যৌগিক বচনের সংজ্ঞা দিন। এর শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করুন। পরিমাণের ভিত্তিতে বচনকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? বিশেষ বচনের উদাহরণসহ সংজ্ঞা দিন।

বিভিন্ন সূত্রের ভিত্তিতে বচনকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। নিæে এগুলো তুলে ধরা হল ১।
গঠনের ভিত্তিতে ২। সম্বন্ধের ভিত্তিতে ৩। গুণের ভিত্তিতে ৪। পরিমাণের ভিত্তিতে ৫। নিশ্চয়তার
ভিত্তিতে ও ৬। তাৎপর্যের ভিত্তিতে।
গঠনের ভিত্তিতে
গঠনের ভিত্তিতে বচনকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ১। সরল বচন ও ২। যৌগিক বচন।
সরল ও যৌগিক বচন
যে বচনে একটি বক্তব্য থাকে বা একটি মাত্র ঘটনার উল্লেখ থাকে তাকে সরল বচন বলে। এ বচনে
একটি উদ্দেশ্য এবং একটি বিধেয় থাকে। যেমন ‘কলমটি হয় কাল’। এই বচনটিতে একটি মাত্র বক্তব্য
রয়েছে।
যে বচনে একাধিক বক্তব্য থাকে বা একাধিক বিষয়ের উল্লেখ থাকে তাকে যৌগিক বচন বলে। এ বচনে
একটি উদ্দেশ্য এবং একাধিক বিধেয় থাকে। যেমন ‘দুধ হয় সাদা ও তরল’। এই বচনটি বিশ্লেষণ করলে
দু’টি বচন পাওয়া যায় ১। দুধ হয় সাদা এবং ২। দুধ হয় তরল। এই বচনটিতে একটি উদ্দেশ্য ও দু’টি
বিধেয় রয়েছে।
যৌগিক বচনকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে ১। সংযোজক বচন ও ২। বিয়োজক বচন।
সংযোজক ও বিয়োজক যৌগিক বচন
যে যৌগিক বচনে একাধিক ইতিবাচক সরল বচন থাকে তাকে সংযোজক বচন বলে। যেমন মিতু হয়
সুন্দরী ও বুদ্ধিমতী। এ যৌগিক বচনটিতে দু’টি ইতিবাচক সরল বচন রয়েছে ১। মিতু হয় সুন্দরী এবং
২। মিতু হয় বুদ্ধিমতী।
যে যৌগিক বচনে একাধিক নেতিবাচক সরল বচন থাকে তাকে বিয়োজক বচন বলে। যেমন মিতু নয়
সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী। এ যৌগিক বচনে দুটি নেতিবাচক সরল বচন রয়েছে ১। মিতু নয় সুন্দরী এবং
২। মিতু নয় বুদ্ধিমতী ।
যোগাত্মক যৌগিক : অনন্য ও নিপাতন যোগাত্মক যৌগিক বচন
সংযোজক ও বিয়োজক বচন ছাড়াও আর এক ধরনের যোগাত্মক যৌগিক বচন রয়েছে। এ বচন দু’ভাগে
বিভক্ত। যেমন ১। অনন্য যোগাত্মক ও ২। নিপাতন যোগাত্মক।
যে বচনের বিধেয় কেবল উদ্দেশ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ তাকে অনন্য যোগাÍক বচন বলে। যেমন কেবল
শিশুরাই হয় সুখী।
যে বচনের বিধেয় উদ্দেশ্য স¤পর্কে ব্যতিক্রম কিছু স্বীকার বা অস্বীকার করে তাকে নিপাতন যৌগিক
বচন বলে। যেমন ‘করিম ব্যতীত সকল ছাত্র উপস্থিত’। এ বচনটিতে দু’টি বচন রয়েছে ১। সকল ছাত্র
হয় উপস্থিত এবং ২। করিম নয় উপস্থিত।
সম্বন্ধের ভিত্তিতে
সম্বন্ধের ভিত্তিতে বচনকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ১। নিরপেক্ষ ও ২। সাপেক্ষ বচন।
নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ বচন
যে বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের স¤পর্ক কোন শর্তের ওপর নির্ভর করে না তাকে নিরপেক্ষ বচন বলে।
যেমন ‘মানুষ হয় মরণশীল’। ‘মানুষ নয় অমর’। এ বচন দু’টির প্রথমটিতে উদ্দেশ্য স¤পর্কে বিধেয়কে
শর্ত ছাড়াই স্বীকার এবং দ্বিতীয়টিতে অস্বীকার করা হয়েছে।
যে বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের স¤পর্ক কোন না কোন শর্তের ওপর নির্ভর করে তাকে সাপেক্ষ বচন
বলে। যেমন ‘যদি সে পড়ালেখা করে, তাহলে সে পাস করবে’। এ বাক্যটিতে ‘সে পাস করবে’ এ
উক্তিটি ‘যদি সে পড়ালেখা করে’ এ শর্তের ওপর নির্ভর করে।
সাপেক্ষ বচন আবার দু’ভাগে বিভক্ত। যেমন ১। প্রাকল্পিক ও ২। বৈকল্পিক বচন।
প্রাকল্পিক বচন ও বৈকল্পিক বচন
যে সাপেক্ষ বচনে ‘যদি’ ‘যখন’ বা অনুরূপ শব্দ দ্বারা শর্ত নির্দেশ করা হয় তাকে প্রাকল্পিক বচন বলে।
প্রাকল্পিক বচনের আকার সাধারণত ‘যদি...তাহলে’ এরূপ হয়ে থাকে। যেমন ‘যদি তুমি আস তাহলে
আমি যাব।’ প্রাকল্পিক বচনের দুটি অংশ রয়েছে ‘পূর্বগ’ ও ‘অনুগ’। যে অংশে শর্ত বর্তমান থাকে তাকে
পূর্বগ এবং যে অংশে মূল বক্তব্য থাকে তাকে অনুগ বলে। প্রাকল্পিক বচনের সাধারণ নিয়ম অনুসারে শর্ত
আগে আসে, আর মূল বক্তব্য পরে আসে। এজন্যই শর্তকে পূর্বগ এবং মূল বক্তব্যকে অনুগ বলা হয়।
যে সাপেক্ষ বচনের দু’টি বিকল্প থাকে এবং বিকল্প দু’টি ‘হয় না হয়’ দ্বারা যুক্ত থাকে তাকে বৈকল্পিক
বচন বলে। যেমন ‘করিম হয় বোকা না হয় ভন্ড’। বৈকল্পিক বচনের দু’টি বিকল্পের মধ্যে একটিকে
অবশ্যই সত্য বলে গ্রহণ করতে হয়।
গুণের ভিত্তিতে
গুণের ভিত্তিতে বচনকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ১। ইতিবাচক ও ২। নেতিবাচক বচন।
ইতিবাচক ও নেতিবাচক বচন
যে বচনে উদ্দেশ্য স¤পর্কে বিধেয়কে স্বীকার করা হয় তাকে ইতিবাচক বচন বলে। যেমন ‘করিম হয়
বুদ্ধিমান’। এ বচনটি ইতিবাচক। কারণ বিধেয়তে উদ্দেশ্য স¤পর্কে স্বীকার করা হয়েছে।
যে বচনে উদ্দেশ্য স¤পর্কে বিধেয়কে অস্বীকার করা হয় তাকে নেতিবাচক বচন বলে। যেমন ‘করিম নয়
বুদ্ধিমান’। এ বচনে উদ্দেশ্য স¤পর্কে বিধেয়তে অস্বীকার করা হয়েছে।
পরিমাণের ভিত্তিতে
পরিমাণের ভিত্তিতে বচনকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ১। সার্বিক ও ২। বিশেষ বচন। সার্বিক ও বিশেষ বচন
যে বচনে সমগ্র উদ্দেশ্য স¤পর্কে বিধেয়কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক বচন বলে। যেমন
‘সব প্রাণী হয় মরণশীল’, ‘কোন মানুষ নয় বিড়াল।’ প্রথম বচনে বিধেয়কে সমগ্র উদ্দেশ্য স¤পর্কে স্বীকার
এবং দ্বিতীয় বচনে বিধেয়কে সমগ্র উদ্দেশ্য স¤পর্কে অস্বীকার করা হয়েছে।
ইতিবাচক সার্বিক বচনের পরিমাণসূচক চিহ্নগুলো হলো সব, সমস্ত, সকল, যে কোন, প্রত্যেক, যা কিছু
ইত্যাদি। আর নেতিবাচক সার্বিক বচনের পরিমাণসূচক চিহ্নগুলো হলো একটিও নয়, একজনও নয়,
কেহ না, কেউ না, কোন নয় ইত্যাদি।
যে বচনে উদ্দেশ্যের অংশবিশেষ স¤পর্কে বিধেয়কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ বচন
বলে। যেমন কোন কোন মানুষ হয় সৎ। কোন কোন মানুষ নয় সৎ। এ বিশেষ বচন দু’টির প্রথমটিতে
সৎ কথাটি মানুষের অংশবিশেষ স¤পর্কে স্বীকার করা হয়েছে; এবং দ্বিতীয়টিতে অংশবিশেষ স¤পর্কে
অস্বীকার করা হয়েছে। ‘কোন কোন’ কথাটির সাধারণ অর্থ কতক; কিন্তু যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে এটি একটু
ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। ‘কোন কোন’ কথার যৌক্তিক অর্থ অন্তত একটি। এর বেশিও হতে পারে, তবে
স¤পূর্ণনয়।
বিশেষ বচনের পরিমাণসূচক চিহ্নগুলো হলো কোন কোন, কেউ কেউ, কয়েকটি, কতিপয়, কিছু,
অধিকাংশ ইত্যাদি।
নিশ্চয়তার ভিত্তিতে
নিশ্চয়তার ভিত্তিতে বচনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ১। অনিবার্য ২। বিবরণিক ও ৩। সম্ভাব্য বচন।
অনিবার্য, বিবরণিক ও সম্ভাব্য বচন
যে বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের স¤পর্ক অনিবার্যভাবে সত্য তাকে অনিবার্য বচন বলে। যেমন ত্রিভুজের
তিন কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ।
যে বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের স¤পর্ক আমাদের অভিজ্ঞতার ওপর প্রতিষ্ঠিত তাকে বিবরণিক বচন বলে।
যেমন সব কাক হয় কালো।
যে বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের স¤পর্ক সম্ভাবনাময় তাকে সম্ভাব্য বচন বলে। যেমন রহিম কাল বাড়ি
যেতে পারে। সম্ভাব্য বচন সবচেয়ে কম নিশ্চয়তাজ্ঞাপক।
তাৎপর্যের ভিত্তিতে
তাৎপর্যের ভিত্তিতে বচনকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ১। বিশ্লেষক ও ২। সংশ্লেষক বচন।
বিশ্লেষক ও সংশ্লেষক বচন
যে বচনে বিধেয় উদ্দেশ্য স¤পর্কে নতুন কোন তথ্য প্রদান করে না তাকে বিশ্লেষক বচন বলে। এ বচনে
বিধেয় উদ্দেশ্যের জাত্যর্থ বা জাত্যর্থের অংশবিশেষ বিশ্লেষণ করে। যেমন সকল মা হয় জননী। এ
বচনে বিধেয় উদ্দেশ্য স¤পর্কে নতুন কিছু বলছে না। উদ্দেশ্যে যা বলা হয়েছে, তাই বলছে।
যে বচনে বিধেয় উদ্দেশ্য স¤পর্কে নতুন কোন তথ্য প্রদান করে তাকে সংশ্লেষক বচন বলে। যেমন
‘ফুলটি হয় লাল’। এ বচনে বিধেয় উদ্দেশ্য স¤পর্কে নতুন তথ্য দিচেছ যা উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্তর্নিহিত > নেই।
সারাংশ
আমাদের এ আলোচনার ভিত্তিতে বচনের যে শ্রেণীবিভাগ পেলাম তা নি¤েœর ছকের মাধ্যমে দেখান হল।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বচনের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। যৌগিক বচনের সংজ্ঞা দিন। এর শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করুন।
২। পরিমাণের ভিত্তিতে বচনকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? বিশেষ বচনের উদাহরণসহ সংজ্ঞা দিন।
৩। কোন্ সূত্রের ভিত্তিতে বচনকে বিশ্লেষক ও সংশ্লেষক বচনে ভাগ করা হয়? সংশ্লেষক বচনের
উদাহরণসহ সংজ্ঞা দিন।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। কোন্টি অনন্য যোগাÍক যৌগিক বচন
ক) করিম হয় বুদ্ধিমান খ) করিম হয় বুদ্ধিমান ও সৎ
গ) করিম ব্যতীত সকল ছাত্র হয় বুদ্ধিমান। ঘ) কেবল করিমই হয় বুদ্ধিমান।
২। সম্বন্ধের ভিত্তিতে বচনকে কোন কোন ভাগে ভাগ করা যায়?
ক) সরল ও যৌগিক খ) নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ
গ) ইতিবাচক ও নেতিবাচক ঘ) সার্বিক ও বিশেষ।
৩। নিশ্চয়তার ভিত্তিতে বচনকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়
ক) দু’ভাগে খ) তিন ভাগে
গ) চার ভাগে ঘ) কোন ভাগ করা যায় না।
সঠিক উত্তর
১। ঘ) কেবল করিমই হয় বুদ্ধিমান। ২। খ) নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ ৩। খ) তিন ভাগে

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]