ন্যায় অনুমানের কতকগুলি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে যা অন্যান্য অনুমান থেকে তার পার্থক্য নির্দেশ করে।

বচনের গঠন কাঠামো অনুযায়ী ন্যায় অনুমানকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ভাগগুলো আমরা
নিচের ছকের মাধ্যমে দেখাতে পারি -
ন্যায় অনুমান
অমিশ্র মিশ্র
নিরপেক্ষ প্রাকল্পিক বৈকল্পিক প্রাকল্পিক বৈকল্পিক নিরপেক্ষ দ্বিকল্প
এখানে আমরা প্রাকল্পিক ন্যায় অনুমান নিয়ে এবং পরবর্তী পাঠে বৈকল্পিক ন্যায় অনুমান নিয়ে আলোচনা করব।
প্রাকল্পিক ন্যায় অনুমান
আশ্রয়বাক্যের প্রকারভেদ অনুযায়ী প্রাকল্পিক ন্যায় অনুমানকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা ১।
অমিশ্র প্রাকল্পিক ন্যায় অনুমান ও ২। মিশ্র প্রাকল্পিক ন্যায় অনুমান।
প্রাকল্পিক বচন বলতে এমন একটি যৌগিক বচন বুঝায় যার উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের স¤পর্ক শর্তাধীন। এই
শর্তকে ‘যদি তবে’ বা এর সমার্থক কোন শব্দের সাহায্যে ব্যক্ত করা হয়। প্রাকল্পিক বচনের যে অংশে
শর্তটি ব্যক্ত হয় সেই অংশকে পূর্বগ এবং যে অংশে মূল বক্তব্য ব্যক্ত হয় তাকে অনুগ বলে। যেমন ‘যদি
তুমি আস তাহলে আমি যাব’ এই প্রাকল্পিক বচনে ‘তুমি আস’ হল পূর্বগ এবং ‘আমি যাব’ মূল বক্তব্যটি হল অনুগ।
অমিশ্র প্রাকল্পিক ন্যায়
যে প্রাকল্পিক ন্যায় অনুমানের দু’টি আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তউভয়ই প্রাকল্পিক বচন তাকে অমিশ্র প্রাকল্পিক
ন্যায় অনুমান বলা হয়। যেমন
যদি অতিবৃষ্টি হয় তাহলে বন্যা হয়।
যদি বন্যা হয় তাহলে শস্যহানি হয়।
সুতরাং যদি অতিবৃষ্টি হয় তাহলে শস্যহানি হয়।
এই অনুমানটির প্রথম আশ্রয়বাক্যের অনুগটি দ্বিতীয় আশ্রয়বাক্যের পূর্বগরূপে ব্যবহৃত হয়েছে এবং তা
থেকে একটি অনুগ অনুসৃত হয়েছে। প্রথম আশ্রয়বাক্যের পূর্বগ থেকে অনুসৃত অনুগ দ্বিতীয়
আশ্রয়বাক্যের পূর্বগ হয়ে আর একটি অনুগকে প্রতিপাদন করেছে। অতএব এর থেকে নিশ্চিতভাবেই
সিদ্ধান্তকরা চলে যে প্রথম আশ্রয়বাক্যের পূর্বগ থেকে দ্বিতীয় আশ্রয়বাক্যের অনুগ অনুসৃত হয়।
উদাহরণটিতে ‘অতিবৃষ্টি হয়’ এই পূর্বগটি থেকে অনুসৃত হয় অনুগ ‘বন্যা হয়’। আবার ‘বন্যা হয়’ থেকে
অনুসৃত ‘শস্যহানি হয়’। অতএব সিদ্ধান্তকরা যায় যে ’অতিবৃষ্টি হয়’ থেকে অনুসৃত ‘শস্যহানি হয়’।
সুতরাং অমিশ্র প্রাকল্পিক ন্যায়ের সাধারণ আকার হবে নিæরূপ
যদি ক তাহলে খ।
যদি খ তাহলে গ।
সুতরাং ক তাহলে গ।
এই আকারের যুক্তিতে প্রথম আশ্রয়বাক্যের পূর্বগ এবং সিদ্ধান্তের পূর্বগ এক, দ্বিতীয় আশ্রয়বাক্যের অনুগ
এবং সিদ্ধান্তের অনুগ এক। আবার প্রথম আশ্রয়বাক্যের অনুগটি হল দ্বিতীয় আশ্রয়বাক্যের পূর্বগ।
আশ্রয়বাক্য দু’টি এবং সিদ্ধান্তএরকম সম্বন্ধযুক্ত হলেই অমিশ্র প্রাকল্পিক ন্যায় বৈধ হয়।
মিশ্র প্রাকল্পিক ন্যায়
যে মিশ্র ন্যায়ের প্রথম আশ্রয়বাক্যটি একটি প্রাকল্পিক বচন এবং দ্বিতীয় আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তউভয়ই
নিরপেক্ষ বচন তাকে বলা হয় মিশ্র প্রাকল্পিক ন্যায় অথবা সংক্ষেপে প্রাকল্পিক ন্যায়। মিশ্র প্রাকল্পিক
ন্যায়কে বৈধ হতে হলে দু’টি নিয়ম মেনে চলতে হয়। নিয়ম দু’টি হল
১। মিশ্র প্রাকল্পিক ন্যায়ের প্রাকল্পিক বচনটির পূর্বগকে নিরপেক্ষ আশ্রয়বাক্যে স্বীকার করলে সিদ্ধান্তে
অনুগকেও স্বীকার করতে হয়। কিন্তু এর বিপরীত নিয়ম চলে না। অর্থাৎ অনুগকে স্বীকার করে পূর্বগকে
স্বীকার করা চলে না।
২। প্রাকল্পিক ন্যায়ের অনুগকে নিরপেক্ষ আশ্রয়বাক্যে অস্বীকার করলে সিদ্ধান্তেপূর্বগকেও অস্বীকার
করতে হয়। কিন্তু এর বিপরীত নিয়ম চলে না। অর্থাৎ পূর্বগকে অস্বীকার করে অনুগকে অস্বীকার করা চলে না।
ক. গঠনমূলক প্রাকল্পিক ন্যায়
যে প্রাকল্পিক ন্যায়ের প্রাকল্পিক বচনের পূর্বগকে নিরপেক্ষ আশ্রয়বাক্যে স্বীকার করে সিদ্ধান্তেপ্রাকল্পিক
বচনের অনুগকে স্বীকার করা হয় তাকে বলা হয় গঠনমূলক প্রাকল্পিক ন্যায়। যেমন
যদি ক হয় খ তাহলে গ হয় ঘ।
ক হয় খ
সুতরাং গ হয় ঘ।
যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে খেলা হবে।
বৃষ্টি হয় না
সুতরাং খেলা হবে।
উপরের উদাহরণ দু’টিতে নিরপেক্ষ আশ্রয়বাক্যে প্রাকল্পিক বচনের পূর্বগকে স্বীকার করা হয়েছে এবং
তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তঅনুগকে স্বীকার করা হয়েছে।
খ. ধ্বংসমূলক প্রাকল্পিক ন্যায়
যে প্রাকল্পিক ন্যায়ে নিরপেক্ষ আশ্রয়বাক্যে প্রাকল্পিক বচনের অনুগকে অস্বীকার করে সিদ্ধান্তেপূর্বগকে
অস্বীকার করা হয় তাকে ধ্বংসমূলক প্রাকল্পিক ন্যায় বলা হয়। যেমন
যদি ক হয় খ তাহলে গ হয় ঘ।
গ নয় ঘ।
সুতরাং ক নয় খ।
যদি তুমি পড় তাহলে তুমি পাস করবে।
তুমি পাস করনি।
সুতরাং তুমি পড়নি।
উপরের উদাহরণ দু’টিতে নিরপেক্ষ আশ্রয়বাক্যে প্রাকল্পিক বচনটির অনুগকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং
তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তেপূর্বগকে অস্বীকার করা হয়েছে।
প্রাকল্পিক ন্যায়ের নিয়ম লঙ্ঘনজনিত অনুপপত্তি
প্রাকল্পিক ন্যায়ের ক্ষেত্রে আমরা দু’টি নিয়ম পেয়েছি
১। পূর্বগ স্বীকার করে অনুগ স্বীকার করা যাবে কিন্তু বিপরীতভাবে নয়।
এই নিয়মটি লঙ্ঘন করলে অনুমানটি অবৈধ হবে এবং এই অনুমানটি অনুগ স্বীকারজনিত দোষে দুষ্ট হবে। যেমন
যদি ক তাহলে খ।
খ ।
সুতরাং ক।
যদি তুমি আস তাহলে আমি আনন্দিত হব।
আমি আনন্দিত হয়েছি।
সুতরাং তুমি এসেছ।
এই অনুমানটি অনুগ স্বীকার করে পূর্বগকে স্বীকার করার কারণে অবৈধ হয়েছে এবং এতে অনুগ
স্বীকারজনিত অনুপপত্তি ঘটেছে।
২। অনুগ অস্বীকার করে পূর্বগ অস্বীকার করা যাবে কিন্তু বিপরীতভাবে নয়।
এই দ্বিতীয় নিয়মটি লঙ্ঘন করলে অনুমানটি অবৈধ হয় এবং অনুমানটি পূর্বগ অস্বীকারজনিত দোষে দুষ্ট
হবে। যেমন
যদি ক তাহলে খ।
ক নয়।
সুতরাং খ নয়।
যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ভাল ফসল ফলবে।
বৃষ্টি হয়নি।
সুতরাং ভাল ফসল ফলবে না।
এই প্রাকল্পিক ন্যায় দু’টি প্রথমে পূর্বগকে অস্বীকার করে পরে অনুগকে অস্বীকার করেছে যা দ্বিতীয়
নিয়মের বিপরীত। সুতরাং অনুমানটি অবৈধ এবং পূর্বগ অস্বীকারজনিত দোষে দুষ্ট।
সংজ্ঞা
যে মাধ্যম অনুমানে যুক্তভাবে দু’টি আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে অনুমিত হয় তাকে ন্যায়
অনুমান বলে।
শর্তনিরপেক্ষ ন্যায়কে ‘আদর্শ আকারের নিরপেক্ষ ন্যায়’ বলা হয়, যখন তার আশ্রয়বাক্য দু’টি এবং
সিদ্ধান্ত-বচন আদর্শ আকারের শর্তনিরপেক্ষ বচন হয় এবং এগুলো একটি নির্দিষ্ট ক্রমে সাজানো থাকে।
ন্যায় অনুমানের গঠন পদ্ধতি
শর্তনিরপেক্ষ ন্যায়ের সিদ্ধান্তটি একটি শর্তনিরপেক্ষ বচন। ন্যায়ের মধ্যে ব্যবহৃত তিনটি পদের মধ্যে
দু’টি পদ সিদ্ধান্তেথাকে। সিদ্ধান্তের বিধেয় পদকে বলা হয় সাধ্য পদ বা প্রধান পদ। সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য
পদকে বলে পক্ষ পদ বা অপ্রধান পদ। আর যে পদটি সিদ্ধান্তেনেই অথচ দু’টি আশ্রয়বাক্যেই উপস্থিত
থাকে তাকে বলে হেতুপদ বা মধ্য পদ। পক্ষ পদ যেহেতু সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য পদ সেহেতু উদ্দেশ্য এর
ইংরেজি প্রতিশব্দ ঝঁনলবপঃ এর আদ্যক্ষর ঝ বর্ণের দ্বারা পক্ষ পদকে বোঝানো হয়।
সাধ্য পদ যেহেতু সিদ্ধান্তের বিধেয় পদ সেহেতু বিধেয়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ চৎবফরপধঃব এর আদ্যক্ষর চ
বর্ণটির দ্বারা সাধ্য পদকে বোঝানো হয়। অনুরূপভাবে হেতুপদকে (গরফফষব ঃবৎস) বোঝানো হয় গ
বর্ণের দ্বারা। সুতরাং ঝ, চ ও গ এই তিনটি পদ যথাক্রমে পক্ষ পদ, সাধ্য পদ ও হেতুপদকে
বোঝাচেছ। হেতুপদের মাধ্যমে সাধ্যপদ ও পক্ষ পদের মধ্যে স¤পর্ক স্থাপিত হয়।
আবার ন্যায় অনুমানের তিনটি বচনেরও তিনটি ভিন্ন নাম আছে। ন্যায়ের যে আশ্রয়বাক্যে সাধ্য পদটি
থাকে সে আশ্রয়বাক্যকে প্রধান আশ্রয়বাক্য বা সাধ্য আশ্রয়বাক্য বলে। পক্ষ পদটি যে আশ্রয়বাক্যে থাকে
সে আশ্রয়বাক্যকে অপ্রধান বা পক্ষ আশ্রয়বাক্য বলে। এ দু’টি আশ্রয়বাক্যের ভিত্তিতে যে বচনটি পাওয়া
যায় তাকে সিদ্ধান্তবলে।
আদর্শ আকারের শর্তনিরপেক্ষ ন্যায়ে প্রধান আশ্রয়বাক্যকে প্রথমে উপস্থাপন করা হয়; তারপর অপ্রধান
আশ্রয়বাক্য এবং শেষে সিদ্ধান্তথাকে। সাধারণত ‘সুতরাং,’ ‘অতএব’, কিংবা, ‘’ চিহ্ন দিয়ে সিদ্ধান্ত
বচনকে লিখা বা বলা হয়।
তবে আধুনিক যুক্তিবিদরা মনে করেন আশ্রয়বাক্য দু’টিকে সাজানোর এই ক্রমের কোন গুরুত্ব নেই। যে
আশ্রয়বাক্যটিতে সাধ্য পদ থাকবে সেটি প্রধান আশ্রয়বাক্য এবং যেটিতে পক্ষ পদ থাকবে সেটি অপ্রধান
আশ্রয়বাক্য হবে -তা যেটি যেখানেই থাকুক না কেন।
এবার একটি দৃষ্টান্তনিয়ে ন্যায়ের গঠন বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা যাক
‘কোন মানুষ নয় পাখি’। ঊ
‘সকল মানুষ হয় সামাজিক জীব’। অ
‘কোন কোন সামাজিক জীব নয় পাখী’। ঙ
এই ন্যায়টিতে সিদ্ধান্তহল ‘কোন কোন সামাজিক জীব নয় পাখি’। সিদ্ধান্তবচনের উদ্দেশ্যপদ ‘সামাজিক
জীব’ হল পক্ষ পদ বা অপ্রধান পদ, বিধেয় পদ ‘পাখি’ হল সাধ্য পদ বা প্রধান পদ। ‘মানুষ’ পদটি উভয়
আশ্রয়বাক্যেই উপস্থিত আছে কিন্তু সিদ্ধান্তেনেই বলে এটিকে হেতুপদ বা মধ্যপদ বলা হয়।
সাধ্য পদ পাখি প্রথম আশ্রয়বাক্যে উপস্থিত আছে। কাজেই ‘কোন মানুষ নয় পাখি’ এই বচনটি প্রধান
আশ্রয়বাক্য বা সাধ্য আশ্রয়বাক্য। আর পক্ষ পদ ‘সামাজিক জীব’ দ্বিতীয় আশ্রয়বাক্যে উপস্থিত আছে।
সেজন্য ‘সকল মানুষ হয় সামাজিক জীব’ হল অপ্রধান বা পক্ষ আশ্রয়বাক্য। সিদ্ধান্তকে সর্বশেষে রাখা
হয়েছে। সুতরাং আমাদের উদাহরণে যে অনুমানটি দেয়া হয়েছে তা একটি আদর্শ আকারের নিরপেক্ষ
ন্যায় অনুমান।
ন্যায় অনুমানের বৈশিষ্ট্য
ন্যায় অনুমানের কতকগুলি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে যা অন্যান্য অনুমান থেকে তার পার্থক্য নির্দেশ করে। বৈশিষ্টগুলো হলো

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]