আরোহ অনুমানের স্বরূপ ব্যাখ্যা করুন। কার্যকারণ সম্পর্কের স্বরূপ ব্যাখ্যা করুন।

আরোহের প্রকৃতি (ঘধঃঁৎব ড়ভ ওহফঁপঃরড়হ)
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট ঘটনা বা অভিজ্ঞতা থেকে আমরা একটি সার্বিক ধারণা গঠন
করি। এই সার্বিক ধারণা গঠন করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় আরোহ অনুমান। যেমন
রহিম হয় মরণশীল।
করিম হয় মরণশীল।
যদু হয় মরণশীল।
মধু হয় মরণশীল।
লাকী হয় মরণশীল।
সুতরাং সকল মানুষ হয় মরণশীল।
এখানে আমরা একটি সার্বিক বাক্য গঠন করেছি ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’। এই সার্বিক বাক্যটি আমরা
অনেকগুলো বিশেষ বাক্য বা বিশেষ অভিজ্ঞতা থেকে অনুমান করেছি। আমাদের পক্ষে সব ক’টি ঘটনা
পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তনেয়া সম্ভব নয়। যেমন অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব মানুষের মরণশীলতা
কখনই আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। তাই আমরা কিছু জানা বিষয় থেকে অজানা বিষয় স¤পর্কে
অনুমান করি। জানা থেকে অজানার উদ্দেশ্যে এই যে লাফ দেয়া হয় তাকে বলা হয় আরোহের প্রাণ বা
আরোহমূলক উল্লম্ফন। যে অনুমানে ‘আরোহের প্রাণ’ থাকে তাকে বলা হয় প্রকৃত আরোহ। এই যে
আমরা জানা থেকে অজানার উদ্দেশ্যে লাফ দেই তা কিসের ওপর ভিত্তি করে দেই? আমরা প্রকৃতির
দু’টি মূল নিয়ম প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়মের ওপর ভিত্তি করে দেই। কারণ
প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে বর্তমানে কোনো অবস্থায় যা ঘটছে ভবিষ্যতে সে অবস্থায় তা অবশ্যই ঘটবে।
প্রকৃতির নিয়মে কোন খামখেয়ালিপনা নেই, কোন ব্যতিক্রম নেই। আর কার্যকারণ নিয়ম বলতে বোঝায়
প্রত্যেক ঘটনার একটি কারণ আছে। কার্যকারণ নিয়মের ভিত্তিতে ‘মানুষ’ ও ‘মরণশীলতা’র মধ্যে
কার্যকারণ স¤পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। কাজেই প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়মের ওপর
ভিত্তি করেই আমরা এ সার্বিক বাক্য ‘সকল মানুষ হয় মরনশীল’ অনুমান করি।
বিভিন্ন যুক্তিবিদগণ আরোহের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। যুক্তিবিদ মিল বলেন, আরোহ হচেছ মনের সেই
প্রক্রিয়া যার ভিত্তিতে আমরা অনুমান করি যে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যা সত্য সব ক্ষেত্রেই তা সত্য।
যুক্তিবিদ রীড বলেন, আরোহ হল এমন একটি অনুমান যেখানে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতায় বিশ্বাস করে পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে একটি সার্বিক যুক্তিবাক্য অনুমিত হয়।
আরোহের প্রকার
বিভিন্ন প্রকার আরোহ আছে। কিন্তু যে আরোহে আরোহের সকল বৈশিষ্ট্যগুলো আছে তাকে বৈজ্ঞানিক
আরোহ বলা হয়। তাই আরোহ বলতে বৈজ্ঞানিক আরোহকেই বোঝায়। বিভিন্ন প্রকার আরোহ আমরা
নিচের ছকের মাধ্যমে এভাবে প্রকাশ করতে পারি
আরোহ
কার্য-কারণ স¤পর্ক (ঈধঁংধষ ঈড়হহবপঃরড়হ)
আমরা জানি প্রকৃতিতে এমন কোন ঘটনা ঘটে না যার কোন কারণ নেই অর্থাৎ প্রত্যেকটি ঘটনার একটি
সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। যুক্তিবিদ মিল কার্যকারণের সংজ্ঞায় বলেন, ‘যদি পূর্ববর্তী ঘটনা বা ঘটনাসমূহের
সংমিশ্রণের পর অপর একটি ঘটনা অপরিবর্তনীয়ভাবে ও শর্তহীনভাবে ঘটে, তাহলে পূর্ববর্তী ঘটনাকে
কারণ এবং পরবর্তী ঘটনাকে কার্য বলা হবে’। তিনি আরো বলেন, কারণ হল কতগুলো শর্তের সমষ্টি।
প্রকৃতিতে যখনই কোন ঘটনা ঘটে তখন তা আপনা-আপনি ঘটে না, কতগুলি শর্ত পূরণ হলে তবেই
ঘটনাটি ঘটে। এজন্য বিজ্ঞানীরা একটি ঘটনার জন্য আবশ্যকীয় বা অনিবার্য শর্ত এবং পর্যাপ্ত শর্ত এই দু’ধরনের শর্তের মধ্যে পার্থক্য করেছেন।
যে শর্তের অনুপস্থিতিতে কোন কার্য সংঘটিত হতে পারে না তাকে আবশ্যকীয় বা অনিবার্য শর্ত বলে।
যেমন অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে আগুন জ্বলে না বা যদি আগুন জ্বলে তাহলে অক্সিজেন থাকবেই। তাই
অক্সিজেন হল আগুন জ্বলার আবশ্যকীয় বা অনিবার্য শর্ত।
আর কোন ঘটনা ঘটার সময়ে অনিবার্য এবং অনিবার্য শর্তের পাশাপাশি যে সমস্তশর্ত উপস্থিত থাকে
তাদের একত্রে বলা হয় পর্যাপ্ত শর্ত। অর্থাৎ যাদের উপস্থিতির ফলে ঐ ঘটনাটি ঘটবেই তাদের বলা হয়
পর্যাপ্ত শর্ত। কারণ অক্সিজেনের উপস্থিতি সত্তে¡ও আগুন নাও জ্বলতে পারে। একটি বস্তু জ্বলার পর্যাপ্ত
শর্ত হল অক্সিজেনের উপস্থিতিতে তাপঙ্কের বিশেষ স্তেের ঐ বস্তুর উপস্থিত থাকা।
সুতরাং কোন ঘটনার আবশ্যকীয় শর্ত একাধিক থাকতে পারে এবং এই সমস্তআবশ্যকীয় শর্তের সমষ্টিই
হল পর্যাপ্ত শর্ত। ‘কারণ’ কথাটি এই দুই অর্থেই ব্যবহৃত হয়। যখন অবাš র ঘটনার অপসারণের প্রশ্ন
দেখা দেয় তখন কারণকে ‘আবশ্যকীয় শর্ত’ এ ব্যবহার করা হয়। আর যখন বাঞ্ছিত কোন কিছু উৎপন্ন
করতে চাওয়া হয় তখন কারণ কথাটি ‘পর্যাপ্ত শর্ত’ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
আবার অনেক ব্যবহারিক পরিস্থিতিতে ‘কারণ’ কথাটি পূর্বোক্ত দু’টি অর্থ ছাড়াও ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়।
সে সমস্তক্ষেত্রে আমরা আলোচ্য ঘটনার কারণ হিসেবে কোন বিশিষ্ট ঘটনা জানতে চাই, যা সচরাচর
প্রয়োজনীয় শর্তগুলোর উপস্থিতিতে আলোচ্য ঘটনাটি সংঘটিত হওয়া বা না হওয়ার মধ্যে পার্থক্য রচনা
করে। এরূপ কারণকে প্ররোচক বা প্রবর্তক কারণ বলে। প্ররোচক কারণ দুই রকমের। যথা ১. সন্নিহিত অবৈজ্ঞানিক আরোহ প্রকৃত আরোহ বৈজ্ঞানিক আরোহ সাদৃশ্যানুমান পূর্ণাঙ্গ আরোহ যুক্তিসাম্যমূলক আরোহ অপ্রকৃত ঘটনা সংযোজক
কারণ ও ২. দূরবর্তী কারণ। যেমন কোন লোকের আগুনে পোড়ার কারণ হিসেবে বলা হয় যে, সে
ইচ্ছাপূর্বক নিজের শরীরে আগুন লাগিয়েছে। এই ইচছাপূর্বক নিজের শরীরে আগুন লাগানো হল
সন্নিহিত কারণ। আর সাংসারিক বা ব্যক্তিগত অশান্তিহল একটি দূরবর্তী কারণ।
তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, কারণ কথাটি নানা অর্থে ব্যবহৃত হয়। কারণ বলতে যখন আবশ্যকীয়
শর্তকে বুঝায় তখন আমরা বৈধভাবে কারণ থেকে কার্য অনুমান করতে পারি এবং কারণকে যখন পর্যাপ্ত
শর্তে গ্রহণ করা হয় তখনই আমরা বৈধভাবে কার্য থেকে কারণ অনুমান করতে পারি। আর যখন কারণ
থেকে কার্য এবং কার্য থেকে কারণ বৈধভাবে অনুমান করা যায় তখন কারণকে ‘আবশ্যকীয় ও পর্যাপ্ত
শর্তে’ গ্রহণ করা হয়। এখানে কারণ হল পর্যাপ্ত শর্ত, আর পর্যাপ্ত শর্তসকল আবশ্যকীয় শর্তের সমষ্টি।
কারণের সংজ্ঞা
যুক্তিবিদ মিল কারণ ও কার্যের স¤পর্ক ব্যাখ্যায় বলেন যে, কারণ ও কার্য উভয় বাস্তব ঘটনা। পূর্ববর্তী
ঘটনাটি হল কারণ এবং পরবর্তী ঘটনাটি হল কার্য। কারণ হল কার্যের আবশ্যকীয়, অপরিবর্তনীয় ও
শর্তহীন সাক্ষাৎ পূর্ববর্তী ঘটনা।
বহু কারণবাদ
কারণ বলতে যদি আবশ্যকীয় পর্যাপ্ত শর্ত বোঝায়, তাহলে স্বীকার করতেই হয় যে একটি কার্যের
একটিই মাত্র কারণ থাকবে। কিন্তু একথা বলা যাবে না যে, কারণ হল একটি সরল ঘটনা। কারণ জটিল
হতে পারে এবং কারণের মধ্যে একাধিক উপাদানের সমাবেশ ঘটতে পারে। কিন্তু কারণের স্বরূপ
স¤পর্কীয় ধারণাটিতে একটি সমস্যার উদ্ভব হয়। এই সমস্যাটি হল বহু কারণবাদের সমস্যা। লৌকিক
মতে মনে করা হয় যে, একটি কার্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ দ্বারা উৎপন্ন হতে পারে। মিল ও বেইন
বহুকারণবাদের প্রবক্তা। মিল বলেন, ‘একটি কার্য সব সময় একই কারণের সাথে যুক্ত থাকবে কিংবা
একটি ঘটনা বরাবর একইভাবে ঘটবে একথা সত্য নয়। একটি ঘটনা বিভিন্নভাবে উৎপন্ন হতে পারে।’
যেমন মৃত্যু নামক ঘটনাটির অনেক বিকল্প কারণ থাকতে পারে। যেমন বিষপান, গাড়ী চাপা পড়া,
শ্বাসরোধ ইত্যাদি। যদি প্রকৃতপক্ষে একটি কার্যের নানা কারণ থাকে তবে কার্য থেকে কারণ অনুমান
অসম্ভব হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের কাছে বহুকারণবাদ একটি আকর্ষণীয় মতবাদ। কিন্তু বহু কারণবাদ
স্বীকার করে নিলে কারণকে কার্যের ‘আবশ্যকীয় পর্যাপ্ত শর্ত’ বলা যাবে না। বহু কারণবাদে যে ভ্রান্তি
রয়েছে তা ¯পষ্ট হয়ে ওঠে যদি আমরা কার্যকে বিশিষ্ট অর্থে এবং কারণকে সাধারণ অর্থে গ্রহণ করি।
তাছাড়া কারণের সংজ্ঞার সাথে বহু কারণবাদের সামঞ্জস্য নেই।
অতএব আমরা বলতে পারি যে, একটি বিশেষ কার্যের একটি বিশেষ কারণ আছে। আর এই স্বীকৃতির
মধ্যেই নিহিত রয়েছে একটি সার্বিক কার্যকারণ সূত্র। কার্যকারণের জ্ঞান আমরা লাভ করি অভিজ্ঞতার
মাধ্যমে। অভিজ্ঞতায় প্রাপ্ত বিশেষ বিশেষ ঘটনা থেকে সামান্য বচনে উপনীত হওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয়
‘আরোহমূলক সামান্যীকরণ’। যেমন ‘সকল তিমি হয় স্তন্যপায়ী প্রাণী’ এই সামান্য বচনটি আরোহমূলক
সামান্যীকরণের ফল। আমরা ৪টি তিমি মাছকে স্তন্যপায়ী দেখে যখন বলি ‘তিমি মাছ হয় স্তন্যপায়ী’
তখন তা হয় সামান্য বচন; আর যখন ৪টি তিমি মাছ স্তন্যপায়ী দেখে বলি ৫ম তিমি মাছটিও স্তন্যপায়ী
তখন তা হয় সাদৃশ্যমূলক অনুমান। আমরা পরবর্তী পাঠে সাদৃশ্যমূলক অনুমান নিয়ে আলোচনা করব।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। আরোহ অনুমানের স্বরূপ ব্যাখ্যা করুন।
২। কার্যকারণ সম্পর্কের স্বরূপ ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। আরোহ অনুমানের সংজ্ঞা দিন এবং নিজে একটি আরোহ অনুমান গঠন করুন।
২। কারণের সংজ্ঞা দিন। একটি কার্যের একাধিক কারণ থাকতে পারে না কেন?
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। প্রকৃত আরোহ বলে
ক) যে অনুমানে দু’টি আশ্রয়বাক্য থাকে
খ) যে অনুমানে তিনটি বাক্য থাকে
গ) যে অনুমানের প্রতিটি দৃষ্টান্তদেখে অনুমান করা হয়
ঘ) যে অনুমানে আরোহমূলক লাফ থাকে।
২। প্রকৃত আরোহ
ক) ২ প্রকার খ) ৩ প্রকার
গ) ৪ প্রকার ঘ) কোন প্রকারভেদ নেই।
৩। দুটি কার্যের মধ্যে কোন্টি কারণ
ক) যেটি আগে ঘটে খ) যেটি পরে ঘাটে
গ) যেটি বড় ঘ) যেটি ছোট।
সঠিক উত্তর
১। ঘ) যে অনুমানে আরোহমূলক লাফ থাকে।
২। খ) ৩ প্রকার
৩। ক) যেটি আগে ঘটে

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]