মেনা শেখ - জসীম উদ্‌দীন---রাখালী 

মেনা শেখের খবর জান?-সাত গাঁয়ে তার নাম,
ছেলে বুড়ো যাকেই শুধাও, কোন খানে তার ধাম?
আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে, আলীপুরের মোড়ে,
আকাশ ছোঁয়া খড়ের পালা চোখের পাতা পড়ে।
দুপুর রোদে ধাঁধিয়ে দেওয়া টিনের ঘরের চাল,
গগন-গাঙে উড়ছে যেন সাদা পাখির পাল।
সাত গাঁর লোক গর্ব করে ফুলিয়ে বুকের ছাতা,
মেনা শেখের গাঁয়ের মানুষ নইক মোরা যাতা।

জানিসনে ভাই! সেবার যে ওই দিগ-নগরের হাট।
দবির ছেলে শোকের মামুদ কিনতে গিয়ে পাট।
বরই ডাঙার সাদের সাথে লাগল মারামারি,
মেনা শেখের নাম শুনে সব তুলেই পালা দাড়ি,
-দে ছুট সেই বন-বাদাড়ে যেথায় চলে পাও,
একলা মেনা হারিয়ে দিল একশ জনা সাও।
কথা যাদের টাকায় বিকায় সেই যে উকিল বাবু।
মেনা শেখের রাখতে খাতির সে-ও হয়ে যায় কাবু,
সদর থানার বড় বাবু-যম কাঁপে যার ডরে,
শালার চেয়ে ইতরামি গাল মুখে সদাই ঝরে।
তারেও মেনা-কান-কথাতে করতে পারে গুণ।
মনে নেই সেই দবির জোলার পুতের বৌ-এর খুন?

লেখা পড়া জানে না সে? সিটকিও না দাঁত ;
না পড়েছে আজি ক খ দুখান কলার পাত।
পড়েছে ত সাতটি গাঁয়ের সাতশ বাড়ির লোক,
কেমন করে ব্যথায়-গানে লয়ে হাজার শোক।
মেঠো মায়ের অবোধ ছেলে মাটির সাথে মিশে,
কোলখানি তার সোনায় সাজায় সোনা ধানের শীষে।
সে ত জানে সাত ঋতুতে সাতটি রঙের আলা,
ছবির পরে ছবি এঁকে সাজায় মাঠের থালা।
তারি সাথে হাজার চাষীর কি কাজ হবে রোজ,
কোন মাঠে কে করবে বা কি-জানে সে তার খোঁজ।
বানে ফসল ডোবার আগে ডোবে তাহার চোখ,
মায়ের ছেলে মরার আগে তাহার বুকে শোক।
বিয়ের বেলায় কলমা পড়ায়, মরলে সে দ্যা্য় গোর
সুখের বেলা সাথের সাথী, দুখীর দুখে ভোর।
কেতাব পড়ে পায়নি খেতাব ? পেয়েছে এক ডাকে,
হাজার চাষীর হাজার লাঠি উঠবস তার হাঁকে।

তোমরা বল অত্যাচারী ?-জিভ কাটিব চুপ করে থাক,
শেখের পোরে ডাক দিয়ে তোর পিঠেতে নয় পিটাব ঢাক।
দোষে গুণে পয়দা মানুষ চাঁদের বুকে রয়েছে দাগ,
যেই মেঘেতে বর্ষে বাদল সেই মেঘেতেই ঝড়েরি রাগ।
মানি আমি, আছে তাহার অনেক রকম অত্যাচারও,
তবু সে কেন মোড়ল মোদের ভেবেছ কি কেউ একবারও?
খুন করিলে বুক দিয়ে সে আগে দাঁড়ায় খুনীর হয়ে,
চোর-ধরিবাজ সবার কুনাম লয় সে আপন মাথায় বয়ে।

একটি ভিটেয় চরছে ঘুঘু তাহার নাকি অত্যাচারে।
জানি আমি কলম-পেষা। এই নিয়ে আজ দুষছ তারে।
হাজার ভিটের চরত ঘুঘু সে না থাকলে মোদের গাঁয়ে,
হাজার চালের খসত ছানি তোমাদের ওই কলম ঘায়ে।
লাঠি তাহার মারে যদি মাথায় তাহা বইতে পারি।
কলম দিয়ে যে মার মারো ব্যথা তাহার বুঝতে নারি।
লাঠির আঘাত সারবে জানি দুদিন কিবা ছদিন পরে,
কলম দিয়ে কর আঘাত সারবে না সে গেলেও গোরে।
জানিনে ওই ছাতার কলম কি দিয়ে বা লও গড়িয়ে,
খোদার কলম রদ করেছো ওরই একটা আঁচড় দিয়ে।
মাঠে মাঠে জমি মোদের খোদ জমিদার খোদার লেখায়,
আলের পরে আল গাঁথিয়া সীমানা তার যায় দেখা যায়।
তোমরা লেখ কাগজে আল, সীমানা তার বুঝতে নারি।
খোদার দেওয়া খাস মহালের তারি মায়ায় দখল ছাড়ি।
সেই কলমের খোরাক দিতে মাঠে মাঠে লাঙল ঠেলি,
মাটি খুঁড়ে যে সোনা পাই চরণতলে দেই যে মেলি।
তবু তাহার মেটে না ভুখ ইচ্ছে করে দনে- পিষে
কলমগুলো দিই জ্বালিয়ে জাহান্নামের আগুন শীষে।

আমরা মাঠের মুক্ত শিশু ভয় করি না ঝঞঝা বাদল,
জাহান্নামের মতন জ্বালা চৈত্র রোদে বাজাই লাঙল।
শুনো মাঠও মন্ত্র শুনে দোলায় তরুণ তৃণের আঁচল,
কচি গায়ে পুলক দিতে কাজলী মেঘও হয়রে সজল।
বর্ষা বুকে ভাসাই মোরা সবুজ ধানের মাদুরখানি,
ছল ছল জলের উপর অন্ন মায়ের আসন টানি।

বাঁশীর সুরে শরৎ-চাঁদের কুচি কুচি সোনার হাসি,
কাঁচা ধানের পাতায় পাতায় মেলতে পারি রাশি রাশি।
মাঠে যে ধান ধরেই নাক, পারি সে ধান ভরতে ডোলে,
এটা কেবল জানিনে ওই কলম ধরে সে কোন কলে।
ঝড় এসে ঘর উড়িয়ে নিলে ঝড়েই ঘরে দেই যে ছানি,
ভয় করিনে বৃষ্টি শীলা- শীরালীদের মন্ত্র জানি।
ভয় করিনে হাঙর কুমীর- দেবতা আছেন খোয়াজ খিজির,
বনের বাঘে ভয় করিনে গাজী মাদার হাঁকছে জিকির।
ভয় শুধু ওই কলমটারে, আঘাত তাহার গায় না লাগে,
শেলের মত বক্ষখানির ব্যথার জাগায় ভীষণ দাগে।
মেনা শেখের হাতের লাঠি ভাঙতে পারে সবার মাথা,
কি দিয়ে ওই গড়ছ কলম, হাজার মারে ভাঙে না তা।



FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]