জান্নাত ও জাহান্নাম বলতে কী বুঝায়? জান্নাতের নিয়ামত ও জাহান্নামের শাস্তির বিরবণ দিন।

বেহেশত ও দোযখ
ইহকালই মানব জীবনের শেষ নয় বরং মৃত্যুর পরও রয়েছে মানুষের জন্য এক অনন্তজীবন। যেখানে
মানুষকে তার পার্থিব জীবনের ভালো ও মন্দ কাজের পুঙ্খানুপঙ্খ হিসাব দিতে হবে এবং সঠিক বিচারের
পর জান্নাত বা জাহান্নামরূপে এর যথাযথ ফলাফল ভোগ করতে হবে। যারা পার্থিব জীবনে আল্লাহ প্রদত্ত
ও রাসূল (সা) প্রদর্শিত জীবন বিধান মেনে নেয়নি বা তদনুযায়ী জীবন পরিচালনা করেনি বরং অন্যায়
অনাচার ও পাপাচারে লিপ্ত থেকেছে, পরকালীন জীবনে তাদের জন্য রয়েছে পাপানুযায়ী কঠোর শাস্তির
ব্যবস্থা তথা দোযখ।
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশিত বিধান অনুযায়ী ও তাঁর রাসূল (স)-এর প্রদর্শিত
পথে জীবন যাপন করেছে, তাকে অনন্তজীবনের জন্য মহান আল্লাহ পুরস্কারস্বরূপ পরম সুখ স্বাচ্ছন্দের
আবাস জান্নাত বা বেহেশত দান করবেন। এ মর্মে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
وَ أ َمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَ بّ ِھِ وَ نَھَى ٱلنَّفْسَ عَنِ ٱلْھَوَ ىٰ . فَإ ِنَّ ٱلْجَنَّة َ ھِىَ ٱلْمَأ ْوَ ىٰ
“যে ব্যক্তি তার প্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি হতে নিজকে বিরত রাখে, জান্নাতই
হবে তার আবাস।” (সূরা আন-নাযি‘আত : ৪০-৪১)
বেহেশত
বেহেশত ফারসি শব্দ। আরবিতে একে বলা হয় ‘জান্নাত’ الجنة ।আভিধানিক অর্থ পুষ্পোদ্যান, বাগান,
বাগিচা, গুলশান। বাংলা ভাষায় জান্নাতকে বলা হয় স্বর্গ।
ইসলামের পরিভাষায় জান্নাতের সংজ্ঞা হচ্ছে, ‘পার্থিব ক্ষণস্থায়ী জীবনের শেষে কিয়ামত দিবসে হিসাবনিকাশের পর আল্লাহর অনুগত নেক বান্দাদের জন্য অনন্তসুখ ও প্রশান্তিময় চিরস্থায়ী জীবনের জন্য
আল্লাহ তা’আলা অফুরন্তনিআমতে সুসজ্জিত যে আবাসস্থল প্রস্তুত করে রেখেছেন, তাকে বেহেশত বা
জান্নাত বলা হয়।
বেহেশতের স্তর
বেহেশতের নায-নিআমত এবং বেহেশতীদের অবস্থান অনুসারে বেহেশতের ৮টি স্তর রয়েছে। যথা১. জান্নাতুল ফিরদাউস;
২. দারুল মাকাম;
৩. দারুল কারার; যারা পার্থিব জীবনে আল্লাহ
প্রদত্ত ও রাসূল (সা) প্রদর্শিত জীবন বিধান মেনে নেয়নি বা তদনুযায়ী জীবন
পরিচালনা করেনি বরং অন্যায় অনাচার ও
পাপাচারে লিপ্ত থেকেছে, পরকালীন জীবনে তাদের
জন্য রয়েছে পাপানুযায়ী কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা তথা দোযখ। ‘পার্থিব ক্ষণস্থায়ী জীবন
শেষে কিয়ামত দিবসে হিসাব-নিকাশের পর আল্লাহর অনুগত নেক
বান্দাদের জন্য অনন্তসুখ ও প্রশান্তিময় চিরস্থায়ী জীবনের
জন্য আল্লাহ তা’আলা অফুরন্তনিআমতে সুসজ্জিত আবাসস্থল প্রস্তুত করে
রেখেছেন, তাকে বেহেশত বা জান্নাত বলা হয়। ’
৪. দারুস সালাম;
৫. জান্নাতুল মাওয়া;
৬. জান্নাতুন নাঈম;
৭. দারুল খুলদ;
৮. জান্নাতু আদন।
বেহেশতের অবস্থান
বেহেশতসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরের বেহেশত হল জান্নাতুল ফিরদাউস এবং সর্বনিম্ন হল-জান্নাতু
আদন। সওয়াব ও পুণ্যের তারতম্য অনুসারে বেহেশতবাসীগণ বিভিন্ন স্তরের বেহেশতে অবস্থান
করবেন। বিচারে যাঁরা প্রথম স্তরের সৎ কর্মশীল বলে বিবেচিত হবেন, তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে বেহেশতে প্রবেশ
করবেন। কিন্তু যারা ঈমানদার হওয়া সত্তে¡ও পাপী বলে সাব্যস্তহবেন, তাদেরকে দোযখে নিক্ষেপ করা
হবে। তারা নিজেদের পাপ অনুযায়ী শাস্তিভোগের পর পুনরায় বেহেশতে প্রবেশাধিকার লাভ করবেন।
যাঁরা একবার বেহেশতে প্রবেশাধিকার পাবেন, তাঁদেরকে আর কোন সময়ই সেখান হতে বহিষ্কার করা
হবে না। অনন্তকালের জন্য তাঁরা সে পরম সুখময় জান্নাতেই অবস্থান করবেন।
বেহেশতের পরিবেশ
বেহেশত চির শান্তিময় স্থান। সেখানে রোগ শোক, জন্ম-মৃত্যু ও বার্ধক্য থাকবে না। বেহেশতের ভিত্তি
স্বর্ণ-রৌপ্য নির্মিত। এর ভ‚মি মিশকের ন্যায়, বালি কর্পুরের ন্যায় ও তরুলতা জাফরানের ন্যায় সুগন্ধিপূর্ণ
সুশোভিত, সুমোহিত, সুসজ্জিত। এর ঝর্ণাধারাগুলো সুগন্ধে পরিপূর্ণ। এতে দুগ্ধ, মধু, পবিত্র শরাব এবং
স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা ও স্রোতস্বিনীসমূহ সদা প্রবহমান। এতে নানা রকম সুস্বাদু ফলের সুশোভিত বাগবাগিচা রয়েছে। বাগানের তলদেশ দিয়ে সদা প্রবহমান ঝর্ণধারা অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে আছে।
বেহেশতের প্রাসাদসমূহ মণি, মুক্তা, ইয়াকুত ও জমরুদ পাথরের তৈরি। তার শয্যা ও আসনসমূহ মণি
মুক্তা খচিত। প্রাসাদসমূহের মধ্যে এমন মনোরমা ও মনোহারিনী নয়ন বিশিষ্ট পরমা সুন্দরী হুরগণ
রয়েছেন, যাঁদেরকে কখনো কোন মানুষ বা জিন স্পর্শ করেননি। মুক্তার ন্যায় চির কিশোর গিলমান
তাদের মধ্যে ঘুরে-ঘুরে পানি পরিবেশন করবে। প্রত্যেক বেহেশতীর জন্য দুটো স্বর্ণের ও দুটো রৌপ্যের
বাগান থাকবে। পার্থিব জগতের ধার্মিকা স্ত্রী ও সন্তানগণ তাঁদের সঙ্গে থাকবেন। নর-নারী প্রত্যেকেই
চির যৌবনা হবে, কখনো বৃদ্ধ হবেন না। তাদের মল-মূত্র ত্যাগের প্রয়োজন হবে না। তারা কোন সময়
অসহনীয় শীত-গরম অনুভব করবেন না। তাদের কোনও কিছুরই অভাব থাকবে না এবং যা কিছু
চাইবে, চাওয়া মাত্র সবকিছু উপস্থিত হয়ে যাবে।
বেহেশতের সুখ-শান্তি
বেহেশতের আরাম আয়েশ, সুখ শান্তিকি পরিমাণে মানুষকে দেওয়া হবে, তা মানুষের জ্ঞান ও কল্পনার
ঊর্ধ্বে। এ মর্মে আল্লাহ হাদীসে কুদসীতে ঘোষণা করেন-
أعددت لعبادى الصا لحین ما لا عین رأت ولا اذن سمعت ولا خطر على قلب
بشر.
আল্লাহ বলেন, “আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমন পুরস্কার প্রস্তুত রয়েছে, যা কোন চক্ষু
কখনো দেখেনি, কোন কর্ণ কখনো শোনেনি এবং কোন মানব হৃদয় কখনো কল্পনাও করেনি।”
বেহেশতের নিআমত চিরস্থায়ী ও অফুরন্ত
বেহেশতের সুখ-শান্তি, আনন্দ অসীম ও অফুরন্ত। এ নশ্বর জগতের সবকিছু সীমাবদ্ধ ও ক্ষয়শীল। ধন-
দৌলত, সুখ-শান্তি, রূপ-যৌবন, আরাম-আয়েশ ইত্যাদি যা কিছু পার্থিব জীবনে ভোগ-ব্যবহার করে,
তা একদিন নিঃশেষ হয়ে যায়। কিন্তু পারলৌকিক জীবনে আল্লাহ মানুষকে যে নিআমত-রাজি দান
করবেন, তা সবই চিরস্থায়ী ও অফুরন্ত। এ মর্মে আল্লাহ কুরআন মাজীদে বলেন-
إ ِنَّ ٱل َّذِینَ آمَنُوا ْ وَ عَمِل ُوا ْ ٱلصَّالِحَاتِ ل َھُمْ أ َجْرٌ غَیْرُ مَمْنُونٍ
“যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্নপুরস্কার।” (সূরা ফুস্সিলাত : ৮)
বেহেশতসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরের বেহেশত হল
জান্নাতুল ফিরদাউস এবং সর্বনিম্ন হল-জান্নাতু আদন।
সওয়াব ও পুণ্যের তারতম্য অনুসারে বেহেশতবাসীগণ
বিভিন্ন স্তরের বেহেশতে অবস্থান করবেন।
বেহেশতের পানীয়ের স্বাদ ও বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন-
إ ِنَّ ٱلأ َبْرَ ارَ یَشْرَ بُونَ مِن كَأ ْ سٍ كَانَ مِزَ اجُھَا كَافُورا ً
“সৎকর্মশীলরা পান করবে এমন পানীয় যার মিশ্রণ কাফূর।” (সূরা আদ-দাহর : ৫)
দোযখের বিবরণ
‘দোযখ’ ফারসী শব্দ। এর আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে নার বা জাহান্নাম। এর আভিধানিক অর্থ নরক, শাস্তির
জায়গা, দুঃখময় স্থান। ‘জাহান্নাম’ ও ‘নার’ উভয় শব্দের আক্ষরিক অর্থ আগুন তথা নরকাগ্নি।
শেষ বিচার দিবসে যারা পাপী, অপরাধী, নাফরমান বলে সাব্যস্তহবে এবং যাদের গুনাহর পাল্লা ভারী
হবে, তাদেরকে শাস্তিদেওয়ার জন্য চির দুঃখময় শাস্তির জায়গায় নিক্ষেপ করা হবে, তাকেই ‘জাহান্নাম’
বা দোযখ বা নরক বলা হয়। এ জাহান্নামী বা নরকীদের মধ্যে যারা কাফির ও মুশরিক হবে, তারা
অনন্তকালের জন্যই জাহান্নামের শাস্তিভোগ করবে। তবে যাদের হৃদয়ে অণুপরিমাণ ঈমান রয়েছে বলে
প্রমাণিত হবে, তারা পাপানুযায়ী শাস্তিভোগ করার পর দোযখ হতে মুক্তি পেয়ে বেহেশতে যাবার
অনুমতি পাবে।
দোযখের স্তর
শাস্তির ধরণ অনুযায়ী দোযখের বিভিন্ন স্তর রয়েছে এবং সে স্তর অনুযায়ী এর নামকরণ করা হয়েছে।
যেমন১. জাহান্নাম;
২. হাবিয়াহ;
৩. জাহীম;
৪. সাকার;
৫. হুতামাহ;
৬. লাযা;
৭. সাঈর।
দোযখ কঠিন শাস্তির স্থান
যারা পার্থিব জীবনে পাপাচারে লিপ্ত হবে, তারাই জাহান্নামের কঠিন শাস্তিভোগ করবে। পাপী লোকদের
অনন্তজীবনের কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন-
إ ِنَّ ٱلْمُجْرِ مِینَ فِى عَذَابِ جَھَنَّمَ خَالِدُونَ
“নিশ্চয় অপরাধীরা স্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকবে।” (যুখরূফ : ৭৪)
দোযখবাসীদের শাস্তির কঠেরতা সম্পর্কে মহান আল্লাহর বলেন-
فَلاَ یُخَفَّفُ عَنْھُمُ ٱلْع َذَابُ وَ لاَ ھُمْ یُنصَرُ ونَ
“সুতরাং তাদের শাস্তিলাঘব করা হবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না।” (সূরা আল-বাকারা : ৮৬)
দোযখের অভ্যন্তরে সত্তর হাজার তথা অগণিত অগ্নি-শাস্তিউপত্যকা আছে। প্রত্যেক উপত্যকায় সত্তর
হাজার তথা প্রচুর বিষধর সাপ ও সত্তর হাজার বিষধর তথা অনেক-অনেক বিচ্ছু রয়েছে। এরা
দোযখবাসীদেরকে অনবরত দংশন করতে থাকবে। দোযখের গভীরতা এতই বেশি যে, এর মুখ হতে
যদি এক খÐ পাথর নিক্ষেপ করা হয় এবং সত্তর বছর ধরে যদি ঐ পাথর নিচের দিকে পড়তে থাকে,
তবুও তা জাহান্নামের তলদেশে পৌঁছবে না। এমন ভীষণ আযাবের স্থল দোযখ।
দোযখে জাহান্নামীদেরকে অগ্নির খাদ্য, পানীয়, অগ্নির পরিধেয়, অগ্নির বিছানা দেওয়া হবে। অগ্নিতে
দগ্ধ হতে হতে যখন তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়বে এবং পানি পানি বলে চিৎকার করবে তখন তাদেরকে
দুর্গন্ধময় ফুটন্তপুঁজ, পঁচা রক্ত ইত্যাদি পুঁতি গন্ধময় পানীয় দেওয়া হবে। এমন দুর্গন্ধময় পানি তাদেরকে ‘দোযখ’ ফারসী শব্দ। এর আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে
নার বা জাহান্নাম। এর আভিধানিক অর্থ নরক,
শাস্তির জায়গা, দুঃখময় স্থান। ‘জাহান্নাম’ ও ‘নার’ উভয় শব্দের আক্ষরিক
অর্থ আগুন তথা নরকাগ্নি।
দেওয়া হবে, যার একবিন্দু পৃথিবীতে পতিত হলে সমগ্র পৃথিবী পুঁতি গন্ধময় হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে
যেত।
দোযখের আগুনের তেজস্ক্রিয়তা এত ভয়াবহ ও ভয়ংকর যে, পাপাসক্ত ব্যক্তিরা জাহান্নামের আগুনে
জ্বলতে জ্বলতে তাদের দেহের মাংস খসে পড়বে। অতঃপর নতুন মাংস ও চামড়া সৃষ্টি হবে এবং পুনরায়
তাদের ওপর ঐরূপ শাস্তিআসতে থাকবে। জাহান্নামের আগুন পৃথিবীর আগুনের চেয়ে অধিক তেজস্ক্রিয়
হবে।
পাপী লোকেরা বিশেষ করে কাফির-মুশরিকরা জাহান্নামের অনন্তকালীন কঠিন শাস্তিভোগ করতে
থাকবে। তারা দোযখের অনন্তকালীন শাস্তিহতে কখনও পরিত্রাণ পাবে না।
জান্নাত ও জাহান্নামের অস্তিত্ব
জান্নাত ও জাহান্নামের অস্তিত্ববর্তমানে আছে কিনা এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, মুতাযিলা
ও দার্শনিক স¤প্রদায়ের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
মুতাযিলাদের মত
মুতাযিলাদের মতে জান্নাত ও জাহান্নামের অস্তিত্ব আছে ঠিকই, তবে বর্তমানে নেই। আখিরাত তথা
বিচার দিবসে সৃষ্টি করা হবে।
ভ্রান্তদার্শনিকদের অভিমত
ভ্রান্তমতবাদের অধিকারী দার্শনিকদের মতে জান্নাত ও জাহান্নামের কোন অস্তিত্ব বর্তমানে নেই,
ভবিষ্যতেও হবে না।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অভিমত
তাঁদের মতে বেহেশত ও দোযখ বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে। তবে কোথায় আছে, এ সম্পর্কে কুরআনে
সুস্পষ্ট বর্ণনা না থাকলেও অধিকাংশ আলিমের মতে জান্নাত সপ্তম আসমানের উপর আরশের নিচে এবং
জাহান্নাম সাত স্তর জমিনের নিচে অবস্থিত।
জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমানে বিদ্যামান থাকার পক্ষে যে সকল যুক্তি উপস্থাপন করা হয় তা হচ্ছেআল্লাহ বলেন, “হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান বা বসবার কর।” এ থেকে বুঝা যায়
জান্নাত বর্তমানে বিদ্যামান আছে। কেননা জান্নাত বর্তমানে বিদ্যমান না থাকলে আল্লাহ তা’আলা
কীভাবে আদম (আ)-কে সেখানে অবস্থানের নির্দেশ দিলেন। কুরআনের আরও অনেক আয়াতে
জান্নাতের বর্তমান অবস্থানের কথা বোঝা যায়। জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমানে না থাকলে কুরআনে
এমনভাবে বলা হতো না।
পবিত্র মিরাজ এর শুভ রজনীতে মহানবী (স) জান্নাত ও জাহান্নাম ভ্রমণ করেছেন, যার প্রমাণ পবিত্র
কুরআনে রয়েছে। আল্লাহ বলেন, “তাঁকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে ভ্রমণ করিয়েছি” এর মাধ্যমে
জান্নাত ও জাহান্নামের কথাই বুঝা যাচ্ছে। যদি জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমানে মওজুদ না থাকত, তাহলে
মিরাজের রজনীতে মহানবী (স) কীভাবে তা প্রত্যক্ষ করেন।
অতএব নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ই বর্তমানে বিদ্যমান আছে। আর এসব কিছু
আল্লাহ তা’আলার অসীম কুদরতের বাস্তব নমুনা। আল্লাহ মহাক্ষমতার অধিকারী, তিনি অদৃশ্য জগতে
বিশাল জান্নাত ও জাহান্নাম তৈরি করে রাখতে সক্ষম। আলিমগণের মতে
বেহেশত ও দোযখ বর্তমানে বিদ্যমান
রয়েছে। তবে কোথায় আছে- সে সম্পর্কে কুরআনে সুস্পষ্ট বর্ণনা না
থাকলেও অধিকাংশ আলিমের মতে জান্নাত
সপ্তম আসমানের উপর আরশের নিচে এবং
জাহান্নাম সাত স্তর জমিনের নিচে অবস্থিত।
সারসংক্ষেপ
ইহকালই মানবজীবনের শেষ নয়। মৃত্যুর পর রয়েছে এক অনন্তজীবন। সেখানে মানুষকে পার্থিব
জীবনের ভাল ও মন্দ কাজের হিসাব দিতে হবে। ঈমান, সততা, তাকওয়া- পরহেজগারীর মানদÐে
উত্তীর্ণ ব্যক্তির জন্য রয়েছে জান্নাত। আর অসৎ পাপী ভÐ লোকদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।
বেহেশতের অনন্তসুখ-শান্তি, ভোগ-বিলাস এবং আরাম-আয়েশের কথা মানবীয় বুদ্ধির অগম্য বিধায়
আল্লাহ কুরআনে বিভিন্ন বোধগম্য উপমা দ্বারা বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে বেহেশতের
অফুরন্তসুখ বিলাস ও নিয়ামতরাশি এবং আরাম আয়েশের প্রকৃত স্বরূপ, পার্থিব সুখ বিলাস হতে যে
কত বেশি ও উন্নতর, তা অকল্পনীয়। আর দোযখ অতীব ভয়ানক বিভীষিকাময় শাস্তি, দুঃখময় এবং
যন্ত্রণাদায়ক স্থান। এ নাম শুনলেই শরীর শিউরে উঠে। এটা একটা ভীষণ জ্বলন্তঅগ্নিকুÐ। আল্লাহর
অবাধ্য, বেঈমান, মুনাফিক, কাফির, মুশরিক, পাপাচারী তথা দুষ্কৃতিকারীদের শাস্তির স্থান হলো এ
জাহান্নাম। সেখানে এদের জন্য থাকবে শাস্তির হাজারো রকম ব্যবস্থা। প্রত্যেকটি শাস্তিহবে ভীষণ
থেকে ভীষণতর। বিভিন্ন পাপের জন্য বিভিন্ন প্রকৃতির শাস্তির যে ব্যবস্থা হবে, মহানবী (স)
মিরাজের রাতে জাহান্নামীদের পরিদর্শনে গেলে জিব্রাঈল (আ) সেগুলো তাকে দেখিয়েছিলেন।
অতএব আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির ভয়াবহতার কথা সদা স্মরণ রেখে দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (স) প্রদর্শিত পথে জীবন পরিচালনা করে জাহান্নামের শাস্তিহতে নাজাত পাবার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। নোট করুন
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. কোনটি বেহেশতের স্তরক. দারুল কারার;
খ. জাহীম;
গ. বাইতুল খুলদ;
ঘ. দারুল আমান।
২. বেহেশতের সর্বোচ্চ স্তর কোনটি?
ক. জান্নাতুন নাঈম;
খ. জান্নাতু আদন;
গ. দারুস সালাম;
ঘ. জান্নাতুল ফিরদাউস।
৩. কোন শব্দটি দোযখ অর্থ বোঝায় না?
ক. জাহান্নাম;
খ. নার;
গ. নূর;
ঘ. নরক।
৪. দোযখের স্তর নয় কোনটি?
ক. জাহান্নাম;
খ. জাহীম;
গ. হুতামাহ;
ঘ. যাক্কুম।
৫. কারা মনে করেন বেহেশত ও দোযখ বর্তমানে বিদ্যমান রয়েছে?
ক. সুন্নীরা;
খ. মুতাযিলারা;
গ. ভ্রান্তদার্শনিকরা
ঘ. আস্তিকগণ।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. বেহেশত অর্থ কী এবং এর স্তর কয়টি ও কী কী? লিখুন।
২. বেহেশতের অবস্থান ও পরিবেশ সম্বন্ধে বিবরণ দিন।
৩. দোযখ কী? দোযখের স্তর ও শাস্তির বর্ণনা দিন।
৪. বর্তমানে জান্নাত ও জাহান্নামের অস্তিত্বআছে কী? মতামতগুলো বিশ্লেষণ করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. জান্নাত ও জাহান্নাম বলতে কী বুঝায়? জান্নাতের নিয়ামত ও জাহান্নামের শাস্তির বিরবণ দিন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]