সমস্যা সংকুল এ পৃথিবীতে মানুষের পদচারণার সূচনা লগ্ন হতে জীবনাবসান পর্যন্তপ্রতিটি স্তরে, প্রতিটি পদক্ষেপে ও
প্রতিটি ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ব্যক্তি জীবন হতে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়,
জাতীয়, আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক-জীবন অবধি জীবনের প্রতিটি
অধ্যায় ও বিভাগে সমস্যার অন্তনেই। মানবজাতিকে এ সমস্যার আবর্ত হতে মুক্ত করে সুষ্ঠু-শান্তিময় জীবন পরিচালনার
জন্য আল্লাহ যুগে যুগে অগণিত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। জীবন সমস্যার সমাধান হিসেবে তাদেরকে দান করেছেন
আসমানী কিতাবসমূহ। এ ধারায় সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর প্রতি সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল-কুরআন
নাযিল করে মানবজীবনের সর্ববিধ সমস্যার সমাধান উপস্থাপন করেছেন। এ পবিত্র মহাগ্রন্থে জীবন-সমস্যার সমাধানের
যে মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে, বিশ্বনবী (স) তাঁর জীবনে তা অনুসরণ, অনুশীলন ও বাস্তবায়ন করে বিশ্বমানবতার কাছে
একটি জীবন্তআদর্শ রেখে গেছেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
وَ ل َقَدْ صَرَّ فْنَا فِى ھَـٰذَا ٱل ْق ُرْ آنِ لِلنَّاسِ مِن كُلِّ مَث َلٍ
“আমি মানুষের জন্য এ কুরআনে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।” (সূরা আল-কাহাফ : ৫৪)
তাঁর আরো ঘোষণা-
قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ ٱلل َّھِ نُورٌ وَ كِتَابٌ مُّب ِینٌ -یَھْدِى ب ِھِ ٱلل َّھُ مَنِ ٱتَّبَعَ رِ ضْوَ انَھُ سُبُلَ ٱلسَّلاَمِ
وَ یُخْ رِ جُھُمْ مِّنَ ٱلظُّل ُمَاتِ إ ِل َى ٱلنُّورِ ب ِإ ِذ ْنِھِ وَ یَھْدِیھِمْ إ ِل َىٰ صِ رَ اطٍ مُّسْتَقِیمٍ
“আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের নিকট এক জ্যোতি ও সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় এর
দ্বারা তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে
আসেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন।” (সূরা আল-মায়িদা : ১৫-১৬)
إ ِنَّ ھَـٰذَا ٱلْق ُرْ آنَ یَھْدِى لِل َّتِى ھِىَ أ َق ْوَ مُ -ছয়েহে ঘাষিত আেরও নকেুরআ
“নিশ্চয় এ কুরআন কেবল সে পথেরই সন্ধান দেয়, যা সুদৃঢ়।” (সূরা বনী ইসরাইল : ৯)
বস্তুত কুরআন মাজীদ বিশ্ব মানবতার সর্ববিধ সমস্যার পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ সমাধান পেশ করেছে।
ব্যক্তিগত জীবন সমস্যা সমাধানে আল-কুরআন
ব্যক্তি জীবনে মানুষের বিশ্বাস, চিন্তা ও লক্ষ্য নির্ধারণের ওপর নির্ভর করে তার জীবনের শান্তি, উন্নতি আর মুক্তি। আলকুরআন বলে দেয় মানুষের সে সব বিষয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ সমাধান। শিরক, বিদ’আত,অবিশ্বাস, কপটতা, নিজ প্রবৃত্তির
অনুসরণ পরিহার করে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি কুরআন দিকনির্দেশ করে। সর্বপ্রকার অন্যায়, অনাচার,
অত্যাচার, পাপাচার, হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার করে পূত:পবিত্র ও নিষ্কলুষ জীবনাচারের প্রতি কুরআন ব্যক্তিকে আহবান
জানায়। অপরদিকে ব্যক্তিগত জীবনে মানবের দেহ-মন ও আত্মার সমন্বয় সাধন না হলে মানবের ব্যক্তি জীবন
সমস্যাসংকুল ও বিপর্যস্তহয়ে ওঠে। এ দেহ-মন ও আত্মাকে পরিচালিত করার নির্দেশনায় কুরআন ঘোষণা করেছে-
أ َلاَ ب ِذِكْرِ ٱلل َّھِ تَطْمَئِنُّ ٱل ْق ُل ُوبُ
“জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্তহয়।” (সূরা আর-রাদ: ২৮) সুতরাং সকল কাজে যদি মানুষ তার মহান প্রভু
আল্লাহকে স্মরণে রেখে প্রতিনিয়ত চলে, তবে তার ব্যক্তিগত জীবন অবশ্যই প্রশান্তিময় হয়ে ওঠে। ব্যক্তি হচ্ছে মূল
আলোচ্য বিষয়। কারণ, তার ব্যক্তি চরিত্র সংশোধন হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের সবই সঠিকভাবে চলতে পারে এবং মানুষের
কল্যাণ হতে পারে। আল-কুরআন বলে-
وَ نَفْسٍ وَ مَا سَوَّ اھَا - فَأ َلْھَمَھَا ف ُجُورَ ھَا وَ تَقْوَ اھَا - قَدْ أ َفْل َحَ مَن زَ كَّاھَا - وَ قَدْ خَابَ مَن
دَسَّاھَا
“শপথ মানুষের এবং তাঁর যিনি তাকে সুঠাম করেছেন, অত:পর তাকে তার অসৎকর্ম ও তার সৎকর্মের জ্ঞান দান
করেছেন। সে-ই সফলকাম হবে যে নিজেকে পবিত্র করবে এবং সে-ই ব্যর্থ হবে, যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করবে।”
(সূরা আশ- শামস : ৭-১০)
مَنْ عَمِلَ صَالِحا ً فَلِنَف ْسِھِ -রনকে ঘাষণা আেল্লাহ মহানঙ্গে প্রস এ
“যে সৎকাজ করে সে তার কল্যাণের জন্যই করে।” (সূরা আল-জাসিয়া : ১৫)
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
إ ِنَّا ھَدَیْنَاهُ ٱ لسَّب ِیلَ إ ِمَّا شَاكِرا ً وَ إ ِمَّا كَفُورا ً
“আমি তাকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।” (সূরা আদ-দাহর : ৩) এ
প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন -
مَّنِ ٱھْتَدَىٰ فَإ ِنَّمَا یَھْتَدِى لِنَف ْسِھِ وَ مَن ضَلَّ فَإ ِنَّمَا یَضِ لُّ عَل َیْھَ ا وَ لاَ تَزِ رُ وَ ازِ رَ ةٌ وِزْ رَ
أ ُخْ رَ ىٰ
“যারা সৎপথ অবলম্বন করবে তারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্য সৎপথ অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে তারা তো
পথভ্রষ্ট হবে নিজেদেরই ধ্বংসের জন্য এবং কেউ অন্য কারো ভার বহন করবে না।” (সূরা আল-ইসরা : ১৫)
মহানবী (স) বলেন,
ان اللھ لا ینظر الى صوركم وامو الكم ولكن ینظر الى قلو بكم واعما لكم
“আল্লাহ তোমাদের কারো আকার-আকৃতি ও ধন-সম্পদের দিকে তাকান না; বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও
কাজসমূহ।” (আবু হুরাইরা থেকে মুসলিম)
পারিবরিক জীবন সমস্যা সমাধানে আল-কুরআন
সামাজিক জীবনের প্রাথমিক সংঘ পরিবার। পরিবার ব্যবস্থা ছাড়া সভ্যতা মূল্যহীন। ইসলাম পরিবার ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
প্রদান করেছে। আল্লাহ পরিবার ব্যবস্থাকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য বহু বিধান নাযিল করেছেন। কুরআন মাজীদ
পূত:পবিত্র দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমে যৌন চাহিদা মেটানো এবং মানব বংশ বিস্তার করার জন্য সুষ্ঠু, সুন্দর ও সমৃদ্ধময়
পারিবারিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরত্বারোপ করেছে। বহু গামিতা-অমিতাচার, ব্যভিচার, সমকামিতা,
পতিতাবৃত্তি, লিভ্ টুগেদার ইত্যাদির ন্যায় সামাজিক অভিশাপ চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বিবাহ বহির্ভূত
যৌনাচার মানব সভ্যতার জন্য মরণব্যাধি। তা মানব সভ্যতা সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের জন্যও
তা মারাত্মক এবং ভয়াবহ। এজন্য ইসলাম বিবাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে মানব চরিত্র সমুন্নত রেখে সুখী জীবনের দিগন্ত
উন্মোচন করে দিয়েছে। মানব মর্যাদা ও মানব বংশ বৃদ্ধি ক্ষেত্রে রক্তের পবিত্রতা সংরক্ষণ করেছে।
কুরআন ঘোষণা করেছে-
یٰأ َیُّھَا ٱلنَّاسُ ٱتَّق ُوا ْ رَ بَّكُمُ ٱل َّذِى خَل َقَكُمْ مِّن نَّفْسٍ وَ احِ دَةٍ وَ خَل َقَ مِنْھَا زَ وْ جَھَا وَ بَثَّ
مِنْھُمَا رِ جَالا ً كَثِیرا ً وَ نِسَآءً
“হে মানব! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা থেকেই
সৃষ্টি করেছেন তার জুড়িকে এবং যিনি তাদের দুজন হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।” (সূরা আন-নিসা : ১)
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
خَل َقَ ل َكُم مِّنْ أ َنفُسِكُمْ أ َزْ وَ اجا ً ل ِّتَسْكُنُوۤ ا ْ إ ِل َیْھَا وَ جَع َلَ بَیْنَكُم مَّوَ دَّةً وَ رَ حْمَة ً
“তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সংগিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি
পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসাও ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আর-রূম : ২১)
মানব পরিবার গঠন করার পদ্ধতি ঘোষণা করে আল-কুরআন বলে-
فَٱنكِحُوا ْ مَا طَابَ ل َكُمْ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ
“তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে।” (সূরা আন-নিসা : ৩)
পরিবারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শান্তিতে বসবাস করা এবং সুখী জীবন-যাপন করা। আল-কুরআন এ ব্যাপারে আরো
ھُوَ ٱل َّذِى خَل َقَكُمْ مِّن نَّفْسٍ وَ احِ دَةٍ وَ جَع َلَ مِنْھَا زَ وْ جَھَا لِیَسْكُنَ إ ِل َیْھَاছলেবে
“তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন যাতে সে তার নিকট শান্তি
পায়।” (সূরা আল-আরাফ : ১৮৯)
মূলত একজন মানুষ তার পরিবারে যে শান্তি-স্বস্তিও নিরাপত্তা বোধ করে, তা আর কোথাও লাভ করে না। বিবাহের
আরো অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে চরিত্রের পবিত্রতা সংরক্ষণ ও জীবনের নিরাপত্তা। কুরআন বলছে-
فَٱنكِحُوھُنَّ ب ِإ ِذْنِ أ َھْلِھِنَّ وَ آتُوھُنَّ أ ُجُورَ ھُنَّ ب ِٱلْمَعْرُ وفِ مُحْصَنَاتٍ غَیْرَ مُسَافِحَاتٍ وَ لاَ
مُتَّخِ ذَاتِ أ َخْ دَانٍ
“সুতরাং তাদের বিবাহ করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং তাদেরকে তাদের মোহর ন্যায়সংগতভাবে দিবে।
তারা হবে সচ্চরিত্রা, ব্যভিচারিনী নয় ও উপ-পতি গ্রহণকারিণীও নয়।” (সূরা আন-নিসা : ২৫)
বিয়ে ব্যতীত কোন নারীর সাথে যৌন মিলন ইসলামে মারাত্মক অপরাধ। তাই ইসলাম নর-নারীর নৈতিক পবিত্রতা ও
সতীত্ব সুরক্ষার জন্য এ বিবাহ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। ইসলামী পরিবার হচ্ছে মানুষের শিক্ষাগার, নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল,
পবিত্রতার আঙিনা, সুখ-শান্তির আবাসস্থল।
মাতা-পিতা, স্বামী-স্ত্র, পুত্র-কন্যা, ভাই-বো প্রমুখ স্বজনদের সমন্বয়ে গঠিত পরিবারে প্রত্যেক সদস্যেরই পারস্পরিক
দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে বলে কুরআন ঘোষণা করেছে-
فَآتِ ذَا ٱلْق ُرْ بَىٰ حَق َّھُ
“অতএব আত্মীয়কে দিবে তার হক।” (সূরা আর-রূম : ৩৮
কুরআনের এ নির্দেশনার দ্বারা যুগ যুগ ধরে চলে আসা পরিবারের সদস্যদের অধিকার হতে বঞ্চনার অবসান ঘটল এবং
মানব জাতি পারিবারিক জীবনে জটিল সমস্যার সমাধান খুঁজে পেল।
সামাজিক জীবন সমস্যার সমাধানে আল-কুরআন
সমাজে বসবাস করতে গিয়ে মানুষকে অগণিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সে সব সামাজিক সমস্যার সুষ্ঠু ও পরিপূর্ণ
সমাধান পেশ করেছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। সুষ্ঠু-শান্তিময় সমাজ জীবনের পরিপন্থী যাবতীয় অনাচার-অত্যাচার,
শোষণ, নির্যাতন, ঝগড়া-বিবাদসহ সব ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য কুরআন কঠোরভাবে
নিষেধ করেছে। অপরদিকে সকলের প্রতি ইনসাফ ও ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেয়া হয়েছে। সমাজের
সর্বস্তরের লোকদের মধ্যে সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর অধিকার আদায় করার জন্য কুরআনের নির্দেশনা
রয়েছে।
وَ ٱلْجَارِ ذِى ٱلْقُرْ بَىٰ وَ ٱلْجَارِ ٱلْجُنُبِ -ছলেবে কুরআন, যমনে
“নিকট প্রতিবেশী ও দূর প্রতিবেশী।” (সূরা আন-নিসা : ৩৬)
সমাজ জীবনের মূল কথা হচ্ছে সকল মানুষের কল্যাণ কামনা করা। পবিত্র কুরআন দ্বর্থহীনভাবে একথা বলেছে-
وَ أ َحْسِن كَمَآ أ َحْسَنَ ٱلل َّھُ إ ِل َیْكَ
“তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।” (সূরা আল-কাসাস : ৭৭)
আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি মানুষের দায়িত্ব সম্পর্কে কুরআন বলেছে-
وَ مَن یُع َظِّ مْ شَع َائِرَ ٱلل َّھِ فَإ ِنَّھَا مِن تَقْوَ ى ٱلْق ُل ُوبِ
“কেউ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের তাকওয়া সজ্ঞাত।” (সূরা আল-হাজ্জ : ৩২)
সমাজের মানুষের প্রতি পরস্পরের অধিকার সম্পর্কে কুরআন বলেছে-
وَ ٱخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَع َكَ مِنَ ٱلْمُؤْ مِنِینَ
“এবং যারা তোমার অনুসরণ করে সেই সমস্তমুমিনদের প্রতি বিনয়ী হও।” (সূরা আশ-শুআরা : ২১৫)
সমাজের অভাবী, বঞ্চিত, দুঃখী ও বিপন্ন মানবতার প্রতি সমাজের অন্য সদস্যদের কর্তব্য রয়েছে।
কুরআন বলেছে - ْرَھْنَتَ لاَفَ لِٱلسَّآئ مَّا َأَ و “এবং প্রার্থীকে ভর্ৎসনা করো না।” (সূরা আদ্-দুহা : ১০) এ প্রসঙ্গে
وَ فِيۤ أ َمْوَ الِھِمْ حَقٌّ ل َّلسَّآئِلِ وَ ٱل ْمَحْرُ ومِ -রনকে ঘাষণা আেল্লাহ মহান
“এবং তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্তও বঞ্চিতদের হক ।” (সূরা আল-যারিয়াত : ১৯)
সমাজের পরস্পরের প্রতি সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। আল-কুরআন এ ব্যাপারে বলেছে-
وَ تَع َاوَ نُوا ْ عَل َى ٱلْبرِّ وَ ٱلتَّقْوَ ىٰ وَ لاَ تَع َاوَ نُوا ْ عَل َى ٱلإِ ث ْمِ وَ ٱلْعُدْوَ انِ
“সৎকর্মও তাকওয়ার কাজে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা করবে এবং খারাপ ও সীমালঙ্ঘনমূলক কাজে সহযোগিতা
করবে না।” (সূরা আল মায়িদা : ২)
ইসলামী সমাজের আচরণবিধি উল্লেখ করে ঘোষণা করা হয়-
إ ِنَّمَا ٱلْمُؤْ مِنُونَ إ ِخْ وَ ةٌ فَأ َصْلِحُوا ْ بَیْنَ أ َخَوَ یْكُمْ
“মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে শান্তিস্থাপন করো।” (সূরা আল-হুজুরাত : ১০)
ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ ইসলামী সমাজের কর্মনীতি। আল-কুরআন ঘোষণা করেছে-
كُنْتُمْ خَیْرَ أ ُمَّةٍ أ ُخْرِ جَتْ لِلنَّاسِ تَأ ْمُرُ ونَ ب ِٱلْمَعْرُ وفِ وَ تَنْھَوْ نَ عَنِ ٱلْمُنْكَرِ وَ تُؤْ مِنُونَ ب ِٱلل َّھِ
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মাত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে; তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজের
নিষেধ কর এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করো।” (সূরা আলে-ইমরান : ১১০)
সমাজে মানুষ শুধু আল্লাহর বিধান মোতাবেক চলবে। সমস্তকাজ তাঁরই জন্য করবে। বস্তুত কুরআনের উপস্থাপিত
সামাজিক বিধান প্রতিষ্ঠা হলে সমাজ জীবনে কোন সমস্যাই থাকতে পারে না।
রাষ্ট্রীয় জীবন সমস্যার সমাধানে আল-কুরআন
সমাজের বৃহত্তর অঙ্গন হচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় জীবনের সুখ-শান্তিও সমৃদ্ধি নির্ভর করে সরকার ও প্রজা সাধারণের মধ্যে
মধুর সম্পর্ক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং পারস্পরিক সংহতির উপর। আল-কুরআন সরকার ও সরকার প্রধানকে
জনগণের সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য “শূরা” ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা কায়েমের নির্দেশনা দান করেছে।
রাষ্ট্রীয় জীবনের সমস্যাসমূহ সমাধানকল্পে পবিত্র কুরআনের এ নির্দেশনা বিশ্ববাসীর নিকট চির কাক্সিক্ষত আদর্শ রাষ্ট্র
ব্যবস্থা রূপেই বিধৃত হয়ে আসছে।
মানুষ আল্লাহর খলীফা। তাই মানুষের নিজের আইন রচনা করার অধিকার নেই। তার একমাত্র কাজ হল বিশ্বপ্রভুর
দেয়া প্রত্যেকটি নির্দেশ ও বিধান পালন করা। কুরআন বলেছে-
أ َلاَ ل َھُ ٱلْخَلْقُ وَ ٱلأ َمْرُ
“জেনে রেখ, সৃষ্টি ও আদেশ তাঁরই। (সূরা আল-আরাফ : ৫৪)
وَ ھُوَ خَیْرُ ٱل ْحَاكِمِینَ - সছএে নকেুরআ্-আল। াতাদবিধান উত্তম তিনি কননাে
“আল্লাহই সর্বোত্তম বিধানদাতা।” (সূরা ইউনুস : ১০৯)
মানব রচিত আইন মেনে চলা কুফরি ও শিরক। আল-কুরআনের ঘোষণা-
وَ مَن ل َّمْ یَحْكُم ب ِمَآ أ َنزَ لَ ٱلل َّھُ فَأ ُوْ ل َـٰئِكَ ھُمُ ٱلْكَافِرُ ونَ
“আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই কাফির।” (সূরা আল-মায়িদা : ৪৪)
রাজনৈতিক শক্তি ব্যতীত কোন আদর্শই সমাজে বস্তবায়িত হতে পারে না। তাই ইসলাম রাজনীতিকে প্রত্যেক নবী ও
ঈমানদার লোকদের জন্য বিধিবদ্ধ করে দিয়েছে। কুরআন বলেছে-
شَرَ عَ ل َكُم مِّنَ ٱلدِّینِ مَا وَ صَّىٰ ب ِھِ نُوحا ً وَ ٱل َّذِيۤ أ َوْ حَیْنَآ إ ِل َیْكَ وَ مَا وَ صَّیْنَا ب ِھِ إ ِبْرَ اھِیمَ
وَ مُوسَىٰ وَ عِیسَىٰ أ َنْ أ َقِیمُوا ْ ٱلدِّینَ وَ لاَ تَتَفَرَّ ق ُوا ْ فِیھِ
“তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দীন যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে, আর যা আমি ওহী করেছি
তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই বলে যে, তোমরা দীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং
তাতে মতভেদ করো না।” (সূরা আশ-শূরা : ১৩)
সকল নবীর দায়িত্ব ছিল আল্লাহর দ্বীন কায়েম অর্থাৎ আল্লাহর প্রতিটি বিধানকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা। কুরআনের ভাষায়
যাকে বলে দ্বীন কায়েম, আজকের যুগে তাকে বলা হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতির মাধ্যমে সমাজের ক্ষমতা, আইনকানুন, নিয়ম-নীতি সংস্কৃতি পরিবর্তন করা যায়। আর নবীরা এসেও এ কাজটি করেছিলেন। আর এ হচ্ছে সমাজ থেকে
মানব রচিত ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান কায়েম করা। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বর্ণিত আছে-
وَ ٱجْع َل ل ِّى مِن ل َّدُنْكَ سُلْطَانا ً نَّصِ یرا ً
“এবং তোমার নিকট হতে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।” (সূরা আল-ইসরা : ৮০)
মহানবী (স) মক্কায় তের বছর দীনের প্রচার করলেন। কিন্তু দীনের কোন বিধান সমাজে কায়েম করতে পারেননি। তাঁর
হাতে তখন রাষ্ট্র ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু মদীনায় গিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা পেয়ে মাত্র ১০ বছরে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিধান
বাস্তবায়ন করেছেন। এজন্য মহানবী (স) বলেন,
ان اللھ لینزع بالسلطان مالا ینزع بالقران
“নিশ্চয় আল্লাহ রাষ্ট্র শক্তির সাহায্যে এমন অনেক কাজ সম্পন্ন করেন, যা কুরআন দ্বারা করেন না।”
আল্লাহর অনেক বিধান কায়েমের জন্য রাষ্ট্র শক্তি অপরিহার্য। যেমন, হত্যা, যিনা, চুরি, ডাকাতি-যুদ্ধ ইত্যাদির বিধান।
পরাধীন জাতি রাজনীতি থেকে দূরে থাকে। “হযরত মূসা বললেন, হে আমার জাতির ভাইয়েরা! আল্লাহ তোমাদের
জন্য একটি পবিত্র ভূমি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তা দখল কর, পেছনে হটবে না, অন্যথায় ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্তহবে।”
(সূরা আল-মায়িদা : ২১)
প্রত্যেক নবী-ই রাজনিিত করেছেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। আল-কুরআন বলেছে-
إ ِذْ جَع َلَ فِیكُمْ أ َنْب ِیَآءَ وَ جَع َل َكُمْ مُّل ُوكا ً
“তিনি তোমাদের মধ্যে নবী সৃষ্টি করেছেন এবং শাসক বানিয়েছেন।” (সূরা আল-মায়িদা : ২০)
আন্তর্জাতিক জীবন সমস্যার সমাধানে আল-কুরআন
মানব সমাজের বৃহত্তম অঙ্গন হচ্ছে আন্তর্জাতিকতা। মানুষের আন্তর্জাতিক জীবনের শান্তি-সুখ নির্ভর করে বিশ্বের বিভিন্ন
দেশ, রাষ্ট্র ও জাতির পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপর। কেননা পৃথিবীতে রয়েছে
রকমারি ভাষা, বর্ণ, ধর্ম, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সভ্যতা ও জাতীয়তা। তাই পরস্পরের প্রতি সহনশীলতা ও মানবপ্রেমের
নীতি অনুসরণ করতে বলেছে ইসলাম। এ মর্মে পবিত্র কুরআন ঘোষণা করেছে-
یٰأ َیُّھَا ٱلن َّاسُ إ ِنَّا خَل َقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَ أ ُنْثَىٰ وَ جَع َلْنَاكُمْ شُعُوبا ً وَ قَبَآئِلَ لِتَع َارَ فُوۤ ا ْ
“হে মানব! আমি তোমাদেরকে একজন নর ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং পারস্পরিক পরিচয়ের জন্য বিভিন্ন
জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি।” (সূরা আল-হুজুরাত : ১৩)
সকল জাতি ও রাষ্ট্রের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে সহবস্থানই হচ্ছে ইসলামের মূলকথা। সকল মানুষই আল্লাহর বান্দা ও
আদমের সন্তান। অতএব বিশ্বের সকল মানুষকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে সকল মানুষের মঙ্গল কামনা করাই
আল্লাহর বিধান। বিনা অপরাধে দুনিয়ার যে কোন মানুষকে কষ্ট দেয়া মহাপাপ, আর সে যে কোন ধর্ম, বর্ণ ও জাতির
হোক না কেন। ইসলামী আন্তর্জাতিকতাবাদের মূলনীতি হলো১. সন্ধি ও সহ-অবস্থান ঃ যে কোন জাতি বা রাষ্ট্র সন্ধি করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে, তাদের সাথে সন্ধি করতে হবে।
যুদ্ধ নয় শান্তিই হচ্ছে ইসলামের নীতি। কুরআন বলেছেاَھ َلْ حَنْٱجَفِ مْلسَّلِل ْ واُحَنَج ن ِإَ و“তারা যদি সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে তুমিও সন্ধির দিকে ঝুঁকে
পড়বে।” (সূরা আল-আনফাল : ৬১)
২. আশ্রয় প্রার্থীকে আশ্রয়দান ঃ কোন মানুষ বা জাতি যদি অত্যাচারীদের থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় ও সাহায্য চায়,
তবে তাকে আশ্রয় ও সাহায্য দান করা ইসলামের শিক্ষা।
৩. চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন ঃ কোন জাতি বা রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি হলে অবশ্যই চুক্তি মেনে চলতে হবে।
৪. বাড়াবাড়ির সমুচিত জবাবদান ঃ কোন রাষ্ট্র যদি বাড়াবাড়ি করে তার সমুচিত জবাব দিতে হবে, নচেৎ পৃথিবীতে
অশান্তিবেড়ে যাবে।
৫. চুক্তি বহির্ভূত জাতির সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ ঃ যে সব জাতি সন্ধি ও চুক্তিতে আবদ্ধ, তাদের সাথে সদাচরণ করার
সাথে সাথে চুক্তি বহির্ভূত জাতির সাথেও সদাচরণ করা ইসলামী আন্তর্জাতিকতাবাদের নীতি।
৬. আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ঃ নিজেরা ক্ষতিগ্রস্তহলেও ন্যায়নীতি থেকে বিচ্যুৎ হওয়া যাবে না। মুসলিম সামজ
হবে বিশ্বের জন্য ন্যায়নীতির মডেল।
৭. মজলুম মুসলমানকে সাহায্য করা ঃ পৃথিবীর যে কোন স্থানে মুসলমান নির্যাতিত হলে তাদেরকে সাহায্য করাও
ইসলামী আন্তর্জাতিক নীতির অন্যতম লক্ষ্য।
وَ إ ِنِ ٱسْتَنصَرُ وكُمْ فِى ٱلدِّینِ فَع َل َیْكُمُ ٱلنَّصْرُ
“আর দীন সম্বন্ধে যদি তারা তোমাদের সাহায্য প্রার্থনা করে, তবে তাদেরকে সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য।”
(সূরা আল-আনফাল : ৭২)
৮. দ্বি-মুখীনীতি পরিহার ঃ মুখে যা বলা হবে, কাজে তাই করা হবে। চুক্তি ও সন্ধি যা করা হবে, বাস্তবেও তা পালন
করা হবে। এর ব্যতিক্রম করা অপরাধ। এটা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের জন্যও প্রযোজ্য।
৯. পৃথিবীতে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে অস্ত্রধারণ ঃ মানুষের উপর হতে মানুষের প্রভুত্ব, কর্তৃত্ব, যুলুম, নির্যাতন,
নিস্পেষণ, অশান্তি, দুঃখ ও দুর্দশা বন্ধ করার জন্য অস্ত্রধারণ করতে হলেও তাতে কিছু মাত্র আপত্তি থাকতে পারে
না। আল-কুরআন বলেÑ ِل ْتَقْٱلَ نِم دَُّش َأ ُ ةَن ْتِفْٱلَ و“ফিতনা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর।”(সূরা আল-বাকারা : ১৯১)
সুতরাং ইসলামের এ আন্তর্জাতিক জীবনবোধকে অনুসরণ করলে বিশ্বে কোন সমস্যা থাকতে পারে না।
অর্থনৈতিক জীবন সমস্যার সমাধানে আল-কুরআন
জড়বাদী সভ্যতা অর্থনৈতিক সমস্যাকে সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে অভিহিত করেছে। ইসলাম যদিও অর্থনৈতিক
সমস্যাকে একমাত্র বা বড় সমস্যা স্বীকার করে না; তবু ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় এর গুরুত্ব কম নয়। তাই আল-কুরআন
বিশ্বমানবতাকে উপহার দিয়েছে একটি শোষণহীন সুষম অর্থব্যবস্থা।
আল-কুরআনে নির্দেশ রয়েছে যে, সম্পদের উপর কোন ব্যক্তি বা স¤প্রদায়ের একক অধিকার নেই; বরং তা সমাজের
সকরের মধ্যে আবর্তিত হবে। আল-কুরাআনের আলোকে বিত্তবান লোকদের সম্পদে সমাজের সে সকল-লোকেরও
অধিকার রয়েছে, যারা অভাব ও প্রয়োজনের তাকীদে সাহায্যের জন্য হাত বাড়াতে বাধ্য হয় এবং যারা অভাবগ্রস্তহওয়া
সত্তে¡ও লজ্জা এবং মান-সম্মানের ভয়ে অপরের কাছে হাত পাতে না। আল-কুরআন বলেছে-
وَ فِيۤ أ َمْوَ الِھِمْ حَقٌّ ل َّلسَّآئِلِ وَ ٱلْمَحْ رُ ومِ
“এবং তাদের সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্তও বঞ্চিতদের অধিকার।” (সূরা আয-যারিয়াত : ১৯)
যাকাত, ওশর, খারাজ, ফাই, গণীমত, সাদাকা, জিযিয়া প্রভৃতি কুরআনিক অর্থনীতির মূলভিত্তি। ইসলামে সুদ-ভিত্তিক
অর্থব্যবস্থাকে হারাম, পক্ষান্তরে ব্যবসা-বাণিজ্যকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ,
অপহরণ ও আত্মসাৎকে হারাম করা হয়েছে।
̈ধমে রদেতামা তে“েযাكَىْ لاَ یَكُونَ دُول َة ً بَیْنَ ٱلأ َغْنِیَآءِ مِنكُم◌ْ -ছ”েহ নীতি ারস্থব্যবর্থ অ নরকেুরআ
যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যে ঐশ্বর্য আবর্তন না করবে।” (সূরা আল-হাশর : ৭)
আর এ নীতি অনুসরণ করেই ইসলাম অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যাবতীয় সমস্যার সমাধান করেছে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশে আল-কুরআন
মানুষের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবনেও কুরআনে রয়েছে সুষ্ঠু ও পরিশিলীত ভাবধারা এবং মূল্যবোধ ভিত্তিক প্রগতিশীল
ব্যবস্থা। সকলের জন্য শিক্ষাকে ইসলাম বাধ্যতামূলক করেছে। তাওহীদভিত্তিক ও আখিরাত কেন্দ্রিক বিশ্বাসের
ভিত্তিমূলে তৈরি কুরআনের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সমস্যাবলীর অত্যন্তসুষ্ঠু সমাধান রয়েছে সর্বকালের মানুষের জন্য।
জ্ঞানার্জন করা সকল ফরযের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ফরয। কারণ জ্ঞান ব্যতীত মহান আল্লাহকে চেনা যায় না। আল্লাহর
ইবাদত করা যায় না। আল্লাহর নবীর উপর প্রথম নাযিলকৃত বাণী হলো-
ٱقْرَ أ ْ ب ِٱسْمِ رَ بِّكَ ٱل َّذِى خَل َقَ
“পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আলাক : ১)
ق ُلْ ھَلْ یَسْتَوِى ٱل َّذِینَ یَعْل َمُونَ وَ ٱل َّذِینَ لاَ یَعْل َمُونَ
“বল ! যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান?” (সূরা আয-যুমার : ৯)
إ ِنَّمَا یَخْ شَى ٱلل َّھَ مِنْ عِبَادِهِ ٱلْعُل َمَاءُ -
“আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানী তারাই যারা তাঁকে ভয় করে।” (সূরা আল-ফাতির : ২৮)
وَ لاَ تَقْفُ مَا ل َیْسَ ل َكَ ب ِھِ عِلْمٌ -ষধিেন করা প্রচার াথক মরইেসলা নজে নো
“যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করোনা।” (সূরা আল-ইসরা : ৩৬)
কাজেই শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবনে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা রয়েছে।
ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জীবনে আল-কুরআন
মানব কেবল দেহসর্বস্ব জীব নয়। মানবের রয়েছে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন-ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জীবন। আধ্যাত্মিক
জীবনের সমস্যাবলীর নির্ভুল ও সঠিক সমাধান দান করেছে আল-কুরআন। কুরআন বলেছে-
یٰأ َیُّھَا ٱلنَّاسُ قَدْ جَآءَت ْكُمْ مَّوْ عِظَة ٌ مِّن رَّ بِّكُمْ وَ شِفَآءٌ ل ِّمَا فِى ٱلصُّدُورِ
“হে মানব! তোমাদের নিকট তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে ও তোমাদের অন্তরে যা আছে তার
আরোগ্য।” (সূরা ইউনুস : ৫৭)
وَ نُنَزِّ لُ مِنَ ٱل ْق ُرْ آنِ مَا ھُوَ شِفَآءٌ وَ رَ حْمَة ٌ ل ِّلْمُؤْمِنِینَ
“আমি নাযিল করেছি কুরআন যা মু’মিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত।” (সূরা আল-ইসরা : ৮২)
ُھَبْلَ قِ دْھَیِ َّھ ٱلل ِب نِمْ ؤُی نَمَ و“যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন।” (সূরা
ভয় কআেল্লাহ য়াময় দখ দেনো “যারা مَّنْ خَشِىَ ٱلرَّ حْمَـٰنَ ب ِٱلْغَیْبِ وَ جَآءَ ب ِقَلْبٍ مُّنِیبٍ (১১ : তাগাবুন-আত
করে এবং বিনীত চিত্তে উপস্থিত হয় ।” (সূরা আল-কাফ : ৩৩)
“তোমরা যে কিতাব মানুষকে শিক্ষা দাও আর নিজেরা পড়, তা অবলম্বন করে আল্লাহর প্রিয়ভাজন হয়ে যাও।” (সূরা
আলে-ইমরান : ৭৯) আল্লাহর কিতাব বুঝে তা অনুসরণ করেই আল্লাহর নৈকট্য ও আধ্যাত্মিকতার উচ্চ মার্গে পৌঁছা
যায়।
একক মহান সত্তা আল্লাহর উপর বিশ্বাসের ভিত্তি মূলে তৈরি হয়েছে ইসলামের ধর্মীয় জীবনের গতিধারা। আর এরই
সাথে যুক্ত হয়েছে রিসালাত, আখিরাত ও অদৃশ্যে বিশ্বাস। আর বিশ্বাস বা ঈমানের উপর মানবের চিরন্তন মুক্তি
অবধারিত।
সারকথা
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে জীবন সমস্যার সকল দিকের সঠিক সমাধানের মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে। মানুষের ব্যক্তিগত,
পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক, অথনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক তথা সকল বিষয়ে দিক
নির্দেশনা রয়েছে এ মহাগ্রন্থে। আমরা যদি আল-কুরাআনের সেই সব দিকনির্দেশনা জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন
করি, তাহলে দুনিয়ার শান্তিও আখিরাতের মুক্তি লাভ করা সম্ভব হবে।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দিন
১. নর-নারীর নৈতিক পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষা পায়ক. বৈরাগ্য জীবনযাপনে
খ. লেখা-পড়ার মাধ্যমে
গ. বিবাহিত জীবন-যাপনের মাধ্যমে
ঘ. পারিবারিক জীবন যাপনে
২. ইল্ম অর্জন করা সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য-
ক. সকল মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক
খ. ছেলে-মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক
গ. সকলের জন্য বাধ্যতামূলক
ঘ. সকল উত্তর সঠিক।
৩. ইসলাম কোন ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা সমর্থন করেক. একনায়কতান্ত্রিক
খ. শূরা ভিত্তিক
গ. রাজতন্ত্র ব্যবস্থা
ঘ. গণতান্ত্রিক
৪. সকল মানুষ একজন নর-নারী হতে সৃষ্টি হয়েছে-এ ধারণা আমরা পাইক. আল-কুরআন হতে
খ. হযরত উমরের (রা) কথা হতে
গ. আল-হাদীস হতে
ঘ. ইসলামী আইন হতে
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর ঃ ১.গ, ২.ক, ৩.খ, ৪.ক
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
১. মানব জীবন সমস্যার সমাধানে আল-কুরআনের ভূমিকা সংক্ষেপে নিরূপণ করুন।
২. মানুষের ব্যক্তি জীবন গঠনে ও ব্যক্তি জীবনের সমস্যা সমাধানে আল-কুরআনের নির্দেশনা কী? বর্ণনা করুন।
৩. পারিবারিক জীবনের সমস্যা সমাধানে আল-কুরআনের শিক্ষা উপস্থাপন করুন।
৪. সামাজিক জীবনের সমস্যা নিরসনে পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা ব্যাখ্যা করুন।
৫. রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক জীবনে কুরআনের শিক্ষা কী? বিশ্লেষণ করুন।
৬. আন্তর্জাতিক জীবন গঠনে আল-কুরআনের নীতি উপস্থাপন করুন।
৭. অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে আল-কুরআনের নীতি উল্লেখ করুন।
৮. শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আল-কুরআনের শিক্ষা লিখুন।
৯. ধর্মীয় জীবন গঠনে কুরআনের নির্দেশনা লিখুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. মানব জীবন সমস্যার সমাধানে আল-কুরআনের ভূমিকা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।
২. সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের সমস্যা সমাধানে আল-কুরআনের নির্দেশনা উপস্থাপন করুন।
৩. আন্তর্জাতিক জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় আল-কুরআনের শিক্ষা তুলে ধরুন।
৪. অর্থনৈতিক জীবনে কুরআনের শিক্ষা কী ? লিখুন।
৫. ধর্মীয় জীবনের সমস্যা সমাধানে কুরআনের নির্দেশনা তুলে ধরুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত