জ্ঞান কিভাবে উৎপন্ন হয়? প্রকৃত জ্ঞানের উৎস কী? এ ব্যাপারে দার্শনিকগণ একমত হতে
পারেননি। ফলে আমরা ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ দেখতে পাই। এখানে আমরা বুদ্ধিবাদ নিয়ে
আলোচনা করবো।
বুদ্ধিবাদ
বুদ্ধিবাদী দার্শনিকদের মধ্যে ডেকার্ট, স্পিনোজা, লিবনিজ ও উলফ্ উল্লেখযোগ্য। বুদ্ধিবাদী
দার্শনিকদের মূল বক্তব্য নি¤েœ আলোচনা করা হলো:
জ্ঞানের বৈশিষ্ট্য : আবশ্যিকতা ও সর্বজনগ্রাহ্যতা
বুদ্ধিবাদের বক্তব্য হলো, জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েই লাভ করা যায়। ইন্দ্রিয় মাধ্যমে যা পাওয়া যায় তা
জ্ঞান নয়, তাকে মত (ড়ঢ়রহরড়হ) বলাই ভাল। আবশ্যিকতা ও সর্বজনগ্রাহ্যতা জ্ঞানের লক্ষণ।
যে বিশ্বাস আবশ্যিক ও সর্বজনগ্রাহ্য সত্য নয় তাকে জ্ঞান বলা যায় না। গণিত শাস্ত্রে জ্ঞান
পাওয়া যায়। কারণ গণিতের বাক্যগুলি আবশ্যিক ও সর্বজনগ্রাহ্য। বুদ্ধিবাদীদের মতে,
গণিতের জ্ঞানই জ্ঞানের আদর্শ। আবশ্যিক ও সর্বজনগ্রাহ্য বিশ্বাস একমাত্র বুদ্ধি দ্বারাই লাভ
করা যায়। জ্ঞানের আবশ্যিকতা বুদ্ধি সাক্ষাৎভাবে উপলব্ধি করতে পারে। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে
আমরা যা পাই তা আবশ্যিকও নয়, সর্বজনগ্রাহ্যও নয়। সুতরাং ইন্দ্রিয়লব্ধ বিশ্বাসকে জ্ঞান না
বলাই ভালো, যদিও একে জ্ঞান বলা হয়, এ অতি নি¤œ স্তরের জ্ঞান। এতে কাজ চলে, কিন্তু
তাত্তি¡ক আলোচনা চলে না। ইন্দ্রিয় প্রায়ই আমাদের প্রতারণা করে। দড়িকে সাপ দেখায়।
সুতরাং ইন্দ্রিয় নির্ভরযোগ্য নয়।
ধারণাই জ্ঞানের মূল
কোন কোন বুদ্ধিবাদী আরও বলেন, গণিত শাস্ত্রে যেমন ধারণার সাথে ধারণার সম্বন্ধ দেখিয়ে
জ্ঞানলাভ করা যায় সর্বক্ষেত্রেই তেমন। ধারণাই জ্ঞানের মূল। আবার ধারণা সব বা অন্ততঃ
কিছুআমাদের বুদ্ধির সৃষ্টি। এই ধারণাগুলিকে সহজাত ধারণা (ওহহধঃব ওফবধং) বলে। জ্ঞানের
প্রকাশ বাক্যে ঘটে। বাক্য দুই প্রকার : (১) অভিজ্ঞতাপূর্ব ) ও (২) অভিজ্ঞতালব্ধ
। ‘দুধ সাদা' এই বাক্যটি অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া যায় বলে একে অভিজ্ঞতালব্ধ
বাক্য বলে। ‘৩+২=৫' এই বাক্য অভিজ্ঞতাপূর্ব। আমরা চিন্তা করে এবং অভিজ্ঞতার উপর
নির্ভর না করেই এই বাক্য পাই।
অভিজ্ঞতাপূর্ব বাক্যই জ্ঞান
বুদ্ধিবাদীদের মতে, অভিজ্ঞতাপূর্ব বাক্যই জ্ঞান। এই বাক্য যেমন আবশ্যিক তেমনি
সর্বজনগ্রাহ্য। যে ২ এর অর্থ বোঝে এবং ‘২+২' এর অর্থ বোঝে, সেই বোঝে ২+২=৪। এ
বোঝার জন্য বুদ্ধি দরকার, অভিজ্ঞতা নয়। এগুলি যেমন অভিজ্ঞতাপূর্ব তেমনি আবার
বিশ্লেষণাত্মক (ধহধুঃরপ) এরূপ জ্ঞান গণিত শাস্ত্র ও যুক্তিবিদ্যায় পাওয়া যায়।
সহজাত ধারণা স্রষ্টাপ্রদত্ত
বুদ্ধিবাদী ডেকার্টের মতে, আমাদের কতগুলি সহজাত ধারণা আছে। এগুলি স্রষ্টাপ্রদত্ত। জন্মের
সময়ই স্রষ্টা এগুলি মনের মধ্যে গেঁথে দেন। এগুলি কখনই মিথ্যা হতে পারে না। এই ধারণা
থেকেই অন্য সমস্ত জ্ঞান গাণিতিক অবরোহ পদ্ধতিতে লাভ করা যায়।
লিবনিজের মত : বুদ্ধির সত্য ও বস্তুর সত্য
জার্মান দার্শনিক লিবনিজ বলেন, ‘‘সমস্ত আবশ্যিক ও সর্বজনগ্রাহ্য জ্ঞানই বুদ্ধিলব্ধ”। তাঁর
মতে, ইন্দ্রিয় বুদ্ধিরই এক অনুন্নত রূপ। তাই ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান বুদ্ধিজাত জ্ঞানের চেয়ে অস্পষ্ট ও
কম প্রামাণ্য। তিনি দুই রকম সত্যের কথা বলেন : (১) বুদ্ধির সত্য (ঞৎঁঃয ড়ভ জবধংড়হ) ও
(২) বস্তুর সত্য বিশ্লেষণাত্মক বাক্য যে জ্ঞান প্রকাশ করে তা বুদ্ধির
সত্যবিষয়ক। বিষয় সম্বন্ধে যে জ্ঞান তা বস্তুর সত্যবিষয়ক, এই জ্ঞানে প্রত্যক্ষণেরও দরকার।
দার্শনিক উলফ্-এর মতে, কতগুলি মৌলিক ধারণা থেকে সমস্ত জ্ঞান অবরোহ পদ্ধতিতে লাভ
করা যায়।
সমালোচনা
(১) অভিজ্ঞতালব্ধ সমস্ত জ্ঞানই সংশয়াত্মক বা ভ্রান্ত -বুদ্ধিবাদের এ অভিযোগ গ্রহণযোগ্য
নয়। অভিজ্ঞতা ছাড়া কেবলমাত্র বুদ্ধির সাহায্যে জ্ঞান সম্ভব নয়। অভিজ্ঞতা ছাড়া শুধু
বুদ্ধি দিয়ে জীব জগতের যথার্থ জ্ঞানলাভ করা যায় না।
(২) সব যথার্থ জ্ঞানই হয় অন্তর ধারণা থেকে - একথা ঠিক নয়। দর্শনের জ্ঞানের সাথে
গণিতের জ্ঞানের পার্থক্য আছে। গণিতের জ্ঞান অমূর্ত (ধনংঃৎধপঃ), আর দর্শনের জ্ঞান
মূর্ত (পড়হপৎবঃব) বিষয়ের জ্ঞান। অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে চিন্তনের সাহায্যে জগৎ ও
জীবনের স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞান দেয়াই দর্শনের লক্ষ্য।
(৩) গণিত শাস্ত্রে বা যুক্তিবিদ্যায় ধারণার সাথে ধারণার মিল বা অমিল দেখিয়ে জ্ঞানলাভ
হতে পারে। কিন্তুপদার্থ বিজ্ঞানে বা লৌকিক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষণের প্রয়োজন অনস্বীকার্য।
আর পদার্থ বিজ্ঞান জ্ঞান দেয় না, এমন কথা স্বীকার করা যায় না।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। জ্ঞানের উৎপত্তিবিষয়ক মতবাদ হিসেবে বুদ্ধিবাদ সমালোচনাসহ আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। বুদ্ধিবাদ অনুসারে, কোন্ ধরনের বাক্য থেকে জ্ঞান পাওয়া যায়?
২। লিবনিজের মতে সত্য কত প্রকার ও কি কি?
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। বুদ্ধিবাদী দার্শনিক হলেনÑ
(অ) ডেকার্ট, স্পিনোজা লিবনিজ (আ) হোয়াইটহেড, রাসেল, মূর
(ই) লক, বার্কলী, হিউম (ঈ) কিয়ার্কেগার্ড, হাইডেগার ও সার্ত।
২। বুদ্ধিবাদের মতে জ্ঞানের উৎস হলোÑ
(অ) ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণ (আ) অন্তর্দর্শন
(ই) বুদ্ধি (ঈ) প্রত্যাদেশ।
৩। মানব মনে স্রষ্টা প্রদত্ত কিছুসহজাত ধারণা আছেÑ কথাটি বলেন
(অ) লিবনিজ (আ) লক
(ই) হিউম (ঈ) ডেকার্ট।
৪। সমস্ত আবশ্যিক ও সর্বজনীন জ্ঞানই বুদ্ধিলদ্ধÑ কথাটি বলেন
(ক) লিবনিজ (আ) রাসেল
(গ) সার্ত (ঈ) উল্ফ।
সঠিক উত্তর ঃ (১) অ। (২) ই। (৩) ঈ। (৪) অ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত