হানাফী মাযহাবের ফিকহী মাসায়িল কত ভাগে বিভক্ত? হানাফী মাযহাবের মূলনীতি লিখুন

হানাফী মাযহাবের পরিচয়
হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ইমাম আবু হানীফা (র)। তিনি কুফা নগরীতে ৮০ হি. সনে
জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫০হি. সনে বাগদাদের কারাগারে ইন্তিকাল করেন। তৎকালে পবিত্র ভ‚মি মদীনা
ছিল হাদীসের আবাসভ‚মি। আর কুফা নগরী ছিল রায় বা স্বাধীন মতামত প্রকাশের জন্য বিখ্যাত।
কেননা কুফা নগরী হাদীসের আবাস ভ‚মি হতে বহু দূরে ছিল। তবে সেখানে অবস্থানরত সাহাবীগণ
যেমন- আলী, ইবনে মাসউদ ও আনাস (রা) প্রমুখ সাহাবীগণের মাধ্যমে যে হাদীস সেখানে পৌঁছেছে
তাই বিদ্যমান ছিল।
এছাড়া হযরত উমর (রা) কুফা নগরী নির্মাণ এবং সেখানে বহু আরব পÐিতদের আবাসস্থল গড়ে
তোলেন। অতঃপর সেখানে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদকে ফিকহ শিক্ষাদানের জন্য প্রেরণ করেন।
পরবর্তীতে বহু বিশিষ্ট সাহাবী কুফায় তাঁদের আবাসস্থল গড়ে তোলেন, যাদের সংখ্যা ছিল একহাজার
চারশত। আলী (রা) তথায় মুসলিম বিশ্বের রাজধানী স্থাপন করেন। ঐ সাহাবীগণ কুফার আনাচেকানাচে ইলম প্রচার করেন। পরবর্তীতে তাবিঈনের মধ্যে তাদের বহু অনুসারী সৃষ্টি হয়। ইবরাহীম
আন-নাখয়ী তাদের বিক্ষিপ্ত ইলম একত্র করেন।
এরপর ইমাম আবু হানীফা (র) সাহাবী ও তাবিঈদের ইলম একত্র করেন। আর বহু পরীক্ষা- নিরীক্ষার
পর তা সংরক্ষণ ও সংকলন করেন। এভাবে তাঁর ফিকহ মানুষের মধ্যে পরিচিতি লাভ করে।
তিনি হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি তাঁর ছাত্রদের নিয়ে একটি
ফিকহ বোর্ড গঠন করেন, যাতে ফকীহদের সংখ্যা ছিল ৪০ জন। তাঁরা প্রত্যেকেই ফিকহ, হাদীস,
তাফসীর, উলূমুল কুরআন ও আরবী ভাষার উপর মহাপÐিত ছিলেন।
ইমাম আবু হানাফী (র) ফিকহ জগতে বিশাল অবদান রেখে যান। এমনকি ইমাম শাফিঈ বলেন,
ফিকহ শাস্ত্রে সকল মানুষ ইমাম আবু হানীফার পরিবার।
ইমাম আবু হানীফা (র) ‘আল-ফিকহুল আকবার’ নামে আকীদা ও কালাম শাস্ত্রের উপর সর্বপ্রথম কিতাব
লিখেন, যা তৎকালে আকীদা ও ফিকহ শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
হানাফী মাযহাবের মাসআলাসমূহ
হানাফী মাযহাবের মাসআলাসমূহকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়১. উসুল
২. নাওয়াদের
৩. ফাতাওয়া
১. উসুল : উসূল বলতে ঐ মাসআলাগুলোকে বুঝায় যেগুলো হানাফীগণ জাহিরুর রিওয়ায়েত বলে
থাকেন। জাহিরুর রিওয়ায়েত বলতে ঐ মাসআলাগুলোকে বুঝায় যা ইমাম আবু হানীফা (র) ও
তাঁর শিষ্যগণ যেমন- ইমাম আবু ইউসুফ, মুহাম্মদ, যুফার প্রমুখ থেকে বর্ণিত। এরা সরাসরি ইমাম
আবু হানীফা থেকে ইলম শিক্ষা করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ উসূলের মাসআলাগুলোকে ছয়টি
কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। এগুলো জাহিরুর রিওয়ায়েত নামে খ্যাত।
২. নাওয়াদের : নাওয়াদের বলতে ঐ মাসআলাগুলোকে বুঝায়, যা ইমাম আবু হানীফা ও তাঁর
শিষ্যবৃন্দ থেকে বর্ণিত। কিন্তু তা জাহিরুর রিওয়ায়েত নামক কিতাবগুলোতে স্থান পায়নি।
৩. ফাতাওয়া : ফাতাওয়া বলতে এমন বিষয়সমূহকে বুঝান হয়েছে, যেগুলোর ফাতওয়া দিয়েছেন
ইমাম আবু হানীফার পরবর্তী যুগের ইমামগণ এবং যার মধ্যে ইমাম আবু হানীফা ও তাঁর ছাত্রদের
পক্ষ হতে কোন বর্ণনা নেই। হানাফী মাযহাবের সর্বপ্রথম ফাতাওয়া গ্রন্থ হল, আবুল লায়েছ
সমরকন্দী কর্তৃক সংকলিত ‘কিতাবুন নাওয়াযিল’।
হানাফী মাযহাবের উসূল বা মূলনীতি
গবেষণার ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফার উসূল বা মূলনীতি নিম্নরূপ
ইমাম আবু হানীফা (র) বলতেন, মাসআলা গবেষণার ব্যাপারে আমি কুরআন থেকে গ্রহণ করি।
কুরআনে না পেলে সহীহ হাদীস থেকে গ্রহণ করি। আর কুরআন ও হাদীসে না পেলে সাহাবীদের উক্তি
থেকে গ্রহণ করি। অতঃপর সাহাবীগণের উক্তিতে না পাওয়া গেলে আমি ইজতিহাদ করি, যেভাবে
তাবিঈগণ ইজতিহাদ করেছেন।
ইমাম আবু হানীফার উক্তি অনুযায়ী তাঁর মাযহাবের মূলনীতি ও তাঁর ইজতিহাদের নীতি নিম্নরূপ১. আল-কুরআন : কুরআনই হল ইসলামী শরীআতের মূল উৎস। এতে পরস্পর বিরোধী অভিমতো
হতে পারে না। যদি কুরআনের আয়াত থেকে মাসআলা গবেষণার ব্যাপারে একাধিক মতো পাওয়া
যায় তবে বুঝতে হবে, এর মানে ও উদ্দেশ্য বুঝার ব্যাপারে পরস্পর বিরোধী মতো সৃষ্টি হয়েছে।
২. সুন্নাহ : সুন্নাহ তথা হাদীস হল ইসলামী শরীআতের দ্বিতীয় উৎস। এতে কারো দ্বিমতো নেই।
ইমাম আবু হানীফা (র) তাঁর উসূল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, সহীহ ও মাশহুর হাদীস (দুই-এর
অধিক রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস) পাওয়া গেলে তা তিনি গ্রহণ করেন। তবে খবরে ওয়াহিদ (১ বা
২ জন রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস) গ্রহণ করতে তাঁর নি¤œলিখিত শর্ত রয়েছে।
ক. বর্ণনাকারীর আমল বর্ণিত হাদীসের বিপরীত হবে না। যদি এরূপ দেখা যায় তবে বুঝতে হবে
তাঁর বর্ণিত হাদীসটি মানসূখ বা রহিতো।
খ. বর্ণনাকারী পরবর্তীতে ঐ হাসিদটি অস্বীকার করবেন না।
গ. খবরে ওয়াহিদটি যদি শুধু এক ব্যক্তিই বর্ণনা করে, তাহলে এ সম্পর্কে অন্যদের জানা থাকতে
হবে। কারণ ঐ হাদীসটি শুদ্ধ হলে অন্যরাও সে সম্পর্কে অবগত থাকতেন।
৩. ইজমা : যে বিষয়ের উপর উম্মাতে মুহাম্মদীর ঐকমত্যো রয়েছে ইমাম আবু হানীফা সেগুলোর উপর
নির্ভর করতেন। উম্মাতের ঐকমত্যের উপর আমলের ব্যাপারে কারো দ্বিমতো নেই।
৪. সাহাবীদের উক্তি : কুরআন-সুন্নাহ ও ইজমায় কোন বিষয়ের বিধান না পাওয়া গেলে ইমাম আবু
হানীফা (র) সাহাবীগণের উক্তি দলীল হিসেবে গ্রহণ করতেন। সাহাবীগণের উক্তিতে না পাওয়া
গেলে তাবিঈদের মতো তিনিও ইজতিহাদ করতেন।
৫. কিয়াস : ইমাম আবু হানীফা (র) হাদীস গ্রহণে কঠিন শর্ত আরোপ করেন। ফলে তিনি মাসআলা
প্রণয়নে কিয়াস বা রায় গ্রহণ করতেন। ইজতিহাদে তাঁর তীক্ষè জ্ঞান ছিল। তিনি তাঁর উসূল
মোতাবেক সহীহ হাদীস পেলে শুধু তাই কবুল করতেন। অন্যথায় কিয়াসের আশ্রয় নিতেন।
৬. ইসতিহসান : (উত্তম চিন্তা ও মতামত) ইমাম আবু হানীফা (র) ইসতিহসানের উপর আমল
করতেন। ইসতিহসান হল প্রকাশ্য কিয়াসের বিপরীত। কখনো কখনো দেখা যায়, প্রকাশ্য
কিয়াসের উপর আমল করলে মঙ্গল ও কল্যাণ সাধিত হয় না। তখন ইসতিহসানের উপর আমল করতে হয়। মালিকী মাযহাবেও ইসতিহসানের উপর আমল করা হয়। উসূল বলতে ঐ
মাসআলাগুলোকে বুঝায় যেগুলো হানাফীগণ জাহিরুর রিওয়ায়েত বলে থাকেন। জাহিরুর
রেওয়ায়েত বুঝায় যা ইমাম আবু হানীফা (র)
ও তাঁর শিষ্যগণ থেকে বর্ণিত। নাওয়াদের বলতে
ঐ মাসআলাগুলোকে বুঝায়, যা ইমাম আবু
হানীফা ও তাঁর শিষ্যবৃন্দ থেকে বর্ণিত। কিন্তু উহা জাহেরুর রেওয়ায়েতে নেই।
ফাতাওয়া বলতে এমন বিষয়সমূহকে বুঝান
হয়েছে, যেগুলোর ফাতওয়া দিয়েছেন ইমাম আবু হানীফার পরবর্তী যুগের ইমামগণ।
৭. উরফ বা প্রচলিত প্রথা : স্থানীয় প্রচলিত প্রথা যদি শরীআতের বিপরীত না হয় তবে শরীআতের
বিধান নির্ধারণের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা উরফ-এর উপর আমল করতেন। ক্ষেত্র বিশেষে
হানাফী আলিমগণ কিয়াস ও ইসতিহসানের উপরও উরফ বা দেশীয় প্রচলনকে প্রাধান্য দিতেন।
তবে উরফ কোন দলীলের বিপরীত হলে তা অগ্রাহ্য বলে গণ্য হবে।
ইমাম আবু হানীফার শ্রেষ্ঠ ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (র) বলেন : “যে সব হাদীসে ফিকহ সংক্রান্ত
ইলম রয়েছে ঐ সব হাদীসের ব্যাখ্যা ইত্যাদির ব্যাপারে আমি ইমাম আবু হানীফা অপেক্ষা অধিক
পারদর্শী কাউকে দেখিনি। তিনি সহীহ হাদীস সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞানী ছিলেন।”
হানাফী মাযহাব প্রচারে ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর অবদান ও তাঁর গ্রন্থাবলি
ইমাম আবু ইউসুফের নাম হল ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম। তিনি ১১২ হি. সালে জন্ম গ্রহণ করেন।
যৌবনে পদার্পণ করার পর থেকেই হাদীস শিক্ষায় ব্রত হন। তিনি হিশাম ইবনে ওরওয়া, আবু ইসহাক,
আতা, সাইব ও অন্যান্যদের থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি ফিকহ শিক্ষায়ও মনোনিবেশ করেন।
প্রথমতো, তিনি ইবনু আবি লায়লার হাতে ফিকহ শিক্ষা করেন। অতঃপর ইমাম আবু হানীফার শিষ্যত্ব
গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর নিকট ইলমে ফিকহ অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ইমাম আবু হানীফার শ্রেষ্ঠ
ছাত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি তাঁর যুগে সর্বশ্রেষ্ঠ ফিকহ শাস্ত্রবিদ ছিলেন।
তিনি ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মাযহাবের উপর বহু গ্রন্থ রচনা করেন। দেশে বিদেশে তাঁর ইলম
ছড়িয়ে পড়ে। হানাফী মাযহাবের প্রচারে ও প্রসারে তাঁর অবদান সর্বাপেক্ষা বেশি।
আবু ইউসুফের কিতাবসমূহে ইমাম আবু হানীফার উক্তি সংকলিত হয়েছে। তাঁর কিতাব সমূহের মধ্যে
রয়েছে :
১. মুসনাদে ইমাম আবু হানীফা: এতে তিনি ইমাম আবু হানীফার রেওয়াত ও তাঁর (আবু ইউসুফের) অভিমতো বর্ণনা করেন।
২. আল-খারাজ।
৩. ইখতিলাফু আবি হানীফা ওয়া ইবনু আবি লায়লা (আবু হানীফা ও ইবনে আবু লায়লার
মতোবিরোধ)।
হানাফী মাযহাব প্রচারে ইমাম মুহাম্মদ (র)-এর অবদান ও তাঁর গ্রন্থাবলি
ইমাম মুহাম্মদ (র) হলেন ইমাম আবু হানীফার দ্বিতীয় প্রসিদ্ধ ছাত্র। তিনি ইরাকের ওয়াছিত প্রদেশে
জন্মগ্রহণ করেন। ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আবু ইউসুফের নিকট তিনি ইলমে ফিকহর জ্ঞান অর্জন
করেন। তাঁর প্রণীত গ্রন্থের মাধ্যমে হানাফী মাযহাবের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। একদা ইমাম আহমদ
ইবনে হাম্বলকে প্রশ্ন করা হল, এতেঠ সূক্ষè মাসআলা তিনি কোথায় পেয়েছেন? ইমাম আহমদ উত্তরে
বললেন, ইমাম মুহাম্মদের কিতাবসমূহের মধ্যে পেয়েছি।
ইমাম মুহাম্মদ (র) প্রণীত গ্রন্থের সংখ্যা ছিল ৯৯৯টি। তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে১. আল-জামিউল কাবীর
২. আল-জামিউস সাগীর
৩. আস-সিয়ারুল কাবীর
৪. আস-সিয়ারুস সাগীর
আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদের সাথে ইমাম হানীফা (র)-এর সম্পর্কের স্বরূপ
ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ হানাফী মাযহাব প্রচার ও প্রসারে সর্বপেক্ষা অগ্রণী ভ‚মিকা পালন
করেন। তাঁরা দু’জনই হানাফী মাযহাবের ফিকহী মাসআলাগুলো সংকলন করেন এবং তার জবাব
সন্নিবেশিত করেন।
ইমাম আবু হানীফার সাথে তাঁদের সম্পর্ক ইমামের সাথে মুকাল্লিদের মতো নয়। বরং শিক্ষকের সাথে
শিক্ষার্থীর সম্পর্কের মতো। তাঁরা শুধু তাঁদের ইমামের ফাতওয়ার উপরই নির্ভর করতেন না বরং
নিজেরাও ফাতওয়া দিতেন। আবার ক্ষেত্র বিশেষে তাঁরা ইমামের ফাতওয়ার বিপরীতও ফাতওয়া
দিতেন, যখন তাঁরা নিজেদের মতের স্বপক্ষের ইমামের দলীলের চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী দলীল
পেতেন। সুতরাং দেখা যায়, যখন তাঁরা হিজাযবাসী থেকে উপযুক্ত দলীল পেতেন, তখন তাঁরা ইমাম
সাহেবের নিকট থেকে বহুবার পিছু হটেছেন। তাঁরা ইমাম সাহেবের বহু রায় গ্রহণ করেননি। তাঁরা
দু’জনই মুজতাহিদ ছিলেন, তবে ফাতওয়া ও ইজতিহাদের বেলায় ইমামের মূলনীতিরই অনুসরণ
করেছেন।
অপরপক্ষে ইমাম আবু হানীফার সাথে তাঁদের সম্পর্কে ইমাম মালিকের সাথে ইমাম শাফিঈ ও ইমাম
আহমদ ইবনে হাম্বলের সম্পর্কের মতোও নয়। কেনান ইমাম চতুষ্টয়ের প্রত্যেকের পৃথক পৃথক মূলনীতি
ছিল, যা গবেষণা ও ইজতিহাদের বেলায় ক্ষেত্র বিশেষে পরস্পর বিরোধী ছিল। ঐ ইমামগণ একে
অপরের মতো ও পথ অনুসরণ করেননি। যেমনিভাবে ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ তাঁদের ইমামের
মূলনীতি অনুসরণ করেছেন। যদিও তাঁরা শাখা-প্রশাখায় কখনো কখনো তাঁদের ইমামের বিরোধিতা
করেছেন। যেমন দেখা যায়, একই মাসআলায় ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদের মধ্যে
তিনজনের তিনটি পৃথক পৃথক মতো রয়েছে। এর কারণ হল, কেউ ফাতওয়া প্রণয়নে সহীহ হাদীস
পেয়েছেন। কেউ কিয়াসের উপর আমল করেছেন। আবার কেহ ইসতিহসানের উপর আমল করেছেন।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, যদি একই মাসআলায় তিনজনের তিন প্রকারের উক্তি পাওয়া যায়, তবে
মাসআলাটি আকীদা, তাওহীদ ও তাকওয়া সম্পর্কিত হলে সেখানে ইমাম আবু হানীফার ফাতওয়ার
উপর আমল করতে হবে। কেননা ইমাম আবু হানীফা এ তিনজনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মুত্তাকী ছিলেন।
বিচার বিষয়ক হলে আবু ইউসুফের উক্তির উপর ফাতওয়া হবে। আর উরফ বা দেশীয় প্রচলন সম্পর্কিত
হলে ইমাম মুহাম্মদের উক্তি গ্রহণযোগ্য হবে।
হানাফী মাযহাবের কতিপয় পরিভাষা
হানাফী মাযহাবের ইমামদের মধ্যে তিনজন হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। এরা হলেন :
১. ইমাম আবু হানীফা (র), ২. ইমাম আবু ইউসুফ (র) ও ৩. ইমাম মুহাম্মদ (র)। এদের একত্রে
দু’জনকে বুঝাতে নিম্নরূপ পরিভাষা ব্যবহৃত হয় :
১. শায়খাইন : ইমাম আবু হানীফা ও আবু ইউসুফ (র)-কে এক সঙ্গে শায়খাইন বলে।
২. সাহেবাইন : আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ (র)-কে এক সঙ্গে সাহেবাইন বলে।
৩. তরফাইন : ইমাম আবু হানীফা ও মুহাম্মদ (র)-কে এক সঙ্গে তরফাইন বলে।
হানাফী মাযহাবের প্রচার ও প্রসার
হানাফী মাযহাব প্রথমে কুফা ও বাগদাদে, এরপর সমগ্র ইরাকে প্রসার লাভ করে। তারপর দূরদূরান্তে
যেমন: রোম, বোখারা, ফারগানা, পারস্যের দেশসমূহে, হিন্দুস্থান, সিন্ধু প্রদেশ ও ইয়ামান প্রভৃতি দেশে
ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর আফ্রিকার ত্রিপোলী, তিউনিসীয়া ও আলজিয়ার্সে হানাফী মাযহাব বিস্তার লাভ করে।
বিখ্যাত মনীষী ইবনে খালদুন হানাফী মাযহাবের বিস্তৃতি সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে আবু হানীফার
অনুসারী হল, ইরাক, হিন্দুস্তানের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা, চীন ও সমগ্র অনারব দেশ। কারণ হানাফী
মাযহাবই প্রথমে মুসলিম বিশ্বের রাজধানী বাগদাদকে বেষ্টন করেছিল। আর আবু হানীফার ছাত্রগণই
আব্বাসীয় খলীফাগণের সাথী ছিলেন। ফলে একের পর এক তাঁদের ফিকহ শাস্ত্রের কিতাব প্রকাশিত
হয়েছিল।
তারপর উসমানীয়রা যখন মসনদে আরোহণ করেন তখন সারাদেশের বিচার কাজের ভার হানাফী
মাযহাব অনুসারেই চলতে থাকে। কারণ উসমানীয়রা হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। একারণে মুসলিম বিশ্বের বেশিরভাগ জায়গায় হানাফী মাযহাব ছড়িয়ে পড়ে। যদি একই মাসআলায়
তিনজনের তিন প্রকারের উক্তি পাওয়া যায়, তবে
মাসআলাটি আকীদা, তাওহীদ ও তাকওয়া
সম্পর্কিত হলে সেখানে ইমাম আবু হানীফার
ফাতওয়ার উপর আমল করতে হবে। কেননা
ইমাম আবু হানীফা (র) এ তিনজনের মধ্যে
সর্বাপেক্ষা মুত্তাকী ছিলেন। বিচার বিষয়ক
হলে ইমাম আবু ইউসুফের উক্তির উপর
ফাতওয়া হবে। আর উরফ বা দেশীয় প্রচলন
সম্পর্কিত হলে ইমাম মুহাম্মদের উক্তি গ্রহণযোগ্য হবে।
 সঠিক উত্তরের পাশে টিক ( চিহ্ন দিন১. ইমাম আবু হানীফার আকীদার কিতাবের নামক. বুখারী শরীফ;
খ. আল-ফিকহুল আকবার;
গ. আল-খারাজ;
ঘ. ফাতাওয়া হিন্দিয়া।
২. হানাফী মাযহাবের সর্বপ্রথম ফাতওয়ার কিতাব হচ্ছেক. ফাতওয়া রশীদিয়া;
খ. আল-মাবসুত;
গ. কিতাবুন নাওয়াযেল;
ঘ. কিতাবুল উম্ম।
৩. ইমাম আবু হানীফার বিশিষ্ট শাগরেদের একজনের নামক. ইমাম শাফিঈ;
খ. ইমাম মালিক;
গ. ইমাম আবু ইউসুফ;
ঘ. ইমাম বুখারী।
৪. আল-জামিউল কাবীর গ্রন্থের প্রণেতা কে?
ক. ইমাম আবু হানীফা;
খ. ইমাম আবু ইউসুফ;
গ. ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল;
ঘ. ইমাম মুহাম্মদ।
৫. সাহেবাইন বলতে কী বুঝায়?
ক. ইমাম আবু হানীফা ও মুহাম্মদকে
খ. ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদকে
গ. ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম আবু হানীফাকে
ঘ. ইমাম মুহাম্মদ ও ইমাম তিরমিযীকে।
সংক্ষিপ্ত রচনামূলক উত্তর-প্রশ্ন
১. হানাফী মাযহাবের ফিকহী মাসায়িল কত ভাগে বিভক্ত? বর্ণনা করুন।
২. হানাফী মাযহাবের মূলনীতি লিখুন।
৩. ইমাম আবু ইউসুফ -এর অবদান আলোচনা করুন।
৪. ইমাম মুহাম্মাদ-এর অবদান আলোকপাত করুন।
বিশদ উত্তর-প্রশ্ন
১. হানাফী মাযহাব সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে লিখুন।
২. হানাফী মাযহাবের মূলনীতিসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]