কান্ডজ্ঞান কি? দর্শনের সাথে কান্ডজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা করুন।

দর্শনের পরিচয় ও প্রয়োজনীয়তা আরও পরিষ্কারভাবে আমরা জানতে পারবো, যদি আমরা
এটিকে অন্যান্য বিষয় বা জ্ঞানশাখার সাথে তুলনা করি। বর্তমান ইউনিটে কতিপয়
গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানশাখা বা বিষয়ের সাথে দর্শনের কি সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য রয়েছে তা চিহ্নিত
করা হয়েছে। এ তুলনামূলক আলোচনার ক্ষেত্রে দর্শনের বিচারবাদী দৃষ্টিকোণ ও
পদ্ধতিগত স্বাতন্ত্র্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়। জগৎ ও জীবনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে দার্শনিকগণ যেমন চিন্তা করেন সাধারণ মানুষও তেমনি
চিন্তা করেন। তবে দার্শনিকের মত সাধারণ মানুষের চিন্তা অতটা গভীর, সুশৃঙ্খল ও যুক্তিযুক্ত
নয়। সাধারণ মানুষের চিন্তার উৎস হলো উত্তরাধিকার, বিশ্বাস, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন।
সাধারণ মানুষের এই যে চিন্তা তাকেই বলা হয় কান্ডজ্ঞান। এখানে আমরা দর্শনের সাথে
কান্ডজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা করবো।
দর্শন
দর্শনের ইংরেজি প্রতিশব্দ যার আভিধানিক অর্থ হলো জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ।
দর্শন চায় বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে জগৎ, জীবন ও পরমসত্তার স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে। তাই
দর্শনের সংজ্ঞায় বলা যায়, দর্শন হলো জীবনের মৌলিক জিজ্ঞাসা বা সমস্যাসমূহের যৌক্তিক ও
পদ্ধতিগত বিচার-বিশ্লেষণ বা আলোচনা।
কান্ডজ্ঞান
সাধারণ কাজ চালানোর জ্ঞানই কান্ডজ্ঞান। সাধারণ লোক এই জ্ঞানের মাধ্যমেই দৈনন্দিন কর্ম
সম্পাদন করে। কান্ডজ্ঞান বলতে বোঝায়, লৌকিক এমন সব সাধারণ ধারণা ও বিশ্বাস যা
আবিষ্কার, অর্জন ও রক্ষা করা কোনো ব্যক্তির ওপর এককভাবে নির্ভর করে না। সমাজের
সাধারণ মানুষ ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র, ঐতিহ্য প্রভৃতি থেকে এটি পেয়ে থাকে এবং সরল বিশ্বাসে
মেনে নেয়। কানিংহাম বলেন, ‘‘কোনো মানবগোষ্ঠী যে মতবাদটিকে বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই গ্রহণ করে তাকে কান্ডজ্ঞান বলে।’’
দর্শন ও কান্ডজ্ঞানের সাদৃশ্য
১) দর্শন ও কান্ডজ্ঞান উভয়ই চায় জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে।
২) দর্শন ও কান্ডজ্ঞান উভয়ই জ্ঞানসংশ্লিষ্ট।
৩) কান্ডজ্ঞান ও দার্শনিক জ্ঞান উভয়ই সময় ও সম্প্রদায়ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
৪) কান্ডজ্ঞানের মাধ্যমেই যাত্রা শুরু হয় দার্শনিক জ্ঞানের। বিভিন্ন সমস্যা কান্ডজ্ঞানের মাধ্যমে
ধরা পড়লে দার্শনিক তা সুশৃঙ্খলভাবে আলোচনা-পর্যালোচনা করেন।
দর্শন ও কান্ডজ্ঞানের বৈসাদৃশ্য
১) দার্শনিক জ্ঞান উদার ও নিরপেক্ষ; কান্ডজ্ঞান অনুদার ও পক্ষপাত দোষে দুষ্ট।
২) দার্শনিক জ্ঞান বিচার-বিশ্লেষণমূলক ও সামঞ্জস্যপূণর্, অপরদিকে, কান্ডজ্ঞান বিচারবিশ্লেষণহীন, সঙ্গতিহীন ও অগোছালো।
৩) দর্শন বিচার-বিশ্লেষণ ও যুক্তি দিয়ে তার সমস্যার সমাধান করতে চায়। কিন্তু কান্ডজ্ঞান
অন্ধবিশ্বাসের মাধ্যমে তার সমস্যার সমাধান পেয়ে সন্তুষ্ট হয়।
৪) দর্শন স্বাধীন চিন্তাকে উৎসাহিত করে; অপরদিকে, কান্ডজ্ঞান ধর্মীয়, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়
প্রভৃতি সূত্র থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। এখানে স্বাধীন চিন্তার অবকাশ নেই।
৫) দার্শনিক জ্ঞান পরিচালিত হয় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে; অপরদিকে, কান্ডজ্ঞান লক্ষ্যহীন ও
আপতিক।
৬) দার্শনিক জ্ঞান বিচার-বিশ্লেষণের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে নির্ভরযোগ্য। অপরদিকে, বিচারবিশ্লেষণ ও সত্যতার কোনো মানদন্ডের ওপর প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় কান্ডজ্ঞান নির্ভরযোগ্য
নয়।
৭) দার্শনিক জ্ঞান সংযত, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও পদ্ধতিগত। অপরদিকে, কান্ডজ্ঞান অসংযত,
সামঞ্জস্যহীন ও অপদ্ধতিগত।
উপসংহার
দর্শনের প্রধান লক্ষ্য হলো প্রকৃত সত্যের অনুসন্ধান। দর্শনের পদ্ধতি হচ্ছে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ
ও যৌক্তিক চিন্তা। দার্শনিক জ্ঞান সামঞ্জস্যপূর্ণ ও পদ্ধতিগত। তাই এ জ্ঞান কান্ডজ্ঞান থেকে
উন্নততর। তবে জানার ক্ষেত্রে কান্ডজ্ঞান হলো মানুষের সহজ, স্বাভাবিক ও প্রাথমিক মাধ্যম।
এদিক থেকে বলা যায়, কান্ডজ্ঞান হলো দার্শনিক জ্ঞানের ভিত্তি ও পথিকৃৎস্বরূপ। কান্ডজ্ঞানের
মাধ্যমেই সূচিত হয় পরবর্তীকালের উন্নত চিন্তা ও সুসংবদ্ধ দার্শনিক অভিযান। এই জ্ঞানের
মাধ্যমেই দার্শনিক লাভ করেন তাঁর বিচার-বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল উপাদান। তাই
বলা যায়, কান্ডজ্ঞান ও দার্শনিক জ্ঞান পরস্পর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে সম্পর্কিত।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। কান্ডজ্ঞান কি? দর্শনের সাথে কান্ডজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। কান্ডজ্ঞানের সাথে দর্শনের সাদৃশ্য আলোচনা করুন।
২। কান্ডজ্ঞানের সাথে দর্শনের পাঁচটি পার্থক্য উল্লেখ করুন।
৩। দার্শনিক আলোচনার ক্ষেত্রে কান্ডজ্ঞানের ভ‚মিকা ব্যাখ্যা করুন।
ক) বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। কান্ডজ্ঞান পাওয়া যায়
র) উত্তরাধিকার সূত্রে
রর) দার্শনিক চিন্তা থেকে
ররর) যৌক্তিক চিন্তা থেকে
ার) ব্যক্তিগত চিন্তা থেকে
২। কান্ডজ্ঞান হলো
র) অতীন্দ্রিয় জ্ঞান
রর) গাণিতিক জ্ঞান
ররর) যৌক্তিক জ্ঞান
ার) সাধারণ লোকের সাধারণ কর্ম
সম্পাদনের জ্ঞান
৩। “কোনো মানব গোষ্ঠী যে মতবাদ
বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই গ্রহণ করে তাকে
কান্ডজ্ঞান বলে” -এ উক্তিটি করেন
র) কাণ্ট
রর) কানিংহাম
ররর) প্লেটো
ার) অ্যারিস্টটল
৪। কান্ডজ্ঞান
র) পদ্ধতিগত
রর) অগোছালো
ররর) বিশ্লেষণমূলক
ার) যৌক্তিক
খ) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। কান্ডজ্ঞানের সাথে দর্শনের কোনো সম্পর্ক নেই।
২। কান্ডজ্ঞান কখনও পরিবর্তিত হয় না ।
৩। কান্ডজ্ঞান দার্শনিক জ্ঞানের চেয়ে উন্নততর।
৪। দার্শনিক জ্ঞান সংযত, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও পদ্ধতিগত।
সঠিক উত্তর
ক)
১। র) উত্তরাধিকার সূত্রে ২। ার) সাধারণ লোকের সাধারণ কর্ম সম্পাদনের জ্ঞান
৩। রর) কানিংহাম ৪। রর) অগোছালো
খ)
১। মি ২। মি ৩। মি ৪। স

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]