ন্যায় অনুমানের গঠন ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।

যে মাধ্যম অনুমানে যুক্তভাবে দু’টি আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে অনুমিত হয় তাকে ন্যায়
অনুমান বলে।
শর্তনিরপেক্ষ ন্যায়কে ‘আদর্শ আকারের নিরপেক্ষ ন্যায়’ বলা হয়, যখন তার আশ্রয়বাক্য দু’টি এবং
সিদ্ধান্ত-বচন আদর্শ আকারের শর্তনিরপেক্ষ বচন হয় এবং এগুলো একটি নির্দিষ্ট ক্রমে সাজানো থাকে।
ন্যায় অনুমানের গঠন পদ্ধতি
শর্তনিরপেক্ষ ন্যায়ের সিদ্ধান্তটি একটি শর্তনিরপেক্ষ বচন। ন্যায়ের মধ্যে ব্যবহৃত তিনটি পদের মধ্যে
দু’টি পদ সিদ্ধান্তেথাকে। সিদ্ধান্তের বিধেয় পদকে বলা হয় সাধ্য পদ বা প্রধান পদ। সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য
পদকে বলে পক্ষ পদ বা অপ্রধান পদ। আর যে পদটি সিদ্ধান্তেনেই অথচ দু’টি আশ্রয়বাক্যেই উপস্থিত
থাকে তাকে বলে হেতুপদ বা মধ্য পদ। পক্ষ পদ যেহেতু সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য পদ সেহেতু উদ্দেশ্য এর
ইংরেজি প্রতিশব্দ ঝঁনলবপঃ এর আদ্যক্ষর ঝ বর্ণের দ্বারা পক্ষ পদকে বোঝানো হয়।
সাধ্য পদ যেহেতু সিদ্ধান্তের বিধেয় পদ সেহেতু বিধেয়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ চৎবফরপধঃব এর আদ্যক্ষর চ
বর্ণটির দ্বারা সাধ্য পদকে বোঝানো হয়। অনুরূপভাবে হেতুপদকে (গরফফষব ঃবৎস) বোঝানো হয় গ
বর্ণের দ্বারা। সুতরাং ঝ, চ ও গ এই তিনটি পদ যথাক্রমে পক্ষ পদ, সাধ্য পদ ও হেতুপদকে
বোঝাচেছ। হেতুপদের মাধ্যমে সাধ্যপদ ও পক্ষ পদের মধ্যে স¤পর্ক স্থাপিত হয়।
আবার ন্যায় অনুমানের তিনটি বচনেরও তিনটি ভিন্ন নাম আছে। ন্যায়ের যে আশ্রয়বাক্যে সাধ্য পদটি
থাকে সে আশ্রয়বাক্যকে প্রধান আশ্রয়বাক্য বা সাধ্য আশ্রয়বাক্য বলে। পক্ষ পদটি যে আশ্রয়বাক্যে থাকে
সে আশ্রয়বাক্যকে অপ্রধান বা পক্ষ আশ্রয়বাক্য বলে। এ দু’টি আশ্রয়বাক্যের ভিত্তিতে যে বচনটি পাওয়া
যায় তাকে সিদ্ধান্তবলে।
আদর্শ আকারের শর্তনিরপেক্ষ ন্যায়ে প্রধান আশ্রয়বাক্যকে প্রথমে উপস্থাপন করা হয়; তারপর অপ্রধান
আশ্রয়বাক্য এবং শেষে সিদ্ধান্তথাকে। সাধারণত ‘সুতরাং,’ ‘অতএব’, কিংবা, ‘’ চিহ্ন দিয়ে সিদ্ধান্ত বচনকে লিখা বা বলা হয়।
তবে আধুনিক যুক্তিবিদরা মনে করেন আশ্রয়বাক্য দু’টিকে সাজানোর এই ক্রমের কোন গুরুত্ব নেই। যে
আশ্রয়বাক্যটিতে সাধ্য পদ থাকবে সেটি প্রধান আশ্রয়বাক্য এবং যেটিতে পক্ষ পদ থাকবে সেটি অপ্রধান
আশ্রয়বাক্য হবে -তা যেটি যেখানেই থাকুক না কেন।
এবার একটি দৃষ্টান্তনিয়ে ন্যায়ের গঠন বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা যাক
‘কোন মানুষ নয় পাখি’। ঊ
‘সকল মানুষ হয় সামাজিক জীব’। অ
‘কোন কোন সামাজিক জীব নয় পাখী’। ঙ
এই ন্যায়টিতে সিদ্ধান্তহল ‘কোন কোন সামাজিক জীব নয় পাখি’। সিদ্ধান্তবচনের উদ্দেশ্যপদ ‘সামাজিক
জীব’ হল পক্ষ পদ বা অপ্রধান পদ, বিধেয় পদ ‘পাখি’ হল সাধ্য পদ বা প্রধান পদ। ‘মানুষ’ পদটি উভয়
আশ্রয়বাক্যেই উপস্থিত আছে কিন্তু সিদ্ধান্তেনেই বলে এটিকে হেতুপদ বা মধ্যপদ বলা হয়।
সাধ্য পদ পাখি প্রথম আশ্রয়বাক্যে উপস্থিত আছে। কাজেই ‘কোন মানুষ নয় পাখি’ এই বচনটি প্রধান
আশ্রয়বাক্য বা সাধ্য আশ্রয়বাক্য। আর পক্ষ পদ ‘সামাজিক জীব’ দ্বিতীয় আশ্রয়বাক্যে উপস্থিত আছে।
সেজন্য ‘সকল মানুষ হয় সামাজিক জীব’ হল অপ্রধান বা পক্ষ আশ্রয়বাক্য। সিদ্ধান্তকে সর্বশেষে রাখা
হয়েছে। সুতরাং আমাদের উদাহরণে যে অনুমানটি দেয়া হয়েছে তা একটি আদর্শ আকারের নিরপেক্ষ ন্যায় অনুমান।
ন্যায় অনুমানের বৈশিষ্ট্য
ন্যায় অনুমানের কতকগুলি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে যা অন্যান্য অনুমান থেকে তার পার্থক্য নির্দেশ করে।
বৈশিষ্টগুলো হলো
১। ন্যায় অনুমানের সিদ্ধান্তসর্বক্ষেত্রে যুক্তভাবে দু’টি আশ্রয়বাক্য থেকে অনুমিত হয়। কোন ক্ষেত্রেই
সিদ্ধান্তটি পৃথকভাবে যে কোন একটি আশ্রয়বাক্য থেকে অনুমিত হয় না।
উপরের উদাহরণে ‘কোন কোন সামাজিক জীব নয় পাখি’ এ সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্য দু’টির যে কোন একটি
থেকে অনুমিত হয় না; যুক্তভাবে উভয় আশ্রয়বাক্য থেকেই অনুমিত হয়। সুতরাং ন্যায় অনুমান একটি
মাধ্যম অনুমান। এ অনুমান অমাধ্যম অনুমান থেকে পৃথক। কারণ অমাধ্যম অনুমানে সিদ্ধান্তটি
একটিমাত্র আশ্রয়বাক্য থেকে অনুমিত হয়।
২। ন্যায় অনুমানের সিদ্ধান্তকোন ক্ষেত্রেই আশ্রয়বাক্য অপেক্ষা বেশি ব্যাপক হতে পারে না।
এজন্য ন্যায় অনুমানকে বলা হয় ‘অবরোহ অনুমান’। উপরের উদাহরণে ‘কোন কোন সামাজিক জীব নয়
পাখি’ এই সিদ্ধান্তটি দু’টি আশ্রয়বাক্য ‘কোন মানুষ নয় পাখি’ এবং ‘সকল মানুষ হয় সামাজিক জীব’
থেকে কম ব্যাপক। ন্যায় অনুমানের এই বৈশিষ্ট্যটি আরোহ পদ্ধতি থেকে ন্যায় অনুমানের পার্থক্য
নির্দেশ করে। কারণ আরোহ অনুমানে সিদ্ধান্তটি সর্বক্ষেত্রেই আশ্রয়বাক্যগুলো অপেক্ষা অধিকতর ব্যাপক হয়।
৩। ন্যায় অনুমানের সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্যগুলো থেকে অনিবার্যভাবে অনুমিত হয়।
যে কোন দু’টি বাক্য থেকেই সিদ্ধান্তটি অনুমান করা যায় না। যখন আশ্রয়বাক্যগুলোর মধ্যে কোন একটি
বিশেষ ধরনের পার¯পরিক সম্বন্ধ থাকে তখন সিদ্ধান্তটি আবশ্যিকভাবে অনুমিত হয়।
৪। আশ্রয়বাক্যগুলো বস্তগতভাবে সত্য হলে ন্যায় অনুমানের সিদ্ধান্তটিও বস্তগতভাবে সত্য হবে।
অবরোহ অনুমানে শুধু আকারগত সত্যই প্রধান লক্ষ্য বস্তুগত সত্য নয়। ন্যায় অনুমান একটি অবরোহ
অনুমান বলে তার আশ্রয়বাক্যগুলোকে সব সময়ই সত্য বলে ধরে নেয়া হয়। বাস্তব ঘটনার সাথে এগুলো
সামঞ্জস্যপূর্ণকিনা তা দেখা হয় না। সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্যগুলো থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হলেই ন্যায়
অনুমানটি বৈধ হয়। অবশ্য সিদ্ধান্তটির বস্তুগত সত্যতা আশ্রয়বাক্যগুলোর বস্তুগত সত্যতার ওপর নির্ভর
করে। অর্থাৎ আশ্রয়বাক্যগুলো বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণহলে সিদ্ধান্তটিও আবশ্যিকভাবে বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণহবে।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ন্যায় অনুমানের গঠন ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। ন্যায় অনুমান কাকে বলে? উদাহরণ দিন।
২। ন্যায় অনুমানের গঠন পদ্ধতি বর্ণনা করুন।
৩। ন্যায় অনুমানের বৈশিষ্ট্য কয়টি ও কি কি?
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। ন্যায় অনুমানে আশ্রয়বাক্য থাকে
ক) ১টি খ) ২টি
গ) ৩টি ঘ) ৪টি।
২। ন্যায় অনুমানে পদ থাকে
ক) ২টি খ) ৩টি
গ) ৪টি ঘ) ৫টি।
৩। হেতু পদের অবস্থান
ক) সাধ্য আশ্রয়বাক্যে খ) পক্ষ আশ্রয়বাক্যে
গ) উভয় আশ্রয়বাক্যে ঘ) সিদ্ধান্তে।
সঠিক উত্তর
১। খ) ২টি ২। খ) ৩টি ৩। গ) উভয় আশ্রয়বাক্যে

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]