বাস্তব অবস্থা ও বচনের পার্থক্য বর্ণনা করুন। সার্বিক ও বিশেষ বাক্য উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন

পূর্ববর্তী পাঠে আমরা জেনেছি, জানা বলতে মূলত বাক্য বা বচন জানা বুঝায়। সুতরাং জানার
স্বরূপ বুঝতে হলে বাক্য বা বচনের স্বরূপ বুঝা প্রয়োজন। বাক্য বা বচনের স্বরূপ বুঝতে হলে
বাস্তব অবস্থার সাথে তার পার্থক্য কী? তা জানা প্রয়োজন। বর্তমান পাঠে আমরা এই পার্থক্য
এবং কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বচন নিয়ে আলোচনা করবো।
বাস্তব অবস্থা
প্রতিনিয়ত যা ঘটে যাচ্ছে বা ঘটে চলেছে তাই বাস্তব ঘটনা। বাস্তব অবস্থা সম্বন্ধে আমরা প্রশ্ন
তুলতে পারি, ঘটনাটি ঘটেছে না ঘটেনি? মানুষের ভীড় সৃষ্টি হয়েছে চৌরাস্তা মোড়ে। এ
ধরনের বাক্যে যে ঘটনা প্রকাশ পায় সে ঘটনাই বাস্তব। বাস্তব অবস্থাকে ইংরেজিতে বলা হয়
আমরা আমাদের চারপাশে যেসব ঘটনা অহর্নিশ ঘটতে দেখছি তার সবই বাস্তব; তাই এ সবই বাস্তব অবস্থা।
বচন
বচন হলো বিবৃতিমূলক বাক্য অর্থাৎ যে বাক্য সত্য বা মিথ্যা হতে
পারে তাকে বচন বলে। সব বাক্যই বচন হতে পারে না; কেননা, সব বাক্যেই ঘোষণা বা
বিবৃতি থাকে না। যেমন প্রশ্নসূচক বাক্য বা বিস্ময়সূচক বাক্যে কোন ঘোষণা নেই। আর এজন্য এ ধরনের বাক্য বচন নয়।
কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বচন
সার্বিক, বিশেষ ও ব্যক্তিবিষয়ক বচন
যে বাক্যে কোন শ্রেণীর অন্তর্গত প্রত্যেক ব্যক্তি বা বস্তুসম্বন্ধে কিছুবলা হয় তাকে সার্বিক বাক্য বলে। আমরা যদি বলি, ‘সকল মানুষ মরণশীল’ তাহলে ‘মানুষ’
শ্রেণীর অন্তর্গত প্রত্যেক ব্যক্তি সম্বন্ধে ‘মরণশীল’ কথাটি বলা হয়। সুতরাং এটি একটি সার্বিক
বাক্য।
যে বাক্যে কোন শ্রেণীর অন্তর্গত কিছুব্যক্তি বা বস্তুসম্বন্ধে কিছুবলা হয় তাকে বিশেষ বা
আংশিক বাক্য বলে। আমরা যদি বলি, ‘কিছু মানুষ বিজ্ঞানী',
তাহলে ‘মানুষ' শ্রেণীর অন্তর্গত কিছুব্যক্তি যে বিজ্ঞানী তা বলা হয়। সুতরাং এটি একটি বিশেষ বাক্য।
যে বাক্যে কোন ব্যক্তি বা বিশেষ বস্তু সম্বন্ধে কিছু বলা হয় তাকে ব্যক্তিবিষয়ক বাক্য
) বলে। আমরা যদি বলি, ‘নিউটন একজন বিজ্ঞানী’, তাহলে ‘নিউটন'
নামক বিশেষ ব্যক্তি যে বিজ্ঞানী তা বলা হয়। সুতরাং এটি একটি ব্যক্তিবিষয়ক বাক্য।
সার্বিক বাক্যে যে জ্ঞান প্রকাশিত হয় তাকে সার্বিক জ্ঞান; বিশেষ বাক্যে যে জ্ঞান প্রকাশিত হয়
তাকে বিশেষ জ্ঞান এবং ব্যক্তিবিষয়ক বাক্যে যে জ্ঞান প্রকাশিত হয় তাকে ব্যক্তিবিষয়ক জ্ঞান বলা হয়।
প্রত্যক্ষ-সাপেক্ষ ও প্রত্যক্ষ-নিরপেক্ষ বাক্য
যে বাক্য এমন জ্ঞান প্রকাশ করে যা ইন্দ্রিয়জ অভিজ্ঞতা বা প্রত্যক্ষের ভিত্তিতেই জানা যায়
তাকে প্রত্যক্ষ-সাপেক্ষ বাক্য (ধ ঢ়ড়ংঃবৎরড়ৎর) বলে। যেমন কিছুমানুষ কালো; কিংবা কিছুগাড়ী
কালো ধুঁয়া ছড়ায়। এ সমস্ত বাক্যের সত্যতা একমাত্র পরীক্ষণ-নিরীক্ষণের ভিত্তিতেই নিরূপণ
করা সম্ভব। এ সব বাক্যের সত্যতা তাই সম্ভাব্য
যে বাক্য এমন জ্ঞান প্রকাশ করে যা ইন্দ্রিয়জ অভিজ্ঞতা বা প্রত্যক্ষের ভিত্তিতে পাওয়া বা জানা
যায় না তাকে প্রত্যক্ষ-নিরপেক্ষ বাক্য (ধ ঢ়ৎরড়ৎর) বলে। যেমন কেউই একই সময়ে ভিন্ন দুটি
স্থানে থাকতে পারে না; কিংবা ক খ-এর চেয়ে বড়, খ গ-এর চেয়ে বড়, সুতরাং ক গ-এর
চেয়ে বড়। এ সমস্ত বাক্য সমস্ত সম্ভাব্য বিশ্বে নিশ্চিতভাবে সত্য। এদের বিরুদ্ধ বাক্যও
নিশ্চিতভাবে মিথ্যা। প্রত্যক্ষ-নিরপেক্ষ বাক্যের সত্যতা নিরূপণের জন্য তাই পরীক্ষণ বা
নিরীক্ষণের প্রয়োজন নেই। এ বাক্যকে আবশ্যিক বাক্য (ঘবপবংংধৎু চৎড়ঢ়ড়ংরঃরড়হ) ও বলা হয়।
প্রত্যক্ষ-সাপেক্ষ বাক্য থেকে যে জ্ঞান পাওয়া যায় তাকে প্রত্যক্ষ-সাপেক্ষ জ্ঞান, আর প্রত্যক্ষনিরপেক্ষ বাক্য থেকে যে জ্ঞান পাওয়া যায় তাকে প্রত্যক্ষ-নিরপেক্ষ জ্ঞান বলা হয়।
বিশ্লেষক ও সংশ্লেষক বাক্য
বিশ্লেষক বাক্য
যে বাক্যের উদ্দেশ্য পদ বিশ্লেষণ করলে বিধেয় পদ ) পাওয়া যায় তাকে
বিশ্লেষক বাক্য বলে। যেমন মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী; কিংবা সকল
কুমার অবিবাহিত। প্রথম বাক্যের উদ্দেশ্য পদ ‘মানুষ' বিশ্লেষণ করলেই ‘বুদ্ধিমান প্রাণী' পাওয়া
যায়। আবার দ্বিতীয় বাক্যের উদ্দেশ্য পদ ‘কুমার’ বিশ্লেষণ করলেই ‘অবিবাহিত' পাওয়া যায়।
বস্তুত এরূপ বাক্যে বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদেই বিদ্যমান থাকে। অন্যকথায়, বিধেয় পদ
উদ্দেশ্য পদেরই সম্পূর্ণত বা অংশত পুনরুক্তি করে। এজন্য বিশ্লেষক বাক্য কোন নতুন সংবাদ বা তথ্য প্রদান করে না।
সংশ্লেষক বাক্য
যে বাক্যের উদ্দেশ্য পদ বিশ্লেষণ করলে বিধেয় পদ পাওয়া যায় না তাকে সংশ্লেষক বাক্য
বলে। যেমন, ঘোড়াটি সাদা; কিংবা বাড়িটি হলুদ। এখানে প্রথম
বাক্যের উদ্দেশ্য পদ ‘ঘোড়া' বিশ্লেষণ করলে বিধেয় পদ ‘সাদা' পাওয়া যায় না। একইভাবে,
দ্বিতীয় বাক্যের উদ্দেশ্য পদ ‘বাড়ি' বিশ্লেষণ করলে বিধেয় পদ ‘হলুদ' পাওয়া যায় না। বস্তুত
এরূপ বাক্যে বিধেয় পদ উদ্দেশ্য পদকে পুনরুক্ত করে না; বরং নতুন সংবাদ বা তথ্য প্রদান করে।
বিশ্লেষক বাক্যে যে জ্ঞান প্রকাশিত হয় তাকে বিশ্লেষক জ্ঞান ( আর
সংশ্লেষক বাক্যে যে জ্ঞান প্রকাশিত হয় তাকে সংশ্লেষক জ্ঞান বলে।
মূল্যজ্ঞাপক ও তথ্যজ্ঞাপক বাক্য
যে বাক্যে কোন কিছুর মূল্য নিরূপণ করা হয় তাকে মূল্যজ্ঞাপক বাক্য (ঊাধষঁধঃরাব
চৎড়ঢ়ড়ংরঃরড়হ) বলে। যেমন, গোলাপটি সুন্দর; কিংবা সত্য বলা উচিত। প্রথম ও দ্বিতীয় বাক্যে
যথাক্রমে গোলাপ ও সত্যতার মূল্য নিরূপণ করা হয়েছে।
যে বাক্যে কোন কিছুসম্বন্ধে বর্ণনা বা তথ্য দেয়া হয় তাকে তথ্যজ্ঞাপক বাক্য বলে। যেমন, গোলাপটি লাল; কিংবা সে সত্য বলেনি। এখানে যথাক্রমে
গোলাপ ও জনৈক সম্বন্ধে তথ্য দেয়া হয়েছে মাত্র; কোন মূল্যায়ন করা হয়নি।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বিভিন্ন প্রকার বচন উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। বাস্তব অবস্থা ও বচনের পার্থক্য বর্ণনা করুন।
২। সার্বিক ও বিশেষ বাক্য উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন।
৩। প্রত্যক্ষ-সাপেক্ষ ও প্রত্যক্ষ-নিরপেক্ষ বাক্য উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন।
৪। বিশ্লেষক ও সংশ্লেষক বাক্য উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন।
৫। মূল্যজ্ঞাপক ও তথ্যজ্ঞাপক বাক্য উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। বচন হলো
(অ) প্রশ্নবোধক বাক্য (আ) বিস্ময়সূচক বাক্য
(ই) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য (ঈ) বিবৃতিমূলক বাক্য।
২। ‘সকল মানুষ মরণশীল’ একটি
(অ) বিশেষ বাক্য (আ) সার্বিক বাক্য
(ই) মূল্যজ্ঞাপক বাক্য (ঈ) ব্যক্তি বিষয়ক বাক্য।
৩। প্রত্যক্ষ নিরপেক্ষ বাক্যের সত্যতা নিরূপণের জন্য
(অ) পরীক্ষণ প্রয়োজন (আ) নিরীক্ষণ প্রয়োজন
(ই) পরীক্ষণ ও নিরীক্ষণ উভয়ই প্রয়োজন
(ঈ) পরীক্ষণ ও নিরীক্ষণের প্রয়োজন নেই।
৪। যে বাক্যের উদ্দেশ্যপদ বিশ্লেষণ করলে বিধেয় পদ পাওয়া যায় তাকে বলেÑ
(অ) বিশ্লেষক বাক্য (আ) সংশ্লেষক বাক্য
(ই) মূল্যজ্ঞাপক বাক্য (ঈ) তথ্যজ্ঞাপক বাক্য।
সঠিক উত্তর ঃ (১) ঈ। (২) আ। (৩) ঈ। (৪) অ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]