টাব্দে।
৫. বিশ্বের মহাবিপ্লবের অধিনায়ক হলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) আর তার দিশারী হলক. মহাগ্রন্থ তাওরাত;
খ. মহাগ্রন্থ ইনযীল;
গ. মহাগ্রন্থ যাবুর;
ঘ. মহাগ্রন্থ আল-কুরআন।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. সর্বশেষ আসমানী কিতাব কী? প্রমাণ করুন।
২. পবিত্র কুরআন অবতরণের সময়কাল বর্ণনা করুন।
৩. আল-কুরআন যে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা তা ব্যাখ্যা করুন।
৪. কুরআন যে অতীব বিশুদ্ধ ও নির্ভুল গ্রন্থ তা প্রমাণ করুন।
৫. জীবন সমস্যার সমাধানে আল-কুরআনের অবদান উল্লেখ করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. ‘পবিত্র আল-কুরআনই সর্বশেষ আসমানী কিতাব’ বিস্তারিত বিবরণ দিন।
২. পবিত্র কুরআন নাযিলের সময়কাল উল্লেখ করে প্রমাণ করুন আল-কুরআনই একমাত্র নির্ভুল ও অবিকৃত আসমানী কিতাব।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]