যৌথ অন্বয়ী ব্যতিরেকী পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন।

অন্বয়ী পদ্ধতির ত্র“টি এবং ব্যতিরেকী পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগের অসুবিধা অনুভব করেই মিল তৃতীয়
একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তাঁর মতে ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের
নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না বলেই এই নতুন পদ্ধতির প্রয়োজন হয়।
যৌথ অন্বয়ী-ব্যতিরেকী পদ্ধতি
মিল এই পদ্ধতির সূত্রটি এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ‘আলোচ্য ঘটনাটি উপস্থিত আছে এমন দুই বা
ততোধিক দৃষ্টান্তেযদি অন্য একটি আনুষঙ্গিক বিষয় সব সময় উপস্থিত থাকে এবং আলোচ্য ঘটনাটি
উপস্থিত নেই এমন দুই বা ততোধিক দৃষ্টান্তেযদি ঐ আনুষঙ্গিক বিষয়টি সব সময় অনুপস্থিত থাকে,
তাহলে যে আনুষঙ্গিক বিষয়টিতে উভয় দৃষ্টান্তগুচেছর মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, সেই আনুষঙ্গিক
বিষয়টি আলোচ্য ঘটনার কার্য বা কারণ বা কারণের একটি অপরিহার্য অংশ বলে গণ্য হবে’।
এই সূত্রটি বিশ্লেষণ করলে বুঝা যাবে যে, অন্বয় ও ব্যতিরেকের সংযুক্ত পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য দুই
ধরনের দৃষ্টান্তের প্রয়োজন হয়। একটি সদর্থক, অন্যটি দৃষ্টান্তগুচছ নঞর্থক। সদর্থক দৃষ্টান্তগুচছ আলোচ্য
ঘটনাটির উপস্থিতির দু’টি বা তার বেশি দৃষ্টান্তদিয়ে গঠিত। আর নঞর্থক দৃষ্টান্তগুচছ হল আলোচ্য
ঘটনাটিতে অনুপস্থিতির দৃষ্টান্তের সমাবেশ। কেবলমাত্র আলোচ্য ঘটনাটির উপস্থিতির মিল বা অন্বয়যুক্ত
সদর্থক দৃষ্টান্তগুলির তুলনা করে যদি দেখা যায় যে, অপর একটি পূর্ববর্তী বা পরবর্তী ঘটনাও প্রতিক্ষেত্রে
উপস্থিত; কিংবা কেবলমাত্র আলোচ্য ঘটনাটির অনুপস্থিতির মিল বা অন্বয়যুক্ত নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলির তুলনা
করে যদি দেখা যায় যে, অপর একটি পূর্ববর্তী বা পরবর্তী ঘটনাও প্রতিক্ষেত্রে অনুপস্থিত, তাহলে ঐ
ঘটনাটি আলোচ্য ঘটনাটির কারণ বা কার্য বা কারণের অপরিহার্য অঙ্গরূপে বিবেচিত হবে।
যুগ্ম অন্বয়ী পদ্ধতি
সদর্থক দৃষ্টান্তগুচেছ উপস্থিতির দিক থেকে মিল এবং নঞর্থক দৃষ্টান্তগুচেছ অনুপস্থিতির দিক থেকে মিল
দেখে এই মিলের ভিত্তিতে ঘটনা দু’টির মধ্যে কার্যকারণ স¤পর্ক অনুমান করা হয়। এজন্য যৌথ অন্বয়ী
ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে যুগ্ম অন্বয়ী পদ্ধতিও বলা হয়।
পরোক্ষ ব্যতিরেকী পদ্ধতি
এই পদ্ধতিকে পরোক্ষ ব্যতিরেকী পদ্ধতিও বলা হয়। ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে আমরা পরীক্ষণের মাধ্যমে
নেতিবাচক দৃষ্টান্তথেকে সিদ্ধান্তগ্রহণ করি। কিন্তু এই পদ্ধতিতে আমরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নেতিবাচক
দৃষ্টান্তথেকে সিদ্ধান্তগঠন করি। তাই এই পদ্ধতিকে পরোক্ষ ব্যতিরেকী পদ্ধতিও বলা হয়।
প্রতীক দিয়ে উদাহরণের সাহায্যে যৌথ অন্বয়ী ব্যতিরেকী পদ্ধতির স্বরূপ ব্যাখ্যা করা যায়
সদর্থক বা উপস্থিতির দৃষ্টান্তগুচছ এবং পূর্ববর্তী বা পরবর্তী ঘটনাসমূহ
ক খ গ . . . অ আ ই
ক খ . . . অ ঈ উ
ক ছ জ . . . অ উ এ
ক ঝ ট . . . অ ঐ ও
নঞর্থক বা অনুপস্থিতির দৃষ্টান্তগুচছ এবং পূর্ববর্তী বা পরবর্তী ঘটনাসমূহ
খ গ ঘ . . . আ ই ঈ
ঘ চ ছ . . . ঈ উ ঊ
ছ জ ঝ . . . উ এ ঐ
ঝ ট ঠ . . . ঐ ও ঔ
কার্য থেকে কারণে এবং কারণ থেকে কার্যে গমন
উপরোক্ত প্রতীকী উদাহরণে প্রদত্ত সদর্থক ও নঞর্থক দৃষ্টান্তগুচছ দু’টিকে তুলনা করে দেখা যাচেছ যে,
সদর্থক দৃষ্টান্তেকেবলমাত্র আলোচ্য ঘটনা ‘ক’এর উপস্থিতির মিল বা অন্বয় রয়েছে এবং দৃষ্টান্তগুলির
প্রতিক্ষেত্রেই পরবর্তী ঘটনা হিসেবে উপস্থিত রয়েছে ‘অ’, যদিও অন্যসব ব্যাপারে পরিবর্তন ঘটেছে।
আবার নঞর্থক দৃষ্টান্তগুচেছ কেবলমাত্র আলোচ্য ঘটনা ‘ক’এর অনুপস্থিতির মিল বা অন্বয় রয়েছে এবং
অন্যসব ব্যাপারে পরিবর্তন ঘটলেও ঐ দৃষ্টান্তগুলোর প্রতিক্ষেত্রেই পরবর্তী ঘটনারূপে ‘অ’ অনুপস্থিত
রয়েছে। তাহলে সদর্থক দৃষ্টান্তসম হে ‘ক’ ও ‘অ’এর সহোপস্থিতি এবং নঞর্থক দৃষ্টান্তসম হে ‘ক’ ও
‘অ’এর সহানুপস্থিতি দেখেই সিদ্ধান্তকরা যায় যে, ‘ক’ ও ‘অ’এর মধ্যে কার্যকারণ স¤পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ
‘ক’, ‘অ’এর কারণ বা কারণের অপরিহার্য অংশ। উল্লেখ্য যৌথ অন্বয়ী ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত
পর্যবেক্ষণভিত্তিক। এই পদ্ধতির মাধ্যমে কার্য থেকে কারণে এবং কারণ থেকে কার্যে এই উভয়দিকে যাওয়া যায়।
বাস্তব উদাহরণ
কার্যকারণ স¤পর্ক প্রতিষ্ঠার একটি বাস্তব উদাহরণ এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে নেয়া যাক। যে সমস্ত
বস্তু অতি দ্রুত উত্তাপ বিকিরণ করে তার ওপর বিন্দু বিন্দু শিশির জমে এবং যেসব বস্তু অতি দ্রুত
উত্তাপ বিকিরণ করে না তার ওপর বিন্দু বিন্দু শিশির জমে না। অতএব অতি দ্রুত উত্তাপ বিকিরণ
করাই বিন্দু বিন্দু শিশির জমার কারণ।
অন্বয়ী ও ব্যতিরেকী পদ্ধতি পৃথক পৃথকভাবে প্রয়োগ করলে তাদের সিদ্ধান্তসম্ভাব্য হয়। আর এই দু’টি
পদ্ধতি যুক্তভাবে প্রয়োগ করলে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই বলে এ সিদ্ধান্তঠিক নয় যে,
এটি অন্বয়ী ও ব্যতিরেকী পদ্ধতি থেকে স্বতন্ত্রএকটি পদ্ধতি। তবে একথা স্বীকার করতে হবে যে যৌথ
অন্বয়ী ব্যতিরেকী পদ্ধতি একটি শক্তিশালী আরোহী পদ্ধতি।
যৌথ অন্বয়ী-ব্যতিরেকী পদ্ধতির ত্র“টি
যৌথ অন্বয়ী ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত পর্যবেক্ষণভিত্তিক পদ্ধতি বলেই এর প্রয়োগক্ষেত্র অনেক ব্যাপক।
কিন্তু সীমিত সংখ্যক দৃষ্টান্তের পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করার ফলে এই পদ্ধতিও অপর্যবেক্ষণ দোষেদুষ্ট।
আর এই পদ্ধতির দ্বারা সহ-কার্যের সম্বন্ধ কিংবা নিছক সহবর্তিতার সম্বন্ধ থেকেই প্রকৃত কার্যকারণ
সম্বন্ধকে নিশ্চিতরূপে পৃথক করা যায় না। আবার এই পদ্ধতির মাধ্যমে যে বহু কারণবাদ সম্ভাবনাকে
পরিহার করা যায় তাও বলা যায় না। কারণ আলোচ্য ঘটনাটি এবং তার সাথে সমানভাবে উপস্থিত
বিষয়টি একমাত্র এ দু’টির অনুপস্থিতি ছাড়া অন্যান্য সমস্তবিষয়ে নঞর্থক দৃষ্টান্তগুচছ সদর্থক
দৃষ্টান্তগুচেছর হুবহু অনুরূপ হলেই শুধু বহু কারণ সম্ভাবনাকে স¤পূর্ণভাবে পরিহার করা যায়। কিন্তু
এরকম নঞর্থক দৃষ্টান্তগুচছ সংগ্রহ করা মোটেই সহজসাধ্য নয়।
যুক্তিবিজ্ঞানী কোহেন ও ন্যাগেল -এর মতে, মিল প্রদত্ত এই পদ্ধতির সূত্রটি
ত্র“টিপূর্ণ। সূত্র অনুযায়ী নঞর্থক দৃষ্টান্তগুচেছ আমরা ইচছামত যে কোন ঘটনার সমাবেশ করতে পারি,
যেহেতু কোন একটি বিষয় বা বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতিই সকল দৃষ্টান্তগুলির একটিমাত্র সাধারণ বৈশিষ্ট্য নাও
হতে পারে। ধরা যাক, আমরা বিবাহ বিচেছদের কারণ অনুসন্ধান করতে চাই। এই পদ্ধতি অনুযায়ী
প্রথম সদর্থক দৃষ্টান্তগুচছরূপে কতগুলি বিবাহ বিচেছদকারী দ¤পতিকে প্রত্যক্ষ করতে হবে। তারপর
নঞর্থক দৃষ্টান্তগুচেছ বিবাহ বিচেছদের অনুপস্থিতির দৃষ্টান্তহিসেবে শিশু, অবিবাহিত ব্যক্তি ইত্যাদির
দৃষ্টান্তঅন্তর্ভুক্ত করলেও বিবাহ বিচেছদের কারণ হিসেবে এদের দৃষ্টান্তনঞর্থক দৃষ্টান্তগুচেছ অন্তর্ভুক্ত করা
যায় না। সুতরাং এই পদ্ধতির সূত্রটি সংশোধন করে বলা উচিত, নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলিকে এমন হতে হবে
যেখানে উপযুক্ত শর্ত বা পরিবেশ বর্তমান থাকলে ঘটনাটি উপস্থিত থাকতে সমর্থ হবে।
এই পদ্ধতির ত্র“টি সংক্রান্তআলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, এই পদ্ধতিও ঘটনা অনুসন্ধান ও প্রমাণের
পদ্ধতি হিসেবে সার্থক নয়। এই পদ্ধতি হল অন্বয়ী ও ব্যতিরেকী পদ্ধতির যুক্তরূপ। কাজেই এই উভয় পদ্ধতির দোষগুণ এই পদ্ধতিতে বর্তমান।
যৌথ অন্বয়ী-ব্যতিরেকী পদ্ধতির মূল্য
অন্বয়ী ও ব্যতিরেকী পদ্ধতির মত এই পদ্ধতিরও সীমিত সার্থকতা আছে। বর্জন বা অপসারণের পদ্ধতি
হিসেবে এর মূল্য রয়েছে। আবার যেক্ষেত্রে পরীক্ষণভিত্তিক ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রয়োগ করা চলে না
সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করা যায়। যেমন- বিবাহ বিচেছদের কারণ অনুসন্ধানের জন্য
ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হলে মাত্র দু’জোড়া দ¤পতিকে দেখতে হবে, যারা অন্য সব বিষয়ে
স¤পূর্ণএক, শুধু পার্থক্য এই যে একটি ক্ষেত্রে বিবাহ বিচেছদ হয়েছে, অপর ক্ষেত্রে হয়নি। কিন্তু এমন
দৃষ্টান্তপাওয়া দুষ্কর। অপরপক্ষে বিবাহবিচেছদ হয়েছে এবং বিবাহ বিচেছদ হয়নি এমন দ¤পতিদের
দৃষ্টান্তবিচার করে আমরা বিবাহ বিচেছদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ের কিছু স¤পর্ক দেখাতে পারি। তবে এই পদ্ধতির মাধ্যমে নিছক পরিসংখ্যানমূলক জ্ঞান পাওয়া যায়। এই ধরনের জ্ঞানের সাহায্যে আমরা বহু
সংখ্যক ব্যক্তি বা বিষয় দিয়ে গঠিত বড় বড় গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে একটি ঘটনা কখন কোন্ অবস্থায় ঘটে তার একটা পূর্বানুমান করতে পারি।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। যৌথ অন্বয়ী ব্যতিরেকী পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। যৌথ অন্বয়ী-ব্যতিরেকী পদ্ধতির সূত্রটি উল্লেখ করুন।
২। এই পদ্ধতির ত্র“টিগুলো বর্ণনা করুন।
৩। এই পদ্ধতির কোন মূল্য আছে কি? যদি থাকে তাহলে উল্লেখ করুন।
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। যৌথ অন্বয়ী-ব্যতিরেকী পদ্ধতির উদ্দেশ্য
ক) অন্বয়ী পদ্ধতির ত্র“টি দূর করা
খ) ব্যতিরেকী পদ্ধতির ত্র“টি দূর করা
গ) উভয় পদ্ধতির ত্র“টি দূর করে সিদ্ধান্তের বৈধতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা
ঘ) কোনটাই নয়।
২। যৌথ অন্বয়ী-ব্যতিরেকী আসলে
ক) একটি স্বতন্ত্রপদ্ধতি
খ) অন্বয়ী পদ্ধতি ও ব্যতিরেকী পদ্ধতির যুক্তরূপ বৈ নয়
গ) একটি পরীক্ষণাÍক পদ্ধতি
ঘ) অন্বয় ও ব্যতিরেকের যুক্ত ফল হলেও হুবহু এক নয়।
৩। যৌথ অন্বয়ী-ব্যতিরেকী পদ্ধতির
ক) কোন অসুবিধা নেই
খ) সুবিধা নেই
গ) সুবিধা-অসুবিধা উভয়ই আছে
ঘ) কোনটিই ঠিক নয়।
সঠিক উত্তর
১। গ) উভয় পদ্ধতির ত্র“টি দূর করে সিদ্ধান্তের বৈধতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা
২। ঘ) অন্বয় ও ব্যতিরেকের যুক্ত ফল হলেও হুবহু এক নয়।
৩। গ) সুবিধা-অসুবিধা উভয়ই আছে

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]