আখিরাত জীবনের পরিচয় দিন। আখিরাত জীবনে বিশ্বাসের গুরুত্ববর্ণনা করুন।

আখিরাত
ইহকালই মানব জীবনের শেষ নয়। মৃত্যুর পরও মানুষের জন্য রয়েছে এক অনন্তজীবন। যেখানে
মানুষকে তার পার্থিব জীবনের ভাল ও মন্দ কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে। কঠিন বিচারের পর
জান্নাত বা জাহান্নামরূপে তার যথাযথ ফলাফল ভোগ করতে হবে। এটাই হল আখিরাত। আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জন করে জাহান্নামের আযাব হতে নাজাত এবং জান্নাতের অনন্তসুখ ও অনাবিল শান্তিলাভের
মধ্যে জীবনের প্রকৃত সাফল্য নিহিত। আখিরাত সম্পর্কে ইসলামী আকীদার মূলকথা এটাই। পার্থিব
জীবনে মানুষের কৃতকর্মের যথাযথ ও পরিপূর্ণ ফল ভোগ করার জন্য একটি অনন্তজীবন প্রয়োজন আর
সেটাই হচ্ছে আখিরাত। আখিরাত সম্পর্কে বিশ্বাস মানুষকে গড়ে তোলে দায়িত্বশীল ও জবাবদিহির
অনুভ‚তিশীল মানুষরূপে। মানব জীবনের তিনটি পর্যায় রয়েছে, যথা-আলমে আরওয়াহ (আত্মিক
জগত), আলমে দুনিয়া (পার্থিব জগত) এবং আলমে আখিরাত (পরজগত)। সুতরাং পার্থিব জগতের
শেষে অর্থাৎ মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জীবন থেকে শুরু হয় আলমে আখিরাতের অনন্তজীবন। আর
সেটাই মানুষের প্রকৃত জীবন।
অতএব আল্লাহ, রাসূল, কিতাব, ফেরেশতা প্রভৃতির ওপর বিশ্বাস স্থাপনের সাথে সাথে আখিরাত বা
পরকালীন জীবনের প্রতি বিশ্বাস বা ঈমান গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একান্তঅপরিহার্য। এটা
ইসলামী আকীদার মৌলিক বিশ্বাস। তাই আমাদের আখিরাতে বিশ্বাস করতে হবে। আখিরাতের পরিচয়
ইহকালই জীবনের শেষ নয়, বরং মৃত্যুর পরও রয়েছে মানুষের জন্য এক অনন্তজীবন। যেখানে
মানুষকে তার পার্থিব জীবনের ভাল ও মন্দ কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব দিতে হবে। সঠিক বিচারের পর
জান্নাত বা জাহান্নামরূপে তার যথাযথ ফলাফল ভোগ করতে হবে। এটাই হলো আখিরাত। আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জন করে জাহান্নামের আযাব হতে নাজাত এবং জান্নাতের অনন্তসুখ ও অনাবিল শান্তিলাভের
মধ্যেই মানব জীবনের প্রকৃত সাফল্য নিহিত। আখিরাত সম্পর্কে ইসলামী আকীদা এটাই। নিম্নে এ
সম্বন্ধে আলোকপাত করা হলো :
‘আখিরাত’ শব্দটি اخر শব্দ হতে উদ্ভুত। এর আক্ষরিক অর্থ শেষ, পরে, পরবর্তী, পরজীবন, শেষ
পরিণতি, শেষ ফল, দ্বিতীয় জগৎ ও কিয়ামত ইত্যাদি।
ইসলামী পরিভাষায় আখিরাতের সংজ্ঞা হচ্ছে-“মৃত্যুর পর হতে মানুষের যে অনন্তজীবনকাল আরম্ভ হয়,
তাকে ‘আখিরাত’ বলে”। অতএব আখিরাত অর্থ পারলৌকিক জীবন। মানবাত্মা অমর, অনন্ত, মৃত্যু তার
শেষ পরিণতি নয়। মানুষ মৃত্যুবরণ করলেই, সমস্তকিছু ধ্বংস হয়ে যায় না বা তার অস্তিত্বএকেবারে
শেষ হয়ে যায় না; বরং মৃত ব্যক্তি আমাদের চক্ষুর অন্তরালে চলে যায় এবং তার আরেক নতুন জীবন
আরম্ভ হয়। এটাই প্রকৃত, চিরস্থায়ী এবং শাশ্বত জীবন। মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের নামই আখিরাত বা
পরকাল। আল্লাহ বলেন-
وَ إ ِنَّ ٱلدَّارَ ٱلآخِ رَ ةَ ل َھِىَ ٱلْحَیَوَ انُ ل َوْ كَانُوا ْ یَعْل َمُونَ
“নিশ্চয় পরকালীন জীবন হল প্রকৃত জীবন। যদি তারা জানত!” (সূরা আল-আনকাবুত : ৬৪)
মহান আল্লাহ তা’আলা মানব জাতিকে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন পরীক্ষার উদ্দেশ্যে। এ পৃথিবীকে তিনি
অসংখ্য লোভ, লালসা, আকর্ষণ-বিকর্ষণ ও চাকচিক্য-মোহনীয়তা দিয়ে সাজিয়েছেন। যাতে সামান্য
সময়ের এ দুর্গম গিরি, কান্তর মরু ও বন্ধুর পথ পরিক্রমা পাড়ি দিয়ে তারা আখিরাতের অনাবিল, অফুরন্ত
নিয়ামত, সৌন্দর্য, মুক্তি ও চির আনন্দময় জগতে পৌঁছতে পারে। প্রকৃত পক্ষে এ দুনিয়ার জীবন
ক্ষণিকের। মানুষের প্রকৃত আবাসই হল আখিরাত।
یٰقَوْ مِ إ ِنَّمَا ھَـٰذِهِ ٱلْحَیَاةُ ٱلدُّنْیَا مَتَاعٌ وَ إ ِنَّ ٱلآخِ رَ ةَ ھِىَ دَارُ ٱلْقَـرَ ارِ
“হে আমার স¤প্রদায়! এই পার্থিব জীবন তো অস্থায়ী উপভোগের বস্তু এবং আখিরাতই হচ্ছে চিরস্থায়ী
আবাস।” (সূরা মুমিন : ৩৯) অন্যত্র আল্লাহ বলেন-
وَ ٱلآخِ رَ ةُ خَیْرٌ وَ أ َبْقَىٰ
“আর আখিরাত হল উত্তম এবং স্থায়ী।” (সূরা আল-আ‘লা : ১৭)
আখিরাতের পর্যায়সমূহ
আখিরাতের দু’টি পর্যায় রয়েছে। যথা১. আলমে বারযাখ
২. আলমে হাশর।
১. আলমে বারযাখ
মৃত্যু হতে কিয়ামত পর্যন্তআখিরাত জীবনের প্রথম পর্যায়। এ পর্যায় বা পর্বের নাম ‘আলমে বারযাখ’। মৃত্যুর পর হতে মানুষের যে অনন্তজীবনকাল আরম্ভ হয়, তাকে আখিরাত বলে। অতএব আখিরাত অর্থ পারলৌকিক জীবন।
বারযাখ অর্থ ব্যবধান, অন্তরায়। দু’টি বন্তুর মধ্যকার সীমারেখা বা পর্দা। মানুষের ইহজীবন ও কিয়ামতের
মধ্যবর্তী যে জগত লোক চক্ষুর অন্তরালে রয়েছে, তাকেই ‘আলমে বারযাখ’ বা মধ্যবর্তী জগত বলা হয়।
মানুষের মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্তএর ব্যাপ্তি। এ মর্মে আল্লাহর বাণী হল-
وَ مِن وَ رَ آئِھِمْ بَرْ زَ خٌ إ ِل َىٰ یَوْ مِ یُبْع َث ُونَ
“তাদের সম্মুখে বারযাখ থাকবে উত্থান দিবস পর্যন্ত।” (সূরা আল-মুমিনুন : ১০০)
মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জীবনটি হল কবরের জীবন। শরীআতের পরিভাষায় এ কবরের জীবনকেই
‘আলমে বারযাখ’ বলে। মৃত্যুর পরপরই মানুষের পৃথিবীতে কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশের ধারা শুরু হয়ে
যায়। ব্যক্তি যদি পাপী হয় কৃতকর্মের ফল স্বরূপ সে আজাব ও শাস্তিভোগ করবে। আর সৎ, খোদাভীরু
ও নেকবান্দা হলে সুখ-সন্তোগ এবং বেহেশতের নাজ- নিয়ামত ভোগ করবে। হাদীসে বলা হয়েছে :
“যখন কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখনই তার কিয়ামত অনুষ্ঠিত হয়।”
মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে একটি ভ্রান্তস¤প্রদায় এই আলমে বারযাখ এবং এর সুখ-শান্তিও আযাবশাস্তিকে অস্বীকার করে। অথচ আল-কুরআন ও আল-হাদীসের অসংখ্য বর্ণনা ‘আলমে বারযাখ’ কে
সাব্যস্তকরেছে। যেমন আল্লাহর বাণী-
وَ لاَ تَحْسَبَنَّ ٱل َّذِینَ قُتِل ُوا ْ فِى سَب ِیلِ ٱلل َّھِ أ َمْوَ اتاً بَلْ أ َحْیَاءٌ عِندَ رَ بِّھِمْ
یُرْ زَ قُونَ -فَرِ حِ ینَ بِمَآ آتَاھُمُ ٱلل َّھُ مِنْ فَضْلِھِ وَ یَسْتَبْشِرُ ونَ بِٱل َّذِینَ
لَمْ یَلْحَقُوا ْ ب ِھِمْ مِّنْ خَلْفِھِمْ أ َلا َّ خَوْ فٌ عَلَیْھِمْ وَ لاَ ھُمْ یَحْزَ نُونَ
“তোমরা আল্লাহর রাস্তায় শহীদদের মৃত ভেবো না, তারা বরং জীবিত। তাদের প্রতিপালকের নিকট
হতে তারা রিযিক প্রাপ্ত হচ্ছে। আল্লাহর দেওয়া অনুগ্রহে তারা তুষ্ট, আনন্দিত, আর যারা এখনও তাদের
কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্য আনন্দ প্রকাশ করছে। এ জন্য যে, তাদের কোন ভয়
নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।” (সূরা আলে-ইমরান : ১৬৯-১৭০)
আলোচ্য আয়াতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, শহীদরা আলমে বারযাখে আল্লাহর তরফ থেকে রিযিকপ্রাপ্ত হয়ে
থাকেন। অনুরূপভাবে পাপীদের শাস্তির ব্যাপারেও আল্লাহর ঘোষণা:
وَ حَاقَ ب ِآلِ فِرْ عَوْ نَ سُوۤ ءُ ٱلْع َذَابِ - ٱلنَّارُ یُعْرَ ضُونَ عَل َیْھَا غُدُوّ ا ً
وَ عَشِیّا ً وَ یَوْ مَ تَقُومُ ٱلسَّاعَة ُ أ َدْخِ ل ُوۤ ا ْ آلَ فِرْ عَوْ نَ أ َشَدَّ ٱلْع َذَابِ
“ফিরাউন স¤প্রদায়কে নিকৃষ্ট শাস্তিপরিবেষ্টন করে আছে। সকাল-সন্ধ্যায় তাদের আগুনের সামনে
হাজির করা হয় এবং যে দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন বলা হবে, হে ফিরাউন স¤প্রদায়! তোমরা
কঠিন আযাবে প্রবেশ কর।” (সূরা মুমিন: ৪৫-৪৬)
এ আয়াতে কবরের আযাবের কথা আর কিয়ামত পরবর্তী শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
হাদীসে এসেছে, হযরত আবু হুরাইয়া (রা) মহানবী (স) থেকে বর্ণনা করেন : “তোমরা আল্লাহর নিকট
কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর।” (সহীহ মুসলিম)। তিনি অন্যত্র বলেন, “আমি আল্লাহর
নিকট কবরের আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
তিনি আরও বলেছেন, “তোমরা প্র¯্রাব থেকে পবিত্র থেকো। কারণ প্রস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জন না
করার কারণেই কবরের অধিকাংশ শাস্তিহয়ে থাকে।” (সিহাহ সিত্তা)
অন্য এক হাদীসে এসেছে-
القبر روضة من ریاض الجنة اوحفرة من حفر النار.
“কবর হল জান্নাতের বাগিচাসমূহের একটি বাগিচা অথবা জাহান্নামের গর্তসমূহ থেকে একটি গর্ত।”
অতএব, আল-কুরআন ও আল-হাদীসের অসংখ্য বাণী দ্বারা প্রমাণিত ‘আলমে বারযাখ’ বা কবর
জীবনের যৌক্তিকতাকে অস্বীকার করার কোন কারণ থাকতে পারে না। যারা এ সত্য অস্বীকার করে
তারা তাদের গোঁড়ামী ও মূর্খতাকেই বরং প্রমাণিত করছে।
২. আলমে হাশর
‘আলমে হাশর’ হল সমবেত হবার জগৎ অর্থাৎ যেখানে মানব ও জিন জাতি তাদের হিসাব- নিকাশের আলমে বারযাখ বা কবর জীবনের যৌক্তিকতাকে অস্বীকার করার কোন কারণ থাকতে পারে না। যারা এ সত্য অস্বীকার করে তারা তাদের গোঁড়ামী ও মূর্খতাকেই বরং প্রমাণিত করছে। জন্য উপস্থিত হবে, সেটাকে বলে আলমে হাশর বা মাহশার। মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইসরাফীল
(আ) যখন শিংগায় প্রথম ফুঁৎকার দেবেন, তখন কিয়ামত বা মহাপ্রলয় অনুষ্ঠিত হবে। আর দ্বিতীয়
ফুঁৎকারে সৃষ্ট জীব কবর থেকে পুনরুত্থিত হয়ে দলে দলে একটি ময়দানে এসে সমবেত হবে। সূরা
ইয়াসীনে আল্লাহ বলেন-
وَ نُف ِخَ فِى ٱلصُّورِ فَإ ِذَا ھُم مِّنَ ٱلأ َجْدَاثِ إ ِل َىٰ رَ بّ ِھِمْ یَنسِل ُونَ . قَال ُوا ْ یٰوَ یْل َنَا مَن
بَع َثَنَا مِن مَّرْ قَدِنَا ھَذَا مَا وَ عَدَ ٱلرَّ حْمـٰنُ وَ صَدَقَ ٱلْمُرْ سَل ُونَ
“আর যখন শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখনই তারা কবর থেকে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে চলবে।
তারা বলবে, হায়! আমাদের দুর্ভোগ, কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উঠাল? দয়াময় আল্লাহ তো এরই
প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন।” (সূরা ইয়াসীন : ৫১-৫২)
সেদিন আল্লাহ তা’আলা মানব ও জিন জাতিকে উপস্থিত করবেন বিচারের জন্য। আল্লাহ বলেন-
وَ تَ رَ ى ٱلأ َرْ ضَ بَارِ زَ ةً وَ حَشَرْ نَاھُمْ فَل َمْ نُغَادِرْ مِنْھُمْ أ َحَدا ً
“তুমি পৃথিবীকে দেখবে উন্মুক্ত প্রান্তর, সেদিন তাদের সকলকে আমি একত্র করবো এবং তাদের কাউকে
অব্যাহতি দেবনা।” (সূরা আল-কাহাফ : ৪৭)
অতপর সৎ-অসৎ, নিষ্পাপ-পাপী ও মুমিন-মুশরিক কাফিরদের দিয়ে বিচারের কাজ শুরু হবে।
প্রত্যেকের নিকট তার আমলনামা উপস্থিত করা হবে। সে আমলনামায় পৃথিবীতে তার কৃতকর্মের
পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ রেকর্ড করা থাকবে।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ وُ ضِ عَ ٱلْكِتَابُ فَتَرَ ى ٱلْمُجْ رِ مِینَ مُشْفِقِینَ مِمَّا فِیھِ وَ یَقُول ُونَ یٰوَ یْل َتَنَا مَا لِھَـٰذَا
ٱلْكِتَابِ لاَ یُغَادِرُ صَغِیرَ ةً وَ لاَ كَب ِیرَ ةً إ ِلا َّ أ َحْ صَاھَا وَ وَ جَدُوا ْ مَا عَمِل ُوا ْ حَاضِ را ً
وَ لاَ یَظْ لِمُ رَ بُّكَ أ َحَدا ً
“আর যখম আমলনামা তাদের সামনে রাখা হবে, তাতে যা আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদের ভীত
সন্ত্রস্তদেখবে। তারা বলবে, হায় আফসোস! এ কেমন আমলনামা! এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ
দেয়নি। সবই এতে আছে। তারা তাদের কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। তোমার পালনকর্তা কারো
প্রতি জুলুম করবেন না।” (সূরা কাহাফ : ৪৯)
অতঃপর এ হিসাব-নিকাশের পর যার নেকের পাল্লা ভারী হবে, সে হবে জান্নাতী। আর বেঈমানকাফির-মুশরিক এবং অপরাধীদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
আল্লাহ বলেন, “অতঃপর সেদিন যার (পুণ্যের) পাল্লা হালকা হবে, তার স্থান হবে হাবীয়া।” (সূরা
কারিয়াহ : ৬-৯)
আখিরাত বিশ্বাসের আবশ্যকতা
প্রথমত : আখিরাতের অনন্তজীবনের তুলনায় পার্থিব জীবন একটি খেলাঘরের ন্যায় ক্ষণস্থায়ী। এ
সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন-
و َ مَا ھَـٰذِهِ ٱلْحَیَاةُ ٱلدُّنْیَآ إ ِلا َّ ل َھْوٌ وَ ل َعِبٌ وَ إ ِنَّ ٱلدَّارَ ٱلآخِ رَ ةَ ل َھِىَ ٱلْحَیَوَ انُ
“এ পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়। পরকালীন জীবনই হল প্রকৃত জীবন।” (সূরা আল-আনকাবুত : ৬৪)
অনত্র আল্লাহ তা’আলা বলেন- أ َ نَّم َا ٱلْحَیَاةُ ٱلدُّنْیَا ل َعِبٌ وَ ل َھْوٌ وَ زِ ینَة ٌ وَ تَفَاخُرٌ بَیْنَكُمْ وَ تَكَاث ُرٌ فِى ٱلأ َمْوَ الِ وَ ٱلأ َوْ لاَدِ হিসাব-নিকাশের পর যার নেকের পাল্লা ভারী হবে, সে হবে জান্নাতী। আর বেঈমান-কাফির-মুশরিক এবং অপরাধীদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
“পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক হিংসা-বড়াই, ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ছাড়া কিছুই নয়।” (সূরা আল-হাদিদ : ২০)
এ ক্ষণস্থায়ী জীবন তবে অনর্থক নয়। কেননা এটাই আখিরাতের অনন্তজীবনের জন্য পাথেয় সঞ্চয়ের
সময়।
মহানবী (স) এ মর্মে বলেন- “পার্থিব জীবন হচ্ছে পরকালের ক্ষেত্র স্বরূপ।” বান্দা এখানে যেমন বীজ
বপন করবে, পরকালে তেমন ফল পাবে, দুনিয়াতে যেরূপ কাজ করবে, আখিরাতে তেমন ফল ভোগ
করবে।
দ্বিতীয়ত : ঈমান বিল-আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস ইসলামী জীবন দর্শনের অন্যতম মৌলিক
আকীদা। ব্যক্তিকে প্রত্যেকটি ভাল কাজের জন্য পুরস্কার ও প্রত্যেকটি মন্দ কাজের জন্য শাস্তিদেওয়া
হবে। এ বিশ্বাস মানবের নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করে থাকে। যারা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে
এবং ভাল কাজ করে, তারা আল্লাহর নিকট হতে আলমে বারযাখে পুরস্কৃত হবে।
তৃতীয়ত : আর যারা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে না এবং সৎ কাজ সম্পাদন করে না, তারা
আলমে বারযাখে তথা কবরে ও পরকালে জাহান্নামের অবর্ণনীয় শাস্তিভোগ করবে।
মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
سَنُع َذ ِّبُھُ م مَّرَّ تَیْنِ ث ُمَّ یُرَ دُّونَ إ ِل َىٰ عَذَابٍ عَظِیمٍ
“আমি তাদেরকে দু’বার শাস্তিদেব এবং পরে তাদেরকে মহাশাস্তির দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।” (সূরা
আত-তাওবা : ১০১)
এখানে দু’বার শাস্তিপ্রদান দ্বারা একটি আলমে বারযাখে ও অপরটি কিয়ামতের বিচারের পরের শাস্তির
কথা বলা হয়েছে।
চতুর্থত : আখিরাত জীবনের ঘটনাবলি মানব জ্ঞানের বহির্ভূত। বৈজ্ঞানিক গবেষণা, দার্শনিকদের চিন্তা
ভাবনা, কবির কল্পনা এবং তাপসদের ধ্যান-ধারণা দ্বারা পারলৌকিক জীবনবোধ সম্পর্কে আবিষ্কার করা
যায় না। মৃত্যু যবিনকার ওপারে কি আছে? তা দেখার মত চোখ মানুষের নেই। বিচার-বিশ্লেষণ করার
মত বুদ্ধি নেই। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে এ সম্পর্কে মানব জাতির কাছে যে
তথ্য পরিবেশন করেছেন, তা-ই মানবকে বিশ্বাস করতে হবে। একমাত্র ওহী জ্ঞানের মাধ্যম ছাড়া অন্য
কোন উপায়ে আখিরাত সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়।
বস্তুত পার্থিব জীবনে মানুষের কৃতকর্মের যথাযথ পরিপূর্ণ ফল ভোগ করার জন্য একটি অনন্তজীবন
প্রয়োজন। আর সেটাই হচ্ছে আখিরাত। আখিরাত সম্পর্কে বিশ্বাস মানুষকে গড়ে তোলে দায়িত্বশীল ও
জবাবদিহি রূপে। মানব জীবনের তিনটি পর্যায়ে তথা আলমে আরওয়াহ (আত্মিক জগত), আলমে
দুনিয়া (পার্থিব জগত) আলমে আখিরাত (পরজগত)। সুতরাং পার্থিব জগতের শেষে অর্থাৎ মানবের
মৃত্যুর পরবর্তী জীবন থেকে শুরু হয় আখিরাতের অনন্তজীবন। আর সেটাই মানুষের প্রকৃত জীবন।
অতএব আল্লাহ, রাসূল, কিতাব, ফেরেশতা প্রভৃতির ওপর বিশ্বাস স্থাপনের সাথে সাথে আখিরাত বা
পরকালীন জীবনের প্রতি বিশ্বাস বা ঈমান গ্রহণ করা প্রত্যেক মানুষের জন্য অপরিহার্য। এটা ইসলামী
আকীদার মৌলিক বিশ্বাস। তাই আমাদের আখিরাতে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
সারসংক্ষেপ
মানুষের মৃত্যুর পর হতে যে অনন্তজীবনকাল আরম্ভ হয় একে আখিরাত বা পরকাল বলে। আখিরাত
জীবন দু’টি পর্বে বিভক্ত। মৃত্যুবরণ থেকে কিয়ামত বা মহাপ্রলয় দিবস পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয়
আলমে বারযাখ বা কবর জগত।
কিয়ামতহতেঅনন্তকালব্যাপীদ্বিতীয়পর্ব।এরনামআলমেহাশর।আলমেহাশরেরআরম্ভআছে‘পার্থিব জীবন হচ্ছে
পরকালের ক্ষেত্র স্বরূপ’ বান্দা এখানে যেমন বীজ
বপন করবে, পরকালে তেমন ফলই পাবে। আল্লাহ, রাসূল, কিতাব,
ফেরেশতা প্রভৃতির ওপর বিশ্বাস স্থাপনের সাথে সাথে আখিরাত বা পরকালীন জীবনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন
করা প্রত্যেক মানুষের জন্য অপরিহার্য। এটা ইসলামী আকীদার মৌলিক বিশ্বাস।
ইসলামিক স্টাডিজ-২ : আল-কালাম ও আল-ফিক্হ বিএ/বিএসএস প্রোগ্রাম
ইউনিট-৫ : আখিরাত পৃষ্ঠা # ১৪১
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
 নৈর্ব্যক্তিক উত্তর-প্রশ্ন
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. ইহকালই মানব জীবনেরক. শেষ নয়; খ. শেষ;
গ. সুখের সময়; ঘ. উত্তম সময়।
২. মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের নামক. পার্থিব জীবন; খ. আখিরাত বা পরকাল;
গ. আলমে হাশর; ঘ. কিয়ামত বা মহাপ্রলয়।
৩. আখিরাতের দু’টি পর্যায় হচ্ছেক. জান্নাত ও জাহান্নাম; খ. মিযান ও পুলসিরাত;
গ. আলমে বারযাখ ও আলমে হাশর; ঘ. পুনরুত্থান ও বিচার।
৪. শরীআতের পরিভাষায় কবরের জীবনকে বলা হয়ক. আলমে হাশর; খ. আলমে দুনিয়া;
গ. আলমে আখিরাত; ঘ. আলমে বারযাখ।
৫. কিয়ামতের পর মানব ও জিন জাতিকে হিসাব নিকাশের জন্য সমবেত করা হবে। একে বলা হয়ক. আলমে হাশর; খ. আলমে বারযাখ;
গ. আলমে দুনিয়া; ঘ. আলমে আখিরাত।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. আখিরাত জীবনের পরিচয় দিন।
২. আলমে বারযাখ বলতে কী বোঝেন? লিখুন।
৩. আলমে হাশর সম্বন্ধে বিবরণ দিন।
৪. আখিরাতে বিশ্বাসের আবশ্যকতা সম্পর্কে আপনার যুক্তি প্রদর্শন করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. আখিরাত জীবনের পরিচয় দিন। আখিরাত জীবনে বিশ্বাসের গুরুত্ববর্ণনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]