সদর্থক দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি নঞর্থক দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।

মানুষ প্রকৃত সত্যকে জানতে চায়। এটা তার স্বভাব এবং এতে সে আনন্দ পায় । এই সত্যকে
জানার জন্য তাকে একটি কৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। যুগে যুগে মানুষ একই
কৌশল বা পন্থা অবলম্বন করেননি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দার্শনিক সত্যকে জানার জন্য বিভিন্ন
পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। এই পদ্ধতিগুলোর মধ্য থেকে আমরা এখন দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি নিয়ে
আলোচনা করবো।
দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি
(ডায়ালেক্টিক) শব্দটি উদ্ভ‚ত হয়েছে ইংরেজি (ডায়ালগ) শব্দ থেকে।
উরধষড়মঁব এর বাংলা অর্থ হলো সংলাপ বা দু’জনের মধ্যে কথোপকথন। উরধষবপঃরপ
কথাটির সাধারণ অর্থ হলো, কোনো একটি বিষয়ের সপক্ষে ও বিপক্ষে কথাবার্তার মাধ্যমে
আলোচনা করা। উরধষবপঃরপ এর বাংলা মানে হলো দ্বা›িদ্বক। দ্বা›িদ্বক শব্দটি এসেছে দ্ব›দ্ব
থেকে। দ্ব›দ্ব অর্থ বিরোধ। একই বিষয়ে দুটি পরস্পর বিরোধী মতবাদের উদ্ভব হলেই এই
বিরোধ দেখা যায়। এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য হলো বিরোধিতার মাধ্যমেই সত্যকে নিরূপণ করা।
এই পদ্ধতি জ্ঞানের পরস্পর বিরোধিতা প্রদর্শন করে আরও উন্নত ও ব্যাপক জ্ঞানলাভ করতে
চায়। দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি সদর্থক ও নঞর্থক দু’রকমেরই হতে পারে।
আমরা হেগেলকে সদর্থক এবং সক্রেটিস ও কান্টকে নঞর্থক দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি অনুসরণ করতে
দেখি।
সদর্থক দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি
জার্মান দার্শনিক হেগেল সদর্থক দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। তাঁর মতে, দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি
আশ্রয় করেই চরম সত্য লাভ করা যায়। পরস্পর বিরোধী ধারণাগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার
প্রক্রিয়ার নামই দ্বা›িদ্বক প্রক্রিয়া বাদ প্রতিবাদ ও সম্বাদ এই তিনটি মিলেই দ্বা›িদ্বক প্রক্রিয়ার ত্রয়ী ( গঠিত
হয়। কিন্তু সম্বাদ বা সমন্বয়ে এসেই এই প্রক্রিয়া থেমে যায় না। প্রথম বারের সমন্বয় আবার
দ্বিতীয় বারের বাদ আকারে আসে। এই বাদের আবার প্রতিবাদ সৃষ্টি হয়। এভাবে দ্বা›িদ্বক
প্রক্রিয়া পরম সত্তার (অনংড়ষঁঃব ঝঢ়রৎরঃ) ধারণায় না পৌঁছা পর্যন্ত চলতে থাকে।
সাধারণত মানুষ ধারণা করে যে, দুটি বিপরীত মতের মধ্যে একটাকে অবশ্যই ত্যাগ করতে
হবে। হেগেল মানুষের এ সাধারণ ধারণা বদলে দিয়ে দেখালেন যে, বিরোধ সমন্বয়েরই
পূর্বাভাসমাত্র।
হেগেল দেখালেন যে, মানুষের চিন্তা বা জ্ঞানের গতি ও পরিণতি দ্বা›িদ্বক পদ্ধতিতেই এগিয়ে
যায়। তাঁর মতে, জীবাত্মার চেতনায় যে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার প্রকাশ পাওয়া যায় তা অসম্পূর্ণ
ও আংশিক জ্ঞান। কিন্তু এই অসম্পূর্ণ ও আংশিক জ্ঞানের অগ্রগতি নির্ধারিত হয় সমগ্র জ্ঞানের
বা অভিজ্ঞতার ক্রিয়ার দ্বারা, সমগ্র জ্ঞান প্রতিটি আংশিক জ্ঞানের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় নিহিত
থাকে এবং জ্ঞানের অগ্রগতি নির্ধারণ করে। যেহেতু সমগ্র অভিজ্ঞতা প্রতিটি বিশেষ বা
আংশিক অভিজ্ঞতার মধ্যে ক্রিয়া করে এবং কোনো আংশিক অভিজ্ঞতা সমগ্র অভিজ্ঞতাকে
পরিপ র্ণভাবে প্রকাশ করতে পারে না এবং তা তার পক্ষে সম্ভবও নয়, সে কারণেই মানুষের
জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা দ্বা›িদ্বক পদ্ধতিতে অগ্রসর হয়।
হেগেলের মতে, দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি যে শুধু মানুষের চিন্তার পদ্ধতি, তা নয়; এটা সমগ্র জগতের
পদ্ধতি। জড়জগৎ, জীবাত্মা, ইতিহাস, নীতি, ধর্ম সব কিছুরই ক্রমোন্নতি ঘটে চলেছে দ্বা›িদ্বক
পদ্ধতিতে। দ্বা›িদ্বক বিবর্তন সমগ্র জগতের নিয়ম। সমধর্মিতা , পার্থক্য
ও একীকরণ এই প্রক্রিয়ার মাধমেই জগতের বিবর্তন
ও অগ্রগতি হয়। জীবজগৎ এই পদ্ধতি অনুসারে পরমসত্তা থেকেই প্রকাশিত হয়ে তাতেই
অবস্থিত আছে এবং পরমসত্তার সাথে মিলিত হবার জন্য এগিয়ে চলেছে। যে দ্বা›িদ্বক পদ্ধতিতে
চিন্তার ক্ষেত্রে অগ্রগতি আসে সেই দ্বা›িদ্বক পদ্ধতিতেই সত্তা র পরিণতি ঘটে।
সুতরাং চিন্তার ক্রমবিকাশ অনুসরণ করে সত্তার ক্রমবিকাশ অনুধাবন করা যায়। এই পদ্ধতির
মাধ্যমেই পরমসত্তা নিজেকে প্রকাশ ও পরিশেষে উপলব্ধি করেন। এই পরমসত্তা নিজের মধ্যে
যে বিরোধ নিহিত আছে সেগুলোকে প্রকাশ করেন এবং সেগুলোকে উচ্চতর সমন্বয়ের মাধ্যমে একীভ‚ত করেন।
জীবাত্মা এই পরমাত্মারই খন্ড রূপ, সেজন্য জীবাত্মার অগ্রগতির পদ্ধতিও দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি।
দ্বা›িদ্বক পদ্ধতিই জগতের অগ্রগতির কারণ। দ্ব›দ্ব বা বিরোধ না থাকলে জগৎ অচল হয়ে যেত।
নঞর্থক দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি
নঞর্থক দ্বা›িদ্বক পদ্ধতিকে খন্ডন-রীতিও বলা হয়। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস ও জার্মান দার্শনিক
কান্ট এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন। সক্রেটিস এই পদ্ধতি অনুসরণ করে সোফিস্টদের মতবাদ
খন্ডন করতেন। তিনি কথোপকথনের মধ্য দিয়ে বিরোধী মতের অন্তর্বিরোধ প্রমাণ করতেন।
দর্শনের ইতিহাসে এই পদ্ধতি সক্রেটীয় পদ্ধতি নামে পরিচিত। এই
পদ্ধতি একদিকে যেমন খন্ডনের পদ্ধতি, অপরদিকে তেমনি প্রমাণের পদ্ধতি। দুটি পরস্পর
বিরুদ্ধ মতের মধ্যে একটি ভ্রান্ত প্রমাণিত হলে, অপরটি সত্য হতে বাধ্য। এভাবেই এই পদ্ধতি
অসত্যকে খন্ডন করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। কাণ্টও এই পদ্ধতি অনুসরণ করে দেখান যে,
স্রষ্টা, আত্মা, জগৎ প্রভৃতি ধারণার মধ্যে অন্তর্বিরোধ আছে। এগুলো যেমন অস্তিত্বশীল বলে
প্রমাণ করা যায় তেমনি আবার অস্তিত্বহীন বলেও প্রমাণ করা যায়।
সমালোচনা
১) বিরুদ্ধ ধারণার সমন্বয়ে অনেক সময় উন্নততর ধারণা লাভ করা যায়, এ বিষয়ে সন্দেহ
নেই। কিন্তু সর্বত্রই তা সম্ভব নয়। জড়বাদীদের মতে, জড়ই পরমতত্ত¡; ভাববাদীদের মতে,
মনই পরমতত্ত¡। জড়বাদীদের মতে, ‘মন’ জড় থেকে এবং ভাববদীদের মতে, ‘জড়’ মন থেকে
উদ্ভ‚ত। এই পরস্পর বিরুদ্ধ ধারণার সমন্বয় কিভাবে সম্ভব? তা আমরা বুঝতে পারি না।
২) হেগেল তাঁর দ্বা›িদ্বক পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ করেছেন। চিন্তার ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি উপযোগী
তা যে জীবনের ও তত্তে¡র ক্ষেত্রেও একইভাবে উপযোগী হবে এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায়
না। সুতরাং এই পদ্ধতির সাহায্যে চিন্তার ক্রমবিকাশের জ্ঞান সম্ভব হলেও পরমতত্তে¡র জ্ঞান লাভ করা নাও যেতে পারে।
উপসংহার
এই আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, দ্বা›িদ্বক পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা অনেক সময়
অনেক উন্নত ধারণা লাভ করি। তবে এ পদ্ধতি সর্বক্ষেত্রে যেমন প্রয়োগ করা যায় না তেমনি সর্বক্ষেত্রে সঠিক ধারণাও দিতে পারে না।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। দার্শনিক অনুসন্ধানের পদ্ধতি হিসেবে দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। সদর্থক দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।
২। নঞর্থক দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।
ক) বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। দ্বা›িদ্বক পদ্ধতি বিভক্ত
র) দু’ভাগে
রর) চার ভাগে
ররর) তিন ভাগে
ার) পাঁচ ভাগে
২। সদর্থক দ্বা›িদ্বক পদ্ধতির প্রবক্তা
র) মিল
রর) সক্রেটিস
ররর) কান্ট
ার) হেগেল
৩। নঞর্থক দ্বা›িদ্বক পদ্ধতিকে বলা হয়
র) খন্ডন রীতি
রর) আলোচনার রীতি
ররর) সমন্বয় রীতি
ার) বিরোধী রীতি
৪। নঞর্থক দ্বা›িদ্বক পদ্ধতির অনুসারী
র) সক্রেটিস
রর) কান্ট
ররর) হেগেল
ার) সক্রেটিস ও কান্ট
খ) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। উরধষবপঃরপ কথাটির সাধারণ অর্থ হলো, কোনো একটি বিষয়ের সপক্ষে ও বিপক্ষে
কথাবার্তার মাধ্যমে আলোচনা করা।
২। হেগেলের মতে, পরস্পর বিরোধী ধারণাগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ার নামই
দ্বা›িদ্বক প্রক্রিয়া।
৩। হেগেলের মতে, পরমাত্মা জীবাত্মার খন্ড রূপ ।
৪। হেগেলের মতে, দ্ব›দ্ব বা বিরোধ না থাকলে জগৎ অচল হয়ে যেত।
সঠিক উত্তর
ক)
১। র) দু’ভাগে ২। ার) হেগেল ৩। র) খন্ডন রীতি ৪। ার) সক্রেটিস ও কান্ট
খ) ১। স ২। স ৩। মি ৪। স

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]