পূর্ববর্তী পাঠে আমরা সরল বাস্তববাদ ও প্রতীকবাদ আলোচনা করেছি। এই দুই মতবাদের
ত্রæটি দূর করে পরবর্তীতে আরও দুটি মতবাদ গড়ে ওঠে : নব্য বাস্তববাদ ও সবিচার
বাস্তববাদ। হোল্ট, মার্ভিন, মন্টেগ, পেরী প্রমুখ মার্কিন দার্শনিক নব্য বাস্তববাদের সমর্থক।
মার্কিন দার্শনিক ড্রেক, প্রাট, সান্টায়ন প্রমুখ সবিচার বাস্তববাদের প্রবক্তা।
নব্য বাস্তববাদ
লকের প্রতীকবাদের সমালোচনা করে নব্য বাস্তববাদীরা বলেন, শুধুমুখ্য গুণই নয়, গৌণ গুণও
বাস্তব ও বস্তুগত। কারণ প্রত্যক্ষিত সব কিছুই অর্থাৎ রূপ, রস, গন্ধ ইত্যাদি কোন অর্থেই
মনোগত নয়। বস্তুমন-নিরপেক্ষ এবং এর গুণাবলী সরাসরি প্রত্যক্ষিত হয়, তাই গুণাবলী বস্তুর
প্রতীক নয়। এজন্য এই মতবাদকে প্রত্যক্ষ বাস্তববাদ ও বলা হয়। নব্য
বাস্তববাদীদের মতে, জ্ঞান বস্তুর স্বাতন্ত্র্যের কোন পরিবর্তন ঘটায় না। জ্ঞান ও বস্তুর সম্পর্ক
বাহ্যিক। আর মন অন্যান্য বস্তুর মতই স্বতন্ত্র সত্তা। তাঁদের মতে, মুখ্য ও গৌণ গুণের যেমন
বস্তুগত সত্তা আছে, ভুল প্রত্যক্ষণ, স্বপ্ন ইত্যাদিতে যেসব ইন্দ্রিয়-উপাত্ত পাওয়া যায় সেগুলিরও
তেমনি বস্তুগত সত্তা আছে। ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণের বিষয়গুলি দেশ ও কালে অবস্থিত বলে এগুলির
অস্তিত্ব আছে। অপরদিকে ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণের বিষয়গুলির দেশ-কালে অবস্থিতি নেই, কিন্তুএক
প্রকারের বাস্তবতা আছে, যাকে বিদ্যমানতা বলা যায়।
দ্রব্য হল ইন্দ্রিয়োপাত্তের সমষ্টি
নব্য বাস্তববাদীদের মতে, বস্তুমাত্রই কতগুলি ইন্দ্রিয়োপাত্তের সংযোগ বা সমষ্টিস্বরূপ। যেমন
আমরা যাকে কলা বলি তা লম্বা, হলুদ রঙ, মিষ্টি, মসৃণ ইত্যাদি ইন্দ্রিয়োপাত্ত বা প্রতিভাসের
সমষ্টিমাত্র এবং এই সমষ্টির বাইরে দ্রব্য বলে পৃথক কোন কিছুনেই।
এ মতবাদীরা আরো বলেন, জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় বস্তুর সম্পর্ক শুধুবাহ্যিক নয়, বস্তুগত। বস্তুমনের
দ্বারা সম্পর্কিত নয়, বরং এর সম্পর্ক বস্তুর মতই বস্তুগত ও বাস্তব।
সমালোচনা
(১) ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণ বা জ্ঞানের যে ব্যাখ্যা নব্য বাস্তববাদীরা দিয়েছেন, তা তর্কসাপেক্ষ, কেননা
আমরা স্বপ্ন, অমূল প্রত্যক্ষণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে দেখতে পাই যে, এগুলি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন
ভিন্ন রূপ গ্রহণ করতে পারে। তাই এগুলিকে বাস্তব বা বস্তুগত বলে ধরে নেয়া যুক্তিযুক্ত
নয়।
(২) তাঁরা অস্তিত্ব সম্পর্কীয় ধারণার সাথে বিদ্যমানতার উল্লেখ করে বলেন যে, যেসব বস্তুবা
বিষয়ের দেশ ও কালে অস্তিত্ব নেই, তাদের বিদ্যমানতা অবশ্যই রয়েছে। তাঁদের এই
বক্তব্য অযৌক্তিক বলে বিভিন্ন দার্শনিকরা সমালোচনা করেছেন।
সবিচার বাস্তববাদ (ঈৎরঃরপধষ জবধষরংস)
সবিচার বাস্তববাদীদের মতে, বাইরের বস্তু মানুষের মনে এক রকম প্রভাব ফেলে। এই
প্রভাবকে আশ্রয় করেই বস্তুর প্রত্যক্ষণ সম্ভব। জ্ঞাতা যে জিনিস সোজাসুজি জানে সে জিনিস
বাইরের বস্তুও নয়, মনের ধারণামাত্রও নয়, তা বাইরের বস্তুর কাছ থেকে পাওয়া এক প্রকার
প্রভাববিশেষ। এ মতবাদীদের মতে, বস্তুর যে প্রভাব আমরা সোজাসুজি জানি তাকে ‘স্বভাব
বিমশ্র' বা ‘আন্তর সত্তা' বলা যেতে পারে। এই আন্তর সত্তা
জড়ও নয়, চেতনও নয়, এগুলি বুদ্ধিগ্রাহ্য পদার্থবিশেষ। এই আন্তর সত্তা গ্রহণ করার পর মানুষ
বাইরের জগতে এদের বাস্তব উৎস কল্পনা করে নেয়। সে কল্পনা যেখানে যথার্থ, প্রত্যক্ষণ
সেখানে সত্য; যেখানে অযথার্থ সেখানে প্রত্যক্ষণ ভুল।
জ্ঞানের তিনটি অঙ্গ : জ্ঞাতা, বস্তুও ইন্দ্রিয়োপাত্ত
সবিচার বাস্তববাদীরা প্রতিটি জ্ঞানের তিনটি অঙ্গ স্বীকার করেন। প্রত্যক্ষকারী মন, বাইরের বস্তু
ও ইন্দ্রিয়োপাত্ত। তাঁদের মতে, এই ইন্দ্রিয়োপাত্তই আন্তর সত্তা নামে পরিচিত। প্রত্যক্ষকারী মন
সরাসরি আন্তর সত্তাই জানে। আন্তর সত্তা থেকে বাইরের বস্তুকল্পনা করে নেয়া হয়। তাঁরা
বিষয় ভিন্ন মনের অস্তিত্ব স্বীকার করেন। তাঁদের মতে, জ্ঞানের বিষয় ও জ্ঞাতা মন কখনই এক
হতে পারে না।
সমালোচনা
(১) সবিচার বাস্তববাদীদের মতে, বস্তুর আন্তরসত্তাই আমরা সরাসরি জানতে পারি। আর
আন্তরসত্তা দেখে বস্তুস্থিতি আমরা কল্পনা করে নেই। আমরা যা কল্পনা করি তার সম্বন্ধে
সহজেই সংশয় পোষণ করা যায়। সুতরাং বস্তুস্থিতিও সন্দেহের বিষয়।
(২) আন্তরসত্তা রহস্যাবৃত। আন্তরসত্তার মাধ্যমে বস্তুর জ্ঞানলাভ করা যায়। তবে এই
আন্তরসত্তা জড়ও নয়, মনের ধারণাও নয়, এক প্রকারের প্রভাব। তাহলে এই প্রভাব
বস্তুর সাথে মিশে কিভাবে জ্ঞান সৃষ্টি করে? তা দুর্বোধ্য।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। নব্য বাস্তববাদের সাথে সবিচার বাস্তববাদের পার্থক্য উল্লেখ করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। নব্য বাস্তববাদ সমালোচনাসহ ব্যাখ্যা করুন।
২। সবিচার বাস্তববাদ সমালোচনাসহ বর্ণনা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। নব্য বাস্তববাদের প্রবক্তা হলেনÑ
(অ) ড্রেক, , প্রাট, সান্টায়ন (আ) হোল্ট, মার্ভিন, পেরী
(ই) লল, বার্কলী, হিউম (ঈ) ডেকার্ট, স্পিনোজা, লিবনিজ।
২। সবিচার বাস্তববাদের প্রবক্তা হলেনÑ
(অ) ড্রেক, প্রাট, সান্টায়ন (আ) হোল্ট, মার্ভিন, পেরী
(ই) লক, বার্কলী, হিউম (ঈ) ডেকার্ট, স্পিনোজা, লিবনিজ।
৩। মন অন্যান্য বস্তুর মতই স্বতন্ত্র সত্তাÑ বলেনÑ
(অ) সরল বাস্তববাদীরা (আ) প্রতীক বাস্তববাদীরা
(ই) নব্য বাস্তববাদীরা (ঈ) সবিচার বাস্তববাদীরা।
৪। সবিচার বাস্তববাদীদের মতে জ্ঞানের অঙ্গÑ
(অ) দুটি (আ) তিনটি
(ই) চারটি (ঈ) পাঁচটি।
সঠিক উত্তর ঃ (১) আ। (২) অ। (৩) ই। (৪) আ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত