দর্শন ও বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিন। দর্শন ও বিজ্ঞানের পার্থক্য আলোচনা করুন।

পূর্বে বিজ্ঞান ও দর্শনের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হতো না। সব প্রাকৃতিক বিজ্ঞানই
ছিলো প্রাকৃতিক দর্শন। পরবর্তীকালে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান সম্বন্ধে মানুষের জ্ঞান যত বেড়েছে
ততই তা দর্শন থেকে আলাদা হয়ে পৃথক পৃথক বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, মনোবিদ্যা ইত্যাদি অনেক স্বতন্ত্র বিজ্ঞানই কিছু দিন আগে দর্শনের
অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ থেকে বোঝা যায়, দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক খুব গভীর। দর্শন ও
বিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনার পূর্বে আমাদের জানা দরকার দর্শন ও বিজ্ঞান কাকে বলে?
দর্শন জগৎ ও জীবনের স্বরূপ ব্যাখ্যা ও তার মূল্য অবধারণই দর্শনের কাজ।
বিজ্ঞান বিজ্ঞান অর্থ বিশেষ জ্ঞান। প্রত্যেক বিজ্ঞান প্রকৃতির একটি নির্দিষ্ট শাখা সম্পর্কে
আমাদের সুনির্দিষ্ট, সুনিশ্চিত ও নির্ভুল জ্ঞান দান করে। বস্তু সম্পর্কে আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য
অভিজ্ঞতাই বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। আর বিজ্ঞানের পদ্ধতি হলো, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ ও
আরোহ পদ্ধতি। দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের মিলগুলো কোথায় তা আমরা এখন দেখবো।
দর্শন ও বিজ্ঞানের সাদৃশ্য
১) দর্শন ও বিজ্ঞান উভয়েরই লক্ষ্য জগৎ ও জীবনের রহস্য উদ্ঘাটন করা। জটিল বিষয়কে
সহজ করা, দুর্বোধ্য বিষয়কে সহজবোধ্য করা, অজানাকে জানা। সুতরাং জগৎ ও জীবনের
ব্যাখ্যাতা হিসেবে দার্শনিক ও বিজ্ঞানী একই পথের যাত্রী।
২) বিজ্ঞানের ন্যায় দর্শনও অভিজ্ঞতার জগৎ নিয়ে আলোচনা করে; অভিজ্ঞতালব্ধ ঘটনাবলীর
মধ্যে পূর্বাপর সম্পর্ক আবিষ্কারপূর্বক তাদের সুবিন্যস্ত করে তার সুসামঞ্জস্য, ঐক্যবদ্ধ ও
সুশৃঙ্খল বিবরণ দেয়।
৩) বিজ্ঞান সাধারণ জ্ঞানকে সুসংহত, সুসংবদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে, ফলে তা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের
স্তরে উন্নীত হয়। আর এই সকল বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সুবিন্যস্ত হলে তা দর্শনের স্তরে পৌঁছায়।
এজন্য দর্শনকে সকল বিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলা হয়।
৪) দর্শন ও বিজ্ঞান উভয়ের রযেছে জ্ঞানের প্রতি গভীর অনুরাগ এবং সত্য অনুসন্ধানের ইচ্ছা।
দর্শন ও বিজ্ঞান যে মূলত এক তা বোঝাতে গিয়েই কানিংহাম বলেন, “সাধারণ জ্ঞান থেকে
বিজ্ঞানে আসতে গেলে আমরা যেমন কোনো নতুন রাজ্যে প্রবেশ করি না; অনুরূপভাবে,
বিজ্ঞান থেকে দর্শনে আসতে হলে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতার জগতকে ছাড়িয়ে যাই না”।
দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যে যেমন মিল আছে তেমনি অমিলও আছে। নিচে এদের মধ্যে
উল্লেখযোগ্য বৈসাদৃশ্যগুলো আলোচনা করা হলো :
দর্শন ও বিজ্ঞানের বৈসাদৃশ্য
১) বিজ্ঞান আলোচনার সুবিধার জন্য জগৎ ও জীবনকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা
করে। কিন্তু দর্শন জীবন ও জগতকে সামগ্রিকভাবে আলোচনা করে। তাই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি
হলো খন্ড। ধর্ম, নৈতিকতা ও সৌন্দর্য সম্পর্কীয় কোনো আলোচনা বিজ্ঞান করে না, কিন্তু
এগুলো দার্শনিক আলোচনার বহিভর্‚ত নয়।
২) বিজ্ঞান বিজ্ঞানের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করে না। বিজ্ঞানের প্রকৃতি নিয়ে দর্শন আলোচনা
করে। দর্শন তার নিজের প্রকৃতি নিয়েও আলোচনা করে এবং এটি তার গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য
বিষয়।
৩) বিজ্ঞান তার আলোচ্য বিষয়ের ব্যাখ্যার জন্য কতকগুলো স্বতঃসিদ্ধ সত্য ও নীতিকে বিনা
বিচারে মেনে নেয়; যেমন - প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি, কার্যকারণ নীতি। কিন্তু দর্শন আগে
থেকে নীতি বা সত্যকে বিনা বিচারে স্বীকার করে নেয় না, উপরন্তু বিজ্ঞানের স্বতঃসিদ্ধ সত্য বা
বিনা বিচারে স্বীকৃত নীতিগুলোর যথাযথ বিচার করে।
৪) বস্তুর স্বরূপ বিশ্লেষণ করাই বিজ্ঞানের কাজ। পৃথিবীতে কোনো একটা বিশেষ বস্তুর স্থান ও
মূল্য কী? এ আলোচনা কোনো বিজ্ঞানীই সাধারণত করেন না। কিন্তু বস্তুর স্বরূপ ও মূল্য
নির্ণয় - দুিটই দর্শনের কাজ। দার্শনিক মনে করেন, কোনো একটা বস্তুর মূল্য নির্ণয় না করা হলে তার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দেয়া হয় না।
৫) বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সাধারণত সর্বজনগ্রাহ্য। কিন্তু বিভিন্ন দার্শনিক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে
ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। তাই দর্শনের ব্যাখ্যা বা সিদ্ধান্ত সর্বজনগ্রাহ্য নয়।
৬) বিজ্ঞান ও দর্শনের পদ্ধতির মধ্যেও পার্থক্য আছে। বিজ্ঞান ঘটনা পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষণ করে,
তার সংজ্ঞা ও বর্ণনা দেয় এবং সেগুলো বিশ্লেষণ ও শ্রেণীভুক্ত করে এবং কার্যকারণ সম্পর্ক
নির্ণয় করে কতগুলো সাধারণ নিয়মের সাহায্যে ব্যাখ্যা করে। দর্শনের পদ্ধতি হলো বুদ্ধির
সাহায্যে আলোচ্য বিষয়ের বিচার-বিশ্লেষণ করা। অনেক ইন্দ্রিয়াতীত বিষয় নিয়েও দর্শন
আলোচনা করে, যেগুলো প্রত্যক্ষ বা পরীক্ষণ করা যায় না।
দর্শন ও বিজ্ঞান পরস্পর পরিপূরক
দর্শন বিজ্ঞানের উপর অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করে। দর্শন হলো সমস্ত জগতের সামগ্রিক
আলোচনা। আর এক একটি বিজ্ঞান প্রকৃতির এক একটি বিভাগ নিয়ে আলোচনা করে এবং
দর্শনের মালমশলা যোগায়। দর্শন বিভিন্ন বিভাগের বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তগুলোকে একীভ‚ত ও
সুসংবদ্ধ করে এবং প্রকৃতির বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে যে সংযোগ আছে তাকে ব্যাখ্যা করে। তবে
এখানেই দর্শনের আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকে না। বিভিন্ন বিজ্ঞান থেকে প্রাপ্ত উপকরণের উপর
ভিত্তি করে জগৎ ও জীবনের নতুন ব্যাখ্যাও দেয়। তাছাড়া কোনো একটি বিজ্ঞানের সাথে
অপর একটি বিজ্ঞানের মিল নাও থাকতে পারে। যেমন- প্রাকৃতিক বিজ্ঞানগুলোতে মানুষের
ইচ্ছার স্বাধীনতার স্বীকৃতি নেই। কিন্তু নীতিবিদ্যার ভিত্তি হলো মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা।
দর্শন বিশ্বজগৎ সম্পর্কে সুসংবদ্ধ ধারণার সাহায্যে এই অসামঞ্জস্যতা দূর করার চেষ্টা করে।
এককথায়, দর্শন জীবন-জগতের সামগ্রিক আলোচনায় বিজ্ঞানের নিশ্চয়তামূলক তথ্য, উপাত্ত
ব্যবহার করে; তাই বিজ্ঞান ছাড়া দর্শন হয়ে পড়ে অন্তঃসারশূন্য।
বিজ্ঞানও দর্শনের উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন বিজ্ঞান দর্শনের দ্বারাই ব্যাখ্যাত, সুবিন্যস্ত ও
একীভ‚ত হয়। দর্শন বিজ্ঞানের স্বীকার্য সত্যগুলো বিচার করে তার যৌক্তিকতা নির্ধারণ করে।
বিজ্ঞান প্রকৃতির এক একটি বিভাগ সম্পর্কে খন্ড খন্ড জ্ঞান দান করে। তাই প্রকৃতির বিভিন্ন
বিভাগের সামগ্রিক জ্ঞান লাভের জন্য বিজ্ঞানীকে দর্শনের ওপর নির্ভর করতে হয়। বিজ্ঞান
জগতের দৃশ্যমান রূপ নিয়ে আলোচনা করে। তাই বিজ্ঞানীকে জগতের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য,
তাৎপর্য ও লক্ষ্য জানার জন্য দর্শনের উপর নির্ভর করতে হয়।
অধ্যাপক ডবনবৎ তাঁর ‘ গ্রন্থে বলেন, ‘‘দর্শন ছাড়া বিজ্ঞান হলো
ঐক্য ছাড়া সমষ্টিমাত্র, আত্মাহীন দেহ; বিজ্ঞান ছাড়া দর্শন হলো দেহহীন আত্মা, নিছক কবিতা
এবং মূলত স্বপ্ন থেকে এর বিশেষ কিছু পার্থক্য নেই’’।
উপসংহার
দর্শন ও বিজ্ঞান উভয়ই চায় জগৎ ও জীবনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে। উভয়ের সত্যের প্রতি
গভীর অনুরাগ রয়েছে এবং উভয় জ্ঞানকে সুসংবদ্ধ, সুসংহত ও সুবিন্যস্ত করতে চায়। তবে
দর্শন প্রকৃতিকে সামগ্রিকভাবে আলোচনা করে; আর বিজ্ঞান আলোচনা করে খন্ড খন্ডভাবে।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। দর্শন ও বিজ্ঞানের পার্থক্য আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। দর্শন ও বিজ্ঞানের সাদৃশ্য বা মিলগুলো আলোচনা করুন।
২। দর্শন ও বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিন।
ক. বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। বিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়
র) ধর্ম
রর) নৈতিকতা
ররর) সামাজিকতা
রা) প্রকৃতি
২। দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক
র) সামান্য
রর) নেই
ররর) গভীর
রা) কোনোটাই ঠিক নয়
৩। দর্শনের আলোচ্য বিষয়
র) অভিজ্ঞতার জগৎ
রর) বস্তু জগৎ
ররর) অতীন্দ্রিয় জগৎ
রা) ইন্দ্রিয় এবং অতীন্দ্রিয় জগৎ
৪। দর্শন ও বিজ্ঞানের লক্ষ্য
র) এক
রর) ভিন্ন
ররর) বিপরীত
রা) কোনোটাই না
খ. সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। বিজ্ঞান চায় অতীন্দ্রিয় বিষয়কে জানতে।
২। দর্শন জীবনের কোনো দিককেই উপেক্ষা করে না।
৩। দর্শন ও বিজ্ঞান একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
৪। দর্শনের সিদ্ধান্ত সর্বজনীন।
সঠিক উত্তর
ক.
১. রা) প্রকৃতি ২. ররর) গভীর ৩. রা) ইন্দ্রিয় এবং অতীন্দ্রিয় জগৎ ৪. র) এক
খ.
১। মি ২। স ৩। স ৪। মি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]