বাস্তববাদ সমালোচনাসহ ব্যাখ্যা করুন। সরল বাস্তববাদের সাথে প্রতীকবাদের পার্থক্য নির্দেশ করুন।

জ্ঞেয় বস্তু : বাস্তববাদ ও ভাববাদ
পূর্ববর্তী দুটি ইউনিটে আমরা যথাক্রমে জ্ঞান বা জানা বলতে কী বুঝায় অর্থাৎ জ্ঞানের
স্বরূপ কী এবং জ্ঞানের উৎস কী অর্থাৎ কিভাবে তার উৎপত্তি ঘটে? তা আলোচনা
করেছি। জ্ঞান সংক্রান্ত এ দুটি প্রশ্ন জ্ঞেয় বস্তুর প্রকৃতির সাথে সম্বন্ধযুক্ত। আমরা জানি,
জ্ঞান জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় বস্তুর সম্পর্ক প্রকাশ করে। যিনি জানের তার নাম হল জ্ঞাতা
(কহড়বিৎ)। আর যা জানা হয় তার নাম জ্ঞেয় (কহড়ধিনষব)। সকল প্রকার জ্ঞানেই
একজন ব্যক্তি কোন একটি বস্তু জানে। প্রশ্ন হলো, জ্ঞেয় বস্তুর স্বরূপ বা প্রকৃতি কী? যা
জানি অর্থাৎ জ্ঞেয় বস্তু কি জানার উপর নির্ভর করে, না মন কিংবা জ্ঞান নিরপেক্ষভাবে
তার অস্তিত্ব আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর দার্শনিকরা দু'রকমভাবে দিয়েছেন।
একদল দার্শনিক বলেন, জ্ঞেয়বস্তু জ্ঞানাতিরিক্ত সত্তা নিয়েই বিরাজমান। এই মত
বাস্তববাদ নামে পরিচিত। আরেক দলের মতে, জ্ঞেয়বস্তু জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। এই
মত ভাববাদ নামে পরিচিত। পূর্ববর্তী ইউনিটে আমরা জ্ঞানের উৎপত্তিবিষয়ক মতবাদ নিয়ে আলোচনা করেছি।
স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, জ্ঞান কী? উত্তরে আমরা বলি, জ্ঞাতার সাথে জ্ঞেয়
বস্তুর সম্পর্কই জ্ঞান। যে জানে তাকে বলে জ্ঞাতা, আর যে বস্তুকে জানা হয় তাকে বলে জ্ঞেয়।
এই জ্ঞেয় বস্তুর অস্তিত্ব কি জানার উপর নির্ভরশীল, নাকি এর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে? এ প্রশ্নে
দার্শনিকদের মধ্যে মতভেদের কারণে দুটি দার্শনিক মতবাদের উদ্ভব হয়েছে : (১) বাস্তববাদ
ও (২) ভাববাদ ( আমরা বর্তমান পাঠে সাধারণভাবে বাস্তববাদ এবং
বিশেষভাবে তার দুটি প্রকার নিয়ে আলোচনা করবো।
বাস্তববাদ
বাস্তববাদী দার্শনিকদের মতে, বস্তুকোন কারণেই জানার উপর নির্ভরশীল নয়। কেউ বস্তুকে
জানুক বা না জানুক তাতে বস্তুর কিছুযায় আসে না; বরং এর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে। বস্তু
জ্ঞানের বিষয় হতে পারে, তাই বলে বস্তুর অস্তিত্ব জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল নয়। যেমনআমেরিকা আবিষ্কার হওয়ার আগে কেউ আমেরিকাকে জানত না; তাই বলে তখন আমেরিকা
ছিল না, একথা বলা যাবে না। সুতরাং আমেরিকার অস্তিত্ব কোন মানুষের জ্ঞানের উপর
নির্ভরশীল নয়।
বাস্তববাদীরা প্রথমত বলেন, জ্ঞানের বিষয় না থাকলে কোন জ্ঞানই হয় না। জ্ঞান বিষয় বা বস্তু
দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। কিন্তুবিষয় বা বস্তুর অস্তিত্ব কখনই জ্ঞানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। জ্ঞান ছাড়াও বস্তুথাকতে পারে। বস্তুর সাথে জ্ঞানের সম্পর্ক বাহ্যিক
বাস্তববাদীদের দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, বস্তুর সাথে জ্ঞানের কোন আন্তর সম্পর্ক নেই। যখন কোন
বস্তুঅন্য একটি বস্তুছাড়া কখনই থাকতে পারে না, তখন তাদের সম্পর্ককে বলা হয় আন্তর
সম্পর্ক। যে কোন বস্তুই কোন মানুষের জ্ঞানের বিষয় না হয়ে থাকতে পারে। যেমন-আমেরিকা
আবিষ্কারের আগেও আমেরিকা ছিল, কিন্তুমানুষ শুধুজানত না।
বস্তুঅসংখ্য
বাস্তববাদীদের তৃতীয় কথা হচ্ছে, বস্তুর সংখ্যা একাধিক। ভিন্ন ভিন্ন জ্ঞানের ভিন্ন ভিন্ন বস্তু।
আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বস্তুই জানি। এই সমস্ত বস্তুরই জ্ঞানাতিরিক্ত সত্তা আছে। সুতরাং
বস্তুর অসংখ্যত্ব স্বীকার করতেই হয়।
সকল বাস্তববাদী বস্তুর উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি স্বীকার করেন। কিন্তুবস্তুকতটুকুপরিমাণে জ্ঞান
থেকে স্বতন্ত্র এবং বস্তুকে কিভাবে জানা যায়, তা নিয়ে বাস্তববাদীদের মধ্যে মত বিরোধের
কারণে আমরা বাস্তববাদের বিভিন্ন শ্রেণী দেখতে পাই :
(১) সরল বাস্তববাদ
(২) প্রতীকবাদ
(৩) নব্য বাস্তববাদ
(৪) সবিচার বাস্তববাদ।
সরল বাস্তববাদ (ঘধরাব জবধষরংস)
সরল বাস্তববাদীদের মতে, বিষয়ের দ্রব্যত্ব ও গুণ উভয়ই জ্ঞানাতিরিক্ত। আমরা বস্তুর যে গুণ
জানি তার সবই বস্তুতেই বর্তমান থাকে। বস্তুতে নেই এমন গুণ কখনই জানা যায় না। বিষয়
বা বস্তুনা থাকলে জ্ঞান হয় না। বিষয় সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান বিষয় অনুযায়ী হয়ে থাকে।
আমরা আমাদের বিভিন্ন ইন্দ্রিয় দিয়ে সরাসরি বিষয় জানতে পারি। আমরা যা কিছুসরাসরি
জানি তা সবই সত্য। এই মতবাদে সাধারণ লোকের সরল ধারণার প্রতিফলন পাওয়া যায়,
তাই এই মতবাদের নাম সরল বাস্তববাদ।
সমালোচনা
(১) এই মতবাদ সত্য হলে আমাদের কখনই ভুল জ্ঞান হতো না। এ মতবাদ অনুসারে বিষয়
না থাকলে জ্ঞানই হয় না। কিন্তুআমরা অনেক সময় যেখানে কিছুনেই সেখানে ভুল করে কোন বস্তুদেখি।
(২) এ মতানুসারে, বস্তুর সমস্ত গুণই বস্তুগত। নিউটনের মতে, বস্তুর সমস্ত গুণই বস্তুগত
নয়; রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ইত্যাদি জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া একই জিনিস
কারো কাছে খুব স্বাদের এবং কারো কাছে একেবারে স্বাদের নয় মনে হয়। কিন্তুএকই
জিনিস স্বাদ এবং স্বাদ নয় হতে পারে না।
প্রতীকবাদ বা বৈজ্ঞানিক বাস্তববাদ
দার্শনিক জন লক এ মতবাদের প্রবর্তক । তাঁর মতে, বস্তুর কতগুলি গুণ বস্তুগত, আর
কতগুলি গুণ ব্যক্তিগত। যে সমস্ত গুণ বস্তুগত তাদের নাম মুখ্য গুণ
বস্তুর আয়তন, সংখ্যা, ঘনত্ব প্রভৃতি গুণকে মুখ্য গুণ বলা হয়। রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ইত্যাদি
হলো গৌণ গুণ লক গুণের অধিষ্ঠানরূপে দ্রব্যকে স্বীকার করেন।
তাঁর মতে, বস্তুর দ্রব্যত্ব ও মুখ্য গুণগুলি জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল নয়। তবে গৌণ গুণ একান্তভাবেই জ্ঞাননির্ভর।
জ্ঞান প্রতীক বা ধারণার মাধ্যমে হয়
সরল বাস্তববাদের ত্রæটি দূর করার জন্য লক প্রতীকবাদের প্রবর্তন করেন। তাঁর মতে, আমরা
কোন কিছুই সরাসরি জানতে পারি না। তাঁর মতে, বাইরের বস্তুর যে ছাপ বা প্রতীক ইন্দ্রিয়
পথে মনের পর্দায় পড়ে তাই আমরা জানতে পারি। আর যখন কোন প্রতীক বা ধারণা (রফবধং)
জানি তখন এর পেছনে যে বস্তুআছে, তাও জানি। সুতরাং জ্ঞান প্রতীক বা ধারণার মাধ্যমেই
হয়ে থাকে। যখন এই প্রতীক বা ধারণার সাথে বাইরের বস্তুর মিল হয় তখনই জ্ঞান সত্য হয়, আর যখন মিলে না তখন জ্ঞান মিথ্যা হয়।
সমালোচনা
(১) লক প্রতীকবাদের পত্তন করে বাস্তববাদের যবনিকা টেনেছেন। কারণ তাঁর এই
মতবাদের উপর ভিত্তি করেই বার্কলি বলেন, যা আমরা সরাসরি জানি তা সবই যদি
আমাদের ধারণা হয়, তবে একমাত্র ধারণাই আছে -একথা স্বীকার করতে হয়। আর
একমাত্র ধারণাই সত্য, জ্ঞানাতিরিক্ত বস্তুবলে কিছুনেই, একথা বললে বাস্তববাদেরই
মূলোচ্ছেদ হয়।
(২) লকের মত স্বীকার করলে জ্ঞানের সত্যাসত্য নিরূপণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাঁর
মতে, ধারণার সাথে বস্তুর মিল হলে জ্ঞান সত্য হবে। অথচ তিনি বলেন, বস্তুসরাসরি
জানা যায় না। যে বস্তুসরাসরি জানা যায় না, তার সাথে ধারণার মিল বা অমিল জানাও অসম্ভব।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। বাস্তববাদ সমালোচনাসহ ব্যাখ্যা করুন।
২। সরল বাস্তববাদের সাথে প্রতীকবাদের পার্থক্য নির্দেশ করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। কিসের ভিত্তিতে বাস্তববাদের শ্রেণীবিভাগ করা হয়? শ্রেণীগুলি কি?
২। সরল বাস্তববাদ সমালোচনাসহ ব্যাখ্যা করুন।
৩। প্রতীক বাস্তববাদ সমালোচনাসহ ব্যাখ্যা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। জ্ঞেয়বস্তুর অস্তিত্ব কি জানার উপর নির্ভরশীল, নাকি এর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে? এ প্রশ্নে
দার্শনিকগণ বিভক্ত হয়ে পড়েনÑ
(অ) দুই ভাগে (আ) তিন ভাগে
(ই) চার ভাগে (ঈ) পাঁচ ভাগে।
২। বস্তুর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে, বলেনÑ
(অ) ভাববাদীরা (আ) বাস্তববাদীরা
(ই) অজ্ঞেয়তাবাদীরা (ঈ) সংশয়বাদীরা।
৩। বাস্তববাদের শ্রেণীবিভাগ পায়Ñ
(অ) দুইটি (আ) তিনটি
(ই) চারটি (ঈ) পাঁচটি।
৪। জন লক প্রবর্তিত বাস্তববাদের নামÑ
(অ) সরল বাস্তববাদ (আ) প্রতীকবাদ
(ই) নব্য বাস্তববাদ (ঈ) সবিচার বাস্তববাদ।
সঠিক উত্তর ঃ (১) অ। (২) আ। (৩) ই। (৪) আ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]