ফিক্হ শাস্ত্রের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে আলোচনা করুন। ফিক্হ শাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করুন।

রাসূলের যুগে ফিক্হ শাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
মহানবীর (স) আবির্ভাবের পূর্বে আরবের লোকেরা জাহিলিয়াতের মাঝে নিমজ্জিত ছিল। তাদের
না ছিল কোন ধর্ম, না ছিল কোন আইন-কানুন। তারা বিভিন্ন প্রকার কুসংস্কারে লিপ্ত ছিল।
তাদের অবস্থাকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়।
১. ধর্মের দিক থেকে তারা ছিল পৌত্তলিক। ২. সমাজের দিক থেকে তাদের মধ্যে ছিল নানা রকম
বিশৃংখলা। ইসলামের আবির্ভাবের পর প্রয়োজন ছিল তাদেরকে প্রথমতো: এক আল্লাহর ইবাদতের
দিকে ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত: তাদের অন্তরে সচ্চরিত্রের বীজ বপন করা। আর তাদের জন্য একটি
বিধান প্রণয়ন করা যা হবে তাদের ইহ-পরকালের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
ইসলাম প্রথমতো তাদের আকীদা ও বিশ্বাস সংশোধন করে। কেননা আকীদা শুদ্ধ হলে, মানব জীবনের
বাকী সকল কাজ সহজ সাধ্য হয়ে যায়।
মহানবী (স) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর মক্কী জিন্দেগীতে সুদীর্ঘ তের বছর যাবৎ আল্লাহর নির্দেশে
মানুষদেরকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে ডাকেন এবং শিরক থেকে ভীতি প্রদর্শন করেন। আর
তাদেরকে ঈমানের বাকী দিকগুলো যেমন: পরকাল, নবুওয়াত এবং ইসলামী মূল আকীদা বিশ্বাসের
দিকে আহবান করেন।
এছাড়া রাসূলের (স) মক্কী জীবনে ইবাদত ও আখলাকের দিকেও জোর দেওয়া হয়। যখন মুসলমানদের
আকীদা সুদৃঢ় হয় তখন আল্লাহ প্রথমতো মুমিনগণকে, অতপর রাসূল (স)-কে মদীনায় হিজরতের
নির্দেশ প্রদান করেন। এতেঠদিন মক্কায় শরীআতের বিধান ছিল সীমিতো। কিন্তু মদীনায় হিজরতের পর
মুসলমানদের নতুন জীবন শুরু হয়। তাদের জন্য এমন বিধিবিধান প্রণীত হয়, যা তাদের জীবনের
সকল দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। যার মধ্যে রয়েছে ইবাদত, লেনদেন, জিহাদ, উত্তরাধিকার আইন,
অপরাধ দমন আইন, অসিয়াত, বিবাহ, বিচ্ছেদ ও বিচারকার্য তথা ইলমে ফিক্হ বিষয়ক সকল প্রকার
বিধান।
রাসূলের (স) আমলে কোন মাসআলা বা সমস্যার উদ্ভব হলে রাসূল (স) কুরআনের আয়াত দ্বারা
সমাধান দিতেন আবার কখনো তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী অথবা তাঁর কর্ম দ্বারা সমাধান দিতেন। কেননা
হাদীস হল কুরআনের ব্যাখ্যা। আবার কখনো সাহাবীগণ নিজেদের রায় দ্বারা সমস্যার সমাধান দিতেন।
তাঁদের ইজতিহাদ-গবেষণা শুদ্ধ হলে তিনি অনুমোদন দিতেন। অন্যথায় তাদেরকে সঠিক রাস্তা
বাতলিয়ে দিতেন।
শরীআত প্রণয়নের ব্যাপারে রাসূলের (স) যুগে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি লক্ষণীয়
প্রথম বিষয় : শরীআত প্রণয়নের ভার একমাত্র রাসূলের (স) উপরই ছিল। এতে অন্য কারো দখল ছিল না। তিনি কখনো কুরআন দ্বারা এবং কখনো হাদীস দ্বারা শরীআতের সকল প্রকার
রাসূলের (স) আমলে কোন মাসআলা বা সমস্যার উদ্ভব হলে রাসূল
(স) কুরআনের আয়াত দ্বারা সমাধান দিতেন
আবার কখনো তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী অথবা
তাঁর কর্ম দ্বারা সমাধান দিতেন।
সমস্যার সমাধান দিতেন। সুতরাং তখন শরীআতের বিধানাবলির মধ্যে কোন
মতিবিরোধ পাওয়া যেত না।
দ্বিতীয় বিষয় : আয়াতুল আহকাম বা বিধান সম্পর্কিত আয়াতসমূহ উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অথবা
সাহাবীদের কোন প্রশ্নের জবাবে অথবা কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে অবতীর্ণ হতো।
তৃতীয় বিষয় : সমগ্র ইসলামী ফিক্হ একসাথে সম্পাদিত হয়নি। বরং কুরআন ও সুন্নাহ যে ভাবে
অবস্থা ও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্পন্ন হয়েছে, অনুরূপভাবে ফিক্হ শাস্ত্রও কুরআনসুন্নাহর মতো বিভিন্ন সময় ও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্পাদিত হয়েছে। শরীয়াতের
আহকাম প্রণয়নের ব্যাপারে রাসূল (স) শুধু কুরআননের উপরই নির্ভর করেননি; বরং
তিনি নিজেও বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেছেন। আবার সাহাবীগণকেও গবেষণার
নির্দেশ দিয়েছেন।
চতুর্থ বিষয় : রাসূলের (স) সময়কালে শরীআতের বিধানাবলি প্রণয়ন পরবর্তীকালের ফকীহদের
মতো ছিল না। বরং তিনি মৌলিক নীতিমালার ভিত্তিতে বিধানাবলি প্রণয়ন করতেন।
আবার কখনো এর ইল্লত বা কার্যকারণ বর্ণনা করতেন। পক্ষান্তরে ফকীহদের যুগে
প্রত্যেকেই নিজের উসূল (اصول (বা মূলনীতির উপর ভিত্তি করে আহকাম প্রণয়ন
করতেন। তাঁদের পরস্পরের উসূল ছিল পৃথক পৃথক। ফলে তাঁদের মধ্যে মতোবিরোধ
পরিলক্ষিত হয়।
সাহাবীদের যুগে (খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ) ফিক্হ শাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
ইতোপূর্বে আমরা অবগত হয়েছি যে, রাসূলের (স) যুগে ফাতওয়া ইত্যাদির মূল উৎস ছিল, কুরআন ও
সুন্নাহ। কিন্তু তাঁর তিরোধানের পর বিশিষ্ট সাহাবীগণের উপর এ দায়িত্ব অর্পিত হয়। আরবের বাইরে
ইসলামী সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটে এবং মিশর, সিরিয়া, ইরান ও ইরাক তাঁদের করতলগত হয়।
সাহাবীদের সম্মুখে নতুন নতুন মাসআলা ও সমস্যার উদ্ভব হলে তাঁরা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে
উহার সমাধান দিতেন। আর কুরআন ও সুন্নাহ হতে তার সরাসরি সমাধান না পেলে, শাখা-প্রশাখা ও
খুঁটিনাটি বিষয়ে সমাধানের জন্য গবেষণা করে ফাতওয়া প্রদান করতেন। রাসূল (স) তাদেরকে এ
গবেষণার অনুমোদন দিয়ে গেেছন। তাঁদের যুগে গবেষণা ও কিয়াস প্রয়োগে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান
শুধু উদ্ভূত ঘটনাবলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে তখন যে সকল সমস্যার উদ্রেক হয়নি, পরবর্তী
গবেষক ইমামগণের মতো আগামী দিনের কথা লক্ষ করে সে সবের সমাধান দিয়ে যাননি। বরং
তাঁদেরকে যে সব সমস্যার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে এবং যা তাঁরা দেখেছেন সেগুলার ফাতওয়া দিয়ে
ক্ষান্তহয়েছেন। কেননা তাঁরা মনে করতেনক. অতিরিক্ত বিষয় বা যা সংঘটিত হয়েনি এমন বিষয় সম্পর্কে ফাতওয়া প্রদান কালক্ষেপণ মাত্র।
খ. তাঁরা তাকওয়া ও সতর্কতা বশতঃ ফাতওয়া প্রদানে তত উৎসাহী ছিলেন না। কারণ ফাতওয়ায় ভুল
ভ্রান্তিও পদঙ্খলন ঘটতে পারে।
গ. তৎকালে ফকীহ ও গবেষক সাহাবীগণ ছিলেন চার খলীফা ও তাঁদের নিকটবর্তীগণ। তাঁরা বেশীর
ভাগ সময় ইসলামী রাষ্ট্রের মুসলমানদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যস্তথাকতেন। ফলে আগামী দিনে কি
জাতীয় সমস্যার উদ্ভব হবে তার সমাধান দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের ছিল না।
 খলীফা আবু বকরের (রা) আমলে কোন সমস্যার উদ্ভব হলে তিনি কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা সমাধান
দিতেন। তাঁর জানা মতে কুরআন ও সুন্নাহতে উহার সমাধান না পেলে সাহাবীদের জিজ্ঞেস
করতেন। তাঁদের কেউ কুরআন ও সুন্নাহ হতে উহার দলীল উপস্থাপন করতে পারলে তিনি সে
হিসেবে ফাতওয়া প্রদান করতেন। অন্যথায় বিশিষ্ট সাহাবীদের একত্রিত করে তাঁদের পরামর্শ
নিতেন। কোন মাসআলার উপর তাঁদের ঐকমত্যো হলে তিনি সে হিসেবে ফাতওয়া দিতেন।
 হযরত উমর (রা) তাঁর আমলে নতুন কোন বিষয়ের সমাধান বা ফাতওয়া দিতে গিয়ে প্রথমতো
কুরআন-সুন্নাহ হতে দলীল খুঁজতেন। কুরআন ও সুন্নাহ হতে না পেলে তাঁর পূর্বসূরী আবু বকরের
(রা) ফয়সালা হিসেবে ফাতওয়া দিতেন। আর তাও সম্ভব না হলে সাহাবীদের একত্র করে তাদের
মতোামতো চাইতেন। যখন কোন সিদ্ধান্তের উপর তাঁদের ঐকমত্যো হতো, তিনি ঐ হিসেবেই
রাসূল (স) মৌলিক নীতিমালার ভিত্তিতে বিধানাবলি প্রণয়ন করতেন। পক্ষান্তরে ফকীহদের যুগে প্রত্যেকেই নিজের উসূল বা মূলনীতির উপর ভিত্তি করে আহকাম প্রণয়ন করতেন।
ফয়সালা দিতেন।
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রতিয়মান হয় যে, সাহাবীগণ ফাতওয়ার ব্যাপারে কুরআন, সুন্নাহ,
ইজমা ও কিয়াস প্রয়োগ করতেন।
তাবিঈদের যুগে ফিক্হ শাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
এ যুগ বলতে খুলাফায়ে রাশিদীনের পর হতে দ্বিতীয় শতকের প্রথম দিক পর্যন্তবুঝানো হয়েছে।
সাহাবীগণ রাসূল (স)-এর হাতে প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন এবং তাঁর থেকে সরাসরি জ্ঞান অর্জন
করেছেন। অনুরূপভাবে তাবিঈগণ সাহাবীগণের হাতে প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন এবং তাঁদের কাছে ফিক্হ
ও ফাতওয়া শিখেছেন। তাবিঈগণ যে সব সাহাবী থেকে ইলম ও ফিক্হ শিক্ষা করেন, তাঁদের মধ্যে
রয়েছেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, যায়েদ ইবনে ছাবেত ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) প্রমুখ।
তাবিঈগণ সাহাবীগণের অনুসরণে ফাতওয়া প্রদান করতেন। তাঁরা ফাতওয়া প্রদানে প্রথমতো কুরআন ও
সুন্নাহর অনুরসণ করতেন। কুরআন ও সুন্নাহ হতে তাদের ফাতওয়ার দলীল না পেলে সাহাবীদের
গবেষণার উপর আমল করতেন। আর তাও সম্ভব না হলে নিজেরা গবেষণা করতেন।
গবেষক ইমামদের যুগে ফিক্হ শাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
ইমামদের যুগ বলতে হিজরী দ্বিতীয় শতকের শুরু হতে চতুর্থ শতকের মাঝামাঝি সময়কে বুঝানো
হয়েছে। এ যুগ ছিল গবেষক ইমামদের যুগ এবং ফিক্হ শাস্ত্র হতে শুরু করে বিভিন্ন ইলম-এর সংকলন ও
গবেষণার যুগ। এ যুগ আব্বাসীয় যুগের পরিপক্কতার সময় পর্যন্তচলতে থাকে। চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যভাগে
আব্বাসীয় সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়লে এ যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে। হিজরী দ্বিতীয় শতকে মুসলমানগণ এমন
কাজে হাত দেন, যা তাঁদের পূর্বসূরীগণ করেননি। তাঁরা ফিক্হ শাস্ত্র হতে শুরু করে অন্যান্য ইসলামী
জ্ঞান যেমন: উলূমুল হাদীস, উলুমুল কুরআন, উলুমুল আরাবিয়াহ ইত্যাদি সংকলন ও সংরক্ষণ শুরু
করেন। এ যুগে মুসলিম বিশ্বে তেরজন বিশিষ্ট ফকীহ ও মুজতাহিদের আবির্ভাব ঘটে। যাঁদের
মাযহাবসমূহ বই আকারে সংকলিত হয় এবং যারা অনুসরণীয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ফিক্হ শাস্ত্রের
ইমাম হিসেবে পরিগণিত হন। তারা হলেন, মক্কায় সুফিয়ান সাওরী, সিরিয়ায় আওযায়ী, মিশরে শাফিঈ
ও লাইস ইবনে সায়াদ, নিসাপুরে ইসহাক ইবন রাহওয়াই, বাগদাদে আবু ছাওর, আহমাদও ইবনে
জারীর। পরবর্তীকালে তাঁদের কারো কারো মাযহাব এর বিলুপ্তি ঘটে। আবার কারো মাযহাব
উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসার ও প্রচার লাভ করেনি, আবার কারো কারো মাযহাব উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসার লাভ
করে। যেমন: ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম মালিক (র)-এর মাযহাব।
মোটকথা হচ্ছে, এ যুগ ছিল ইসলামী গবেষণা ও সংকলনের যুগ। এ যুগকে ফিক্হ শাস্ত্রের স্বর্ণ যুগ বলা
হয়। এ যুগে মুসলমানগণ ইসলামী গবেষণার শীর্ষশিখরে পৌঁছেন। বিশেষ করে ফিক্হ শাস্ত্রের উপর
বিভিন্ন প্রকার গ্রন্থ প্রণীত হয়, যা মুসলমানগণ আজ পর্যন্তঅনুসরণ করে আসছেন।
এ যুগের ফকীহ ও মুজতাহিদগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন চারজন। তাঁরা হলেন, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম
মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (র)। আবার এ চারজনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন
ইমাম আবু হানীফা, যাঁকে ইমাম আযম বলা হয়।
ইমাম আবু হানীফা (রা) সর্বপ্রথম নিয়মতোান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফিক্হ শাস্ত্রের গোড়াপত্তন করেন। আর স্বীয়
জীবনে এর পূর্ণতাও দান করেন। তারপর অন্যান্য ফকীহ ও ইমামগণ স্ব-স্ব ফিক্হ সম্পাদনা করেন। এ
সময় ফিক্হ-এর উপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচিত হয়। এটাই ফিক্হ-এর সম্পাদনার যুগ।
এ যুগের কতিপয় বিশিষ্ট ফিক্হবিদদের মাযহাব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক তাঁদের
ফিক্হ এর অনুসরণ শুরু করেন। বিচারকগণ ফিক্হ মোতাবেক ফয়সালা দিতে থাকেন। জনসাধারণ
ফিক্হ এর অনুসরণ শুরু করেন। জনসাধারণ বিশেষ বিশেষ ইমামের অনুসরণ আরম্ভ করেন। এ সময়
গবেষণার দ্বার সকলের জন্যই উন্মুক্ত ছিল। এছাড়া ক্ষমতোাসীন ব্যক্তি ফিক্হ শাস্ত্র এবং ফকীহদের
যথেষ্ট মুল্যায়ন করতেন। এ সময় বিশিষ্ট ইমামদের কতিপয় প্রসিদ্ধ গবেষক শিষ্যও জুটে যায়। তারা
স্বীয় উস্তাদের ফিক্হ এর উপর গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁদের মতোামতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন। তাঁদের
মূলনীতির উপর মাসআলা উদ্ভাবন করেন। এভাবে গবেষক ইমামদের যুগে ইলমে ফিক্হ উল্লেখযোগ্য
হিজরী দ্বিতীয় শতকে মুসলমানগণ ফিকহ্ শাস্ত্র হতে শুরু করে অন্যান্য
ইসলামী জ্ঞান যেমন: উলূমুল হাদীস, উলুমুল
কুরআন, উলুমুল আরাবিয়াহ ইত্যাদি
সংকলন ও সংরক্ষণ শুরু করেন।
ব্যাপকতা লাভ করে।
গবেষণার পূর্ণতা ও তাকলীদ (অনুকরণ)-এর যুগ
হিজরী চতুর্থ শতক থেকে শুরু করে ৬৫৬ হিজরীতে বাগদাদের পতন পর্যন্তসময় হল গবেষণার পূর্ণতা
ও তাকলীদের যুগ। এ যুগে গবেষণার পরিসমাপ্তি ঘটে। পূর্ববর্তী যুগের বিশিষ্ট ইমামগণের ফিক্হর উপর
বৃহদাকার গ্রন্থরাজি রচিত হয়। সাধারণ লোকদের মতো আলিমগণও বিশেষ বিশেষ ইমামের তাকলীদ
(অনুকরণ) আরম্ভ করে দেন। তারা পূর্ববর্তী ইমামগণের নির্ধারিত মূলনীতি অবলম্বন করে গবেষণা ও
মাসআলা উদ্ভাবনে মনোনিবেশ করেন।
এ যুগে বিশেষ মাযহাবের পক্ষে ফিক্হ গ্রন্থ রচনার ধারা তৈরি হয়। পরিশেষে চার ইমাম তথা ১. ইমাম
আবু হানীফা (র), ২. ইমাম শাফিঈ (র), ৩. ইমাম মালিক (র) ও ৪. ইমাম আহমাদ (র) এর
মতোামতের তাকলীদ বা অনুসরণ করার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের প্রায় সকলেই
ঐকমত্যো পোষণ করেন।
এ যুগ তাকলীদের যুগ। তাকলীদ হল, কোন নির্দিষ্ট ইমামের উদ্ভাবিত মাসআলা ও বিধানগুলোর জ্ঞান
লাভ করা এবং সে গুলোকে শরীআত প্রণেতার প্রদর্শিত বিধান হিসেবে মেনে নেওয়া। আর সেগুলোর
অনুসরণকে অত্যাবশ্যকীয় করে নেওয়া। অবশ্য শীর্ষ স্থানীয় তাবিঈদের যুগ হতে আরম্ভ করে ফিক্হ
শাস্ত্র সম্পাদনা পর্যন্তপ্রত্যেক যুগেই গবেষক এবং অনুসরণকারীর অস্তিত্ব ছিল। মুজতাহিদ বা গবেষক
হলেন ঐসব ফকিহ্গণ যারা কিতাব ও সুন্নাহর জ্ঞান লাভ করে তা হতে আহকাম উদ্ভাবনে সক্ষম
ছিলেন। আর সর্বসাধারণ, যারা কিতাব ও সুন্নাহ হতে আহকাম উদ্ভাবনে সক্ষম ছিলেন না তারা
মাসআলা সমাধানের জন্য কোন ফকীহ এর দ্বারস্থ হতেন। তিনি তাদের সমস্যার সামাধান দিতেন। এ
যুগে লোকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে অনুকরণ-অনুসরণ স্পৃহা বিস্তার লাভ করে। আলিম ও জনসাধারণ
সকলেই অনুকরণ প্রবণ হয়ে পড়েন। পূর্ববর্তী যুগের ফিক্হ শাস্ত্রের কোন শিক্ষার্থী প্রথমতো কুরআন ও
সুন্নাহর স্মরণাপন্ন হতেন, যা মাসআলা উদঘাটনের মূল উৎস ছিল। এ যুগে ফিক্হ এর শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট
কোন ইমামের মাযহাবী গ্রন্থ অধ্যয়নে আত্মনিয়োগ করতেন। আর ফিক্হ এর কিতাবগুলো মোটামুটি
আয়ত্ত করতে পারলেই তিনি ফকীহ হিসেবে গণ্য হতেন। তাদের এক দল উদ্যোগী আলিম স্বীয়
ইমামের মাযহাবের উপর গ্রন্থ সংকলন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ গুলো মূলত পূর্ববর্তী ইমামগণের
রচিত গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত রূপ। তারা ইমামগণের বিরুদ্ধাচরণ করতেন না। অবশ্য এ যুগে গবেষণা একবারে
বন্ধ হয়েছিল তা নয়। বরং এ যুগে মুজতাহিদ মুক্ইায়্যাদ (যিনি তাঁর ইমামের অনুসৃত মূলনীতির
অনুকরণের গবেষণা করেছেন) পাওয়া যেত। এ যুগের আলিমগণের প্রত্যেকে স্ব স্ব মাযহাবের প্রচারে কাজ করেন।
নিখুঁত তাকলীদের যুগ
তাকলীদের যুগ বলতে সপ্তম শতকের মধ্যভাগ হতে বর্তমান শতাব্দী পর্যন্তসময়কে বুঝানো হয়েছে।
পূর্বের যুগ থেকে এযুগে তাকলীদ বা অনুকরণ অধিকভাবে প্রসার লাভ করে। পূর্ববর্তী যুগগুলোতে
ইজতিহাদ বা গবেষণার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। এযুগে তার পরিসমাপ্তি ঘটে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় যুগে সাহাবীগণ ও তাবিঈগণ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মাসাআলা ও আহকাম
সম্পর্কে ইজতিহাদ করতে গিয়ে তাঁদের সর্বশক্তি ব্যয় করতেন এবং তাঁদের অনুসৃত নীতির উপর ভিত্তি
করে পরবর্তীরা ইজতিহাদ করতেন।
তারপর আসে চতুর্থ যুগ। এ যুগে ইজতিহাদ ও গবেষণা উন্নতির শীর্ষশিখরে পৌঁছে। কিন্তু পঞ্চম যুগে
ইজতিহাদের ধারা কমে যেতে থাকে। অবশ্য এ যুগেও মুজতাহিদ মুকাইয়্যাদ পাওয়া যেত। তারা
তাদের ইমামগণের মূলনীতি অনুসরণে ইজতিহাদ করতেন এবং ইজতিহাদের ক্ষেত্রে তারা প্রশংসনীয়
ভ‚মিকা পালন করে গেছেন। তারপর আসে ষষ্ঠ যুগ। এ যুগকে নিখুঁত তাকলীদের যুগ বলা যেতে পারে।
এ যুগকে আমরা দুটি স্তরে ভাগ করতে পারি।
প্রথম স্তর : সপ্তম শতক থেকে শুরু করে দশম শতকের শুরুতে এ যুগ শেষ হয়। এ যুগে কতিপয় মণীষীর আবির্ভাব ঘটে যারা হলেন শাইখ খলীল মালিকী, কামাল ইবন হুমাম হানাফী,
তাকলীদ হল, কোন নির্দিষ্ট ইমামের উদ্ভাবিত
মাসআলা ও বিধানগুলোর জ্ঞান লাভ করা এবং সে গুলোকে শরীআত প্রণেতার প্রদর্শিত বিধান হিসেবে মেনে নেওয়া। আর সেগুলোর অনুসরণকে অত্যাবশ্যকীয় করে নেওয়া।
সুবকী, সুয়ুতী ও রামলী-শাফিঈ যাদের ফিক্হ শাস্ত্রে অসাধারণ দখল ছিল। কিন্তু
এতেঠদসত্তে¡ও তারা তাদের পূর্বসূরী ইমামদের মতো ইজতিহাদ না করে স্বস্ব ইমামদের
কিতাবসমূহের ব্যাখ্যা আবার কখনো তার সংক্ষেপণে ব্রত থাকেন।
দ্বিতীয় স্তর : হিজরী দশম শতক থেকে এ যুগ অদ্যাবধি চলে আসছে। এ যুগে নতুন মাসআলা উদ্ভাবন
ও গবেষণার ধারা অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। এ যুগে গবেষণা প্রায় বিলুপ্ত হতে বসে।
চিন্তাধারার স্বাধীনতা খতম হয়ে যায়। মাসআলা পর্যালোচনা ও উদ্ভাবনের ধারা রুদ্ধ হয়ে
যায়। তর্ক-যুক্তির ও প্রায় অবসান ঘটে। স্ব-স্ব মাযহাবের পূর্ববর্তী ইমামগণের অভিমতের
উপর সর্বসাধারণ ও আলিমগণের সকলেই অটল থাকেন। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তারা পূর্ববর্তী
ইমামগণের রায়ের উপর নির্ভর করেন।
মোটকথা, এযুগেও ফিক্হ শাস্ত্রে আলিমগণের নতুন কোন আবিষ্কার ছিল না। তারা নিপুণতার সাথে শুধু
তাদের ইমামদগণের অনুসরণই করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে মুসলমান, বিশেষ করে আলিম সমাজের উচিত
ফিক্হ ও ইজতিহাদের ময়দানে নব জাগরণ সৃষ্টি করা। অবশ্য এ জন্য তাদের ইজতিহাদের যোগ্যতা
অর্জন করতে হবে। আর যাদের ইজতিহাদের যোগ্যতা নেই তাদের স্ব স্ব মাযহাবের অনুসরণ করতে হবে।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. ইসলাম প্রথমতো:-
ক. শাস্তির ব্যবস্থা করে;
খ. আকীদা-বিশ্বাস সংশোধন করে;
গ. জেহাদের দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়;
ঘ. আল্লাহর পথে দান করার জন্য উৎসাহ প্রদান করে।
২. নবুওয়াত প্রাপ্তির পর মক্কী-জীবনে রাসূলক. ১৩ বছর যাবৎ মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দেন;
খ. ১৩ বছর যাবৎ অপেক্ষা করেন;
গ. ২৩ বছর জিহাদ ও সংগ্রাম করেন;
ঘ. ৪০ বছর যাবৎ অত্যাচার সহ্য করেন।
৩. ফকীহগণ শরীআতের বিধানাবলি প্রণয়ন করতেনক. একক মূলনীতির ভিত্তিতে;
খ. স্ব স্ব নীতির ভিত্তিতে;
গ. শুধু কিয়াসের ভিত্তিতে;
ঘ. কোন নীতিমালা ছাড়াই।
৪. গবেষক ইমাম (আইম্মায়ে মুজতাহিদীন) -এর যুগ বলতে বুঝায়ক. হিজরী দ্বিতীয় শতককে;
খ. হিজরী দ্বিতীয় শতক থেকে হিজরী চতুর্থ শতক পর্যন্তসময়কে;
গ. উমাইয়া যুগকে;
ঘ. আব্বাসীয় যুগকে।
৫. ইমাম আযম কার উপাধি ছিল?
ক. ইমাম শাফিঈর;
খ. ইমাম আহমাদের;
গ. ইমাম মালিকের;
ঘ. ইমাম আবু হানীফার।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. রাসূলের (স) যুগের ফিক্হ শাস্ত্র সম্পর্কে লিখুন।
২. খুলাফায়ে রাশিদীন-এর যুগের ফিক্হ শাস্ত্র সম্পর্কে বর্ণনা করুন।
৩. তাবিঈদের যুগের ফিক্হ শাস্ত্র সম্পর্কে বর্ণনা দিন।
৪. গবেষক ইমামদের যুগের ফিক্হ শাস্ত্র সম্পর্কে লিখুন।
৫. গবেষণার পূর্ণতা ও তাকলীদের যুগ সম্পর্কে আলোচনা করুন।
৬. নিখুঁত তাকলীদের যুগ সম্পর্কে লিখুন।
৭. নিখুঁত তাকলীদ বলতে কী বুঝানো হয়েছে? লিখুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. ফিক্হ শাস্ত্রের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২. ফিক্হ শাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]