গুণ ও পরিমাণ অনুসারে পদের ব্যাপ্যতা ব্যাখ্যা করুন।

গুণ
প্রত্যেক আদর্শ আকারের শর্তনিরপেক্ষ বচনের গুণ ও পরিমাণ আছে। গুণ অনুসারে বচন সদর্থক ও
নঞর্থক দু’রকম হতে পারে। নিরপেক্ষ বচনে বিধেয়ের কাজ হল উদ্দেশ্য স¤পর্কে কিছু স্বীকার বা
অস্বীকার করা। স্বীকৃতি ও অস্বীকৃতিই বচনের গুণের প্রকাশক। যে বচনে উদ্দেশ্য স¤পর্কে বিধেয়কে
স্বীকার করা হয় সেই বচন সদর্থক। যেমন ‘করিম হয় জ্ঞানী’ এই বচনে ‘জ্ঞানী’ বিধেয়টি উদ্দেশ্য
‘করিম’ স¤পর্কে স্বীকৃত হয়েছে। কাজেই বচনটি সদর্থক।
অপরদিকে যে বচনে বিধেয়কে উদ্দেশ্য স¤পর্কে অস্বীকার করা হয় তাকে বলে নঞর্থক বচন। যেমন
‘করিম নয় জ্ঞানী’।
বচনের গুণ অর্থাৎ বচন সদর্থক না নঞর্থক তা নির্ণয় করতে হয় সংযোজক দেখে। সংযোজক যদি
নঞর্থক হয় বা সংযোজকের সাথে যদি নঞর্থক চিহ্ন থাকে তবে বচনটি নঞর্থক হবে। আর যদি
সংযোজকটি সদর্থক হয় তাহলে বচনটি সদর্থক হবে। পরিমাণ
পরিমাণ অনুসারে শর্তনিরপেক্ষ বচনকে সার্বিক ও বিশেষ বচনে ভাগ করা হয়। যে বচনে বিধেয়কে
সমগ্র উদ্দেশ্য স¤পর্কে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় তাকে সামান্য বা সার্বিক বচন বলে। উদ্দেশ্য পদের
দ্বারা নির্দেশিত সমস্তব্যক্তি বা বস্তু স¤পর্কে বিধেয়কে স্বীকার বা অস্বীকার করলে তা হবে সার্বিক বচন।
যেমন ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’, ‘কোন মানুষ নয় অমর’ এ দু’টি সার্বিক বচন। কেননা দু’টি ক্ষেত্রেই
সমগ্র উদ্দেশ্য অর্থাৎ সব মানুষ স¤পর্কে বিধেয়কে যথাক্রমে স্বীকার ও অস্বীকার করা হয়েছে।
আর যে বচনে উদ্দেশ্য পদের ব্যক্তার্থের কিছু অংশ সম্বন্ধে উদ্দেশ্য পদের দ্বারা নির্দেশিত ব্যক্তি বা বস্তুর
কয়েকটি স¤পর্কে বিধেয় পদটিকে স্বীকার বা অস্বীকার করা হয় সেই বচনকে বলা হয় বিশেষ বচন।
যেমন ‘কোন কোন কবি হয় ধার্মিক’, ‘কোন কোন কবি নয় সৎ’ এসব বিশেষ বচন।
গুণ অনুসারে বচন সদর্থক কিংবা নঞর্থক হতে পারে। আবার পরিমাণ অনুসারে বচন সার্বিক কিংবা
বিশেষ হতে পারে। অনুরূপভাবে বিশেষ বচনও সদর্থক হতে পারে, নঞর্থকও হতে পারে। প্রত্যেক
বচনেরই গুণ ও পরিমাণ থাকবে। সুতরাং গুণ ও পরিমাণের সম্মিলিত ভিত্তিতে বচন চার রকমের হবে।
যথা ১। সার্বিক সদর্থক ২। সার্বিক নঞর্থক ৩। বিশেষ সদর্থক ও ৪। বিশেষ নঞর্থক।
এই চারটি আদর্শ আকারের শর্তনিরপেক্ষ বচনকে বোঝাতে আমরা যথাক্রমে অ, ঊ, ও, ও ঙ অক্ষরগুলি
ব্যবহার করি।
অ বচনের আকার ‘সকল ঝ হয় চ’
ঊ বচনের আকার ‘কোন ঝ নয় চ’
ও বচনের আকার ‘কোন কোন ঝ হয় চ ’
ঙ বচনের আকার ‘ কোন কোন ঝ নয় চ ’
ব্যাপ্যতা ( উরংঃৎরনঁঃরড়হ)
শ্রেণী স¤পর্কের দিক থেকে আদর্শ আকারের নিরপেক্ষ বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ বিভিন্ন বিষয়ের
শ্রেণীকে নির্দেশ করে বলে আমরা নিরপেক্ষ বচনকে শ্রেণীবিষয়ক বচন বলে গণ্য করি। বিভিন্ন বচন
বিভিন্নভাবে শ্রেণীকে নির্দেশ করতে পারে। কোন বচন একটি শ্রেণীর সমস্তবিষয়কে নির্দেশ করতে পারে
কিংবা কিছু বিষয়কে নির্দেশ করতে পারে।
গুণ ও পরিমাণ অনুসারে গঠিত চারটি আদর্শ আকারের শর্তনিরপেক্ষ বচনের প্রত্যেকের বেলায় উদ্দেশ্য
পদের আগে পরিমাণ নির্দেশক শব্দ থাকায় কোন্ কোন্ বচনের উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য কিংবা অব্যাপ্য ¯পষ্ট
বোঝা যায়। ‘সকল’, ‘কোন’ শব্দ দু’টি পূর্ণ পরিমাণবাচক, আর ‘কোন কোন’ শব্দ আংশিক
পরিমাণবাচক। কিন্তু বচনে বিধেয়ের আগে পরিমাণ নির্দেশক কোন চিহ্ন বসানোর রীতি নেই বলে কোন্
বচনে বিধেয় পদ ব্যাপ্য তা বুঝতে হলে বচনের অর্থ বুঝতে হবে। ‘সকল বালক হয় মানুষ’ এটি একটি
অ বচন অর্থাৎ সার্বিক সদর্থক বচন। এখানে বালক শ্রেণীর সকলকেই বোঝানো হয়েছে। কিন্তু
বিধেয়পদ মানুষ শ্রেণীর সকলকে বোঝানো হয়েছে কিনা তা ¯পষ্ট নয়। সকল মানুষ বালক একথা
স্বীকার করা হয়নি আবার অস্বীকারও করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে মানুষদের প্রত্যেকেই বালক নয়। কাজেই
‘সকল ঝ হয় চ’ ...আকারে যে কোন সার্বিক সদর্থক বচনে উদ্দেশ্য পদ ঝ দ্বারা নির্দেশিত শ্রেণীর
অন্তর্গত সকল সদস্যকে বোঝানো হচেছ কিন্তু চ দ্বারা নির্দেশিত শ্রেণীর সকলকে বোঝানো হচেছ না। এ
প্রসঙ্গে যুক্তিবিদ্যায় ‘ব্যাপ্যতা’ কথাটি ব্যবহার করা হয়। যদি একটি পদ নির্দেশিত শ্রেণীর সকলকে
বোঝায় তাহলে সেই পদটি ব্যাপ্য হয়েছে বলা হয়। সুতরাং অ বচনের উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য কিন্তু বিধেয়
পদ ব্যাপ্য নয়।
‘কোন পশু নয় সভ্য’ এটি ঊ বচন অর্থাৎ সার্র্বিক নঞর্থক বচন। এখানে বলা হচেছ পশু শ্রেণীর সব
কিছুই সভ্য শ্রেণীর বহিভর্‚ত। অর্থাৎ বচনটি প্রতিটি পশু স¤পর্কে ঘোষণা করছে যে পশুটি সভ্য নয়।
তাহলে ঊ বচনের উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য। আবার ‘কোন পশু নয় সভ্য’ বললে সমগ্র সভ্যশ্রণী পশু শ্রেণীর
বহিভর্‚ত একথাও বোঝানো হয়। অর্থাৎ সভ্য শ্রেণীর কোন প্রাণীই পশু নয়। কোন কিছুকে অস্বীকার
করার মানে তাকে স¤পূর্ণভাবে অস্বীকার করা। কাজেই ঊ বচনে যেহেতু বিধেয় পদের দ্বারা নির্দেশিত
শ্রেণীর সকলকে গ্রহণ করা হয়েছে সেহেতু তার বিধেয় পদও ব্যাপ্য। অতএব ঊ বচনের উদ্দেশ্য ও
বিধেয় পদ উভয়ই ব্যাপ্য।
‘কোন কোন পশু হয় উভচর’ এটি ও বচন অর্থাৎ বিশেষ সদর্থক বচন। এখানে ¯পষ্টই বোঝা যাচেছ
উদ্দেশ্য পদ পশু শ্রেণীর সকলকে নির্দেশ করেনি এবং বিধেয় পদ ‘উভচর’ শ্রেণীর সবাইকে নির্দেশ
করেনি। প্রত্যেক পশু স¤পর্কে কিংবা প্রত্যেক উভচর প্রাণী স¤পর্কে এখানে কিছু বলা হয়নি। এ দু’টি
শ্রেণীর কোনটিই অপরটির স¤পূর্ণঅন্তর্ভুক্ত বা স¤পূর্ণবহির্ভুত নয়। সুতরাং ও বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় উভয় পদই অব্যাপ্য।
‘কোন কোন মানুষ নয় সৎ’ এটি ঙ বচন অর্থাৎ বিশেষ নঞর্থক বচন। ও বচনের মত ঙ বচনের
উদ্দেশ্য পদ অব্যাপ্য। এখানে সব মানুষ স¤পর্কে কোন ঘোষণা করা হয়নি কিছু সংখ্যক মানুষ
স¤পর্কেই শুধু বলা হয়েছে। বচনটিতে বলা হয়েছে কিছু সংখ্যক মানুষ সমগ্র সৎ শ্রেণী বহিভর্‚ত। অর্থাৎ
সৎ মানুষ বলতে যাদের বুঝায় কিছু সংখ্যক লোকের কেউই সে শ্রেণীর অন্তর্গত নয়। যখন কোন কিছুকে
একটি শ্রেণীর বহিভূর্ত বলা হয় তখন ওই শ্রেণীকে সমগ্রভাবে নেয়া হয়। যেমন কোন ব্যক্তিকে যদি
বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাহলে বাংলাদেশের যে কোন স্থানই তার জন্য নিষিদ্ধ। সুতরাং ঙ
বচনে বিধেয় পদ ব্যাপ্য।
এ আলোচনা থেকে দেখা যাচেছ, সার্বিক বচনের উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য এবং বিশেষ বচনের উদ্দেশ্য পদ
অব্যাপ্য। সুতরাং আদর্শ আকারের শর্তনিরপেক্ষ বচনের পরিমাণ দ্বারা নির্ধারিত হয় সেই বচনের
উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য হবে কি হবে না। আবার সার্বিক ও বিশেষ উভয় প্রকার সদর্থক বচন বিধেয়পদকে
ব্যাপ্য করে না। কিন্তু সার্বিক ও বিশেষ উভয় প্রকার নঞর্থক বচন বিধেয়কে ব্যাপ্য করে। সুতরাং
আদর্শ আকারের শর্তনিরপেক্ষ বচনের গুণের দ্বারা নির্ধারিত হয় সেই বচনের বিধেয় পদ ব্যাপ্য হবে কি হবে না।
আমরা তাহলে বচনের ব্যাপ্যতা সম্বন্ধে দু’টি নিয়ম পেলাম
১। সার্বিক বচনের উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য এবং
২। নঞর্থক বচনের বিধেয় পদ ব্যাপ্য।
সহজে মনে রাখার জন্য আমরা এক্ষেত্রে নিচের ছকটি ব্যবহার করতে পারি
উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য
অ : সকল ঝ হয় চ ঊ : কোন ঝ নয় চ
ও : কোন কোন ঝ হয় চ উদ্দেশ্য পদ অব্যাপ্য ঙ : কোন কোন ঝ নয় চ
সারাংশ
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম গুণ ও পরিমাণের যুক্তপ্রক্রিয়া অনুসারে শর্তনিরপেক্ষ
বচনকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন ১। সার্বিক সদর্থক ২। সার্বিক নঞর্থক ৩। বিশেষ সদর্থক ও
৪। বিশেষ নঞর্থক। এদের বোঝাতে অ, ঊ, ও ও ঙ এই চারটি অক্ষর ব্যবহার করা হয়। আরও
জানতে পারলাম ব্যাপ্যতার দু’টি নিয়ম রয়েছে। যথা ১। সার্বিক বচন উদ্দেশ্যকে ব্যাপ্য করে এবং ২। নঞর্থক বচন বিধেয়কে ব্যাপ্য করে। বিধেয় পদ অব্যাপ্য বিধেয় পদ ব্যাপ্য
রচনামূলক প্রশ্ন
১। গুণ ও পরিমাণ অনুসারে পদের ব্যাপ্যতা ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। গুণ কী? গুণ অনুসারে বচনকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি?
২। ব্যাপ্যতা কী? ব্যাপ্যতার নিয়মগুলি লিখুন।
৩। অ বচনের বিধেয় পদ ব্যাপ্য নয় কেন?
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। কোন্ বচনের পরিবর্তে ও অক্ষরটি ব্যবহৃত হয়
ক) কোন মানুষ নয় জ্ঞানী। খ) সকল মানুষ হয় জ্ঞানী।
গ) কোন কোন ছাত্র হয় জ্ঞানী। ঘ) কোন কোন ছাত্রী নয় জ্ঞানী।
২। পরিমাণ অনুসারে বচনকে ভাগ করা হয়
ক) দু’ভাগে খ) তিন ভাগে
গ) চার ভাগে ঘ) পাঁচ ভাগে
৩। বচনের গুণ নির্দেশ করে
ক) উদ্দেশ্য খ) সংযোজক
গ) বিধেয় ঘ) কোনটি নয়
সঠিক উত্তর
১। গ) কোন কোন ছাত্র হয় জ্ঞানী। ২। ক) দু’ভাগে ৩। খ) সংযোজক

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]