সংযৌগিক বচনের বিস্তারিত বর্ণনা দিন। সমমানিক বচনের বিস্তারিত বর্ণনা দিন।

সংযৌগিক বচন ও অপেক্ষক
দুই বা ততোধিক বচন ‘ও’, ‘এবং’, ‘আর’ ইত্যাদি দ্বারা যুক্ত হলে যে যৌগিক বচন উৎপন্ন হয় তাকে
সংযৌগিক বচন বলে। সংযৌগিক বচনের নিদিষ্ট আকারকে সংযৌগিক অপেক্ষক বলে। এরূপ বচনের
উপাদান বা অঙ্গ বচনকে বলে সংযোগী বচন। সংযৌগিক বচনের উপাদান বচন দু’টি যে চিহ্ন দ্বারা যুক্ত হয় তাকে সংযোজন বলে। উদাহরণস্বরূপ
“মিতু স্কুলে যায় ও নিতু বেড়াতে যায়’’।
সংযৌগিক অপেক্ষক
‘নিতু বেড়াতে যায়’ এই অংশটি হল উক্ত বচনের উপাদান বচন। এই বচনটির ১ম অংশকে ঢ় এবং
২য় অংশকে য় ধরলে এবং ‘ও’ এর পরিবর্তে প্রতীক চিহ্ন ‘.’ বসিয়ে প্রতীকায়ন করলে আমরা ‘ঢ় . য়’
এই আকারটি পাই। এই আকারটিকে সংযৌগিক বচনের অপেক্ষক বলে। এই বচনটি আরো বিভিন্ন আকারের হতে পারে
ঢ় . ূ য়, ূ ঢ় . য়, ূ ঢ় . ূ য়
এ সবই সংযৌগিক অপেক্ষক।
প্রতীকায়নের ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় লক্ষণীয়
একই প্রতীকের ব্যবহার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে
১। বচনটি প্রতীকায়নের ক্ষেত্রে আমরা ঢ় ও য় না ব্যবহার করে অন্য যে কোন প্রতীক ব্যবহার করতে
পারি। এটি আমাদের অভিরুচি বা সুবিধার ওপর নির্ভর করে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোন
সরল বচনের জন্য যে প্রতীক আমরা গ্রহণ করেছি, সেই একই ক্ষেত্রে অন্য কোন সরল বচনের
জন্য ঐ প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। একই প্রতীক ব্যবহার করলে কোন প্রতীকের কি অর্থ তা
বুঝা যাবে না। ফলে প্রতীকায়নের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। বিশেষ করে যুক্তির বৈধতা
প্রমাণের ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে।
প্রতীক বর্ণগুলো অধ্রæবক
২। উপরে ব্যবহৃত প্রতীকগুলির মধ্যে একটা শ্রেণীভেদ আছে। বচনের জন্য যেসব প্রতীক গ্রহণ করা
হয় তাদের অর্থ সুনির্ধারিত নয়। যেমন পূর্বেপ্রদত্ত উদাহরণে বর্ণিত বচনটির প্রথম অংশটির জন্য
ঢ় কে নিয়েছি। কিন্তু অন্য সময়ে, অন্য প্রসঙ্গে, অন্য কোন সরল বচনের জন্যও আমরা আবার ঢ়
কে নিতে পারি। এতে কোন অসুবিধে নেই। এ হিসেবেই ঢ় এর কোন সঠিক, সুনির্ধারিত অর্থ
নেই। এজন্য বচনের প্রতীক হিসেবে যেসব বর্ণমালা ব্যবহার করা হয় তাদের বলা হয় ‘অধ্রæবক’
(াধৎরধনষব) বা ‘গ্রাহক প্রতীক’।
সংযোজকটি ধ্রæবক
বিন্দু চিহ্নটির অর্থ সুনির্দিষ্ট। ডট্ দ্বারা সব সময় ‘এবং’, ‘ও’ বা ‘আর’ ইত্যাদি বুঝানো হয়। এদের কাজ
হচেছ দু’টি সরল বচনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। এগুলির নাম ‘যৌক্তিক সংযোজক’ বা ‘সংযোজক’।
এদের প্রত্যেকটির অর্থ সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তিত বলে এদের কে ‘ধ্রæবক’ বা ‘যৌক্তিক ধ্রæবক’ বলা হয়।
সকল উপাদান বচন সত্য হলেই সংযৌগিক বচন সত্য হয়
যখন দুই বা ততোধিক সরল বচন সংযোজিত হয়, তখন তাদের সবগুলো সত্য না হলে উৎপন্ন যৌগিক
বচনটি সত্য হয় না। তাদের একটিও মিথ্যা হলে গোটা যৌগিক বচনটিই মিথ্যা হয়। ব্যাপারটা
অনেকটা এই রকম, যদি কেউ এস.এস.সি. পরীক্ষায় দশটি বিষয়ের মধ্যে নয়টি বিষয়ে কৃতকার্য হয়
আর একটি বিষয়ে শুধু অকৃতকার্য হয় তবে তাকে পরীক্ষায় অকৃতকার্যই ধরা হয়। সুতরাং যৌক্তিক
সংযোজনও এমন একটা চরম প্রকৃতির দৃঢ় বন্ধন যে, এর ফলে সংযোগীগুলো মিলে কার্যত একটি অখন্ড
বচনের রূপ ধারণ করে।
যুক্তির ক্ষেত্রে কিন্তু, যদিও, প্রভৃতি সংযোজকের কাজ করে
‘এবং’, ‘ও’, ‘আর’ ছাড়াও বাংলায় ‘কিন্তু’, ‘অধিকন্তু’, ‘যদিও’, ‘তথাপি’ ইত্যাদি সংযোজকের কাজ করে। ইংরেজীতে ইত্যাদি সংযোজক শব্দ। নিচের
উদাহরণগুলো লক্ষ্য করা যাক
১। ‘পানি তরল পদার্থ কিন্তু বরফ কঠিন পদার্থ’।
২। ‘মিজান সাহেব কৃপণ যদিও তিনি ধনী’।
১ নং বচনে ‘এবং’ ব্যবহার না করে পানি ও বরফ এর মধ্যবর্তী পার্থক্য বুঝানোর উদ্দেশ্যে ‘কিন্তু’
ব্যবহার করা হয়েছে । সাধারণ অবস্থায় এ পার্থক্যের ইঙ্গিত না দিয়ে কথা বললে খাপছাড়া শোনায় এবং
সে ইঙ্গিত আমরা দিতেও চাই। কিন্তু কোন যুক্তির মধ্যে যখন এ ধরনের কোন বচন উপস্থিত থাকে,
তখন ‘কিন্তু’র সে ব্যঞ্জনা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়। তখন ‘কিন্তু’র স্থলে ‘এবং’ বা ‘ও’ দিলেও একই কাজ
হয়। সেজন্য ‘এবং’ এর মত ‘কিন্তু’র জন্যও যুক্তিবিদ্যায় বিন্দু () চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
‘কিন্তু’ ব্যবহার না করে ১ নং বচনটির পূর্ণঅর্থ প্রকাশ করতে চাইলে বচনটির রূপ হত :
‘পানি তরল পদার্থ এবং বরফ কঠিন পদার্থ এবং তরল পদার্থ আর কঠিন পদার্থের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে’।
এখানে তিনটি সরল বচন আছে। আমরা যদি কোন যুক্তির মধ্যে তৃতীয় বচনটি আবশ্যক মনে করি
তাহলে তাকে আলাদাভাবে দেখিয়ে দেয়াই ভাল। তখন আমরা ঢ়.য় না লিখে লিখবো ঢ়. য়. ৎ। কিন্তু
সেটা যদি আবশ্যক না হয়, তাহলে ‘কিন্তু’র বৈপরীত্যসূচক ব্যঞ্জনাটুকু বাদ দেয়া যায়।
পূর্বের দ্বিতীয় বচনে ‘যদিও’ দ্বারাও একটা পার্থক্যের ইঙ্গিত দেয়া হচেছ; কিন্তু ১ নং বচনের মত ২ নং
বচনকে বিশ্লেষণ করলেও আমরা দেখতে পাই যে, ‘যদিও’ এর পরিবর্তে আমরা ‘এবং’ বা এর সমার্থক
শব্দ ব্যবহার করতে পারি।
সংযৌগিক বচনকে আমরা সত্য সারণীর মাধ্যমে এভাবে প্রকাশ করতে পারি
ঢ় য় ঢ় . য়
ঞ ঞ ঞ
ঞ ঋ ঋ
ঋ ঞ ঋ
ঋ ঋ ঋ
শুধুমাত্র প্রথম সারিতে অপেক্ষকটির মান সত্য। কারণ সংযৌগিক বচনের ক্ষেত্রে যখন দু’টি উপাদান বচনই সত্য হয়, কেবল তখনই সংযৌগিক বচনটি সত্য হয়।
সমমানিক বচন
যে যৌগিক বচনের অন্তর্গত উপাদান বচনের সবগুলোই একই সঙ্গে সত্য বা মিথ্যা হয় তাকে সমমানিক
বচন বলে। সমমানতার প্রতীক হিসেবে ‘’ চিহ্নটি ব্যবহৃত হয়। এই সত্যাপেক্ষক সংযোজকটির
ইংরেজি নাম ‘ঃযৎবব নধৎ ংুসনড়ষ’ । বাংলায় একে আমরা ‘ত্রিদাঁড় চিহ্ন’ বলতে পারি। এ জাতীয়
যৌগিক বচনকে ‘দ্বিপ্রকল্পন’, ‘দ্বৈত প্রকল্পন’ বা ‘দ্বি-প্রাকল্পিক বচন’ও বলা হয়। কারণ বস্তুত এর মধ্যে দু’টি প্রাকল্পিক বচনের সমন্বয় ঘটে। অর্থাৎ
‘ঢ়  য়’ এর অর্থ
(ঢ়  য়) . (য়  ঢ়)
ঢ় সত্য হলে য় সত্য এবং য় সত্য হলে ঢ় সত্য।
সমমানিক বচনের অর্থ
ঢ়  য় এর অর্থ ‘যদি ঢ় তাহলে য়’ অথবা ‘ঢ় কেবল যদি য়’। অনুরূপভাবে য়  ঢ় এর অর্থ ‘যদি য়
তাহলে ঢ়’ অথবা ‘য় কেবল যদি ঢ়’ । কাজেই ঢ়  য় এবং য়  ঢ় এর একত্রিত অর্থ হল ‘ঢ় যদি এবং কেবল যদি য়’।
সমমানিক বচনের দ্বিতীয় অংশটি প্রথম অংশ থেকে নিঃসৃত
আমরা দেখলাম ঢ় ও য় এর মধ্যে একটি বচন ‘সত্য’ হলে অপরটিও সত্য হবে। কিন্তু একটি যদি মিথ্যা হয় তাহলে অপরটিও মিথ্যা হবে। অর্থাৎ ূ য়  ূ ঢ় এবং ূ ঢ়  ূ য়
কিন্তু সমমানিক অপেক্ষকের অর্থের এ অংশটুকু আগের অংশ থেকেই নিঃসৃত। আগেরটুকু উল্লেখ করলে
আর পরেরটুকু উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না। এর কারণ ঢ়  য় থেকে আমরা অনুমান করতে পারি
ূ য়  ূ ঢ় অর্থাৎ য় মিথ্যা হলে ঢ়-ও মিথ্যা হবে। বস্তুত এটা ‘ঢ়  য়’ এরই ভিন্ন রূপ। একইভাবে
য়  ঢ় থেকেও আমরা অনুমান করতে পারি ূ ঢ়  ূ য়।
সমমানিক অপেক্ষকের পূর্ণরূপ
সমমানিক অপেক্ষকের পূর্ণাঙ্গ আকারটি দাঁড়ায়
{[(ঢ়  য়) . (য়  ঢ়)] . [(ূ য়  ূ ঢ়) . (ূ ঢ়  ূ য়)]}
সমমানিক অপেক্ষকের আরেকটি রূপ হচেছ
(ঢ় . য়) া (ূ ঢ় . ূ য়)
অর্থাৎ ঢ় ও য় হয় একই সঙ্গে সত্য না হয় একই সঙ্গে মিথ্যা। বলা বাহুল্য ‘’ চিহ্নের অর্থ থেকেই
সমমানিক অপেক্ষকের এ রূপটি পাওয়া যায়।
সমমানিক অপেক্ষক বা সমমান বচনের উদাহরণ
(ক) মিতু তার মায়ের চেয়ে কম বয়সী যদি এবং কেবল যদি সব গরু চতু®পদী জন্তু হয়।
(খ) মিতু তার মায়ের চেয়ে বেশি বয়সী যদি এবং কেবল যদি সব গরু চতু®পদী জন্তু না হয়।
এভাবে ‘যদি এবং কেবল যদি’ দিয়ে আমরা দুই বা ততোধিক সত্য বচনকে যুক্ত করে ক-এর মতো
এবং দুই বা ততোধিক মিথ্যা বচনকে যুক্ত করে (খ) এর মতো অসংখ্য সমমান বচন গঠন করতে
পারি।
সমমানিক অপেক্ষক বস্তুগত অথবা আকারগত (যৌক্তিক, যুক্তিগত বা ন্যায়ত)। বস্তুগত সমমানতায় ঢ়
ও য় কেবল বাস্তব অর্থেই এক সঙ্গে সত্য বা মিথ্যা; একটার সত্যতা থেকে অন্যটার সত্যতা অথবা
একটার মিথ্যাত্ব থেকে অন্যটার মিথ্যাত্ব যুক্তিবিদ্যার কোন অনুমান বিধি অনুসারে নিঃসৃত হয় না। বস্তুগত সমমানতার সত্যসারণী নি¤œরূপ
ঢ় য় ঢ়  য়
ঞ ঞ ঞ
ঞ ঋ ঋ
ঋ ঞ ঋ
ঋ ঋ ঞ
এখানে তৃতীয় স্তম্ভটির প্রথম ও চতুর্থ সারিতে অপেক্ষকটির মান সত্য, যেহেতু প্রথম সারিতে উপাদান
বচন দু’টি এক সাথে সত্য এবং চতুর্থ সরিতে উপাদান বচন দু’টি এক সাথে মিথ্যা। কিন্তু দ্বিতীয় ও
তৃতীয় সারিতে অপেক্ষকটির মান মিথ্যা কারণ এখানে উপাদান বচন দু’টির একটি সত্য, কিন্তু অপরটি মিথ্যা।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সংযৌগিক বচনের বিস্তারিত বর্ণনা দিন।
২। সমমানিক বচনের বিস্তারিত বর্ণনা দিন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। সমমানিক বচনের সংজ্ঞা দিন।
২। সমমানিক অপেক্ষকের পূর্ণআকারটি লিখুন।
৩। সংযৌগিক বচনের কোন্ অংশটি ধ্রæবক এবং কোন্ অংশটি অধ্রæবক।
৪। সংযৌগিক বচন কত আকারের হতে পারে এবং কি কি ?
৫। ‘ঢ় . ূ য়’ বচনটি সত্য সারণীর মাধ্যমে প্রকাশ করুন।
১। ঢ় ও য় ব্যবহার করে নি¤েœর বচনগুলো প্রতীকায়িত করুন
ক) শফিক সাহেব কালোবাজারী যদিও তিনি দাতা।
খ) পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে যদি এবং কেবল যদি মানুষ মরণশীল হয়।
গ) টাকার অপর নাম জীবন যদি এবং কেবল যদি স¤পদে পূর্ণসুখ বিরাজ করে।
ঘ) পার্ল হয় সাহসী ও সৎ।
ঙ) করিম বুদ্ধিমান কিন্তু সাহসী নয়।
২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন
ক) সংযৌগিক বচনের উপাদান বচন দু’টি সব সময় সত্য হয়।
খ) সংযৌগিক বচন তখনই হবে যখন দু’টি উপাদান বচন কেবলমাত্র ‘এবং’ দিয়ে যুক্ত হবে।
গ) সত্য সারণীর মাধ্যমে সংযৌগিক বচনের মান নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
ঘ) সমমানিক বচনের দু’টি বচনই সত্য বা মিথ্যা হলে তার মান সত্য হবে।
ঙ) সমমানিক অপেক্ষককে এভাবেও প্রকাশ করা যায় (ঢ় . য়) া (ূ ঢ় . ূ য়)
সঠিক উত্তর
১। ক) ঢ় . য় খ) ঢ়  য় গ) ূঢ়  ূ য় ঘ) ঢ় . য় ঙ) ঢ় . ূ য়
২। ক) মি খ) মি গ) মি ঘ) স ঙ) স

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]