সুখের বাসর - জসীম উদ্‌দীন---সকিনা 

নয়া জমিদার আদিলদ্দীন ধরি সকিনারে হাত,
কহিল, চল গো সোনার বরণী, মোর ঘরে মোর সাথ!
মালার মতন করিয়া তোমারে পরিয়া রাখিব গলে,
পঙ্খী করিয়া পুষিব তোমারে উড়াব আকাশ ভরি,
আমার দুনিয়া রঙিন করিব তোমারে মেহেদী করি।

সকিনা কহিল, আপনি মহান, হতভাগিনীর তরে,
যাহা করেছেন জিন্দেগী যাবে ঋণ পরিশোধ করে।
তবুও আমারে ক্ষমা করিবেন, আপনার ঘরে গেলে,
বসিতে হইবে হতভাগিনীরে কলঙ্ক কালি মেলে।
আসমান সম আপনার কুল, মোর জীবনের মেঘে,
যত চান আর সুরুয তারকা সকল ফেলিবে ঢেকে।
ধোপ কাপড়েতে দাগ লাগিলে যে সে দাগ মোছেনা আর,
অভাগীর তরী ভাসাইতে দিন ভুলের গাঙের পার।

আদিল কহিল, সুন্দর মেয়ে! থাক চাঁদ মেঘে ঢেকে,
তুমি যে উদয় হও মোর মনে জোছনা ঝলক এঁকে।
মোর ভালবাসা চান্দের সম, তব কলঙ্ক তার,
শোভা হয়ে শুধু ছড়ায়ে পড়িবে নানা কাহিনীতে আর।
সকিনা কহিল, পাড়ে পড়ি তুমি আমারে বুঝোনা ভুল,
কত না বিপদ সায়র হইতে তুমি মোরে দেছ কূল।
তোমার নিকটে জমা রাখিলাম ইহ-পরকাল মোর,
দন্ডের তরে তোমারে ভুলিলে আমি যেন লই গোর।
তোমার লাগিয়া আমি যে বন্ধু তাপসিনী হয়ে রব,
গহন বনেতে কুঁড়ে ঘরে বসি তব নাম শুধু লব।
ক্ষমা করো মোরে, তোমার জীবনে দোসর হইব বলে,
সাধ থাকিলেও সাধ্য নাহিক আমারি ভাগ্য ফলে।

আদিল কহিল, সুন্দর মেয়ে! তুমি কেন ভয় পাও?
আমার আকাশে তুমি হবে মোর উদয়-তারার নাও।
এই বুক মোর এত প্রসারিত, তাহার আড়াল দিয়া,
দুনিয়া ছড়ান তব কলঙ্ক রাখিব যে আবরিয়া।
এ বাহুতে আছে এত বিক্রম, তার মহা-মহিমায়,
এতটুকু গ্লানি আনিতে পাবে না কেউ এ জীবনটায়।

তবু মোরে ক্ষমা করিও বন্ধু! সকিনা কহিল কাঁদি,
যারে ভালবাসি তারে কোন প্রাণে দেব এই দেহ সাধি।
একটি বিপদ হতে উদ্ধার পাইবার লাগি তার,
আরটি বিপদে পড়িতে হয়েছে বদলে এ দেহটার।
পন্যের মত দেহটারে সে যে বিলায়েছে জনে জনে,
কোন লালসার লাগি নহে শুধু বাঁচিবার প্রয়োজনে।
এই মন লয়ে কতজন সনে করিয়াছে অভিনয়,
কত মিথ্যার নকল রচিয়া ফিরেছে ভুবনময়।
সে শুধু ক্ষুধার আহারের লাগি কে তাহা বুঝিতে পাবে?
সবাই তাহারে চিন্তা করিবে নানা কুৎসিতভাবে!
সেই মন আর সেই দেহ যাহা সবখানে কদাকার,
কেমন করিয়া দিবে তারে যেবা সব চেয়ে আপনার!
পায়ে পড়ি তব, শোন গো বন্ধু! ছাড় অভাগীর আশা,
আমারে লইয়া ভাঙিওনা তব আসমান সব বাসা।

আদিল কহিল, বুঝিলাম মেয়ে! রজনী হইলে শেষ,
রাতের বাসারে উপহাসি পাখি চলে যায় আর দেশ;
সকল বিপদ হইতে তোমারে করিয়াছি উদ্ধার,
আমারে লইয়া তোমার জীবনে প্রয়োজন কিবা আর?
কি কথা শুনালে পরাণ বন্ধু! সকিনা কাঁদিয়া কয়,
তীক্ষ্ম বরশা-শেল যে বিধালে আমার জীবনটায়।
এত যদি মনে ছিল গো বন্ধু, এই অভাগিনী তরে,
তোমার পরাণ ওমন করিয়া এমনই যদি বা করে;
আমারে লইয়া এতই তোমার হয় যদি প্রয়োজন,
আজি হতে তবে সঁপিলাম পায়ে এই দেহ আর মন।
সাক্ষী থাকিও আল্লা রসুল! আপন অনিচ্ছায়,
সব চেয়ে যেবা পবিত্র মম তারে দিনু আমি হায়;
এই দেহ মন যাহা জনে জনে কালি যে মাকায়ে গেছে,
তাই নিল আজি মোর ফেরেস্তা আপনার হাতে যেচে।
বনে থাকো তুমি পউখ পাখালী আমারে করিও দোয়া,
আজ হতে আমি বন্দী হইনু লইয়া ইহার ময়া।
অনেক ঊর্ধ্বে থাকগো তোমরা চন্দ্র-সূরুয দুটি,
মোদের জীবন রহে যেন সদা তোমাদের মত ফুটি।
দোয়া কর তুমি সোনার পতিগো, দোয়া কর তুমি মোরে,
তোমার জীবনে জড়ালাম আমি লতার মতন করে।
এ লতা বাঁধন জনমের মত কখনো যেন না টুটে,
যত ভালবাসা ফুলের মতন রহে যেন এতে ফুটে।

সকিনারে লয়ে আদিল এবার পাতিল সুখের ঘর,
বাবুই পাখিরা নীড় বাঁধে যথা তালের গাছের পর।
সোঁতের শেহলা ভাসিতে ভাসিতে এবার পাইল কূল,
আদিলবলিল, গাঙের পানিতে কুড়ায়ে পেঁয়েছি ফুল।
এই ফুল আমি মালায় গাঁথিয়া গলায় পরিয়া নেব,
এই ফুল আমি আতর করিয়া বাতাসে ছড়ায়ে দেব।
এই ফুলে আমি লিখন লিখিব, ভালবাসা দুটি কথা,
এই ফুলে আমি হাসিখুশি করে জড়াব জীবন-লতা।

করিলও তাই, সকিনারে দিয়ে রঙের রঙের শাড়ী,
আদিল কহিল, সবগুলি মেঘ এসেছে সন্ধ্যা ছাড়ি।
সবগুলি পাখি রঙিন পাখায় করেছে হেথায় মেলা,
সবগুলি রামধনু এসে দেহে জুড়েছে রঙের খেলা।
ঝলমল মল গয়নায় গাও ঝলমল মল করে,
ঝিকিমিকি ঝিকি জোনাক মতিরা হাসিছে অঙ্গ ধরে।



FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]