সংক্ষেপে অধিবিদ্যার পরিধি। অধিবিদ্যার সম্ভাব্যতার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলি কি কি?

দর্শন আলোচনায় অধিবিদ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে অবস্থান করছে। দেশ, কাল,
কার্যকারণ তত্ত¡, জড়, প্রাণ, ও পরম সত্তার স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করে অধিবিদ্যা। এই বিশ্ব
প্রকৃতির পেছনে কোন চিরন্তন আদি সত্তা আছে কিনা, থাকলে সেই সত্তার সংখ্যা কত, প্রকৃতি কী এ সকল প্রশ্ন হলো অধিবিদ্যার মূল প্রশ্ন।
অধিবিদ্যার পরিধি
দর্শনের যে শাখা জগৎ ও জীবনের নিহিত তত্ত¡ অর্থাৎ দেশ, কাল, কার্যকারণ তত্ত¡, জড়, প্রাণ,
মন এবং পরম সত্তার স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করে তাকে অধিবিদ্যা বলে। অধিবিদ্যার প্রধান
কাজ হলো তত্ত¡ নির্ণয় করা। যে কোন জিনিসেরই দুটি দিক থাকে। একটি তার প্রকাশের দিক,
আর একটি হচ্ছে স্বরূপের দিক। আকাশে যখন উড়োজাহাজ চলে তখন যতই উপরে ওঠে
ততই তা ছোট বলে মনে হয়। আবার যখন উড়োজাহাজ মাটিতে নামে তখন তা বেশ বড়
আকারেই দেখা যায়। এখানে আকাশে উড়োজাহাজের যে আকার তা তার প্রকাশাকার।
অধিবিদ্যা বস্তুর স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করে, প্রকাশাকার নিয়ে নয়। বস্তুর স্বরূপ উদ্ঘাটন
করাই অধিবিদ্যার লক্ষ্য।
অধিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়কে আমরা তিন অংশে ভাগ করতে পারি :
(১) প্রকৃতি সম্পর্কীয় অধিবিদ্যা (ঈড়ংসড়ষড়মু) : অধিবিদ্যার এ শাখায় জড়বস্তু, দেশ-কাল,
কার্যকারণ তত্ত¡, দ্রব্য, জীবন, সৃষ্টির ক্রমবিকাশ ইত্যাদি বিষয় আলোচনা করা হয়।
(২) মন সম্পর্কীয় অধিবিদ্যা (চযরষড়ংড়ঢ়যু ড়ভ গরহফ) : অধিবিদ্যার এ শাখায় আত্মা বা মনের স্বরূপ, উৎপত্তি, দেহ-মনের সম্পর্কবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়।
(৩) পরম সত্তাসম্পর্কীয় অধিবিদ্যা (ঙহঃড়ষড়মু) : অধিবিদ্যার এ শাখায় পরম সত্তার স্বরূপ,
গুণাবলী, তার অস্তিত্বের প্রমাণ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়, পরম সত্তার সংখ্যা সম্পর্কীয়
মতবাদ প্রভৃতি আলোচনা করা হয়।
অধিবিদ্যার সম্ভাব্যতা
অধিবিদ্যা বস্তুর স্বরূপ অর্থাৎ অতীন্দ্রিয় বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করে। তাই কারো কারো
মতে অধিবিদ্যা সম্ভব নয়। তাঁরা অধিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় ও পাঠের বিরুদ্ধে বেশ কিছু
আপত্তি উত্থাপন করেছেন। এই আপত্তিসমূহ এবং তার জবাব নিচে উল্লেখ করা হলো :
১। অধিবিদ্যা সম্ভব নয়, কারণ অধিবিদ্যার সমস্যাবলীর সমাধান অসম্ভব। বোধগম্য প্রশ্নেরই
বোধগম্য উত্তর হতে পারে, অসম্ভব প্রশ্নের উত্তর অসম্ভবই হয়। যদি কেউ প্রশ্ন করে বন্ধ্যাপুত্র
পরীক্ষায় পাস করেছে কি? তার উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। কারণ বন্ধ্যাপুত্রই সম্ভব নয়, সুতরাং
তার পাস করার প্রশ্নই ওঠে না। অনেকে মনে করেন, বস্তুপ্রকাশের অতিরিক্ত বস্তুস্বরূপ বলে
কিছুনেই; সুতরাং অধিবিদ্যার আলোচ্য বস্তুস্বরূপ অসম্ভব হওয়ায় অধিবিদ্যাই অসম্ভব। এ
কথা যদি সত্য হয়, তবে সাধারণ মানুষ ও বিজ্ঞানীরা বস্তুস্বরূপ ও বস্তুপ্রকাশের মধ্যে যে
পার্থক্য করেন তা মিথ্যা হবে। ফলে শুধুঅধিবিদ্যা নয়, সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞানই অসম্ভব হয়ে
যাবে। তাই হয় আমাদের সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞান অস্বীকার করতে হবে, না হয় অধিবিদ্যার
সম্ভাব্যতা স্বীকার করতে হবে।
(২) কারো কারো অভিযোগ হলো, যত রকমের বোধগম্য প্রশ্ন এবং সম্ভবপর সমস্যা আছে
সবই কোন না কোন বিজ্ঞান আলোচনা করে, সুতরাং বিজ্ঞান আলোচনা করে না এমন কোন
প্রশ্ন বা সমস্যা নেই যা অধিবিদ্যার আলোচ্য হতে পারে। এরূপ যুক্তি চক্রক দোষে দুষ্ট, কারণ
যে উপাত্তের সাহায্যে সিদ্ধান্ত প্রমাণ করা হযেছে সে উপাত্ত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই প্রমাণিত হতে
পারে। বিজ্ঞানী ও অধিবিদ্যার সমর্থকদের মতভেদের কারণ এই যে, বিজ্ঞানীর মতে সমস্ত
বোধগম্য সমস্যাই বিজ্ঞানের আলোচ্য। অধিবিদ্যার সমর্থকদের মতে, বিজ্ঞানে আলোচিত হয়
না এমন সমস্যাও আছে এবং তা অধিবিদ্যায় আলোচিত হয়। সুতরাং প্রমাণ ছাড়া কোন মতই
অন্য মতের চেয়ে অধিকতর যুক্তিযুক্ত বলে গ্রহণ করা যায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা
অধিবিদ্যার সমর্থকদের মতবাদ অপ্রমাণ করতে পারব ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাঁদের মতবাদের
বিরুদ্ধে কিছুই বলতে পারব না।
(৩) অনেকের মতে, অধিবিদ্যার সমস্যাবলীর বোধগম্যতা স্বীকার করলেও এর সমাধানের
ক্ষমতা আমাদের নেই। তাঁদের মতে, মানুষের ক্ষমতা এমনই সীমাবদ্ধ যে তাদের পক্ষে বস্তু
স্বরূপ জানা সম্ভব নয়। আমাদের সমস্ত জ্ঞান বস্তুপ্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যারা বলেন,
আমাদের জ্ঞান বস্তুপ্রকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তাঁরা অন্ততঃ একটি বাক্যকে চরম সত্য-প্রকাশক
বলে মনে করেন এবং সে বাক্যটি হলো : ‘আমি জানি যে, আমি যা কিছুজানি তা বস্তু
প্রকাশমাত্র'। এই বাক্যের যথার্থতা অধিবিদ্যার আলোচনার মাধ্যমেই নির্ণয় করা সম্ভব। সুতরাং
অধিবিদ্যার বিরোধিরা যে যুক্তির সাহায্যে অধিবিদ্যার সম্ভাবনা অস্বীকার করেন, সে যুক্তিই
অধিবিদ্যার আলোচনার প্রয়োজন প্রমাণ করে।
আধুনিক কালের যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীরা বাক্যের অর্থ প্রসঙ্গে ‘অর্থ প্রমাণবিষয়ক মতবাদ'
(ঠবৎরভরপধঃরড়হ ঞযবড়ৎু ড়ভ গবধহরহম) এ বিশ্বাসী এবং এই মতবাদের ভিত্তিতে তাঁরা
অধিবিদ্যার সমস্ত বাক্য অর্থহীন বলে মনে করেন। অধিবিদ্যা সম্পর্কে যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীদের
অভিমত যুক্তিযুক্ত নয়। কেবলমাত্র ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের অস্তিত্ব আছে এবং ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষই
জ্ঞান লাভের একমাত্র পথ, তাঁদের এ উভয় সিদ্ধান্তই ভ্রান্ত। জড় বিজ্ঞানের পরমাণু, ইলেকট্রন,
প্রোটন প্রভৃতি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় নয়, এগুলি অতীন্দ্রিয় বিষয়, অথচ এগুলির অস্তিত্ব স্বীকার
করা হয়। সুতরাং অধিবিদ্যার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।
(৪) কারো কারো মতে, অধিবিদ্যা নিষ্প্রয়োজন, কারণ বিভিন্ন বিজ্ঞান যা কিছুজ্ঞাতব্য তা
সবই জানিয়ে দেয়। তাঁদের এ কথার জবাবে বলা যায় : (ক) আত্যন্তিক সত্তা বা তত্ত¡ সম্বন্ধে
কোন আলোচনা কোন বিজ্ঞানই করে না। অথচ এ বিষয় যে জ্ঞাতব্য নয় তা বলা যায় না।
(খ) অনেক সময় দেখা যায়, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের শিক্ষার সঙ্গে নীতিবিদ্যার ও ধর্মশিক্ষার
বিরোধিতা বর্তমান। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, এ বিরোধিতা কি স্বরূপগত না
প্রকাশগত বা বাহ্য? অধিবিদ্যা আলোচনা না করে এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়।
(৫) অধিবিদ্যার কোন প্রগতি নেই। এই অভিযোগের উত্তর দর্শনের ইতিহাস মনোযোগ দিয়ে
পাঠ করলে অতি সহজে দেয়া যায়। অধিবিদ্যার সমস্যাবলী অতি প্রাচীন, এ বিষয়ে কোন
সন্দেহ নেই। কিন্তুকোন্ বিজ্ঞানের সমস্যাই বা প্রাচীন নয়? অধিবিদ্যার সমস্যাবলীর বিশ্লেষণ
ও সমাধান দানের দৃষ্টিভঙ্গি যুগে যুগে ও দেশে দেশে নতুন রূপ গ্রহণ করে। অধিবিদ্যার
অনেক মত বিজ্ঞানকে প্রভাবানি¦ত করেছে। আবার বিজ্ঞানেরও অনেক মত অধিবিদ্যাকে
প্রভাবিত করেছে। সপ্তদশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের যান্ত্রিক ব্যাখ্যা দার্শনিক ডেকার্টের চিন্তা দ্বারা
প্রভাবিত হয়েছিল, ক্যালকুলাসের আবিষ্কার দার্শনিক লিবনিজের চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
অধিবিদ্যা বিশারদগণ চরম সত্তার প্রকৃতি সম্বন্ধে মত প্রচার করতে গিয়ে তৎকালে প্রচলিত
কোন বৈজ্ঞানিক মতকেই উপেক্ষা করতে পারেননি। সেজন্য দেখা যায় যে, বিজ্ঞানের
প্রত্যেকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার এবং নতুন মতবাদের ফলে অধিবিদ্যার প্রাচীন সমস্যাবলীর
নতুন রূপে প্রকাশ করা এবং বিচার করার প্রয়োজন হয়। এভাবেই অধিবিদ্যার অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়।
সারাংশ
অধিবিদ্যা মূলত বস্তুর স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করে। অধিবিদ্যার আলোচ্য বিষয় বা পরিধিকে
আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি : (১) প্রকৃতি সম্পর্কীয় অধিবিদ্যা (২) মন সম্পর্কীয়
অধিবিদ্যা ও (৩) পরম সত্তা সম্পর্কীয় অধিবিদ্যা।
অধিবিদ্যার সম্ভাবনা নিয়ে সমালোচকগণ নানা রকমের আপত্তি উত্থাপন করেছেন : (১)
অধিবিদ্যা সম্ভব নয়, কারণ অধিবিদ্যার সমস্যাবলীর সমাধান অসম্ভব। (২) যত রকমের
বোধগম্য প্রশ্ন এবং সম্ভবপর সমস্যা আছে সবই কোন না কোন বিজ্ঞান আলোচনা করে,
সুতরাং বিজ্ঞান আলোচনা করে না এমন কোন প্রশ্ন বা সমস্যা নেই যা অধিবিদ্যার আলোচ্য
হতে পারে। (৩) অধিবিদ্যার সমস্যাবলীর সমাধানের ক্ষমতা আমাদের নেই। কারণ আমাদের
সমস্ত জ্ঞান বস্তুপ্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। (৪) অধিবিদ্যা নিষ্প্রয়োজন, কারণ বিভিন্ন বিজ্ঞান
ও ভ‚য়োদর্শন যা কিছুজ্ঞাতব্য তা সবই জানিয়ে দেয়। (৫) অধিবিদ্যার কোন প্রগতি নেই।
কিন্তুসঠিকভাবে বিচার করলে এসব অভিযোগ অসার বলে প্রমাণিত হয়।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। অধিবিদ্যার সম্ভাব্যতা নিয়ে যে সমস্ত অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সে সম্বন্ধে আপনার মতামত ব্যক্ত করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। সংক্ষেপে অধিবিদ্যার পরিধি বর্ণনা করুন।
২। অধিবিদ্যার সম্ভাব্যতার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলি কি কি?
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন।
১। অধিবিদ্যার আলোচ্য বিষয়
(অ) বস্তুপ্রকাশ (আ) বস্তুস্বরূপ
(ই) জ্ঞানের স্বরূপ (ঈ) জ্ঞানের সীমা
২। অধিবিদ্যার পরিধিকে আমরা ভাগ করতে পারিÑ
(অ) দু'ভাগে (আ) তিন ভাগে
(ই) চার ভাগে (ঈ) পাঁচ ভাগে
৩। প্রত্যেক জিনিসেরই রূপ বা দিক থাকে
(অ) একটি (আ) দু'টি
(ই) তিনটি (ঈ) পাঁচটি
৪। অধিবিদ্যার সমস্ত বাক্য অর্থহীন -একথা বলেন
(অ) বুদ্ধিবাদীরা (আ) অভিজ্ঞতাবাদীরা
(ই) স্বজ্ঞাবাদীরা (ঈ) যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীরা
সত্য হলে ‘স', মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন।
১। অধিবিদ্যা দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
২। অধিবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জ্ঞানবিদ্যা।
৩। অধিবিদ্যাকে অস্বীকার করলে সমস্ত জ্ঞানবিজ্ঞান অস্বীকার করতে হয়।
৪। অধিবিদ্যা নিষ্প্রয়োজন।
সঠিক উত্তর
১। (অ) বস্তুপ্রকাশ ২। (আ) তিন ভাগে
৩। (আ) দু'টি ৪। (ঈ) যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীরা৭৩
১। স ২। মি ৩। স ৪। মি

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]