ইজতিহাদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন।

ইজতিহাদের পটভ‚মি ও ক্রমবিকাশ
কুরআন ও সুন্নাহ হল ইসলামী শরীআতের মূল ভিত্তি। কুরআন ও সুন্নাহ হতে এটা প্রতীয়মান হয় যে,
আল্লাহর পক্ষ হতে রাসূল (স)-কে ইজতিহাদের অনুমতি দেওয়া হয়। অনুরূপভাবে তিনিও তাঁর
সাহাবীদেরকে ইজতিহাদের অনুমতি দান করেন। সাহাবীদের বহু ইজতিহাদ তিনি মেনে নিয়েছিলেন।
রাসূল (স)-এর ইজতিহাদ
রাসূল (স)-এর ইজতিহাদের দলীল হিসেবে নিম্নের ঘটনাবলির উল্লেখ করা যায়। তিনি বদর যুদ্ধের
বন্দিদের সম্পর্কে সাহাবীদের নিয়ে পরামর্শ করেন। অতঃপর আবু বকরের (রা) পরামর্শ গ্রহণ করে
নিজে ইজতিহাদের দ্বারা বন্দিদের মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেন। যদিও উমরের (রা) পরামর্শ ছিল এর
বিপরীত। এ সম্পর্কে কুরআনে এরশাদ হচ্ছে :
مَا كَانَ لِنَب ِيّ ٍ أ َن یَكُونَ ل َھُ أ َسْرَ ىٰ حَتَّىٰ یُث ْخِ نَ فِى ٱلأ َرْ ضِ
“দেশে ব্যাপকভাবে শত্রæকে পরাভূত না করা পর্যন্তবন্দি রাখা কোন নবীর জন্য সংগত নয়।” (সূরা
আল-আনফাল : ৬৭)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তাঁর রাসূল (স)-কে বন্দিদের ছেড়ে দেওয়ায় হালকা র্ভৎসনা করেন। তবে
রাসূলের এ সিদ্ধান্তকে আল্লাহ বাতিল করে দেননি। অনুরূপভাবে তিনি তাবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ হতে পৃষ্ঠ
প্রদর্শনকারীদের ব্যাপারে ইজতিহাদ করে সিদ্ধান্তগ্রহণ করেছিলেন। ঐ যুদ্ধে যে সব মুনাফিক অংশ
গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য ওযর-আপত্তি পেশ করেছিল, তিনি তাদের ওযর-আপত্তি গ্রহণ
করেছিলেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
عَفَا ٱلل َّھُ عَنكَ لِمَ أ َذِنتَ ل َھُمْ حَتَّىٰ یَتَبَیَّنَ ل َكَ ٱل َّذِینَ صَدَق ُوا ْ وَ تَعْل َمَ ٱلْكَاذِب ِینَ
“আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। কারা সত্যবাদী তা তোমার নিকট স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্তএবং
কারা মিথ্যাবাদী তা জানা পর্যন্ততুমি কেন তাদের অব্যাহতি দিলে?” (সূরা আত-তাওবা: ৪৩)
সাহাবীদের ইজতিহাদ
মহানবী (স) সাহাবীগণকেও ইজতিহাদের অনুমতি দিয়েছেন। সাহাবীদের ইজতিহাদের প্রমাণ স্বরূপ
নিম্নের ঘটনাবলি উল্লেখ করা যায়।
মহানবী (স) যখন মুয়ায ইবনে জাবালকে (রা) ইয়ামেনে প্রেরণ করেন, তখন তিনি মুয়াযকে জিজ্ঞেস
করেন, তুমি সেখানে কীভাবে বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা করবে? মুয়ায বললেন, আল্লাহর কিতাব
(কুরআন) দ্বারা ফয়সালা করব। রাসূল (স) বললেন, যদি কুরআনে ঐ বিষয়ে কোন ফয়সালা না পাও,
তবে কী করবে? মুয়ায বললেন, হাদীস দ্বারা রায় দেব। রাসূল (স) বললেন, যদি হাদীসেও ঐ বিষয়ে
প্রকাশ্য কিছু না পাওয়া যায় তখন কী করবে? তদুত্তরে তিনি বললেন, আমি আমার নিজস্ব
চিন্তা ও রায় দ্বারা ইজতিহাদ করব এবং আমি পিছু হটব না। তখন রাসূল (স) বললেন : “মহান
আল্লাহর শুকর, যিনি তাঁর রাসূলের দূতকে এমন তাওফিক দিয়েছেন, যাতে তাঁর রাসূল সন্তুষ্ট হন।”
কুরআন ও সুন্নাহ হতে এটা প্রতীয়ামন হয় যে, আল্লাহর পক্ষ হতে রাসূল (স)-কে ইজতিহাদের অনুমতি দেওয়া হয়। অনুরূপভাবে তিনিও তাঁর সাহাবীদেরকে ইজতিহাদের অনুমতি দান করেন।
অত্র হাদীসে রাসূল (স) তাঁর সাহাবীর কিয়াস ও ইজতিহাদের উপর নির্ভর করার বিষয় জানতে পেরে
সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। রাসূলের (স) উপস্থিতিতে ও অনুপস্থিতিতে সাহাবীদের ইজতিহাদের অসংখ্য
প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁদের ইজতিহাদ সঠিক হলে তিনি তাতে অনুমোদন দিতেন, ভুল হলে শুধরে
দিতেন। নিম্নের ঘটনাগুলোতে এ কথার প্রমাণ পাওয়া যায়।
১. বনু কুরাইযা গোত্রের ইয়াহূদীদের উপর মুসলমানগণ জয়যুক্ত হন এবং তাদের দূর্গ ঘিরে ফেলেন।
তখন মুসলমানগণ সা‘দ ইবন মুয়াজকে (রা) তাদের ব্যাপারে ফয়সালার জন্য বিচারক মনোনয়ন
করেন। ইয়াহূদীরাও তার বিচার মেনে নিতে রাজী হয়। সা‘দ (রা) তাদের পুরুষদের শিরোñেদ
এবং মহিলা ও শিশুদের বন্দির নির্দেশ দেন। এ ফয়সালার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে রাসূল (স)
বললেন : “সা‘দ! তুমি তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ফয়সালা অনুসারে ফয়সালা দিয়েছ।”
সা‘দ নিজ ইজতিহাদেই এর রায় দিয়েছিলেন। বনু কুরাইযার ইয়াহূদীদেরকে তিনি মুহারেবীনের
(মুসলমানদের বিপক্ষের যোদ্ধা) সাথে কিয়াস বা তুলনা করেছিলেন।
কুরআনে মুহারিবীদের শিরোñেদের নির্দেশ রয়েছে। কেনানা বনু কুরাইযার ইয়াহূদীরা
মুসলমানদের সাথে তাদের সন্ধী ভঙ্গ করে খন্দক যুদ্ধে কুরাইশদের সহায়তা দিয়েছিলেন। তাই
সা‘দ তাদেরকেও মুসলমানদের বিপক্ষীয় যোদ্ধা হিসেবে গণ্য করেছিলেন। আবার কেউ বলেন,
তিনি বনু কুরাইযাকে বদরের বন্দিদের সাথে কিয়াস (তুলনা) করেছিলেন। কারণ ঐ বন্দিদের
হত্যোা না করে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়ায় আল্লাহ তাঁর রাসূল (স)-কে র্ভৎসনা করেছিলেন তখন
মুক্তিপণ নিয়ে বন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার বিধান অবতীর্ণ হয়নি। পরবর্তীতে এ সম্পর্কে ওহী অবতীর্ণ হয় : فَإ ِمَّا مَن̒ا بَعْدُ وَ إ ِمَّا فِدَآءً
“অতঃপর হয় অনুকম্পা নয় মুক্তিপণ।” (সূরা মুহাম্মদ : ৪)
২. দু’জন সাহাবী একদা সফরে বের হলেন অথচ তাদের নিকট পানি ছিল না। এমতোাবস্থায় নামাযের
ওয়াক্ত উপস্থিত হলে তারা তায়াম্মুম করে নামায আদায় করেন। কিন্তু নামাযের ওয়াক্ত থাকাকলীন
অবস্থায় তারা পানি পেয়ে যান। তখন তাদের একজন অযু করে দ্বিতীয়বার নামায পড়েন। আর
অপরজন অযু করেননি এবং পুনরায় নামাযও পড়েননি। রাসূল (স) তাদের উভয়ের সিদ্ধান্তকেই
সঠিক বলে অনুমোদন দিলেন। যিনি নামায দ্বিতীয়বার পড়েননি তাকে বললেন, তুমি সুন্নাত
মোতাবেক কাজ করেছে, তোমার পূর্বের নামাযই যথেষ্ট হয়েছে। আর যিনি নামায পুনরায় পড়লেন
তাকে বললেন, তুমি দ্বিগুণ সওয়াব লাভ করলে।
৩. অনুরূপভাবে রাসূল (স) খন্দকযুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তনের পর যুদ্ধের পোশাক খোলার ইচ্ছা করার
সাথে সাথে আল্লাহ তাঁকে বনু কুরাইযার ইয়াহূদীদের নিকট যেতে বললেন, তিনি তাঁর
সাহাবীদেরকে বললেন :
“তোমাদের কেউ বনু কুরাইযা গোত্রে পৌঁছার পূর্বে আছরের নামায পড়বে না। সাহাবীগণ দ্রæত
গতিতে রওয়ানা হলেন। অবশ্য তাদের কেউ কেউ পথিমধ্যে নামাযের সময় উপস্থিত হওয়ায়
পথেই নামায আদায় করলেন। তারা রাসূল (স)-এর বাণীর দ্বারা বুঝেছিলেন যে, তিনি দ্রæত যেতে
বলেছেন। আবার কেউ কেউ পথিমধ্যে নামায না পড়ে ঠিক গন্তব্যস্থলে পৌঁছে নামায পড়লেন।
উভয় দলের সাহাবীগণ রাসূল (স) নিকট নিজেদের ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি উভয় দলকেই সঠিক
বলে অনুমোদন দিলেন। কাউকে ভুল বললেন না।
৪. অন্য এক ঘটনায় দেখা যায় যে, কতিপয় সাহাবী একদা ভ্রমণে বের হলেন। তাঁদের মধ্যে উমর
(রা) ও মুয়ায (রা) ছিলেন। ভোর হলে উমর ও মুয়ায উভয়েরই গোসলের প্রয়োজন দেখা দিল।
কিন্তু তাদের সাথে পানি ছিল না। অতঃপর দু’জনেই তাদের সাধ্যানুসারে ইজতিহাদ করলেন।
তন্মধ্যে মুয়াজ মাটি দ্বারা পবিত্রতাকে পানি দ্বারা পবিত্রতার সাথে তুলনা করলেন এবং মাটিতে
গড়াগড়ি দিলেন। কিন্তু উমর এটা করলেন না। তিনি নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্তঅপেক্ষা
করলেন। তাঁরা উভয়ে মদীনায় এসে রাসূলের (স) নিকট তাঁদের অবস্থা বর্ণনা করলেন। তিনি
এমতোাবস্থায় সঠিক করণীয় সম্পর্কে শিক্ষা দিতে গিয়ে বললেন, মুয়াযের কিয়াস ভুল হয়েছে।
কারণ তার কিয়াস কুরআনের আয়াতের বিপরীত। আল্লাহ বলেন :
فَٱمْسَحُوا ْ ب ِوُ جُوھِكُمْ وَ أ َیْدِیكُمْ
“তায়াম্মুমকালে তোমরা মাটি দ্বারা তোমাদের মুখমÐল ও হস্তদ্বয় মাসেহ কর।” (সূরা আল- মায়েদা
: ৬) আর মুয়াযকে বললেন, তায়াম্মুম করাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল। অপর পক্ষে উমরকে
বললেন, তায়াম্মুম দ্বারা যেভাবে হাদাসে আছগার (ছোট নাপাকী) হতে পবিত্র হওয়া যায়, তদ্রƒপ
হাদাসে আকবার (বড় নাপাকী, যাতে গোসল ওয়াজিব হয়) থেকেও পাক হওয়া যায়।
রাসূল (স)-এর ইন্তিকালের পর ইসলামী সাম্রাজ্যের অধিক বিস্তৃতি ঘটে। ফলে নিত্য নতুন সমস্যার
উদ্ভব হতে থাকে। যার সমাধানের জন্য সাহাবীগণ ইজতিহাদের প্রতি আরো তৎপর হলেন।
তাদের মধ্যে আলিম ও ফকীহগণ ইজতিহাদ দ্বারা বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে ফাতওয়া প্রদান
করতেন।
তাবিঈ, তাবি-তাবিঈ ও ইমামদের ইজতিহাদ
সাহাবীগণের পর তাবিঈগণের যুগে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ফাতওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়ে
যায়। অতঃপর তাবিঈগণের যুগে এর সর্বাধিক গুরুত্ব অনুভূত হয়।
হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে ৪র্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্তইজতিহাদ
এরপর মাযহাবী ইমামগণের যুগে হিজরী দ্বিতীয় শতকের শুরু হতে চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত
ইজতিহাদের স্বর্ণযুগ ছিল। পাঁচটি প্রসিদ্ধ শহরের পাঁচজন ইমাম ইজতিহাদে খ্যাতি লাভ করেন।
মদীনায় ইমাম মালিক, মক্কায় ইমাম শাফিঈ, ইরাকে ইমাম আবু হানীফা, সিরিয়ায় ইমাম আওযায়ী এবং
মিশরে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও দাউদ জাহিরী। এ সব ইমামগণের বহু ছাত্র ছিলেন, যারা
ইজতিহাদের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।
চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে পঞ্চম শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্তইজতিহাদ
হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে পঞ্চম শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্তএকদল মুজতাহিদের উদ্ভব হয়,
যারা তাদের পূর্ববর্তী ইমামগণের মূলনীতির উপর ভিত্তি করে এমন আহকাম বা বিধানাবলি প্রণয়ন
করেন, যা তাদের পূর্বসূরীদের নিকট ছিল না।
পূর্বের স্তরের অনুকরণে পরবর্তীতে একদল আলিমের আবির্ভাব হয়। যারা বিভিন্ন প্রসিদ্ধ মাযাহাব
সংকলনে লিপ্ত হন। একই সময় তাদের ইমামগণের বিভিন্ন উক্তি হতে নির্ভরযোগ্য উক্তিগুলো চয়ন
করেন। বিভিন্ন মাযহাব সংকলনকারী আলিমগণও ইজতিহাদের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।
হিজরী সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের শেষ পর্যন্তইজতিহাদ
অবশ্য হিজরী সপ্তম শতকের শেষ ভাগে এবং অষ্টম শতকের প্রথম দিকে সিরিয়ায় ইবনে তাইমিয়ার
আবির্ভাব ঘটে। যিনি হাদীস ভিত্তিক আমলের দিকে মানুষকে আহবান জানান এবং সালফে সালেহীনের
মাযহাবের দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। তিনি মুজতাহিদ হওয়া সত্তে¡ও সর্বদা শরীআতের
মূল উৎসদ্বয়, কুরআন ও সুন্নাহর প্রতিই অধিকতর যতœবান ছিলেন। অন্যান্য শাখা-প্রশাখার দিকে
ভ্রæক্ষেপ করতেন না। তারপর আসেন তার ছাত্র ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওযিয়া, যিনি তাকলীদের ঘোর
বিরোধী ছিলেন এবং মানুষকে ইজতিহাদের দিকে আহবান জানান। অবশ্য ইবনে তাইমিয়া ও ইবনু
কাইয়্যিম হাম্বলী মাযহাব ভুক্ত মুজতাহিদ ছিলেন।
হিজরী নবম ও দশম শতাব্দী পর্যন্তইজতিহাদ
হিজরী নবম শতকে মিশরে ইবনে হাজার আল-আসকালানীর আবির্ভাব হয়, যিনি বহু বিষয়ের উপর
ফাতওয়া প্রদান করেন। আর তার অনুসরণ করেন তাঁর শিষ্যগণ। এদের শিরোনামে রয়েছেন ইমাম
জালালুদ্দীন সুয়ূতী। তিনি তাকলীদের পক্ষে ফাতওয়া প্রদান করেন। অবশ্য ইবনে হাজার আসকালানী ও জালালুদ্দীন সুয়ূতী শাফিঈ মাযহাব ভুক্ত ছিলেন।
হিজরী দশম ও একাদশ শতাব্দী পর্যন্তইজতিহাদ রাসূল (স)-এর
ইন্তিকালের পর ইসলামী সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তৃতি
ঘটে। ফলে নিত্য নতুন সমস্যার উদ্ভব হতে
থাকে। যার সমাধানের জন্য সাহাবীগণ
ইজতিহাদের প্রতি আরো তৎপর হয়ে উঠেন।
ইবনে তাইমিয়া (র) হাদীস-ভিত্তিক আমলের
দিকে মানুষকে আহবান জানান এবং সালফে
সালেহীনের মাযহাবের দিকে মানুষকে আকৃষ্ট
করার চেষ্টা করেন। তার ছাত্র ইবনুল কাইয়্যিম
আল-জাওযিয়া, যিনি তাকলীদের ঘোর বিরোধী ছিলেন।
হিজরী দশম ও একাদশ শতাব্দীতে কতিপয় মুজতাহিদের আবির্ভাব হয়, যারা হানাফী মাযহাবের
অনুসরণে ইজতিহাদে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আবুস সউদ ও ইমাম
খায়রুদ্দীন আর-রমলী। এছাড়া এ সময়ে হিন্দুস্থানে আরো কতিপয় আলিমের আবির্ভাব হয়, যারা
ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া বা ‘ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, সংকলন করেন।
হিজরী দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্তইজহিতোাদ
অনুরূপভাবে দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সিরিয়ায় ইবনে আবেদীন, মরক্কোতে যাসুলী ও রাহুনী এবং
তিউনিসিয়ায় ইসমাঈল আত-তামিমীর আবির্ভাব হয়। এরা সকলেই মুজতাহিদ পর্যায়ের ছিলেন। এছাড়া
এ সময় আরো দু’জন মুজতাহিদের আবির্ভাব ঘটে, তাদের একজন হলেন হিন্দুস্থানের শাহ ওলী উল্লাহ
মুহাদ্দেস দেহলভী এবং ইয়ামানের ইমাম শাওকানী। তারা দু’জনেই ইজতিহাদে নতুনত্ব দান করেন।
এদের দ্বিতীয় জন প্রথমে ছিলেন শিয়া যায়দী মাযহাবভুক্ত। পরবর্তীতের সালাফী মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত
হন।
হিজরী ত্রয়োদশ শতাব্দী ছিল রাজনৈতিক এবং ইজতিহাদ গবেষণার ক্ষেত্রে মুসলমানদের দুর্বলতার যুগ।
এ সময়ে ক্রসেডে উম্মত্ত সাম্রাজ্যবাদীরা মুসলিম সাম্রাজ্যের উপর আক্রমণ চালায় এবং তাদের উপর
পাশ্চাত্যের আমদানীকৃত আইন প্রয়োগ করে। তখনকার উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির মধ্যে একটি হল
ওহাবী আন্দোলন, যার বিস্তার ঘটে সৌদি আরবে। এ আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে তাকলীদ
ছেড়ে ইজতিহাদের দিকে ও সালফে সালেহীনের মাযহাবের দিকে আহবান করা। অনুরূপভাবে
আলজেরিয়া ও লিবিয়ায় সানুসী আন্দোলন, আর সুদানে মাহদী আন্দোলন শুরু হয়। এসব আন্দোলনের
উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে ইজতিহাদের দিকে আহবান করা।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমভাগ পর্যন্তইজতিহাদ
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগ এবং চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমভাগ তাজদীদ ও ইসলাহে ইসলামের
(সংস্কারের) যুগ। এ সংস্কারের আহবান জানান জামালুদ্দীন আফগানী, শায়খ মুহাম্মদ আবদুহ এবং
আল্লামা ইকবাল। তাদের সকলের উদ্দেশ্য ছিল একনিষ্ঠভাবে ধর্মের দিকে প্রত্যাবর্তন। কিন্তু এ
আন্দোলনে সঠিক আকীদা গড়ে তোলার পাশাপাশি তৎকালীন অবক্ষয় সাধিত রাজনীতির সংমিশ্রণ
ঘটে। তারপর আসেন শায়খ রশীদ রিজা, যিনি ছিলেন মুহাম্মদ আবদুহর শিষ্য। ফিক্হ সম্পর্কিত
ইজতিহাদের বেলায় তার বেশ অবদান রয়েছে।
বর্তমানে মুসলিম সমাজে বহুমুখী সমস্যার উদ্ভব হয়েছে এবং হচ্ছে, যা পূর্বেকার যুগে ছিল না। কুরআন
ও সুন্নাহর আলোকে ইজতিহাদ ও গবেষণা করে এ সব সমস্যার সমাধান দিতে হবে। অন্যথায় মুসলিম সমাজ মানব রচিত মনগড়া আইনের দিকে ঝুঁকে পড়বে। হিজরী ত্রয়োদশ শতাব্দী
ছিল রাজনৈতিক এবং ইজতিহাদ গবেষণার
ক্ষেত্রে মুসলমানদের দুর্বলতার যুগ। তখনকার
উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির মধ্যে একটি হল ওহাবী
আন্দোলন, যার বিস্তার ঘটে সৌদি আরবে।
অনুরূপভাবে আলজেরিয়া ও লিবিয়ায় সানুসী
আন্দোলন, আর সুদানে মাহদী আন্দোলন শুরু হয়। এসব আন্দোলনের
উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে ইজতিহাদের দিকে আহবান করা।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. বদরের যুদ্ধে বন্দিদের থেকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়াক. সাহাবীদের ইজতিাহদের প্রমাণ বহন করে;
খ. রাসূলুল্লাহ (স)-এর ইজতিহাদের প্রমাণ বহন করে;
গ. তাবিঈদের ইজতিহাদের প্রমাণ বহন করে;
ঘ. কোনটাই নয়।
২. রাসূল (স) প্রাপ্ত ওহীর বাইরেক. ইজতিহাদ করেননি;
খ. ইজতিহাদ করেছেন;
গ. ইজতিহাদের প্রয়োজন বোধ করেননি;
ঘ. ইজতিহাদ করেছিলেন কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে নিষেধের কারণে তা বন্ধ করে দিয়েছেন।
৩. সাহাবীগণ শুধুক. কুরআনের উপর আমল করেছেন;
খ. হাদীসের উপর আমল করেছেন;
গ. কুরআন হাদীসের বাইরে ইজতিহাদ করেছেন;
ঘ. কুরআন হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইজতিহাদ করেছেন।
৪. ইমাম শাওকানীক. একজন শিয়া পন্থী মুজতাহিদ ছিলেন;
খ. প্রথমে শিয়া পন্থী ছিলেন পরবর্তীতে সালাফী মাযহাবের মুজতাহিদ ছিলেন;
গ. সারা জীবন শিয়া পন্থী ছিলেন;
ঘ. সব সময় সালাফী পন্থী ছিলেন।
৫. ইবনুল কাইয়িম আল-জাওযিয়াক. ইজতিহাদে কঠোর বিরোধিতা করতেন;
খ. তাকলীদের চরম বিরোধী ছিলেন;
গ. কোনটিই ছিলেন না;
ঘ. ইবনে তাইমিয়ার মতোামতো অনুসরণ করতেন।
সংক্ষিপ্ত উত্তর-প্রশ্ন
১. রাসূলের (স) দু’টি ইজতিহাদের প্রমাণ দিন।
২. সাহাবীদের দু’টি ইজতিহাদের প্রমাণ দিন।
৩. তাবিঈ ও তাবয়ে তাবিঈর যুগের ইজতিহাদ সম্পর্কে লিখুন।
৪. হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্তইজতিহাদের বর্ণনা দিন।
৫. হিজরী সপ্তম শতাব্দী থেকে দশম শতাব্দী পর্যন্তইজতিহাদের বর্ণনা দিন।
৬. হিজরী দ্বাদশ থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্তইজতিহাদ সম্পর্কে লিখুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. ইজতিহাদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]