পূর্ববর্তী পাঠে আমরা সত্যতা সম্পর্কীয় প্রধান মতবাদসমূহ বর্ণনা করেছি। এসব
মতবাদসমূহের কোনটিই পুরোপুরি সন্তোষজনক নয়। বর্তমান পাঠে আমরা প্রতিটি মতবাদের
ত্রæটি-বিচ্যুতি আলোচনা করবো।
স্বতঃপ্রতীতিবাদ
(ক) স্পষ্টতা ও প্রাঞ্জলতা সত্যতার সর্বজনস্বীকৃত লক্ষণ ও মানদন্ড হতে পারে না। কেননা
কোন বচনের স্পষ্টতা ও প্রাঞ্জলতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। যে বচন কারো কাছে স্পষ্ট ও
প্রাঞ্জল মনে হয়, সে বচনই অন্য কারো কাছে স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল নাও মনে হতে পারে। সূর্য যে
পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে তা একদিন স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল জ্ঞান বলেই স্বীকৃত হয়েছিল। কিন্তু
আজকাল তা আর কারো কাছেই সত্য নয়। সুতরাং তা স্পষ্ট ও প্রাঞ্জলও নয়।
(খ) সত্যতা ও মিথ্যাত্ব যদি স্বতঃপ্রতীত হয় অর্থাৎ যা সত্য তাকে সত্য বলে এবং যা মিথ্যা
তাকে মিথ্যা বলে যদি আমরা সাথে সাথেই জানতে পারি, তাহলে দড়ি দেখে, ‘এটি একটি
সাপ' এই বচনটি সত্য মনে করে আমরা ভয়ে পালিয়ে যাই কেন?
সঙ্গতিবাদ
সঙ্গতিবাদ নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে। আমরা এখানে তার দুটি সমালোচনা তুলে ধরছি:
(ক) হেগেল ও হেগেলপন্থীরা বলেন, কোন বচনই স্বতন্ত্রভাবে সত্য নয়, অন্য বচনের সাথে
সঙ্গতিপূর্ণ হয়েই তা সত্য হয়। কিন্তুআমাদের ব্যবহারিক জীবনে আমরা স্বতন্ত্রভাবেই প্রত্যেক
বচনের সত্যতা নির্ণয় করি। যদি প্রত্যেক বচনই স্বতন্ত্রভাবে সত্য না হয় তবে অন্য বচনের
সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হলেই তা সত্য হতে পারে না। সত্যতা বচনের আগন্তুক গুণ নয়। যে বচন
সত্য তাতে সত্যতা স্বতঃই থাকে। যদি তা না থাকত তবে কখনই কোন অবস্থাতেই বচন সত্য
হতে পারত না। কারণ যাতে যা নেই তাতে তা কখনই হয় না। সত্যতার মত মিথ্যাত্বও বচনে
স্বতঃই থাকে। যে বচন মিথ্যা তা স্বতঃই মিথ্যা। তবে বচনের সত্যতা ও মিথ্যাত্ব স্বতঃই জানা
যায় না। এজন্যই নানা অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
(খ) হেগেল ও তাঁর শিষ্যদের মতে, সমস্ত বচনই আংশিক সত্য এবং আংশিক মিথ্যা। কিন্তু
আমরা ব্যবহারিক জীবনে সত্য ও মিথ্যাকে সম্পূর্ণ বিপরীত বলেই জানি। যা সত্য তা কখনই
মিথ্যা নয়; আবার যা মিথ্যা তা কখনই সত্য নয়; “৭+৩=১০'' এই উক্তিকে কেউই আংশিক
সত্য ও আংশিক মিথ্যা বলবে না । এই বচন সম্পূর্ণ সত্য।
অনুরূপতাবাদ
এই মতবাদ বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছে। আমরা এখানে কেবল তিনটি সমালোচনা তুলে
ধরবো:
(ক) অনুরূপতাবাদীরা বচনের সত্যতা ও মিথ্যাত্ব যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেননি। ধারণা
বাহ্য বস্তুর অনুরূপ হলে বচন সত্য, না হলে মিথ্যা; কিন্তুবাহ্য বস্তুকে যদি সাক্ষাৎভাবে জানা
না যায় তাহলে ধারণা বাহ্য বস্তুর অনুরূপ হলো কিনা তা কিভাবে বোঝা যাবে? আমরা কিভাবে
বস্তুর সাথে ধারণার তুলনা করবো?
(খ) ধারণা হলো মনোগত, বিষয় ও বিবৃত বিষয়ের মধ্যে সম্বন্ধ হলো বস্তুগত। তাদের মধ্যে
অনুরূপতা কিভাবে হতে পারে? দুটি বিজাতীয় বিষয়ের মধ্যে মিল বা অমিল কিভাবে পরিমাপ
করা যেতে পারে? বচনকে কিভাবে বাইরের বিষয়ের সাথে তুলনা করা যায়?
(গ) বিষয় যদি জ্ঞাত সত্য হয়, তাহলে সত্যতা হলো বিষয়ের সাথে অনুরূপতা- সত্যতার এই
সংজ্ঞা কিভাবে গ্রহণ করা যায়?
প্রয়োগবাদ
এই মতবাদটিও নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে। আমরা এখানে প্রধান দুটি সমালোচনা তুলে
ধরবো:
(ক) বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করার পর যদি দেখা যায়, সেই বিশ্বাস বাস্তবে উদ্দেশ্য সিদ্ধ করছে,
তখন তাকে সত্য মনে করা হবে। কাজেই প্রয়োজন সিদ্ধি বা উদ্দেশ্য সিদ্ধি সত্যতা পরীক্ষার
মানদন্ড। কিন্তুপ্রয়োজন সিদ্ধি বা উপযোগিতা কখনও সত্যের স্বরূপ বা প্রকৃতি হতে পারে না।
প্রয়োগবাদী সত্য তত্তে¡র ত্রæটি হলো এই তত্ত¡ সত্যের স্বরূপ ও সত্যের পরীক্ষাকে অভিন্ন গণ্য
করে।
(খ) প্রয়োগবাদী সত্য তত্ত¡ অনুসারে, সত্যতা হয়ে পড়ে নিছক মনোগত বা ব্যক্তিসাপেক্ষ
ব্যাপার। যা আমার প্রয়োজন সিদ্ধ করেছে তা অপরের প্রয়োজন সিদ্ধ নাও করতে পারে।
সেক্ষেত্রে যা আমার কাছে সত্য হচ্ছে তা অপরের কাছে সত্য নয়। কিন্তুআমরা জানি সত্যতা
অপরিবর্তনীয় ধর্ম, স্থান-কাল-ব্যক্তিভেদে তার পরিবর্তন হয় না।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। সত্যতা সম্পর্কীয় মতবাদসমূহের ত্রæটি-বিচ্যুতি উল্লেখ করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। স্বতঃপ্রতীতিবাদের ত্রæটি-বিচ্যুতি উল্লেখ করুন।
২। অনুরূপতাবাদের ত্রæটি-বিচ্যুতি ব্যাখ্যা করুন।
৩। সঙ্গতিবাদের ত্রæটি-বিচ্যুতি ব্যাখ্যা করুন।
৪। প্রয়োগবাদের দুটি সমালোচনা উল্লেখ করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। স্পষ্টতা ও প্রাঞ্জলতা সত্যতার সর্বজন স্বীকৃত লক্ষণ ও মানদন্ড হতে পারে নাÑ বলা হয়
(অ) স্বতঃপ্রীততিবাদের সমালোচনায়
(আ) সঙ্গতিবাদের সমালোচনায়
(ই) অনুরূপতাবাদের সমালোচনায়
(ঈ) প্রয়োগবাদের সমালোচনায়।
২। সকল বচনই আংশিক সত্য এবং আংশিক মিথ্যাÑ এ কথা
(অ) লিবনিজ ও লিবনিজ পন্থীদের (আ) ডেকার্ট ও ডেকার্ট পন্থীদের
(ই) হেগেল ও হেগেল পন্থীদের (ঈ) হিউম ও হিউমপন্থীদের।
৩। সমালোচকদের দৃষ্টিতে বচনের সত্যতা ও মিথ্যাত্ব যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনিÑ
(অ) স্বতঃপ্রতীতিবাদ (আ) সঙ্গতিবাদ
(ই) অনুরূপতাবাদ (ঈ) প্রয়োগবাদ।
৪। সত্যতা নিছক মনোগত বা ব্যক্তিসাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়Ñ
(অ) স্বতঃপ্রতীতিবাদ অনুসারে (আ) সঙ্গতিবাদ অনুসারে
(ই) অনুরূপতাবাদ অনুসারে (ঈ) প্রয়োগবাদ অনুসারে।
সঠিক উত্তর (১) অ। (২) ই। (৩) ই। (৪) ঈ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত