ধর্মের সংজ্ঞা দিন। দর্শন ও ধর্মের মিলগুলো আলোচনা করুন।

দর্শন ও ধর্ম উভয়ই চায় জগৎ ও জীবনের রহস্য জানতে, প্রকৃত সত্যকে অনুসন্ধান করতে।
যদিও উভয়ের উদ্দেশ্য এক, তথাপি অনুসন্ধানের পদ্ধতি আলাদা। ধার্মিক চায় পরম সত্তার
সাথে সংযোগ স্থাপন করতে, আর দার্শনিক চায় পরম সত্তা সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞানলাভ করতে।
দর্শন তার অনুসন্ধানের পদ্ধতি হিসেবে বেছে নিয়েছে বিচারবুদ্ধিকে, আর ধর্ম বেছে নিয়েছে
বিশ্বাসকে। ধার্মিকের বক্তব্য হলো ‘বিশ্বাসে মিলায় খোদা তর্কে বহু দ র’। ধর্ম ও দর্শনের
সম্পর্ক আলোচনার আগে আমরা এদের সংজ্ঞা দিবো।
ধর্ম
ধর্ম অর্থ ধারণ করা। এ হলো এমন এক অদৃশ্য শক্তির উপর আত্মসমর্পণ ও গভীর বিশ্বাস যা
মানুষের জীবন ও নিয়তিকে নিয়তই নিয়ন্ত্রিত করে এবং যার সাথে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ
হওয়ার জন্য মানুষের রয়েছে একান্ত কামনা। অতিপ্রাকৃতিক শক্তির উপর নির্ভরশীলতার
অনুভ‚তিই ধর্মের প্রাণ।
দর্শন
দর্শন বলতে আমরা এমন এক বিদ্যাকে বুঝি, যা সত্যের অনুসন্ধানে ভাবাবেগের পরিবর্তে
উদার দৃষ্টিভঙ্গি, অনুধ্যান, বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণের মাধ্যমে সত্তা, জগৎ ও জীবনের সঙ্গে জড়িত
সমস্যাবলীর সুষ্ঠু, যুক্তিসম্মত ও গ ঢ় আলোচনা করার প্রচেষ্টা চালায়। এখন আমরা দর্শনের
সাথে ধর্মের মিলগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
দর্শন ও ধর্মের সাদৃশ্য
১) উভয়ের উদ্দেশ্য জগৎ ও জীবনের রহস্য উন্মোচন করে সত্য অনুসন্ধান করা।
২) উভয়ই পরম সত্তা, পরম মূল্য, মঙ্গল ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। দর্শন ও ধর্ম উভয়ই
পরম সত্তার প্রতি মানুষের মনোভাব নির্দেশ করে। ধর্মের মনোভাব ব্যক্ত হয় উপাসনা, প্রার্থনা,
আচরণ ইত্যাদির মাধ্যমে; আর দর্শনের মনোভাব ব্যক্ত হয় বৌদ্ধিক উপলব্ধির মাধ্যমে। বিশ্ব
জগতের মূল্যের উৎসের প্রতি ধর্মের মনোভাব হলো ব্যবহারিক এবং আবেগমূলক; আর
দর্শনের কাজ ঐ উৎসের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দেয়া। জে.সি. ফিভার (ঔ.ঈ. ঋবধাবৎ) বলেন,
‘যেহেতু ধর্মের কাজ মূল্যকে ব্যাখ্যা ও প্রতিষ্ঠা করা, সেহেতু ধর্ম ও দর্শন পরস্পর নির্ভরশীল’।
৩) দর্শন ও ধর্মের আলোচ্য বিষয়েও মিল রয়েছে। স্রষ্টা ও স্রষ্টার সৃষ্টিকার্য, জগতের সাথে
স্রষ্টার সম্পর্ক, স্রষ্টার সাথে জীবনের সম্পর্ক, স্রষ্টাকে জানার উপায়, আত্মা, আত্মার অমরত্ব,
পরকাল ইত্যাদি নিয়ে উভয়ই আলোচনা করে।
দর্শন ও ধর্মের বৈসাদৃশ্য
দর্শন ও ধর্মের মধ্যে অনেক বিষয়ে মিল থাকলেও বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্যও আছে অনেক
বিষয়ে। যেমন১) দর্শনের উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ এবং তার পরিণতি হিসেবে বুদ্ধির পরিতৃপ্তি ও
মানসিক শান্তি লাভ। আর ধর্মের উদ্দেশ্য হলো শান্তি লাভ, পরম সত্তার (স্রষ্টার) সাথে একাÍতা
বিধান ও মোক্ষ লাভ।
২) দর্শন ও ধর্মের পদ্ধতি আলাদা। দর্শনের পদ্ধতি হলো বিচারবুদ্ধি ও বিশ্লেষণ। আর ধর্মের
পদ্ধতি হলো প্রত্যক্ষ অনুভ‚তি
৩) দর্শন হলো পরম সত্তার জ্ঞান; আর ধর্ম হলো পরম সত্তার সাথে সংযোগ স্থাপনের জ্ঞান।
৪) দর্শন হলো জ্ঞানচর্চা, আর ধর্ম হলো জীবনচর্চা। তাই দর্শনের কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই,
কিন্তু ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা আছে এবং অনুষ্ঠান বাদ দিলে ধর্মের অঙ্গহানি হয়।
৫) দর্শনের সত্য ব্যক্তিনিরপেক্ষ ও সর্বজনীন, আর ধর্মের সত্য ব্যক্তিগত। ধার্মিক সত্যকে
জেনেই খুশী হন না; সত্যকে হৃদয়ের সমস্ত আকুতির মধ্যে একান্তভাবে আপনার করে পেতে
চান।
৬) ধর্মের একটা নৈতিক ভিত্তি আছে। কতকগুলো নৈতিক নিয়ম প্রায় প্রত্যেক ধর্মেরই
অঙ্গবিশেষ। কিন্তু ধর্মের মত কোনো নৈতিক ভিত্তি দর্শনের নেই।
৭) দর্শনের কাজ হলো বুদ্ধিভিত্তিক, আর ধর্মের কাজ হলো বিশ্বাসভিত্তিক। বিশ্বাস ধর্মের
সারবস্তু। ধর্ম তাই বিশ্বাস ও অনুভ‚তির তীব্রতায় মহিমান্বিত; আর দর্শন বিশ্বাস ও অনুভ‚তি
বিবর্জিত যৌক্তিক চিন্তাভাবনা।
তবে দর্শন ও ধর্মের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও এরা পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। উভয়ের কাজ
মানুষের কৌত‚হল দূর করার জন্য বিশ্বজগতের রহস্য উন্মোচন করা। এই রহস্যকে উন্মোচন
করতে বা সত্যকে জানতে দর্শন ধর্মের ভিত্তি অর্থাৎ সরল বিশ্বাসকে নষ্ট না করে অনেক সময়
ধর্মের ভিত্তিকে মূল্যায়নের মাধ্যমে আরও মজবুত করে তোলে। আর ধর্মও দর্শনের সংশয় ও
বিশ্লেষণাÍক যুক্তি যখন মানুষকে পরম সত্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দিগ্ধ করে তোলে, তখন
মানুষের মনে বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করে। যুক্তিবিচারেও যখন সমাধান মেলে না তখন বিশ্বাসই
মানুষকে স্থির রাখে। তবে বেকন বলেন, “একথা সত্য যে, সাধারণ দর্শন মানুষের মনকে
নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু দর্শনের গভীরতা মানুষের মনকে ধর্মের দিকে টেনে
নিয়ে যায়”। সুতরাং গোঁড়ামিহীন ধর্ম ও প্রকৃত দর্শনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।
উপসংহার
দর্শন ও ধর্ম উভয়ই ইহজগৎ, পরজগৎ, আত্মা, আত্মার অমরত্ব, পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য
ইত্যাদিকে জানতে চায়। স্রষ্টাকে জানতে চায়, প্রকৃত সত্যকে পেতে চায়। উভয়ই সমাজের
মানুষের সুখ-শান্তি ও মঙ্গলের জন্য কাজ করে।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। দর্শন ও ধর্মের সম্পর্ক আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। দর্শন ও ধর্মের মিলগুলো আলোচনা করুন।
২। ধর্মের সংজ্ঞা দিন।
ক. বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১) ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো
র) স্রষ্টাকে জানা
রর) স্রষ্টার সাথে সংযোগ স্থাপন করা
ররর) অর্থ পাওয়া
রা) জ্ঞান অর্জন করা
২) দর্শন হলো
র) জ্ঞানচর্চা
রর) জীবনচর্চা।
ররর) রূপচর্চা।
রা) কোনোটাই না।
৩) দর্শন ও ধর্মের মধ্যে
র) কোনো মিল নেই
রর) পদ্ধতিগত মিল আছে
ররর) আলোচ্য বিষয়ের অনেক মিল আছে
রা) কোনো পার্থক্য নেই
৪) দর্শনে জানার পদ্ধতি হলো
র) বিচারবুদ্ধি
রর) অন ভ‚তি
ররর) বিশ্বাস
রা) কোনোটাই না
খ.
সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। ধর্মের সত্য সর্বজনীন, আর দর্শনের সত্য ব্যক্তিগত।
২। দর্শন হলো বিশ্বাস ও অনুভ‚তি বিবর্জিত চিন্তাভাবনা।
৩। গভীর দর্শন মানুষকে আস্তিকতার দিকে টেনে নেয়।
৪। দর্শন চায় স্রষ্টার সাথে সংযোগ স্থাপন করতে, আর ধর্ম চায় মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন
করতে।
সঠিক উত্তর
ক.
১. রর) স্রষ্টার সাথে সংযোগ স্থাপন করা ২) র) জ্ঞানচর্চা
৩) ররর) আলোচ্য বিষয়ের অনেক মিল আছে ৪) র) বিচারবুদ্ধি
খ. ১। মি ২। স ৩। স ৪। মি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]