আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেশের (ঝঢ়ধপব) ব্যবহার করি, কালের (ঞরসব) মধ্যে কাজ
করি। দেশ ও কাল সম্বন্ধে আমাদের ধারণা হলো দেশ বস্তুর আধার, আর কাল হলো এক
অনাদি অনন্ত প্রবাহ। এখন প্রশ্ন হলো এই দেশ ও কাল প্রত্যক্ষগত না ধারণাগত?
প্রত্যক্ষগত দেশ
ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা যে দৈশিক সম্পর্কগুলি প্রত্যক্ষ করি তাকে বলা হয় প্রত্যক্ষগত দেশ।
প্রত্যক্ষের সাহায্যে জগতের বিভিন্ন বস্তুযে কোন না কোন দেশ জুড়ে আছে তার পরিচয়
পাওয়া যায়। জগতের বিভিন্ন বস্তুর মধ্যেও একটা দৈশিক সম্পর্ক প্রত্যক্ষ করা যায়। আমরা
দেখি ঘরের টেবিলটি খাটের চেয়ে অনেকটা দূরে, আবার চেয়ারটা টেবিলের খুব কাছেই।
কখনও বা দেখি টেবিলটা চেয়ারের সম্মুখভাগে, আর আয়নাটা টেবিলের উপরে। দূরে, কাছে,
উপরে, নিচে প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করে আমরা দৈশিক সম্পর্ক প্রকাশ করি। যে সমস্ত ক্ষেত্রে
প্রত্যক্ষের সাহায্যে দেশ ও দৈশিক সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়, সে সমস্ত ক্ষেত্রে দেশকে
প্রত্যক্ষগত দেশ বলা হয়। এই প্রত্যক্ষগত দেশ বস্তুভেদে বিভিন্ন বলে মনে হয়। ঘরের
টেবিলটা যে দেশ জুড়ে আছে, সোফাটা সে দেশ জুড়ে নেই। এমনি করে সমস্ত বস্তুই যেন
বিভিন্ন দেশ অধিকার করে আছে। বলা বাহুল্য, এই দেশ অসীম হতে পারে না। কারণ
প্রত্যক্ষগত দেশ এক নয়, অনেক এবং অনেক অসীম দেশ অসম্ভব। এক দেশ অন্য দেশের
সীমা সূচনা করে।
প্রত্যক্ষগত কাল
ইন্দ্রিয় বা প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে কালের যে রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করি তাকে প্রত্যক্ষগত কাল
বলে। আমাদের চারদিকে প্রতিনিয়ত কত কিছুই ঘটছে। গতি, চলা আর পরিবর্তনই দুনিয়ার
নিয়ম। শীতে যে গাছ পত্রশূন্য মৃতপ্রায় দেখি, বসন্তের হাওয়া লাগলেই আবার তা পুনর্জন্ম লাভ
করে। কত পাতা, কত ফুল, কত সৌন্দর্য তাকে ভর করে বিকশিত হয়ে ওঠে তার হিসেব
নেই। অন্যদিকে ভোর হয়। আবার দিনের আলো সন্ধ্যার অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। ফুল ফোটে,
ফুল ঝরে। এই সব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যে কালের পরিচয় আমরা পাই তার নাম
প্রত্যক্ষগত কাল। এই কাল যেন বিভিন্ন বস্তুর পরিবর্তনের সঙ্গে অভিন্নভাবে জড়িয়ে থাকে।
বস্তুর পরিবর্তন যেমন আমরা প্রত্যক্ষ করি তেমনি এই কালও প্রত্যক্ষ করি। বিভিন্ন পরিবর্তনের
সঙ্গে এই কালও বিভিন্ন বলে মনে হয়। এই কাল অনাদি বা অনন্ত নয়। প্রত্যক্ষগত কালের
আদি আছে, অন্তও আছে। যে কোন বিশেষ কালেরই যে আদি ও অন্ত আছে, তা সহজেই
বোঝা যায়।
ধারণাগত দেশ
সাধারণ ধারণার মাধ্যমে আমরা দেশ সম্পর্কে যে জ্ঞানলাভ করি তাকে ধারণাগত দেশ বলে।
প্রত্যক্ষগত বিভিন্ন দেশের বিভিন্নতা বর্জন করে যখন সমগ্র দেশের ধারণা করি তখন তার নাম
দেয়া হয় ধারণাগত দেশ। আমরা যখন ‘মানুষ' এই সামান্য ধারণা ব্যবহার করি তখন বিভিন্ন
মানুষের বৈচিত্র্য বাদ দিয়ে তাদের সাধারণ গুণগুলিই বুঝি। ঠিক তেমনি ধারণাগত দেশ
বলতেও আমরা প্রত্যক্ষগত বিভিন্ন দেশের বিভিন্নতা ও বৈশিষ্ট্য বাদ দিয়ে তাদের সাধারণ
সমগ্রতাই বুঝি। ধারণাগত দেশ প্রত্যক্ষগত দেশের মত বিভিন্ন নয়। এই দেশ এক ও
অবিভাজ্য। প্রত্যক্ষগত বিভিন্ন দেশ এই এক ও অবিভাজ্য দেশেরই সীমিত প্রকাশমাত্র বলে
মনে করা হয়। ধারণাগত দেশের সীমা নেই। কারণ ধারণাগত দেশমাত্র একটা হওয়ায় তার
সীমা যদি কিছুথাকে তবে তা সেই দেশেই থাকবে এবং তারপরেও দেশ থাকবে। অর্থাৎ
দেশের সীমা বলে কিছুনেই।
ধারণাগত কাল
সাধারণ ধারণার মাধ্যমে আমরা কালের যে রূপ পাই তাকে ধারণাগত কাল বলে। ধারণাগত
কাল হলো এক নিরবচ্ছিন্ন গতি বা প্রবাহ। বিভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষগত বিভিন্ন
কাল থেকে বিভিন্নতা বাদ দিয়ে যখন আমরা এক অখন্ড কালের ধারণা করি, তখন সেই
কালকে ধারণাগত কাল বলা হয়। এই ধারণাগত কাল এক ও অখন্ড। আমরা মনে করি, এ
যেন একটা প্রবাহ। বিভিন্ন বস্তুর পরিবর্তন-নিরপেক্ষভাবেই যেন এই কাল থাকতে পারে।
জাগতিক শত পরিবর্তন-নিরপেক্ষভাবে যে অনাদি ও অনন্ত কালপ্রবাহ চলছে তারই নাম
ধারণাগত কাল। এই কাল অনাদি ও অনন্ত, এক ও অবিভাজ্য।
মন্তব্য
আসলে বিভিন্ন দেশ যোগ করে এক অখন্ড দেশ সৃষ্টি হয় না। অখন্ড দেশই আছে। আমরা
প্রয়োজনে ও জাগতিক ব্যবহারের সুবিধার জন্য এই অখন্ড দেশকে খন্ড খন্ড করে ভাবি। কাল
সম্বন্ধেও এই একই কথা বলা যেতে পারে। এক অখন্ড কালই আছে। খন্ডকাল আমাদের
প্রয়োজনে সৃষ্টিমাত্র। তাহলে প্রশ্ন উঠবে, ধারণাগত দেশ ও কাল প্রত্যক্ষগত বিভিন্ন দেশ ও
কাল থেকে সৃষ্টি হয়, এর মানে কী? উত্তর হলো, এক অখন্ড দেশ ও কাল আমরা প্রথমেই
জানতে পারি না। জানতে গেলে প্রত্যক্ষগত বিভিন্ন দেশ ও কালই আমরা প্রথমত জানি।
তারপর এই বিভিন্ন দেশ ও কাল থেকে চিন্তা করে এক অখন্ড দেশ ও কালের ধারণা লাভ
করি। সুতরাং জানার দিক থেকেই প্রত্যক্ষগত দেশ ও কাল থেকে ধারণাগত দেশ ও কালের
উপলব্ধি হয়। অস্তিত্বের দিক থেকে এক অখন্ড দেশ ও কালই আছে। বিভিন্ন দেশ ও কাল
লোক ব্যবহারের সৃষ্টিমাত্র।
সারাংশ
ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা যে দৈশিক সম্পর্কগুলি প্রত্যক্ষ করি, তাকে বলা হয় প্রত্যক্ষগত
দেশ। সাধারণ ধারণার মাধ্যমে আমরা দেশের যে জ্ঞানলাভ করি তাকে ধারণাগত দেশ বলে।
ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কালের যে রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করি তাকে প্রত্যক্ষগত কাল বলে। সাধারণ
ধারণার মাধ্যমে কালের যে রূপ আমরা পাই তাকে ধারণাগত কাল বলে।
প্রত্যক্ষগত দেশ হলো সীমিত, ধারণাগত দেশ অসীম ও অনন্ত বিস্তৃত। প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে
আমরা যে দেশ দেখতে পাই তা ধারণাগত দেশেরই খন্ড প্রকাশ। প্রত্যক্ষগত কাল অনন্ত
কালের খন্ড বা অংশমাত্র। ধারণাগত কাল হলো এক অখন্ড সমগ্রতা। প্রত্যক্ষগত কাল হলো
ঘটনা সম্পর্কিত, আর ধারণাগত কাল হলো ঘটনার সম্পর্কবিহীন প্রবাহ।
আপাতঃদৃষ্টিতে প্রত্যক্ষগত ও ধারণাগত দেশ ও কাল ভিন্ন মনে হলেও উভয়ের মধ্যে স্বরূপত
কোন পার্থক্য নেই। যে বিভিন্ন দেশ ও কালকে আমরা প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করি তা ধারণাগত
দেশ ও কালেরই খন্ড প্রকাশমাত্র।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। ধারণাগত দেশ ও কাল বলতে কী বুঝায়? ব্যাখ্যা করুন।
২। প্রত্যক্ষগত দেশ ও কাল বলতে কী বুঝায়? ব্যাখ্যা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। ধারণাগত দেশ বলতে কী বুঝায়?
২। প্রত্যক্ষগত দেশ বলতে কী বুঝায়?
৩। ধারণাগত কাল বলতে কী বুঝায়?
৪। প্রত্যক্ষগত কাল বলতে কী বুঝায়?
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা যে দৈশিক সম্পর্কগুলি প্রত্যক্ষ করি তাকে বলে
(অ) প্রত্যক্ষগত দেশ (আ) ধারণাগত দেশ
(ই) প্রত্যক্ষগত কাল (ঈ) ধারণাগত কাল
২। প্রত্যক্ষগত দেশ হলো
(অ) ইন্দ্রিয়গত (আ) ভিন্ন ভিন্ন
(ই) অনেক (ঈ) উপরের সবগুলি
৩। ধারণাগত কাল হলো
(অ) কালের খন্ড প্রবাহ (আ) কালের অখন্ড প্রবাহ
(ই) উভয়ই (ঈ) কোনটিই নয়
৪। ঘটনা সম্পর্কিত কাল হলো
(অ) ধারণাগত কাল (আ) বস্তুগত কাল
(ই) প্রত্যক্ষগত কাল (ঈ) সবগুলিই
সত্য হলে ‘স', মিথ্যা হলে ‘মি' লিখুন।
১। প্রত্যক্ষগত কাল ধারণাগত কালের খন্ড বা অংশমাত্র।
২। প্রত্যক্ষগত দেশ ও কাল লোক ব্যবহারের সৃষ্টিমাত্র।
৩। ধারণাগত কাল প্রত্যক্ষগত কালের অংশমাত্র।
৪। প্রত্যক্ষগত ও ধারণাগত দেশ ও কাল স্বরূপত ভিন্ন।
সঠিক উত্তর
১। (অ) প্রত্যক্ষগত দেশ ২। (ঈ) উপরের সবগুলি
৩। (আ) কালের অখন্ড প্রবাহ ৪। (ই) প্রত্যক্ষগত কাল
১। স ২। স ৩। মি ৪। মি
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত