সাহিত্যের সংজ্ঞা দিন। সাহিত্যের সাথে দর্শনের সাদৃশ্য আলোচনা করুন।

অন্যান্য ব্যবহারিক বিদ্যার চেয়ে সাহিত্যের সাথে দর্শনের সম্পর্ক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও
দৃষ্টি আকর্ষক। সাহিত্যের উদ্দেশ্য দু’ধরনের হতে পারে: একটি হলো চিত্তবিনোদন, অপরটি
হলো শিক্ষাদান। তবে চিত্তবিনোদনই সাহিত্যের ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য পায়। অপরদিকে,
দর্শনের কাজ হচ্ছে জগৎ-জীবনের গভীর সত্যকে উদ্ঘাটন করা। এই সত্য সন্ধানের ক্ষেত্রে,
দর্শনে চিত্তবিনোদনের বা ভাবাবেগের সুযোগ নেই। দর্শন চালিত হয় বিচার-বিশ্লেষণী চিন্তার
দ্বারা। তাই দর্শন ও সাহিত্যের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। দর্শন ও সাহিত্যের সম্পর্ক
আলোচনার পূর্বে আমাদের দর্শন ও সাহিত্য কী? তা জানা দরকার।
দর্শন
জগৎ ও জীবনের স্বরূপ ব্যাখ্যা এবং তার মূল্য অবধারণই দর্শনের কাজ। এই কাজ করতে
দর্শন পরিচালিত হয় বিচারবুদ্ধি দ্বারা।
সাহিত্য
চিন্তাধারা ও কল্পনার সুবিন্যস্ত ও সুপরিকল্পিত লিখিত রূপকে সাহিত্য বলে। সাহিত্যিক তার
সাহিত্য রচনায় যতটা না হয় বাস্তববাদী তার চেয়ে অনেক বেশি হয় আবেগ বা কল্পনাপ্রবণ।
তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাহিত্য আমাদের আনন্দ দেয়, কোনো তথ্য দেয় না। সাহিত্যিক
মুখ্যত কোনো কিছু শিক্ষা দেয়ার চেয়ে মনকে উদ্দীপিত ও আনন্দিত করার চেষ্টা করেন।
সাহিত্যকে বলা হয় জীবনের দর্পণ , সত্যতার দর্পণ নয়। সাহিত্যের মুখ্য কাজ হলো অতীত ও
বর্তমানের স্মরণীয় অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করা। গভীর সুখ-দুঃখের অবিস্মরণীয় বৈশিষ্ট্যের
মধ্য দিয়ে জীবনের যে চিত্র ফুটে ওঠে তা পাঠকের কাছে তুলে ধরা। জীবনের সফলতা ও
ব্যর্থতা, সৌন্দর্য ও কদর্যতা, মহত্ত¡ ও স্থ‚লতা তুলে ধরা। সে জীবনকে ব্যাখ্যা করতে পারে,
বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে পারে; কিন্তু তার পদ্ধতি বিচারমূলক হওয়ার প্রয়োজন নেই।
কারণ সে চ‚ড়ান্ত সত্যের সাথে মুখ্যত সম্পৃক্ত নয়। সে শুধু বলে, কিভাবে অনুভব করা যায়,
কিভাবে বস্তু তার কাছে ধরা দেয়। এ কারণে সাহিত্যিকের লেখা জনগণ বেশি পড়ে ও পছন্দ করে।
দর্শন ও সাহিত্যের সাদৃশ্য
দর্শনের সাথে সাহিত্যের মিলগুলো কোথায় তা আমরা এখন আলোচনা করবো :
১) দর্শন ও সাহিত্য উভয়ই প্রধানত জগৎ ও জীবন সম্পর্কীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে এবং
ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্বাস, মতাদর্শ ইত্যাদির স্বরূপ ব্যাখ্যা ও সমালোচনা করে।
২) দর্শন ও সাহিত্য উভয়ই প্রচেষ্টা চালায় প্রকৃত সত্যকে আবিষ্কার করতে। তবে সাহিত্যের
সত্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক।
দর্শন ও সাহিত্যের বৈসাদৃশ্য
দর্শনের সাথে সাহিত্যের কিছু বিষয়ে মিল থাকলেও অনেক বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে।
১) দর্শন ও সাহিত্যের আলোচ্য বিষয় এক হলেও তাদের আলোচনার পদ্ধতি ভিন্ন। দর্শন
অগ্রসর হয় যৌক্তিক চিন্তা ও সূ² বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে; আর সাহিত্য অগ্রসর হয় কল্পনা,
অনুভব বা হৃদয়াবেগের মাধ্যমে।
২) দর্শন বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাধারণ চিন্তা জগতের স্থ‚লতা, জড়তা ও কুসংস্কারকে দূর
করে মানুষকে প্রকৃত জ্ঞান দিতে চায়। আর সাহিত্য মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতা, বিশ্বাস ও
অনুভ‚তির সুনিপুণ চিত্র তুলে ধরে। আর এজন্যই সাহিত্যকে জীবনের দর্পণ বলা হয়।
৩) দর্শন বাস্তব জ্ঞান ও তথ্য প্রদান করে। কিন্তু সাহিত্যিকের আলোচ্য বিষয় অনেক ক্ষেত্রেই
অবাস্তব ও তথ্যহীন হয়। যেমন সাহিত্যে অনেক ভ‚তের গল্প, রাক্ষসের গল্প থাকে। এগুলো
আমাদের আনন্দ দেয়, কিন্তু এগুলো যেমন অবাস্তব তেমনি তথ্যহীন।
৪) সাহিত্যিকের পরিচয় তার প্রকাশের মাধুর্য ও স্বচ্ছতায়, আর দার্শনিকের পরিচয় তার চিন্তার
মৌলিকতায় ও যুক্তির অনবদ্যতায়।
৫) সাহিত্যিক বিশেষত কবি বিশ্ব মাঝে শুধু সুন্দরকে খুঁজে বেড়ান এবং জগতের সর্বত্র
সুন্দরকে দেখতে পান। তার চোখে সুন্দরই সত্য আর সত্যই সুন্দর। আর দার্শনিক সত্য,
সুন্দর ও মঙ্গলকে সমন্বিত করতে চান। সত্যের পরিপূর্ণ রূপ তার কাছে শুধু সুন্দর নয়, মঙ্গলও
বটে।
দর্শন ও সাহিত্য পরস্পর পরিপূরক
দর্শন ও সাহিত্যের মধ্যে নানারূপ পার্থক্য থাকা সত্তে¡ও একে অপরের পরিপূরক। দর্শনের
সহায়তায় সাহিত্য যেমন সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে তেমনি সাহিত্যের সহায়তায় দর্শন হয়ে ওঠে প্রাঞ্জল
ও সহজবোধ্য। পাশ্চাত্য দেশের সাহিত্য এত সমৃদ্ধ তার মূল কারণ হলো, তাদের সাহিত্য
দার্শনিক চিন্তার প্রভাবে প্রভাবান্বিত। যেমন, দান্তে তাঁর ‘ডিভাইন কমেডি’ (উরারহব
ঈড়সবফু)-তে জগতের উপাদান, মানুষের উৎপত্তি ও ভাগ্য, পাপের উদ্ভব ও নিবৃত্তি নিয়ে
আলোচনা করেছেন। তাঁর এই আলোচ্য বিষয় সম্পূর্ণরূপেই দার্শনিকের। আবার কেবল
দার্শনিক আলোচনার প্রেক্ষিতেও যে একটা উন্নত সাহিত্য গড়ে উঠতে পারে তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ
হলো, প্লেটোর ‘দি রিপাবলিক’ (ঞযব জবঢ়ঁনষরপ) বা রাসেলের ‘হিস্টরী অফ ওয়েস্টার্ন
ফিলোসফি’
উপসংহার
দর্শনের সাথে সাহিত্যের যে মিল তা হলো আলোচ্য বিষয় এবং সত্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে।
আর মূল পার্থক্য হলো, পদ্ধতিগত পার্থক্য। সাহিত্য ও দর্শনের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও একে
অপরের পরিপূরক। কারণ দর্শনের সহায়তায় সাহিত্য হয় সমৃদ্ধ, আর সাহিত্যের সহায়তায়
দর্শন হয় প্রাঞ্জল ও সহজবোধ্য।
রচনামূলক প্রশ্ন
১। দর্শন ও সাহিত্যের সম্পর্ক আলোচনা করুন।
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১। সাহিত্যের সংজ্ঞা দিন।
২। সাহিত্যের সাথে দর্শনের সাদৃশ্য আলোচনা করুন।
ক.. বহু নির্বাচনী প্রশ্ন
সঠিক উত্তর লিখুন
১। সাহিত্যকে বলা হয়
র) জীবনের দর্পণ
রর) জ্ঞানের দর্পণ
ররর) মনের দর্পণ
রা) চিন্তার দর্পণ
২। দার্শনিকের পরিচয়
র) ভাব মাধুর্যে
রর) ভাব গভীরতায়
ররর) যুক্তির দৃঢ়তায়
রা) স্বচ্ছতায়
৩। সাহিত্যের সাথে দর্শনের মিল রয়েছে
র) ভাবভঙ্গিতে
রর) আলোচনার পদ্ধতিতে
ররর) তথ্য প্রদানে
রা) আলোচ্য বিষয়ে
৪। সাহিত্যিকের কাছে
র) সব কিছুই সত্য
রর) সব কিছুই মিথ্যা
ররর) যা সুন্দর তাই সত্য
রা) যা যুক্তিযুক্ত তাই সত্য
খ) সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
১। দর্শনকে জীবনের দর্পণ বলা হয়।
২। সাহিত্য দর্শনকে সমৃদ্ধ করে।
৩। দর্শনের সাথে সাহিত্যের কোনো বিষয়েই মিল নেই।
৪। সাহিত্য জীবনের চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরে।
সঠিক উত্তর
ক.
১। র) জীবনের দর্পণ ২। ররর) যুক্তির দৃঢ়তায়
৩। রা) আলোচ্য বিষয়ে ৪। ররর) যা সুন্দর তাই সত্য
খ.
১। মি ২। স ৩। মি ৪। স।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]